• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

প্রেমের গল্প নয় (ধারাবাহিক চলছে)

Coca cola

Wellknown Ace
[এটি একটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ গল্প বা উপন্যাস হবে। আমি এখানে পর্বে পর্বে পরিবেশন করবো আগামী কিছুদিন ধরে। আগ্রহী পাঠকেরা অনুগ্রহ করে একটু ধৈর্য্য ধরে থাকবেন। আপনাদের মূল্যবান মতামত দিতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ। ]

উর্মির সাথে আমার আলাপ হয় সল্ট লেকের একটা লাইব্রেরি তে। দুপুরের শেষ দিক করে অফিস শেষ করে ভাবলাম পাড়ার লাইব্রেরি তে একবার ঢুঁ মেরে যাবো। শীর্ষেন্দুর চক্র তা কিছুদিন হলো বই হিসেবে বেরিয়েছে, যখন নিয়মিত দেশে বেরোতো তখন আমার সেভাবে পড়া হয়নি। আজকাল অফিসের কাজের চাপে বই পড়ার সময় পাওয়া যাই না। কালকে লাইব্রেরি তে ফোন করে জেনেছিলাম যে ওদের ব্রাঞ্চে একটা নতুন কপি এসেছে।

এই লাইব্রেরি তে বেশিরভাগ ফিক্শন এর বই আলফাবেটিক্যাল অর্ডার এ সাজানো থাকে। সেই হিসেবে "শ" দিয়ে যেসব লেখকের নাম শুরু, তাদের বইয়ের জায়গা হচ্ছে ডান দিকের তাকের পেছনের দিকে। দুপুরের শেষ দিকে লাইব্রেরি তে সেরকম লোক ছিল না। লাইব্রেরিয়ান একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, নিজের ডেস্ক এ বসে ঢুলছেন। কয়েক মাসের মধ্যেই ভদ্রলোক আমাকে চিনে গেছেন। আমাকে দেখে বললেন, "আপনি তো কালকে ফোন করেছিলেন শীর্ষেন্দুর চক্রর ব্যাপারে, তাই না?" . আমি মাথা নাড়তেই উনি বললেন, "নতুন বইয়ের জন্য একটা আলাদা তাকে করা হয়েছে বাঁ দিকে, দেখুন ওখানেই পাবেন।" আমি বাঁ দিকের তাকের পেছনে গিয়ে দেখি একটি সালোয়ার কামিজ পরিহিতা তরুণী তাকের প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বই দেখছেন। আমি মেয়েটিকে দেখে বইয়ের কথা ভুলে গেলাম। বয়স অনুমান করেও পারলাম না, আঠেরো হরে পারে, আঠাশ তো হাতে পারে। মনে হলো, এই খানেই দাঁড়িয়ে থাকি, আর তাকিয়ে থাকি। নায়িকা যখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন আর বই পাড়ার দরকার কি?

প্রায় বিশ পঁচিশ সেকেন্ডস একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি দেখে তরুণীর খেয়াল হলো। আমার দিকে তাকিয়ে একটু সরে গেলেন তাকের গা থেকে, তারপর বললেন "সরি, আমি জায়গাটা প্রায় দখল করে ফেলেছি। ". তারপরেও আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি দেখে তরুণীর ভুরু কুঁচকে গেল, "কি ব্যাপার বলুন তো? আমার দিকে এরকম অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি কি সিনেমার নায়িকা নাকি?". তরুণীর গলায় স্পষ্টত বিরক্তির ছাপ। আমি অবশ্য বিব্রত হলাম না, একটু হেসে বললাম, "সিনেমার নায়িকারাও হয়তো আপনাকে দেখলে এইরকমই তাকিয়ে থাকতেন". আমার কথায় রাগতে গিয়েও তরুণী হেসে ফেললেন, "অচেনা মেয়েদের সাথে দেখা হলেই কি ফ্ল্যার্ট করা শুরু করেন? একটু আলাপ পরিচয়ের সুযোগ তো দিতে হবে?" . আমি বললাম "আলাপ তো অনেক ভাবেই হয়, এই তো আপনার সাথে আলাপ হয়ে গেল, আমার নাম দীপ্যমান ব্যানার্জী" . আমি কাছেই থাকি, আপনি?". বলে হাত তা বাড়িয়ে দিলাম করমর্দন এর জন্য। তরুণী কয়েক সেকেন্ডস আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, মনে হলো অচেনা লোকের সাথে এতো সহজে হাত মেলাবেন কি না সেই নিয়ে মানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তারপর হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরে বললেন, "আমি উর্মি বসু। আমিও কাছেই থাকি" বলে হাতটা ছেড়ে দিলেন।


[চলবে]
 
Last edited:
[This will be a relatively long story, so I shall post in parts and shall try to give updates everyday. So stay with me please]

উর্মির সাথে আমার আলাপ হয় সল্ট লেকের একটা লাইব্রেরি তে। দুপুরের শেষ দিক করে অফিস শেষ করে ভাবলাম পাড়ার লাইব্রেরি তে একবার ঢুঁ মেরে যাবো। শীর্ষেন্দুর চক্র তা কিছুদিন হলো বই হিসেবে বেরিয়েছে, যখন নিয়মিত দেশে বেরোতো তখন আমার সেভাবে পড়া হয়নি। আজকাল অফিসের কাজের চাপে বই পড়ার সময় পাওয়া যাই না। কালকে লাইব্রেরি তে ফোন করে জেনেছিলাম যে ওদের ব্রাঞ্চে একটা নতুন কপি এসেছে।

এই লাইব্রেরি তে বেশিরভাগ ফিক্শন এর বই আলফাবেটিক্যাল অর্ডার এ সাজানো থাকে। সেই হিসেবে "শ" দিয়ে যেসব লেখকের নাম শুরু, তাদের বইয়ের জায়গা হচ্ছে ডান দিকের তাকের পেছনের দিকে। দুপুরের শেষ দিকে লাইব্রেরি তে সেরকম লোক ছিল না। লাইব্রেরিয়ান একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, নিজের ডেস্ক এ বসে ঢুলছেন। কয়েক মাসের মধ্যেই ভদ্রলোক আমাকে চিনে গেছেন। আমাকে দেখে বললেন, "আপনি তো কালকে ফোন করেছিলেন শীর্ষেন্দুর চক্রর ব্যাপারে, তাই না?" . আমি মাথা নাড়তেই উনি বললেন, "নতুন বইয়ের জন্য একটা আলাদা তাকে করা হয়েছে বাঁ দিকে, দেখুন ওখানেই পাবেন।" আমি বাঁ দিকের তাকের পেছনে গিয়ে দেখি একটি সালোয়ার কামিজ পরিহিতা তরুণী তাকের প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বই দেখছেন। আমি মেয়েটিকে দেখে বইয়ের কথা ভুলে গেলাম। বয়স অনুমান করেও পারলাম না, আঠেরো হরে পারে, আঠাশ তো হাতে পারে। মনে হলো, এই খানেই দাঁড়িয়ে থাকি, আর তাকিয়ে থাকি। নায়িকা যখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন আর বই পাড়ার দরকার কি?

