• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

Bangla kobita

***** টুটু *******
শ্যামল নিয়োগী

রাত ৯ টা হবে ,আনমনে হেটে হেটে বাড়ি ফিরছিলাম হটাৎ পেছন থেকে সার্ট
ধরে এক টান ..থমকে দাড়িয়ে পেছন ফিরে দেখি ফর্সা, একটা পিঙ্ক কালারের শাড়ি পরা, কপালে একটি কুমকুমের টিপ ঝকঝকে একটি মেয়ে আমার সার্ট টা
ধরে দাড়িয়ে আছে । আমি চিনি মেয়ে টিকে নাম টুটু ভালো নাম মমতা , আমি চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই ফিক করে হেসে বলল ..আপনার খুব ডাট তাই না ?
দেখা হলেও কথা বলেন না কেন ? ...এই কথাটা মনে পরে যেতেই সিনেমার
ফ্ল্যাশ ব্যাকের মত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার সেই হারিয়ে
যাওয়া সদ্য গোফের রেখা ওঠা কিশোর বয়েসের হারানো স্মৃতি । আমি তখন গুরুদাস কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট । কোএডুকেশন কলেজ , তাই এক দিনও কলেজ কামাই করি না, চোখে স্বপ্ন মনে বসন্ত, যে মেয়েকেই দেখি তাকেই কেমন যেন ভালো লেগে যায় । নিজের কলেজের ফিস আর হাত খরচের জন্য একটা টিউশন জোগার করে নিয়েছি কোলে ব্যারাকের একটি বাড়িতে রোজ সন্ধায় দু ঘন্টা ...যাই হোক হটাৎ এক দিন মনে হলো গীটার শিখবো, কিনে ফেললাম একটা গীটার .। ভর্তি হলাম একটা গীটার ক্লাসে , টিউশন সেরে সোজা চলে যেতাম ক্লাসে , পাশেই আমার বন্ধুর বাড়ি ওর বাড়ির রকে গল্প করতাম দুজনে যতক্ষণ আমার ডাক না পরতো । সপ্তাহে তিন দিন , গীটার শিখে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১১ টা বেজে যেতো । . আমার আগে একটি মেয়ে
শিখতো , তার পরেই আমি । এক দিন টিউশন শেষে ছাত্রের মা বৌদি রান্না ঘরে , আমি কথা বলছি হটাৎ খুব সুরেলা মিষ্টি একটি ডাক......
কাকিমা ..আমি তাকিয়ে দেখি আমার গীটার ক্লাসের সেই মেয়েটি ।
ঝক ঝকে একটি মেয়ে নিজের গায়ের রঙের সাথে ম্যাচ করে একটি হালকা
রঙের শাড়ি পরা, সুন্দর করে চুল বাঁধা,
ঠোঁটে হালকা লিপস্টিকের ছোঁয়া, কপালে লাল কুমকুমের টিপ ।
বউদি পরিচয় করিয়ে দিলো, টুটু ভালো নাম মমতা ,আমাদের সামনের বাড়িতেই থাকে । আমার কথা বলতে যেতেই আবার সেই সেতারের সপ্ত সুর বেজে উঠলো , চেনাতে হবে না চিনি, নামও জানি আমাদের গীটার ক্লাসে আমার পরেই গীটার শেখে ।
তার পর থেকে রোজই আমি যখন পরিয়ে রান্না ঘরে যাই দেখি টুটু খুব সুন্দর সেজে বৌদির সাথে গল্প করছে। কেটে যায় দিন । আমার কেমন জানি নেশার মত সন্ধ্যা হলেই ওকে দেখার জন্য মনটা ছট ফট করতো । এক দিনও টিউশন কামাই করতাম না । এক দিন গীটারের ক্লাসে গিয়ে দেখি ক্লাস বন্ধ মাস্টার মশাই আসেন নি । তাই আনমনে হাটতে হাটতে বাড়ি ফিরছিলাম , হটাৎ পেছন থেকে জামায় এক টান পরতেই দাড়িতে গেলাম ,
পেছন ফিরে দেখি টুটু, সেই সুন্দর করে সাজা মিষ্টি মেয়েটি আমাকে বলল ...আপনারতো খুব ডাট দেখছি, আজ পর্যন্ত আমার সাথে একটা কথাও বলতে পারলেন না ? আমি তখন কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না , আমাকে হাত ধরে হির হির করে টানতে টানতে একটা ট্যাক্সিতে বসিয়ে বললো আজ আপনি দু ঘন্টা আমার সাথে থাকবেন । সেই শুরু....
বড় লোকের মেয়ে, বাবা প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার ভাই জার্মানিতে পড়াশোনা করে ।
এর পর থেকে রোজই দেখা হতো বৌদির বাড়িতে । ঘুরে বেড়াতাম কখনো হেটে কখনো ট্যাক্সিতে ..ও অনর্গল কথা বলে যেতো আমি শুনতাম , আস্তে আস্তে কখন যে দুজনের ভালো লাগা ভালবাসা হয়ে গেছে বুঝতেও পারিনি । ট্যাক্সির
পেছনের সিট,সুভাস সরোবরের আধা অন্ধকার বা সিনেমা হল আমাদের
ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকতো।বেশ কিছু দিন বাদে হটাৎ বৌদির বাড়িতে টুটুকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করতে বৌদি বলল ..ও আর আসবে না,
আমি অবাক হয়ে বললাম কেন ? শুনলাম ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে খুব বড়
লোক ঘরের সুন্দর একটি ছেলের সাথে । পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে
গেলো আমার , বুকের মধ্য থেকে এক দলা কান্না আমার নিঃশ্বাস বন্ধ
করে দিচ্ছিল ...পরের দিন বৌদির বাড়ি যাওয়ার পথে দেখি ও দাড়িয়ে আছে ,
বলল আজ ও বাড়িতে যেতে হবে না যেখানে আমি আর যাব না সেখানে
আপনি আর যেতে পারবেন ? ..আমরা দুজনে সুভাস সরোবরের যেখানে জলের ধারে বসতাম..সেখানে বসলাম ..ও আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো, আমার সারা মুখে চুমু খেতে খেতে বললো ..কাল থেকে আর দেখা হবে না, সংসারের নিয়মকে মেনে নিতেই হলো ।
কিন্তু আপনাকে ভুলবো না কোনো দিন। ....আমিও তার পরেই বৌদির
বাড়ির টিউশন ছেড়ে দিয়েছিলাম। ......তার পর কত দিন ..কত বছর
কেটে গেলো , কোথায় আছে কোন খোঁজ করিনি ...আজ হটাৎ মনে পরে
গেলো , সেই পেছন থেকে শার্টে টান...আর চোখ বড় বড় করে টুটুর সেই
কথা ....খুব ডাট আপনার না ?
দেখলেও কথা বলেন না কেন ? ...........
 
Last edited by a moderator:
কবিতার খাতা পরে আছে পাশে
অতীত স্মৃতিরা ফিরে ফিরে আসে ,
তোমার মনের আঁধার নিয়ে ক্লান্ত বাতাস,
কলমের কালি গুড়ো গুড়ো হয়ে
ঢেকে দেয় মনের আকাশ i
থেমে গেছে স্রোত জীবন থেকে
থমকে গেছে দিন রাতের মাঝে ,
কবিতার খাতা খোলা পরে আছে
শুধু কবিতা পাইনা খুঁজে i
আজও সন্ধ্যা বেলা তুলসী তলে
তোমার দেয়া প্রদীপ জ্বলে i
কেন পাইনা খুঁজে মনটা বারে বারে
কোথায় হারিয়ে গেছে কোন সুদূরে
খাতার মাঝে কবিতা হারিয়ে গেছে ,
কবিতার খাতা পাশে খোলা পরে আছে i
শুধু কবিতা পাইনা খুঁজে ...........
 
