• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

Bangla kobita

আমার লেখা একটি ছোটো গল্প

****** উর্মি *****

অবসন্ন মনে ফেসবুকের পাতা উলটিয়ে যাচ্ছি। কিছুই ভালো লাগছে না। পাতার পর পাতা দূর্গা
মায়ের ছবি, বিসর্জনের ছবি আর কত রকমের মাকে বরণ করে সিঁদুর খেলার ছবি। আনমনে
ফেসবুকের পাতা দেখে যাচ্ছি। হটাত চোখ দুটো আটকে গেল একটা এক বছর আগের পুরনো
পোস্টে। একটা কবিতা, ঠিক এক বছর আগে পোস্ট করা,
" নষ্ট চাঁদ "। লেখিকা উর্মি।
" কিছুবা ভুল ছিল আমার, তোমারও
তো খানিক ভুল ছিল।
প্রতিক্ষণ তবু আমিই একা গুনে
যাই ভুলের মাসুল।
নামেনি কি এ জীবনে হাজারো দুর্যোগ!
যুক্তিহীন সহস্র অভিযোগ? "
চমকে উঠলাম, এ কার কথা শুনছি, কার অভিযোগ? অতিতের হারিয়ে যাওয়া একটা ছবি। সালঙ্কারা একটা মুখ, নাকে টানা দেয়া নাকছাবি,
কানে ঝোলা দুল, মাথায় টিকলি, আর সিঁদুরে মাখা মাখি গাল কপাল। হাতে বরণ ডালা। ওর পেছনে মৃণ্ময়ী মার মুর্তি। কে দূর্গা ভ্রম হয়ে গিয়েছিল
আমার সেদিন। মন চলে গেল অনেক অতিতে, আর একটা দূর্গা পূজা।
আমার গ্রুপ সোনার তরী, রোজ কত কবিতা কত গল্প, মাঝেমাঝে আমার মনে হয় সোনার তরী
যেন ফুলে ফুলে ভরা একটা ফুলের সাজি। আমিও মাঝে মাঝে আমার কবিতা পোস্ট করি।
হটাত একদিন একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট, এ্যাক্সেপ্ট করার আগে ওর প্রোফাইলটা খুলে দেখি, নাম উর্মি, বর্ধমানে থাকে, একটা গার্লস স্কুলের টিচার। হাসব্যান্ডের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
একটা ফুটফুটে ছেলে আছে। অবাক হয়ে এ্যাক্সেপ্ট করে নিলাম ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। ইন বক্সে একটা মেসেজ রেখে দিলাম, বুঝতে পারলাম না আপনি হটাত আমার বন্ধু হতে চাইলেন
কেন? আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। তবে আপনার বন্ধু হতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। রাতের দিকে দেখি ইন বক্সে উর্মি লিখেছে, আমি অন্য কয়েকটা গ্রুপে আপনার কবিতা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে, অনেক দিন ধরেই পড়ছি আপনার কবিতা, বলতে পারেন আমি আপনার কবিতার প্রেমে পরে গেছি। তাই আমার ভালো লাগা কবিতার শ্রষ্টার সাথে পরিচয়
করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
আমিও দুচার লাইন লিখি, তবে তা কারুর পাতে দেবার যোগ্য নয়। আমাকে আপনার সোনার তরীর যাত্রী করে নিলে আমার খুব ভালো লাগবে। সেই শুরু উর্মির সাথে আমার সম্পর্ক। রোজ রাতে ওর সাথে ইনবক্সে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা।
ধীরে ধীরে দু জনে দুজনার কাছে আগল বিহীন বন্ধু হয়ে গেলাম। তত দিনে আমরা আপনি থেকে
তুমি হয়ে গেছি। এক দিন উর্মি বললো ফেসবুকের ইনবক্সে আর নয় আমাকে তুমি হোয়াটস এপসে
ডাকবে। আর মাঝেমাঝে ফোনও করতে পারো। আমার মোবাইল নাম্বারটা সেভ করে নাও। আর একটা কথা তুমি আমাকে দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ফোন কোরো। ওই সময় আমার স্কুলে অফ পিরিয়ড থাকে। আর আমার এই নাম্বারটা একেবারেই আমার ব্যাক্তিগত,
এটার কথা কেউ জানে না। আর শোনো আমার প্রোফাইলে আমার এ্যালবামে আমার অনেক ছবি
আছে, দেখো সবাই কত কমেন্ট করেছে। তুমি করবে না? আমি অনেক যত্ন করে রেখে দেবো তোমার কমেন্ট করা ছবি গুলো। উর্মি মাঝে মাঝে কবিতা পোস্ট করে সোনার তরীতে।
মনে আছে ছোট্ট একটা কবিতা পোস্ট করেছিলো, আমিও কমেন্ট করেছিলাম।
ভুল লেগে আছে ****
-----------------
ভুল লেগে আছে চোখের পাতায়,
তার ওষ্ঠপাত্রে আর শার্টের হাতায়,
তিরতিরে ঘাম নাকের ডগায় -
ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারেনা,
আগের মতন আদর কাড়েনা-
থেকে থেকে শুধু ভুলের শিকড়
জড়িয়ে ধরে স্মৃতির আকর ;
লেখে আর মোছে জলেতে আখর।
বৃষ্টির পরে রামধনু যেমন রং ছড়ায় -
তীর বেঁধা এই মন ভুলের
দিকেই হাত বাড়ায়।*******
আমি কমেন্ট করেছিলাম,
" জীবনের পথ পরিক্রমায় শুধুমাত্র ঠিকই থাকবে, কখনো ভুল হবেনা, এই ভাবনাটাই বড় রকম ভুল।
অনেক ভুল ভুল করেও না শোধরানো বোধ হয় ঠিক। তাই মন অনেক সময় ভুলের দিকেই হাত বাড়ায়।.......... খুব সুন্দর জীবন আলেক্ষ্যের প্রকাশ। অনেক শুভেচ্ছা রইলো আবার ভুল না করার জন্য।"
এই ভাবে ফেসবুকের পাতায়, হোয়াট এ্যাপসের খাতায় আর মাঝেমাঝে ওর টিফিন টাইমে ফোন
করে দিন কেটে যাচ্ছিল।
এক দিন হটাত উর্মি বললো, তুমি আমাকে রাতেও ফোন করতে পার, তবে রাত এগারোটার পরেই
কোরো,তখন ছেলে ঘুমিয়ে পরে।
শুরু হোলো আমার আর উর্মির রাতের অভিসার প্রযুক্তির হাত ধরে। কোথায় সেই বর্ধমানের একটা টুরুম ফ্ল্যাটের বেড রুমের বিছানায় উর্মি আর আমি কলকাতায় আমার এক রুমের বিছানায় শুয়ে। কথা আর কথা শব্দের মাধ্যমে ভালোবাসা
বাসি,আদর আর আদর। ইংরেজি তে ভার্চুয়াল শব্দটি শুনেছিলাম, কিন্তু মানে বুঝলাম উর্মির সাথে রাতের কাল্পনিক অভিসারে।
কল্পনাতেও যে ভালোবাসার পরিতৃপ্তি হতে পারে আগে জানতাম না। মনে হতো আমরা দুজনে একই সাথে পাশা পাশি ভালোবাসার ঝরনা তলায় স্নান
করে যাচ্ছি। এই ভাবে কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে মিষ্টি মিষ্টি দিন কেটে যাচ্ছিল। কবিতা লিখতে বসলেই উর্মির সেই সিঁদুর খেলার ছবিটা চোখের সামনে দেখতে পেতাম। ওকে ভেবে একটা কবিতালিখে মনে আছে সোনার তরীতে
পোস্ট করেছিলাম।
যদি তোমার মনের গহন
কোণে একটু থাকতে পারি,
অনেক দিনের স্বপ্ন আমার
ভালোবাসার বাড়ি।
যদি তোমার চোখের কাজল
হয়ে একটু থাকতে দাও,
দেবো আমার মনের আকাশ
যদি তুমি চাও।
যদি তোমার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি
আমার মনে বাজায় বাশি,
দেবো তোমায় এক সমুদ্র ভালোবাসা
আর পূর্ণিমার জোছনারাশি।
যদি তোমার ভালোবাসা,
জাগায় অনেক স্মৃতি অনেক আশা, দেবো তোমায় তারায় ভরা রাতের ছোঁয়া
আর মিষ্টি প্রেমের নিরব ভাষা।
তুমি আমায় বাসবে ভালো
বসে আছি সেই আশায়,
তোমায় নিয়ে বকের পাখায়
হারিয়ে যাবো দূর নীলিমায়।
মনে আছে আমার কবিতাটা পড়ে উর্মি রাতে ফোনে আমাকেবলেছিল, শোনো আজ তুমি আর
আমি যে ভাবে আছি, কাল কি ভাবে থাকবো সেটা তুমিও জানো না আমিও জানি না। সবই অদৃশ্য লেখনিতে লেখা হয়ে আছে। যদি কখনো আমরা
দুজনে দুজনের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাই, ভেবনা আমি নেই তোমার কাছে, আমি তোমার কবিতা হয়ে থাকবো চির দিন তোমার কাছে। আজ বিজয়াদশমী, বসে আছি দোতলার বারান্দায়, রাস্তা দিয়ে একটার পর একটা ঠাকুর চলেছে বিসর্জনের জন্য। মৃন্ময়ী মার মুখ লালে লাল বরণ আর সিঁদুর খেলার জন্য। আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো উর্মির সিঁদুর খেলার সেই অপরূপ মুখটা। মনে পরে গেলো হটাত একদিন উর্মি আমাকে ফোন করে বলেছিল, শোনো কল্পনা আর
বাস্তব দুটো একেবারেই আলাদা জগত। আমি সন্তানের মা, একা এই পৃথিবীতে একটি সন্তান কে
মানুষ করা খুবই কঠিন। আমার ছেলের বাবা তার ভুল বুঝতে পেরে আবার আমার আর ছেলের
কাছে ফিরে আসতে চাইছে। আমি কি চাই সেটা আমার মনের মাঝেই থাক, শুধু ছেলে আবার
তার বাবাকে ফিরে পাবে সেটা ভেবে আমি মত দিয়েছি আবার এক সাথে থাকার ব্যাপারে। জানি
তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই তোমাকে মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই বলছি, কাল থেকে তুমি
আর আমাকে ফোন কোরো না বা আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রেখো না। আমি আমার শেষ দিন পর্যন্ত তোমাকে ভালোবাসবো। আমাকে তুমি খুঁজে পাবে তোমার কবিতার মধ্যে।
সেই আমার আর উর্মির শেষ কথা।
আজ বহুদিন হয়ে গেলো।
আজ বিজয়াদশমীতে মায়ের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে কেন জানি না উর্মির সেই সিঁদুর খেলার
ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

( গল্পটা পুরটাই কাল্পনিক,)
 
**** তনু ****

যত বলি তনু শোনো তুমি আমাকে মেসেজ করবে বাংলায় ইংরেজি স্ক্রিপ্ট আমি দুচোখে দেখতে পারি না। পারবে আমাকে বলতে? আমি তোমাকে ভালবাসি? বাংলায় লিখতে? যদি লিখতে না পারো, তাহলে যাও আমাকে ভালোবাসতে হবে না।
আরে আমার কথা শুনে আবার ফিক ফিক করে হাসছো?এই ফেস বুকের জগতে তনুর সাথে আমার প্রেম। আসলে ও আমার লেখা কবিতার প্রেমে পরেছিলো, আর আমার কবিতাকে ভালোবেসে কবিকেও ভালোবেসে ফেলেছে।
একদম পাগলী, আমি ওকে লিখেছিলাম,

এই পাগলী তুই কথা দিলি
গঙ্গা পাড়ে যাবি,
চলনা আজ আমার সাথে
ফুচকা খাবি ।
তোর কথাতে স্কুল পালিয়ে
মেলায় গেছি,
ধরা পরে মায়ের হাতে
মার খেয়েছি ।
তোর কথাতে অংক কষার
পাতা ছিড়ে,
তোকে আমার মনের কথা
সব লিখেছি ।
তোকে আমি পাগলী বলে
ডাকি যখন
আমায় তুই মারতে তারা
করিস তখন ।
আজ তোর মনের মাঝে কি হলো?
ডেকে ডেকে বলছিস
আমায় পাগলী বলো ?
সত্যি তুই আমার পাগোল
মনের পাগলী মেয়ে,
থাকিস আমার জীবন জুড়ে
পাগলী হয়ে । ******
আর এটা পড়ে ও আমাকে লিখেছিল, আমি পাগলী? এসো দেখো ভালোই হোলো আমি তোমাকে পাগলের মত ভালোবেসে আদরে আদরে তোমাকেই পাগল করে দেবো তখন বুঝবে মজা। তোমার বুকের ওপরে বসে তোমার দাড়ি উপড়াবো, নাহ তোমারতো আবার দাড়িও নেই
তাহলে তাহলে তোমার বুকের ওপোরেই শুয়ে থাকবো, আমাকে পাগলী বলা?
সত্যি কি যে করি এই পাগলীটাকে নিয়ে।
আমাকে সামনা সামনি কোনো দিন দেখেনি,
শুধু আমার লেখা কবিতা পড়েই আমাকে কল্পনা করে নিয়েছে। পাগলের মতো ভালোবাসে আমাকে।
মাঝে মাঝে আমি ফেসবুকের রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে তনুর বাড়িতে ঢুকে পড়ি, সারা বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে খালি তনুর ছবি। কত রকম ভঙ্গি কত রকম ড্রেস, কোনোটাতে জিন্স, কোনোটাতে সালোয়ার কামিজ আবার কোনোটাতে শাড়ি।
কিন্তু সব ছবিতে একটা জায়গায় এক, দুষ্টুদুষ্টু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি মুগ্ধ চোখে ওর ছবিগুলো দেখি আর আমার মনে হয় আমার চারদিকটা হাসনাহানার গন্ধে মম করছে।
আমি বাড়ি ফিরে দেখি ও অন লাইন, আমি বললাম, তনু তুমি খুব খুব দুষ্টু , সারা দেয়ালে
খালি তুমি আর তুমি, তোমাকে দেখতে দেখতে আমার কি অবস্থা হয় বলতো, আমি তো মানুষ। দেখো কেমন চার লাইন কবিতাতে তোমাকে ধরে ফেলেছি,
হাসনাহানার গন্ধে ভরা
তোমার তনুর স্বর্ণলতা ,
তোমার ছবির চোখ দুটি যে
আমার সাথে বলছে কথা।
তোমায় দেখে চাঁদ ওঠে
আর তোমায় দেখে ফুল ফোটে,
সব মধুকর ভুল করে আজ
জুটলো এসে তোমার ঠোঁটে। ****
কবিতাটা পড়ে কেমন স্বপ্নিল হয়ে উঠলো
তনুর চোখ দুটো, বললো তুমিই তো আমার
মধুকর, আমার এই টুকটুকে, নরম ঠোঁট দুটো
তে আমি তো মধু জমিয়ে রেখেছি খালি
তোমার জন্য, আর আশায় আশায় অপেক্ষা
করে থাকি কবে তুমি ছোঁবে আমার ঠোঁট দুটো। তুমি কবে আসবে গো আমার মধুকর, কবে
সত্যিকারে তোমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারবো? দেখতে দেখতে শেষ শ্রাবণের বর্ষা
বিদায় নিয়েছে, ভেজা কদমের গাছে আর
নেই সেই জৌলুশ, ভাদ্রের পাকা ধানে মাঠে
যেন সোনার বন্যা, শরত রাণীর অপেক্ষায়
দিন গুনছে সমস্ত প্রকৃতি।
মায়ের আগমনী সংগীতে ভড়ে উঠবে
আকাশ বাতাস,তাইতো আমার মন বলছে,
শরতের নীল আকাশে
মেঘ গুলো সব এলো মেলো,
ভাবছে এ মন বাতাস ছুঁয়ে
শিউলি ফোটার দিন এলো।
হটাত তনুর ডাকে তাকিয়ে দেখি, মুচকি মুচকি হাসছে আর আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, কি হোলো? পূজোর কথা ভাবছো বুঝি? সত্যি
গো পূজোটা এসেই গেলো। তারপর ইচ্ছে
করে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে
বললো এবার কিন্তু পাঁচ দিনই আমাকে নিয়ে
ঠাকুর দেখাতে হবে। তার পর একটা
মিষ্টি হাসি হেসে বললো, আমাকে পূজোয়
শাড়ি দেবে না?
আমি বললাম বলো এবার পূজোয় কি চাই তোমার?

এবার পূজোয় কি নিবি বল
নাকছাবি না ঝুমকো দুল ?
এখন আমি কি দি তোকে
শিশির ভেজা শিউলি ফুল ?
নীল আকাশে শারদ মেঘে
তোর নামটা লিখি হংস পাখায় ,
পাছা পেড়ে ডুরে শাড়ি
তোর শরীরে বেশ মানায় ।
যখন তুই ছুটে বেড়াস
কাশ ফুলের ওই বনটাতে ,
পথের পাচালীর দূর্গা হয়ে
থেকে যাস আমার মনটাতে ।
তুই যে আমার নীল আকাশ
শিউলি ফোটা সকাল বেলা,
সবুজ বনের ফুলের মেলা
সাগর বুকের ঢেউয়ের দোলা ।
এবার পূজোয় দেবো তোকে
শিউলি ফুলের নাকছাবি ,
পাছা পেড়ে ডুরে শাড়ি
আর আমার মনের জল ছবি ...
আমার কবিতাটা পড়ে আমার যেন মনে হলো
তনু আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমার
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো, আমি ই তো তোমার পথের পাচালীর দূর্গা।
আমাকে তুমি পাছা পেরে ডুরে শাড়িই
কিনে দিও।
আজ আবার এসে গেলো আর একটা দূর্গা
পূজা, মনে পড়ে যাচ্ছে তনুর সেই ফিসফিস
করে বলা কথা, আমিই তো তোমার পথের পাঁচালীর দুর্গা, আমাকে তুমি পাছা পেড়ে ডুরে শাড়িই কিনে দিও।

**************************
 
******* আজকের রুবী রায় ********

আমি কোনো দিন তোমাকে বোঝাতে
পারলাম না আমি যে তোমাকে ভালবাসি,
তোমার মনের শুকনো মরুভুমিতে ভালবাসার
জলের খোঁজ করতে গিয়ে কাটায় ক্ষত
বিক্ষতই হয়েছি ..তবুও তোমার মনে
কোনো ছাপ ফেলতে পারিনি, হয়েতো
তোমাকে ভালবাসার কোনো অধিকারই আমার
নেই i আমি হয়েতো তোমার মনের কাছে
উপহাসের বিলাস সামগ্রীর মতো, যা কিনা
কোনো দিন তোমার হৃদয় স্পর্শ করতে
পারেনি i এক দিন শুধু খেলার ছলে জিজ্ঞেস
করেছিলে ...কোথায় থাকো তুমি ? আজও
ভুলিনি সেই কথাটা ..দূর থেকে দেখি দু
বিনুনি দুলিয়ে বন্ধুদের সাথে তুমি একটি
ছট ফটে ঝরনার মত উচ্ছল হয়ে স্কুলে
যাও, কিছু দুরে কেউ এক জন শুধু তোমাকে
একবার দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে সেটা
ভুলেও বুঝতে পারো না তুমি i রুবী রায়ের
জন্য কিশোর ছেলেটি হয়েতো চিঠি হাতে
দাঁড়িয়ে থাকতো আর আমি তোমাকে দেবার
জন্য ..শীতের মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে, বর্ষার
কাদা জলে কদম ফুল পেড়ে, চৈত্রের দুপুরের
আমের মুকুল সব নিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম যদি
একবার চোখ তুলে দেখো । আমি জানি তুমি
আমাকে দেখেও এমন ভাব করতে যেন
আমি এই পৃথিবীতে অজানা কোনো জীব i
শুধু ওই এক দিনই বন্ধুদের সাথে শান্ত
নদীর মত স্কুল এর পথে যেতে যেতে থমকে
দাড়িয়ে ছিলে আমার সামনে আর চোখে চোখ
রেখে আমাকে বলেছিলে ..কোথায় থাকো তুমি ?
 
