MOHIT95
Newbie
পর্ব দুই
রেসাল্ট কোনোদিন খুব একটা খারাপ হতো না, তাই মা চাইতেন আমি ডাক্তার হই। গরমের দুপুরে টিফিন ব্রেকের ফুটবল শেষ করে এসে বয়েজ স্কুলের ঢিমে তালে ঘুরতে থাকা অলস পাখাগুলোর নিচে সবাই প্রায় জোর করেই ব্ল্যাকবোর্ডে মন বসাতো, সুখেনবাবু পড়াতেন পৃথিবীর নানান সমুদ্রস্রোত। ভুগোল খুব প্রিয় ছিল আমার, কিন্তু মার্কস বেশী পেতাম না।
মনে আছে, লোডশেডিং এর রাত, মোমবাতির আলোতে শেষবারের মত চোখ বুলোচ্ছিলাম মেকানিক্স-এ, দুদিন পরেই আই.আই.টি-র এন্ট্রান্স পরীক্ষা। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে সলিল বলল, “ভাই শিগগিরি চল, অমিত-এর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে”। বাবা বলেছিল, চলে যা সলিল এর সাথে, দেখে আয়। দেখেছিলাম, পরেরদিন বয়েজ স্কুলের মাঠে আনা হয়েছিল অমিতাভকে। কে একটা বলল, “বর্ণাকে কিন্তু জানানো হয়নি, কালকের পরীক্ষাটার পর হয়ত জানাবে। ৩দিন পর বর্ণাকে দেখেছিলাম, চুপচাপ বসেছিল ফটোটার দিকে তাকিয়ে। আমাদের ব্যাচের প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল কোনও এক অজানা টাটা সুমো। বর্ণা কি এখনও অমিতাভকে খুঁজে পায়, তথ্যকেন্দ্রর পেছন দিকের গলিটায়? বর্ণা কি এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছে বয়েজ স্কুলের থার্ড-বয়ের মুক্তাক্ষর হাতের লেখার চিঠিগুলো?
অমিতাভ আমার পাশে বসে বর্ণাকে চিঠি লিখত, আমি তখন ব্যস্ত থাকতাম কোঅরডিনেট জ্যামিতি নিয়ে। সলিল বলতো, “অমিতাভর আছে বর্ণা, আর তোর আছে টেস্ট পেপার”। আমি বলতে পারতাম না যে ভাওয়াল বাবুর অঙ্ক ব্যাচে সব ঠিকঠাক করে নিয়ে যাওয়ার অন্য আরও একটা, মানে আরও একজন কারণ ছিল। যে মাঝেমাঝে আমার খাতাটা নিয়ে অঙ্ক টুকত আর বলত,”ইস, ভালো ছেলের কি বাজে হাতের লেখা, আমি টিচার হলে সব কেটে দিতাম”। সে যতদিনে টিচার হয়েছে, আমি অনেক দূরে চলে গেছি, আমার খাতা আর তাকে দিয়ে কাটাতে পারিনি।
ষষ্ঠী স্যার বলতেন, “তোরা তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবি, তোরা সাহিত্যের আর কি বুঝবি!” স্যারকে বলতে পারতাম না, আমারও কবিতা লিখতে ইচ্ছে করতো, যেভাবে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে অমিতাভ আর দীপন লিখত। শেষ টিউশনের দিন অমিতাভ লিখেছিল,
“আমার কবিতা, কলম, গান,
আমার আলগা অভিমান,
তোমার বুকে পুড়িয়ে দিও,
যেদিন আমি চাতক হবো, বৃষ্টি এনে জুড়িয়ে দিও”
আমার হাত থেকে এই লেখা আসতো না কোনোদিন, আজও আসেনা। শুধু অমিতাভ চলে যাওয়ার পর, বোম্বে আই.আই.টি তে যাওয়ার আগে ওর বাড়ি গিয়ে কাকুর কাছ থেকে ওর কবিতার খাতাটা নিয়ে এসেছিলাম, যেটায় ও কবিতা লিখে ষষ্ঠী বাবুকে দেখাতো। তার কয়েকটা হয়তো বর্ণার কাছেও যেত, কে জানে!