হৃদি সরোবরে চকিতে হেরিনু
ফুটিয়াছে এক কুবলয় কলি।
ধীরে সঙ্গোপনে তাহারে শুধানু,
বলো গো কবে আসিবে তব অলি?
(ওগো)তাহার রূপেতে যে হৃদি উজ্জ্বল
নব নব রঙ ঢালে অবিরত।
সে মাধুরীতে মন বুঝি চঞ্চল,
হৃদয়েতে জাগে স্বপ্ন শত শত
কল্পনা তার, কেমনে আসি অলি---
বাসিবে গো ভালো,করিবে সোহাগ।
ব'লে--"তব প্রেমে ধন্য আমি কলি,
তাইতো তোমাতে এতো অনুরাগ।।"
সেই সে বাণীতে শান্ত সরসীতে,
আসিবে বুঝিবা প্রেমের জোয়ার।
সব ফুল বুঝি ঝরে ধরণীতে,
সাজাতে বাসরে প্রেমের বাহার।।
তুমি অপরূপ কুবলয় কলি---
আছো সুখে মম মন বাসরেতে।
সেই কথা আমি কাহারে যে বলি,
নহো যে তুমি নয়ন বাহিরেতে।।
 
** বাংলা ***

বাংলা মোদের মাতৃ ভাষা
বাংলা মোদের প্রান,
বাংলা ভাষা মোদের কন্ঠে
ভগবানের দান।
বাংলা ভাষায় ভাটিয়ালি
সূর্য ডোবা নদীর বুকে,
গ্রামের পথে বাউলেরা
বাংলা ভাষায় গাইছে সুখে।
আমরা,
বাংলা ভাষায় ঝগড়া করি
বাংলা ভাষায় ভালোবাসি,
বাংলা ভাষায় খুনসুটি
আর বাংলা ভাষায় হাসাহাসি।
এপার বাংলা ওপার বাংলা
একই বাতাস একই জল,
ওপার বাংলার দু:খে কাতর
এপার বাংলার চোখ ছলছল।.........
 
****** রজনীগন্ধা ******
রাত্রি নেমেছে ঘুমের পরীর সাথে
ফিরে গেছে ঘরে সন্ধ্যা ,
বাগানের মাঝে পূর্নিমা রাতে
ফুটেছে রজনীগন্ধা ......
তুমি আর আমি বসে আছি
দুজনে দুজনার পাশা পাশি ,
মনে মনে দুজনে একই কথা
বলে যাই ভালবাসি ভালবাসি ......
রজনীগন্ধ্যা যামিনীরে কহে সখী
সারাদিন তব পথ চেয়ে থাকি
সন্ধ্যা যখন ঘরে ফিরে যায়
শুধু রজনীতে তোমাকে দেখি।।
তুমিও আমার পূর্নিমা রজনী
আমার প্রেমের স্বপ্ন ,
আমি যে রাতের রজনীগন্ধ্যা হয়ে
রয়ে যাবো তোমাতে মগ্ন .......
*****
 
বসন্তের ডাক

অনুরাগে ভরে বসন্ত বাতাস
আহা কিবা তার রঙের বাহার ।
চারিদিকে অতসী সুবাস,
হৃদি মাঝে বাজে বাঁশরী কাহার ।।
বিগলিত দু'কূলা তটিনী সম,
মম হৃদয় যে আজ ছন্দে বহে।
কিংশুক রঞ্জিত অঞ্চল মম,
জানিনা কাহারে অণ্বেষিতে চাহে।।
মহুয়া সুবাসে হইয়া মাতাল,
গুঞ্জে ফেরে অলি দ্বার হতে দ্বার।
সেই সুরে বাঁশরী মেলায় যে তাল,
বাঁশরীয়া বলে আমি তবে কার ?
এ মধু বসন্তে পুষ্পপ্রেঙ্খা দোলে,
রক্ত বর্ণকৌমুদী বুকে ভ্রমর
চুম্বন আঁকি সকল ব্যথা ভোলে,
ভরে যায় দোঁহের দু'টি অন্তর।
মৃদু মন্দএবসন্ত সমীরণে
ভাসিয়া আসিছে সৌরভ কেয়া'র,
মোর হিয়া ফেরে কুঞ্জর দর্শনে,
বুঝিনা কি অপরূপ সে বাহার।।
বিহগ বিহগীতে করে কূজন
শাখা প্রশাখায় উড়িয়া উড়িয়া ।
মৌমাছি সবে মিলি করে গুঞ্জন,
শাখা হতে ফুল পড়ে যে ঝরিয়া।
বসন্ত যে মোরে ডাক দিয়ে যায়,
কিবা আহা যার মধু-সম্ভাষণ।
সেই ডাক বুঝি ফেরে ফুলবায়,
অলিতে কালিতে তারই আলাপন।।
 
বসন্তে সহসা যে হিমেল বায়
পরশিয়া মোরে সোহাগেতে ভরে,
অদেখা মুখটি হিয়াতে ভাসায়
অন্তর মাঝারে কোন স্বপ্ন গড়ে।।
কহি সমীরণে এ কেমন খেলা
ধরা নাহি দাও ফিরে চলে যাও,
খেলিবার আশে ফেরো সারাবেলা
সরসী সলিলে কোন সুর দাও?
সে কহে হাসিয়া এ'তো খেলা নয়
জীবন জোয়ারে ভাসিবার ছন্দ,
প্রেমের মাঝারে কতো মধু রয়
কতো সুর আর কতো না আনন্দ।।
ভুলিও না কভু প্রেম না রহিলে
জীবন যে হ'তো শুষ্ক এক মরু,
সুখে ও দুখে খেলা নাহি করিলে
হাসিতোনা কুসুমেতে ভরা তরু।।
প্রকৃতি মাঝারে যে প্রেমানুভুতি
সকল হৃদয়ে করে বিচরণ,
তাইতো জীবনে সুখ ও সম্প্রীতি
যাহার নাহিকো কোন বিবরণ।।
জীবনের ভাষা প্রেম কিগো তবে
বরষায় প্রকৃতির অশ্রুধারা
তাহাও তবে প্রেমের অঙ্গ হবে
ফাগুনে অলি গুঞ্জে পাগলপারা।।
প্রেমই দেখি যে জীবনের ভাষা
প্রকৃতি,প্রাণীতে তারই প্রকাশ,
মৌন ও মুখরেতে যে ভালবাসা
জীবনের ছন্দে হয় সে বিকাশ।।
 
বসন্ত কহে অনুরাগ ভরিয়া
কেন তুমি বঁধূ উদাসীন আজি,
বসিয়া আছো যার পথ চাহিয়া
আসিবে সে লইয়া কুসুম রাজি।
সমীরণ হবে তব প্রেমদূত,
কোকিল গাহিবে শুধু প্রেম গীতি,
আকাশ বক্ষে না খেলিবে বিদ্যুৎ,
(বলো)কেমন মধুর হইবে সে তিথি?
যুঁই,কামিনী যে সুরভি ছ্ড়াবে,
বাঁশীতে বাজিবে বাহারের সুর,
জোছনা হাসিয়া আলোয় ভরাবে
মনের আঁধার হইবে যে দূর
প্রেম শতদল ফুটিবে সলিলে,,
পাহাড়ের বুকে ঝর্ণা ঝরিবে;
মধু রজনীতে চাঁদটি উঠিলে ,
তব ৃহৃদ প্রণয় ভরিবে
আজি আসিয়াছেএ সেই মধুক্ষণ,
অবহেলা ভ'রে ফিরায়োনা তারে,
তাহারে করিয়া লওগো আপন
মধুর হাসিতে প্রণয়ের ডোরে।
সার্থক তবেই হবে এ বসন্ত
তোমার মাঝরাতে করো তারে ধন্য,
তব প্রণয় হইবে যে অনন্ত
প্রকৃতির মাঝে তুমি যে অনন্য।। — in V
 
মনের বনে সুরটি বাঁধি
খুঁজে ফিরিয়ে মোর স্বপ্ন রাজি।
সুরেলা হতে নিজেরে সাধি
সুর সাগরে দিয়ে ডুব আজি।।
ভাবি কোন সুরে গায়ে পাখী
হৃদয়টিরে দেয় যে ভরে
কাহার লাগি চঞ্চল আঁখি
কল্পনায় সুখ নীড় গড়।।
মোর স্বপ্ন তরী খানিকটা বেয়ে
কে গো এলে মোর তন্দ্রা মাঝে
ছিনু আমি যার পথ চেয়ে
প্রতিটি নিশিতে নিদ্রা মাঝে
কহিলে তুমি ভালবাসার
গান খানি আজিকে শোনাও,
(কহিনু)বেলা যে পড়ে এলো যাবার,
এবে আসি কেন গো ভোলাও।।
 