****** রুবী রায় ******
&& &&
বিখ্যাত সুরকার R.D.Burmon এর গাওয়া গান " মনে পড়ে রুবী রায় "এর ওপর লেখা আমার এই কবিতা । তখন রুবী রায় কিশোরী ছিলো , কালের নিয়মে যথা সময়ে বিবাহিতা হয়ে সংসারের সমস্ত দায় দায়িত্ব শেষ করে আজ প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তে এসে সন্ধ্যা বেলা তারায় ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে খোঁজে সেই কিশোরী বেলার হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো আর সেই কিশোর ছেলেটির কথা , যে
চিঠি হাতে রোজ দাড়িয়ে থাকতো বাস স্ট্যান্ড এ শুধু একটি বার দেখার আশায় ....
আজ সব হারিয়ে গেছে ...তাই আজও ছল ছল
চোখ দুটি খুঁজে বেরায় ..সেই হারিয়ে যাওয়া অতীত কে .....
***** রুবী রায় ****
আমি সেই রুবী রায়, মনে পড়ে ?
যে কবিতার ডাক তুমি পাঠিয়েছিলে
অচেনা কৈশোরে ?
আমার ভেতরে আজও তা রয়ে গেছে, ।
তুমি শুনেছিলে এক কিশোরী নুপূর
একা কথা বলা রৌদ্র দুপুর,
সেই তুমি হারিয়ে গিয়েছিলে
এক পাতা ঝরা মরসুমে ।
কিন্তু আমি জানি ভুলে যাওয়া
ঠিকানায় তুমি আজো আছো,
প্রতিক্ষণে আমার জীবনে ।
তাই তোমাকে খোঁজার পালা
এখনো ফুরলো না ।
জীবন তুমি জানো, কল্পনার রক্তে বাঁচে,
আলেয়া বা মরীচিকা যাই বলো
স্বপ্ন তবু আসে ।
যদি জীবনে জীবন ছুঁয়ে যায় কখনো,
যদি অচেনা পথের বাঁকে দেখা হয় ?
চিনতে পারবে আমায় ?
তোমার কান্নার খাচা খুলে
তোমার স্বপ্নের জাল ভুলে
সে দিন আকাশ খুঁজেছি ।
বুঝিনি সে আকাশ ছিলো তোমার বুকে ।
তাই আজ এত দিন পরে তোমাকে খুঁজি
কোনো ঝড়ের ঠিকানায় ,
আমার জীবনের শেষ সীমানায় ।
শুধু একবার ফিরে এসো,
কিছু চাইবোনা ,
শুধু একবার তুমি বলো……..
" ভালো আছো রুবী রায় ? "
 
**** ঝাপু ****
কুরিয়ারে একটা বিয়ের চিঠি আমারই নামে, সই করে নিলাম, ওপরে লেখা ফ্রম Mr & Mrs ,Basu
অবাক হয়ে ভাবছিলাম কে হতে পারে, খুলে দেখি জয়ন্ত বাসু আর
লালিমা বাসুর বড় মেয়ে তনিমার বিয়ের চিঠি। চোখ দুটো আটকিয়ে গেলো অনিমার নামটাতে।
সিনেমার ফ্ল্যাশ ব্যাকের মতো মনটা চলে গেলো পঁচিশ বছর পেছনে।
আমি আর সন্তোষ তখন হরিহর আত্মা বন্ধু। কাছাকাছি বাড়ি, এক সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। বিকেল হলেই দুই বন্ধু মিলে সারা কলকাতা
চষে বেড়াতাম, তারপর সন্তোষের ঘরে বসে আড্ডা। ওদের বাড়ীতেই প্রথম দেখেছিলাম লালিমাকে।
সন্তোষের কাছেই শুনেছিলাম ওর ডাক নাম ঝাপু। রোজই আসতো সন্তোষের বোনের কাছে। ছিপছিপে মিষ্টি একটা মেয়ে। ওকে দেখলেই বুঝতে পারতাম আমার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সন্তোষের সাথে কথা বলতে আমরা যেখানে
গল্প করি সেখানেও আসতো। সন্তোষের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে চলে যেত, আমাকে কোনো
পাত্তাই দিত না। আমি অনেক কষ্ট করে নিজেকে সপ্রতিভ রাখার চেষ্টা করতাম। এই ভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল। একদিন সন্তোষ আমাকে বললো বিকেল পাচটার সময় প্রাচী সিনেমার সামনে থাকতে, ও আসলে দুজনে মিলে ঘুরতে বেড়বো। যথা সময়ে বাসে করে যাচ্ছি, শিয়ালদা এলে নামতে যাচ্ছি, হটাৎ পেছন থেকে আমার সার্ট ধরে টান,আর একটি মেয়ের গলা....আমি আগে নামবো।
তাকিয়ে দেখি ঝাপু,মুখে এক গাল মিষ্টি হাসি। দুজনেই বাস থেকে নেমে হাটছি, হটাৎ জিগ্যেস করলো, আপনি কোথায় যাবেন? আমি বললাম প্রাচী সিনেমার সামনে,শুনেই কেমন ঝলমল করে উঠলো ওর মুখ, আরে আমিওতো ওখানেই যাচ্ছি। আপনি কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন? আমি বললাম সন্তোষ ওখানে আসবে। শুনে অবাক হয়ে বললো আমাকেওতো সন্তোষদাই এখানে আসতে বলেছে। অনেকক্ষণ দুজনে প্রাচীর সামনে অপেক্ষা করেছিলাম। সন্তোষ কিন্তু সেদিন আমাদের কাছে আসেনি। বরং সেদিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল দুটি মনের কাছাকাছি আসার শুভলগ্ন। ওখান থেকেই আমরা দুজনে চলে গিয়েছিলাম ভিক্টোরীয়া মেমোরিয়ালে। কত গল্প, ফুচকা খাওয়া। চুপচাপ পাশাপাশি বসে কোনো কথা না বলে অনেক কথা বলা।
আজ এতদিন বাদেও সেই লালিমার সাথে আমার প্রথম দিনের স্মৃতি একটুও মুছে যায়নি মন থেকে।
তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল, হাজার সূর্য অস্ত গেছে পশ্চিম আকাশে। দুজনে মিলে ময়দানের ট্রাম রাস্তা ধরে হাত ধরে হেটে বেড়ানো,নিউ মার্কেটে ভীরের মাঝে হারিয়ে যাওয়া আর গঙ্গার বুকে নৌকোর মাঝে দুজনে দুজনের
কাছে কত অঙ্গীকার।
পারিনি ধরে রাখতে লালিমাকে। সংসারের নিয়ম মেনে একদিন সানাই বাজা সন্ধ্যায় ফুলের সাজে
সালংকারা আমার লালিমা সিঁথিতে তুলে নিয়েছিল আর এক জনের হাতের সিঁদুর।
আজ এত দিন পরে ওর মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্রে লালিমার নাম
টা দেখে, মনে পরে গেলো, ওর
ডাক নামটা..... ঝাপু।
 
গল্প --- *** তামান্না ***-


কি অদ্ভুত ভাবে ইন্টারনেট সারা পৃথিবীটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে ভাবতেও অবাক হতে হয়। এক মুহুর্তের জন্যও ইন্টারনেট ছাড়া আজকের মানুষের জীবন অচল হয়ে যায়। যে কোনো নেশার বস্তুর থেকেও আজকের পৃথিবীর ছেলে বুড়ো সকলে ইন্টারনেটর নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। সকলের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। কারুর কোনো দিকে খেয়াল নেই , শুধু চোখ দুটো আটকে আছে স্মার্ট ফোনের পর্দায়।
আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। সময় পেলেই বড় পর্দার স্মার্ট ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করি।
আমার নাম নীল রয়। বয়স ৬৫, রিটায়ার্ড পার্সন। পেনশন ভোগী। সকাল থেকে বাড়ির কিছু টুকটাকি কাজ ছাড়া কিছু করার নেই। অফুরন্ত অবসর। সময় কাটে স্মার্ট ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। একদিন ফোনে স্ক্রোল করতে করতে একটা সাইটে চোখ আটকে গেলো।একটা চ্যাট সাইট। শুনেছি সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কি ছেলে কি মেয়ে কি বুড়ো কি ছুড়ি চব্বিশ ঘণ্টা চ্যাট সাইটে চ্যাট করে যাচ্ছে। খুব কৌতুহল হলো। দেখলাম সাইট টার নাম ক্যাম চ্যাট এভিনিউ। ক্লিক করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেলো, অনেক গুলো চ্যাট রুম।কত রকম রুম, সিঙ্গল রুম, এডাল্ট রুম, ভিডিও রুম, চোখ আটকে গেলো টিন চ্যাট রুমে। ওপেন করলাম। দেখি দু ভাবে এন্টার করা যায়। রেজিস্টার্ড একাউন্ট করে, আর গেস্ট এন্ট্রি। মজা লাগলো, গেস্টে ক্লিক করে বসলাম। দেখি একটা ইউসার নেম দিতে বলছে সাথে বয়েস। বয়েস দেখলাম ১৩ থেকে ১৯ restricted। সেই মুহুর্তে অরুন বোস নামটা মনে এলো, লিখে দিলাম, বয়েস ১৯ শে টিক মেরে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হাট করে খুলে গেলো গল্প করার ঘরের দরজা। দেখি একের পর এক পোস্ট,। সবই ইংরেজিতে। পরে রুলস পড়ে জেনেছি, ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ইউস করা যাবে না। নিজের সত্যিকারের আইডেন্টিটি যেমন নাম ছবি ঠিকানা কিছুই দেয়া যাবে না। সব ফেক দিতে হবে। সিস্টেম থেকেই নামের পাশে সেই ইউসারের কান্ট্রির নামটা বাই ডিফল্ট এসে যায়। সব দেখে শুনে খুব মজা লাগলো। কত রকম পোস্ট কত রকম কথা। দেখি আমার অরুণ বোস নামটা এন্ট্রি হয়ে গেছে। আমি আগেই কিছু কিছু নেটের ভাষা জানতাম। নিচে পোস্টিং বার। লিখলাম whats up. Hmu. মানে কেমন আছো, হিট মি আপ,।
সঙ্গে সঙ্গে দু তিনটি রিপ্লাই, হাই অরুন, হাউ আর ইউ। প্লিজ কাম ইন প্রাইভেট।
খুঁজে দেখি ওপেন চ্যাট রুমের ভেতর আবার প্রাইভেট রুম অপশন, সেখানে অবশ্য যে কোনো ভাষা যে কোনো স্ক্রিপ্ট ইউজ করা চলবে। খুব মজা লাগছে, দেখি সুদূর আটলান্টিকের ওপার আমেরিকার একটি ১৮ বছরের মেয়ে আমাকে প্রাইভেটে নিয়েছে, নাম এমি।
৬৫ বছরের নীল রয় মুহুর্তের মধ্যে হয়ে গেলো ১৯ বছরের অরুন বোসে। প্রোফাইলে সুন্দর একটা মেয়ের ছবি। স্টুডেন্ট, গল্প করতে ভালোবাসে, নতুন নতুন বন্ধু বানাতে চ্যাট রুমে ঘোরাঘুরি করে। ও আমাকে বললো, তোমার সাথে গল্প করে ভালো লাগলো, তুমি রেজিস্টারড একাউন্ট করে নাও। তাহলে খুব মজা করে আমরা গল্প করবো। তুমি একটা সুন্দর প্রোফাইল বানিয়ে নাও তোমার পিকচার দিয়ে। যাই হোক তখনকার মতো চ্যাট রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। তারপর চ্যাট রুমের সব নিয়ম মেনে সুন্দর একটা রেজিস্টার্ড প্রোফাইল বানিয়ে নিলাম, নেট থেকে সুন্দর একটা বাঙালি ছেলের ছবি নামিয়ে সেটে দিলাম প্রোফাইলে। মুহুর্তের মধ্যে ৬৫ বছরের প্রৌঢ় মানুষটি হয়ে গেলো, ঝকঝকে ১৯ বছরের একটি ছেলে নাম অরুন বোস।
সময় পেলেই চ্যাট রুমে কথা বলতে বসি। রেজিঃ প্রোফাইল থেকে মেইন ওয়াল বা প্রাইভেটে যে কোনো ছবি শেয়ার করা যায় শুধু ভিডিও অপশন টা নেই। এর ভেতর একদিন মেইন ওয়ালে সকলের সাথে আবোলতাবোল কথা বলছি। হটাৎ একটি মেয়ের মেসেজ, wnt to talk, pls prvt me. মেয়েটির প্রোফাইল খুলে ওর বাইও দেখলাম, নাম তামান্না বয়েস যথারীতি ১৯, বাংলাদেশ, ঢাকা। ওকে প্রাইভেটে ডাকতেই, হাজির। ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর একদম বাংলা হরফে। থাক আর ইংরেজি বলতে হবে না। আমি তোমার বাইও খুব ভালো করে দেখেই তোমাকে ডেকেছি গল্প করবো বলে। হু দেখতেতো বেশ হিরো হিরো। তা আমার সাথে গল্প করতে আপত্তি আছে কি?
উফ কি মেয়েরে বাবা, আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই এতো গুলো কথা বলে গেলো। আমারতো মজাই লাগছিলো, ওতো বুঝতে পারছে না কার সাথে কথা বলছে। যাইহোক, আমিও মজা করেই বললাম, কথা বলবো না কেনো, কথা বলতেইতো বসে আছি, কিন্তু তার আগে যে আমার একটা শর্ত আছে। বলতেই একটা ভুরু কুচকোনো ইমোজি, আর ( ?) চিহ্ণ। আমি বললাম, আগে তোমার একটা নিজের ছবি দাও, দেখি তুমি কেমন দেখতে। আমি আবার পেত্নীর মতো দেখতে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। উরে বাবা বলতে না বলতেই angry imogi, কি আমি পেত্নীর মতো দেখতে?
তার পরেই আমাদের দুজনের প্রাইভেট রুমে একটি মেয়ের ছবি। হাফ বাস্ট। ফুট ফুটে দেখতে, টানা টানা চোখ। সত্যি চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। বলতে নেই ছবিটা দেখে আমার এই প্রৌঢ় মনটাও কেমন যেন ঝাকি খেয়ে গিয়েছিলো। ছবি দেখে বুঝলাম বয়েস অন্তত ২২/ ২৩ হবে। আবার পোস্ট, কি দেখছো হা করে শুনি? পেত্নী দেখছো? পছন্দ হয়েছে?
আমি বললাম, হু পেত্নীতো বেশ নজরকারা, কিন্তু বয়েস টা তো পেত্নীর ১৯ এর উর্ধ্বেই মনে হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, চুপ চুপ জানো না উনিশের বেশি লিখলেই স্রেফ ব্যান করে দেবে। শোনো বাবু আমার সত্যিকারের বয়েস ২২ আর আমিও জানি তুমিও মোটেই উনিশের পাত্র নও।
হি হি হি কি মশায় ঠিক বলছি তো?
এই ছিলো আমার আর তামান্নার প্রথম পরিচয়।
প্রথম দিনই আমার ওপর ওর্ডার হয়েছিল, রোজ অন্তত দু বার করে ওর সাথে গল্প করতে হবে, দুপুর বেলা দুটোর পর আর সন্ধ্যা বেলা।
মর্নিং কলেজে হিস্ট্রি নিয়ে এম এ করছে। তাই আমাকে ভার্চুয়াল মিট করতে হবে দুপুর দুটোর পর।
যাই হোক রোজ দুবেলা পেত্নীর সাথে গল্প করতে হয়। অবশ্য আমাকে বেশি কথা বলতে হয় না, অনর্গল ওই কথা বলে যায়। সবই টেক্সট মেসেজ। ওর দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুলাভাই দেখতে কেমন, আজ বাড়িতে কি কি রান্না হয়েছে, আমার প্রোফাইলের ছবি দেখে ওর বন্ধুদের খুব পছন্দ। আমাকে খুব একটা খেটে খুটে মেসেজ টাইপ করতে হয় না, শুধু হু হা করে যাই। মাঝে মাঝে বলে, আরে তুমি কিছু বলো।
এই ভাবে তামান্নার সাথে রোজ বকবক করতে করতে দুজনের মধ্যে একটা ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কি আশ্চর্য আমার এই ৬৫ বছরের মনটাও কেমন যেন ছটফট করতো তামান্নার সাথে কথা বলার জন্য।
তামান্না আর আমি কেউ কাউকে দেখিনি, এমন কি গলার আওয়াজও শুনিনি, জানি ওর তামান্না নামটাও ফেক, সত্যি কি নাম তাও জানি না তবু চ্যাট রুমের টেক্সট মেসেজ আমাদের দুজনকে এতো কাছাকাছি এনে দিয়েছে যে আমার এই ৬৫ বছরের, প্রৌঢ় মনেও গভীর দাগ কেটে দিয়েছে। এটাকেই বোধ হয় ইংরেজ সেক্স সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ ফ্রয়েড ব্যাখ্যা করে গেছেন, প্রত্যেকটা মানুষের মনের গভীরে সারা জীবন লুকিয়ে থাকে অদমিত ভালোবাসা আর যৌন আকাংখ্যা।
একটা আমার থেকে অনেক ছোট মেয়ের প্রতি দুর্বলতা সে ভার্চ্যুয়ালই হোক না কেন, ঠিক মনটা মেনে নিতে পারছে না। মনে পরে যাচ্ছে অমিতাভ আর জিয়া খানের একটা হিন্দি ফিল্ম দেখেছিলাম নিঃশব্দ। একটা আমারই মতো প্রৌঢ় মানুষের একটা অল্প বয়েসি মেয়ের প্রতি অদ্ভুত দুর্বলতার গল্প।
যাই হোক একদিন বিকেল বেলা তামান্নার সাথে গল্প করছি যথারীতি চ্যাট রুমের প্রাইভেটে। হটাৎ তামান্না একটু চুপ করে থেকে বললো, অরুন আজ তোমাকে একটা রিকুয়েষ্ট করবো, তুমি আজ রাতে ডিনারের পর ১১ টার সময় আমাকে লগ অন করো, কথা আছে।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে লগ আউট হয়ে গেলো। একটু অবাকই হয়ে গেলাম। যাক গে দেখা যাবে।
রাতে খেতে খেতে ১১ টা পার। তরি ঘড়ি নিজের ঘরে এসে আজ আর ফোনে নয় আমার ল্যাপটপে চ্যাট রুম লগ অন করে বসলাম। ইউসার লিস্টে তামান্নাকে খুঁজে পেলাম না। যাই হোক সময় কাটানোর জন্য মেইন ওয়ালে, এর তার সাথে কথা বলতে বলতে, রাত ১১.৩০। দেখি প্রাইভেট ওপেন্ড, তমান্নার মেসেজ, এসে গেছো? আমার একটু দেরী হয়ে গেল। আমি শুয়ে পরেছি, শুয়ে শুয়ে একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, আচ্ছা অরুন তুমি ভার্চুয়াল সেক্স কখনো শুনেছো? আমি তো অবাক হয়ে গেলাম ওর মুখে এই কথা শুনে। আগে কোনো দিন শুনিনি, এমন কি আমি ইয়ার্কি করে কিছু বলতে গেলে, ধমক খেতে হয়েছে। যাই হোক বললাম হা শুনেছি। এই সম্বন্ধে কিছু অথেনটিক লেখাও পড়েছি। তা হটাৎ তোমার মাথায় আজ ভার্চুয়াল সেক্সের ভুত চাপলো কেন? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, বললো, অরুন আজ যদি আমি তোমার কাছে পরিপূর্ণ আদর চাই তুমি দেবে? আজ শুধু আজকেই, আর কোনোদিন চাইবো না।
আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। কেমন যেন একটা আশঙ্কাও দানা বেঁধে উঠলো মনের ভেতর। আমার এই প্রৌঢ় মনের গভীরে একটি অপুর্ব সুন্দরী অল্প বয়েসী মেয়ের এই আমন্ত্রণ মন আর শরীর কে উত্তেজিত করার বদলে আরো কেন জানি নিস্তেজ করে দিয়েছিল।
সেই রাতের কথা আজো ভুলতে পারিনি। আমার অতিত অভিজ্ঞতা আর তমান্নার সহযোগিতা আমাদের দুজনকে পরিপূর্ণ ভাবে আমাদের দুজনের চাহিদাকে সম্পুর্ণ করেছিল। কিন্তু সারাক্ষণ আমার মনের ভেতর একটা খটকা লেগেই ছিল।
যাই হোক মনে একটা চিন্তা নিয়েই সকালে চ্যাট রুমের দরজা খুললাম। জানি তামান্নাকে এই সময় পাবো না। যথারীতি নেই। এই সব চ্যাট রুমের আরও অনেক অপশন আছে যেমন, যারা ফ্রেন্ড লিস্টে আছে তারা ইচ্ছে করলে ফ্রেন্ডস ওয়ালে মেসেজ বা ছবি রাখতে পারে।
আমিও সেই ভেবে ফ্রেন্ডস ওয়াল ওপেন করতেই দেখি আমার নামে তমান্নার একটা সর্ট মেসেজ রয়েছে। ওর বয়ানেই এখানে তুলে ধরলাম।
অরুন, তোমাকে কখনো দেখিনি, জানি অরুন নাম আর এই হিরো হিরো ছবিটা সবই মিথ্যে। আমিও মিথ্যে। এই অদ্ভুত, কাল্পনিক জগতটা কেমন কল্পনায় সত্যি হয়ে ওঠে। তা বলে ভেবো না, আমার তোমার ওপর ভালোবাসাটাও কাল্পনিক আর মিথ্যে, আর মিথ্যে নয় বলেই আজ তোমার কাছে বিদেয় নিতে এসেছি। অরুন তুমি যে রকম ই হয়ে থেকে থাকো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। এও জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। জানো আমাদের ভালোবাসা দুটো প্যারালাল লাইনের মত, যা কোনো দিন একটা বিন্দুতে মেলে না। আমাদের ভালোবাসাও কোনোদিন পূর্ণতা পাবে না। তাই চলে যাচ্ছি তোমার কাছ থেকে। আগামী সোমবার আমার বিয়ে। ক্যানাডা নিবাসী এন আর আই ছেলে। বিয়ের পর ওর সাথে ক্যানাডা চলে যাবো। জানি সুদূর ক্যানাডা থেকেও এক ক্লিকে এই গল্প করার ঘরে ঢুকে পরা যায়। আমি ইচ্ছে করেই আর কোনো চ্যাট রুমে ফিরে আসতে চাই না। আমার এখানকার একাউন্ট আমি ডিলিট করে দিয়েছি। তোমার মিষ্টি স্মৃতি নিয়ে একজন মনের মানুষের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই। পারোতো ভুলে যেও। কষ্ট পেওনা মনে, ভেবো তোমার বন্ধু তোমার স্মৃতি টুকু নিয়ে ভালোই থাকবে। জানি না হয়তো তুমি আমার থেকে অনেকই বড় ই হয়ত হবে তাই যাবার বেলা তোমার দুটি পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে যাচ্ছি। ভালো থেকো গো। অরুন তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।.... …এখানেই শেষ।
তমান্নার রেখে যাওয়া জীবনের শেষ মেসেজ টা পড়তে পড়তে এই বৃদ্ধ মানুষটার চোখ দুটোও কেমন জলে ভড়ে উঠছিল।.............
এই বৃদ্ধ মানুষটার জীবনের অনেক স্মৃতির সাথে তামান্নার স্মৃতি টুকুও অমলিন হয়ে থাকবে মনের মণিকোঠায়। ...............
শেষ
 
**হৈমন্তী মেঘদূত **

আকাশে মেঘের দূত
হেমন্তে নামে বৃষ্টি,
ভিজে ভিজে দিন
শিরশিরে বাতাস
একি অনাসৃষ্টি।
শীতের দুয়ার খুলে
গেছে আজ, পথ
ভুলেছে হিমেল বাতাস,
পরিযায়ী পাখি নীরে ফিরে
গেছে, নেই কুয়াশার আভাস।
হেমন্তের মাঠ পাকা ধানে
ভরা,প্রতিক্ষায় পাতা ঝরা,
মেঘের ভেলায় শীত এলো
বলে,বাতাস জল ভরা।****
 