প্রায় বিশ পঁচিশ সেকেন্ডস একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি দেখে তরুণীর খেয়াল হলো। আমার দিকে তাকিয়ে একটু সরে গেলেন তাকের গা থেকে, তারপর বললেন "সরি, আমি জায়গাটা প্রায় দখল করে ফেলেছি। ". তারপরেও আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি দেখে তরুণীর ভুরু কুঁচকে গেল, "কি ব্যাপার বলুন তো? আমার দিকে এরকম অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি কি সিনেমার নায়িকা নাকি?". তরুণীর গলায় স্পষ্টত বিরক্তির ছাপ। আমি অবশ্য বিব্রত হলাম না, একটু হেসে বললাম, "সিনেমার নায়িকারাও হয়তো আপনাকে দেখলে এইরকমই তাকিয়ে থাকতেন". আমার কথায় রাগতে গিয়েও তরুণী হেসে ফেললেন, "অচেনা মেয়েদের সাথে দেখা হলেই কি ফ্ল্যার্ট করা শুরু করেন? একটু আলাপ পরিচয়ের সুযোগ তো দিতে হবে?" . আমি বললাম "আলাপ তো অনেক ভাবেই হয়, এই তো আপনার সাথে আলাপ হয়ে গেল, আমার নাম দীপ্যমান ব্যানার্জী" . আমি কাছেই থাকি, আপনি?". বলে হাত তা বাড়িয়ে দিলাম করমর্দন এর জন্য। তরুণী কয়েক সেকেন্ডস আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, মনে হলো অচেনা লোকের সাথে এতো সহজে হাত মেলাবেন কি না সেই নিয়ে মানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তারপর হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরে বললেন, "আমি উর্মি বসু। আমিও কাছেই থাকি" বলে হাতটা ছেড়ে দিলেন।

[চলবে]
Darun start ... khub sundor shuru korechhi ... ar ektu boro koro ..... ar edit click kore total ta select kore ... font ta ar ektu boro koro ......chaliye jao
 
ঊর্মির সাথে আলাপ সেদিন শুধু নাম বিনিময় আর হাত মেলানোতেই থেমে থাকেনি অবশ্য। অল্পবয়সে মানুষের মন থাকে নদীর স্রোতের মতো। না চাইতেই তা অনেকদূর এগিয়ে যায়। সামাজিকতা, লৌকিকতার তোয়াক্কা করে না। ঊর্মির কাছে থেকে সেদিন জেনেছিলাম যে ও বাংলায় অনেকের লেখাই পছন্দ করে, তবে গদ্য সাহিত্যে শীর্ষেন্দুর থেকেও সুনীল ওর বেশি পছন্দ। ঐসময় নতুন বইয়ের তালিকায় নাকি সুনীলের "অর্ধের জীবন" এসেছিলো। ওর লাইব্রেরি তে আসা তারই খোঁজে।

আমি বললাম, "যাক, অনেকদিন পারে একজনের সন্ধান পাওয়া গেলো, যে লাইব্রেরি থেকে বই তুলে পড়তে ভালোবাসে। আজকাল তো সবাই দেখি ফেসবুক থেকে গল্প নিয়ে পড়ে". ঊর্মি একটু হেসে বললো, "আমার অবশ্য বরাবরই লাইব্রেরি আস্তে ভালো লাগে, কাগজের বই হাতে নিয়ে পড়ার যে মজা, সেটা তো আর ফেসবুক বা ই-রিডার এ পাওয়া যায় না! তাও তো এখন বই পড়ি, বদহজম করি, আর ভুলে যাই। একসময় আমার মাসতুতো বোনের সাথে রেগুলার আলোচনা হাত বই নিয়ে। প্রায়, বিতর্ক সভা বলতে পারেন। তারপর ও বেঙ্গালুরু তে চলে গেছে শেষ ক মাস হলো চাকরি করতে, ফোন করলেই বলে নাকি ভীষণ ব্যস্ত , কি না কি নাকি কোডের বাগ ফিক্স করছে। কথা বলারও সময় নেই। তাই এখন বই নিয়ে আর কারোর সাথে আলোচনা করার সুযোগ হয় না। "

আমি বললাম, "বেশ তো, আমাকেও আপনার বুক ওয়ার্ম ক্লাব এর আর একজন সদস্য করে নিন। সপ্তাহে একবার, ধরুন দুপুরের দিকে দেখা করে সারা সপ্তাহে কি কি পড়লাম তাই নিয়ে আলোচনা হবে। বই পড়াও হবে, আর আলোচনাও হবে। " ঊর্মি প্রায় ৩০ সেকেন্ডস আমার দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে থেকে বললো, "মেয়েদের সাথে লাইন করার পদ্ধতিগুলো তো ভালোই রপ্ত করেছেন। ঠিক আছে আমি রাজি, এমনিতেও আমার সেরকম কোনো কাজ থাকে না, শনিবার দুপুর ৩ টের পর। কাজেই দেখা করাই যায়। তো কোথায় দেখা করবেন বলুন?"

আমি বললাম, "এই লাইব্রেরির পেছনের দিকে একটা কনফারেন্স রুম আছে, নামেই কনফারেন্স রুম, আসলে ওটা একটা ছোট বারান্দা; বাগানের দিকে মুখ করে। কয়েকটা চেয়ার আছে বসার জন্য। ওখানেই আলোচনা শুরু করা যাবে। তারপর জায়গাটা যদি ভালো না লাগে, তবে অন্য কথাও যাওয়া যাবে। যেমন ধরুন কাছেই একটা ভালো ক্যাফে আছে, দারুন কফি বানায়। সেখানেও যাওয়া যেতে পারে" .

ঊর্মি এবার হাসি চাপতে পারলো না। চোখ বড় বড় করে বললো, "গাছে উঠতে না উঠতেই এক কাঁদি? আর পাঁচ মিনিট এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তো আপনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে ফেলবেন। আজকে বরঞ্চ পালাই তাড়াতাড়ি। পরের শনিবার দুপুর তিনটেয় দেখা হচ্ছে এখানে। "

আমি বালি, "আপনার নম্বর টা তো দিয়ে যান। যদি না দেখা হয়?" উর্মি বললো, "শনিবার বিকেল তিনটায়। দেখবো চক্র কেমন পড়লেন। ওটা আমার পড়া আছে। প্রশ্ন ধরবো। যদি সব উত্তর ঠিক দিতে পারেন তবেই ফোন নম্বর পাবেন। না হলে নয় "

আমি মুখে একটা কপট অসহায়ত্বের ভাব এনে বললাম, "তাই হবে গুরু মা"


[চলবে]
 
Last edited:
আমার বয়স যখন ১৬ বছর বয়স তখন আমার মা মারা যান মাত্র ৪০ বাঁচার বয়সে, আত্মহত্যা করেছিলেন গলায় দড়ি দিয়ে। আমার মাতামহ সরিৎসেখর সোশ্যাওলোজি র প্রফেসর ছিলেন। মায়ের যখন মৃত্যু হয় , তিনি তখনও বেঁচে। শোকে দুঃখে বয়স্ক মানুষটি প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছিলেন। আমাদের দেখলেই বলতেন, "তোর বাবার সাথে তোর মায়ের বিয়ে দেওয়াটাই আমার জীবনের মস্ত ভুল। তোদের দেখতে ভদ্র লোকের মতো হলেও আসলে তোরা হচ্ছিস white collar criminals". শান্ত নির্বিরোধী লোকটির মুখে এর থেকে কঠোর কথা হয়তো যোগাতো না। আমি শুনে চুপ করে থাকতাম। কারণ জানতাম দাদু যা বলছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যে নয়।

