সেবার আমরা ৬ জন বন্ধু পরিকল্পনা করেছিলাম সেমিস্টার ব্রেকে কোথাও ঘুড়তে যাব। জায়গা ঠিক করা নিয়েই লাগল যত বিপত্তি। কেউ সাগর দেখবে, কেউ নতুন শহর দেখবে। পরে অনেক আলোচনা করে ঠিক হল আমরা সবাই পাহাড়ে বেড়াতে যাব। এমন পাহাড়ে যাব যেখানে ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর সাথে মিশে দুটো দিন কাটানো যাবে। যেখানে কোনও নেটওয়ার্ক নেই, বিজলি বাতি নেই। বর্তমান আধুনিকতার সাথে যেখানে কোনও সংযোগ নেই। মোদ্দা কথা সম্পূর্ণ আলাদা একটা অনুভূতি চাই।
পরে সেসব পরিকল্পনা বাদ দিয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শনের সিদ্ধান্ত নিলাম। সাথে সুপ্তধারা, সহস্রধারা, খৈয়াছড়া ঝর্ণাও দেখা যাবে।
সেমিস্টার ব্রেকের শুরুতেই তাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেনে চেপে যাত্রা শুরু করলাম। গন্তব্য সীতাকুন্ড। সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর মাস। বর্ষা শেষ হয়ে ভাদ্র শুরু। প্রচন্ড গরম, তবে ইদানিং সন্ধ্যার পর পরই হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি হয়। তাই রাতে গরম কিছুটা কম থাকে। শহরে ট্রেনে উঠব জন্য স্টেশনে আমরা একে একে ৬ বন্ধু দেখা করলাম। রাত ১১.৩০ এ ট্রেন ছাড়বে। আমার একবন্ধু সেলুকাস, আমাদের জানালো এখান থেকে তাকে জিঞ্জার কিনতে হবে। আমি বুঝলাম না কি বলল। পরে কথা বলে বুঝলাম সে আদা কিনতে চাইছে। আমি বললাম রেলস্টেশন থেকে আদা কিনে নিয়ে ঘুড়তে যাওয়ার কি আছে? পরে জানতে পারলাম স্টেশনে একরকম কমলা রঙের সস্তা প্লাস্টিকের ছোট ছোট কৌটায় আদা কুচি করে বিক্রি হয়। দুই টাকা করে প্রতি কৌটা। সেলুকাস তার প্রেমিকার জন্য ১৫ কৌটা কিনে নিল। মনে মনে ভাবলাম, লোকে সস্তায় পেলে কত কিই না কেনে।
ট্রেন আর পায়খানার মধ্যে মিল আছে। কখন যে আসবে আর কখন যে আসবে না তার কোনও ঠিক নেই। আপাতত পায়খানার বেগ না চাপলেও ট্রেনের বেগ চাপছিল কিন্তু ট্রেন আধঘন্টা লেট। ট্রেন স্টেশনের প্লাটফর্মে ভিড়তেই আমরা হই হই করে ট্রেনে উঠলাম। একটু পর ট্রেন ছেড়ে দিয়ে শহর থেকে বেড়িয়ে গেল। আস্তে আস্তে ট্রেনের গতি বাড়ছে। আমাদের বাগীটা নন এসি চেয়ার কোচ। সারি সারি চেয়ারে নানান রকম লোক বসে আছে। আমার সামনের সিটে একটা লোক বসেছে তার বউ কে নিয়ে। ভদ্রমহিলা যথেষ্ট সুন্দরী। ফরসা চেহারা, bubbly bubbly গাল দুটো সারাক্ষণই ব্লাশ করছে। শরীরের গঠন বোঝা যাচ্ছে না বসে আছেন বলে। শরীর ভারীর দিকে না হলেও ঠিক ঠিক জায়গায় মাংস লেগেছে বোঝাই যায়। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ। মাথার মাঝখানে সিঁথি ফেলে চুলগুলো খোঁপা করা। বোঝা যায় বেশ ঘন চুলের মালকিন এই মহিলা। বাম কানের পাশ দিয়ে একগাছি চুল এসে ঝুলছে থুতনী অবধী। সিগারেট এর চাহিদা সৃষ্টি হলে আমি উঠে বাগীর গেট এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন খেয়াল করেছিলাম মহিলা যথেষ্ট বোল্ড, স্লীভলেস ব্লাউজ আর শাড়ি পড়ে আছেন।
