Bose Arun
Favoured Frenzy
** দি এপেক্স **
&& &&&&&&
আনমনে ফুলবাগানের দিকে যাছিলাম , হাটতে হাটতে চোখ চলে যাচ্ছে চারদিকে। অবাক হয়ে ভাবছিলাম, দেখতে দেখতে কেমন পালটিয়ে গেলো আমার দেখা আমার বেলেঘাটা। এই বেলেঘাটায় আমার কত দিন হয়ে গেল বোধ হয় ষাট বছর
কত মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে রাস্তার দু পাশে, ঝকঝকে শোরূম সন্ধ্যা বেলায় গমগম করছে দোকান পাট। কেমন যেন মন চলে যায় আমার সেই কিশোর বেলায়। যে রাস্তা ধরে ফুল বাগানের দিকে যাচ্ছি, সেটা ফুলবাগান গিয়েই শেষ ছিল। তারপর ছিল মাঠ আর মাঠ। একটা সরু মেঠো রাস্তা কাকুরগাছি অব্দি গিয়েই শেষ তার পর মাঠ ঝোপঝাড় পুকুর। তখন ফুলবাগানে কয়েকটা দোকান ছিল, চায়ের দোকান দুএকটা গ্রসারি শপ, তারি মাঝে একটা ড্রাইংক্লিন বেশ একটা ইংরেজি নাম ছিল দি এপেক্স। যেতে যেতে আজও দেখতে পেলাম
ঠিক ফুলবাগানের মোড়ের একটু আগে একটা পেট্রোল পাম্পের গায়ে লাগানো একটি ঝকঝকে ড্রাইংক্লিন, চোখ চলে গেল সাইন বোর্ডের দিকে, আরে এইত সেই আমার অতিতের দেখা সেই দি এপেক্স। নামটা একই আছে তবে সাইনবোর্ড টা অনেক আধুনিক । দোকানটা দেখতে দেখতে মনটা চলে গেলো অনেক অতিতে।
মনে আছে ফ্যাক্টরির টেলিফোন অপারেটর দাসদা আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক্সটেনশনে একটা লাইন দিয়ে বলেছিল নীল তোমার একটা ফোন আছে একটি মেয়ে কথা বলতে চায়। দাসদা আমার থেকে অনেক বয়স্ক ছিলেন তাই আমাকে নাম ধরে ডাকতো। আমিতো অবাক আমার সাথে আবার কোন মেয়ে কথা বলতে চায়। আমি দাসদাকে বলেছিলাম দিন, লাইনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই একটা মিষ্টি মেয়ের গলা, নীল রয় বলছেন? আমি হ্যা বলতেই খিলখিল করে মিষ্টি ঝরনার মত হাসি। ইস, চিন্তে পারছেন না তো? পারবেন ই বা কেমন করে, কখনো চোখ তুলে তাকিয়েছেন আমার দিকে?
আমার যে তখন কি অবস্থা, ঘেমে নেয়ে একশা। আমি জিগ্যেস করেছিলাম, তুমি কে বলছো? শুনে কপট রাগের একটা আওয়াজ করে বলেছিল, ধুস হাদারাম আমার গলার স্বরেও চিনতে পারলেন না,? ইস, এই হাদারাম টাকে রোজ দেখার জন্য আমি কিনা সন্ধ্যা বেলা সেজে গুজে কাকিমার রান্নাঘরে হাজিরা দি।
কাকিমার রান্না ঘর? ও হরি বৌদির রান্নাঘর। মানে আমি যে বাড়িতে বিদ্যুৎ বলে একটি ছেলেকে সন্ধ্যা বেলায় টিউশন করি তার মা বৌদি। হা হা মনে