আমার বাবারা ছিলেন তিন ভাই দু বোন। বর্ধমানের এক বর্ধিষ্ণু গ্রামের জমিদার বংশের সন্তান ছিলেন তাঁরা। আমার দাদু রুদ্রনারায়ণ ছিলেন বংশের শেষ জমিদার, আমার যখন জন্ম হয় তখন অবশ্য জমিদারি প্রথা উঠে গেছে। সেই জমিদারির বেশির ভাগই সরকার অধিগ্রহণ করেছে, তাবু যেটুকু বাকি ছিল সেটুকুও নেহাৎ কম নয় । তিন মহলা বাড়ি, বেশ কিছু জমি আর বাগান, দুটো পুকুর আর দেশি বিদেশী মিলিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি, এসবি অতীতের ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করতো। পুজোর ছুটি পড়লেই দু তিন সপ্তাহের জন্য ঠাকুরদার বাড়ি চলে যেতাম। বাবা গিয়ে দিয়ে আসতেন, তবে নিজে এক দিনের বেশি থাকতেন না। দু তিন সপ্তাহের পর আবার গিয়ে নিয়ে আসতেন। বাবা ব্যাস্ত থাকলেই অনেক সময় ঠাকুর্দাই লোক দিয়ে বাবার কাছে পৌছে দিতেন।

দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকায় ছিল বাবার এবং দুই কাকার তিনতলা বাড়ি। নিজের হাতে বানানো নয়, বরঞ্চ এক পড়তি অবস্থার মাড়োয়ারির হাত থেকে খুব সস্তায় কিনে নিজের মতো সংস্কার করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনতলার বাড়িতে তিন ভাই মোটামুটি মিলে মিশেই থাকতেন, এক একজন এক একটি তলা নিয়ে। বাবার ভাগে পড়েছিল, তিন তলা। বাবা কাকার আর্থিক সংগতির সাথে সাযুজ্য রেখে এলিভেটর বসানো হয়েছিল। কাজেই তিনতলায় ওঠার কোনো অসুবিধা ছিল না। দুই পিসির আগেই বিয়ে হয়ে গাছে, বড় কাকা বিয়ে করেছেন, ছোট কাকা অবশ্য করেননি এখনো, প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। এই নিয়ে কথা বললেই ঠাট্টা তামাশা শুরু করেন, বলেন মুম্বাই এর কোনো এক নায়িকার সাথে নাকি ডেটিং চলছে, সময় হলেই বিয়ে করে সবাইকে চমকে দেবেন। আমি বাবা মার একমাত্র ছেলে, বড় কাকার দুই সন্তান, এক ছেলে এক মেয়ে। রূপম আর তপতীর সাথে অবশ্য আমার সম্পর্ক খারাপ না। যতদিন বাবার বাড়িতে ছিলাম, ভাই বোনের মতো মিলে মিশেই ছিলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করার পর অবশ্য আমি ওই বাড়িতে আর থাকিনি। সল্ট লেক এ একটা বাড়ি ভাড়া করে চলে আসি। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দৌলতে মোটামুটি ভালো চাকরি পেয়ে গেছিলাম একটা বিদেশী কোম্পানি তে। মা মারা যাওয়ার পর আমার আর ওই বাড়িতে থাকতে ভালো লাগতো না।

মা তো বছর ছয়েক আগেই মারা গেছিলেন । তারপর বাবাও কেমন একটা হয়ে গেছিলেন। একটু জড়োসড়ো, একটু জুবুথুবু। এককালের সেই দাপট আর ছিল না। বাবার কথা বললেই মনে হয়, মাতামহ সরিৎশেখরের কথা। শেষ বয়সে আমাদের দেখলেই white কলার ক্রিমিনালস বলে চিৎকার করে উঠতেন। কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি কখনো। এমনকি বাবা কাকারা সামনে থাকলেও মাথা নিচু করে থাকতেন । বাবা কাকার কেউই কখনও চাকরি করেনি। টেক্সটাইল, জুট, হার্ডওয়্যার এই রকম নানান জায়গায় ব্যবসা ছিল বাবা কাকার, আর পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নানান জায়গায় ছোটছোট অফিস ছিল। কাজের সূত্রে তিন জনকেই ঘুরতে হতো মাঝে মাঝে বিভিন্ন অফিস এ। প্রায় প্রত্যেক অফিসের লাগোয়া ছিল গেস্ট হাউস। সেখানে কাজ হয়ে গালে রাতটা কাটিয়ে আসতেন। কখনো কখনো দু একটা রাত বেশিও থেকে আসতেন। বেঁচে থাকতে মা একবার বলেছিলেন, ওই গেস্ট হাউস গুলো হচ্ছে যত নষ্টের গোড়া। মদ, জুয়া, বেশ্যা কি ছিল না সেখানে। সুরা আর মাংসের বন্যা বয়ে যেত। জমিদারি উঠে গেলেও নীল রক্তের দাবি কড়ায় গন্ডায় উসুল করে নিতেন বাবা-কাকারা। মা আর কাকিমার প্রতিবাদের কোনো জায়গা ছিল না, চোখের জল ফেলতে দেখেছি শুধু। আত্মহত্যা করেই মা হয়তো চরম প্রতিবাদ করে গেছেন।

হটাৎ মোবাইল এর অ্যালার্ম এর শব্দে ঘোর কেটে গেল। মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর দুটো শনিবার। ঊর্মির সাথে প্রথম মিটিং এর জন্য অ্যালার্ম সেট করেছিলাম ভাগ্যিস! শীর্ষেন্দুর চক্র উপন্যাসের প্রায় ১৫০ পাতা পড়া হয়ে গাছে শেষ চার দিনে। এবার নিশ্চই উর্মির কাছ থেকে ওর মোবাইল নম্বর টা পাওয়া যাবে। আমার মুখে একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।


[চলবে]
 
Last edited:
ঊর্মির সাথে আলাপ সেদিন শুধু নাম বিনিময় আর হাত মেলানোতেই থেমে থাকেনি অবশ্য। অল্পবয়সে মানুষের মন থাকে নদীর স্রোতের মতো। না চাইতেই তা অনেকদূর এগিয়ে যায়। সামাজিকতা, লৌকিকতার তোয়াক্কা করে না। ঊর্মির কাছে থেকে সেদিন জেনেছিলাম যে ও বাংলায় অনেকের লেখাই পছন্দ করে, তবে গদ্য সাহিত্যে শীর্ষেন্দুর থেকেও সুনীল ওর বেশি পছন্দ। ঐসময় নতুন বইয়ের তালিকায় নাকি সুনীলের "অর্ধের জীবন" এসেছিলো। ওর লাইব্রেরি তে আসা তারই খোঁজে।