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত শ্যামল মিত্রের গাওয়া এই গানের অভিঘাত আজও বাঙালি হৃদয়ে বিদ্যমান।
স্পন্দন সঙ্গীত শিক্ষালয় আয়োজিত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে 'সারাদিন তোমায় ভেবে' অনুষ্ঠানে এই গান গাইবার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য।
ত্রুটির কার্পণ্য করিনি।হেডফোন নিলেই সেটা আরো বেশি করে বুঝতে পারবেন।পরামর্শ রইল।
গান - হংসপাখা দিয়ে ক্লান্ত
কথা - শ্রী অমীয় দাসগুপ্ত
সুর - শ্রী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
মূল গায়ন - শ্রী শ্যামল মিত্র
প্রকাশকাল - ১৯৬৯
 
******* রাগ ভাঙানো *******

তুমি রেগে গেলে তোমাকে খুব সুন্দর
দেখায় , নাকটা লাল হয়ে যায় , ঘন
ঘন নিশ্বাস পরে, আমার দিকে তাকাও
না জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে
থাকো i আমি চেয়ে চেয়ে দেখি তোমাকে
তখন কি যে সুন্দর লাগে তোমাকে ,
চোখ ফেরাতে পারিনা ... কেন রেগে
গেলে আমার ওপরে ? আমার অপরাধ
আমি বলে ফেলেছিলাম বৃষ্টি আমার খুব
ভালো লাগে , বৃষ্টি আমি ভালবাসি i
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার এক
বন্ধুর নাম বৃষ্টি, খুব মিষ্টি দেখতে
একটি মেয়ে ..আসলে আজ সকাল থেকে
কখনো টিপ টিপিয়ে কখনো ঝম ঝমিয়ে
বৃষ্টি ঝোরে যাচ্ছে , মনটা আমার এত
খুশি যে বৃষ্টি কে নিয়ে একটা
কবিতাই লিখে ফেলেছি i ওটা ওর
চোখে পড়েছে , আর ভেবে বসেছে
ওর বন্ধু বৃষ্টিকে নিয়ে আমি কবিতাটা
লিখেছি i প্রচন্ড রেগে গেছে আমার ওপরে ,
কিছুতেই বোঝাতে পারি না যে এ বৃষ্টি
তোমার বন্ধু বৃষ্টি নয়, এ যে আকাশ
ভাঙ্গা ঈশানী মেয়ে, নুপুর পায় ময়ুরের
ছন্দে নেমে আসা অঝোর ধারায় দুষ্টু একটি
মেয়ে i যে কিনা কখনো হয়ে যায় পাহাড়
থেকে ঝরে পরা ঝরনা , কখনো তটিনী
হয়ে কুল কুল করে গান গাইতে গাইতে পারি
দেয় মোহনার দিকে সাগরের বুকে
ঝাপিয়ে পড়তে আবার কখনো রুম ঝুম
ঝুম খেজুর পাতায় নুপুর বাজিয়ে আমাদের
চোখে একে দিয়ে যায় কালো মেঘের
ভালবাসার কাঁজল I একটু আদর করে ওর
রাগ ভাঙ্গতে গেলাম এক ঝটকায় আমাকে
সরিয়ে দিয়ে বলল ...যাও তুমি বৃষ্টির কাছেই
যাও , আমাকে আর ভালবাসতে হবে না i
বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে , আমিও
দুষ্টুমি করে বললাম তাহলে যাই আমি
বৃষ্টির কাছেই যাই ...বলে চলে গেলাম ছাদে
ভরা বর্ষার মাঝে ...আর বৃষ্টি আমাকে পেয়ে
মনের সাধ মিটিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাকে i
হটাৎ দেখি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে ও
আমাকে , আর কানে কানে বলছে ঠান্ডা
লেগে যাবে যে ...দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে
ভিজে চলেছি অঝোর ধারার বৃষ্টিতে , আমি
ওর কানে কানে ফিস ফিস করে বললাম
তুমিই তো আমার বৃষ্টি, তুমিই তো আমার
ভালবাসা ...কবিতা টা আমি তোমাকে নিয়েই
লিখেছি ....
 
কোভিড পরিস্থিতিতে ফাষ্ট ডিভিশনে মাধ‍্যমিক পাশ করা পাঁচ জন ছাত্রের "উচ্চ মাধ‍্যমিক" পরীক্ষা দিতে আসার বাস্তব গল্প লিখলাম।
বাংলা ও ইংরেজী পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, এবার পছন্দমত বিষয়ের পরীক্ষা চলছে। ইতিহাস পরীক্ষার দিন পরীক্ষা কক্ষে নজরদারি করছিলাম খাতায় স্বাক্ষর করতে গিয়ে দেখি একজন ছাত্র "এডমিট কার্ড" এবং "রেজিষ্ট্রেশন কার্ড "এর নিজের ছবির নীচে স্বাক্ষর করেছে Kupon Kay আসলে ওর নাম Rupon Roy সে K এবং R অক্ষরের পার্থক‍্য জানে না।
আর এক দিন। সেদিন ছিল "এডুকেশন" বিষয়ের পরীক্ষা। দুজন ছাত্র পরীক্ষা দিতে এসেছে,তাদের প্রশ্নপত্র এবং খাতা দেওয়া হয়েছে,সকলে লেখা শুরু করেছে Attendence Sheet (এই শিট কাউন্সিল থেকে পাঠানো ) এ স্বাক্ষর করার সময় দেখা গেল ওদের দুই জনের নাম নথিভুক্ত নেই। "এডমিট কার্ডে" দেখা গেল "এডুকেশন" বিষয়টাই ওদের নেই,তার বদলে আছে "ইকোনোমিক্স"।
"ইকোনোমিক্স" পরীক্ষা হয়ে গেছে, ওই দিন ওরা দুজনেই অনুপস্থিত ছিল।ওরা জানেই না ফর্ম পুরনের সময় কি কি বিষয় লিখেছিল। অগত‍্যা প্রশ্নপত্র ও খাতা ফেরত নিয়ে,(প্রশ্ন যাতে বাইরে ফাঁস না হয়) আড়াই ঘন্টা ঘরে আটকে রেখে ছেড়ে দেওয়া হল। ভাগ‍্যিস নিজের স্কুলে পরীক্ষা, অন‍্য স্কুলে পরীক্ষা হলে কী যে হত?
ইতিহাস পরীক্ষা হয়ে গেছে। একজন ছাত্র পরের দিন স্কুলে এসে নালিশ করছে সে জানেই না ইতিহাস পরীক্ষা আগের দিনই হয়ে গেছে।অথচ ওর কাছে মোবাইল রয়েছে, বোঝ ঠ‍্যেলা।
একজন ছাত্র ভূগোল পরীক্ষার দিন এগারোটা পনেরো মিনিটে পরীক্ষা হলে উপস্থিত হয়েছে।(দশটায় পরীক্ষা শুরু) তাকে দেরির কারন জিজ্ঞেস করায় বলল, রাত জেগে পড়াশুনা করেছে,সকালে ঘুম ভাঙতে দেরী হয়ে গেছে। তার পকেট তল্লাসি করে এক গাঁদা বইয়ের মাইক্রো জেরক্স ও হাতে লেখা কপি পাওয়া গেল। রাত জেগে এই কাজ করেছিল?(পরীক্ষার সময় লোকাল জেরক্সের দোকান বন্ধ থাকে )না দূরে কোথাও জেরক্স করতে গিয়েছিল? উত্তর মেলেনি।
 