** মনে আছে তোমার? ***

আমি কি তোমার কাছে আগের মতোই আছি? হারানো দিনের সেই মুগ্ধ মুহুর্ত গুলো কি এখনো তোমার মনে পরে? ডাহুক ডাকা শালুক ফুলে ছাওয়া সেই পুকুর পাড়ে তোমার ফুল ফুল ছাপা শাড়ি পরা হাটুর ওপর বসা প্রজাপতি আর তোমার
দু চোখ ভরা স্বপ্ন, এখনো কি মনে আছে তোমার? আমি হাত ধরতেই কেমন কেঁপে উঠে অবশ মুখটা গুঁজে দিয়েছিলে আমার বুকের মাঝে।
হটাত হটাত করে নাম না জানা ঠিকানার উদ্যেশে লোকাল ট্রনে চড়ে বসে জানলা দিয়ে পেছনে হারিয়ে যাওয়া মাঠ ঘাট দেখতে দেখতে তুমি
গুন গুন করে গান গাইতে.... আমি এত যে তোমায় ভালোবেসেছি, এখনো আমার কানে আছরে পরে। তোমার বোধ হয় মনে নেই। বোধ হয় আজ কোনো কিছুই আর তোমার মনে পরে না। আজ মনে হয় পেছন ফিরে দেখা বা ভাবার সময়ই নেই তোমার কাছে। কিন্তু সেই তোমার রেখে যাওয়া মুগ্ধ মুহুর্ত গুলো হারিয়ে যায় নি। আমার মনের মণিকোঠায় প্রদীপের শিখার মত এখনো জ্বলছে।
তোমার হয়তো আজ আমাকে আর মনে পরে না কিন্তু আমি যে আজো ভুলতে পারিনি তোমাকে।
***************************
 
*****লিলটি **

মাছ ধরাটা কেমন যেন আমার নেশায় দাঁড়িয়ে গেছে। আজকাল রোজই বেলেঘাটার সুভাষ সরবরে টিকিট কেটে ছিপ ফেলে বসে থাকি ঘন্টার
পর ঘন্টা ফাতনার দিকে তাকিয়ে।
আজও বসেছিলাম। শ্রাবণমাস টিপ টিপ করে বৃষ্টি পরছে, এক দৃষ্টিতে জলে ফেলা দুটো ছিপের ফাতনার দিকে তাকিয়ে ছাতার নিচে বসে আছি।
পাশের ঘাটে তিনটি অল্প বয়েসি কিশোর ছেলে, কত বয়েস হবে এই পনেরো ষোলো, উদ্যাম
ঝাঁপিয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে তোরে বৃষ্টি নামছে, ওদের ঝাপাঝাপি ও বেড়ে যাচ্ছে। আবার তাকিয়ে আছি ফাতনার দিকে, কয়েকটা জল মাকড়সা বড়শির চারপাশে যেন জল আল্পনা দিচ্ছে। সারা লেকের জল যেন বৃষ্টির জলের ছন্দে টুং টাং করে
নুপূর বাজাচ্ছে। কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলাম, মনটা চলে গেলো সুদূর অতিতের ফেলে আসা দিন গুলিতে।আমরা তখন থাকি বেলেঘাটার ভাড়া
বাড়ি রাসমনি বাজারে। সাত ঘর এক উঠান। বড় হয়ে নাম করা এক সাহিত্যিকের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম, বারো ঘর এক উঠান নাম ছিল। যাই হোক তখন আমি দেশবন্ধু স্কুলে ক্লাস টেন এ পড়ি। আমাদের বাড়িতে আমাদেরই দুটো ঘর আর
রান্না ঘর, বাকি আর ছয় পরিবারের একটা ঘর, বারান্দায় একটু ঘেরা রান্না ঘর। আমারি বয়েসি আরো দুজন কিশোর ছেলে ভবেশ আর শিবু উল্টো দিকের ঘরে থাকে। গলায় গলায় ভাব
আমাদের তিন বন্ধুর। ওরাও স্কুলে পড়ে শিবু নাইনে পড়ে। আমাদের মধ্যে ভবেশ একটু পাকা ছিল, সব বিষয়ে ওর মাতব্বরি ছিল। বিকেল হলেই তিন বন্ধু হাফ প্যান্ট গেঞ্জি পরে সোজা লেকের মাঠে। মাঠে অন্য বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে ফুটবল খেলে ঝাঁপিয়ে
পরতাম লেকের জলে। বাড়ি ফিরে।বাবার হাতে মার খেয়ে বই খাতা নিয়ে পড়তে বসতাম। অদ্ভুত একটা ব্যাপার ছিল, পড়ার বই নিয়ে বসলেই রাজ্যের ঘুম আর কোথাও জায়গা না পেয়ে
আমার চোখ দুটোকেই জায়গা বানিয়ে নিত। বইয়ের অক্ষর গুলো কেমন যেন আবছা হয়ে নাচানাচি করতো বইএর পাতার মাঝে। কতবার ঝিমুনিতে টেবিলের ওপরে বইয়ের সাথে
মাথা ঠুকে গেছে। আমাদের বাড়ির সব ঘর গুলো ফেস টু ফেস,মাঝখানে ঝকঝকে সিমেন্ট বাধানো উঠোন, উঠোনের সাথেই আমাদের ঘরের টানা সিমেন্ট করা বারান্দা।বাড়ির সবার সাথে সবার খুব সদ্ভাব।বাড়িওয়ালা পেছন দিকে আরেকটা
বাড়িতে থাকে। গরম কালে সন্ধ্যা হলেই বাড়ির মেয়েরা খুব সুন্দর করে উঠোন আর আমাদের বারান্দাটা ঝকঝকে করে মুছে দিত। আর রাতে শোবার সময় শুধু একটা করে বালিশ নিয়ে যে যেখানে পারতো খোলা আকাশের নিচে উঠোনে আর আমাদের বারান্দায় শুয়ে পোরতো।
চোখের সামনে তারায় ভরা আকাশ, স্নিগ্ধ বাতাস, উঠোনের কোণার পেয়ারা গাছের পাতার সর সর শব্দ, কখন যে সবাই ঘুমিয়ে পরতাম টেরই
পেতাম না। একদিন আমরা তিন বন্ধু লেকের মাঠে
খেলার পর গল্প করছি, হটাৎ ভবেশ দাঁড়িয়ে একটু ব্যায়ামের মতো হাত পা ছুড়ে বললো, চল আখড়ায় ভর্তি হয়ে যাই ব্যায়াম করবো। শরীরটাকে বানাতে হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। খুঁজে খুঁজে বাড়ি থেকে হাটা দূরত্বে একটা আখড়ার খোঁজ পেলাম। তখন তো আজকের মত জিম ছিল না।
পরের দিন বিকেলেই হাজির হয়ে গেলাম আখড়াতে। কেষ্টদার আখড়া,ওর বাড়িতেই সামনের দিকে, এক টুকরো বাগানের মত রাস্তার দিকটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা মাথার ওপর খোলা আকাশ।আখড়াটা একটা সরু গলির মধ্যে।
আখড়ার সামনের রাস্তার ওপরেই একটা পাকা দোতলা বাড়ি। বিরাট ঝুল বারান্দা।
ওখানে দাঁড়ালেই আমাদের আখড়ার সব চোখের সামনে । যাই হোক কেষ্টদা আমাদের ভর্তি করে নিলো। আমরা তিনজনেই খুব এক্সাইটেড। তখন স্কুলের গরমের ছুটি শুরু হয়েছে, এক মাস ছুটি।
পরের দিন বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই আমরা তিন মুর্তি আখড়ায় হাজির। কেষ্টদা বলে দিয়েছিল আজনাকি ব্যায়ামের ইনস্ট্রাক্টর ভোলাদা
আসবেন, সব কিছু দেখাবার জন্য।
আর কেষ্টদার কথা অনুযায়ী তিনজনে তিনটে ল্যাংগোট কিনে নিয়েছিলাম।এখনকার ছেলেরা ল্যাংগোট কি তাই জানে না। নিয়ম খালি গায় ল্যাংগোট কষে ব্যায়াম করতে হবে। আমাদের
আখড়ায় বারবেল,ডাম্বেল, প্যারালাল বার, রিং, বুক ডন দেয়ার কাঠের ব্লক সব ছিল। যথা সময়ে ভোলাদা এলেন।পরনে ফুল প্যান্ট আর গোল গলা গেঞ্জি। এসেই গেঞ্জিটা খুলে ফেললেন। উফফ কি বডি। হাত নাড়াচ্ছেতো বাইসেফ ট্রাইসেপ ফুলে উঠছে, ঘাড় ঘোরাচ্ছে সোল্ডার ঠেলে উঠছে, আর পেট আজ কাল কি যেন বলে প্যাক।
পুরোন স্টুডেন্ট দের কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে আমাদের তিন জনের কাছে এসে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাদের জরিপ করলেন,আমরা লাংগোট পড়ে খালি গায়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের উনি
কি করে বুকডন, বৈঠকি দিতে হয় দেখিয়ে দিলেন। শুরু হলো আমাদের শরীরচর্চা। এই ভাবে দিন আসে দিন যায়, আখড়ার পাড়ার অনেকের সাথে
পরিচয় হয়ে গেছে। রোজ বিকেল চারটের সময় আখড়ায় গিয়ে জামা প্যান্ট খুলে ল্যাংগোট পরে খালি গায় গা ঘামানো শুরু হতো। কয়েক দিন
হলো লক্ষ করছি একটি ফুটফুটে ফরসা মিষ্টি দেখতে মেয়ে বাড়ির ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে থাকে, মোটামুটি বছর পনেরো বয়েস হবে। খুব সুন্দরী, ব্যায়াম করতে করতে চোখ চলে যায় ওপরে, চোখের আর কি দোষ তখন আমাদের সম বয়েসি যে মেয়েকেই দেখি কেমন রাজকন্যা রাজকন্যা মনে হয়। লক্ষ করে দেখেছি ও এমন ভাব
করে দাঁড়িয়ে থাকতো যেন আমাদের দেখছে না,কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারতাম আমাকে দেখছে। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা করতো খালি গা শুধু মাত্র একটা লাংগোট পরা। একদিন হটাত চোখে চোখ পরতেই ফিক করে হেসে ফেলেছে। আমিতো লজ্জায় লাল। বলতে নেই আমি কিন্তু যথেষ্ট ফরসা ছিলাম, ঝাকড়া চুল সদ্য ঠোঁটের ওপরে কালো গোঁফের রেখা। ওর মিষ্টি হাসি দেখে
কেমন যেন নিজেকে হিরো হিরো মনে হওয়া শুরু হোলো। ভবেশ আর শিবুকে বললাম, ওরাও লক্ষ করেছে মেয়েটিকে। আমাদের আখড়ার কাছেই
আমার স্কুলের দুলাল নামে একটি ছেলে থাকে, পাড়ায় একটু ডাকাবুকো। ব্যায়াম শেষে ওর সাথে
মাঝে মাঝে গল্প করি।ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম, মেয়েটির নাম লিলটি। ক্লাস নাইনে পড়ে। রোজই চোখা চোখি হয় আর ও মিটিমিটি হাসে। এক দিন দেখি আরো দুটো মেয়ে ওর সাথে ওর ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে। দুলালকে জিগ্যেস করাতে জানলাম লিলটির বন্ধু অমিতা আর রিনি, এই পাড়াতেই থাকে।রোজই ওরা তিনজন আজকাল দাঁড়িয়ে থাকে ব্যালকনিতে আমাদের ব্যায়ামের সময়। এবার আমরা তিনজন ওরা তিন জন।একদিন বিকেলে ব্যায়ামের রেস্ট ডে তে আমি
ভবেশ আর শিবু লেকের মাঠে বসে মিটিং করে আমরা তিনজন লিলটিদের তিন জনকে ভাগ করে নিলাম। আমার ভাগে লিলটি যেহেতু আগেই লিলটির সাথে আমার ফিক ফিকানি হাসির
একটা রিলেশনশিপ তৈরী হয়ে গেছে ভবেশের ভাগে আমিতা, কারন ভবেশের মতো আমিতাও একটু পাকা পাকা ভাবের আর ছোট্ট রিনি শিবুর।
ব্যাস ভাগাভাগি কম্পলিট,কারো কোনো আপসোস রইল না।
এই ভাবে দিন কেটে যায় তিন জনই নিজেদের একটু হিরো হিরো ভাব আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি সেই সংগে ব্যায়ামও চলছে পুরদমে।
এক দিন হটাৎ দুলাল খবর পাঠালো ব্যায়ামের পর ওর সাথে দেখা করতে।
কাছেই দুলালের বাড়ি। দেখা হতেই দুলাল স্কুলের খাতার পাতার তিনটে ভাজ করা কাগজ আমাদের তিন জনের হাতে দিল।
খুলে দেখি তিনটে চিঠি একই বয়ান, লেখা আছে
ভালোবাসা কাকে বলে জানি না কিন্তু ভালো লাগে, দেখা করতে ইচ্ছে করছে। আমার চিঠির নিচে লিলটি, ভবেশের চিঠিতে অমিতা আর শিবুর চিঠিতে রিনির নাম। বুঝলাম আমাদেরই
মতো ওরাও আমাদেরকেও ভাগ করে নিয়েছে।
ওই কটা লাইন পড়ার সাথে সাথে মনে হোলো সমস্ত প্রকৃতিটাই যেন পালটে গেলো, মনে হোলো পৃথিবীতে আর কোনো ঋতু নেই শুধু বসন্ত আর বসন্ত। দুলাল ও আমার কাছে হয়ে গেলো বসন্তের মাঝে শ্রাবণের কালিদাসের মেঘদূত।
আমরাও দুলালের কাছ থেকে পেন আর কাগজ নিয়ে লিখে দিলাম, কাল সান ডে বিকেল পাঁচটার সময় বেলেঘাটা খালের ধারে মিট করতে।
দুলালের হাত দিয়েই আমাদের নায়িকা
দের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।
সে দিন স্বপ্নের ঘোরে আমরা তিন জন
বাড়ি ফিরেছিলাম চিঠিটাকে বুক পকেটে চেপে ধরে,জীবনের প্রথম প্রেম পত্র। পরের দিন ঠিক পাঁচটার সময় ওরা এসেছিলো, আমরা তিন হাফ প্যান্ট পরা হিরো আর তিন ফ্রক পরা হিরোইন। মনে আছে ঘন্টা খানেক আমরা পাশা পাশি দুজন
করে খালের জলের ধার দিয়ে হেটেছিলাম। আমরা কেউই তখন জানতাম না প্রেম কাকে বলে, প্রেমের কথা কি বলতে হয়। শুধু বুঝতে পারছিলাম খুব খুব ভালো লাগছে লিলটির পাশে পাশে হাটতে আর মনে হচ্ছিল সারা জীবন যেন
এই ভাবেই লিলটির পাশে পাশে হেটে যেতে পারি,এই হাটার পথ যেন শেষ না হয়।
হটাৎ কিছু মানুষের চিৎকার শুনে সম্বিত ফিরে এলো, দেখি একটা বড়শীতে মাছ গেঁথেছে, ছিপটা হাতে তুলে নিলাম, ছিপটা ধনুকের মত বেঁকে
যাচ্ছে, বুঝলাম ছয় সাত কিলোর মাছ
গেঁথেছে। শুরু হয়ে গেলো স্বপ্ন আর বাস্তবের টানা টানির খেলা। কে জেতে কে হারে।