পরছে ফ্যাক্ট্রি ছুটির পর ফ্রেস হয়ে চলে যেতাম ছাত্র পড়াতে। আসলে টিউশনি ব্যাপারটা আমার মোটেই ভালো লাগতো না, কিন্তু আমার মাস্তুত ভাই সিআইটি বিল্ডিংয়ের এই টিউশনি টা করতো । ও চাকরির সুবাদে দিল্লি চলে যায়, ওর রিকুয়েষ্ট এ আমি বিদ্যুৎ কে পড়ানো শুরু করি। তখন সপ্তাহে ছয় দিনই পড়াতে হতো। ছাত্রের মাকে আমি বৌদি বলে ডাকতাম। ধীরে ধীরে ছাত্র পড়ানোটা খুব একটা খারাপ লাগতো না। মনে পরে গেলো কিছু দিন ধরে দেখছি বৌদির সাথে গল্প করতে একটি ঝকঝকে মিষ্টি মেয়ে রোজ সন্ধ্যা বেলায় বৌদির কাছে চলে আসে। মাঝে মাঝে ওদের কথাবার্তা কানে আসে, বুঝেছিলাম মেয়েটির নাম মিমি। পড়ানো শেষে বৌদিকে গুড নাইট করে বেড়িয়ে আসার সময় দুএকবার চোখাচোখি হয়েছে। কাঁজল টানা চোখ দুটো যেন দুষ্টুমিতে ভরা।
রোজই দেখতাম, ভালোই লাগতো, আমার ওই বয়েসে সব মেয়েকেই ভালো লাগতো। অবশ্য মিমিকে খুব একটা পাত্তা দিতাম না, যদি আমাকে ক্যাবলা বা হ্যাংলা ভেবে বসে। যাক এত কথা মনে আসতে বোধ হয় কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল তার মধ্যেই ফোনের মধ্যে অসহিষ্ণু সেই মিষ্টি গলা, কি হলো, আমার কথা শুনে স্ট্যাচু হয়ে গেলেন নাকি? আমি তারাতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, হ্যা বলো। এরই মাঝে ফোনের মাঝে খুট খুট আওয়াজ এ বুঝতে পারলাম আমাদের টেলিফোন অপারেটর দাস দা টেলিফোন বোর্ড থেকে আমাদের সব কথা শুনছে। বয়স্ক মানুষ হয়ত মজা পাচ্ছে। শুনুক গে ভাবলাম দাসদাকেও আমার হাতে রাখতে হবে এবার থেকে। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন ভারতবর্ষে মোবাইল ফোনের জন্মই হয় নি। সব ল্যান্ড লাইন। সব বাড়িতেও আবার ফোন ছিল না, যারা একটু তথাকথিত বড়লোক তাদের বাড়িতেই ফোন থাকতো। বাড়িতে ফোন মানে একটা স্ট্যাটাস সিম্বল ছিল। মিমি ওর বাড়ি থেকেই ফোন করেছিল আমাকে।
আবার ধমক খেলাম, কি হলো কালা আর বোবা হয়ে গেলেন নাকি। শুনুন বেশি কথা বলার সময় নেই, আর আপনিও কারখানায় আছেন। কাল রবিবার কাল আপনার টিইউশনি নেই, কামিমার বাড়িতে আসারও নেই, আপনি কাল ঠিক সাড়েপাঁচটার সময় ফুলবাগানে দেখবেন দি এপেক্স বলে একটা ড্রাইংক্লিনিং আছে, ওই দোকানটার সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন, আমি ঠিক সময় এসে যাব। আসুন না কাল আপনাকে দেখাচ্ছি মজা। আমাকে ইগনোর করা,? উফ আমি ভাবতেও পারছি না। তার পরেই ঠক করে রিসিভার রাখার আওয়াজ। বুঝলাম খুব রেগে আছে আমার ওপর। মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম কাল দেখা হলে আবার মারধর না করে।
পরের দিন রবিবার, ঘুম ভাঙতেই মনে পরে গেলো আজ সাড়েপাঁচটার মধ্যে একটি মেয়ের সাথে জীবনে প্রথম দেখা করতে যাবো, ভাবতেই খুশি হওয়া থেকে বুকের ভেতরটা কেমন গুড় গুড় করে উঠলো। আবার মিমির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কেমন জানি ভালো লাগা শুরু হয়েছিল।
