Bose Arun
Favoured Frenzy
ভ্রষ্টা মন *** ( গল্প ধারাবাহিক )
গতকাল রাত জয়ার ফুলশয্যার রাত ছিল , অতীন সারা রাত ওকে আদর করেছে , এখনো জয়া উপলব্ধি করে ওর শরীরে একটা অচেনা পুরুষের স্পর্শ i প্রথম দিকটাতে একটুও ভালো লাগছিলো না জয়ার কিন্তু যখন চোখ বুজে মনে মনে এই অচেনা মানুষটাকে রঞ্জন বলে ভাবতে শুরু করলো তখন একটু একটু করে ভালো লাগাটাও শুরু হয়েছিল ওর শরীরে i মনে হচ্ছিল রঞ্জনই রয়েছে বিছানায় ওর সাথে i কিন্তু সকাল হতেই বিছানায় রঞ্জনের বদলে অতীনকে দেখতে পেয়ে মনটা আবার কেমন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো , কেমন যেন মনে হচ্ছে শরীরটা অশুচি হয়ে গেছে i গত দুটো বছর রঞ্জন ছাড়া আর কোনো ছেলের কথা মনেও ভাবতে পারত না জয়া আজ সেই কিনা অন্য কোনো পুরুষের বিছানার সঙ্গী, হোক না সে ওর হাসব্যান্ড i বৌভাতের পরের দিন, এখনো বাড়ি ভর্তি অতীনের আত্মীয় স্বজনের ভীর , সবাই জয়ার অচেনা। জয়া জানে দুএকদিনের মধ্যেই সবাই চলে যাবে , অতীনের পরিবার বলতে জয়ার শ্বশুর শ্বাশুড়ী , অতীন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পয়সাওলা ঘর, অতীনের বাবা বড় কোম্পানিতে ডিরেক্টর ছিলেন গত দুবছর হলো রিটায়ার করেছেন , অনেক টাকা পেনশন পান , সল্ট লেকে নিজের বাড়ি। আর অতীন শিবপুর থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাইতে বড় পোস্টে কর্মরত, ভিক্টোরিয়া হাউসে বসে, মাঝে মাঝে কাজের জন্য জেলা গুলো ভিজিট করতে হয়।
জয়া নিজে কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে এম এ কমপ্লিট করে ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেনেটের টুরিজিম ডিপার্টমেন্টে আধিকারিক।
গতকাল ফুলশয্যার রাতে নতুন বৌকে আদর করতে করতে অতিন হনিমুন করতে ওকে নিয়ে কোথায় যাবে সব বলছিল।
কিন্তু সেই ব্যাপারে এক বিন্দুও জয়ার কানে ঢুকছিল না। তখন ওর মন জুড়ে শুধু রঞ্জন আর রঞ্জন। মনে পড়ে যায় জয়ার, অফিসেই প্রথম রঞ্জনকে দেখেছিল। ওরা তিন বন্ধু পূজোর ছুটিতে লাভা লোলেগাও বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম
করেছিল তাই জয়ার অফিসে এসেছিল বিস্তারিত জেনে ওখানকার রাজ্য সরকারের বন বাংলো বুক করা যায় কিনা।
জয়া সেই সময় রঞ্জনকে খুব হেল্প করে বাংলো বুক করে দিয়েছিল। আর কি আশ্চর্য ঠিক ওই পূজার সময়েই জয়ার ডিপার্টমেন্ট জয়াকে লাভা লোলেগাও গিয়ে পাহাড়ের সরকারী
বাংলো গুলোর হাল হকিকত দেখতে পাঠাচ্ছে। সেই সুবাদে প্রতি বছর জয়ার বিভিন্ন জায়গা ঘোরা হয়ে যায়। অফিসে রঞ্জনকে বাংলো বুকিংএ সাহায্য করতে গিয়ে জয়ার রঞ্জনকে খুব ভালো
লেগে গিয়েছিলো, স্মার্ট ঝকঝকে একটি ছেলে,একবার দেখলেই ভালো লেগে যায়। অফিস থেকে টূর অর্ডারটা পেয়ে কেন যেন জয়ার
মনটা খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। ভাবতে গিয়ে কেমন যেন আবার লজ্জাও পেয়ে গেলো তাহলে কি অবচেতন মনে কলকাতার বাইরে কয়েক দিন রঞ্জনকে দেখতে পাবে তার সাথে,ভালো করে
পরিচয় হবে সেই জন্য মনটা খুশিখুশি হয়ে উঠছে?