********** নন্দিনী ***** *****
আজ বেলেঘাটার পশ এলাকা সি আই টি রোডের মোড়ে পোস্ট অফিসের পাশে নিজের চার তলা বাড়ির ব্যালকনিতে বসে এক কাপ চা নিয়ে শেষ শ্রাবণের বৃষ্টি দেখতে দেখতে নীল
ভাবছিলো, রাসমনি বাজারের সেই সাত ঘর এক উঠোন ভাড়া বাড়ি থেকে এই আজকের ঝকঝকে সি আই টি রোডের এই চার তলা বাড়িতে আসতে নীল কে কত গুলো বছর কত
পরিশ্রম করতে হয়েছে। আজ সেই সাত ঘর এক উঠোন বাড়িটা আর নেই, আজকের প্রোমোটারের বদান্যতায় বিশাল মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং হয়ে গেছে। রাসমনি বাজারের সেই পুরান বাড়িটাতে গেথে আছে নীলের, কৈশোরের শিকড়।
আজ কোথায় হারিয়ে গেছে ভবেশ, শিবু, সেই কেষ্টদার ব্যায়ামের আখড়া।
ওদের কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে যায়, একটা ফ্রক পরা কিশোরী , জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া লিলটি। আজকাল ভালো করে লিলটির মুখটাও মনে করতে পারে না নীল।
শুধু মনে পড়ে স্কুলের লাইনটানা খাতার একটা পাতায় গোটগোট করে লেখা কয়েকটা কথা। আজো নীল ভুলতে পারেনা সেই জীবনের প্রথম পাওয়া কয়েকটি কথা, ভালোবাসা কাকে
বলে জানি না কিন্তু ভালো লাগে, খুব দেখা করতে ইচ্ছে করছে।
বাইরে অঝোরে ঝরে চলেছে শেষ শ্রাবণের বৃষ্টি। মনটা কেমন জানি হারিয়ে যাচ্ছে অতিতের এক স্বর্ণালী বিকেলে, চোখের সামনে নীল দেখতে পাচ্ছে তিনটে হাফ প্যান্ট পরা কিশোর
আর তিনটে ফ্রক পড়া কিশোরীর ছবি। সেদিন লিলটির সাথে খাল পারের জলের ধার দিয়ে হাটতে হাটতে নীলের খালি মনে হচ্ছিল, এটাকেই কি ভালোবাসা বলে? না হলে এত ভালো
লাগছে কেন লিলটির পাশে পাশে হাটতে। এক দিন নীল ভবেশ আর শিবু কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়িতে লুকিয়ে স্কুলের টিফিন থেকে কিছু পয়সা জমিয়ে আলোছায়ায় উত্তম কুমার সুচিত্রা সেনের একটা সদ্য বের হওয়া সিনেমা দেখেছিলো পথে হোলো দেরী। সিনেমাটার শেষ সিনে সুচিত্রা সেন ঝাঁপিয়ে পড়বে উত্তম কুমারের বুকে, আর উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে অনেক্ষণ।
সেই দৃশ্যটা মন থেকে নীল ভুলতে পারতো না, শরীরের মধ্যে কেমন জানি একটা রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়তো। সেদিন খাল পারে হাটতে হাটতে নীল সেই শিহরণটা অনুভব করছিল আর খুব ইচ্ছে করছিল ওর লিলটিও যদি ওই ভাবে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তো আর নীলও উত্তম কুমারের মত লিলটিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে অনুভব করতো লিলটির নরম শরীরের উত্তাপ।আজ ব্যালকনিতে বোসে নীল ভাবে সেদিনের সেই হাফ প্যান্ট পরা কিশোর ছেলেটির অনুভূতিই কি ছিলো, নীলের জীবনের প্রথম প্রেম?
সকলের জীবনেই ছোট বেলাটা যেন ফাস্ট ফরয়ার্ড করা সিনেমার মত, দেখতে দেখতে কেটে যায়, পেছনে ফেলে রাখে অনেক ঘটনার স্মৃতি। অনেক গুলো ছোট ছোট ঘটনার জন্য নীল ভবেশ আর শিবু ছেড়ে দিয়েছিল সেই ব্যায়ামের আখড়া। তার পর কেটে গেছে অনেক দিন, হাজার সূর্য অস্ত গিয়েছে নীলের জীবনে। ভুলে গেছে ছোট বেলার কথা ভুলতে পারেনি শুধু লিলটির কথা। মনের মধ্যে তখন একটাই জেদ ছিল লেখাপড়া করে নিজের কেরিয়ারটাকে
তৈরী করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আজ নীল রয় একজন প্রতিষ্ঠিত বিজনেস ম্যান। কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে লেদার টেকনোলজি তে ডিগ্রী কোর্স কম্পলিট করে আজ বানতলাতে বিরাট ফ্যাক্টরির মালিক।
তারই সংগে জোকাতে দুটো লেদার গুডসের ইউনিট।পুরোটাই এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড। মাঝে মাঝে বিদেশ যেতে হয় এক্সপোর্ট প্রোমোশনের জন্য। বিয়ের কথাটা এখনো ভেবে
উঠতে পারেনি নীল, মনের কোথায় কোন কোণে যেন একটা মিষ্টি ফ্রক পরা মেয়ে মাঝে মাঝে উকি দেয়। ভাবে কোথায় আছে এখন লিলটি কে জানে, হয়তো বিয়ে থা করে গিন্নিবান্নী
হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে নীল ওর সেই ছোট বেলার হারিয়ে যাওয়া প্রেম লিলটির মুখটা মনে করার চেষ্টা করে। ভালো লাগছে না কাল আবার দুপুরের ফ্লাইটে
যেতে হবে চেন্নাই, ওখানে কাল থেকে লেদার ফেয়ার শুরু হচ্ছে আর এবারে কলকাতার নীল রয় চিফ গেস্ট।পরের দিন ঠিক তিনটের ফ্লাইট, নাম্বার Indigo 6E 305 সিসিইউ টু চেন্নাই একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে উঠে বসলো নীল প্লেনে।
নন্দিনী সেন, ঝকঝকে খুবই সুন্দরী একটি মেয়ে একটা ট্রলিব্যাগ টানতে টানতে দমদম এয়ার পোর্টের ডোমেস্টিক গেট দিয়ে ঢুকছে। পরনে ব্লু স্কার্ট সুট গলায় পিংক টাই তাতে ইন্ডিগো এয়ার লাইন্সের লোগো, সুন্দর করে চুলে খোপা বাধা, চোখে আই লাইনার ঠোঁটে টাইয়ের সাথে ম্যাচিং পিংক কালারের লিপস্টিক হাই হিল, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের সব থেকে সুন্দরী এয়ার হোস্টেস। আজকের ফ্লাইট সিসিইউ টু চেন্নাই 6E 305 ভায়া বেঙ্গালোর টু কলকাতা। এয়াপোর্টে
ঢোকার পর থেকে যতক্ষণ না ডেস্টিনেশন এয়ারপোর্ট গ্রাউন্ড টাচ করছে, এক মিনিটও বিশ্রাম নেই কেবিন ক্রুদের। শিডিউল টাইমে এয়ারপোর্ট এ পৌছনো, এয়ারলাইন্স কাউন্টারে কিছু ফরমাল সইসাবুদ, তার পর প্যাসেঞ্জার কলিং এর আগেই সব ক্রু পাইলট সবাইকে এয়ারক্রাফট এ ঢুকে যেতে হয়। আজও যথারীতি সিডিউল মেনে নন্দিনী এয়ারক্র‍্যাফটে ঢুকে প্রাথমিক যাযা করনীয় করে নিয়েছ আজ এই ফ্লাইটে দুজন এয়ার হোসটেস, নন্দিনী আর রিয়া।
সময় হয়ে গেছে, প্যাসেঞ্জার বাস থেকে নেমে, প্যাসেঞ্জাররা আস্তে আস্তে এয়ারক্র‍্যাফটে ঢুকছে, রিয়া সকলের বোর্ডিং পাস চেক করে যার যার সিট দেখিয়ে দিচ্ছে। সবাই বসে গেলে
নন্দিনীর ডিউটি প্রত্যেকটা সিটের কাছে গিয়ে লিস্টের সাথে তাদের আই ডি মিলিয়ে নেওয়া। এয়ার লাইন্সের রুল অনুযায়ী আজকাল লিস্টের প্রত্যেকটা নামের পাশে তাদের কন্টাক্ট
মোবাইল নাম্বার লেখা থাকে। নন্দিনী সব চেক করতে করতে লাস্ট নামের প্যাসেঞ্জারের সামনে এসে দাঁড়ালো। মিষ্টার নীলাদ্রি সেন। নামটা পড়তেই চমকে ওঠে নন্দিনীর ভেতরের
সেই ছোট বেলার লিলটি। অনেক অনেক দিন আগের একটা নাম ঝিলিক দিয়ে ওঠে মনের কোণে। আই ডি চেক করতে গিয়ে দেখে বেলেঘাটার সি আই টি রোডের এড্রেস। এবার পুরো কনফার্ম হয়ে যায় লিলটি এই সেই হারিয়ে যাওয়া ওর ছোট বেলার ভালো লাগা ছেলেটি
কেষ্টদার ব্যায়ামের আখড়ার নীল। নীলও খুব অবাক হয়ে নন্দিনীকে দেখছিল, কি চোখ জুড়ানো মিষ্টি একটা মুখ, স্মার্ট সপ্রতিভ একটা মেয়ে, অনেক্ষণ ধোরে ওকে দেখছে, নীলের কেমন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটির টানাটানা চোখ দুটো কি একটু ছলছল করছে? নীল ও কেমন যেন একটা অদ্ভুত এট্রাকশন ফিল করছে। অবাক হয়ে ভাবে নীল এরকম তো কোনো মেয়েকে দেখে ওর ফিলিংস হয় নি।
যথারীতি যথা সময়ে নন্দিনী ইন্টার্নাল এড্রেস সিস্টেমে প্যাসেঞ্জার এড্রেস দিতে দিতে দেখলো নীল এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছে আর মনে হোলো কি যেন ভাবছে। শিডিউলে প্লেন টেক অফ
করলো। তিন ঘন্টার ফ্লাইট টাইম। এতক্ষণে নন্দিনী আর রিয়া একটু নিশ্বাস ফেলার সময় পেলো। নিজেদের ছোট্ট কেবিনের সিটে বসে নন্দিনী চোখটা বুঁজে হেলান দিলো। এখন আর কেউ ডাকবে না, ডাকলেও রিয়া আছে। চোখ বুঁজে থাকতে থাকতে চোখের সামনে ভেসে উঠলো, বেলেঘাটার খাল পাড়ের একটা দৃশ্য, তিনটি হাফ প্যান্ট পরা ছেলে আর ওরা ফ্রক পরা তিন
বন্ধু, ওই তিনটি ছেলের ভেতর সব থেকে সুন্দর ছেলেটি ওর সেদিনের নীল। আজ নীলকে প্লেনের মধ্যে দেখে সেদিনের সেই ফ্রক পরা লিলটির ভালো লাগার স্মৃতি গুলো এসে ভীর
করেছে আজকের নন্দিনীর মনে।... এতগুলো বছর কেটে গেছে, কত পরিবর্তন এসেছে জীবনে। গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করে, কলকাতার Frankfinn Institute of Air Hostes and AviationTraining Centre থেকে দুবছরের ডিপ্লোমা করে এক বছর বাই পাসেরধারে একটা ফাইভ স্টার হোটেলে রিসেপশোনিস্টের কাজ করে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের এয়ার হোস্টেসের এই চাকরী টা পেয়েছে। অনেক গুলো বছর নীলের সাথে কোনো যোগাযোগ ই নেই লিলটির। কিন্তু মনের কোনে জীবনের প্রথম ভালোবাসা ধিকি ধিকি করে মনটাকে অশান্ত করে রাখতো। এত গুলো বছরেও লিলটি ভুলতে পারেনি নীলকে। আজ আবার সামনে
দেখে বার বার চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে। বুঝেছিল লিলটি ওর সেই কিশোরী মনের ভালোবাসা আজ পর্যন্ত অন্য কোনো ছেলেকে কেন মনের মাঝে আসতে দেয় নি।
প্যাসেঞ্জার লিস্ট থেকে নীলের মোবাইল নাম্বারটা সেভ করেনেয় নন্দিনী। যথা সময়ে শিডিউল তিন ঘন্টায় ইন্ডিগো এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট নাম্বার ই ৬০৫ চেন্নাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ার
পোর্টের মাটি ছুলো।
এ্যাজ এয়ার লাইনস রুল এয়ার ক্রাফটের ডোর খুলে কেবিন ক্রু আর পাইলটস সব যাত্রিদের বিদায় সম্ভাষণ জানায়, সেই মতো নন্দিনী আর রিয়াও হাত জোড় করে সব যাত্রিদের বিদায়
জানাচ্ছে , সবাই আস্তে আস্তে হান্ডব্যাগস সাথে নেমে যাচ্ছে।
সব শেষের প্যাসেঞ্জার নীল হাতের ব্যাগটা নিয়ে নামতে গিয়ে নন্দিনীর সামনে এসে দাঁড়ালো। নন্দিনীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড, দেখে এয়ার হোস্টেস নন্দিনী এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর দিকে, সেই হরিণীর মত চোখ দুটিতে কি ব্যাকুলতা, নীলের যেন মনে হচ্ছে চোখ দুটি ওকে বলছে আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।
এক মন প্রশ্ন নিয়ে নেমে যায় নীল প্লেন থেকে তার পর ব্যাগেজ সহ এয়ারপোর্ট থেকে একটা ক্যাব নিয়ে রওনা হয় নীল ওর জন্য বুক করে রাখা চেন্নাইএর
হোটেল হিল্টনের দিকে।
আর এদিকে লিলটি আজকের এয়ার হোসটেস নন্দিনী ডিউটির সমস্ত ফর্মালিটি কম্পলিট করে নিজের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে রিয়ার সংগে রওনা হয় ওদের জন্য নিদৃষ্ট হোটেল মেরিনা ইন এর দিকে।
হোটেল হিলটনের সেকেন্ড ফ্লোরের ২০৭ নং রুমে ফ্রেশ হয়ে নীল ইন্টারকমে এক কাপ কফির অর্ডার দিয়ে আরাম করে ব্যালকনির বেতের চেয়ারটাতে বসে আকাশের দিকে তাকালো,
পরিষ্কার আকাশ, সন্ধ্যা হয়ে গেছে, কাল থেকে দুটো দিন ফেয়ারের ইনাগুরেশন, স্টল ওপেনিং,তারপর মিটিং আরো কত কি। দুটো দিন খুব বিজি শিডিউল নীলের, আজ এইটুকু
সময় ওর একান্ত নিজের। হটাত প্লেনের খুব সুন্দরী এয়ার হোস্টেসের অদ্ভুত আচরণ নীলের মনে পড়ে গেলো। ওর ও কেমন যেন মনে হচ্ছে খুব চেনা একটা মুখ, নামার সময় সেই
ব্যাকুল দুটো চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন বলতে চাইছে পারছো না চিনতে আমাকে? আমি যে তোমার হারিয়ে যাওয়া অতিতের ভালোবাসা।
তবে কি ও লিলটি? যার জন্য এত বছর নীল অপেক্ষা করে করে আছে? এও কি সম্ভব?
কাল সকালেই বেড়িয়ে যেতে হবে ফেয়ার থেকে গাড়ী আসবেনীলের জন্য, তাই রাত দশটার মধ্যে ডিনার কম্পলিট করে এগারো টার মধ্যে শুয়ে পোড়ে নীল আকাশ পাতাল ভাবছে।
খালি মনে পড়ে যাচ্ছে এয়ার হোস্টেস মেয়েটির চোখ দুটি।
একটু তন্দ্রামতন হয়েছে নীল হটাত ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো, আননোন নাম্বার, হ্যালো বলতেই একটি মেয়ের গলা তুমি নীল বোলছো? নীলের মনে হচ্ছে মনের মনিকোঠায়
অনেক যত্ন করে রাখা চেনা একটা গলার আওয়াজ, হা বলতেই আবার সেই মনের বীণার সপ্ত সুরের আওয়াজ বলছে নীল আজও আমি জানি না ভালোবাসা কাকে বলে কিন্তু
এখনো ভালো লাগে তোমাকে, খুব দেখা করতে ইচ্ছে করছে,হোটেল মেরিন ইন রুম নাম্বার ১০১ এ আমি আছি। আজ নিশ্চয়ই তোমাকে বলে দিতে হবে না আমি কে বলছি ।
* ***********
***** *** শুন্যতা *******
( " লিলটি আর নন্দিনী " র শেষ পর্ব।)

হোটেল হিল্টনের রুমে লিলটির ফোনটা পেয়ে নীলের মনে হচ্ছিল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানুষের জীবনটা কেমন বদলে যেতে পারে,
মনটাকে অকাল বসন্তের কৃঁষ্ণচূড়ার রঙে রাঙিয়ে দিতে পারে ভাবতেও পারেনি ও। ফোনটা অফ করে একটা সিগারেট ধরিয়ে নীল ব্যালকনিতে
এসে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে তাকায় নীল, শ্রাবণ শেষ আকাশে আজ যেন তারার মেলা,আজ
একাদশী, এক ফালি চাঁদ আকাশে ঝকঝক করছে, আর তারা গুলো মিটমিট করে ঠোঁট টিপেটিপে হাসছে আর যেন ওকে বলছে, দেখলেতো কেমন পৃথিবী ছেড়ে অসীম নীল
আকাশের বুকে ২০ হাজার ফুট ওপরে তোমার লিলটি তোমাকে খুঁজে পেলো? আর ওকে হারিয়ে ফেলো না নিজের করে নিও। তর সইছে না আর, নীলের মনে হচ্ছে এখুনি ছুটে যায় ওর লিলটির
কাছে। বিছানায় শুয়ে পোড়ে মনেমনে ঠিক করে নেয়, সকালে ফেয়ারের গাড়ী নিয়েই আগে মেরিনা ইন এ যাবে, লিলটিকে সঙ্গে নিয়ে ফেয়ারে যাবে,
তার পর কত কিছু কল্পনা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে নীল।
আজ সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় নীলের, দশটায় গাড়ী আসবে, আগে মেরিনা ইনে যেতে হবে, তাই তারাতারি করে দাড়ি কেটে স্নান করে, ড্রেস আপ
করে নিলো, আজ নীল পরেছে ব্লু কালারের সুট, নিচে হোয়াইট সার্ট আর মাচিং স্ট্রাইপ টাই। আয়নার সামনে চুল ঠিক করতে করতে
নিজেকে দেখতে দেখতে নিজেই হেসে ফেলে নীল, আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই নিজে বলে, কত দিন কত বছর বাদে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে খুঁজে পেয়ে কেমন খুশিতে ডগমগ করছে দেখো।
ঠিক দশটার সময় গাড়ী এসেছে, হোটেলেই হাল্কা ব্রেকফাস্ট করে গাড়িতে গিয়ে বসলো নীল। ড্রাইভার কে বললো প্রথমে ও হোটেল মেরিনা
ইন এ যাবে। লোকাল ভাড়ার গাড়ী, ড্রাইভার সব কিছুই চেনে। গাড়ী ছুটলো মেরিনা বিচের দিকে। গাড়ীর পেছনের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে নীল ভাবছিল, কি অদ্ভুত মানুষের ভাগ্যের লিখন। প্লেনে ওঠার সময়েও কি ভাবতে পেরেছিল নীল, যে মাটি থেকে কুড়ি হাজার ফিট ওপরে মেঘের ভেলায়
ভাসতে ভাসতে অতিতের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে খুঁজে পাবে?
সকালে বেড়োবার আগেই নীল লিলটিকে ফোন করে বলে দিয়েছিল এগারোটার মধ্যে ও মেরিনা ইনে পৌঁছোচ্ছে। খানিক্ষণ বাদে ড্রাভারের কথায় চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মেরিনা ইন হোটেলে পৌঁছে গেছে। ভেতরে ঢুকে রিসেপশনে নন্দিনীর
কথা জিগ্যেস করতেই নীল জানতে পারলো, অল রেডি ওর কথা বলা আছে, যাতে নীল ডাইরেক্টলি দোতলায় রুম নাম্বার ১০১ এ যেতে পারে।
রিসেপশন থেকে জেনে নিয়ে নীল লিফটে দোতলায় নেমে একটু খুঁজে রুম নাম্বার ১০১ এর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডোর বেলটা বাজাল। আস্তে বন্ধ দরজাটা খুলে গেলো, নীল দেখলো
ওর সামনে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে মনের গভীরে আঁকা হারিয়ে যাওয়া সেই প্রেম, যার জন্য এত গুলো বছর ধরে অপেক্ষা করে আছে কলকাতার
বিখ্যাত বিজনেসম্যান নীল রয়। ভালো করে তাকিয়ে দেখে কি সুন্দর করে সেজেছে আজকের নন্দিনী ওর কিশোর মনের লিলটি। পিংক কালারের সালওয়ার কামিজ সাথে ম্যাচিং দোপাট্টা,চোখে হালকা কাজল ঠোঁটে শুধু লিপগ্লস
ওর টুকটুকে ঠোঁট দুটোকে যেন ভিজিয়ে রেখেছে, কপালে একটা লাল টিপ, সুন্দর করে চুল বাধা।
দরজায় দাঁড়িয়ে নীল মুগ্ধ দৃষ্টিতে লিলটিকে দেখছে তো দেখছেই চোখ ফেরাতে পারছে না।
সকালে নীলের ফোনটা রিসিভ করার পর থেকেই নন্দিনীর মনে যেন বসন্তের ফুল ফুটলো, তখন থেকেই মনটা খুশিতে ঝলমল করছে, কত কত
দিন বাদে নীলকে কাছে থেকে দেখবে, একটু ছুঁয়ে ওর হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি ফিরে পাবে আর ওর সেই ছেলেমানুষি গায়ের গন্ধ যেন লিলটি এখুনি পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে আজ খুব সাজবে খুব সেজে আজ ও নীলের সামনে দাঁড়াবে। সকাল বেলাতেই স্নান করে নিল লিলটি, বেশি ড্রেস সংগে আনেনি, যা এনেছে তার থেকেই পিংক কালারের সালোয়ার কামিজটা পরে নিল। তার পর হোটেলের রুমের ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে খুব সুন্দর করে সাজলো, আজ ঠোঁটে লিপস্টিক না দিয়ে লিপগ্লস
লাগালো, ও জানে শুধু লিপগ্লস ওর ঠোঁট দুটোকে বেশী আকর্ষণীয় করে তোলে। বড়বড় ভ্রমর কালো চোখ দুটো তে ছুঁইয়ে নিলো একটু কাজল, আর কপালে একটা লাল টিপ। সারা শরীরে স্প্রে করে নিলো ওর নিজের ভালো লাগা পারফিউম।
ঠিক এগারোটা বাজার একটু পরেই লিলটি শুনতে পেলো ওর রুমের ডোর বেলটা বেজে উঠলো। লিলটির মনে হচ্ছে বেলের আওয়াজটা যেন কোন
সুদূরে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের দেশ থেকে আসছে। আস্তে আস্তে গিয়ে চোখ বুজে রুমের দরজাটা খুলে দিলো আজকের নন্দিনী। চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে নন্দিনী, শুনতে পেলো যেন অনেক দূর থেকে ভেসে আসা একটি ডাক... লিলটি.. দেখো আমি এসেছি। আস্তে আস্তে চোখ খুলল লিলটি। দেখে ওর দিকে তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর সেই কিশোরী মনের ভালোবাসা নীল।
নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে লিলটি, দু চোখে এক রাশ মুগ্ধতা,কি দারুন লাগছে, ঝকঝকে স্মার্ট হ্যান্ডসাম ম্যান। পরনে দামি ব্লু কালারের সুট,নিখুঁত স্ট্রাইপ্ড টাই নিচে হোয়াইট সার্ট চোখে দামি গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, এই মুহুর্তে ওদের দুজনের কাছে যেন বাকি পৃথিবীর আর কোনো অস্তিত্বই নেই। হটাত চমক ভেংগে লিলটি ঝাঁপিয়ে পড়ে নীলের বুকে, দু হাতে নীলকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে লিলটি আজকের নন্দিনী। নীল ও লিলটিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এত দিনে নীলের মনে ছোট বেলার
দেখা একটা উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের সিনেমা পথে হলো দেরীর শেষ দৃশ্য, যেন ওর জীবনে বাস্তব রূপ পেলো, কিশোর বয়েসে লিলটিকে নিয়ে যে স্বপ্ন মনের মাঝে সযত্নে লালন
করে এসেছে। সে দিন নন্দিনীকে নিয়ে নীল লেদার ফেয়ার এ্যাটেন্ড করে ওর সাথেই দুপুরে লাঞ্চ করে সারাটা দিন কাটিয়েছিল।
পরের দিন সকালের রিটার্ন ফ্লাইট 6E304, নন্দিনী ফিরে গেলো কলকাতা।
নীলকে আরো দুটো দিন থাকতে হয়েছিল চেন্নাইতে, লেদার ফেয়ারের শিডিউল কম্পলিট করে নীলও ফিরে এলো কলকাতা। রাজারহাট নিউটাউনে অনেক দিন আগেই লিলটি ফ্ল্যাট
কিনে মাকে নিয়ে চলে এসেছিলো বেলেঘাটা থেকে।সপ্তাহে দুটো করে ফ্লাইট থাকে ডোমেস্টিক, চারটে দিন ডিউটিতেই কেটে যায়, বাকি তিন দিন রেষ্ট ডেজ। দুজনেই কলকাতাতে ফিরে আসার পর রোজই ফোনে কথা হয়,আর ছুটির দিন গুলো এক সাথে কাটায়, কখনো লং ড্রাইভ, কখনো মাঝ গঙ্গায় নৌকোতে বসে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন গুলোকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা। মাঝে মাঝে সোজা ডায়মন্ড হারবারের সাগরিকা।সারাদিন সাগরিকার রুমে দুজনে দুজনেকে আদরে আদরে ভরিয়ে রাখা, আর প্ল্যান করা কবে দুটো জীবন এক হবে।
মাঝে মাঝে প্রচন্ড ঝগড়াও হোতো, কি নিয়ে? না ওদের প্রথম ছেলে হবে না মেয়ে হবে। নীল বলতো তোমার মত একটি ফুট ফুটে মেয়ে আমার চাই আগে, আর লিলটি খেপে গিয়ে বলতো মোটেই না আমি প্রথমেই তোমার মত একটি জুনিয়র নীল চাই। এই ভাবে খুশীতে খুনশুটিতে দিন কেটে যায়। এরই মধ্যে নন্দিনী ইন্ডিগো এয়ার লাইন্স চেঞ্জ করে জেট এয়ারওয়েজ এর ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের সিনিওর এয়ার হোস্টেসের চাকরীতে জয়েন করেছে, এয়ার লাইন্স অফিসে নন্দিনী নিজের মোবাইল নাম্বারের সাথে নীলের ফোন নাম্বারটাও ব্যাক আপ দিয়েছে ফর এমার্জেন্সি। আপাতত নন্দিনী কে ডিউটির ফ্লাইট এভেইল করতে হয় মুম্বাই থেকে, মুম্বাই টু সিংগাপুর ৬ ঘণ্টার জার্নি
তাই ফ্লাইং ক্রু দের উইকলি দুটো করে ফ্লাইট ডিউটি পারফরম করতে হয়। মোটা মুটি নীল আর লিলটি ডিসাইড করে নিয়েছে বিয়ের পর নন্দিনী এয়ার হোস্টেসের চাকরী আর করবে না। আজ দুদিন হলো লিলটির মা বর্ধমানে মামার বাড়ি
গেছেন, লিলটি একাই ফ্লাটে আছে, খুব খুশি, কালকের ফ্লাইট ডিউটি টা কমপ্লিট হয়ে গেলেই, চাকরীটা ছেড়ে দেবে নন্দিনী।
ফিরে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে ওর আর নীলের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়ে যাবে। অলরেডি নোটিস দেয়া হয়ে গেছে। কি যে ভালো লাগছে, হটাত মাথায় একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে গেলো, আজ ও আর নীল দুজনে যদি একসাথে এক বিছানায়
সারা রাত আদরে আদরে কাটিয়ে দেয়, তাহলে কেমন হয়? আর সাত দিন বাদেইতো ওরা বিয়ে করে নিচ্ছে। ভাবতেই লিলটির গাটা কেমন কাঁটা দিয়ে উঠলো, বিছানায় কি হতে পারে ভাবতে গিয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো লিলটি। এবার যথা
চিন্তা তথা কাজ, নীলকে ফোনে বলে দিলো , আজ রাতে নীল ওর সাথে ওর ফ্ল্যাটে ডিনার করবে, আর আজ রাতে ঘরে ফেরা নৈব নৈব চ। সেদিন ঠিক আট টার সময় নীল পাজামা আর একটা কালারড পাঞ্জাবী পরে এসেছিল। কি সুন্দর লাগছি নীলকে। ডিনারের পর দুজনে এক পেগ কোরে হুইস্কি নিয়ে
গল্প করতে করতে রাত প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। নীল গ্লাসের শেষ সিপটা মেরে উঠে দাঁড়ালো, লিলটি এক দৃষ্টিতে নীলকে দেখছে আর মিটিমিটি করে হাসছে।নীল লিলটিকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেলো, ঘরের লাইট না নিভিয়ে আর একটা লাইট জ্বালিয়ে দিলো। নিজের হাতে গোলাপের কুঁড়ির পাপড়ি একটা একটা করে খুলে গোলাপটাকে পরিপূর্ণ করে ফুটিয়ে তুললো।
ঝক ঝকে আলোয় নীল মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে বিছানার ওপরে শুয়ে আছে এক সোনার বরণ রাজকন্যা। সে দিন সারা রাত ওদের দুজনের পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, শুধু এয়ার
কন্ডিশনারের গুন গুন শব্দ যেন ভ্রমর পাখার গুঞ্জন শুনিয়েছিল ওদের দুজনকে সারা রাত। শেষ রাতে পরিতৃপ্ত দুটো শরীর জড়িয়ে ধোরে ঘুমিয়ে পরেছিল।পরের দিন নন্দিনী এক সপ্তাহের জন্য চলে যাবে মুম্বাই থেকে সিংগাপুর, ওর এয়ার হোস্টেস জীবনের লাস্ট ফ্লাইট। নীল গিয়েছিল দমদম এয়ারপোর্টে লিলটিকে জেট এয়ার
লাইন্সের মুম্বাই এর ফ্লাইটে সি অফ করতে। এয়ারপোর্টের গেটে নীলকে জড়িয়ে ধরে লিলটি বলেছিল, নীল আজ তোমার ছোঁয়ায় ভালোবাসা কাকে বলে জেনে গেছি আর সারা জীবনের জন্য তোমাকে ভালোবাসবো, এখন তোমাকে ছেড়ে যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না। কেন যেন এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার সময় গাড়ীতে নীলের মনটা খুব খারাপ লাগছিল। কত দিনই তো লিলটিকে সি অফ করেছে নীল, কিন্তু কোনো দিন তো লিলটি এমন কথা বলে নি।
বুঝতে পারছে লিলটির শেষ কথা গুলো নীলের মনে একটা আশংকা দানা বেধে দিচ্ছে। নীল জানে মুম্বাই থেকে জেটএয়ার ওয়েজের উইকলি তিনটে ফ্লাইট, যে ফ্লাইটে নন্দিনী আজ হোস্টেস তার নাম্বার 9W12 from Mum To Sin। মনের মধ্যে
একটা অশান্তি নিয়ে নীল এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি ফিরে এলো।ঠিক রাত ৯ টার সময় নীল লিলটির ফোন পেলো, আমি অন বোর্ড, এখুনি আমরা টেক অফ করবো, এখন আর ফোন কোরো না, খুব শিগগির তোমার কাছে ফিরে আসবো, খুব খুব
ভালোবাসি তোমাকে নীল,আমার চুমু নাও, একটা চুমুর আওয়াজ শুনতে পেলো নীল।
অনেক রাতে হটাত মোবাইলের আওয়াজে নীলের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, বিছানাতেই ঘড়ীতে দেখলো রাত তিনটে বাজে, কে ফোন করলো? মোবাইলে কল রিসিভ করতেই ইংরেজিতে কয়েকটা কথা শুনেতেই নীলের চোখের সামনে সারা পৃথিবীটা দুলে উঠলো। We are very sorry to inform you that flight number 9W12 of Jet airways from Mumbai to Singapore has been crashed on sea 110 notical Miles away from Malaysia. We have got your phone number from the record Of Nandini Sen in our system , Nandini Sen was in board as 1st air hostes in that flight.
Please contact Mumbai office.
কত গুলো বছর কেটে গেলো তার পর, নীল একাই থাকে বিয়ে করা আর হয়ে ওঠেনি, এক রাশ শুন্যতা চোখে নিয়ে রোজ রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে নীল আর কানে বাজে লিলটির শেষ কথা গুলো, নীল তোমার ছোঁয়ায় ভালোবাসা
কাকে বলে বুঝে গেছি, তোমাকে খুব ভালোবাসি, আজ তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