হটাত কেউ যেন আমাকে ডাকতেই আমার সম্বিৎ ফিরে এলো, দেখি আমি দি এপেক্সে দোকান টার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। দোকানের একটি ছেলে আমাকে জিগ্যেস করছে আংকেল আপনি কি কাউকে খুঁজছেন? আমি বললাম হা ভাই তোমাদের এই দি এপেক্স দোকানটার পঞ্চাশ বছর আগের একটা দিনকে খুঁজচ্ছিলাম। বলে হাটা শুরু করে দিলাম। আমি নিশ্চিত ছেলেটি নিশ্চয়ই আমাকে পাগোল ভেবেছিল। ফুলবাগানের মোড়টা তে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বিশাল মেট্রো স্টেশন, মোটামুটি কমপ্লিট। চার দিক ঝকঝক করছে। ফুটপাতে সুন্দর সুন্দর বসার বেঞ্চ পাতা। একটা মোটামুটি নির্জন বেঞ্চ দেখে বসলাম। আবার মনটা তলিয়ে গেলো অতিতের দি এপেক্স দোকানটার সামনে।
মনে আছে ঠিক কাটায় কাটায় সাড়ে পাঁচটায় মিমি এপেক্সের সামনে এসেছিল। আমাকে দেখে এক গাল মিষ্টি হাসি হেসে বলেছিল, কতক্ষন এসেছেন? চলুন হাটতে হাটতে গল্প করবো। আমি কথা বলবো কি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি দারুন মিষ্টি লাগছে ওকে, একটা পিংক কালারের শাড়ি পরেছে সাথে ম্যাচিং ব্লাউস, মুখে হালকা প্রসাধন, ঠোঁটে শুধু লিপগ্লস, ঠোঁট দুটোকে যেন আরো আকর্ষনিও করে তুলেছে। আমি দুচোখে মুগ্ধতা নিয়ে ওকে দেখছি দেখে মিমি আমার হাতে একটা চিমটি কেটে বলেছিল, এই হাদারাম এই ভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে? চলুনতো। আমি তারাতাড়ি অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিলাম, হা চলো। মনে আছে সে দিন ছিল টেন্থ জুলাই আমার জন্ম দিন। ওর সাথে হাটতে হাটতে মনটা এত খুশি খুশি লাগছিল যে ভগবানকে ধন্যবাদই দিয়ে ফেললাম আমার জন্ম দিনে উনি কি অপূর্ব মিমির মতো সুন্দরী মেয়ের সাথে একটা সন্ধ্যা উপহার দিলেন আমাকে।
যাই হোক সে দিন হাটতে হাটতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুজন বেলেঘাটা লেকের জলের ধারে গিয়ে বসেছিলাম। তখনকার বেলেঘাটা লেক আজকের মত এত জমজমাট ছিল না। ইলেক্ট্রিক লাইটের আলো ছিল না,আঁধো অন্ধকার। সারা লেকের জলে যেন সেদিন পুরো আকাশটাই নেমে এসেছিল। ঝিকমিকে তারায় ভরা জল আর চাঁদের জোছনায় সারা লেকটা কেমন মায়াবী হয়ে গিয়েছিল।
আমার কেমন স্বপ্নের মতো লাগছিল সব কিছু। আর মিমি চাঁদের আলোয় জলের ধারে আমার পাশে বসে লেকের জলের ওপরে জলফরিং এর আলপনা দেখতে দেখতে এক নাগাড়ে বকবক করে গিয়েছিল। হটাত চমক ভেঙে আমাকে আস্তে একটা চিমটি কেটে বলেছিল, এই হাদারাম আমিই খালি বকবক করে যাচ্ছি আপনি কিছু বলছেন না যে। আমার জানি কি হয়ে গেলো, ওর হাত দুটো ধরে বলেছিলাম, জানো মিমি আজ না আমার জন্ম দিন, আজকেই তুমি আমাকে ডেকেছো, তা কিছু উপহার দেবে না?