দরজায় দাঁড়িয়ে আনমনে সিগারেট ফুঁকছি আর বাইরের প্রকৃতি দেখছি। সাই সাই করে আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে নাম না জানা গাছের সাড়ি। খেয়াল করে বোঝার মত সময় ও পাওয়া যাচ্ছে না। তার আগেই দূরে চলে যাচ্ছে। খোলা দরজা দিয়ে বেশ বাতাস আসছে। এক লোককে দেখলাম দরজার পা দানীতে বসে পা ঝুলিয়ে আছে ট্রেনের বাইরের দিকে। বিড়ি ফুকছে। বেশ একটা ঝকঝক…… ঝকঝক শব্দ আর লম্বা দুলুনিতে ভালই লাগছে। লোকটাকে খেয়াল করলাম ভাল করে। খেয়াল করবার মত কিছু নেই। এরা টাকার অভাবে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা লোক। ভবঘুড়ে। যে স্টেশন ভাল লাগবে নেমে যাবে। হালকা শীত শীত লাগছে। রয়্যালস এর প্যাকেট থেকে একটা বের করে ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরলাম। লাইটার দিয়ে দুই হাতের আড়াল করে আগুন ধরাতে চাইছি, ট্রেনের বাতাসের কারণে ধরছে না। বাধ্য হয়ে ঐ বুড়ো লোকটার কাছ থেকে তার বিড়িটা একটু চেয়ে নিয়ে তার বিড়ির আগুন দিয়ে আগুন ধরালাম। অর্ধেক সিগারেট টানা হতে না হতেই আমাদের পালের আরও ৩ জন যোগদান করল আমার সাথে। আড্ডা দিতে দিতে একদম চেচামেচি শুরু করে দিলাম আমরা। ভবঘুড়ের শান্তি ভঙ্গ হল কিংবা বাইরের প্রকৃতির প্রতি সে তার আগ্রহ হাড়ালো। সুতরাং সে উঠে চলে গেল। বলা বাহুল্য আমাদের আলোচনার মূল বিষয় বস্তু আমাদের সামনের সিটের ঐ বৌদি। বেশ রসালো আলোচনা চলছিল। একজনের সাথে তো বাজিই ধরা হয়ে গেল বৌদির নিতম্বের মাপ নিয়ে কল্পনা করে যে কে সঠিক। অবশ্য কে সঠিক তা মাপার সু্যোগ আমরা পাবো না। সিগারেট শেষ করে সিটে ফিরার সময় দেখলাম বৌদিটার বর মাথা পেছন দিকে কাত করে মুখ সামান্য হা করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আর পাসের সাড়ির সিট থেকে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বৌদিটাকে eyefuck করছে। মনে মনে ভাবলাম, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে।
শুরুতে অনেক হইহট্টগোল চললেও এখন ট্রেনটাতে মানুষের হাকডাক অনেক ঝিমিয়ে পড়েছে। আমার পাশে বন্ধু পোসাইডান ঘুমাচ্ছে। আমি জানালার পাশের সিটটা চাইলেও পাই নি। লাভ ই হল। আমার সিট থেকে আড়াআড়িভাবে তাকালে ঐ যৌনআকর্ষনীয় ভদ্রমহিলার লোভনীয় ঘাড় দেখা যাচ্ছে। কানে হেডফোন গুজলাম। হালকা সাউন্ডে গান শুনবো। যেন ট্রেনের গান আর কিশোর কুমারের গান একসাথে বাজে। বৌদিটার দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম, “চিরদিনই তুমি যে আমার, যুগে যুগে আমি তোমারই।“
