MOHIT95
Newbie
পর্ব তিনঃ
একটা বিশাল বড় স্কুল, তার আরও বিশাল বড় একটা মাঠ। ছেলেটা এতদিন যে স্কুলটায় পড়তো, তার কোনও মাঠ ছিল না। মায়ের হাত ধরে ভিতরে ঢুকেই তাই ভয় পেয়ে গেলো ছেলেটা। বাইরে থেকে অনেকবার স্কুলটাকে দেখেছে ও, এতদিন “বাবার স্কুল” বলে জানতো। আজ মায়ের সঙ্গে নিজে এসেছে পরীক্ষা দিতে। এর আগে আরও দুটো স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছে ও, কোনোটাই খুব একটা খারাপ হয়নি। কিন্তু বাবা-মা দুজনেই বলেছে, আসল পরীক্ষা আজকেই, এটাই নাকি শিলিগুড়ির সবচেয়ে বড় স্কুল। আজ এই মাঠটার সাইজ দেখে অন্তত ‘বড়’ ব্যাপারটা দিব্বি অনুভব করছে ও। দেওয়ালে লাগানো লিস্ট থেকে রোল নম্বর পড়ে মা ঠিক করে ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিয়ে গেলেন। ছেলেটা চারদিকে দেখতে লাগলো। ওদের সবুজ শিশুভবন স্কুলটায় এতো ছেলে কোনোদিন দেখেনি ও। ওর পাশেই যে ছেলেটা বসেছে, তার মা তাকে বারবার মৌলিক সংখ্যা আর যৌগিক সংখ্যা পড়াচ্ছেন। ছেলেটা বুকে একটু বল পেলো, এই জিনিসটা ও বেশ ভালোই জানে। কিছুক্ষণ পর দুজন স্যার চলে এলেন, মিনিটখানেকের মধ্যে ঘর নিস্তব্ধ, শুধু স্যারদের গমগমে আওয়াজে ঘর ভরে উঠছিল। এবার একটু ভয় হচ্ছিলো, প্রাইমারি স্কুলে দিদিমনিরাই বেশী ছিলেন, এখানে এখনও পর্যন্ত কোনও দিদিমনির দেখা পায়নি ও। যাই হোক, প্রশ্নপত্র এসে গেলো। এক ঝলক চোখ বুলিয়েই ও বুঝল, এখানে খেলাটা বেশ কঠিন। শিক্ষামন্ত্রীর নাম, সংক্রান্তি কাকে বলে, বেশ কিছু সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন। আর একটা প্রশ্ন দেওয়া আছে, যেটা কিছুতেই ওর মাথায় ঢুকছে না। এটা একটা অঙ্ক, মুরগি আর ছাগলের পা নিয়ে। মুরগি আর ছাগলের মাংস ছাড়াও যে কোনোকিছু এত ইম্পরট্যান্ট হতে পারে, ভাবতেই পারেনি ছেলেটা। কিভাবে উত্তর লিখবে, কিছুই বুঝতে পারছিল না ও। অনেক অঙ্ক প্র্যাকটিস করে এসেছিলো, কিন্তু এই অঙ্কটা যে কিভাবে শুরু করতে হবে, সেটাই ওর জানা নেই। মায়ের আদেশ মতো কপালে দু-হাত ঠেকিয়ে খাতায় নিজের নাম লিখল ও, “অমিতাভ বিশ্বাস”।
শুয়ে শুয়ে পুরনো কথা ভাবছিল অমিতাভ, ক্লাস ফাইভের আডমিশন টেস্টে আসা সেই মুরগি আর ছাগলের অঙ্কটা আজও মনে পড়ে ওর। ওই অঙ্কটা সেদিন পারেনি ও। যে ছেলেটা চিরকাল প্রাইমারি স্কুলে ফার্স্ট হতো, অঙ্কতে ভালো রেসাল্ট করতো, শিলিগুড়ি বয়েজের মুরগি আর ছাগলের পা একসাথে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। যাই হোক, এখন মাধ্যমিকের তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে, এতগুলো বছর যে কি তাড়াতাড়ি কেটে গেলো, বুঝতেও পারেনি। আজ যারা সবচেয়ে কাছের বন্ধু, তাদের সবার সাথেই এই স্কুলে এসেই আলাপ অমিতাভর। এখন একদিন তাদের সাথে দেখা না হলেই মন খারাপ হয়ে যায়। আজ যদিও অনেকের সাথে দেখা হবে, ভূগোল টিউশনে আসবে সবাই। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল অমিতাভ, মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল আজ হয়নি, তাই বাড়ি তাড়াতাড়িই ফিরে এসে দুপুরে গরম গরম খিচুরি আর ডিমভাজা খেয়ে পুরনো ভৌতবিজ্ঞানের বই নিয়ে বসেছিল অমিতাভ। ক্লাস সেভেনেও বৃষ্টি মানেই কাগজের নৌকো ভাসানোর একটা নেশা ছিল। এখন পড়াশোনার চাপে নিজেরই ভেসে যাওয়ার জোগাড়! কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, টের পায়নি। ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে, ঘড়িতে তখন ছ’টা বাজতে দশ মিনিট বাকি।