আমার কথা শুনে মিমি খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছিল। জিগ্যেস করেছিল কত বছর হলো আপনার? মনে আছে আমি বলেছিলাম একুশ বছর। আজ মনে পরে যাচ্ছে, আমার কথা শেষ হতেই সেই আঁধো অন্ধকারে লেকের জলের ধারে আমার দু গাল দুহাতে ধরে কাছে টেনে নিয়ে গুনে গুনে কুড়িটা চুমু আমার সারা মুখে খেয়ে একুশ নম্বর চুমু আমার ঠোঁটের ওপর ও নরম ঠোঁট চেপে রেখে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে দিয়েছিল। আমার যে তখন কি অবস্থা, জীবনে প্রথম নারী শরীরের স্পর্শ, মিমির শরীরের অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ ওর তুলতুলে ঠোঁটের ছোঁয়া, ওর কামনা বাসনা মেলানো আমাকে জড়িয়ে ধরা আমাকে বিবশ করে দিয়েছিল। সারা প্রকৃতি যেন তার রূপ রস গন্ধ নিয়ে আমাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিল। মনে আছে আমার মাথাটা মিমি ওর নরম দুই বুকের মাঝে চেপে ধরে রেখে আমার মাথার ওপর ওর গাল চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বলেছিল, নীলদা তোমার জন্ম দিনে আমার এই উপহার সারা জীবন মনে রেখো। হয়তো প্রকৃতির খেয়ালে কে কোথায় চলে যাব আমরা জানি না।
সত্যি আমরা জানি না এই পৃথিবীর আবর্তনের সাথে সাথে সময়ও আবর্তিত হয় আর সেই আবর্তনে আমি, আর ক্ষনিকের ভালোবাসা মিমি কে কোথায় ছিটকে গেলাম বুঝতেও পারলাম না।
আজ দশই জুলাই আবার অনেক ক্যালেন্ডারের পাতা উলটিয়ে হাজির হয়েছে সেই দি এপেক্স ড্রাইংক্লিন দোকানটার সামনে। আজ যে ফিরে এসেছে আবার আমার আর একটা জন্ম দিন। আজো মনে পরে যাচ্ছে মিমির সেই কয়েকটা কথা।
নীলদা, আজ তোমার জন্ম দিনে আমার দেয়া উপহারের কথা ভুলে যেও না। মনে রেখো চিরকাল।
চোখ দুটো কেন যে চিক চিক করছে। না এবার বাড়ি ফিরতে হবে আজ যে আমার জন্ম দিন সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
*********************************
&& &&&&&&
আনমনে ফুলবাগানের দিকে যাছিলাম , হাটতে হাটতে চোখ চলে যাচ্ছে চারদিকে। অবাক হয়ে ভাবছিলাম, দেখতে দেখতে কেমন পালটিয়ে গেলো আমার দেখা আমার বেলেঘাটা। এই বেলেঘাটায় আমার কত দিন হয়ে গেল বোধ হয় ষাট বছর
কত মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে রাস্তার দু পাশে, ঝকঝকে শোরূম সন্ধ্যা বেলায় গমগম করছে দোকান পাট। কেমন যেন মন চলে যায় আমার সেই কিশোর বেলায়। যে রাস্তা ধরে ফুল বাগানের দিকে যাচ্ছি, সেটা ফুলবাগান গিয়েই শেষ ছিল। তারপর ছিল মাঠ আর মাঠ। একটা সরু মেঠো রাস্তা কাকুরগাছি অব্দি গিয়েই শেষ তার পর মাঠ ঝোপঝাড় পুকুর। তখন ফুলবাগানে কয়েকটা দোকান ছিল, চায়ের দোকান দুএকটা গ্রসারি শপ, তারি মাঝে একটা ড্রাইংক্লিন বেশ একটা ইংরেজি নাম ছিল দি এপেক্স। যেতে যেতে আজও দেখতে পেলাম
ঠিক ফুলবাগানের মোড়ের একটু আগে একটা পেট্রোল পাম্পের গায়ে লাগানো একটি ঝকঝকে ড্রাইংক্লিন, চোখ চলে গেল সাইন বোর্ডের দিকে, আরে এইত সেই আমার অতিতের দেখা সেই দি এপেক্স। নামটা একই আছে তবে সাইনবোর্ড টা অনেক আধুনিক । দোকানটা দেখতে দেখতে মনটা চলে গেলো অনেক অতিতে।
মনে আছে ফ্যাক্টরির টেলিফোন অপারেটর দাসদা আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক্সটেনশনে একটা লাইন দিয়ে বলেছিল নীল তোমার একটা ফোন আছে একটি মেয়ে কথা বলতে চায়। দাসদা আমার থেকে অনেক বয়স্ক ছিলেন তাই আমাকে নাম ধরে ডাকতো। আমিতো অবাক আমার সাথে আবার কোন মেয়ে কথা বলতে চায়। আমি দাসদাকে বলেছিলাম দিন, লাইনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই একটা মিষ্টি মেয়ের গলা, নীল রয় বলছেন? আমি হ্যা বলতেই খিলখিল করে মিষ্টি ঝরনার মত হাসি। ইস, চিন্তে পারছেন না তো? পারবেন ই বা কেমন করে, কখনো চোখ তুলে তাকিয়েছেন আমার দিকে?