রাতে ট্রেনে উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা ঘটে নি। শুধু একবার সবাই একসাথে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিল। আমাদের যে স্টেশনে নামতে হবে তার কয়েক স্টেশন আগে আমাদের সামনের ওই ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা নেমে যাবেন। এইটাই সুযোগ তার নিতম্বটা দেখে স্বর্গলাভ করার। দেখি আমার সব বন্ধু এমনকি ভদ্র সেলুকাসও নড়েচড়ে বসেছে ঘুম ছেড়ে। বুঝলাম ছেলেদের একটা এন্টেনা থাকে। সেই রাডারে দর্শনীয় নারী ধরা পরে। কাউকে ডেকে বলা লাগে না।
আমরা সীতাকুন্ড স্টেশনে নেমে মীরসরাই গেলাম। সেখানে একটা সস্তার হোটেল ঠিক করলাম। তখন বাজে ভোর ৫.৩০। হোটেলে চেক ইন শুরু সকাল ১১টা থেকে। চেক আউট এর শেষ সময় সকাল ১০টা। কিন্তু হোটেল বেশ খালিই। নিচতলাতে খাবারের একটা রেস্তোরা আছে। রেস্তোরার পাশের সিড়ি দিয়ে দোতলায় গিয়ে হোটেল শুরু। দোতলায় উঠতেই ছোট্ট পুরোনো কাঠের রিসিপশন। সাথে পুরোনো ফোমের চেয়ার। আমি জানি ঐ ফোম হচ্ছে সবরকমের ছাড়পোকার আড্ডাখানা।
একজন লোক বসে আছেন। পান আর গুল তার প্রতিবেলার সঙ্গি তা তার ঠোঁট আর দাঁত দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের দেখে পানখাওয়া দাঁত বের করে হাসলেন। ক্ষয়ে যাওয়া জিভ দেখে বুজলাম উনি গুল একটু বেশিই মাজেন। রিসিপশন থেকে বামে একটা চিপা করিডোর চলে গেছে। সেই করিডোরের বামপাশে ২০১, ২০২ এরকম রুম সিরিয়ালি চলে গেছে। করিডোরের শেষ মাথার রুম ২০৬। ওটা একটি ডাবল রুম। দুটি খাট আছে। ৪জন অনায়াসেই থাকা যায়। আমরা ঐ একটা রুমই বুক করলাম। বলে নিলাম আমরা ৬ জন ঐ এক রুমেই থাকব। আমাদের দুটো এক্সট্রা বালিশ লাগবে রাতে। এতে লোকটা গাইগুই করছিল। তার উদ্দেশ্য আমাদের আরেকটা রুম নেয়ায়। ৮০০টাকা রুম ভাড়া হলেও আমরা তখন আরো ২০০ টাকা বখশিশ দিতে উনি আর কিছু বললেন না, বরং টাকাটা পকেটে রেখে বললেন হোটেল বয় কে, ছটু স্যারদের রুমে ব্যাগ দিয়ে আয়।
ব্যাগ বলতে তেমন কিছু নেই আমাদের সাথে। সবার কাধের ব্যাগে অল্প জামাকাপড় আমাদের। আমরা রুমে ব্যাগ রেখেই বেরিয়ে পড়লাম ঘুড়ব বলে। তখন ৬টা বাজে। রাস্তায় লোকজন বেরিয়েছে। টং দোকানে চা চলছে।
এখানে বলে রাখা ভাল, এখন হোটেলে লোকের চাপ খুব কম। হোটেল বলতে গেলে খালিই একদম। তাই আগেই আমরা ব্যাগ রেখে দিতে পেরেছি। ঐ গুলখোর লোকটা আপত্তি জানান নি। এখন উদ্দেশ্য, চন্দ্রনাথ পাহাড়। সূর্য মাথার উপরে বেশি দাপট দেখাবার আগেই পাহাড়ে উঠে যেতে চাই।