(ক্রমশঃ)
রেসাল্ট কোনোদিন খুব একটা খারাপ হতো না, তাই মা চাইতেন আমি ডাক্তার হই। গরমের দুপুরে টিফিন ব্রেকের ফুটবল শেষ করে এসে বয়েজ স্কুলের ঢিমে তালে ঘুরতে থাকা অলস পাখাগুলোর নিচে সবাই প্রায় জোর করেই ব্ল্যাকবোর্ডে মন বসাতো, সুখেনবাবু পড়াতেন পৃথিবীর নানান সমুদ্রস্রোত। ভুগোল খুব প্রিয় ছিল আমার, কিন্তু মার্কস বেশী পেতাম না।
মনে আছে, লোডশেডিং এর রাত, মোমবাতির আলোতে শেষবারের মত চোখ বুলোচ্ছিলাম মেকানিক্স-এ, দুদিন পরেই আই.আই.টি-র এন্ট্রান্স পরীক্ষা। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে সলিল বলল, “ভাই শিগগিরি চল, অমিত-এর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে”। বাবা বলেছিল, চলে যা সলিল এর সাথে, দেখে আয়। দেখেছিলাম, পরেরদিন বয়েজ স্কুলের মাঠে আনা হয়েছিল অমিতাভকে। কে একটা বলল, “বর্ণাকে কিন্তু জানানো হয়নি, কালকের পরীক্ষাটার পর হয়ত জানাবে। ৩দিন পর বর্ণাকে দেখেছিলাম, চুপচাপ বসেছিল ফটোটার দিকে তাকিয়ে। আমাদের ব্যাচের প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল কোনও এক অজানা টাটা সুমো। বর্ণা কি এখনও অমিতাভকে খুঁজে পায়, তথ্যকেন্দ্রর পেছন দিকের গলিটায়? বর্ণা কি এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছে বয়েজ স্কুলের থার্ড-বয়ের মুক্তাক্ষর হাতের লেখার চিঠিগুলো?
অমিতাভ আমার পাশে বসে বর্ণাকে চিঠি লিখত, আমি তখন ব্যস্ত থাকতাম কোঅরডিনেট জ্যামিতি নিয়ে। সলিল বলতো, “অমিতাভর আছে বর্ণা, আর তোর আছে টেস্ট পেপার”। আমি বলতে পারতাম না যে ভাওয়াল বাবুর অঙ্ক ব্যাচে সব ঠিকঠাক করে নিয়ে যাওয়ার অন্য আরও একটা, মানে আরও একজন কারণ ছিল। যে মাঝেমাঝে আমার খাতাটা নিয়ে অঙ্ক টুকত আর বলত,”ইস, ভালো ছেলের কি বাজে হাতের লেখা, আমি টিচার হলে সব কেটে দিতাম”। সে যতদিনে টিচার হয়েছে, আমি অনেক দূরে চলে গেছি, আমার খাতা আর তাকে দিয়ে কাটাতে পারিনি।
ষষ্ঠী স্যার বলতেন, “তোরা তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবি, তোরা সাহিত্যের আর কি বুঝবি!” স্যারকে বলতে পারতাম না, আমারও কবিতা লিখতে ইচ্ছে করতো, যেভাবে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে অমিতাভ আর দীপন লিখত। শেষ টিউশনের দিন অমিতাভ লিখেছিল,
“আমার কবিতা, কলম, গান,
আমার আলগা অভিমান,
তোমার বুকে পুড়িয়ে দিও,
যেদিন আমি চাতক হবো, বৃষ্টি এনে জুড়িয়ে দিও”
আমার হাত থেকে এই লেখা আসতো না কোনোদিন, আজও আসেনা। শুধু অমিতাভ চলে যাওয়ার পর, বোম্বে আই.আই.টি তে যাওয়ার আগে ওর বাড়ি গিয়ে কাকুর কাছ থেকে ওর কবিতার খাতাটা নিয়ে এসেছিলাম, যেটায় ও কবিতা লিখে ষষ্ঠী বাবুকে দেখাতো। তার কয়েকটা হয়তো বর্ণার কাছেও যেত, কে জানে!
(ক্রমশঃ)