আমার যে তখন কি অবস্থা, ঘেমে নেয়ে একশা। আমি জিগ্যেস করেছিলাম, তুমি কে বলছো? শুনে কপট রাগের একটা আওয়াজ করে বলেছিল, ধুস হাদারাম আমার গলার স্বরেও চিনতে পারলেন না,? ইস, এই হাদারাম টাকে রোজ দেখার জন্য আমি কিনা সন্ধ্যা বেলা সেজে গুজে কাকিমার রান্নাঘরে হাজিরা দি।
কাকিমার রান্না ঘর? ও হরি বৌদির রান্নাঘর। মানে আমি যে বাড়িতে বিদ্যুৎ বলে একটি ছেলেকে সন্ধ্যা বেলায় টিউশন করি তার মা বৌদি। হা হা মনে
পরছে ফ্যাক্ট্রি ছুটির পর ফ্রেস হয়ে চলে যেতাম ছাত্র পড়াতে। আসলে টিউশনি ব্যাপারটা আমার মোটেই ভালো লাগতো না, কিন্তু আমার মাস্তুত ভাই সিআইটি বিল্ডিংয়ের এই টিউশনি টা করতো । ও চাকরির সুবাদে দিল্লি চলে যায়, ওর রিকুয়েষ্ট এ আমি বিদ্যুৎ কে পড়ানো শুরু করি। তখন সপ্তাহে ছয় দিনই পড়াতে হতো। ছাত্রের মাকে আমি বৌদি বলে ডাকতাম। ধীরে ধীরে ছাত্র পড়ানোটা খুব একটা খারাপ লাগতো না। মনে পরে গেলো কিছু দিন ধরে দেখছি বৌদির সাথে গল্প করতে একটি ঝকঝকে মিষ্টি মেয়ে রোজ সন্ধ্যা বেলায় বৌদির কাছে চলে আসে। মাঝে মাঝে ওদের কথাবার্তা কানে আসে, বুঝেছিলাম মেয়েটির নাম মিমি। পড়ানো শেষে বৌদিকে গুড নাইট করে বেড়িয়ে আসার সময় দুএকবার চোখাচোখি হয়েছে। কাঁজল টানা চোখ দুটো যেন দুষ্টুমিতে ভরা।
রোজই দেখতাম, ভালোই লাগতো, আমার ওই বয়েসে সব মেয়েকেই ভালো লাগতো। অবশ্য মিমিকে খুব একটা পাত্তা দিতাম না, যদি আমাকে ক্যাবলা বা হ্যাংলা ভেবে বসে। যাক এত কথা মনে আসতে বোধ হয় কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল তার মধ্যেই ফোনের মধ্যে অসহিষ্ণু সেই মিষ্টি গলা, কি হলো, আমার কথা শুনে স্ট্যাচু হয়ে গেলেন নাকি? আমি তারাতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, হ্যা বলো। এরই মাঝে ফোনের মাঝে খুট খুট আওয়াজ এ বুঝতে পারলাম আমাদের টেলিফোন অপারেটর দাস দা টেলিফোন বোর্ড থেকে আমাদের সব কথা শুনছে। বয়স্ক মানুষ হয়ত মজা পাচ্ছে। শুনুক গে ভাবলাম দাসদাকেও আমার হাতে রাখতে হবে এবার থেকে। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন ভারতবর্ষে মোবাইল ফোনের জন্মই হয় নি। সব ল্যান্ড লাইন। সব বাড়িতেও আবার ফোন ছিল না, যারা একটু তথাকথিত বড়লোক তাদের বাড়িতেই ফোন থাকতো। বাড়িতে ফোন মানে একটা স্ট্যাটাস সিম্বল ছিল। মিমি ওর বাড়ি থেকেই ফোন করেছিল আমাকে।