*************
 
***** ভালবাসি তোমায় ******
& &
যদি চোখ দুটো ছোঁয়
সকাল বেলার হীমেল শিশির ,
যদি ঘুম ভাঙ্গা মন শোনে
রাত জাগা পাখির কিচির মিচির ,
যদি শিশির ধোঁয়া চোখ তুলে চাও
পূব দিগন্তে সূর্য ওঠার পথে ,
রঙ্গীন আকাশ রামধনু হয়ে ধরা
দেবে তোমার চোখে শিশির বিন্দুর
সাথে । তখন তোমার মনের
রূপকথার রাজকন্যারা পরী হয়ে উড়ে
বেড়াবে তোমার রঙ্গীন আকাশ জুড়ে ।
যদি তোমার মনটাকে ছুঁয়ে যায়
আগুন রাঙা কৃঁষ্ণচূড়ার ফুল, তখন
তোমার কানের দুল, রঙ্গীন হয়ে
রং ছেটাবে প্রজাপতির পাখায় আর
পলাশ গাছের শাখায় i
যদি তোমার মনে ছোঁয়া লাগে বসন্তের
দক্ষিনা বাতাস, মন পেতে চায় বকের
পাখায় আরেকটি মনের আকাশ i
তখন তোমার মনে লেখা হয়ে যায়
সেই মনেরি নাম, মনে পড়ে যায়
আমায়, নীল আকাশে লিখে দিও
ভালবাসি তোমায় *******
 
২১শে ফেব্রুয়ারী......
পৃথিবীর ইতিহাস সৃষ্টি করেছো তুমি।
একুশে ফেব্রুয়ারী সেলাম,সেলাম সেলাম।
রক্ত দিয়ে স্মরণীয় হয়েছে শহীদেরা,
তাঁদের কীর্তি অন্তরে ভরে নিলাম।
ত্যাগ ও প্রেমের উজ্জ্বলতম দ্যূতি
ভাষা প্রতিষ্ঠার আমরণ যতো স্মৃতি।
ধন্য বাংলা দেশ ,ধন্য বাংলা দেশ,
কবির ভালবাসার নেই অবশেষ।।
একুশের আগে শুনেছিলাম
বাংলা দেশের কান্না ,
একুশের আগে খান সেনাদের
বেয়নেটে মৃত্যুর বন্যা।
বাংলা মায়ের দুই সন্তান
সুজলা সুফলা বংগ ভুমি,
রাজনীতির কালো খেলায়
আজ তুমি আর আমি।
বঙ্গমাতার ছোটো কন্যার
অপমান নিগ্রহ,
খান সেনাদের রোষের কারন
বাংলা ভাষায় আগ্রহ।
ধিকিধিকি জ্বলা ভাষা আন্দোলন
জ্বলে ওঠে ২১শে ফেব্রুয়ারি,
কত মৃত্যুমিছিল কত গুলি গোলা
কতশত পুড়লো বাড়ি।
রক্তরাঙ্গা ২১শের প্রাতে
বাংলা ভাষার নবজাগরণ
দুই বাংলার কন্ঠে একই ভাষা
রাখবো ধরে আমরা আমরন।20230221_104545.jpg
 
একটি সত্যি ঘটনা। বলেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজ মুখে। ফিল্ম জগতের এক মর্মান্তিক কাহিনী। ২০১১ সালের মার্চ মাসে, বোলপুরে এক রিসর্টে, সান্ধ্য আড্ডায় গল্পটি শুনিয়েছিলেন তিনি।
"উত্তমকুমার তখন নেই। বেশ কয়েক বছর হয়েছে তিনি গত হয়েছেন। একটা শুটিং ছিল সেদিন। সৌমিত্রবাবু নিউ থিয়েটার্স (নাকি টেকনিশিয়ান স্টুডিও) সকাল সকাল এসেছিলেন একটা শুটিং'এ। স্টুডিওতে একটি বিশেষ ঘরে তাঁর মেক-আপ চলছিল। ঘরটির বিশেষত্ব ছিল যে সে ঘরে উত্তমকুমার মেক-আপ করতেন এক সময়। তাঁর অবর্তমানে কারও ওই ঘরে ঢোকারই অনুমতি ছিল না, মেক-আপ তো দুরের কথা। শুধুমাত্র সৌমিত্রবাবুর জন্য এ ঘরের দ্বার ছিল অবারিত ।
মেক-আপ সেরে তিনি একা ওই ঘরে বসে নিজের শটের অপেক্ষা করছিলেন। কখনও খবরের কাগজ ঘাঁটছেন, কখনও কোনও ম্যাগাজিন। আবার কখনও ঘরের চার দেওয়াল জুড়ে ঝোলানো সারি সারি ছবিগুলোই খুঁটিয়ে দেখছেন। বাংলা সিনেমার সব বাঘা বাঘা অভিনেতাদের পোর্ট্রেট, যাঁরা আজ আর ইহলোকে নেই । ছবিগুলো বহুবার দেখেছেন, কিন্তু তবুও প্রতিবার নতুন করে দেখতে ভালো লাগে।
সব কটা ছবি ফটোগ্রাফ হলেও এর মধ্যে একজন অভিনেতার একটা অয়েল-পেইন্টিং পোর্ট্রেট ছিল। সেই অভিনেতা ছিলেন রবিন মজুমদার। সৌমিত্রবাবু ভেবে পেতেন না সবার ফটোগ্রাফের মাঝে শুধু ওনারটাই অয়েল পেইন্টিং কেন ?
বসে বসে যখন বেশ কিছুক্ষণ কেটে গিয়েছে তখন স্টুডিওর একটি কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলেন আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে এবং ফ্লোরে আর কে কে এসেছেন। কর্মচারীটি জানালো শুটিং'এ কারা কারা এসেছেন। সে জানালো যে রবিন মজুমদারও এসেছেন এবং এক্সট্রাদের সাথে বাইরে গাছতলায় কাজের জন্য বসে আছেন। প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য যে এককালের সেই স্টার নায়ক-গায়ক সেদিন হতদরিদ্র এক মানুষ। শারীরিক ভাবেও অসুস্থ। তাকে আজ আর কেউ চেনে না। একটু কাজ পেতে রোজ স্টুডিওতে এসে বসে থাকেন।
সৌমিত্রবাবু যখন কর্মচারীটিকে বললেন রবিনবাবুকে নিয়ে আসতে তখন সে বলল যে সেটা করা যাবে না কারণ এই ঘরে সবার ঢোকা মানা। বিশেষ করে একস্ট্রাদের একেবারেই না। শুনে সৌমিত্রবাবু নিজে উঠে বাইরে গেলেন রবিনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁকে দেখে রবিন মজুমদার তো আনন্দে আত্মহারা। কুশল বিনিময় করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রবিন মজুমদারকে মেক-আপ রুমে ডাকলেন। রবিনবাবু ইতস্তত করাতে তিনি প্রায় জোর করেই সেই ঘরে নিয়ে গেলেন। সৌমিত্রবাবু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। যাক...শুটিং'এর দেরি হলেও, আড্ডা দিয়ে সময় কেটে যাবে।
আড্ডা দিতে দিতে, কথা প্রসঙ্গে সৌমিত্রবাবু সেই দেওয়ালের ছবিটার কথা তুললেন। রবিনবাবুর কাছে ওই অয়েল পেইন্টিং'এর রহস্য জানতে চাইলেন। সবার যেখানে ফটোগ্রাফ ঝুলছে, শুধুমাত্র ওঁর ছবিটা অয়েল পেইন্টিংই বা কেন ? রবিনবাবু অবাক চোখে চেয়ে ছিলেন নিজের ছবির দিকে। আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন দেখে যে ছবিটি এখনও আছে।
জানা গেল যে এই ছবিটি ১৯৪২ সালের "গরমিল" নামের একটি ছবির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই সেই ছবি যাতে রবিন মজুমদারের কন্ঠে "এই কি গো শেষ দান, বিরহ দিয়ে গেলে..." গানটি সুপার ডুপার হিট হয়েছিল। সেই ছবিতেই একটি সীনে রবিনবাবুর সেই অয়েল পেইন্টিং পোর্ট্রেট ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী কালে ওই মেক-আপ রুমে যখন ছায়াছবির জগতের সকলের ছবি টাঙ্গানো হচ্ছিল, রবিনবাবুর ক্ষেত্রে হাতের সামনে থাকা ওঁর ওই পেইন্টিংই ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।"
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর গল্প শেষ করলেন একটি মারাত্মক কথা বলে। তিনি বললেন, 'এই হলো আমাদের সিনেমার জগৎ। একটি ঘরে একজন মানুষের ছবি 'সম্মান'এর সাথে ঝোলানো যায়, অথচ সেই মানুষটার কিন্তু ওই ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই।'
কথাটা আজো কানে বাজে ।
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
1f339.png
 
****** বৃষ্টি ******----

আমি তোমার কাছে বৃষ্টি চেয়েছিলাম
তুমি দিলে এক মুঠো মেঘ,
সেই মেঘের কাজল আমি পরিয়ে
দিয়েছিলাম তোমার দু চোখে।
সেই কাজল টানা চোখ দুটি তুলে
তুমি আমাকে বলেছিলে, আমাকে
তুমি কি দেবে? আমি বলেছিলাম,
তোমাকে আমি এনে দেবো দূর আকাশে
ওড়া হংসপাখা। সেই হংসপাখা দিয়ে
তুমি আমার নাম লিখে দিও বৃষ্টির
ফোঁটাতে। আর আমি বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে
অঝোরে ঝরে পরবো আর ভিজিয়ে
দেবো তোমার নীল শারী, যে নীল শারী
পরে তুমি কলসি কাঁখে জল আনতে
গিয়েছিলে নীল যমুনার পাড়ে।
তোমার সেই মেঘের কাজল পরা নীল
বৃষ্টি ভেঁজা চোখ দুটি আমি এখনো
দেখতে পাই, শ্রাবণী মেঘের গায়ে আঁকা,
যেনো আমাকে বলছে, ভুলে যেও না
আমাকে, আমিইতো তোমার বৃষ্টি।
 
** মনের পাতার বাড়ি ***

আমার মনের মনি কোঠায়ে
স্বপ্ন থাকে স্বপ্ন নিয়ে ,
মনের মাঝে আছে ওদের
থাকার বাড়ি পাতা দিয়ে i
পাতার ফাকে আলো এসে
জাফরী কাটে রঙের ছোঁয়ায়,
স্বপ্নরা সব খুশি হয়ে
আমার মনে স্বপ্ন জাগায় i
কল্পনা মন উড়ে চলে
নীল্ আকাশে বকের পাখায় ,
পাতার বাড়ি মনের মাঝে
বসে আছে তোমার আশায় i
আমার মনের পাতার বাড়ি
খোলা আছে তোমার তরে,
কবে তুমি আসবে যে গো
স্বপ্ন গুলোর হাত ধরে i
পাতা ঝরার দিনের শেষে
বসন্ত আসে মনের বাগে ,
কল্পনা মন হোলি খেলে
রঙ্গীন হলো হোলির ফাঁগে i
ভ্রমর পরায় গুন গুনিয়ে
ফুলের মালা তোমার গলায়,
আমার মনের পাতার বাড়ি
তোমার জন্য বাসর সাঁজায় i
 
*** ইচ্ছে ***

চোখ দুটি তোর কাজল কালো
ঠোঁট দুটিতে মহুয়া ,
তোকে দেখে বসন্ত আসে
মনে দখিন হাওয়া।
তোর ছোঁয়াতে মনের মাঝে
উথালপাতাল ঝড়,
তোর জন্য সাগর দ্বীপে
একটি পাতার ঘর।
তোকে দেখে পূব আকাশে
সূর্য সোনা হাসে,
তোর চোখের মেঘ গুলো
সব নীল আকাশে ভাসে।
তুই আমার মনের মাঝে
ইচ্ছে নদী হলি
তোর হাতে হাতটি রেখে
প্রেমের কথা বলি।........
 