।
।
সারাদিন বেশ বেড়িয়েছি। একজন টোটোওয়ালা ছিল ফিক্সড। উনিই বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নিয়ে গেছেন। হইহুল্লোর করে গান গেয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। হোটেলের রুমে ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা বেজে গেল। টোটোওয়ালাকে বলেছিলাম আমাদের জন্য কিছু দেশি মদের ব্যবস্থা করে দিতে। মহুয়া হলে ভাল হয়। এখানে পাহাড়ি উপজাতিরা ভাল মহুয়া বানায়। উনি বলেছেন দেখে জানাবেন। ব্যবস্থা হলে অবশ্যই দেবেন।
আমরা রুমে গিয়ে টস করতে বসলাম কে আগে স্নান করতে যাবে? কেউ ই এখন অপেক্ষা করতে রাজি না। এর মধ্যে রবার্ট বললো ওর পানু দেখতে ইচ্ছে করছে। ও এখন পানু দেখবে পরে স্নানের সময় হ্যান্ডেল মারবে। তাই ওকে বাই ডেফল্ট লাস্টে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। টসে আমি ৪র্থ নম্বরে সুযোগ পাবো নির্ধারিত হল। সিগারেট খাচ্ছি আর আড্ডা দিচ্ছি। ইতোমধ্যেই পোসাইডেন স্নান সেরে বেড়িয়েছে। লুঙ্গি পড়ে সেক্সি ড্যান্স দিচ্ছে আমাদের সামনে। এরপর খাটের উপর বসে লুঙ্গিটা নিজের কোমড়ের কাছে গুটানোর মত ছল করে ফাজলামো করছিল। হঠাৎ ভুলবশত আমাদের সবার সামনে একটা অন্ডকোষ উন্মুক্ত করে ফেললো। সবাই হড়ি দিয়ে উঠলাম। বেশ একটা আমোদ আড্ডা হচ্ছে।
তবে একটা পর্যায়ে বিরক্তি লাগা শুরু হল। সেই কখন থেকে বসে আছি স্নানের জন্য। একটা মাত্র বাথরুমের জন্য কি চাপটাই না সৃষ্টি হয়েছে। একটু পর ফোন আসল টোটোওয়ালার। মদ নিয়ে এসেছেন। বের হলাম আমি। গিয়ে দেখি যতটুকু উনি এনেছেন তাতে আমাদের একজনেরই হবে না তো রইল ৬ জন। তবুও কি আর করা। ঐ নিয়েই রুমে ফিরে এলাম। আসার সময় দেখলাম রিসিপশনের সেই লোকটার পাশে একটা মহিলা বসে আছে। চল্লিশোর্ধ্ব বয়স। কমলা রঙের ব্লাউজ এর সাথে হালকা বাসন্তিরঙা শাড়ি। এতো বাজে লাগছিল দেখতে। যেন উনি ইচ্ছে করেই নিজেকে বাজে দেখিয়ে নিজের পেশা সম্পর্কে ধারণা দিতে চাইছেন। লোকটা আমায় বলল, স্যার যা লাগে বইলেন। আমি বললাম, রাতে কিছু লাগবে না তবে সকালে লাগবে। আপনাদের কোনও রুম খালি থাকলে সেই রুমের বা আপনাদের স্টাফদের ওয়াশরুমটা ব্যবহার করতে দিতে হবে আমাদের। কারণ নাহলে এক ওয়াশরুমে সবাই যুক্ত হতে পারব না। উনি বললেন, আচ্ছা।