আজ বৌভাতের পরের দিন, এবাড়িতে জয়া একেবারে নতুন,অতীনের এক মাসতুত বোন নতুন বৌদিকে সকাল থেকে সব রকম হেল্প করছে। গত কাল সারা রাত একটুও ঘুমোতে পারেনি
জয়া তাই আজ দুপুরে সকলের সাথে খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর অতীনের ঘরে অবশ্য আজ থেকে ওর নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেবে। ঘুম আর আসছে কোথায়, ফেলে আসা দিন গুলো ছায়া ছবির মত চোখের সামনে এসে হাজির হচ্ছে।
মনে পড়ে যাচ্ছে, পূজোর ঠিক এক দিন আগেই জয়া পৌঁছে গিয়েছিল লাভার বাংলোতে। পাহাড়ের ওপরে বাংলোটা এত সুন্দর যেন পটে আঁকা ছবি। চার দিকে উঁচু উঁচু পাহাড়, গাছে গাছে ছাওয়া। জয়ার মনটা খুশিতে ভড়ে উঠেছিলো, অবশ্য এর আগেও কয়েকবার জয়া এখানে এসেছে। জয়া এখানে হেড অফিসের প্রতিনিধি তাই বাংলোর ম্যানেজার থেকে শুরু করে সবাই ওকে একটু খাতির করেই চলে কারন বাংলোর সম্বন্ধে ফাইনাল রিপোর্টটা হেড অফিসে জয়াই দেবে। মনে আছে প্রথম দিনই সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে পাহাড়ি পথে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিল জয়া, চার দিকে আকাশ ছোঁয়া পাহাড় গাছ গাছালি আর সকালবেলায় পাখীদের কলকাকলি। জয়ার খুব ভালো লাগছে, পরিষ্কার হাওয়া,বুক ভড়ে নিঃশ্বাস নেয় জয়া।
আবার আস্তে আস্তে হাটা শুরু করেছিল জয়া। পাহাড়ি রাস্তা একটা বাঁক ঘুরতেই দেখে একটা বড় পাথরের ওপর বসে আছে রঞ্জন, একা আকাশের দিকে তাকিয়ে রঙ্গের খেলা দেখছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে, বুঝতেও পারেনি কখন জয়া ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রঞ্জনকে একা পথের মাঝে দেখতে পেয়ে জয়ার মনটাও খুব খুশি খুশি হয়ে উঠেছিল। কাছে গিয়ে রঞ্জন বাবু বলে ডাকতেই রঞ্জন ওকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..... একি আপনি? আমিতো আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না!
অতিতের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে জয়া ঘুমিয়ে পরেছিলো বুঝতেও পারেনি। ঘুম ভাঙলো তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে। খুব লজ্জা পেয়ে ধড়মড় করে উঠে পরে জয়া, নতুন বৌ কে কি ভাবছে কে জানে। ফুল্টুসি অতীনের সেই মাসতুত বোন দুবার দেখে গেছে নতুন বৌদির ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা। অঘোরে ঘুমোচ্ছে দেখে ডাকে নি, মুচকি হেসে ঘর থেকে চলে গেছে, বুঝলো কাল রাতে ওর গুনধর দাদাটি নতুন বৌদিকে একটুও ঘুমোতে দেয় নি।
জয়া উঠে পরে টয়লেটে গিয়ে ফ্রেস হয়ে, একটু হাল্কা মেকআপ করে দোতালা থেকে নিচে নেমে আসে। ওকে দেখতে পেয়েই ফুল্টুসি দৌঁড়ে আসে ওর কাছে। নিচের ড্রইং রুমে জয়া দেখে শশুর শাশুড়ী আর অতিন সোফায় বসে আছে। গেস্ট, আত্মীয় সজনরা সব চলে গেছে। সকলে মিলে গল্প করতে করতে আর চা খেতে খেতে অনেকটা সময় কেটে গেলো। অতিন অনেক দিন পর একটু সময় পেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে চলে গেলো।
জয়াও ঘরে এসে দুচারটে ফোন সেরে নিলো। জয়ার বাবা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হার্টের অসুখ, রেগুলার মেডিকাল চেক আপে রাখতে হয়। তাই অনেক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে বাবা কেমন আছে জেনে নিল। বাবার এই অসুস্থতাটাই জয়ার তাড়াতাড়ি বিয়ে করার একটা কারন। ফোন কমপ্লিট করে জয়া বারান্দার রেলিঙে এসে দাঁড়ায়। মাঘ মাস ছটা বাজতে না বাজতেই চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে, বেশ ঠাণ্ডা পরেছে, গায়ের শালটা ভালো করে জড়িয়ে নেয় জয়া। বেশ কুয়াশা কুয়াশা চারদিক, সারা পাড়াটা কেমন নিঃঝাম হয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকায় জয়া, তারা গুলো কেমন মিটমিট করে জ্বলছে। জয়ার মনে পড়ে গেলো সেই দু বছর আগের কথা।