আমি বললাম, "যাক, অনেকদিন পারে একজনের সন্ধান পাওয়া গেলো, যে লাইব্রেরি থেকে বই তুলে পড়তে ভালোবাসে। আজকাল তো সবাই দেখি ফেসবুক থেকে গল্প নিয়ে পড়ে". ঊর্মি একটু হেসে বললো, "আমার অবশ্য বরাবরই লাইব্রেরি আস্তে ভালো লাগে, কাগজের বই হাতে নিয়ে পড়ার যে মজা, সেটা তো আর ফেসবুক বা ই-রিডার এ পাওয়া যায় না! তাও তো এখন বই পড়ি, বদহজম করি, আর ভুলে যাই। একসময় আমার মাসতুতো বোনের সাথে রেগুলার আলোচনা হাত বই নিয়ে। প্রায়, বিতর্ক সভা বলতে পারেন। তারপর ও বেঙ্গালুরু তে চলে গেছে শেষ ক মাস হলো চাকরি করতে, ফোন করলেই বলে নাকি ভীষণ ব্যস্ত , কি না কি নাকি কোডের বাগ ফিক্স করছে। কথা বলারও সময় নেই। তাই এখন বই নিয়ে আর কারোর সাথে আলোচনা করার সুযোগ হয় না। "

আমি বললাম, "বেশ তো, আমাকেও আপনার বুক ওয়ার্ম ক্লাব এর আর একজন সদস্য করে নিন। সপ্তাহে একবার, ধরুন দুপুরের দিকে দেখা করে সারা সপ্তাহে কি কি পড়লাম তাই নিয়ে আলোচনা হবে। বই পড়াও হবে, আর আলোচনাও হবে। " ঊর্মি প্রায় ৩০ সেকেন্ডস আমার দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে থেকে বললো, "মেয়েদের সাথে লাইন করার পদ্ধতিগুলো তো ভালোই রপ্ত করেছেন। ঠিক আছে আমি রাজি, এমনিতেও আমার সেরকম কোনো কাজ থাকে না, শনিবার দুপুর ৩ টের পর। কাজেই দেখা করাই যায়। তো কোথায় দেখা করবেন বলুন?"

আমি বললাম, "এই লাইব্রেরির পেছনের দিকে একটা কনফারেন্স রুম আছে, নামেই কনফারেন্স রুম, আসলে ওটা একটা ছোট বারান্দা; বাগানের দিকে মুখ করে। কয়েকটা চেয়ার আছে বসার জন্য। ওখানেই আলোচনা শুরু করা যাবে। তারপর জায়গাটা যদি ভালো না লাগে, তবে অন্য কথাও যাওয়া যাবে। যেমন ধরুন কাছেই একটা ভালো ক্যাফে আছে, দারুন কফি বানায়। সেখানেও যাওয়া যেতে পারে" .

ঊর্মি এবার হাসি চাপতে পারলো না। চোখ বড় বড় করে বললো, "গাছে উঠতে না উঠতেই এক কাঁদি? আর পাঁচ মিনিট এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তো আপনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে ফেলবেন। আজকে বরঞ্চ পালাই তাড়াতাড়ি। পরের শনিবার দুপুর তিনটেয় দেখা হচ্ছে এখানে। "

আমি বালি, "আপনার নম্বর টা তো দিয়ে যান। যদি না দেখা হয়?" উর্মি বললো, "শনিবার বিকেল তিনটায়। দেখবো চক্র কেমন পড়লেন। ওটা আমার পড়া আছে। প্রশ্ন ধরবো। যদি সব উত্তর ঠিক দিতে পারেন তবেই ফোন নম্বর পাবেন। না হলে নয় "

আমি মুখে একটা কপট অসহায়ত্বের ভাব এনে বললাম, "তাই হবে গুরু মা"


[চলবে]
bhalo lagchhe ..... choluk ... kolom choluk .......
 
আমি: "গ্রীষ্মের বিকেলে এখানটা তো বেশ আরাম, বেশি গরম নেই"
ঊর্মি : "সে তো হবেই, কত গাছ আছে দেখছো না? এই লাইব্রেরি টা অনেকদিনের পুরোনো, গাছগুলো কত আগেকার দেখো না। "
আমি: "ভালো জায়গাই বেছেছি সাহিত্য আলোচনার জন্য, কি বলো?"
ঊর্মি : "সাহিত্য আলোচনা হচ্ছে, নাকি বকবক করে সময় নষ্ট করছি, তুমিই বলতে পারবে।"
আমি: "এটাকে সময় নষ্ট বলা যায়না, দ্বিতীয় আলাপের জন্য একটু সময় তো দিতেই হয় সবসময়। "
ঊর্মি : "দ্বিতীয় আলাপ মানে?"
আমি: "প্রথম আলাপ তো হলো আগের দিন, কিন্তু বেশি কথা হয়নি তো তোমার সময় ছিল না বলে। "
উর্মি: "তাই বুঝি আজকে সেটা পুষিয়ে নিচ্ছ?"

কথা হচ্ছিলো লাইব্রেরীর পেছন দিকের বারান্দায় বসে শনিবার বিকেলে। গ্রীষ্মের বিকেলের ঝিরঝিরে হাওয়া দুজন কে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। কথা বলতে বলতে কখন যে আপনি থেকে তুমি তে নেমে এসেছি সেটা খেয়ালই করিনি। আজকে ঊর্মি একটা সবুজ রঙের জামা আর নীল জিন্স পরে এসেছে। চুল পনিটেল করে বাঁধা পেছন দিকে। সামনের বাগানের গাছগুলোর সাথে উর্মির জামার রংটা যেন মিশে গেছিলো। কোনো বিশেষ সাজ না থাকা সত্ত্বেও ওকে সুন্দর দেখাচ্ছিল।

ওর সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম যে ওরা অনেকদিন আগে থেকেই সল্ট লেকের বাসিন্দা। ওর বাবা ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্টের একজন অফিসার গ্রেডের কর্মচারী ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা গৃহবধূ। একভাই আছে, সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে NTPC তে ভালো চাকরি করে। বিয়ে করেছে কয়েক বছর হলো, একটা বছর দুই এর ছেলে আছে, বৌ আর ছেলে নিয়ে সে ভালোই আছে। বাড়ির সাথে যোগাযোগ অনেকটাই কমে এসেছে শেষ কয়েক বছরে।

ও নিজে কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স শেষ করেছে গত বছর, এখন একটা ফার্মা তে অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করে। সারাদিন ব্যাস্ত থাকলেও সন্ধেতে বাড়ি ফিরে ঘন্টা দুয়েক গল্পের বই নিয়ে না বসতে ওর চলে না। এই লাইব্রেরি তে ছোট থেকেই আসে, এখানকার বয়স্ক লাইব্রেরিয়ান প্রায় ওর আত্মীয়র মতোই হয়ে গেছেন।

আমার কথাও ওকে বললাম, তবে মায়ের আত্মহত্যার ব্যাপারটা আর খুলে বললাম না। বাবা কাকার বেল্লাপনাটাও চেপে যেত হলো। সাথে কি আর দাদু বলেছিলেন, "white কলার ক্রিমিনালস"? সুন্দর একটি মুখোশ না চাপালে তো আর আমাদের চলে না। মুখোশটাই তো আমাদের মুখশ্রী। আমার পিতামহ জমিদার ছিলেন শুনে ওর মুখে একটা ছদ্ম বিস্ময় ফুলে উঠলো, "তা জমিদার-নন্দনের তো এখন সম্পত্তির দেখভালে ব্যাস্ত থাকে উচিত, সাহিত্য চর্চা করে সময় নষ্ট করাটা কি ঠিক হচ্ছে?" আমি বললাম, "সময় নষ্ট হবে কেন? প্রজার সাথে আলোচনা তো জমিদারের কাজকম্মের মধ্যেই পড়ে।" "আমি প্রজা! তবে রে?" বলে ঊর্মি আমার বাঁ হাতে একটা আলতো করে চাঁটি মারলো। চাঁটিটা হাতে নয়, যেন বুকে গিয়ে লাগলো। সারা শরীর আবেশে ঝনঝন করে উঠলো। মনে হলো, আহা, এইরকম কয়েকটা যদি ঊর্মি রোজ আমার হাতে মারে?