নিরঞ্জন আর শ্যামলীর বিয়ে হয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর আগে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দুজনেই এখন হাত পা ছাড়া। বন্ধন বলতে আর কিছুই নেই। নিরঞ্জন মাছের ব্যবসায়ী আর শ্যামলী প্রাইমারি স্কুলের টিচার। তবে বর্তমানে রিটায়ারমেন্ট লাইফ কাটাচ্ছে। নিরঞ্জন কর্মচারী আর ম্যানেজারের মাধ্যমে নিজের মাছের ব্যবসা আর কোলাঘাটে কিছু ফেরী নৌকা, আর একটা ইটভাটি নিয়ে মোটামুটি চালিয়ে যাচ্ছে।
সাহিত্য থেকে বিচ্যুত নিরঞ্জন সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো বলেই চেনে, আর শ্যামলী সবকিছুর মধ্যে কাব্যের রস খুঁজে পায়। এই ব্যাপারটা দুজনের অমিলের প্রধান কারণ। বিয়ে হয়ে যাওয়া থেকে ইস্তক তারা সব সময় চিন্তা করে এসেছে একজনকে ছেড়ে দিয়ে অন্যজন আনন্দেই রয়ে যাবে। বাস্তবে তা কখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বড় মেয়ে জন্মানোর প্রায় সাত বছর পরে ছোট মেয়ে জন্মায়। দুইজন মেয়েকে বড় করে, প্রতিষ্ঠিত তুলতে তুলতে কখন যে নিজেদের যৌবন চলে গিয়েছে দুজনেই টের পায়নি। শ্যামলী যেদিন নিজের মাথায় প্রথম পাকা চুলটা দেখতে পেল খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল, কি করে আয়নায় মুখ দেখাবে সেটাই চিন্তা করছিল। নিরঞ্জন এমনিতে খুব স্বজ্জন ব্যক্তি, শ্যামলীকে খুব বেশি পাত্তা দেয় না। নিজের টাকা করি আর ব্যবসা নিয়েই পড়ে থাকে। শ্যামলী লজ্জা লজ্জা মুখ করে নিরঞ্জনের সামনে এসে দাঁড়ালো বলল সত্যিই আজকে থেকে আমি বুড়ি হয়ে গিয়েছি। নিরঞ্জনের সোজা সাপটা উত্তর। বয়স হলে তো বুড়ি হবে। এতে আবার বলার কি আছে? আজকে বুড়ি হচ্ছো, কালকে মরে যাবে। গল্প শেষ, তো এটাই জীবন। নিরঞ্জনের উত্তর শুনে শ্যামলী খুব হতাশ হয়ে পড়ল।
শ্যামলী ভাবে এই লোকটাকে কি করে এতদিনে সে সহ্য করে যাচ্ছে ,গা থেকে মাছের গন্ধ ছাড়ে, তাও নয় সহ্য করা যায়! কিন্তু এরকম বেরসিক লোক পৃথিবীতে কেউ পেয়েছে কিনা সেটাই সে জানে না। এই লোকটা কি করে রাত্রিবেলা পাশে এসে শোয়, আবার তার দুটো ফল লালন পালন করে শ্যামলী বড় করে তুলছে! নিরঞ্জন এর ভাবনা করার মতন সময় নেই, ওইসব বেকার ভাবনা করতে গেলে ব্যবসায় বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। তবুও আজকাল কেমন যেন শ্যামলীর কথা বারবার মনে পড়ে। শ্যামলীর মুখটা চিন্তা করলেই তার খুব হাসি পায়। একদম মুচকি হাসি নয় যাকে বলা হয় অট্টহাসি।
নিরঞ্জন বড় মেয়েকে খুব ভালোবাসতো রূপে গুনে লেখাপড়ায় বাবার মান সমাজে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সবাই বলতো নিরঞ্জন এর মেয়ে এত গুণী হল কি করে? সকল লোকের এক কথা একজন ব্যবসায়ীর মেয়ে বুদ্ধিমতী হতে পারে কিন্তু বিদ্বান হতে পারে না। আর শ্যামলীর ছোট মেয়েকে নিয়ে খুব প্রশংসিত। আবৃতি নাচ এবং শ্রুতি নাটকে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেছিল। মায়ের অনলস প্রচেষ্টা ছোট মেয়েকে মোটামুটি হাওড়া আর পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছিল। বড় মেয়ে এম টেক পাস করে টিসকোতে কাজে জয়েন করলো, আর কিছুদিনের মধ্যে বেলারুসে চলে গেল প্রোজেক্টের কাজে। ছোট মেয়ে নাচে মাস্টার করার পরে বাবার ব্যবসার হাল ধরল, ব্যবসাতে বাবার যেসব ছোটখাটো ভুল হয়ে যেত মেয়ে এসে ঠিক করে দিতে লাগলো। নতুন রক্ত ব্যবসাতে জয়েন করার জন্য ব্যবসার আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটলো।
দুই মেয়ে যখন নিজেদের জগতে আরও বেশি রকম ব্যস্ত হয়ে পড়ল শ্যামলী আর নিরঞ্জন বাধ্য হল পাশাপাশি আসতে। বড় মেয়ের জন্য নিরঞ্জনের বুক পুড়তো, আর ছোট মেয়েকে কাছে না পেয়ে শ্যামলী সবসময় কষ্টের মধ্যে থাকতো। শ্যামলী রিটারমেন্টের পর স্কুলের সমস্ত টিচাররা হঠাৎ প্ল্যান করেছিল সুন্দরবন এ ঘুরতে যাবে। যে যার পরিবার নিয়ে একত্রে। শ্যামলী নিরঞ্জন কে যখন বলল নিরঞ্জন যেন আকাশ থেকে পড়ল। ব্যবসা ছেড়ে আমি কি করে তোমার সঙ্গে ঘুরতে যাব? আমি বুঝতে পারছি না! আমার অত সময় নেই তোমার লেজে লেজে ঘোড়ার মতন। শ্যামলী নিরঞ্জনের কথা শুনে খুব আশাহত হয়ে গেল। না বাঁধ-মানা চোখের জল দুকুল ছাপিয়ে গাল বেয়ে শাড়ি ভিজিয়ে দিল। নিরঞ্জন ব্যাপারটা দেখে হঠাৎ কেমন দ্রবীভূত হয়ে পড়ল। বলল ঠিক আছে, না হয় তোমার সঙ্গে আমি গেলাম। কিন্তু একটা কাজ করলে হয় না , আমাদের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে সোজাসুজি কাকদ্বীপ চলে গেলে হয় না! শ্যামলী নিরঞ্জন এর কথাকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলল তাহলে সকলের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার মানেটা কি আছে! সকলে মিলে আনন্দ কষ্ট একসাথে ভাগ করে নেব এটাই তো ঘুরতে যাওয়ার আসল মজা!
বিয়ের পরে শ্যামলী আর নিরঞ্জন একবারই মাত্র বেরিয়েছিল তাও পুরীতে হানিমুনের জন্য, দীর্ঘ বছর দুজনে একসাথে কোথাও বেরোয়নি। এমনকি শ্যামলীর বাপের বাড়িতেও নিরঞ্জন শ্যামলীকে নিয়ে যায়নি। যদি কোনদিন প্রয়োজন পড়েছে নিরঞ্জন একা শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছে কিংবা শ্যামলী নিজে একা গিয়েছে মেয়েদের নিয়ে। শ্যামলীর কথা মতন লোকাল ট্রেনে চড়ে তারা সাঁতরাগাছি তে এসে পৌঁছালো। এই ভীড় ধাক্কাধাক্কি ফেরিওয়ালাদের অযথা চিৎকার আর অচেনা-অজানা লোক গায়ের কাছে এসে বসে যাওয়া একদম মেনে নিতে পারছিল না নিরঞ্জন। মুখটাতে তার যেন শ্রাবণের মেঘ জমে গিয়েছিল! আর শ্যামলী খুব উৎসাহ নিয়ে সহযাত্রীদের সঙ্গে হইচই করে কথা বলছিল এমনকি ফেরিওয়ালাদের থেকে টুকটাক জিনিসপত্র কিনে নিজের ব্যাগ ভরাচ্ছিল। শ্যামলীর মুখে যেন নতুন সূর্যের আলো পড়েছে চকচক করছে।
বাসে ফাঁকা সিট পাবে এই আশায় নিরঞ্জন শ্যামলীকে প্রায় একপ্রকার জোড় করে সিনিয়র সিটিজেন সিটে বসিয়ে দিল। বুড়োবুড়ি পাশে বসে থাকার জন্য দুজনের মধ্যে একটু আধটু করে কথাবার্তা শুরু হলো। বেরোসিক বুড়ো আর রসবতী বুড়ি ঠিকমতন জমছিল না তাদের কেমিস্ট্রি টা। শিয়ালদা পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল নিরঞ্জন কিন্তু এক ফোঁটাও ক্লান্তি শ্যামলীকে ছুঁতে পারেনি। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে যখন তারা নামখানায় এসে পৌঁছালো নিরঞ্জন এর অবস্থা যেন একটা ঝরা কাক, চার পাশটা তে তার দিক-শুন্য পুর লাগছে। কিন্তু তখনো শ্যামলী যেন ভোরের ফোঁটা জুঁইফুল, হইচই আর গানে চারপাশে সুগন্ধে ভরিয়ে তুলছে। ইতিমধ্যে একটা কবিতা লিখে সকলকে পাঠ করে শোনালো। লাগেজ বইতে বইতে নিরঞ্জনের অবস্থা কাহিল এই অবস্থায় সে কি করে কবিতার সাধ নেবে বুঝতে পারছিল না। এমনিতেই তার এই কাব্য খুব একটা ভালো লাগে না। ন্যাকামো করে অযথা পয়সা নষ্ট করা একদম সহ্য করতে পারে না নিরঞ্জন।
যখন তারা নৌকাতে করে গিয়ে রিসোর্টে উঠলো রাত তখন দশটা বেজে গিয়েছে। কিছুটা খেয়ে দেয়ে কোনরকমের বিছানায় শরীরটা ফেলে দিল নিরঞ্জন, সারাদিনের কায়িক শ্রম, নিরঞ্জন এর অসহ্য মাথা ধরে গিয়েছিল। কিন্তু কোন রকমের সেটা সে প্রকাশ করতে চাইনি। নিরঞ্জন এর কষ্ট শ্যামলী বুঝতে পারছি একটা অপরিচিত জায়গায় এক কর্মব্যস্ত লোককে যদি হঠাৎ ফেলে দেয়া হয় এবং কোন কিছু কাজ না করে স্ত্রীর ফরমাইসের কাজ করতে হয় সেই লোকের যে কি বিচ্ছিরি অবস্থা হয় শ্যামলী আন্দাজ করতে পেরেছিল। ঘুমন্ত নিরঞ্জনের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে চুলের ভেতরে আঙ্গুল চালাতে থাকলো শ্যামলী। দীর্ঘ এতদিন ধরে কেন নিরঞ্জন কে সে ঠিক মতন বুঝে উঠতে পারল না সেটাই নিজে বুঝতে পারল না!!
 