অক্টোবর মাসের একদম শেষের দিক, জয়া লাভাতে গিয়েছিল,এই রকমই কুয়াশা ঢাকা পাহাড়। ছবির মত মনের মধ্যে আঁকা হয়ে আছে লাভার পাহাড়ি রাস্তায় রঞ্জনের সাথে দেখা হওয়ার সকাল বেলার কথাটা। মনে আছে রঞ্জনকে অবাক হতে দেখে জয়া মিটিমিটি করে হাসতে হাসতে বলেছিল... ভয় নেই আপনাকে ফলো করতে করতে এত দূরে আসিনি, ডিপার্টমেন্ট আমাকে এখানে পাঠিয়েছে কিছু কাজের জন্য। আমাকে এখান থেকে লোলেগাও তেও যেতে হবে ভিজিটে।
সব শুনে রঞ্জনত মহা খুশি। এক মুখ খুশি নিয়ে বলেছিল.... খুব খুব ভালো হলো, এই কটা দিন আমরা একসাথে ঘুরবো বেড়াবো আর চুটিয়ে আনন্দ করবো, কি বলেন? মনে আছে জয়াও রঞ্জনের কথাতে খুব খুশি হয়ে হাসি হাসি মুখে সায় দিয়েছিল।
কোথা দিয়ে কেটে গিয়েছিলো সাতটা দিন, যেন স্বপ্নের মত।
তারুণ্যের উৎসাহে আনন্দে রঞ্জনদের সাথে লাভা লোলেগাও এর দিন গুলো জয়া তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছিল আর সেই সঙ্গে জয়ার মনে রঞ্জনের জন্য একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। জয়া খুব ম্যাচুয়র মেয়ে আর রঞ্জন ছিল খুবই ছেলে মানুষ। মনে হয় দু এক বছরের ছোটোই হবে রঞ্জন জয়ার থেকে। পাহাড়ে থাকতে থাকতেই রঞ্জন আর জয়া দুজনে দুজনার সব কিছু জেনে নিয়েছিল। রঞ্জন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। বাড়িতে মা বাবা আর ওর থেকে বড় দু বোন, অবিবাহিতা। মোটামুটি সচ্ছ্বল পরিবার। বেহালার একটু ভেতরের দিকে নিজেদের বাড়ি।
বারান্দার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে দূরে রাস্তার দিকে তাকায় জয়া, বেশ ভালোই ঠান্ডা আজকে, ব্যালকোনি থেকে ঘরে ঢুকে টিভিটা খোলে জয়া, অতিন এখনো ফেরেনি। কেমন যেন একা একা বোর ফিল করে জয়া,অফিস থেকে বিয়ের জন্য দু সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে, আর চার দিন বাদে সামনের সোমবার থেকে আবার অফিস শুরু করবে জয়া ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল জয়ার।
মনে আছে পাহাড়ের টূর থেকে কলকাতায় ফেরার পর রঞ্জনের সাথে জয়ার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
রঞ্জন যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র, সুযোগ পেলেই চলে আসতো জয়ার অফিসে পাঁচটার পর, দুজনে ঘুরে বেড়াত সারা কলকাতা শহর, কখনো ভিক্টোরিয়া কখনওবা গঙ্গার ঘাট। মাঝে মাঝে দু একটা সিনেমাও দেখতে গেছে দুজনে, কিন্তু অন্ধকার হলে রঞ্জনের কোনো রকম বেচাল অনুভব করেনি জয়া বরং অন্ধকার হলে পাশাপাশি বসে সিনেমা দেখতে দেখতে রঞ্জনের সুঠাম আকর্ষণীও যৌবনের অজান্তের ছোঁয়ায় জয়ার ভরন্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠত। একটা উদ্দাম শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করতো জয়া, কিন্তু সহজাত মননশীলতায় রঞ্জনকে সেটা বুঝতে দিত না। রঞ্জনের মনটা ছিল একদম ছেলে মানুষের মত। জয়া বুঝতে পারতো রঞ্জন ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু সেই ভালোবাসার মধ্যে কোনো কামনা ছিল না। অনেকবার রঞ্জন কোনো কারনে খুশি হয়ে উঠলে ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমুও খেয়েছে, জয়া বুঝতে