[চলবে]
 
Last edited:
আমি: "অর্ধেক জীবন কতটা বাকি আর? আমি কিন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো!"
ঊর্মি: "অর্ধেক জীবন তো শেষ হয়ে গাছে, এখন তো শঙ্করের চরণ ছুঁয়ে যাই চলছে।"
আমি : "ও তাই, আমি জানতাম না, তুমি তো খুব তাড়াতাড়ি পড়ো। এই তো সেদিন শুরু করলে।"
ঊর্মি: "না মশাই, এই সেদিন নয়, ঠিক পাঁচ সপ্তাহ আগে প্রথম আলাপ হয়েছিল, সেদিন থেকে অর্ধেক জীবন পড়া শুরু।"
আমি : "তুমি তো দেখছি দিন তারিখ সব মুখস্ত করে রেখেছো।"
ঊর্মি: "প্রথম আলাপের কথা কি কেউ ভোলে? তোমারও নিশ্চই মনে আছে, শুধু না মনে থাকার ভান করছো"
আমি: "আমার দিন ক্ষণ এত মনে থাকে না। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি মনে হয়, সব ভুলে যাচ্ছি। "
ঊর্মি: "ছাব্বিশেই যদি ভুলতে শুরু কারো, তবে ছত্রিশে গিয়ে কি করবে? তখন তো নিজের নামটাও ভুলে যাবে দিপুবাবু?"
আমি: "আর সব ভুলে যাবো, তবে তোমাকে ভুলবো না ঊর্মি, এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি । "

ঊর্মির সাথে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে চ্যাট করছিলাম বিছানায় শুয়ে শুয়ে। রাত প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাত সাড়ে এগারোটা থেকে মধ্যরাত্রি অবধি আমাদের এই টেক্সট চ্যাট শুরু হয়েছে। ঊর্মি কাঁটায় কাঁটায় ১২ টায় ঘুমোয় আর সকল ৬:৩০ এ ওঠে। বলেছে ছোটবেলার অভ্যেস, এই বয়সে কোনোভাবেই নষ্ট হওয়া ঠিক না। কথা বলতে বলতে যেই রাত ১২ টার ঘন্টা বাজলো, ঊর্মি একটা সংক্ষিপ্ত "শুভরাত্রি" লিখে মোবাইল টার্ন অফ করে দেবে। আমার পাল্টা বিদায়ী মেসেজের জন্য অপেক্ষায় করবে না। প্রথম প্রথম ওর এই অভ্যাসটাকে একটু রূঢ় লাগলেও এখন বুজেছি এই ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা নিয়মানুবর্তিতা ওর জীবনধরণেরই একটা অঙ্গ, সেই ছোটবেলা থেকে। ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়া, শোয়া, স্কুল কলেজে যাওয়া সব নিয়ম মেনে।

আমার কথা শুনে ঊর্মি কয়েক সেকেন্ডস কোনো উত্তর দিলো না, আমি একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি যখন কি হলো ভেবে, তখন ওর উত্তর এলো, "সে তো তোমাকে প্রথম দিন দেখেই বুঝেছি, লাইব্রেরীতে আমাকে দেখে যেরকম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে, পারলে যেন গিলে খাও, হা হা হা" . আমি বললাম, "আমি খেয়ে ফেলতে পারি ভেবে ভয় লাগেনি? পালাবার চেষ্টা করলে না যে?" . ঊর্মি লিখলো, "পালিয়ে আর কি হবে, যেখানে জাহাজকে নোঙ্গর ফেলতে হয়, সেখান থেকে তো আর পালানো যায় না".

আমি আর কি বলবো, নিজের মনের না বলা কথা যখন অন্যের হৃদয়ে পৌঁছে যায়, আর একটা আলাদা জায়গা পায়, তখন মনের মাঝে যে শান্তি নামে, সে কথা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সে শান্তি কেবল যে পেয়েছে, সেই বোঝে, অন্য কাউকে বোঝানো শক্ত। জীবনানন্দ দাশের ভাষায় বলা যায়,

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা,
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে
দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে
বলেছে সে, এতদিন কোথায় ছিলেন?

রাত বারোটা বাজতে আর দুমিনিট বাকি, আর একটু পরেই ঊর্মি মোবাইল সুইচ অফ করে দেবে। আমি আমার গায়ে চাদরটা নিলাম, তারপর ঊর্মিকে লিখলাম, "উর্মি, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?", উত্তর এলো "কি কথা?". আমি বললাম, "লিখে বলা যাবে না, কথায় বলতে হবে, ফোন কারো।" ঊর্মি বললো, "দাঁড়াও, করছি" . একটু পরে ফোন রিং হওয়া শুরু হলো, আমি ফোন তুলে আস্তে আস্তে বললাম "তুমি এখন কি পরে আছো?". ঊর্মি কয়েক সেকেন্ড চুপ, সম্ভব প্রশ্নটার তাৎপর্য অনুধাবন করলো। তারপরেই মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে হেসে উঠে বললো, "ও হরি, এই কথা জানার জন্য তুমি মাঝ রাতে ফোন করলে? তা শোনো, আমি একটা ডাবল ব্রেস্টেড উলেন পি কোট পরে আছি, হা হা হা। হলো তো?" ঊর্মির কথায় স্পষ্ট রসিকতার আভাস । উলের তৈরী পি কোট তো লোকে শীতের দেশে বরফ পড়লে পরে। পশ্চিমবাংলার গরমে এইসব পরার কথা চিন্তাও করা যায় না। ঊর্মি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে চললো, "এর পর তো জিজ্ঞেস করবে ব্রা পরেছি কিনা, প্যান্টি পরেছি কিনা। তারপর ওই অ্যাডাল্ট চ্যাটের লোকগুলোর মতো দুস্টুমি শুরু করবে, আমি ওর মধ্যে নেই। "