মেঘবালিকা আর নীললোহিত কলেজের জীবন থেকে দুইজনে দুইজনের পরিচিত। দুজনেই সাইন্সের স্টুডেন্ট ছিল, কখন নিজেদের মধ্যিখানে গল্প করতে করতে প্রেম করে ফেলল নিজেরাই জানতে পারল না। মেঘবালিকা বাঙাল আর নীললোহিত ঘটির ছেলে। দুজনের মা-বাবা রাজি হয়নি পরস্পরের বিয়ের জন্য, দুই পক্ষের প্রবল জেদের কাছে দুইজনেরই মা-বাবা নতি স্বীকার করে এবং বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের আগেই মেঘবালিকা কোল ইন্ডিয়ায় এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে চাকরিতে জয়েন্ট করে। আর নীললোহিত রুরাল ডেভেলপমেন্টের ক্লার্ক হিসাবে জয়েন্ট করে। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই দুজনের কোন আলো করে চিরন্তন পৃথিবীতে আসে।
ছোট্ট চিরন্তনকে বড় করতে গিয়ে দুজনকে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ছমাসের মাতৃকালীন ছুটি থেকে যখন কাজে জয়েন্ট করলো মেঘ বালিকা, চিরন্তন একলা হয়ে গেল। নীললোহিত নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং গোটা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ব্লকে ব্লকে ঘুরে বেড়ায়। ঘরে খুব একটা সময় দিতে পারেনা। চিরন্তনকে কখনো দিদিমার কাছে কখনো ঠাকুমার কাছে রেখে মেঘবালিকা কাজে যেত। এইভাবে বছর ঘুরে যেতে থাকলো। দুই দিদার কাছেই চিরন্তন খুব আদরের। কিন্তু যখন স্কুলের প্লে সেকশনে চিরন্তনকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হলো।
চিরন্তনের দিদিমা একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার সামাজিক কাজকর্ম, নিজস্ব কিটি পার্টি আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় চলে যায়। চিরন্তনের ঠাকুমার হঠাৎ করে এক বৃদ্ধাশ্রমে যোগাযোগ হয় সেইখানে প্রায় বিনা মজুরিতে শিক্ষকের কাজে সে জয়েন্ট করে। চিরন্তনকে দেখার মতন লোকের অভাব হতে শুরু করল। আয়া সেন্টার থেকে আয়া কে কল করে চিরন্তনের জন্য ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু তিন বেলার আয়া চার্জ প্রায় ২৭ হাজার টাকা। এবার তাদের খাওয়া দাওয়া দিয়ে প্রায় ৩৩-৩৪ হাজার টাকা মতন পড়ে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত এই সমস্ত টাকা মেঘবালিকাকে দিতে হতো।
এই খরচা কি করে কমানো যায়? সেই চিন্তা করতে করতে মেঘ বালিকা একদিন নিজের অফিসের মালি কে ব্যাপারটা বলল। মালি সুন্দরবন থেকে আসা-যাওয়া করতো, সেখানকার একজন ১৫-১৬ বছরের মেয়েকে কাজের জন্য নিয়ে এলো। চিরন্তনের দাদু কলকাতা হাইকোর্টের একজন বড় ব্যারিস্টার, আর ঠাকুরদা কনস্ট্রাকশন লাইনে প্রোমোটার এর কাজ করে। শ্যামলী এই প্রথম কলকাতায় এলো। এই জীবনের মধ্যখানে তিন জনের সঙ্গে প্রেম করে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফেলেছে নিজের জীবনে। মানুষের রক্তের স্বাদ কি বাঘিনী সেইটা টের পেয়ে গিয়েছিল।
শ্যামলী আধার কার্ড দেখে চিরন্তনের ঠাকুরদা কাজে রেখে দেয়। এবং মৌখিকভাবে থানায় জানিয়ে দেয় এই নামের একজন মেয়ে তাদের কাছে কাজ করছে। বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যাবার পর লক্ষণ নামে এক নবযুবক চিরন্তনদের বাড়িতে এলো, এবং শ্যামলী সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করলো। শ্যামলী এক কথাতেই অরাজি হয়ে গেল এইরকম নামের ছেলেকে সে চেনেনা বলে। তখন লক্ষণ নিজের সমস্ত কথা বাড়ির সবাইকে বলল। এই মেয়েটা তাকে ঠকিয়ে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কিছু টাকা একটা সোনার চেইন এবং দামী একটা মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে এই কলকাতায় চলে এসেছে। সবাই ব্যাপারটাই জেনে গেছে দেখে শ্যামলী বলল আগে তার ১৮ বছর বয়স হোক তারপর সে বিয়ে করবে। এখন কোন কথা নেই এই কথা শুনে লক্ষণ চলে গেল বাড়ি ছেড়ে।
শ্যামলীর কাজকর্মে ঘরের সবাই খুব খুশি ছিল, মেঘবালিকা নিজের কাজে ভীষণ রকম ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নীললোহিত ছেলের জন্য মাঝে মাঝে ঘরে রয়ে যেতে থাকলো। আস্তে আস্তে শ্যামলী এবং নীললোহিতের মধ্যে এক মধুর সম্পর্ক তৈরি হলো। শ্যামলী আবার চিরন্তনের ঠাকুরদাকে স্নানের আগে, গায়ে তেল মাখিয়ে দিত, ও স্নানের সাহায্য করে দিত।‌ চিরন্তনের ঠাকুমার অনুপস্থিতিতে অনেক রকম গিফট কিনে শ্যামলীকে দিয়েছিল প্রোমোটার বাবু।
বাড়ি ঘরের অবস্থা নীললোহিত আর তার বাবার অনুচ্চারিত সত্য কথাগুলো মেঘবালিকা বুঝে ফেলল। তার এবং শাশুড়ির অনুপস্থিতিতে ঘরের ভিতরে কি মহাভারত রচনা হয়। এই কিছুদিনের ভেতর শ্যামলীর পরিচর্যায় চিরন্তন অনেক হাসিখুশি উজ্জ্বলময় হয়ে উঠলো।
এখন হয়েছে, মেঘবালিকার ভীষণ সমস্যা।
শ্যাম রাখবে না কুল রাখবে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।
#everyone
@allfriends
 