পারতো সেই জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার মধ্যে থাকতো একটা সারল্য আর ছেলেমানুষি। কিন্তু জয়া অনুভব করতো রঞ্জনের ছোঁয়া ওর শরীরে একটা অদ্ভুত ভালোলাগার শিহরণ জাগিয়ে তুলতো। আর রাতে একা বিছানায় শুয়ে মনে মনে কামনা করতো রঞ্জনকে ওর শরীরের সাথে মিশিয়ে নিতে। কিন্তু কখনোই মুখ ফুটে বলা বা কোনো রকম প্রোভোকেট করতো না শালিনতায় বাঁধত। রঞ্জন একদিন শনিবার ছুটির পর ওর বেহালার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সাধারণ সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। দুই দিদির বিয়ে হয় নি, সকলের সাথে আলাপ করে জয়া বুঝতে পেরেছিল, পরিবারের সবাই আশা করে আছে রঞ্জন ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পলিট করে একটা ভালো সার্ভিস করে সংসারের হাল ধরবে। রঞ্জনও অনেক সময় ওর জীবনের লক্ষ্যের কথা জয়াকে বলেছে। বাইরের সম্পর্কের থেকে রঞ্জনের কাছে ওর পরিবার অনেক ওপরে। আর জয়া নিজেও খুব প্র্যাক্টিকাল মেয়ে ও বোঝে রঞ্জনকে বিয়ে করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ভার্চুয়ালী রঞ্জনকে কাছে টেনে নেয়, কল্পনায় রঞ্জনের সাহচর্য অনুভব করে। মনে মনে সব সময় রঞ্জনকেই কামনা করে জয়া।
আবার ব্যালকোনিতে এসে দাঁড়ায় জয়া। আজ বাইরের ঠান্ডাটা জয়ার ভালই লাগছে, অনেক দিন বাদে কলকাতায় এই রকম শীত পড়লো। কুয়াশা কেটে গেছে চোখের সামনে কলকাতার ঝকঝকে রাত। অবাক হয়ে ভাবে জয়া জীবনে প্রথম একজন পুরুষ মানুষের বিছানার সঙ্গী হয়েছিল গতকাল ফুলশয্যার রাতে। সারা শরীরে কামনার স্পর্শও প্রথম অনুভব করেছিল, কিন্তু কেন অতীনকে রঞ্জন না ভাবা পর্যন্ত ভালো লাগছিল না, কেনই বা যেই অতিন বিছানায় কল্পনায় রঞ্জন হয়ে গেল তখন থেকেই ভালো লাগা শুরু, ওর শরীর সারা দেয়া শুরু করেছিল। ভেবে পায়না
কেন এমনটা হলো, তাহলে কি ওর সারা কামনা জুড়ে শুধু রঞ্জন আর রঞ্জন? নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করে জয়া এটাকি ভ্রষ্টাচার নয়? এটাকে কি মানসিক ব্যাভিচার বলে?বুঝতে পারেনা জয়া।
এখন রাত আটটা বেজে গেছে অতীনের আসার সময় হয়ে গেছে, রাস্তার দিকে তাকায় জয়া, জমজমাট রাস্তা, অনবরত গাড়ি যাচ্ছে আসছে, দোকান গুলোতে ভীর, কেনাকাটা চলছে।
মনে পড়ে যায় জয়ার কিছু দিন ধরেই বাড়ির থেকে তাগাদা দেয়া চলছিল বিয়ে করার জন্য, একটা ভালো সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিল জয়ার মামিমা , ওনার দূর সম্পর্কের বোনের ছেলে অতীন, ইঞ্জিনিয়ার ছেলে সল্টলেকে নিজেদের বাড়ি, সচ্ছ্বল পরিবার একা ছেলে আর কোনো ভাই বোন নেই। মা বাবার খুব ইচ্ছে জয়া অতিনকেই বিয়ে করে। এত দিন জয়া ব্যাপারটা ঠেকিয়ে রেখেছিল কিন্তু কিছু দিন হোলো বাবার শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না, আর রঞ্জনকে বিয়ে করা ওর পক্ষ্যে সম্ভব নয় তাই মত দিয়েছিল বিয়েতে। আজ অতীনের বাড়ির দোতালার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে জয়া ভাবলো কি ভাবে মেয়েদের জীবন মুহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু জয়া এটাও উপলব্ধি করছে ও ওর মনের কামনার বেড়াজাল থেকে রঞ্জনকে বের করে দিতে পারছে না। জয়া বুঝতে পারছে আজ রাতেও অতীনের সাথে এক বিছানায় কাল রাতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিছানায় ওর কাছে অতীন হয়ে যাবে রঞ্জন, বাস্তব আর কল্পনা মিলেমিশে এক হয়ে যাবে জয়ার কামনায় বাসনায়।
........................