উর্মির কোথায় মনে পারলো কয়েকদিন আগে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর কোনো প্রেসেন্ট বা পাস্ট রিলেশনশিপ আছে কিনা। ও বলেছিলো, মাস্টার্স পড়ার সময় একজন সহপাঠীর সাথে মাস দুয়েকের একটা সম্পর্ক হয়েছিল বটে, তবে সেটা মূলত মৌখিক স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। তার থেকে বেশি দূর এগোয়নি। তার পর ছেলেটি বিদেশে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়ে গেল। ঊর্মি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো যাওয়ার আগে। কিন্তু ঊর্মি কোনোদিনই বাবা মাকে ছেড়ে বিদেশ গিয়ে থাকতে চাইনি। ওর ভাই আর বৌদির দূরত্ব ইতিমধ্যেই বাবা আর মায়ের কাছে যথেষ্ট কষ্টদায়ক। ও আর সেই কষ্ট বাড়াতে চায় নি। ফলে ছেলেটির সাথে ওর সম্পর্কের ওখানেই ইতি। "

ছেলেটির সাথে সম্পর্ক কেটে যাওয়ার পর ঊর্মির কিছুদিন খুব নিঃস্বঙ্গ লাগতো। সদ্য তখন চাকরি শুরু করেছে, কিন্তু কাজে মন বসত না। তখনই একটি অ্যাডাল্ট চ্যাট সাইটএ টেক্সট বেসড চ্যাটিং এর শুরু। সেই হিসেবে শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা না থাকলেও যৌনগন্ধী কথাবার্তার সাথে ভালোই পরিচিত সে। কিছুদিন পর যখন নিসঃঙ্গতাটা গা সওয়া হয়ে গেল, তখন ওই সাইটে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তখন মনখারাপ লাগলেই লাইব্রেরি থেকে আনা গল্পের বই নিয়ে বসে পড়তো । দুতিন ঘন্টা বেশ বইয়ের মধ্যে কেটে যেত।

আমি চুপ করে আছি দেখে ঊর্মি আমাকে বললো, "তোমার দুস্টুমির বেলুনটাকে ফাটিয়ে দিলাম বলে দুঃখিত। তবে তোমাকে একটা কথা বলতে পারি। সেটা শুনলে হয়তো আজ রাতে তোমার মনখারাপটা একটু কম হবে। " আমি বললাম, "কি কথা ঊর্মি?". ঊর্মি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো, তারপর যখন কথা শুরু করলো, তখন ওর গলাটা কেমন একটু অন্যরকম শোনালো। "তুমি যখন গত সপ্তাহে ক্যাফেতে কফি খাবার সময় আমার হাতে তোমার হাতটা দিয়ে রেখেছিলে, তখন আমার কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো, ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। মনে হচ্ছিলো, তোমাকে জড়িয়ে ধরি। "

ফোনটা কেটে গেল আর আমি অন্ধকার ঘরে বিছানায় চুপ করে বসে রইলাম, রিং ব্যাক করার চেষ্টা করিনি, কারণ আমি জানি ঊর্মি আজ রাতের মতো ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ওকে আর পাওয়া যাবে না।


[চলবে]
 
Last edited:
আমি: "অর্ধেক জীবন কতটা বাকি আর? আমি কিন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো!"
ঊর্মি: "অর্ধেক জীবন তো শেষ হয়ে গাছে, এখন তো শঙ্করের চরণ ছুঁয়ে যাই চলছে।"
আমি : "ও তাই, আমি জানতাম না, তুমি তো খুব তাড়াতাড়ি পড়ো। এই তো সেদিন শুরু করলে।"
ঊর্মি: "না মশাই, এই সেদিন নয়, ঠিক পাঁচ সপ্তাহ আগে প্রথম আলাপ হয়েছিল, সেদিন থেকে অর্ধেক জীবন পড়া শুরু।"
আমি : "তুমি তো দেখছি দিন তারিখ সব মুখস্ত করে রেখেছো।"
ঊর্মি: "প্রথম আলাপের কথা কি কেউ ভোলে? তোমারও নিশ্চই মনে আছে, শুধু না মনে থাকার ভান করছো"
আমি: "আমার দিন ক্ষণ এত মনে থাকে না। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি মনে হয়, সব ভুলে যাচ্ছি। "
ঊর্মি: "ছাব্বিশেই যদি ভুলতে শুরু কারো, তবে ছত্রিশে গিয়ে কি করবে? তখন তো নিজের নামটাও ভুলে যাবে দিপুবাবু?"
আমি: "আর সব ভুলে যাবো, তবে তোমাকে ভুলবো না ঊর্মি, এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি । "

ঊর্মির সাথে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে চ্যাট করছিলাম বিছানায় শুয়ে শুয়ে। রাত প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাত সাড়ে এগারোটা থেকে মধ্যরাত্রি অবধি আমাদের এই টেক্সট চ্যাট শুরু হয়েছে। ঊর্মি কাঁটায় কাঁটায় ১২ টায় ঘুমোয় আর সকল ৬:৩০ এ ওঠে। বলেছে ছোটবেলার অভ্যেস, এই বয়সে কোনোভাবেই নষ্ট হওয়া ঠিক না। কথা বলতে বলতে যেই রাত ১২ টার ঘন্টা বাজলো, ঊর্মি একটা সংক্ষিপ্ত "শুভরাত্রি" লিখে মোবাইল টার্ন অফ করে দেবে। আমার পাল্টা বিদায়ী মেসেজের জন্য অপেক্ষায় করবে না। প্রথম প্রথম ওর এই অভ্যাসটাকে একটু রূঢ় লাগলেও এখন বুজেছি এই ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা নিয়মানুবর্তিতা ওর জীবনধরণেরই একটা অঙ্গ, সেই ছোটবেলা থেকে। ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়া, শোয়া, স্কুল কলেজে যাওয়া সব নিয়ম মেনে।

আমার কথা শুনে ঊর্মি কয়েক সেকেন্ডস কোনো উত্তর দিলো না, আমি একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি যখন কি হলো ভেবে, তখন ওর উত্তর এলো, "সে তো তোমাকে প্রথম দিন দেখেই বুঝেছি, লাইব্রেরীতে আমাকে দেখে যেরকম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে, পারলে যেন গিলে খাও, হা হা হা" . আমি বললাম, "আমি খেয়ে ফেলতে পারি ভেবে ভয় লাগেনি? পালাবার চেষ্টা করলে না যে?" . ঊর্মি লিখলো, "পালিয়ে আর কি হবে, যেখানে জাহাজকে নোঙ্গর ফেলতে হয়, সেখান থেকে তো আর পালানো যায় না".

আমি আর কি বলবো, নিজের মনের না বলা কথা যখন অন্যের হৃদয়ে পৌঁছে যায়, আর একটা আলাদা জায়গা পায়, তখন মনের মাঝে যে শান্তি নামে, সে কথা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সে শান্তি কেবল যে পেয়েছে, সেই বোঝে, অন্য কাউকে বোঝানো শক্ত। জীবনানন্দ দাশের ভাষায় বলা যায়,

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা,
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে
দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে
বলেছে সে, এতদিন কোথায় ছিলেন?