কি সামন্ত কোথায় চললে ভরদুপুরে এতো সেজেগুজে?
-ভবানীপুরে ছেলের বাড়ি।ওখানে আমার খোকা থাকে।
-তা খোকা এখন কি করছে?
-ছেলে বৌমা দুজনই বড়ো চাকুরী করে।এই পাঁচ বছর হল ওরা ওখানে জমি কিনে ঘরদর করেছে।খোকার মা বেশ কিছুদিন ধরে বলছে নাতিটাকে একটু দেখে এসো।তাই সেজেগুজে বেরিয়েছি ওদেরকে একটু দেখতে।কতো দিন হল ওদের মুখ গুলো দেখি না।মনটা কেমন যেন করে।
-সেজেগুজে তো যাবে। চাকুরী ছেলের বাবা বলে কথা।
-হ্যাঁ অনন্ত ।ছেলেটাকে মানুষ করতে পেরেছি এটাই সুখের।
-তা ও ব্যাগে কি নিলে?
-খোকা নারকেলের নাড়ু খেতে খুব ভালোবাসে।তাই ওর মা ভোর রাতে উঠে তৈরি করে দিয়েছে।
-মা তো,ছেলের ভালো মন্দ সব বোঝে।যাও তাহলে।আর দেরি করো না।তা দুটো খেয়ে বেরিয়েছে তো?
-না.. না..ছেলের বাড়ি গিয়ে বৌমার হাতের রান্না খাবো পেট ভরে খাবো।
-হা..হা..।বেশ ভালো।তাহলে সাবাধানে যাও।আর দেরি করো না।
-আচ্ছা আসি। তুমিও ভালো থেকো অনন্ত।
গাড়িঘোড়া সময় মতো না পাওয়ায় সামান্ত সেনের ছেলের বাড়ি পৌঁছাতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।এসে দেখেন দুতলা বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে।এক প্রতিবেশীর নিকট থেকে জানতে পারলেন তারা সিনেমা দেখতে গেছে। বাড়িতে আসতে দেরি হবে।অগত্যা সামান্ত সেন পাশের চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা খেয়ে সময় গুনতে লাগলেন ছেলে বৌ এর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।
রাত আটটা বাজতেই সশব্দে একটি চার চাকা থামলো বাড়ির সামনে গেটে।ছেলে বৌ নাতির হাত ধরে ঘরে ঢুকে যেতেই সামন্ত সেন হাজির।
-দাদু ভাই...ও দাদুভাই।
সামন্ত সেনের গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে খোকা।
-বাবা!এতো রাতে!কি ভালো আছ তো?মা কেমন আছে? ভিতরে এসো…ভিতরে এসো।
-ভালো,আমরা সবাই ভালো আছি।এসেছি সন্ধ্যা বেলায়,শুনলাম তোরা সিনেমা দেখতে গেছিস তাই একটু আসে পাশে ঘুরে এলাম।
সামন্ত বাবু ঘরে ঢুকতে আট বছরের নাতি দাদুর গলা জড়িয়ে আদর করতে থাকে।পাশে বৌমা কিছুটা বিড়ম্বিত হয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে উপরের ঘরে চলে যায়।
খোকা বাবাকে পাশের ঘরে জামা কাপড় খুলে বিশ্রাম নিতে বলে উপরের ঘরে চলে যায়।
সামন্ত সেন নাতিকে পেয়ে কতো সব গল্পে হারিয়ে যায়।এমন সময় খোকা ঘরে এসে বলে..
-কি বাবা এখনো জামাকাপড় ছাড়নি?তা ভালো হল।এই টাকাটা নাও।ঐ রাস্তা মোড়ে যে হোটেল টা আছে না?ওখান থেকে কিছু খেয়ে এসো।আমরা বাইরে থেকে রাতের খাবার খেয়ে এসেছি।বৌমা বলছে রাতে আর রান্না করবে না কষ্ট হয়ে গেছে।যাও তাড়াতাড়ি খেয়ে এসো।
-না না টাকা লাগবে না খোকা।আমার খিদে নেই।আসবার পথে ট্রেনে অনেক চিড়ে ভাজা কিনে খেয়েছি।একটু জল খেলে হয়ে যাবে।একটু জল দিয়ে উপরে যা। যাও দাদু ভাই মায়ের কাছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।কাল সকালে আবার গল্প হবে।
নাতি-ছেলে উপরে যেতেইএক পেট জল খেয়ে সামান্ত সেন আলো নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন।সেই সকালে খেয়ে এতো পথ গাড়ি ঘোড়ায় এসেছেন। শরীরের ক্লান্তির সাথে পেটের খিদেটা বেড়েছে। কিন্তু সে ভাবতে থাকে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে ওরাও তো ক্লান্ত।আবার আমার জন্যে রান্না বান্না!এটা ভালো হয় না।ওদের সুখে তো আমার সুখ।ওরা ভালো থাকলে তো আমাদের ভালো থাকা।এমন সময়
-দিদি..এই দিদি..দরজা খোল।আমি নীলয়।
সামান্ত সেন শুনতে পেলেন বৌমা সিঁড়ি দাপাতে দাপাতে নীচে নেমে বলছে..
-এতো রাতে কোথা থেকে এলি?
-আর বলিস না।ইডেনে ক্রিকেট খেলা দেখতে এসেছিলাম।ভাবনাম কলকাতায় এলাম যখন ঘুরে যাই। তাই এলাম।
-ভালো হয়েছে।তুই উপরে যা।আমি তাড়াতাড়ি রান্না করছি।
-না না দিদি।রান্নার দরকার নেই।আমি খেয়ে এসেছি।
-দুর বোকা।দিদির বাড়িতে এসেছিস।তার উপর এই পরিশ্রম।আর না খেয়ে রাত কাটাবি?না না তুই উপরে গিয়ে জামাই বাবুর সাথে গল্প কর।আমি তাড়াতাড়ি রান্না করছি।
এসব শুনে সামান্য রোজগেরে সামান্ত সেনের বুকে ভিতরে একটা কষ্ট হতে লাগল।অন্ধকারে জোনাকির আলোর মতো কত স্মৃতি ভেসে উঠতে থাকে।এই ছেলেকে মানুষ করতে কতো পরিশ্রম সে করেছে।কতো রাত না খেয়ে কাটিয়েছে। কতো শরীর খারাপেও ছুটে গেছে কারখানার কাজে।কতো সখ ইচ্ছা অনিচ্ছা হারিয়ে ফেলেছে রাতে অন্ধকারে।এই বয়সে এসেও দুমুঠো ভাতের জন্য ছুটে যেতে হয় কারখানায়। এমন সব ভাবতে ভাবতে চোখের জলে বালিশ ভিজে যায়..
দূরে কোন শাখে কাতরে কেমন ডাকে
বাসা ভাঙা কোন পাখি
এ আঁধার শেষে সূর্য কখন ওঠে
ভোরের আলো দেখবে আঁখি।
-কি বাবা এতো সকালে কোথায় যাচ্ছ?
-এবার আসি রে খোকা। তোর মাকে একা ফেলে এসেছি।বাড়ি না ফিরলে খুব চিন্তা করবে।
-সকালে খাবারটা খেয়ে যান। আমি লুচি তরকারি করে দিচ্ছি।
-না বৌমা।ওসব থাক।আমি চলি।
সামান্ত সেন প্যাকেট থেকে নাড়ুর কৌটোটা টেবিলে রেখে বলে
-এতে নারকেলের নাড়ু আছে।মা তোর জন্যে তৈরি করে দিয়েছে।তুই খুব ভালোবাসিস তো তাই।
নাতিকে কোলে তুলে চুমু দিয়ে চলে যেতে বৌমা বলে..
-আবার আসবেন বাবা।
-হ্যাঁ মা আসবো তবে এ সম্পর্কে আর নয়।যদি কোন দিন তোমার ভাই হয়ে আসতে পারি তবেই আসব মা।
চোখের জল লুকিয়ে মনে মনে বলেন....
কোজাগরী এক পূর্ণিমা রাতে
লক্ষ্মী এনেছি ঘরে
ধন ঐশ্বর্যে পুর্ণ থাকো মা
আমি চলি আজ পথে।
 