পেপ্সি দিয়ে নেড়েচেড়েও প্রত্যেকের ভাগে একগ্লাস করে হলো না। আমি আবার টিউনিং করে খাই না। আমার raw ভাল লাগে সবসময়। তা সেক্স হোক কিংবা মদ। হাফ গ্লাসের চেয়ে একটু বেশি পড়ল ভাগে। সিগারেট দিয়ে তাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে গলায় অল্প অল্প করে ঢালতে লাগলাম। ভাল লাগে নি। ঘোড় ঘোড় ভাবটাও আসে নি। বিরক্ত লাগছিল। সারাদিন এই ছুটোছুটি। কাল রাতের জার্নি। না ঘুমানো। আড্ডা এরপর আর বেশিক্ষণ জমলো না। আমি আর নারুটো ফ্লোরে শোবো। বাকিরা দুজন দুজন করে ভাগাভাগি করে দুই বেড এ। শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে দেখি সেলুকাস চেচাচ্ছে উঠার জন্য। কি হয়েছে? জানা গেল সেলুকাস আর গডফাদার একসাথে শুয়েছিল। এখন নাকি গডফাদারের পেটে গ্যাস হয়েছে। গন্ধে সেলুকাসের ঘুম ভেঙে গেছে। তাই সে সবার ঘুম ভাঙাচ্ছে।
একটা হ্যাংওভারের মাথাব্যাথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্য প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু সেরকম কিছুই লাগছে না। মাথা একদম খালি খালি লাগছে। বাল, অতটুকু এলকোহল আমি থুক ফেললে ওতেই থাকে। ওই অতোটুকু এলকোহলে আমার কিছু হয় নাকি? দেখলাম গডফাদার ওয়াশরুমে গেছেন। বুঝলাম বেচারার পেট ক্লিয়ার করতে দেরি হবে। আমার চাপ আসছিল তাই উঠে কাউকে কিছু না বলে ব্রাশ একটু পেস্ট ভরিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে। কাল রাতের ব্যবস্থাটা কাজে লাগাই। পরে ওদের বলব। গিয়ে রিসিপশনে দেখি ঐ লোকটা নেই। অন্য একটা ছোকড়া। আমি প্রথম এখানে এসে সেই গুলখোড় লোকটাকে আজ দেখি নি। যাই হোক। এখন যে আছে সে বেশ একটা ছোকড়া গোছের।
তাকে বললাম, “ছোটু, একটা রুমের ওয়াশরুম ব্যবহার করব। ঐ লোককে বলা আছে আমার। একটু ব্যবস্থা করে দে।“ সে বলল, “আসেন স্যার”
গেলাম তার পেছন পেছন। ২০২ নম্বর ঘরে একটা বাংলা তালা ঝুলছে। ও রুমের তালা খুলে বাতি জ্বালালো। রুমের দরজার বরাবর অপর পাশে ওয়াশরুমের দরজা। রুমের বাতি জ্বালিয়ে দিল ছেলেটা। আমি বরাবর ওয়াশরুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম, রুমে একটা খাট, একটা ফোন চার্জে দেওয়া। খাটে একটা শার্ট মেলে রাখা, ফ্যান চলছে যেন শার্টটা শুখানোর জন্য। সুইচ টিপে ওয়াশরুমের বাতি জ্বালিয়ে ভেতরে গেলাম। দরজা বন্ধ করবার সময় বাইরের দিকে তাকাতেই দেখি ছোটু আমাকে বলছে, “তালাটা ঝুলায় রাখলাম, বাইর হওার সময় লক মাইরা দিয়েন।“ আমি বললামা আচ্ছা। উনি চলে গেলেন, আমিও ওয়াশরুমের গেটটা লাগাতে লাগাতে ভাবলাম, রুমের গেট যে খোলা রইল। ফোন দেখলাম একটা চার্জে। যদি চুরি হয়? পরে ভাবলাম ওরাই ভাল জানে।