....চলবে...
গতকাল রাত জয়ার ফুলশয্যার রাত ছিল , অতীন সারা রাত ওকে আদর করেছে , এখনো জয়া উপলব্ধি করে ওর শরীরে একটা অচেনা পুরুষের স্পর্শ i প্রথম দিকটাতে একটুও ভালো লাগছিলো না জয়ার কিন্তু যখন চোখ বুজে মনে মনে এই অচেনা মানুষটাকে রঞ্জন বলে ভাবতে শুরু করলো তখন একটু একটু করে ভালো লাগাটাও শুরু হয়েছিল ওর শরীরে i মনে হচ্ছিল রঞ্জনই রয়েছে বিছানায় ওর সাথে i কিন্তু সকাল হতেই বিছানায় রঞ্জনের বদলে অতীনকে দেখতে পেয়ে মনটা আবার কেমন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো , কেমন যেন মনে হচ্ছে শরীরটা অশুচি হয়ে গেছে i গত দুটো বছর রঞ্জন ছাড়া আর কোনো ছেলের কথা মনেও ভাবতে পারত না জয়া আজ সেই কিনা অন্য কোনো পুরুষের বিছানার সঙ্গী, হোক না সে ওর হাসব্যান্ড i বৌভাতের পরের দিন, এখনো বাড়ি ভর্তি অতীনের আত্মীয় স্বজনের ভীর , সবাই জয়ার অচেনা। জয়া জানে দুএকদিনের মধ্যেই সবাই চলে যাবে , অতীনের পরিবার বলতে জয়ার শ্বশুর শ্বাশুড়ী , অতীন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পয়সাওলা ঘর, অতীনের বাবা বড় কোম্পানিতে ডিরেক্টর ছিলেন গত দুবছর হলো রিটায়ার করেছেন , অনেক টাকা পেনশন পান , সল্ট লেকে নিজের বাড়ি। আর অতীন শিবপুর থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাইতে বড় পোস্টে কর্মরত, ভিক্টোরিয়া হাউসে বসে, মাঝে মাঝে কাজের জন্য জেলা গুলো ভিজিট করতে হয়।
জয়া নিজে কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে এম এ কমপ্লিট করে ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেনেটের টুরিজিম ডিপার্টমেন্টে আধিকারিক।
গতকাল ফুলশয্যার রাতে নতুন বৌকে আদর করতে করতে অতিন হনিমুন করতে ওকে নিয়ে কোথায় যাবে সব বলছিল।
কিন্তু সেই ব্যাপারে এক বিন্দুও জয়ার কানে ঢুকছিল না। তখন ওর মন জুড়ে শুধু রঞ্জন আর রঞ্জন। মনে পড়ে যায় জয়ার, অফিসেই প্রথম রঞ্জনকে দেখেছিল। ওরা তিন বন্ধু পূজোর ছুটিতে লাভা লোলেগাও বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম
করেছিল তাই জয়ার অফিসে এসেছিল বিস্তারিত জেনে ওখানকার রাজ্য সরকারের বন বাংলো বুক করা যায় কিনা।
জয়া সেই সময় রঞ্জনকে খুব হেল্প করে বাংলো বুক করে দিয়েছিল। আর কি আশ্চর্য ঠিক ওই পূজার সময়েই জয়ার ডিপার্টমেন্ট জয়াকে লাভা লোলেগাও গিয়ে পাহাড়ের সরকারী
বাংলো গুলোর হাল হকিকত দেখতে পাঠাচ্ছে। সেই সুবাদে প্রতি বছর জয়ার বিভিন্ন জায়গা ঘোরা হয়ে যায়। অফিসে রঞ্জনকে বাংলো বুকিংএ সাহায্য করতে গিয়ে জয়ার রঞ্জনকে খুব ভালো
লেগে গিয়েছিলো, স্মার্ট ঝকঝকে একটি ছেলে,একবার দেখলেই ভালো লেগে যায়। অফিস থেকে টূর অর্ডারটা পেয়ে কেন যেন জয়ার
মনটা খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। ভাবতে গিয়ে কেমন যেন আবার লজ্জাও পেয়ে গেলো তাহলে কি অবচেতন মনে কলকাতার বাইরে কয়েক দিন রঞ্জনকে দেখতে পাবে তার সাথে,ভালো করে
পরিচয় হবে সেই জন্য মনটা খুশিখুশি হয়ে উঠছে?