** ভ্রষ্টা মন ***
## #######
গতকাল রাত জয়ার ফুলশয্যার রাত ছিল , অতীন সারা রাত ওকে আদর করেছে , এখনো জয়া উপলব্ধি করে ওর শরীরে একটা অচেনা পুরুষের স্পর্শ i প্রথম দিকটাতে একটুও ভালো লাগছিলো না জয়ার কিন্তু যখন চোখ বুজে মনে মনে এই অচেনা মানুষটাকে রঞ্জন বলে ভাবতে শুরু করলো তখন একটু একটু করে ভালো লাগাটাও শুরু হয়েছিল ওর শরীরে i মনে হচ্ছিল রঞ্জনই রয়েছে বিছানায় ওর সাথে i কিন্তু সকাল হতেই বিছানায় রঞ্জনের বদলে অতীনকে দেখতে পেয়ে মনটা আবার কেমন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো , কেমন যেন মনে হচ্ছে শরীরটা অশুচি হয়ে গেছে i গত দুটো বছর রঞ্জন ছাড়া আর কোনো ছেলের কথা মনেও ভাবতে পারত না জয়া আজ সেই কিনা অন্য কোনো পুরুষের বিছানার সঙ্গী, হোক না সে ওর হাসব্যান্ড i বৌভাতের পরের দিন, এখনো বাড়ি ভর্তি অতীনের আত্মীয় স্বজনের ভীর , সবাই জয়ার অচেনা। জয়া জানে দুএকদিনের মধ্যেই সবাই চলে যাবে , অতীনের পরিবার বলতে জয়ার শ্বশুর শ্বাশুড়ী , অতীন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পয়সাওলা ঘর, অতীনের বাবা বড় কোম্পানিতে ডিরেক্টর ছিলেন গত দুবছর হলো রিটায়ার করেছেন , অনেক টাকা পেনশন পান , সল্ট লেকে নিজের বাড়ি। আর অতীন শিবপুর থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাইতে বড় পোস্টে কর্মরত, ভিক্টোরিয়া হাউসে বসে, মাঝে মাঝে কাজের জন্য জেলা গুলো ভিজিট করতে হয়।
জয়া নিজে কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে এম এ কমপ্লিট করে ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেনেটের টুরিজিম ডিপার্টমেন্টে আধিকারিক।
গতকাল ফুলশয্যার রাতে নতুন বৌকে আদর করতে করতে অতিন হনিমুন করতে ওকে নিয়ে কোথায় যাবে সব বলছিল।
কিন্তু সেই ব্যাপারে এক বিন্দুও জয়ার কানে ঢুকছিল না। তখন ওর মন জুড়ে শুধু রঞ্জন আর রঞ্জন। মনে পড়ে যায় জয়ার, অফিসেই প্রথম রঞ্জনকে দেখেছিল। ওরা তিন বন্ধু পূজোর ছুটিতে লাভা লোলেগাও বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম
করেছিল তাই জয়ার অফিসে এসেছিল বিস্তারিত জেনে ওখানকার রাজ্য সরকারের বন বাংলো বুক করা যায় কিনা।
জয়া সেই সময় রঞ্জনকে খুব হেল্প করে বাংলো বুক করে দিয়েছিল। আর কি আশ্চর্য ঠিক ওই পূজার সময়েই জয়ার ডিপার্টমেন্ট জয়াকে লাভা লোলেগাও গিয়ে পাহাড়ের সরকারী
বাংলো গুলোর হাল হকিকত দেখতে পাঠাচ্ছে। সেই সুবাদে প্রতি বছর জয়ার বিভিন্ন জায়গা ঘোরা হয়ে যায়। অফিসে রঞ্জনকে বাংলো বুকিংএ সাহায্য করতে গিয়ে জয়ার রঞ্জনকে খুব ভালো
লেগে গিয়েছিলো, স্মার্ট ঝকঝকে একটি ছেলে,একবার দেখলেই ভালো লেগে যায়। অফিস থেকে টূর অর্ডারটা পেয়ে কেন যেন জয়ার
মনটা খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। ভাবতে গিয়ে কেমন যেন আবার লজ্জাও পেয়ে গেলো তাহলে কি অবচেতন মনে কলকাতার বাইরে কয়েক দিন রঞ্জনকে দেখতে পাবে তার সাথে,ভালো করে
পরিচয় হবে সেই জন্য মনটা খুশিখুশি হয়ে উঠছে?
আজ বৌভাতের পরের দিন, এবাড়িতে জয়া একেবারে নতুন,অতীনের এক মাসতুত বোন নতুন বৌদিকে সকাল থেকে সব রকম হেল্প করছে। গত কাল সারা রাত একটুও ঘুমোতে পারেনি
জয়া তাই আজ দুপুরে সকলের সাথে খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর অতীনের ঘরে অবশ্য আজ থেকে ওর নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেবে। ঘুম আর আসছে কোথায়, ফেলে আসা দিন গুলো ছায়া ছবির মত চোখের সামনে এসে হাজির হচ্ছে।
মনে পড়ে যাচ্ছে, পূজোর ঠিক এক দিন আগেই জয়া পৌঁছে গিয়েছিল লাভার বাংলোতে। পাহাড়ের ওপরে বাংলোটা এত সুন্দর যেন পটে আঁকা ছবি। চার দিকে উঁচু উঁচু পাহাড়, গাছে গাছে ছাওয়া। জয়ার মনটা খুশিতে ভড়ে উঠেছিলো, অবশ্য এর আগেও কয়েকবার জয়া এখানে এসেছে। জয়া এখানে হেড অফিসের প্রতিনিধি তাই বাংলোর ম্যানেজার থেকে শুরু করে সবাই ওকে একটু খাতির করেই চলে কারন বাংলোর সম্বন্ধে ফাইনাল রিপোর্টটা হেড অফিসে জয়াই দেবে। মনে আছে প্রথম দিনই সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে পাহাড়ি পথে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিল জয়া, চার দিকে আকাশ ছোঁয়া পাহাড় গাছ গাছালি আর সকালবেলায় পাখীদের কলকাকলি। জয়ার খুব ভালো লাগছে, পরিষ্কার হাওয়া,বুক ভড়ে নিঃশ্বাস নেয় জয়া।
আবার আস্তে আস্তে হাটা শুরু করেছিল জয়া। পাহাড়ি রাস্তা একটা বাঁক ঘুরতেই দেখে একটা বড় পাথরের ওপর বসে আছে রঞ্জন, একা আকাশের দিকে তাকিয়ে রঙ্গের খেলা দেখছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে, বুঝতেও পারেনি কখন জয়া ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রঞ্জনকে একা পথের মাঝে দেখতে পেয়ে জয়ার মনটাও খুব খুশি খুশি হয়ে উঠেছিল। কাছে গিয়ে রঞ্জন বাবু বলে ডাকতেই রঞ্জন ওকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..... একি আপনি? আমিতো আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না!
অতিতের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে জয়া ঘুমিয়ে পরেছিলো বুঝতেও পারেনি। ঘুম ভাঙলো তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে। খুব লজ্জা পেয়ে ধড়মড় করে উঠে পরে জয়া, নতুন বৌ কে কি ভাবছে কে জানে। ফুল্টুসি অতীনের সেই মাসতুত বোন দুবার দেখে গেছে নতুন বৌদির ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা। অঘোরে ঘুমোচ্ছে দেখে ডাকে নি, মুচকি হেসে ঘর থেকে চলে গেছে, বুঝলো কাল রাতে ওর গুনধর দাদাটি নতুন বৌদিকে একটুও ঘুমোতে দেয় নি।
জয়া উঠে পরে টয়লেটে গিয়ে ফ্রেস হয়ে, একটু হাল্কা মেকআপ করে দোতালা থেকে নিচে নেমে আসে। ওকে দেখতে পেয়েই ফুল্টুসি দৌঁড়ে আসে ওর কাছে। নিচের ড্রইং রুমে জয়া দেখে শশুর শাশুড়ী আর অতিন সোফায় বসে আছে। গেস্ট, আত্মীয় সজনরা সব চলে গেছে। সকলে মিলে গল্প করতে করতে আর চা খেতে খেতে অনেকটা সময় কেটে গেলো। অতিন অনেক দিন পর একটু সময় পেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে চলে গেলো।
জয়াও ঘরে এসে দুচারটে ফোন সেরে নিলো। জয়ার বাবা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হার্টের অসুখ, রেগুলার মেডিকাল চেক আপে রাখতে হয়। তাই অনেক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে বাবা কেমন আছে জেনে নিল। বাবার এই অসুস্থতাটাই জয়ার তাড়াতাড়ি বিয়ে করার একটা কারন। ফোন কমপ্লিট করে জয়া বারান্দার রেলিঙে এসে দাঁড়ায়। মাঘ মাস ছটা বাজতে না বাজতেই চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে, বেশ ঠাণ্ডা পরেছে, গায়ের শালটা ভালো করে জড়িয়ে নেয় জয়া। বেশ কুয়াশা কুয়াশা চারদিক, সারা পাড়াটা কেমন নিঃঝাম হয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকায় জয়া, তারা গুলো কেমন মিটমিট করে জ্বলছে। জয়ার মনে পড়ে গেলো সেই দু বছর আগের কথা।
অক্টোবর মাসের একদম শেষের দিক, জয়া লাভাতে গিয়েছিল,এই রকমই কুয়াশা ঢাকা পাহাড়। ছবির মত মনের মধ্যে আঁকা হয়ে আছে লাভার পাহাড়ি রাস্তায় রঞ্জনের সাথে দেখা হওয়ার সকাল বেলার কথাটা। মনে আছে রঞ্জনকে অবাক হতে দেখে জয়া মিটিমিটি করে হাসতে হাসতে বলেছিল... ভয় নেই আপনাকে ফলো করতে করতে এত দূরে আসিনি, ডিপার্টমেন্ট আমাকে এখানে পাঠিয়েছে কিছু কাজের জন্য। আমাকে এখান থেকে লোলেগাও তেও যেতে হবে ভিজিটে।
সব শুনে রঞ্জনত মহা খুশি। এক মুখ খুশি নিয়ে বলেছিল.... খুব খুব ভালো হলো, এই কটা দিন আমরা একসাথে ঘুরবো বেড়াবো আর চুটিয়ে আনন্দ করবো, কি বলেন? মনে আছে জয়াও রঞ্জনের কথাতে খুব খুশি হয়ে হাসি হাসি মুখে সায় দিয়েছিল।
কোথা দিয়ে কেটে গিয়েছিলো সাতটা দিন, যেন স্বপ্নের মত।
তারুণ্যের উৎসাহে আনন্দে রঞ্জনদের সাথে লাভা লোলেগাও এর দিন গুলো জয়া তাড়‌িয়ে তাড়ি‌য়ে উপভোগ করেছিল আর সেই সঙ্গে জয়ার মনে রঞ্জনের জন্য একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। জয়া খুব ম্যাচুয়র মেয়ে আর রঞ্জন ছিল খুবই ছেলে মানুষ। মনে হয় দু এক বছরের ছোটোই হবে রঞ্জন জয়ার থেকে। পাহাড়ে থাকতে থাকতেই রঞ্জন আর জয়া দুজনে দুজনার সব কিছু জেনে নিয়েছিল। রঞ্জন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। বাড়িতে মা বাবা আর ওর থেকে বড় দু বোন, অবিবাহিতা। মোটামুটি সচ্ছ্বল পরিবার। বেহালার একটু ভেতরের দিকে নিজেদের বাড়ি।
বারান্দার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে দূরে রাস্তার দিকে তাকায় জয়া, বেশ ভালোই ঠান্ডা আজকে, ব্যালকোনি থেকে ঘরে ঢুকে টিভিটা খোলে জয়া, অতিন এখনো ফেরেনি। কেমন যেন একা একা বোর ফিল করে জয়া,অফিস থেকে বিয়ের জন্য দু সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে, আর চার দিন বাদে সামনের সোমবার থেকে আবার অফিস শুরু করবে জয়া ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল জয়ার।
মনে আছে পাহাড়ের টূর থেকে কলকাতায় ফেরার পর রঞ্জনের সাথে জয়ার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
রঞ্জন যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র, সুযোগ পেলেই চলে আসতো জয়ার অফিসে পাঁচটার পর, দুজনে ঘুরে বেড়াত সারা কলকাতা শহর, কখনো ভিক্টোরিয়া কখনওবা গঙ্গার ঘাট। মাঝে মাঝে দু একটা সিনেমাও দেখতে গেছে দুজনে, কিন্তু অন্ধকার হলে রঞ্জনের কোনো রকম বেচাল অনুভব করেনি জয়া বরং অন্ধকার হলে পাশাপাশি বসে সিনেমা দেখতে দেখতে রঞ্জনের সুঠাম আকর্ষণীও যৌবনের অজান্তের ছোঁয়ায় জয়ার ভরন্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠত। একটা উদ্দাম শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করতো জয়া, কিন্তু সহজাত মননশীলতায় রঞ্জনকে সেটা বুঝতে দিত না। রঞ্জনের মনটা ছিল একদম ছেলে মানুষের মত। জয়া বুঝতে পারতো রঞ্জন ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু সেই ভালোবাসার মধ্যে কোনো কামনা ছিল না। অনেকবার রঞ্জন কোনো কারনে খুশি হয়ে উঠলে ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমুও খেয়েছে, জয়া বুঝতে পারতো সেই জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার মধ্যে থাকতো একটা সারল্য আর ছেলেমানুষি। কিন্তু জয়া অনুভব করতো রঞ্জনের ছোঁয়া ওর শরীরে একটা অদ্ভুত ভালোলাগার শিহরণ জাগিয়ে তুলতো। আর রাতে একা বিছানায় শুয়ে মনে মনে কামনা করতো রঞ্জনকে ওর শরীরের সাথে মিশিয়ে নিতে। কিন্তু কখনোই মুখ ফুটে বলা বা কোনো রকম প্রোভোকেট করতো না শালিনতায় বাঁধত। রঞ্জন একদিন শনিবার ছুটির পর ওর বেহালার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সাধারণ সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। দুই দিদির বিয়ে হয় নি, সকলের সাথে আলাপ করে জয়া বুঝতে পেরেছিল, পরিবারের সবাই আশা করে আছে রঞ্জন ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পলিট করে একটা ভালো সার্ভিস করে সংসারের হাল ধরবে। রঞ্জনও অনেক সময় ওর জীবনের লক্ষ্যের কথা জয়াকে বলেছে। বাইরের সম্পর্কের থেকে রঞ্জনের কাছে ওর পরিবার অনেক ওপরে। আর জয়া নিজেও খুব প্র‍্যাক্টিকাল মেয়ে ও বোঝে রঞ্জনকে বিয়ে করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ভার্চুয়ালী রঞ্জনকে কাছে টেনে নেয়, কল্পনায় রঞ্জনের সাহচর্য অনুভব করে। মনে মনে সব সময় রঞ্জনকেই কামনা করে জয়া।
আবার ব্যালকোনিতে এসে দাঁড়ায় জয়া। আজ বাইরের ঠান্ডাটা জয়ার ভালই লাগছে, অনেক দিন বাদে কলকাতায় এই রকম শীত পড়লো। কুয়াশা কেটে গেছে চোখের সামনে কলকাতার ঝকঝকে রাত। অবাক হয়ে ভাবে জয়া জীবনে প্রথম একজন পুরুষ মানুষের বিছানার সঙ্গী হয়েছিল গতকাল ফুলশয্যার রাতে। সারা শরীরে কামনার স্পর্শও প্রথম অনুভব করেছিল, কিন্তু কেন অতীনকে রঞ্জন না ভাবা পর্যন্ত ভালো লাগছিল না, কেনই বা যেই অতিন বিছানায় কল্পনায় রঞ্জন হয়ে গেল তখন থেকেই ভালো লাগা শুরু, ওর শরীর সারা দেয়া শুরু করেছিল। ভেবে পায়না
কেন এমনটা হলো, তাহলে কি ওর সারা কামনা জুড়ে শুধু রঞ্জন আর রঞ্জন? নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করে জয়া এটাকি ভ্রষ্টাচার নয়? এটাকে কি মানসিক ব্যাভিচার বলে?বুঝতে পারেনা জয়া।
এখন রাত আটটা বেজে গেছে অতীনের আসার সময় হয়ে গেছে, রাস্তার দিকে তাকায় জয়া, জমজমাট রাস্তা, অনবরত গাড়ি যাচ্ছে আসছে, দোকান গুলোতে ভীর, কেনাকাটা চলছে।
মনে পড়ে যায় জয়ার কিছু দিন ধরেই বাড়ির থেকে তাগাদা দেয়া চলছিল বিয়ে করার জন্য, একটা ভালো সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিল জয়ার মামিমা , ওনার দূর সম্পর্কের বোনের ছেলে অতীন, ইঞ্জিনিয়ার ছেলে সল্টলেকে নিজেদের বাড়ি, সচ্ছ্বল পরিবার একা ছেলে আর কোনো ভাই বোন নেই। মা বাবার খুব ইচ্ছে জয়া অতিনকেই বিয়ে করে। এত দিন জয়া ব্যাপারটা ঠেকিয়ে রেখেছিল কিন্তু কিছু দিন হোলো বাবার শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না, আর রঞ্জনকে বিয়ে করা ওর পক্ষ্যে সম্ভব নয় তাই মত দিয়েছিল বিয়েতে। আজ অতীনের বাড়ির দোতালার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে জয়া ভাবলো কি ভাবে মেয়েদের জীবন মুহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু জয়া এটাও উপলব্ধি করছে ও ওর মনের কামনার বেড়াজাল থেকে রঞ্জনকে বের করে দিতে পারছে না। জয়া বুঝতে পারছে আজ রাতেও অতীনের সাথে এক বিছানায় কাল রাতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিছানায় ওর কাছে অতীন হয়ে যাবে রঞ্জন, বাস্তব আর কল্পনা মিলেমিশে এক হয়ে যাবে জয়ার কামনায় বাসনায়।
*** রঞ্জন ***
( ভ্রষ্টা মন গল্পের শেষাংশ)
জয়ার সাথে দেখা করার জন্য রঞ্জন জয়ার ডালহৌসির টুরিজিম অফিসে গিয়ে জয়ার খোঁজ করতে গিয়ে যা শুনলো তাতে শুধু অবাকই নয় একটা ধাক্কাই খেয়ে গেলো। জয়া বিয়ের জন্য পনেরো দিন ছুটি নিয়েছে এবং হিসেব মতো দুদিন আগেই জয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। জয়ার বিয়ের খবরটা শুনে মনে মনে ধাক্কা খেলেও কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না রঞ্জন জয়া বিয়েতে
ওকে ডাকলো না কেন বা আগেও কিছুই জানালনা কেন। এত ভালো বন্ধু ওরা দুজন, সপ্তাহে এক দিন দুদিন দেখা না হলে পেটের ভাতই হজম হত না দুজনের। সেই জয়া ওকে অন্ধকারে রেখে একেবারে বিয়ের পিড়িতে? কিছুতেই খবরটা বিশ্বাস করতে পারছিল না রঞ্জন।
কেন জয়া ওর সাথে এই রকম ব্যাবহারটা করলো তার কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছে না রঞ্জন।
মনে মনে জয়াকে রঞ্জন খুব ভালোবাসতো, সেই ওর অফিসে প্রথম দেখা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত।
আস্তে আস্তে জয়ার অফিস থেকে বেড়িয়ে আসে রঞ্জন। হাটতে হাটতে চলে যায় বাবু ঘাটে গঙ্গার পাড়ে।
একটা খালি বেঞ্চ দেখে বসে পরে তাকায় দ্বিতীয় হুগলী সেতুর দিকে, পরন্ত বিকেলের আলোয় সেতুটা কেমন আস্তে আস্তে রঙ পাল্টাচ্ছে।
ভাবে মেয়েদের মনের রঙও কি এই ভাবে সময়ের সাথে সাথে পালটে যায়? কি জানি হবে হয়তো। আসলে জয়ার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে রঞ্জন সেই ভাবে কোনো মেয়ের সাথে মেশেনি।
মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে রঞ্জন, কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখে, পরিবারের সবাই ওর মুখ চেয়ে বসে আছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা ভালো চাকরী করবে, সংসারের হাল ধরবে, দুই দিদির বিয়ে দেবে। ওর কি মেয়ে বন্ধু করার বিলাসিতা সাজে। এই মানসিকতার মাঝে জয়ার সাথে ওর পরিচয়। একঘেয়ে জীবনের পথটা হটাত কেমন এক অজানা রঙে রঙিন হয়ে উঠছিল রঞ্জনের। জয়ার সান্নিধ্যে
কেমন যেন ভালোলাগা, মনটা খুশিখুশি হয়ে ওঠা, বুঝতে পারে না রঞ্জন এটাকেই কি ভালোবাসা বলে? প্রেম বলে?
আস্তে আস্তে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পরছে, পরন্ত সূর্যের আলোয় দ্বিতীয় হুগলী সেতুটা লালে লাল হয়ে গেছে।
সামনে গঙ্গার জল যেন আলতা নদী, মুগ্ধ চোখে দেখে রঞ্জন দিনের শেষ বিদায়ের রঙের খেলা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে রঞ্জনের লাভা লোলেগাও এর পাহাড়ের ধারে বসে জয়ার সাথে সন্ধ্যা বেলায় সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখা। দুজনে দুজনের হাত ধরে মুগ্ধ চোখে দেখতো প্রকৃতির রঙের খেলা।
কেমন এক অজানা ভালোলাগাতে মনটা আবিষ্ট হয়ে যেত রঞ্জনের। সেই ভালোলাগাতে কলকাতাতে ফিরে এসেও বার বার ছুটে আসতো রঞ্জন জয়ার অফিসে ওকে একবার দেখার জন্য।
ধীরে ধীরে সূর্য অস্ত যায় পশ্চিম আকাশে, অন্ধকার নেমে আসে গঙ্গার বুকে। আলোয় ঝলমল করে ওঠে গঙ্গার পাড়। আস্তে আস্তে ভীর হয়ে যাচ্ছে। উঠে পরে রঞ্জন, হাটতে থাকে।
ভালো লাগছে না, হটাত যেন বুকের ভেতরটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুঝতে পারে না রঞ্জন কেন এত কষ্ট হচ্ছে, কোনো দিনই তো রঞ্জন ভাবে নি জয়াকে ও পুরপুরি নিজের করে পাবে। নিজের সামাজিক, পারিবারিক স্ট্যাটাস সম্বন্ধে রঞ্জন যথেষ্ট প্র‍্যাক্টিকাল।ও বুঝতো জয়াকে নিজের করে পাওয়া আর পূর্ণিমা চাঁদে হাত দেয়া একই কথা। তাও মনে মনে কত কি অলিক কল্পনা করেছে জয়াকে নিয়ে। মনটাকে আটকাতে পারতো না, ভালো লাগতো কল্পনা করতে। রঞ্জন বুঝতে পারতো জয়ারও ভালো লাগতো ওর সাহচর্য। মাঝে মাঝে রঞ্জন অবাক হয়ে অনুভব করেছে কখনো সিনেমা দেখতে গিয়ে জয়ার হাতটা ধরলে জয়া যেন কেমন হয়ে যেতো, বুঝতে পারতো ওর শরীরের ছোঁয়া পেয়ে জয়া কেমন অবশ হয়ে যেত, মাঝে মাঝে ওর হাতটা চেপে ধরতো জয়া, রঞ্জন বুঝতে পারতো জয়া কেমন থরথর করে কাঁপছে। রঞ্জনের শরীরেও যেন আগুন ধরে যেতো, কিন্তু নিজের শালীনতা বোধ রঞ্জনকে আটকে রাখতো। এই ভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল,দুজনে দুজনের কাছে আরো কাছাকাছি এসে যাচ্ছিল। মনে পরে একদিন জয়া ওর বাড়ি যেতে চেয়েছিল, খুব খুশি হয়ে রঞ্জন জয়াকে ওর বেহালার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল।
মা বাবা আর দুই দিদির সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। খুবই সাধারণ আর সাদামাটা রঞ্জনের পরিবার, সেদিন জয়া সকলের সাথে অনেক গল্পগুজব করেছিল। রঞ্জনেরও খুব ভালো লাগছিলো জয়াকে ওর পরিবারের সকলের সাথে মিশে যেতে দেখে। সেদিন থেকে রঞ্জনের মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত অলিক ইচ্ছা দানা বাঁধতে শুরু করেছিলো।
কিছুদিনের মধ্যে রঞ্জন ওর ফাইনাল পার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এর এক্সাম এসে যাওয়াতে এক মাসের ওপর জয়ার সাথে দেখা করতে পারেনি, অল্প বিস্তর টেলিফোনে কথা হয়েছে।
পরীক্ষার ঝামেলা পুরপুরি মিটে যাওয়ার পর আজই প্রথম রঞ্জন জয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল ওর অফিসে। ধীরে ধীরে রাত হয়ে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে রঞ্জন হাটতে থাকে বাস স্ট্যান্ডের দিকে, ভালোই হলো জয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে, বাস্তবের নিষ্ঠুর আঘাত পাওয়ার থেকে কল্পনায় দূর থেকে আকাশের পূর্ণিমার চাঁদকে কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখা ওর মত সাধারন একটি ছেলের কাছে অনেক।
নাঃ ভুলেই গিয়েছিল রঞ্জন আজ বড়দিকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ।
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
 
***রেশমী চুড়ি **

সোনার হাতে রেশমী চুড়ি
মিষ্টি সুরে বাঁজে,
ভ্রমর চোখে স্বপ্ন দেখে
মন বসে না কাজে।
হাতে তোমার মেহেন্দি রঙ
কানে হীরের দূল
ঠোঁট দুটিতে হাসির ঝিলক
হাওয়ায় ওরে চুল।
তোমার চলায় ঠমক ঠমক
ময়ুর চলার ছন্দ,
তুমি ছুলে তোমার ছোঁয়ায়
হাস্নুহেনার গন্ধ।
তোমার মনের সূর্যমুখী
সূর্য খোঁজে আমার মনে,
আমার মনের ভালোবাসা
তোমায় খোঁজে ফুলের বনে।........
 