তোমরা আমাকে রক্ত দাও
আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো.....
এই বলিষ্ঠ কণ্ঠ ছড়িয়ে পরেছিল
ভারতের আকাশে বাতাসে, উদ্বেলিত
হয়ে উঠেছিল সেদিন আসমুদ্র হিমাচল।
তুমি নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস তুমি
ছিলে নেতার নেতা, তুমি ছিলে
পরাধীন ভারতের ত্রাতা। তোমার
কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গর্জে উঠেছিল
ভারত, ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো।
আজাদ হিন্দ ফৌজের পদধ্বনিতে
কেঁপে উঠেছিল সেদিন ইংরেজ
সরকার। স্বাধীন হয়েছিল ভারতবর্ষ।
আজ তোমার ১২৬ তম জন্মদিনে
তোমাকে স্মরণ করি অবণত চিত্তে।
আমাদের মননে স্মরণে তুমি ছিলে,
তুমি আছো তুমি থাকবে চিরকাল।
জয়তু নেতাজী। লহ মোর সশ্রদ্ধ প্রণাম।
 
শরতের নীল আকাশে
মেঘ গুলো সব এলো মেলো,
ভাবছে এ মন বাতাস ছুঁয়ে
শিঁউলী ফোটার দিন এলো ।
কাঁশ বনের ওই ঢেউএর সাথে
মনটা ওড়ে ভ্রমর পাখায়,
সাঁঝ আকাশের রং নিয়ে সে
শিমূল বনে আবীর মাখায় ।
আগমীর বাঁশির সুরে
ধানের ক্ষেতে কাঁপন জাগে,
হীমেল হাওয়ায় শরত আসে
ফুল ফোঁটে শিউলী শাখে
পদ্ম দিঘীর পদ্ম দোলে
শরত রানীর পূঁজার থালায়
নীল পদ্মের স্থান হয়েছে
মৃণ্ময়ী মার পূঁজার থালায় ।......
 
আকাশ হয়েছে নীল
বাতাসে পূজোর গন্ধ,
কাঁশ ফুলের দোলায় দোলায়
উর্বশী নাচের ছন্দ।
রাখালীয়া বাঁশির সুরে
আগমনীর সুবাস মাখা,
ফুলে ফুলে আজ ভরে গেছে
শিউলি গাছের শাখা।
পেঁজা তুলোর মেঘ
নীল আকাশে এলোমেলো,
শারদীয়া সমিরণে আজ
আগমনীর বারতা এলো।
ধন ধান্যে পুষ্পে ভড়ুক
আমাদের এই বাংলা ভূমি,
শুরু হোক মোদের নতুন জীবন
মা দশভুজার শ্রীচরণ চুমি।
 