আজ বৌভাতের পরের দিন, এবাড়িতে জয়া একেবারে নতুন,অতীনের এক মাসতুত বোন নতুন বৌদিকে সকাল থেকে সব রকম হেল্প করছে। গত কাল সারা রাত একটুও ঘুমোতে পারেনি
জয়া তাই আজ দুপুরে সকলের সাথে খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর অতীনের ঘরে অবশ্য আজ থেকে ওর নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেবে। ঘুম আর আসছে কোথায়, ফেলে আসা দিন গুলো ছায়া ছবির মত চোখের সামনে এসে হাজির হচ্ছে।
মনে পড়ে যাচ্ছে, পূজোর ঠিক এক দিন আগেই জয়া পৌঁছে গিয়েছিল লাভার বাংলোতে। পাহাড়ের ওপরে বাংলোটা এত সুন্দর যেন পটে আঁকা ছবি। চার দিকে উঁচু উঁচু পাহাড়, গাছে গাছে ছাওয়া। জয়ার মনটা খুশিতে ভড়ে উঠেছিলো, অবশ্য এর আগেও কয়েকবার জয়া এখানে এসেছে। জয়া এখানে হেড অফিসের প্রতিনিধি তাই বাংলোর ম্যানেজার থেকে শুরু করে সবাই ওকে একটু খাতির করেই চলে কারন বাংলোর সম্বন্ধে ফাইনাল রিপোর্টটা হেড অফিসে জয়াই দেবে। মনে আছে প্রথম দিনই সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে পাহাড়ি পথে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিল জয়া, চার দিকে আকাশ ছোঁয়া পাহাড় গাছ গাছালি আর সকালবেলায় পাখীদের কলকাকলি। জয়ার খুব ভালো লাগছে, পরিষ্কার হাওয়া,বুক ভড়ে নিঃশ্বাস নেয় জয়া।
আবার আস্তে আস্তে হাটা শুরু করেছিল জয়া। পাহাড়ি রাস্তা একটা বাঁক ঘুরতেই দেখে একটা বড় পাথরের ওপর বসে আছে রঞ্জন, একা আকাশের দিকে তাকিয়ে রঙ্গের খেলা দেখছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে, বুঝতেও পারেনি কখন জয়া ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রঞ্জনকে একা পথের মাঝে দেখতে পেয়ে জয়ার মনটাও খুব খুশি খুশি হয়ে উঠেছিল। কাছে গিয়ে রঞ্জন বাবু বলে ডাকতেই রঞ্জন ওকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..... একি আপনি? আমিতো আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না!
অতিতের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে জয়া ঘুমিয়ে পরেছিলো বুঝতেও পারেনি। ঘুম ভাঙলো তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে। খুব লজ্জা পেয়ে ধড়মড় করে উঠে পরে জয়া, নতুন বৌ কে কি ভাবছে কে জানে। ফুল্টুসি অতীনের সেই মাসতুত বোন দুবার দেখে গেছে নতুন বৌদির ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা। অঘোরে ঘুমোচ্ছে দেখে ডাকে নি, মুচকি হেসে ঘর থেকে চলে গেছে, বুঝলো কাল রাতে ওর গুনধর দাদাটি নতুন বৌদিকে একটুও ঘুমোতে দেয় নি।
জয়া উঠে পরে টয়লেটে গিয়ে ফ্রেস হয়ে, একটু হাল্কা মেকআপ করে দোতালা থেকে নিচে নেমে আসে। ওকে দেখতে পেয়েই ফুল্টুসি দৌঁড়ে আসে ওর কাছে। নিচের ড্রইং রুমে জয়া দেখে শশুর শাশুড়ী আর অতিন সোফায় বসে আছে। গেস্ট, আত্মীয় সজনরা সব চলে গেছে। সকলে মিলে গল্প করতে করতে আর চা খেতে খেতে অনেকটা সময় কেটে গেলো। অতিন অনেক দিন পর একটু সময় পেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে চলে গেলো।
জয়াও ঘরে এসে দুচারটে ফোন সেরে নিলো। জয়ার বাবা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হার্টের অসুখ, রেগুলার মেডিকাল চেক আপে রাখতে হয়। তাই অনেক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে বাবা কেমন আছে জেনে নিল। বাবার এই অসুস্থতাটাই জয়ার তাড়াতাড়ি বিয়ে করার একটা কারন। ফোন কমপ্লিট করে জয়া বারান্দার রেলিঙে এসে দাঁড়ায়। মাঘ মাস ছটা বাজতে না বাজতেই চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে, বেশ ঠাণ্ডা পরেছে, গায়ের শালটা ভালো করে জড়িয়ে নেয় জয়া। বেশ কুয়াশা কুয়াশা চারদিক, সারা পাড়াটা কেমন নিঃঝাম হয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকায় জয়া, তারা গুলো কেমন মিটমিট করে জ্বলছে। জয়ার মনে পড়ে গেলো সেই দু বছর আগের কথা।
