MOHIT95
Newbie
পর্ব চার :
পিঠে ব্যাগটা ঝুলিয়ে রেনকোটটায় গায়ে দিতে দিতেই ছুটলো, সাইকেলটার ওপরে বসে তখন যেন মাথায় মাইকেল শ্যুমাখার ভর করেছে। মিনিট দশেক পর যখন ও রেনকোটটা বাইরে ঝুলিয়ে সলিলদের ঘরে ঢুকলো, স্যার তখন এসে গেছেন। তবে ছেলেরা কেউই আসেনি, দীপন, অর্ক আর অনিন্দ্য ছাড়া। স্যার ভূগোল বইয়ের থেকে নজর সরিয়ে অনিন্দ্যর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখনও তো মাধ্যমিকের কয়েকদিন বাকি আছে, তোরা তো ভালোই করছিস শুনতে পাচ্ছি, এমনি কোনো অসুবিধে নেই তো?” অনিন্দ্যকে একটু বিভ্রান্ত লাগলো, স্যারের কথা কোনদিকে এগোবে, সেটাই হয়তো আন্দাজ করতে পারছিল না। স্যার উত্তরের আশা করেছিলেন বোধহয়, পেলেন না। কিন্তু তাতেও স্যার বিন্দুমাত্র না দমে সোজা আসল কথাতে এলেন, “আসলে পরের মাসে আমাদের শিক্ষক সংগঠনের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এবার দায়িত্বটা আমারা নিলাম, আমাদের ছেলেরাও যে কত ভালোভাবে দায়িত্ব নিয়ে অনুষ্ঠান সংগঠন করতে পারে, সেটাও তো অন্য স্কুলের স্যার ম্যাডামদের দেখা উচিৎ, তাই না? আমাদের ছেলেরা যে পড়াশোনাতেই শুধু নয়, সবদিকেই এক নম্বর, সেটাই বোঝানোর সুযোগ।” এতক্ষণে গোটা ব্যাপারটা সবার মাথায় ঢুকে গেছে। পরীক্ষার ঠিক আগে, যখন কোনও স্কুল দায়িত্ব নিতে চায়নি, বয়েজের স্যাররা এতো বড় একটা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন ছেলেদের কিছু না জানিয়েই, অথচ ছেলেদের ছাড়া যে এসব নামানো অসম্ভব, সেটাও বিলক্ষণ জানেন। ক্লাস ফাইভে একবার বয়েজ স্কুল থেকে গান গাইতে এই প্রতিযোগিতাটায় গিয়েছিলো অমিতাভ, তাই জানে, প্রচুর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা আসেন। বুঝতে পারলো, পরের মাসে অন্তত সাতদিন মায়ের ভোগে যাবেই, সুতরাং যত দূরে দূরে থাকা যায়, ততই ভালো। অনিন্দ্যকে উদ্দেশ্য করে এগুলো বলারও কারণ আছে, অনিন্দ্য ওদের অলিখিত নেতা। পড়াশোনাতে মাঝামাঝি, কিন্তু যেকোনো কাজেই ওর ডেডিকেশন অসম্ভব। অমিতাভর মা বলেন, অনিন্দ্য হল ব্যাচে “শরৎচন্দ্রের মেজদা, যে পড়াশোনা ছাড়া সবকিছুতেই সবার আগে হাজির”। যদিও অনিন্দ্য পড়াশোনাতেও খারাপ নয়, কিন্তু ওর অন্যান্য কাজকর্মের পাশে পড়ার ব্যাপারটা নিতান্তই গৌণ । অমিতাভ ভেবেছিলো, অনিন্দ্য বলে দেবে যে এবার যেন জুনিয়র ভাইদের দিয়ে স্যাররা করিয়ে নেন, ওদের বাদ রাখেন। কিন্তু স্বভাব যাবে কোথায়, অনিন্দ্য বলে দিলো, “কোনও চিন্তা করবেন না স্যার, আমরা যতক্ষণ আছি, সব উতরে যাবে। এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা তো বাঁ-হাতের কাজ। সবার জন্য ভলেন্টিয়ার ব্যাজ বানিয়ে দেবো, নামের একটা লিস্ট করে সবাইকে কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করে নেব, তারপর প্রত্যেক গ্রুপকে দু-একটা করে কাজ দিয়ে দেবো। তাহলে কাজগুলো সময়ের মধ্যে নেমে যাবে। আর বাইরে থেকে যারা আসবেন, সেই সব টিচারদের জন্য টিচার্স রুমটা আর গার্জিয়ানদের জন্য ক্লাস টেন বি-এর বড় ঘর টা একটু ঠিকঠাক করে নিলেই হবে। একটা সপ্তাহ দেবেন, সব গুছিয়ে নেব আগে থেকে।” স্যারকে দেখে মনে হচ্ছিলো, মাধ্যমিকের হলে বসে সব প্রশ্ন কমন পেয়ে গেছেন, এতটা খুশি ওরা অন্তত স্যারকে আগে দেখিনি।