**** মহুয়া *****
## ##
তখন ফেসবুক ছিল না, সোশাল মিডিয়া অরকূট। যথারীতি আমার একটা প্রোফাইল ছিল। মাঝে মাঝে নিজের লেখা কবিতা পোস্ট করি। একদিন আমার একটা খুব রোমান্টিক কবিতা পড়ে আমার ফ্রেন্ড লিস্টের একটি অল্প বয়েসি মেয়ে কমেন্ট করে লিখলো, ওয়েল কাম টু দি ওয়ার্ল্ড অফ ইওথ
উইথ ইওর রোমান্টিক মাইন্ড। তার সংগে লিখলো আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে, বিশেষ করে আপনার বৃষ্টির
কবিতা, মনে হয় যেন আমিই ওই বৃষ্টি, ভিজিয়ে দিচ্ছি আপনাকে অঝরধারায়। কমেন্টা পড়ে আমার খুব
মজা লেগেছিল আর মেয়েটির ব্যাপারে খুব কৌতূহলও হয়েছিল। ওর প্রোফাইলটা ভালো করে পড়লাম।
ওর নাম মহুয়া দত্ত। কলকাতা মেডিকাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে ওখানেই ইন্টার্নশিপ করছে।
তাই প্রফাইলে নাম দিয়েছে ডঃমহুয়া দত্ত। এ্যালবামে অনেক ছবি, অপূর্ব সুন্দরী। টানা টানা চোখ তাকিয়ে
আছে আমার দিকে। ওর ছবি গুলো দেখে মনটা কেমন মিষ্টি হয়ে গেলো। একটা ছবি রয়েছে, কোনো একটা
বিয়ে বাড়িতে তোলা, খুব সুন্দর করে সেজেছে, টানা টানা চোখে আই লাইনার, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিকের
ওপরে লিপগ্লস ঠোঁট দুটোকে কেমন ভিজে ভিজে দেখাচ্ছে, দেখে আমার শরীরটা কেমন শিরশির করছিল। খোপা বাঁধা চুল, একটা জুঁই এর মালা জড়ানো।
অদ্ভূত ব্যাপার ছবিটা দেখছিলাম আর আমি যেন আমার সারা ঘরে জুঁই ফুলের গন্ধ পাচ্ছিলাম।
আমিও মজা করে আমার কবিতায় ওর কমেন্টের রিপ্লাই দিয়ে লিখলাম, একটি মিষ্টি মেয়ের মিষ্টি কমেন্ট মনটা কে মিষ্টি করে দেয়। তাই এবার থেকে আমার সব কবিতা শুধু তোমার জন্য। বিকেলেই রিপ্লাই পেয়ে গেলাম, সত্যিই! সব কবিতা আমার
জন্য? ইস্ আপনি যখন কবিতা লেখেন তখন যদি আমি আপনার কাছে থাকতে পারতাম কি মজা হতো। আপনি
লিখতেন পড়তেন আর আমি গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। আর তারপর যখন অরকূটে পোস্ট করতেন, আমি আমার বন্ধুদের ডেকে দেখাতাম, দেখ এই কবিতা গুলো আমার, শুধুই আমার।
ভরা শ্রাবণ মাস, অঝর ধারে বৃষ্টি ঝোরে চলেছে, কি জানি কেন খালি মহুয়ার মুখটা মনে পরে যাচ্ছে।
আকাশের বুকে আঁকা যেন দেখতে পাচ্ছি ওর দুটো বৃষ্টি ভেজা চোখ আমাকে বলছে লিখবে না কবিতা আমার জন্য? সে দিন ওর বৃষ্টি ভেজা দুটো চোখের অনুরোধ ফেলতে পারি নি। পোস্ট করেছিলাম,
******* বৃষ্টি ******
বৃষ্টি ভেজা মন,বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন
আমিতো তোমাকে কখনো
বৃষ্টিতে ভিজতে দেখিনি …….
কিন্তু তোমার চোখের বৃষ্টিতে
আমি যে দেখেছি আমার কষ্ট
চলো না আজ দুজনে বৃষ্টিতে ভিজি --
আমি বৃষ্টি দেখেছি
আমি বৃষ্টিকে ছুঁয়েছি কিন্তু
তোমার বৃষ্টি ভেজা
মনটাকে ছুঁতে পারিনি ………..
এখনো তোমাকে দেখতে পাই
কোনো বৃষ্টি ঝরা দিনে,
আমার ঘরের জানলায়
তোমার বৃষ্টি ভেজা মুখ,
ছুটে যাই …তুমি হারিয়ে যাও
অঝর বৃষ্টির ধারায় …..
আমি বৃষ্টি দেখেছি..
আমি বৃষ্টিকে ছুঁতে পারিনি
ছুঁয়েছি তোমার
বৃষ্টি ভেজা দুটি চোখ ------
নিচে লিখেছিলাম মহুয়া এই কবিতাটা শুধুই তোমার, শ্রাবনের আকাশে আজ তোমার বৃষ্টি ভেজা চোখ দুটো দেখে আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি, তাই আমার এই কবিতাটা তুমি গ্রহণ কোরো। আর আজ থেকে তুমি আমার কাছে মহুয়া নও, তুমি আমার বৃষ্টি, বৃষ্টি বলেই ডাকবো তোমাকে।
বিকেলের ডাকেই ( অর্কূটে) উত্তর পেয়ে গেলাম। উফ্ কি দারুণ, কবিতা টা পড়তে পড়তে সত্যি মনে হচ্ছিল
তোমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজি। জানো এখন আমাদের এখানে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। আজ
সকাল থেকে তুমি আমাকে খুব জ্বালিয়েছো। আজ আমার হসপিটালে ইন্ডোর ডিউটি ছিল। ওয়ার্ডে রাউন্ড
দিচ্ছিলাম, পেশেন্ট দেখবো কি খালি তোমার কথা মনে হচ্ছিল। জানো আমি যখন ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যাই
আমি এপ্রন পরিনা, খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে খুব সেজে মিষ্টি মিষ্টি হেসেহেসে পেশেন্ট এটেন্ড করি। পেশেন্টরা আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
হি হি হি জানো আজ একজন মহিলা পেশেন্ট কি বলেছে? বলে ওর ছেলেটা যদি বড় হোতো তাহলে নাকি
আমাকে ওর পুত্রবধূ করে নিত। ইস্ কি শখ বলো, আমার বোলে তুমি আছো।......
আমার প্রোফাইলে আমি কখনো আমার কোনো ছবি রাখি না, আমি মেঘের আড়ালে মেঘদূত হয়ে থাকতেই ভালোবাসি, সবার মনে আমার সম্বন্ধে একটা কৌতুহল বজায় রাখতে আমার খুব মজা লাগে। যাই হোক পরের ডাকে মানে অরকূটে ওর চিঠির রিপ্লাই দিলাম। এখনো মনে আছে লিখেছিলাম, বৃষ্টি তোমার লেখা পড়ে তোমাকে নিয়ে কি করবো বুঝে উঠতে
পারছি না। আমাকে না দেখে এমন কি আমার কোনো ছবিও না দেখে এত ভালোবেসে ফেললে আমাকে? আমিও আজকাল বুঝতে পারছি আমার মনটা পুরটাই তোমার দখলে চলে গেছে। কিছু লিখতে বসলে তোমার মুখটাই ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তখন মনে হয় তুমি আমার গা ঘেষে বসে আছো, তোমার শরীরের জুঁই ফুলের গন্ধ তোমার একটু ছোঁয়া আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে। তাই আমি দূর থেকে আমার মনের ভালোবাসা টুকুই দিতে পারি যা তুমি আলরেডি নিয়ে নিয়েছো আর দিতে পারি তোমার রাঙা হাতে আমার এই কবিতার ডালী।
**** তুমি যদি বলো ****
তুমি যদি বলো আজ রাতে
চাঁদ আর ডুববে না ,
আঁধারের মাঝে আঁধার এ রাত
আজ আর ফুরোবে না ।
এখনো যে অনেক কথা
মনের মাঝে করে গুনগুন
রাতের আকাশে পূর্নিমা চাঁদ
জোছনা মাখা এনেছে ফাগুন ।
তুমি যদি বলো আঁধার শেষে
গাছেগাছে ফুল আর ফুটবে না ,
তোমাকে না দেখে ঊষার অরুণ
পূব আকাশে আজ উঠবে না ।.
তুমি এলে তবে ভ্রমর গুঞ্জন
ফুলেফুলে শাখা ভরে যাবে ,
প্রজাপতির ডানার রঙ্গেরঙ্গে
পূবের আকাশ রঙ্গিন হবে ।.
তাই বসে আছি, তুমি আসবে কখন
ভালবাসবে আমায় আপন করে ,
উজার করে দেবো মনপ্রান
দু হাতে তোমার অঞ্জলি ভরে ।
জানি না কেন আমার এই কবিতাটার রিপ্লাই দু দিন পরে পেয়েছিলাম আজও বুঝতে পারিনি। মহুয়া লিখেছিল, তোমার কবিতা সহ তোমার মনটাকে আমি দুহাত ভরে গ্রহণ করেছি, সেটা তুমি ভালো করে জানো। তোমাকে আমি কোনো দিন ভুলবো না, ভোলা আমার পক্ষে সম্ভবও নয়। কিন্তু কোনো কারনে আমি অরকূটের প্রোফাইল ক্লোজ করতে বাধ্য হচ্ছি, জানি না আর কথা
হবে কি না কোনো দিন। জানি তুমি অন্তত আমাকে ভুল বুঝবে না। সেই শেষ পোস্ট মহুয়ার আমার প্রোফাইলে। আমিও আর চেষ্টা করিনি ওকে খোঁজার। ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে হাটতে হাটতে কত বন্ধু আসে কত প্রেম ভালোবাসা আসে, আবার হারিয়েও যায়। সেই ভালো, আমিও যে মেঘের আড়ালে মেঘনাদের মতো কাউকে দেখা দিতে চাই না। খালি মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় মহুয়ার সেই প্রথম পোস্ট.... Welcome to the
world of youth with your romantic mind .
( আমার লেখা গল্প " মহুয়া " র
শেষ পর্ব)
দেখতে দেখতে বারোটা বছর কেটে গেছে। ডঃ মহুয়া দত্ত আর নিজের পদবীটা পালটাবার সময়টাও করে
উঠতে পারেনি। এখন মালদা মেডিকাল কলেজ হসপিটালের সুপার। আজকের ডঃ মহুয়া কে দেখলে সেই বারো বছর আগের মহুয়াকে কেউ চিন্তেও পারবে না। সেই বাঘাযতিনের ছটফটে মেয়েটি ডাক্তারি পড়তে গিয়ে মেডিকাল কলেজের সমস্ত ক্লাস মাতিয়ে রাখত। এম বি বি এস কম্পলিট করে মেডিকেল কলেজেই ইন্টার্নশিপ করেছিল। এত মিষ্টি দেখতে ছিল মহুয়া সব জুনিয়ার ডাক্তার রা ওর সাথে ডিউটি করার জন্য মনে মনে স্বপ্ন দেখত। সেই মহুয়া মেডিকাল কলেজে ইন্টার্নসশিপ কম্পলিট করে একটা স্পন্সর জোগাড় করে পাড়ি দিয়েছিলো বিলেতে। ছ বছর ইংল্যান্ড এর কুইনসমেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে মেডিসিনে পোস্টগ্রাজুয়েট কম্পলিট করে দেশে ফিরে এসে এই
মালদা মেডিকাল কলেজে জয়েন করে। আজ ডঃ মহুয়া দত্ত মালদা মেডিকাল কলেজের সুপার। আজও বিয়ে করে উঠতে পারেনি, এক নম্বর সময়ের অভাবে,কেরিয়ার করতে করতে কখন যে বিয়ের সময়টা পেড়িয়ে গেছে বুঝতেও পারেনি। আর দ্বিতীয় কারন, মনের কোণে পরে থাকা একটা না দেখা স্মৃতি কিছুতেই অন্য কোনো
ছেলের দিকে মনটাকে ঘোরাতে দেয় নি। কিন্তু কি আশ্চর্য যার কথা এত গুলো বছর ভুলতে পারে নি তাকে এক বারের জন্যও চোখে দেখেনি, গলার স্বরও শোনে নি। শুধু নামটা জানতো নীল।.... হাসপাতাল লাগোয়া ছিমছাম কোয়ার্টার মহুয়ার, সামনে একফালি ফুলের বাগান, হাসপাতালের মালী ওই ছোট্ট বাগানটাতে সারা বছর ফুলে ভরিয়ে রাখে। জুঁই ফুল মহুয়ার খুব প্রিয়। আজও মহুয়া বর্ষায় ফোটা ভিজে জুঁই এর মালা সুন্দর করে খোপায় জড়াতে ভালোবাসে।
অনেক দিন হয়ে গেলো ইন্টারনেটের সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে আজকের মহুয়ার আর কোনো সম্পর্ক নেই,
অবশ্য এখনতো আর আগের অর্কূট নেই, ফেসবুক। অর্কূটের কথা মনে পরলেই মহুয়ার মনে পরে যায়, কত
কবিতা বৃষ্টির মত ঝোরে পোরতো ওর প্রোফাইলে। একটা দিন নীলের সাথে কথা বলতে না পারলে মনটা ছটফট করতো। মনে আছে নীল ওকে বৃষ্টি বলে ডাকতো। আর একটার পর একটা কবিতা পোস্ট করতো ওর প্রোফাইলে।
অত বড় হাসপাতালের সুপার, সব কিছুইতো মহুয়ার দায়িত্ব। সকাল থেকে এক মুহুর্তের জন্যও নিঃশ্বাস ফেলার
অবসর থাকে না। তার ওপর মাসে দুবার কলকাতা। স্বাস্থ্য ভবনে হাসপাতালের রিপোর্ট দেয়া, মিটিং এসবতো আছেই। কোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা নটা বেজে যায়।
এবারে শুতে যাবার আগের সময়টুকু মহুয়ার নিজের। ফ্রেস হয়ে চেয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে বসে ভাবে সেই
হারিয়ে যাওয়া ছটফটে মেয়েটার কথা।
আজও মনে পরে মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন থাকার দিন গুলোর কথা। ওয়ার্ডে ডিউটি পরলে
খুব সেজেগুজে পেশেন্ট এ্যাটেন্ড করতো। এত সুন্দর মিষ্টি করে সাজতো পেশেন্টরা মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো। একদিনতো এক ফিমেল পেশেন্ট ওকে পুত্রবধূ করার প্রপোজালই দিয়ে বসলো। নিজের
মনেই হেসে ফেলে মহুয়া। মাঝে মাঝে মহুয়া ভেবে অবাক হয়, কেন নীলকে ও ভুলতে পারছে না, যাকে কোনো দিন দেখেনি, গলার স্বর পর্যন্ত শোনে নি। কলকাতার কোথায় থাকতো তাও জানত না। শুধু মাত্র ওই অর্কূটের প্রোফাইল টুকু ছাড়া। এই বারো বছরে
এখনো নীলের পাঠানো কবিতাগুলো মনের মাঝে গুনগুন করে আর মহুয়ার মন কল্পনা করতে চেষ্টা করে নীল কেমন দেখতে ছিল আর এই বারো বছর পরে কেমন দেখতে হতে পারে।
কিন্তু মনের কল্পনার রঙে নীলের কোনো ছবিই এঁকে উঠতে পারে না। অদেখা অজানা একটি মানুষের
ভালোবাসা যে মহুয়ার জীবনটাকে এই ভাবে পালটিয়ে দিতে পারে কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবে নি মহুয়া।
মনে আছে নীলকে মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের কলেজ স্ট্রিট বই মার্কেটের দিকের আউট ডোরে
আসতে বলেছিলো মহুয়া। সেদিন খুব সেজে এসেছিলো মহুয়া ওর অদেখা ভালোবাসার জন্য। সকাল থেকে
কাজল টানা চোখ দুটো হরিনীর মতো ছটফট করেছে আর ক্ষণে ক্ষণে দরজার দিকে তাকিয়েছে। কিন্তু দিন
শেষ হয়ে সাঁঝ বয়ে গেলো, কিন্তু সে এলো না। সেদিন বাড়ি গিয়ে বিছানার ওপর কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিল মহুয়া। ভাবতে ভাবতে আজ বারো বছর পরেও চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে।
নীল রয়, ২০০৮ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্যাডারের আই এ এস অফিসার ছয় বছর সেন্ট্রালে লিয়েনে খুব যোগ্যতার সাথে কাজ করে এই দুমাস হোলো কলকাতায় ফিরে এসেছে। নীলের যোগ্যতায় খুশী হয়ে
স্টেট হোম মিনিস্ট্রি ওকে মালদার ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট পোস্টিং দিয়ে মালদাতে পাঠিয়েছে। কারন মালদার
হিলি অঞ্চল থেকে ডান দিক বা দিকে অনেক কিলোমিটার ইন্ডিয়া বাংলা দেশ সীমান্ত। তাই এই অঞ্চলের চোরা কারবারি আর সন্ত্রাসবাদীদের কাজ
কারবারে অতিষ্ঠ রাজ্য সরকার আজ খুব কড়া আই এ এস অফিসার নীল রয়কে ডি.এম করে মালদাতে পাঠিয়েছে। রিটেয়ার্ড বাবা আর ছেলের সংসার নীলের। আজ দেখতে দেখতে চল্লিশ ছুঁই ছঁই বয়েস হয়ে গেছে।
বাবার হাজার বলাতেও নীল বিয়ে করেনি। সেই মহুয়ার বিয়ে বাড়ির ছবিটা, যেখানে মহুয়ার সেই কাজল পরা দুষ্টু দুষ্টু চোখ,সুন্দর করে খোপা বাধা চুলে জুঁই ফুলের মালা জড়ানো যেন বলছে আসবে না আমার কাছে?
নীলকে আর কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই দেয়নি। মহুয়ার অর্কূটে পাঠানো সব ছবিগুলো আজো নীল রেখে দিয়েছে ওর ল্যাপটপে।
যখন কোনো কাজ থাকেনা, ছবিগুলো দেখে আর ভাবে কেনো হটাত মহুয়া অর্কূটের প্রোফাইল ক্লোজ করে ওর কাছ থেকে হারিয়ে গেলো।
জীবনের প্রথম ভালোবাসা হতে পারে দূর থেকে কিন্তু মনের মাঝে এমন ভাবে গেথে গেছে ভোলা খুব কঠিন।
তাই আর কোনো অন্য মেয়েকে নিজের জীবন সঙ্গিনী করার কথা ভাবতেও পারেনি নীল।
দিন কেটে যায়, মালদা হাসপাতালের সুপার ডঃ মহুয়া দত্তও শুনেছে ওদের ডিস্ট্রিকে নতুন একজন ডি এম এসেছেন। এবং কড়া হাতে মালদার যত রকম ক্রাইম বন্ধ করছেন। কার কাছ থেকে মহুয়া শুনেছিলো ডি এম
এর নাম নীল রয়। শুনে কেমন চমকে গিয়েছিল, যেন কত চেনা কত মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা একটা নাম।
আবার ভাবে এই পৃথিবীতে একই নামের কত মানুষ আছে। কিন্তু কি জানি কেন ডি এম এর নাম টা শুনে
মহুয়ার মনটা খুশী খুশী হয়ে উঠেছিল।
এই ভাবে দিন কাটে রাত আসে, হটাত এই বর্ষায় উত্তর বঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে আশেপাশের সব গ্রাম গুলো বিদ্ধংসী
বন্যার কবলে, তার ওপর ফারাক্কার গেট খুলে দেয়াতে হাজার হাজার মানুষ বন্যার কবলে হাবুডুবু খাচ্ছে।
সরকারি তরফে ডি এম নিজে তদারকি করে শয়েশয়ে মানুষকে রেসকিউ করছেন আর যারা অসুস্থ তাদের মালদা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। হাসপাতালের সুপার ডঃ মহুয়াও নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে যতটা পারছে চেষ্টা করছে সব শুষ্ঠু ভাবে
চিকিৎসা দেবার। হটাত ডি এম আফিস থেকে খবর এলো, ডি এম নীল রয় কাল হসপিটালে আসছেন
বানভাসি মানুষদের চিকিৎসার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা দেখতে। পরের দিন হসপিটালে সাজো সাজো
ভাব, সুপার ডঃ মহুয়াও আজ সকাল সকাল হাসপাতালে এসে সব কিছু ঠিক আছে কিনা তদারকি করে নিয়েছে। যথা সময় বেলা এগারোটার সময় সঙ্গে জেলার পুলিশ সুপারকে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকলেন ডি এম নীল রয়। সুপার ডঃ মহুয়া ডি এম কে অভ্যর্থনা করার জন্য এগিয়ে গেলে ডি এম নীল ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে কেমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো । অনেক্ষণ মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো
মানুষের মনের স্বপ্ন কি কখনো সত্যি হতে পারে ? এ কাকে দেখছে? ছবিতে দেখা সেই টানা টানা চোখ সেই মুখ সেই নাক ফরসা গায়ের রঙ শুধু বয়েসটা ছবির তুলনায় কিছুটা বেশি। কত শতবার ছবিতে দেখা ,
হারিয়ে যাওয়া সেই অর্কূটের প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে আসা ডঃ মহুয়া দত্ত দাঁড়িয়ে আছে নীলের সামনে।
নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না মালদার দোর্দণ্ড প্রতাপ ডি এম নীল রয়।
সুপার ডঃ মহুয়া দত্ত এই প্রথম দেখলো নতুন ডি এম নীল রয়কে। ঝকঝকে চেহারা বয়েস চল্লিশের আশেপাশে, চোখে সোনালী ফ্রেমের দামী চশমা।
এক কথায় হ্যান্ডসাম পুরুষ। কেমন একটা অদৃশ্য আকর্ষণ অনুভব করছে মহুয়া। সেই অর্কূটে ফেলে আসা নীলকে কোনো দিন দেখেনি কিন্তু কেন যেন খালি মনে হচ্ছে ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নীল ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যথারীতি ডি এম, সুপার ডঃ মহুয়াকে
নিয়ে সব ঘুরেঘুরে দেখে খুব স্যাটিসফাইড। সঙ্গের অফিসাদের যাযা ইন্সট্রাকশন দেবার দিয়ে মহুয়াকে বললো আপনার সাথে একটু কথা আছে আপনার চেম্বারে চলুন। অবাক বিস্ময়ে মহুয়া দেখলো,চেম্বারে ঢুকে ডি এম নীল রয় দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো, অনেক্ষণ ওর মুখের দিকে
তাকিয়ে আছে,মহুয়াও কেনো জানি নিজেকে সামলাতে পারছেনা। হটাত অনুভব করলো নীল ওর কাধ দুটো
ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে ডাকলো বৃষ্টি। এই ছোট্ট কথাটা কানে যেতেই থরথর করে কেঁপে উঠলো মহুয়ার সারা শরীর। মনে হচ্ছে যেন বারো বছর পেছনে ফেলে আসা অর্কূটের প্রোফাইলের কেউ ওকে ডাকছে বৃষ্টি বলে। আবার মহুয়া শুনতে পেলো, নীল
ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলছে মহুয়া তুমি বলবেনা? Welcome to the world of youth with your romantic mind?
সেদিন মহুয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, দুহাতে জড়িয়ে ধরে নীলের বুকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে
দিয়েছিলো আর নীলও অনেক ভালোবাসায় দুহাতে মহুয়াকে চেপে ধরে রেখেছিল ওর বুকের ওপর ।
 