অক্টোবর মাসের একদম শেষের দিক, জয়া লাভাতে গিয়েছিল,এই রকমই কুয়াশা ঢাকা পাহাড়। ছবির মত মনের মধ্যে আঁকা হয়ে আছে লাভার পাহাড়ি রাস্তায় রঞ্জনের সাথে দেখা হওয়ার সকাল বেলার কথাটা। মনে আছে রঞ্জনকে অবাক হতে দেখে জয়া মিটিমিটি করে হাসতে হাসতে বলেছিল... ভয় নেই আপনাকে ফলো করতে করতে এত দূরে আসিনি, ডিপার্টমেন্ট আমাকে এখানে পাঠিয়েছে কিছু কাজের জন্য। আমাকে এখান থেকে লোলেগাও তেও যেতে হবে ভিজিটে।
সব শুনে রঞ্জনত মহা খুশি। এক মুখ খুশি নিয়ে বলেছিল.... খুব খুব ভালো হলো, এই কটা দিন আমরা একসাথে ঘুরবো বেড়াবো আর চুটিয়ে আনন্দ করবো, কি বলেন? মনে আছে জয়াও রঞ্জনের কথাতে খুব খুশি হয়ে হাসি হাসি মুখে সায় দিয়েছিল।
কোথা দিয়ে কেটে গিয়েছিলো সাতটা দিন, যেন স্বপ্নের মত।
তারুণ্যের উৎসাহে আনন্দে রঞ্জনদের সাথে লাভা লোলেগাও এর দিন গুলো জয়া তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছিল আর সেই সঙ্গে জয়ার মনে রঞ্জনের জন্য একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। জয়া খুব ম্যাচুয়র মেয়ে আর রঞ্জন ছিল খুবই ছেলে মানুষ। মনে হয় দু এক বছরের ছোটোই হবে রঞ্জন জয়ার থেকে। পাহাড়ে থাকতে থাকতেই রঞ্জন আর জয়া দুজনে দুজনার সব কিছু জেনে নিয়েছিল। রঞ্জন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। বাড়িতে মা বাবা আর ওর থেকে বড় দু বোন, অবিবাহিতা। মোটামুটি সচ্ছ্বল পরিবার। বেহালার একটু ভেতরের দিকে নিজেদের বাড়ি।
বারান্দার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে দূরে রাস্তার দিকে তাকায় জয়া, বেশ ভালোই ঠান্ডা আজকে, ব্যালকোনি থেকে ঘরে ঢুকে টিভিটা খোলে জয়া, অতিন এখনো ফেরেনি। কেমন যেন একা একা বোর ফিল করে জয়া,অফিস থেকে বিয়ের জন্য দু সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে, আর চার দিন বাদে সামনের সোমবার থেকে আবার অফিস শুরু করবে জয়া ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল জয়ার।
মনে আছে পাহাড়ের টূর থেকে কলকাতায় ফেরার পর রঞ্জনের সাথে জয়ার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
রঞ্জন যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র, সুযোগ পেলেই চলে আসতো জয়ার অফিসে পাঁচটার পর, দুজনে ঘুরে বেড়াত সারা কলকাতা শহর, কখনো ভিক্টোরিয়া কখনওবা গঙ্গার ঘাট। মাঝে মাঝে দু একটা সিনেমাও দেখতে গেছে দুজনে, কিন্তু অন্ধকার হলে রঞ্জনের কোনো রকম বেচাল অনুভব করেনি জয়া বরং অন্ধকার হলে পাশাপাশি বসে সিনেমা দেখতে দেখতে রঞ্জনের সুঠাম আকর্ষণীও যৌবনের অজান্তের ছোঁয়ায় জয়ার ভরন্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠত। একটা উদ্দাম শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করতো জয়া, কিন্তু সহজাত মননশীলতায় রঞ্জনকে সেটা বুঝতে দিত না। রঞ্জনের মনটা ছিল একদম ছেলে মানুষের মত। জয়া বুঝতে পারতো রঞ্জন ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু সেই ভালোবাসার মধ্যে কোনো কামনা ছিল না। অনেকবার রঞ্জন কোনো কারনে খুশি হয়ে উঠলে ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমুও খেয়েছে, জয়া বুঝতে পারতো