আবার ধমক খেলাম, কি হলো কালা আর বোবা হয়ে গেলেন নাকি। শুনুন বেশি কথা বলার সময় নেই, আর আপনিও কারখানায় আছেন। কাল রবিবার কাল আপনার টিইউশনি নেই, কামিমার বাড়িতে আসারও নেই, আপনি কাল ঠিক সাড়েপাঁচটার সময় ফুলবাগানে দেখবেন দি এপেক্স বলে একটা ড্রাইংক্লিনিং আছে, ওই দোকানটার সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন, আমি ঠিক সময় এসে যাব। আসুন না কাল আপনাকে দেখাচ্ছি মজা। আমাকে ইগনোর করা,? উফ আমি ভাবতেও পারছি না। তার পরেই ঠক করে রিসিভার রাখার আওয়াজ। বুঝলাম খুব রেগে আছে আমার ওপর। মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম কাল দেখা হলে আবার মারধর না করে।
পরের দিন রবিবার, ঘুম ভাঙতেই মনে পরে গেলো আজ সাড়েপাঁচটার মধ্যে একটি মেয়ের সাথে জীবনে প্রথম দেখা করতে যাবো, ভাবতেই খুশি হওয়া থেকে বুকের ভেতরটা কেমন গুড় গুড় করে উঠলো। আবার মিমির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কেমন জানি ভালো লাগা শুরু হয়েছিল।
হটাত কেউ যেন আমাকে ডাকতেই আমার সম্বিৎ ফিরে এলো, দেখি আমি দি এপেক্সে দোকান টার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। দোকানের একটি ছেলে আমাকে জিগ্যেস করছে আংকেল আপনি কি কাউকে খুঁজছেন? আমি বললাম হা ভাই তোমাদের এই দি এপেক্স দোকানটার পঞ্চাশ বছর আগের একটা দিনকে খুঁজচ্ছিলাম। বলে হাটা শুরু করে দিলাম। আমি নিশ্চিত ছেলেটি নিশ্চয়ই আমাকে পাগোল ভেবেছিল। ফুলবাগানের মোড়টা তে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বিশাল মেট্রো স্টেশন, মোটামুটি কমপ্লিট। চার দিক ঝকঝক করছে। ফুটপাতে সুন্দর সুন্দর বসার বেঞ্চ পাতা। একটা মোটামুটি নির্জন বেঞ্চ দেখে বসলাম। আবার মনটা তলিয়ে গেলো অতিতের দি এপেক্স দোকানটার সামনে।
মনে আছে ঠিক কাটায় কাটায় সাড়ে পাঁচটায় মিমি এপেক্সের সামনে এসেছিল। আমাকে দেখে এক গাল মিষ্টি হাসি হেসে বলেছিল, কতক্ষন এসেছেন? চলুন হাটতে হাটতে গল্প করবো। আমি কথা বলবো কি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি দারুন মিষ্টি লাগছে ওকে, একটা পিংক কালারের শাড়ি পরেছে সাথে ম্যাচিং ব্লাউস, মুখে হালকা প্রসাধন, ঠোঁটে শুধু লিপগ্লস, ঠোঁট দুটোকে যেন আরো আকর্ষনিও করে তুলেছে। আমি দুচোখে মুগ্ধতা নিয়ে ওকে দেখছি দেখে মিমি আমার হাতে একটা চিমটি কেটে বলেছিল, এই হাদারাম এই ভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে? চলুনতো। আমি তারাতাড়ি অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিলাম, হা চলো। মনে আছে সে দিন ছিল টেন্থ জুলাই আমার জন্ম দিন। ওর সাথে হাটতে হাটতে মনটা এত খুশি খুশি লাগছিল যে ভগবানকে ধন্যবাদই দিয়ে ফেললাম আমার জন্ম দিনে উনি কি অপূর্ব মিমির মতো সুন্দরী মেয়ের সাথে একটা সন্ধ্যা উপহার দিলেন আমাকে।