রাত বারোটা বাজতে আর দুমিনিট বাকি, আর একটু পরেই ঊর্মি মোবাইল সুইচ অফ করে দেবে। আমি আমার গায়ে চাদরটা নিলাম, তারপর ঊর্মিকে লিখলাম, "উর্মি, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?", উত্তর এলো "কি কথা?". আমি বললাম, "লিখে বলা যাবে না, কথায় বলতে হবে, ফোন কারো।" ঊর্মি বললো, "দাঁড়াও, করছি" . একটু পরে ফোন রিং হওয়া শুরু হলো, আমি ফোন তুলে আস্তে আস্তে বললাম "তুমি এখন কি পরে আছো?". ঊর্মি কয়েক সেকেন্ড চুপ, সম্ভব প্রশ্নটার তাৎপর্য অনুধাবন করলো। তারপরেই মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে হেসে উঠে বললো, "ও হরি, এই কথা জানার জন্য তুমি মাঝ রাতে ফোন করলে? তা শোনো, আমি একটা ডাবল ব্রেস্টেড উলেন পি কোট পরে আছি, হা হা হা। হলো তো?" ঊর্মির কথায় স্পষ্ট রসিকতার আভাস । উলের তৈরী পি কোট তো লোকে শীতের দেশে বরফ পড়লে পরে। পশ্চিমবাংলার গরমে এইসব পরার কথা চিন্তাও করা যায় না। ঊর্মি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে চললো, "এর পর তো জিজ্ঞেস করবে ব্রা পড়েছি কিনা, প্যান্টি পড়েছি কিনা। তারপর ওই অ্যাডাল্ট চ্যাটের লোকগুলোর মতো দুস্টুমি শুরু করবে, আমি ওর মধ্যে নেই। "

উর্মির কোথায় মনে পারলো কয়েকদিন আগে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর কোনো প্রেসেন্ট বা পাস্ট রিলেশনশিপ আছে কিনা। ও বলেছিলো, মাস্টার্স পড়ার সময় একজন সহপাঠীর সাথে মাস দুয়েকের একটা সম্পর্ক হয়েছিল বটে, তবে সেটা মূলত মৌখিক স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। তার থেকে বেশি দূর এগোয়নি। তার পর ছেলেটি বিদেশে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়ে গেল। ঊর্মি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো যাওয়ার আগে। কিন্তু ঊর্মি কোনোদিনই বাবা মাকে ছেড়ে বিদেশ গিয়ে থাকতে চাইনি। ওর ভাই আর বৌদির দূরত্ব ইতিমধ্যেই বাবা আর মায়ের কাছে যথেষ্ট কষ্টদায়ক। ও আর সেই কষ্ট বাড়াতে চায় নি। ফলে ছেলেটির সাথে ওর সম্পর্কের ওখানেই ইতি। "

ছেলেটির সাথে সম্পর্ক কেটে যাওয়ার পর ঊর্মির কিছুদিন খুব নিঃস্বঙ্গ লাগতো। সদ্য তখন চাকরি শুরু করেছে, কিন্তু কাজে মন বসত না। তখনই একটি অ্যাডাল্ট চ্যাট সাইটএ টেক্সট বেসড চ্যাটিং এর শুরু। সেই হিসেবে শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা না থাকলেও যৌনগন্ধী কথাবার্তার সাথে ভালোই পরিচিত সে। কিছুদিন পর যখন নিসঃঙ্গতাটা গা সওয়া হয়ে গেল, তখন ওই সাইটে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তখন মনখারাপ লাগলেই লাইব্রেরি থেকে আনা গল্পের বই নিয়ে বসে পড়তো । দুতিন ঘন্টা বেশ বইয়ের মধ্যে কেটে যেত।

আমি চুপ করে আছি দেখে ঊর্মি আমাকে বললো, "তোমার দুস্টুমির বেলুনটাকে ফাটিয়ে দিলাম বলে দুঃখিত। তবে তোমাকে একটা কথা বলতে পারি। সেটা শুনলে হয়তো আজ রাতে তোমার মনখারাপটা একটু কম হবে। " আমি বললাম, "কি কথা ঊর্মি?". ঊর্মি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো, তারপর যখন কথা শুরু করলো, তখন ওর গলাটা কেমন একটু অন্যরকম শোনালো। "তুমি যখন গত সপ্তাহে ক্যাফেতে কফি খাবার সময় আমার হাতে তোমার হাতটা দিয়ে রেখেছিলে, তখন আমার কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো, ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। মনে হচ্ছিলো, তোমাকে জড়িয়ে ধরি। "

ফোনটা কেটে গেল আর আমি অন্ধকার ঘরে বিছানায় চুপ করে বসে রইলাম, রিং ব্যাক করার চেষ্টা করিনি, কারণ আমি জানি ঊর্মি আজ রাতের মতো ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ওকে আর পাওয়া যাবে না।


[চলবে]
bahh ,khoob sundor. Dada, eki thread e post na kore, parbo1, porbo2 eirakom alada headline e thread post korle thread sankha barto'
 
bahh ,khoob sundor. Dada, eki thread e post na kore, parbo1, porbo2 eirakom alada headline e thread post korle thread sankha barto'
thank you! ha prostabta bhalo, kintu ei galpe anekgulo post habe, pratyektar alada thread karle pathoker attention nasto hoe jabe, tai galpo ta ekta thread ei rakhbo. Natun galpo likhle setar janyo ekta alada thread banabo.
 
thank you! ha prostabta bhalo, kintu ei galpe anekgulo post habe, pratyektar alada thread karle pathoker attention nasto hoe jabe, tai galpo ta ekta thread ei rakhbo. Natun galpo likhle setar janyo ekta alada thread banabo.
Ta thik. Tomar kathar o joutikata ache.
 
আমি: "অর্ধেক জীবন কতটা বাকি আর? আমি কিন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো!"
ঊর্মি: "অর্ধেক জীবন তো শেষ হয়ে গাছে, এখন তো শঙ্করের চরণ ছুঁয়ে যাই চলছে।"
আমি : "ও তাই, আমি জানতাম না, তুমি তো খুব তাড়াতাড়ি পড়ো। এই তো সেদিন শুরু করলে।"
ঊর্মি: "না মশাই, এই সেদিন নয়, ঠিক পাঁচ সপ্তাহ আগে প্রথম আলাপ হয়েছিল, সেদিন থেকে অর্ধেক জীবন পড়া শুরু।"
আমি : "তুমি তো দেখছি দিন তারিখ সব মুখস্ত করে রেখেছো।"
ঊর্মি: "প্রথম আলাপের কথা কি কেউ ভোলে? তোমারও নিশ্চই মনে আছে, শুধু না মনে থাকার ভান করছো"
আমি: "আমার দিন ক্ষণ এত মনে থাকে না। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি মনে হয়, সব ভুলে যাচ্ছি। "
ঊর্মি: "ছাব্বিশেই যদি ভুলতে শুরু কারো, তবে ছত্রিশে গিয়ে কি করবে? তখন তো নিজের নামটাও ভুলে যাবে দিপুবাবু?"
আমি: "আর সব ভুলে যাবো, তবে তোমাকে ভুলবো না ঊর্মি, এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি । "

ঊর্মির সাথে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে চ্যাট করছিলাম বিছানায় শুয়ে শুয়ে। রাত প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাত সাড়ে এগারোটা থেকে মধ্যরাত্রি অবধি আমাদের এই টেক্সট চ্যাট শুরু হয়েছে। ঊর্মি কাঁটায় কাঁটায় ১২ টায় ঘুমোয় আর সকল ৬:৩০ এ ওঠে। বলেছে ছোটবেলার অভ্যেস, এই বয়সে কোনোভাবেই নষ্ট হওয়া ঠিক না। কথা বলতে বলতে যেই রাত ১২ টার ঘন্টা বাজলো, ঊর্মি একটা সংক্ষিপ্ত "শুভরাত্রি" লিখে মোবাইল টার্ন অফ করে দেবে। আমার পাল্টা বিদায়ী মেসেজের জন্য অপেক্ষায় করবে না। প্রথম প্রথম ওর এই অভ্যাসটাকে একটু রূঢ় লাগলেও এখন বুজেছি এই ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা নিয়মানুবর্তিতা ওর জীবনধরণেরই একটা অঙ্গ, সেই ছোটবেলা থেকে। ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়া, শোয়া, স্কুল কলেজে যাওয়া সব নিয়ম মেনে।

আমার কথা শুনে ঊর্মি কয়েক সেকেন্ডস কোনো উত্তর দিলো না, আমি একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি যখন কি হলো ভেবে, তখন ওর উত্তর এলো, "সে তো তোমাকে প্রথম দিন দেখেই বুঝেছি, লাইব্রেরীতে আমাকে দেখে যেরকম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে, পারলে যেন গিলে খাও, হা হা হা" . আমি বললাম, "আমি খেয়ে ফেলতে পারি ভেবে ভয় লাগেনি? পালাবার চেষ্টা করলে না যে?" . ঊর্মি লিখলো, "পালিয়ে আর কি হবে, যেখানে জাহাজকে নোঙ্গর ফেলতে হয়, সেখান থেকে তো আর পালানো যায় না".

আমি আর কি বলবো, নিজের মনের না বলা কথা যখন অন্যের হৃদয়ে পৌঁছে যায়, আর একটা আলাদা জায়গা পায়, তখন মনের মাঝে যে শান্তি নামে, সে কথা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সে শান্তি কেবল যে পেয়েছে, সেই বোঝে, অন্য কাউকে বোঝানো শক্ত। জীবনানন্দ দাশের ভাষায় বলা যায়,

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা,
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে
দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে
বলেছে সে, এতদিন কোথায় ছিলেন?

রাত বারোটা বাজতে আর দুমিনিট বাকি, আর একটু পরেই ঊর্মি মোবাইল সুইচ অফ করে দেবে। আমি আমার গায়ে চাদরটা নিলাম, তারপর ঊর্মিকে লিখলাম, "উর্মি, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?", উত্তর এলো "কি কথা?". আমি বললাম, "লিখে বলা যাবে না, কথায় বলতে হবে, ফোন কারো।" ঊর্মি বললো, "দাঁড়াও, করছি" . একটু পরে ফোন রিং হওয়া শুরু হলো, আমি ফোন তুলে আস্তে আস্তে বললাম "তুমি এখন কি পরে আছো?". ঊর্মি কয়েক সেকেন্ড চুপ, সম্ভব প্রশ্নটার তাৎপর্য অনুধাবন করলো। তারপরেই মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে হেসে উঠে বললো, "ও হরি, এই কথা জানার জন্য তুমি মাঝ রাতে ফোন করলে? তা শোনো, আমি একটা ডাবল ব্রেস্টেড উলেন পি কোট পরে আছি, হা হা হা। হলো তো?" ঊর্মির কথায় স্পষ্ট রসিকতার আভাস । উলের তৈরী পি কোট তো লোকে শীতের দেশে বরফ পড়লে পরে। পশ্চিমবাংলার গরমে এইসব পরার কথা চিন্তাও করা যায় না। ঊর্মি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে চললো, "এর পর তো জিজ্ঞেস করবে ব্রা পরেছি কিনা, প্যান্টি পরেছি কিনা। তারপর ওই অ্যাডাল্ট চ্যাটের লোকগুলোর মতো দুস্টুমি শুরু করবে, আমি ওর মধ্যে নেই। "

উর্মির কোথায় মনে পারলো কয়েকদিন আগে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর কোনো প্রেসেন্ট বা পাস্ট রিলেশনশিপ আছে কিনা। ও বলেছিলো, মাস্টার্স পড়ার সময় একজন সহপাঠীর সাথে মাস দুয়েকের একটা সম্পর্ক হয়েছিল বটে, তবে সেটা মূলত মৌখিক স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। তার থেকে বেশি দূর এগোয়নি। তার পর ছেলেটি বিদেশে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়ে গেল। ঊর্মি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো যাওয়ার আগে। কিন্তু ঊর্মি কোনোদিনই বাবা মাকে ছেড়ে বিদেশ গিয়ে থাকতে চাইনি। ওর ভাই আর বৌদির দূরত্ব ইতিমধ্যেই বাবা আর মায়ের কাছে যথেষ্ট কষ্টদায়ক। ও আর সেই কষ্ট বাড়াতে চায় নি। ফলে ছেলেটির সাথে ওর সম্পর্কের ওখানেই ইতি। "

ছেলেটির সাথে সম্পর্ক কেটে যাওয়ার পর ঊর্মির কিছুদিন খুব নিঃস্বঙ্গ লাগতো। সদ্য তখন চাকরি শুরু করেছে, কিন্তু কাজে মন বসত না। তখনই একটি অ্যাডাল্ট চ্যাট সাইটএ টেক্সট বেসড চ্যাটিং এর শুরু। সেই হিসেবে শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা না থাকলেও যৌনগন্ধী কথাবার্তার সাথে ভালোই পরিচিত সে। কিছুদিন পর যখন নিসঃঙ্গতাটা গা সওয়া হয়ে গেল, তখন ওই সাইটে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তখন মনখারাপ লাগলেই লাইব্রেরি থেকে আনা গল্পের বই নিয়ে বসে পড়তো । দুতিন ঘন্টা বেশ বইয়ের মধ্যে কেটে যেত।

আমি চুপ করে আছি দেখে ঊর্মি আমাকে বললো, "তোমার দুস্টুমির বেলুনটাকে ফাটিয়ে দিলাম বলে দুঃখিত। তবে তোমাকে একটা কথা বলতে পারি। সেটা শুনলে হয়তো আজ রাতে তোমার মনখারাপটা একটু কম হবে। " আমি বললাম, "কি কথা ঊর্মি?". ঊর্মি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো, তারপর যখন কথা শুরু করলো, তখন ওর গলাটা কেমন একটু অন্যরকম শোনালো। "তুমি যখন গত সপ্তাহে ক্যাফেতে কফি খাবার সময় আমার হাতে তোমার হাতটা দিয়ে রেখেছিলে, তখন আমার কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো, ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। মনে হচ্ছিলো, তোমাকে জড়িয়ে ধরি। "

ফোনটা কেটে গেল আর আমি অন্ধকার ঘরে বিছানায় চুপ করে বসে রইলাম, রিং ব্যাক করার চেষ্টা করিনি, কারণ আমি জানি ঊর্মি আজ রাতের মতো ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ওকে আর পাওয়া যাবে না।


[চলবে]
excited.. Can't wait
 
Top