সেই জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার মধ্যে থাকতো একটা সারল্য আর ছেলেমানুষি। কিন্তু জয়া অনুভব করতো রঞ্জনের ছোঁয়া ওর শরীরে একটা অদ্ভুত ভালোলাগার শিহরণ জাগিয়ে তুলতো। আর রাতে একা বিছানায় শুয়ে মনে মনে কামনা করতো রঞ্জনকে ওর শরীরের সাথে মিশিয়ে নিতে। কিন্তু কখনোই মুখ ফুটে বলা বা কোনো রকম প্রোভোকেট করতো না শালিনতায় বাঁধত। রঞ্জন একদিন শনিবার ছুটির পর ওর বেহালার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সাধারণ সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। দুই দিদির বিয়ে হয় নি, সকলের সাথে আলাপ করে জয়া বুঝতে পেরেছিল, পরিবারের সবাই আশা করে আছে রঞ্জন ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পলিট করে একটা ভালো সার্ভিস করে সংসারের হাল ধরবে। রঞ্জনও অনেক সময় ওর জীবনের লক্ষ্যের কথা জয়াকে বলেছে। বাইরের সম্পর্কের থেকে রঞ্জনের কাছে ওর পরিবার অনেক ওপরে। আর জয়া নিজেও খুব প্র্যাক্টিকাল মেয়ে ও বোঝে রঞ্জনকে বিয়ে করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ভার্চুয়ালী রঞ্জনকে কাছে টেনে নেয়, কল্পনায় রঞ্জনের সাহচর্য অনুভব করে। মনে মনে সব সময় রঞ্জনকেই কামনা করে জয়া।
আবার ব্যালকোনিতে এসে দাঁড়ায় জয়া। আজ বাইরের ঠান্ডাটা জয়ার ভালই লাগছে, অনেক দিন বাদে কলকাতায় এই রকম শীত পড়লো। কুয়াশা কেটে গেছে চোখের সামনে কলকাতার ঝকঝকে রাত। অবাক হয়ে ভাবে জয়া জীবনে প্রথম একজন পুরুষ মানুষের বিছানার সঙ্গী হয়েছিল গতকাল ফুলশয্যার রাতে। সারা শরীরে কামনার স্পর্শও প্রথম অনুভব করেছিল, কিন্তু কেন অতীনকে রঞ্জন না ভাবা পর্যন্ত ভালো লাগছিল না, কেনই বা যেই অতিন বিছানায় কল্পনায় রঞ্জন হয়ে গেল তখন থেকেই ভালো লাগা শুরু, ওর শরীর সারা দেয়া শুরু করেছিল। ভেবে পায়না
কেন এমনটা হলো, তাহলে কি ওর সারা কামনা জুড়ে শুধু রঞ্জন আর রঞ্জন? নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করে জয়া এটাকি ভ্রষ্টাচার নয়? এটাকে কি মানসিক ব্যাভিচার বলে?বুঝতে পারেনা জয়া।
এখন রাত আটটা বেজে গেছে অতীনের আসার সময় হয়ে গেছে, রাস্তার দিকে তাকায় জয়া, জমজমাট রাস্তা, অনবরত গাড়ি যাচ্ছে আসছে, দোকান গুলোতে ভীর, কেনাকাটা চলছে।
মনে পড়ে যায় জয়ার কিছু দিন ধরেই বাড়ির থেকে তাগাদা দেয়া চলছিল বিয়ে করার জন্য, একটা ভালো সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিল জয়ার মামিমা , ওনার দূর সম্পর্কের বোনের ছেলে অতীন, ইঞ্জিনিয়ার ছেলে সল্টলেকে নিজেদের বাড়ি, সচ্ছ্বল পরিবার একা ছেলে আর কোনো ভাই বোন নেই। মা বাবার খুব ইচ্ছে জয়া অতিনকেই বিয়ে করে। এত দিন জয়া ব্যাপারটা ঠেকিয়ে রেখেছিল কিন্তু কিছু দিন হোলো বাবার শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না, আর রঞ্জনকে বিয়ে করা ওর পক্ষ্যে সম্ভব নয় তাই মত দিয়েছিল বিয়েতে। আজ অতীনের বাড়ির দোতালার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে জয়া ভাবলো কি ভাবে মেয়েদের জীবন মুহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু জয়া এটাও উপলব্ধি করছে ও ওর মনের কামনার বেড়াজাল থেকে রঞ্জনকে বের করে দিতে পারছে না। জয়া বুঝতে পারছে আজ রাতেও অতীনের সাথে এক বিছানায় কাল রাতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিছানায় ওর কাছে অতীন হয়ে যাবে রঞ্জন, বাস্তব আর কল্পনা মিলেমিশে এক হয়ে যাবে জয়ার কামনায় বাসনায়।
........................
....চলবে...