দাঁত মাজলাম। এরপর পেট ক্লিয়ার করলাম। ভালমত মুখ হাত ধুলাম। এরপর ওয়াশরুমের দরজা খুলেই একটা খটকা লাগলো। গেটটা ভেজানো। রুমের লাইট নেভানো। অর্থাৎ কেউ এসেছিল এরপর। প্রথমেই মাথায় এলো, আমায় আবার বাইরে থেকে আটকে রেখে চলে গেলো না তো? গিয়ে গেটটা ধাক্কা দিয়ে গেলাম। অন্ধকারে বুঝলাম রুমের গেট আটকানো। তবে ভেতর থেকে ছিটকিনি আটকানো। ভিতর থেকে আটকানো? তাহলে কি এখন ভিতরে কেউ আছে? দ্রুত বাতি জ্বালালাম। কারণ আমাকে আবার চোর ভেবে বসতে পারে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম বাতি জালিয়ে। রুমে কেউ নেই। সব একদম আগের মত। শার্ট, চার্জে দেওয়া ফোন, সব। ছোট একটা রুম, খাটের নিচে দেখলাম খালি। রুমে কেউ নেই। রুমে লুকানোর কোনও জায়গাও নেই। ভাল মত তাকিয়ে দেখি রুমের সবগুলো জানালা ভেতর থেকে বন্ধ। সেটা আগেও থাকতে পারে। কিন্তু বেশি অবাক হলাম রুমের দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে কে আটকালো? উপরের ছিটকিনি আটকে আবার সাইডে গুজে দিয়েছে ছিটকিনির হাতলটা। পরিষ্কার মনে আছে আমার। আমি টয়লেটের ভেতর দাঁড়ানো। ছটু ঘরের বাইরে দাঁড়ানো। রুমের লাইট জ্বলছে। ছটু চলে গেল। দরজা হা করে আছে। আমি গেট লাগালাম। রুমের দরজা তখনও হা।
যদি ধরেই নেই রুমের লাইট কেউ এসে অফ করে চলে গেছে তাহলে সে ঘরের ভেতর থেকে ছিটকিনি আটকালো কি করে? যদি ছিটকিনি কেউ আটকায় ই, তাহলে তো তার ভেতরে থাকার কথা কিন্তু সে তো রুমেও নেই। তাহলে সে গেল কোথায়? মাথাটা এবার পাগল পাগল লাগা শুরু হল।
নিজের হাতে ছিটকিনি খুলে বের হলাম রুম থেকে। রিসিপশনে গিয়ে দেখি সেই লোকটা ফিরে এসেছেন। আমি বললাম, “ছটু কই?” ছটু এলো।
ওকে বললাম, “রুমের ছিটকিনি আটকালি কি করে?”
“না না, তালা বাইরে ঝুলানো”
“আরে তা বুঝলাম কিন্তু ছিটকিনি ভেতর থেকে আটকায় কি করে?”
“উপরেই ছিটকিনি আছে।“
“সে তো বুঝলাম কিন্তু আমি তো আটকাই নি। ছিটকিনি ভেতর থেকে আটকানো ছিলো, এটা কি করে হল?”
“তালা মারেন নাই? আচ্ছা আমি মাইরা দিমু নে”
বালের জ্বালা। হয় আমি হিব্রু ভাষা বলি নাইলে মালটা কানে শুনে না। কি সব বলছে। রুমে গেলাম। গায়ের থেকে গেঞ্জিটা খুলে বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম কিছু না বলে। দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছে কিছু একটা ঘটেছে। ধোঁয়ার একটা কুন্ডলী ছেড়ে ওদের সব ঘটনা খুলে বললাম। ওরা এক সেকেন্ড চুপ থাকলো। এরপর হো হো করে হেসে উঠলো। রবার্ট আমায় বলল, “কাকা মনে হয় কোনও সেক্সি ভুতনী ছিল। তোকে দেখে হর্নি হয়ে গেট আটকে দিয়েছিল। তোকে নিয়ে মস্তি করতে চাইছিল।“ সবাই আরও সুড়সুড়ি পেয়ে হেসে উঠল। আমিও হাসিতে যোগ দিলাম ওদের সাথে।
মনে মনে আমি জানি, কিছু একটা গড়মিল ছিলই সেখানে।
আমি এখনও সব দৃশ্য একদম চোখের সামনে দেখতে পাই। আমি সেদিন মাতাল ও ছিলাম না। ঘুমের ঘোড়েও ছিলাম না। আমি জানি আমি কি দেখেছি। আমি বলছি না এতে অশরীরী কোনও সংযোগ আছেই। আমি শুধু বলছি ঘটনাটা আসলেই ঘটেছে কিন্তু কিভাবে ঘটেছে এর কোনও জবাব আমার জানা নেই।