**** মহুয়া *****
## ##
তখন ফেসবুক ছিল না, সোশাল মিডিয়া অরকূট। যথারীতি আমার একটা প্রোফাইল ছিল। মাঝে মাঝে নিজের লেখা কবিতা পোস্ট করি। একদিন আমার একটা খুব রোমান্টিক কবিতা পড়ে আমার ফ্রেন্ড লিস্টের একটি অল্প বয়েসি মেয়ে কমেন্ট করে লিখলো, ওয়েল কাম টু দি ওয়ার্ল্ড অফ ইওথ
উইথ ইওর রোমান্টিক মাইন্ড। তার সংগে লিখলো আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে, বিশেষ করে আপনার বৃষ্টির
কবিতা, মনে হয় যেন আমিই ওই বৃষ্টি, ভিজিয়ে দিচ্ছি আপনাকে অঝরধারায়। কমেন্টা পড়ে আমার খুব
মজা লেগেছিল আর মেয়েটির ব্যাপারে খুব কৌতূহলও হয়েছিল। ওর প্রোফাইলটা ভালো করে পড়লাম।
ওর নাম মহুয়া দত্ত। কলকাতা মেডিকাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে ওখানেই ইন্টার্নশিপ করছে।
তাই প্রফাইলে নাম দিয়েছে ডঃমহুয়া দত্ত। এ্যালবামে অনেক ছবি, অপূর্ব সুন্দরী। টানা টানা চোখ তাকিয়ে
আছে আমার দিকে। ওর ছবি গুলো দেখে মনটা কেমন মিষ্টি হয়ে গেলো। একটা ছবি রয়েছে, কোনো একটা
বিয়ে বাড়িতে তোলা, খুব সুন্দর করে সেজেছে, টানা টানা চোখে আই লাইনার, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিকের
ওপরে লিপগ্লস ঠোঁট দুটোকে কেমন ভিজে ভিজে দেখাচ্ছে, দেখে আমার শরীরটা কেমন শিরশির করছিল। খোপা বাঁধা চুল, একটা জুঁই এর মালা জড়ানো।
অদ্ভূত ব্যাপার ছবিটা দেখছিলাম আর আমি যেন আমার সারা ঘরে জুঁই ফুলের গন্ধ পাচ্ছিলাম।
আমিও মজা করে আমার কবিতায় ওর কমেন্টের রিপ্লাই দিয়ে লিখলাম, একটি মিষ্টি মেয়ের মিষ্টি কমেন্ট মনটা কে মিষ্টি করে দেয়। তাই এবার থেকে আমার সব কবিতা শুধু তোমার জন্য। বিকেলেই রিপ্লাই পেয়ে গেলাম, সত্যিই! সব কবিতা আমার
জন্য? ইস্ আপনি যখন কবিতা লেখেন তখন যদি আমি আপনার কাছে থাকতে পারতাম কি মজা হতো। আপনি
লিখতেন পড়তেন আর আমি গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। আর তারপর যখন অরকূটে পোস্ট করতেন, আমি আমার বন্ধুদের ডেকে দেখাতাম, দেখ এই কবিতা গুলো আমার, শুধুই আমার।
ভরা শ্রাবণ মাস, অঝর ধারে বৃষ্টি ঝোরে চলেছে, কি জানি কেন খালি মহুয়ার মুখটা মনে পরে যাচ্ছে।
আকাশের বুকে আঁকা যেন দেখতে পাচ্ছি ওর দুটো বৃষ্টি ভেজা চোখ আমাকে বলছে লিখবে না কবিতা আমার জন্য? সে দিন ওর বৃষ্টি ভেজা দুটো চোখের অনুরোধ ফেলতে পারি নি। পোস্ট করেছিলাম,
******* বৃষ্টি ******
বৃষ্টি ভেজা মন,বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন
আমিতো তোমাকে কখনো
বৃষ্টিতে ভিজতে দেখিনি …….
কিন্তু তোমার চোখের বৃষ্টিতে
আমি যে দেখেছি আমার কষ্ট
চলো না আজ দুজনে বৃষ্টিতে ভিজি --
আমি বৃষ্টি দেখেছি
আমি বৃষ্টিকে ছুঁয়েছি কিন্তু
তোমার বৃষ্টি ভেজা
মনটাকে ছুঁতে পারিনি ………..
এখনো তোমাকে দেখতে পাই
কোনো বৃষ্টি ঝরা দিনে,
আমার ঘরের জানলায়
তোমার বৃষ্টি ভেজা মুখ,
ছুটে যাই …তুমি হারিয়ে যাও
অঝর বৃষ্টির ধারায় …..
আমি বৃষ্টি দেখেছি..
আমি বৃষ্টিকে ছুঁতে পারিনি
ছুঁয়েছি তোমার
বৃষ্টি ভেজা দুটি চোখ ------
নিচে লিখেছিলাম মহুয়া এই কবিতাটা শুধুই তোমার, শ্রাবনের আকাশে আজ তোমার বৃষ্টি ভেজা চোখ দুটো দেখে আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি, তাই আমার এই কবিতাটা তুমি গ্রহণ কোরো। আর আজ থেকে তুমি আমার কাছে মহুয়া নও, তুমি আমার বৃষ্টি, বৃষ্টি বলেই ডাকবো তোমাকে।
বিকেলের ডাকেই ( অর্কূটে) উত্তর পেয়ে গেলাম। উফ্ কি দারুণ, কবিতা টা পড়তে পড়তে সত্যি মনে হচ্ছিল
তোমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজি। জানো এখন আমাদের এখানে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। আজ
সকাল থেকে তুমি আমাকে খুব জ্বালিয়েছো। আজ আমার হসপিটালে ইন্ডোর ডিউটি ছিল। ওয়ার্ডে রাউন্ড
দিচ্ছিলাম, পেশেন্ট দেখবো কি খালি তোমার কথা মনে হচ্ছিল। জানো আমি যখন ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যাই
আমি এপ্রন পরিনা, খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে খুব সেজে মিষ্টি মিষ্টি হেসেহেসে পেশেন্ট এটেন্ড করি। পেশেন্টরা আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
হি হি হি জানো আজ একজন মহিলা পেশেন্ট কি বলেছে? বলে ওর ছেলেটা যদি বড় হোতো তাহলে নাকি
আমাকে ওর পুত্রবধূ করে নিত। ইস্ কি শখ বলো, আমার বোলে তুমি আছো।......
আমার প্রোফাইলে আমি কখনো আমার কোনো ছবি রাখি না, আমি মেঘের আড়ালে মেঘদূত হয়ে থাকতেই ভালোবাসি, সবার মনে আমার সম্বন্ধে একটা কৌতুহল বজায় রাখতে আমার খুব মজা লাগে। যাই হোক পরের ডাকে মানে অরকূটে ওর চিঠির রিপ্লাই দিলাম। এখনো মনে আছে লিখেছিলাম, বৃষ্টি তোমার লেখা পড়ে তোমাকে নিয়ে কি করবো বুঝে উঠতে
পারছি না। আমাকে না দেখে এমন কি আমার কোনো ছবিও না দেখে এত ভালোবেসে ফেললে আমাকে? আমিও আজকাল বুঝতে পারছি আমার মনটা পুরটাই তোমার দখলে চলে গেছে। কিছু লিখতে বসলে তোমার মুখটাই ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তখন মনে হয় তুমি আমার গা ঘেষে বসে আছো, তোমার শরীরের জুঁই ফুলের গন্ধ তোমার একটু ছোঁয়া আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে। তাই আমি দূর থেকে আমার মনের ভালোবাসা টুকুই দিতে পারি যা তুমি আলরেডি নিয়ে নিয়েছো আর দিতে পারি তোমার রাঙা হাতে আমার এই কবিতার ডালী।
**** তুমি যদি বলো ****
তুমি যদি বলো আজ রাতে
চাঁদ আর ডুববে না ,
আঁধারের মাঝে আঁধার এ রাত
আজ আর ফুরোবে না ।
এখনো যে অনেক কথা
মনের মাঝে করে গুনগুন
রাতের আকাশে পূর্নিমা চাঁদ
জোছনা মাখা এনেছে ফাগুন ।
তুমি যদি বলো আঁধার শেষে
গাছেগাছে ফুল আর ফুটবে না ,
তোমাকে না দেখে ঊষার অরুণ
পূব আকাশে আজ উঠবে না ।.
তুমি এলে তবে ভ্রমর গুঞ্জন
ফুলেফুলে শাখা ভরে যাবে ,
প্রজাপতির ডানার রঙ্গেরঙ্গে
পূবের আকাশ রঙ্গিন হবে ।.
তাই বসে আছি, তুমি আসবে কখন
ভালবাসবে আমায় আপন করে ,
উজার করে দেবো মনপ্রান
দু হাতে তোমার অঞ্জলি ভরে ।
জানি না কেন আমার এই কবিতাটার রিপ্লাই দু দিন পরে পেয়েছিলাম আজও বুঝতে পারিনি। মহুয়া লিখেছিল, তোমার কবিতা সহ তোমার মনটাকে আমি দুহাত ভরে গ্রহণ করেছি, সেটা তুমি ভালো করে জানো। তোমাকে আমি কোনো দিন ভুলবো না, ভোলা আমার পক্ষে সম্ভবও নয়। কিন্তু কোনো কারনে আমি অরকূটের প্রোফাইল ক্লোজ করতে বাধ্য হচ্ছি, জানি না আর কথা
হবে কি না কোনো দিন। জানি তুমি অন্তত আমাকে ভুল বুঝবে না। সেই শেষ পোস্ট মহুয়ার আমার প্রোফাইলে। আমিও আর চেষ্টা করিনি ওকে খোঁজার। ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে হাটতে হাটতে কত বন্ধু আসে কত প্রেম ভালোবাসা আসে, আবার হারিয়েও যায়। সেই ভালো, আমিও যে মেঘের আড়ালে মেঘনাদের মতো কাউকে দেখা দিতে চাই না। খালি মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় মহুয়ার সেই প্রথম পোস্ট.... Welcome to the
world of youth with your romantic mind .
( আমার লেখা গল্প " মহুয়া " র
শেষ পর্ব)
দেখতে দেখতে বারোটা বছর কেটে গেছে। ডঃ মহুয়া দত্ত আর নিজের পদবীটা পালটাবার সময়টাও করে
উঠতে পারেনি। এখন মালদা মেডিকাল কলেজ হসপিটালের সুপার। আজকের ডঃ মহুয়া কে দেখলে সেই বারো বছর আগের মহুয়াকে কেউ চিন্তেও পারবে না। সেই বাঘাযতিনের ছটফটে মেয়েটি ডাক্তারি পড়তে গিয়ে মেডিকাল কলেজের সমস্ত ক্লাস মাতিয়ে রাখত। এম বি বি এস কম্পলিট করে মেডিকেল কলেজেই ইন্টার্নশিপ করেছিল। এত মিষ্টি দেখতে ছিল মহুয়া সব জুনিয়ার ডাক্তার রা ওর সাথে ডিউটি করার জন্য মনে মনে স্বপ্ন দেখত। সেই মহুয়া মেডিকাল কলেজে ইন্টার্নসশিপ কম্পলিট করে একটা স্পন্সর জোগাড় করে পাড়ি দিয়েছিলো বিলেতে। ছ বছর ইংল্যান্ড এর কুইনসমেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে মেডিসিনে পোস্টগ্রাজুয়েট কম্পলিট করে দেশে ফিরে এসে এই
মালদা মেডিকাল কলেজে জয়েন করে। আজ ডঃ মহুয়া দত্ত মালদা মেডিকাল কলেজের সুপার। আজও বিয়ে করে উঠতে পারেনি, এক নম্বর সময়ের অভাবে,কেরিয়ার করতে করতে কখন যে বিয়ের সময়টা পেড়িয়ে গেছে বুঝতেও পারেনি। আর দ্বিতীয় কারন, মনের কোণে পরে থাকা একটা না দেখা স্মৃতি কিছুতেই অন্য কোনো
ছেলের দিকে মনটাকে ঘোরাতে দেয় নি। কিন্তু কি আশ্চর্য যার কথা এত গুলো বছর ভুলতে পারে নি তাকে এক বারের জন্যও চোখে দেখেনি, গলার স্বরও শোনে নি। শুধু নামটা জানতো নীল।.... হাসপাতাল লাগোয়া ছিমছাম কোয়ার্টার মহুয়ার, সামনে একফালি ফুলের বাগান, হাসপাতালের মালী ওই ছোট্ট বাগানটাতে সারা বছর ফুলে ভরিয়ে রাখে। জুঁই ফুল মহুয়ার খুব প্রিয়। আজও মহুয়া বর্ষায় ফোটা ভিজে জুঁই এর মালা সুন্দর করে খোপায় জড়াতে ভালোবাসে।
অনেক দিন হয়ে গেলো ইন্টারনেটের সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে আজকের মহুয়ার আর কোনো সম্পর্ক নেই,
অবশ্য এখনতো আর আগের অর্কূট নেই, ফেসবুক। অর্কূটের কথা মনে পরলেই মহুয়ার মনে পরে যায়, কত
কবিতা বৃষ্টির মত ঝোরে পোরতো ওর প্রোফাইলে। একটা দিন নীলের সাথে কথা বলতে না পারলে মনটা ছটফট করতো। মনে আছে নীল ওকে বৃষ্টি বলে ডাকতো। আর একটার পর একটা কবিতা পোস্ট করতো ওর প্রোফাইলে।
অত বড় হাসপাতালের সুপার, সব কিছুইতো মহুয়ার দায়িত্ব। সকাল থেকে এক মুহুর্তের জন্যও নিঃশ্বাস ফেলার
অবসর থাকে না। তার ওপর মাসে দুবার কলকাতা। স্বাস্থ্য ভবনে হাসপাতালের রিপোর্ট দেয়া, মিটিং এসবতো আছেই। কোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা নটা বেজে যায়।
এবারে শুতে যাবার আগের সময়টুকু মহুয়ার নিজের। ফ্রেস হয়ে চেয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে বসে ভাবে সেই
হারিয়ে যাওয়া ছটফটে মেয়েটার কথা।
আজও মনে পরে মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন থাকার দিন গুলোর কথা। ওয়ার্ডে ডিউটি পরলে
খুব সেজেগুজে পেশেন্ট এ্যাটেন্ড করতো। এত সুন্দর মিষ্টি করে সাজতো পেশেন্টরা মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো। একদিনতো এক ফিমেল পেশেন্ট ওকে পুত্রবধূ করার প্রপোজালই দিয়ে বসলো। নিজের
মনেই হেসে ফেলে মহুয়া। মাঝে মাঝে মহুয়া ভেবে অবাক হয়, কেন নীলকে ও ভুলতে পারছে না, যাকে কোনো দিন দেখেনি, গলার স্বর পর্যন্ত শোনে নি। কলকাতার কোথায় থাকতো তাও জানত না। শুধু মাত্র ওই অর্কূটের প্রোফাইল টুকু ছাড়া। এই বারো বছরে
এখনো নীলের পাঠানো কবিতাগুলো মনের মাঝে গুনগুন করে আর মহুয়ার মন কল্পনা করতে চেষ্টা করে নীল কেমন দেখতে ছিল আর এই বারো বছর পরে কেমন দেখতে হতে পারে।
কিন্তু মনের কল্পনার রঙে নীলের কোনো ছবিই এঁকে উঠতে পারে না। অদেখা অজানা একটি মানুষের
ভালোবাসা যে মহুয়ার জীবনটাকে এই ভাবে পালটিয়ে দিতে পারে কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবে নি মহুয়া।
মনে আছে নীলকে মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের কলেজ স্ট্রিট বই মার্কেটের দিকের আউট ডোরে
আসতে বলেছিলো মহুয়া। সেদিন খুব সেজে এসেছিলো মহুয়া ওর অদেখা ভালোবাসার জন্য। সকাল থেকে
কাজল টানা চোখ দুটো হরিনীর মতো ছটফট করেছে আর ক্ষণে ক্ষণে দরজার দিকে তাকিয়েছে। কিন্তু দিন
শেষ হয়ে সাঁঝ বয়ে গেলো, কিন্তু সে এলো না। সেদিন বাড়ি গিয়ে বিছানার ওপর কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিল মহুয়া। ভাবতে ভাবতে আজ বারো বছর পরেও চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে।
নীল রয়, ২০০৮ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্যাডারের আই এ এস অফিসার ছয় বছর সেন্ট্রালে লিয়েনে খুব যোগ্যতার সাথে কাজ করে এই দুমাস হোলো কলকাতায় ফিরে এসেছে। নীলের যোগ্যতায় খুশী হয়ে
স্টেট হোম মিনিস্ট্রি ওকে মালদার ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট পোস্টিং দিয়ে মালদাতে পাঠিয়েছে। কারন মালদার
হিলি অঞ্চল থেকে ডান দিক বা দিকে অনেক কিলোমিটার ইন্ডিয়া বাংলা দেশ সীমান্ত। তাই এই অঞ্চলের চোরা কারবারি আর সন্ত্রাসবাদীদের কাজ
কারবারে অতিষ্ঠ রাজ্য সরকার আজ খুব কড়া আই এ এস অফিসার নীল রয়কে ডি.এম করে মালদাতে পাঠিয়েছে। রিটেয়ার্ড বাবা আর ছেলের সংসার নীলের। আজ দেখতে দেখতে চল্লিশ ছুঁই ছঁই বয়েস হয়ে গেছে।
বাবার হাজার বলাতেও নীল বিয়ে করেনি। সেই মহুয়ার বিয়ে বাড়ির ছবিটা, যেখানে মহুয়ার সেই কাজল পরা দুষ্টু দুষ্টু চোখ,সুন্দর করে খোপা বাধা চুলে জুঁই ফুলের মালা জড়ানো যেন বলছে আসবে না আমার কাছে?
নীলকে আর কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই দেয়নি। মহুয়ার অর্কূটে পাঠানো সব ছবিগুলো আজো নীল রেখে দিয়েছে ওর ল্যাপটপে।
যখন কোনো কাজ থাকেনা, ছবিগুলো দেখে আর ভাবে কেনো হটাত মহুয়া অর্কূটের প্রোফাইল ক্লোজ করে ওর কাছ থেকে হারিয়ে গেলো।
জীবনের প্রথম ভালোবাসা হতে পারে দূর থেকে কিন্তু মনের মাঝে এমন ভাবে গেথে গেছে ভোলা খুব কঠিন।
তাই আর কোনো অন্য মেয়েকে নিজের জীবন সঙ্গিনী করার কথা ভাবতেও পারেনি নীল।
দিন কেটে যায়, মালদা হাসপাতালের সুপার ডঃ মহুয়া দত্তও শুনেছে ওদের ডিস্ট্রিকে নতুন একজন ডি এম এসেছেন। এবং কড়া হাতে মালদার যত রকম ক্রাইম বন্ধ করছেন। কার কাছ থেকে মহুয়া শুনেছিলো ডি এম
এর নাম নীল রয়। শুনে কেমন চমকে গিয়েছিল, যেন কত চেনা কত মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা একটা নাম।
আবার ভাবে এই পৃথিবীতে একই নামের কত মানুষ আছে। কিন্তু কি জানি কেন ডি এম এর নাম টা শুনে
মহুয়ার মনটা খুশী খুশী হয়ে উঠেছিল।
এই ভাবে দিন কাটে রাত আসে, হটাত এই বর্ষায় উত্তর বঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে আশেপাশের সব গ্রাম গুলো বিদ্ধংসী
বন্যার কবলে, তার ওপর ফারাক্কার গেট খুলে দেয়াতে হাজার হাজার মানুষ বন্যার কবলে হাবুডুবু খাচ্ছে।
সরকারি তরফে ডি এম নিজে তদারকি করে শয়েশয়ে মানুষকে রেসকিউ করছেন আর যারা অসুস্থ তাদের মালদা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। হাসপাতালের সুপার ডঃ মহুয়াও নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে যতটা পারছে চেষ্টা করছে সব শুষ্ঠু ভাবে
চিকিৎসা দেবার। হটাত ডি এম আফিস থেকে খবর এলো, ডি এম নীল রয় কাল হসপিটালে আসছেন
বানভাসি মানুষদের চিকিৎসার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা দেখতে। পরের দিন হসপিটালে সাজো সাজো
ভাব, সুপার ডঃ মহুয়াও আজ সকাল সকাল হাসপাতালে এসে সব কিছু ঠিক আছে কিনা তদারকি করে নিয়েছে। যথা সময় বেলা এগারোটার সময় সঙ্গে জেলার পুলিশ সুপারকে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকলেন ডি এম নীল রয়। সুপার ডঃ মহুয়া ডি এম কে অভ্যর্থনা করার জন্য এগিয়ে গেলে ডি এম নীল ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে কেমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো । অনেক্ষণ মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো
মানুষের মনের স্বপ্ন কি কখনো সত্যি হতে পারে ? এ কাকে দেখছে? ছবিতে দেখা সেই টানা টানা চোখ সেই মুখ সেই নাক ফরসা গায়ের রঙ শুধু বয়েসটা ছবির তুলনায় কিছুটা বেশি। কত শতবার ছবিতে দেখা ,
হারিয়ে যাওয়া সেই অর্কূটের প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে আসা ডঃ মহুয়া দত্ত দাঁড়িয়ে আছে নীলের সামনে।
নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না মালদার দোর্দণ্ড প্রতাপ ডি এম নীল রয়।
সুপার ডঃ মহুয়া দত্ত এই প্রথম দেখলো নতুন ডি এম নীল রয়কে। ঝকঝকে চেহারা বয়েস চল্লিশের আশেপাশে, চোখে সোনালী ফ্রেমের দামী চশমা।
এক কথায় হ্যান্ডসাম পুরুষ। কেমন একটা অদৃশ্য আকর্ষণ অনুভব করছে মহুয়া। সেই অর্কূটে ফেলে আসা নীলকে কোনো দিন দেখেনি কিন্তু কেন যেন খালি মনে হচ্ছে ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নীল ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যথারীতি ডি এম, সুপার ডঃ মহুয়াকে
নিয়ে সব ঘুরেঘুরে দেখে খুব স্যাটিসফাইড। সঙ্গের অফিসাদের যাযা ইন্সট্রাকশন দেবার দিয়ে মহুয়াকে বললো আপনার সাথে একটু কথা আছে আপনার চেম্বারে চলুন। অবাক বিস্ময়ে মহুয়া দেখলো,চেম্বারে ঢুকে ডি এম নীল রয় দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো, অনেক্ষণ ওর মুখের দিকে
তাকিয়ে আছে,মহুয়াও কেনো জানি নিজেকে সামলাতে পারছেনা। হটাত অনুভব করলো নীল ওর কাধ দুটো
ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে ডাকলো বৃষ্টি। এই ছোট্ট কথাটা কানে যেতেই থরথর করে কেঁপে উঠলো মহুয়ার সারা শরীর। মনে হচ্ছে যেন বারো বছর পেছনে ফেলে আসা অর্কূটের প্রোফাইলের কেউ ওকে ডাকছে বৃষ্টি বলে। আবার মহুয়া শুনতে পেলো, নীল
ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলছে মহুয়া তুমি বলবেনা? Welcome to the world of youth with your romantic mind?
সেদিন মহুয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, দুহাতে জড়িয়ে ধরে নীলের বুকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে
দিয়েছিলো আর নীলও অনেক ভালোবাসায় দুহাতে মহুয়াকে চেপে ধরে রেখেছিল ওর বুকের ওপর ।
Cliche but nice one♥️
 
Top