**** চিহ্ন ***
&& &&
আজ জীবনের শেষ বেলায় এসে পেছনে ফেলে আসা দিন গুলোর কথা যখন মনে করার চেষ্টা করি দেখি সবই কেমন হারিয়ে গেছে স্মৃতির আড়ালে। প্রথম কৈশোর থেকে যৌবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত কত নাম কত স্মৃতি, টিটু রিনি রিয়া.. আরো
কত নাম আজ আর মনে করতে পারিনা, মন সাগরের বালুবেলায় লেখা ছিল নাম গুলো,সময়ের
ঢেউ মুছে দিয়ে গেছে। কিন্তু একটা নাম চোর কাটার মত গেঁথে আছে মনের গভীর কোণে।
লালিমা, ডাক নাম ছিল ঝাপু। মনে পরে যায় যেন এইতো সেদিন সন্তোষের সাথে দেখা করার জন্য
শিয়ালদা বাস স্টপে নামতে যাচ্ছি পেছন থেকে জামা ধরে এক টান,একটি মেয়ের গলা, আমি আগে নামবো,দেখি ঝাপু হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিন থেকে আমার জীবনের একটা অধ্যায় শুরু হয়েছিল। আজ এত বছর পরে ঝাপুর মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ চিঠি
পেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি, বুঝতে পেরেছিলাম কেন লালিমা ওর মেয়ে তনির বিয়ের চিঠি পাঠিয়েছে আমাকে,যে কারনটা শুধু মাত্র লালিমার আর আমার মনের গভীরে লুকিয়ে আছে। মনে আছে ঝাপুর মেয়ে তনিকে শেষ দেখেছিলাম ঝাপুর বাড়িতেই তখন ওর বয়েস হবে
চার পাঁচ বছর। আমাকে দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমার বুকে।আজ হেমন্তের সায়াহ্নে ধীরে ধীরে
শীত তার কুয়াশার চাদর বিছিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির শরীরে, টুপটাপ গাছের পাতা ঝরা জানিয়ে দিচ্ছে
আগাম শীতের বার্তা। বিকেল বেলায় একটা হাল্কা চাদর গায় বসে আছি সেন্ট্রাল পার্কের জলের ধারে একটা বেঞ্চে। লেকের জলের ওপর জল মাকড়সার আল্পনা আঁকা দেখতে দেখতে মনটা কেমন ফিরে গেলো অনেক পেছনে।
মনে আছে লালিমার সাথে যখন আমার পরিচয় হয়েছিল তখন আমি ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পলিট করে নিজের ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠিত। দুজনে দুজনকে প্রচণ্ড ভালোবাসি,রোজই বেড়োতাম দুজনে আমার ছোট্ট মারুতি গাড়িটায়। কখনো নিউমার্কেট, গঙ্গার পাড় বা কখনো ম্যাটিনী শো সিনেমা হলের কোণার
দুটো সিটে আধো অন্ধকার হলে দুজনের ভালোবাসাবাসি। মনে পরে কত দিন গঙ্গার বুকে নৌকোর মাঝে কত কথা কত অঙ্গীকার।
অন্ধকার নেমে আসছে, লেকের জলে পরন্ত সূর্যের রক্তিম আলো ছোট ছোট ঢেউএর চূড়ায় চুনির
মত চিকচিক করছে। আস্তে আস্তে বাড়ির পথ ধরলাম। বাড়ি ফিরেও মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে, মনে হচ্ছে অনেক কিছু ফেলে এসেছ অনেক পেছনে। এক কাপ কফি নিয়ে দোতলার বারান্দার বেতের চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে বসে
তাকালাম তারায় ভড়া আকাশের দিকে। নির্মেঘ ঝকঝকে আকাশ,বেশ শীতশীত করছে। চাদরটা
গায় জড়িয়ে নিলাম ভালো করে।
আবার মন চলে গেলো অতিতে। মনে পরে যাচ্ছে, লালিমার যখন বিয়ে হয়েছিল ও তখন শিয়ালদার
ভিক্টোরিয়া কলেজে সেকন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। বিয়ে হয়েছিল কোল ইন্ডিয়ার এক বড় অফিসারে সাথে।
শশুর বাড়ি সোনারপুরে। লালিমার হটাত বিয়ে হয়ে যাওয়াতে আমার মনটা খুবই ভেঙে পরেছিল।
সারা দিন ব্যাবসার কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতাম, যাতে যত তারাতারি সম্ভব লালিমাকে
ভুলে যেতে পারি। কিন্তু ভবিতব্যে যেটা লেখা আছে সেটাই ঘোটবে লালিমার বিয়ের দশ দিনের মাথায় হটাত খুব ভোর বেলায় ওর ফোন, আমি আজ থেকে আবার কলেজ যাব, তুমি শিয়ালদা তে প্রাচী সিনেমার সামনে থেকো । চমকে উঠলাম আবার
সেই প্রাচী সিনেমার সামনে, যেখান থেকে আমার আর ওর জীবনের একটা অধ্যায় শুরু হয়েছিল। আবার কি আমাদের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হতে চলেছে প্রাচী সিনেমার সামনে থেকে? তারাতারি রেডি হয়ে গাড়িটা নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম
প্রাচীর দিকে। বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, মিনিট দশের মধ্যে লালিমা এসে গিয়েছিল।
আস্তে আস্তে ঘড়ির কাটা ঘুড়ে চলেছে, মিষ্টি এসে দুবার তারা দিয়ে গেছে রাতের ডিনারের জন্য। মিষ্টিকে তো বলতে পারছি না আজ আমার মন লালিমাতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিছুতেই মনটাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে পারছি না।
সে দিন লালিমার কথামত আমরা দুজন কলেজ স্ট্রিটের সেই রেস্টুরেন্ট এর পর্দা ঢাকা কেবিনে বসেছিলাম।যে কেবিন আমাদের দুজনের অনেক ভালোবাসাবাসির সাক্ষি ছিল। মনে পড়ে কেবিনে বসে ও আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলেছিল, ভালোবাসি তোমাকে আমি ভিসন ভালোবাসি, তোমার কাছ থেকে কেউ আমাকে কেড়ে নিতে পারবে না। সেদিন আমার সারা মুখ চুমুতে চুমুতে ভড়িয়ে
দিয়েছিল। যথা সময়ে ওকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল আমার আর লালিমার নতুন করে ভালোবাসার কাহিনি।
না এখন আর ভাববো না ঝাপুর কথা। উঠে পরলাম ব্যালকনি থেকে। মিষ্টি আর আমি সাংসারিক গল্প করতে করতে ডিনার কম্পলিট
করে নিলাম। মিষ্টি বসে গেলো টিভিতে ওর ভালো লাগা সিরিয়াল দেখতে আর আমি একটা
সিগারেট ধরিয়ে আবার এসে বসলাম ব্যালকনির বেতের চেয়ারটাতে। আবার সেই অতিতের আকাশ পাতাল ভাবনা গুলো এসে জড়ো হচ্ছে মনের মধ্যে। মনে পরে কলেজের ফাকে ফাকে আবার শুরু হয়ে গিয়েছিল আমাদের প্রেম পর্ব। যখন কলেজ বন্ধ থাকতো,লালিমা চলে আসত
কাকুরগাছিতে ওর মায়ের কাছে। এই ভাবে দিন কেটে যায় আনন্দে সোহাগে ভালোবাসায়।
টিভি দেখা শেষ করে মিষ্টি শুয়ে পড়েছে ওকে অনেক সকালে উঠতে হয়। আমি বেড়িয়ে যাই
সকালে ধ্রুবকে রেডি করে স্কুল বাসে উঠিয়ে দেয়া সবই একা হাতে ওকে করতে হয়।
ভালো লাগছে না সিগারেট খেতে দূরে ছুরে দিলাম। দূরের গির্জার ঘড়িতে বারোটার ঘন্টার শব্দে
বুঝলাম প্রথম প্রহর শেষ হলো। ধীরে ধীরে সামনের রাস্তা ফাকা হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ি দুরন্ত স্পিডে ছুটে চোখের
আড়ালে চলে যাচ্ছে।মনে পরে গেলো লালিমার সেকেন্ড ইয়ারের এক্সাম শেষ। ও কয়েক দিন হলো মায়ের কাছে রয়েছে।একদিন সন্ধ্যা বেলায় কলেজ
স্ট্রিটের আমাদের দুজনের ভালো বাসার কেবিনে বসে আমাকে অনেক আদর করে বললো, শোনো
আমার হাসব্যান্ড সম্ভবত হায়দ্রাবাদ ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। আমাকেও যেতে হবে। তাই আমার একটা কথা তোমাকে রাখতে হবে। যাবার আগে এক দিন তোমার সাথে সারা দিন সারা রাত থাকতে চাই।
মনে আছে পরের সানডেতেই আমি আর ঝাপু ডায়মন্ড হারবার গিয়েছিলাম, নদীর ধারে
সাগরিকাতে। সে দিন লালিমা পুরোপুরি বৌ সেজে এসেছিল। হাতে শাখা পলা, কপালে আর সিথিতে টকটকে লাল সিঁদুরের টিপ। সাগরিকাতে স্বামি স্ত্রীর পরিচয়ে একটা রুম নিয়েছিলাম।
মনে পরে সারা দিন খুব মজা করে ঘুরে বেড়িয়ে সন্ধ্যা বেলায় হোটেলে ফিরে গল্প করতে করতে কখন যে রাত হয়ে গিয়েছিল আমরা কেউ
বুঝতেও পারিনি। সেদিন ডিনারটা আমরা সাগরিকার রুমেই করেছিলাম। সেই রাতে লালিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, আমি তোমার কাছ থেকে সারা জীবনের জন্য তোমার একটা চিহ্ন চাই যাকে নিয়ে আমি ভাবতে পারবো
যে তোমার ভালোবাসা আমার সঙ্গে আছে। সে দিন রাতে আমি আমার ঝাপুর সেই অনুরোধ উপেক্ষা
করে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তার কিছু দিন পরেই ঝাপু ওর হাসব্যান্ডের সাথে হায়দ্রাবাদ চলে গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন বাদে জানতে পেরেছিলাম লালিমা ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের মা হয়েছে। গড্ডালিকা প্রবাহে দিন
কেটে গিয়েছে। প্রায় পাঁচ ছয় বছর বাদে একবার কোনো একটা ব্যাপারে এখন ঠিক মনে নেই লালিমা ওর কাকুরগাছির মায়ের বাড়িতে আমাকে
ডেকেছিল, সেই আমি প্রথম তনিকে দেখেছিলাম, ফুটফুটে ফুলের মত মিষ্টি একটি মেয়ে।
তার পর জীবন এগিয়ে গেছে, ধীরেধীরে ঝাপুর সাথে যোগাযোগ কমে আসছিল, আমিও বিয়ে করে ব্যাবসা সংসার সব নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছিলাম যে ঝাপুর কথা মনে করার আর
সময়ই পেতাম না। আজ অনেক অনেক দিন বাদে
তনির বিয়ের চিঠিটা হাতে পেয়ে লালিমাকে নিয়ে আমার অতিতটা যেন সামনে চলে এসেছিল।
হটাত কার হাতের স্পর্ষে সম্বিৎ ফিরে আসতেই দেখি মিষ্টি আমার পাশে দাঁড়িয়ে, আমি দু হাতে চেয়ারে বসেই ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে
ওর শরীরে আমার মাথা হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে চুপ করে রইলাম। মিষ্টি আমার চুলে অনেক মমতায় অনেক ভালোসায় হাত বুলিয়ে বিলি
কাটতে কাটতে বললো, অনেক রাত
হয়েছে চলো শুতে য
 
*** পুজোর গন্ধ ***
%% &&
বাতাসে আজ পূজোর গন্ধ
আকাশটা যেন নীল সাগর,
শিউলির ডাল ফুলে ফুলে ঢাকা
যেন শরত রাণীর বাসর।
উমা মার আসার সময় হয়ে গেছে
সকলের মন আনন্দে আত্মহারা,
যেন নীল আকাশে বকের পাখায়
মন উড়ে যায় বাঁধন ছাড়া।
সায়র ঢেকে গেছে পদ্ম কোড়োকে
ফুলে ফুলে মৌমাছি আনাগোনা,
মাঠে মাঠে সোনার বরণ ধান
দূরে নবান্নের গান শোনা।
প্রার্থনা করি দশভুজা মায়ের কাছে
শান্ত করো সকলের মন,
ঘরে ঘরে দাও অফুরান শান্তি
পরিপূর্ণ করো জীবন যৌবন।........
 
Top