যাই হোক সে দিন হাটতে হাটতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুজন বেলেঘাটা লেকের জলের ধারে গিয়ে বসেছিলাম। তখনকার বেলেঘাটা লেক আজকের মত এত জমজমাট ছিল না। ইলেক্ট্রিক লাইটের আলো ছিল না,আঁধো অন্ধকার। সারা লেকের জলে যেন সেদিন পুরো আকাশটাই নেমে এসেছিল। ঝিকমিকে তারায় ভরা জল আর চাঁদের জোছনায় সারা লেকটা কেমন মায়াবী হয়ে গিয়েছিল।
আমার কেমন স্বপ্নের মতো লাগছিল সব কিছু। আর মিমি চাঁদের আলোয় জলের ধারে আমার পাশে বসে লেকের জলের ওপরে জলফরিং এর আলপনা দেখতে দেখতে এক নাগাড়ে বকবক করে গিয়েছিল। হটাত চমক ভেঙে আমাকে আস্তে একটা চিমটি কেটে বলেছিল, এই হাদারাম আমিই খালি বকবক করে যাচ্ছি আপনি কিছু বলছেন না যে। আমার জানি কি হয়ে গেলো, ওর হাত দুটো ধরে বলেছিলাম, জানো মিমি আজ না আমার জন্ম দিন, আজকেই তুমি আমাকে ডেকেছো, তা কিছু উপহার দেবে না?
আমার কথা শুনে মিমি খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছিল। জিগ্যেস করেছিল কত বছর হলো আপনার? মনে আছে আমি বলেছিলাম একুশ বছর। আজ মনে পরে যাচ্ছে, আমার কথা শেষ হতেই সেই আঁধো অন্ধকারে লেকের জলের ধারে আমার দু গাল দুহাতে ধরে কাছে টেনে নিয়ে গুনে গুনে কুড়িটা চুমু আমার সারা মুখে খেয়ে একুশ নম্বর চুমু আমার ঠোঁটের ওপর ও নরম ঠোঁট চেপে রেখে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে দিয়েছিল। আমার যে তখন কি অবস্থা, জীবনে প্রথম নারী শরীরের স্পর্শ, মিমির শরীরের অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ ওর তুলতুলে ঠোঁটের ছোঁয়া, ওর কামনা বাসনা মেলানো আমাকে জড়িয়ে ধরা আমাকে বিবশ করে দিয়েছিল। সারা প্রকৃতি যেন তার রূপ রস গন্ধ নিয়ে আমাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিল। মনে আছে আমার মাথাটা মিমি ওর নরম দুই বুকের মাঝে চেপে ধরে রেখে আমার মাথার ওপর ওর গাল চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বলেছিল, নীলদা তোমার জন্ম দিনে আমার এই উপহার সারা জীবন মনে রেখো। হয়তো প্রকৃতির খেয়ালে কে কোথায় চলে যাব আমরা জানি না।
সত্যি আমরা জানি না এই পৃথিবীর আবর্তনের সাথে সাথে সময়ও আবর্তিত হয় আর সেই আবর্তনে আমি, আর ক্ষনিকের ভালোবাসা মিমি কে কোথায় ছিটকে গেলাম বুঝতেও পারলাম না।
আজ দশই জুলাই আবার অনেক ক্যালেন্ডারের পাতা উলটিয়ে হাজির হয়েছে সেই দি এপেক্স ড্রাইংক্লিন দোকানটার সামনে। আজ যে ফিরে এসেছে আবার আমার আর একটা জন্ম দিন। আজো মনে পরে যাচ্ছে মিমির সেই কয়েকটা কথা।
নীলদা, আজ তোমার জন্ম দিনে আমার দেয়া উপহারের কথা ভুলে যেও না। মনে রেখো চিরকাল।
চোখ দুটো কেন যে চিক চিক করছে। না এবার বাড়ি ফিরতে হবে আজ যে আমার জন্ম দিন সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
*********************************