(ক্রমশঃ)
একটা বিশাল বড় স্কুল, তার আরও বিশাল বড় একটা মাঠ। ছেলেটা এতদিন যে স্কুলটায় পড়তো, তার কোনও মাঠ ছিল না। মায়ের হাত ধরে ভিতরে ঢুকেই তাই ভয় পেয়ে গেলো ছেলেটা। বাইরে থেকে অনেকবার স্কুলটাকে দেখেছে ও, এতদিন “বাবার স্কুল” বলে জানতো। আজ মায়ের সঙ্গে নিজে এসেছে পরীক্ষা দিতে। এর আগে আরও দুটো স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছে ও, কোনোটাই খুব একটা খারাপ হয়নি। কিন্তু বাবা-মা দুজনেই বলেছে, আসল পরীক্ষা আজকেই, এটাই নাকি শিলিগুড়ির সবচেয়ে বড় স্কুল। আজ এই মাঠটার সাইজ দেখে অন্তত ‘বড়’ ব্যাপারটা দিব্বি অনুভব করছে ও। দেওয়ালে লাগানো লিস্ট থেকে রোল নম্বর পড়ে মা ঠিক করে ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিয়ে গেলেন। ছেলেটা চারদিকে দেখতে লাগলো। ওদের সবুজ শিশুভবন স্কুলটায় এতো ছেলে কোনোদিন দেখেনি ও। ওর পাশেই যে ছেলেটা বসেছে, তার মা তাকে বারবার মৌলিক সংখ্যা আর যৌগিক সংখ্যা পড়াচ্ছেন। ছেলেটা বুকে একটু বল পেলো, এই জিনিসটা ও বেশ ভালোই জানে। কিছুক্ষণ পর দুজন স্যার চলে এলেন, মিনিটখানেকের মধ্যে ঘর নিস্তব্ধ, শুধু স্যারদের গমগমে আওয়াজে ঘর ভরে উঠছিল। এবার একটু ভয় হচ্ছিলো, প্রাইমারি স্কুলে দিদিমনিরাই বেশী ছিলেন, এখানে এখনও পর্যন্ত কোনও দিদিমনির দেখা পায়নি ও। যাই হোক, প্রশ্নপত্র এসে গেলো। এক ঝলক চোখ বুলিয়েই ও বুঝল, এখানে খেলাটা বেশ কঠিন। শিক্ষামন্ত্রীর নাম, সংক্রান্তি কাকে বলে, বেশ কিছু সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন। আর একটা প্রশ্ন দেওয়া আছে, যেটা কিছুতেই ওর মাথায় ঢুকছে না। এটা একটা অঙ্ক, মুরগি আর ছাগলের পা নিয়ে। মুরগি আর ছাগলের মাংস ছাড়াও যে কোনোকিছু এত ইম্পরট্যান্ট হতে পারে, ভাবতেই পারেনি ছেলেটা। কিভাবে উত্তর লিখবে, কিছুই বুঝতে পারছিল না ও। অনেক অঙ্ক প্র্যাকটিস করে এসেছিলো, কিন্তু এই অঙ্কটা যে কিভাবে শুরু করতে হবে, সেটাই ওর জানা নেই। মায়ের আদেশ মতো কপালে দু-হাত ঠেকিয়ে খাতায় নিজের নাম লিখল ও, “অমিতাভ বিশ্বাস”।
শুয়ে শুয়ে পুরনো কথা ভাবছিল অমিতাভ, ক্লাস ফাইভের আডমিশন টেস্টে আসা সেই মুরগি আর ছাগলের অঙ্কটা আজও মনে পড়ে ওর। ওই অঙ্কটা সেদিন পারেনি ও। যে ছেলেটা চিরকাল প্রাইমারি স্কুলে ফার্স্ট হতো, অঙ্কতে ভালো রেসাল্ট করতো, শিলিগুড়ি বয়েজের মুরগি আর ছাগলের পা একসাথে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। যাই হোক, এখন মাধ্যমিকের তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে, এতগুলো বছর যে কি তাড়াতাড়ি কেটে গেলো, বুঝতেও পারেনি। আজ যারা সবচেয়ে কাছের বন্ধু, তাদের সবার সাথেই এই স্কুলে এসেই আলাপ অমিতাভর। এখন একদিন তাদের সাথে দেখা না হলেই মন খারাপ হয়ে যায়। আজ যদিও অনেকের সাথে দেখা হবে, ভূগোল টিউশনে আসবে সবাই। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল অমিতাভ, মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল আজ হয়নি, তাই বাড়ি তাড়াতাড়িই ফিরে এসে দুপুরে গরম গরম খিচুরি আর ডিমভাজা খেয়ে পুরনো ভৌতবিজ্ঞানের বই নিয়ে বসেছিল অমিতাভ। ক্লাস সেভেনেও বৃষ্টি মানেই কাগজের নৌকো ভাসানোর একটা নেশা ছিল। এখন পড়াশোনার চাপে নিজেরই ভেসে যাওয়ার জোগাড়! কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, টের পায়নি। ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে, ঘড়িতে তখন ছ’টা বাজতে দশ মিনিট বাকি।
(ক্রমশঃ)