(ক্রমশঃ)
পিঠে ব্যাগটা ঝুলিয়ে রেনকোটটায় গায়ে দিতে দিতেই ছুটলো, সাইকেলটার ওপরে বসে তখন যেন মাথায় মাইকেল শ্যুমাখার ভর করেছে। মিনিট দশেক পর যখন ও রেনকোটটা বাইরে ঝুলিয়ে সলিলদের ঘরে ঢুকলো, স্যার তখন এসে গেছেন। তবে ছেলেরা কেউই আসেনি, দীপন, অর্ক আর অনিন্দ্য ছাড়া। স্যার ভূগোল বইয়ের থেকে নজর সরিয়ে অনিন্দ্যর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখনও তো মাধ্যমিকের কয়েকদিন বাকি আছে, তোরা তো ভালোই করছিস শুনতে পাচ্ছি, এমনি কোনো অসুবিধে নেই তো?” অনিন্দ্যকে একটু বিভ্রান্ত লাগলো, স্যারের কথা কোনদিকে এগোবে, সেটাই হয়তো আন্দাজ করতে পারছিল না। স্যার উত্তরের আশা করেছিলেন বোধহয়, পেলেন না। কিন্তু তাতেও স্যার বিন্দুমাত্র না দমে সোজা আসল কথাতে এলেন, “আসলে পরের মাসে আমাদের শিক্ষক সংগঠনের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এবার দায়িত্বটা আমারা নিলাম, আমাদের ছেলেরাও যে কত ভালোভাবে দায়িত্ব নিয়ে অনুষ্ঠান সংগঠন করতে পারে, সেটাও তো অন্য স্কুলের স্যার ম্যাডামদের দেখা উচিৎ, তাই না? আমাদের ছেলেরা যে পড়াশোনাতেই শুধু নয়, সবদিকেই এক নম্বর, সেটাই বোঝানোর সুযোগ।” এতক্ষণে গোটা ব্যাপারটা সবার মাথায় ঢুকে গেছে। পরীক্ষার ঠিক আগে, যখন কোনও স্কুল দায়িত্ব নিতে চায়নি, বয়েজের স্যাররা এতো বড় একটা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন ছেলেদের কিছু না জানিয়েই, অথচ ছেলেদের ছাড়া যে এসব নামানো অসম্ভব, সেটাও বিলক্ষণ জানেন। ক্লাস ফাইভে একবার বয়েজ স্কুল থেকে গান গাইতে এই প্রতিযোগিতাটায় গিয়েছিলো অমিতাভ, তাই জানে, প্রচুর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা আসেন। বুঝতে পারলো, পরের মাসে অন্তত সাতদিন মায়ের ভোগে যাবেই, সুতরাং যত দূরে দূরে থাকা যায়, ততই ভালো। অনিন্দ্যকে উদ্দেশ্য করে এগুলো বলারও কারণ আছে, অনিন্দ্য ওদের অলিখিত নেতা। পড়াশোনাতে মাঝামাঝি, কিন্তু যেকোনো কাজেই ওর ডেডিকেশন অসম্ভব। অমিতাভর মা বলেন, অনিন্দ্য হল ব্যাচে “শরৎচন্দ্রের মেজদা, যে পড়াশোনা ছাড়া সবকিছুতেই সবার আগে হাজির”। যদিও অনিন্দ্য পড়াশোনাতেও খারাপ নয়, কিন্তু ওর অন্যান্য কাজকর্মের পাশে পড়ার ব্যাপারটা নিতান্তই গৌণ । অমিতাভ ভেবেছিলো, অনিন্দ্য বলে দেবে যে এবার যেন জুনিয়র ভাইদের দিয়ে স্যাররা করিয়ে নেন, ওদের বাদ রাখেন। কিন্তু স্বভাব যাবে কোথায়, অনিন্দ্য বলে দিলো, “কোনও চিন্তা করবেন না স্যার, আমরা যতক্ষণ আছি, সব উতরে যাবে। এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা তো বাঁ-হাতের কাজ। সবার জন্য ভলেন্টিয়ার ব্যাজ বানিয়ে দেবো, নামের একটা লিস্ট করে সবাইকে কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করে নেব, তারপর প্রত্যেক গ্রুপকে দু-একটা করে কাজ দিয়ে দেবো। তাহলে কাজগুলো সময়ের মধ্যে নেমে যাবে। আর বাইরে থেকে যারা আসবেন, সেই সব টিচারদের জন্য টিচার্স রুমটা আর গার্জিয়ানদের জন্য ক্লাস টেন বি-এর বড় ঘর টা একটু ঠিকঠাক করে নিলেই হবে। একটা সপ্তাহ দেবেন, সব গুছিয়ে নেব আগে থেকে।” স্যারকে দেখে মনে হচ্ছিলো, মাধ্যমিকের হলে বসে সব প্রশ্ন কমন পেয়ে গেছেন, এতটা খুশি ওরা অন্তত স্যারকে আগে দেখিনি।
(ক্রমশঃ)