MOHIT95
Newbie
...একটা ইস্কুলবেলা...
পর্ব একঃ
রাত তখন সাড়ে আটটা, শিলিগুড়ির সেবক রোডে দিনের ভিড় কমে গেছে অনেকটা। গাড়ি চলাচল কমেছে, ঝাপ পড়ছে দোকানপাটের। রাস্তার ডানদিক দিয়ে পিঠে একটা ব্যাগ নিয়ে একা হাঁটছিল একটা ছেলে। এই অঝোর বৃষ্টির রাতে তার সঙ্গী হয়নি কোনও ছাতা। ভেজা শরীরটা ক্রমাগত এগিয়ে আসছিল মূল শহরের দিকে। হেরে যাওয়াটা যেন আজকাল অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। শহরের বৃষ্টিটা না থাকলে কোনদিন এই শহরটা থেকে ছুটে পালিয়ে যেত ছেলেটা, হয়ত বরফগলা নদীর ধারে, কিংবা সোনাঝুরির জঙ্গলে, মেঘালয়ের না হলেও সিকিমের কোনও দুর্গম পাহাড়ে। ঝাউ গাছের সাথে, মেঘেদের সাথে সময় কাটিয়ে মিথ্যে কথার এই শহরটা থেকে কয়েকদিনের বিচ্ছেদ হয়ত এনে দিতে পারে বাঁচার রসদ। উচ্চমাধ্যমিকের অনেক আগেই অনুভব করে ফেলেছিল, সায়েন্স নেওয়া ভুল হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের ফিজিক্স আর অঙ্ক প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর বুঝে গিয়েছিল, সায়েন্সের সাথে চিরবিচ্ছেদ আসন্ন। মাধ্যমিকের পর যে মোহময়তা ওকে আর ওর মতো অনেককেই দেখিয়েছিল বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন, উচ্চমাধ্যমিক এক লহমায় তাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। দুদিন বাদে জয়েন্ট এন্ট্রান্স, শেষ সুযোগ, কিন্তু ও যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। বইগুলো পর্যন্ত খুলতে ইচ্ছে করছিলো না। শুধু মনে হচ্ছে, অনেক দূরে পালিয়ে যেতে। বৃষ্টির জল রাস্তার দুপাশ দিয়ে গলিগুলোতে নামছিল স্রোতের মতো। অনেকদিন এমন মেঘভাঙা বৃষ্টি দেখেনি ও, অন্তত বছরের এই সময়টায় এরকম বৃষ্টি হয়ই না। ভিজতে ভিজতে মনে হল, বৃষ্টির জলটা যদি রঙিন হতো, হয়ত সেখান থেকে কিছুটা রঙ ধার নিতে পারতো ও আজকের জন্য। গাড়িগুলো ওর চোখে আলো ফেলে নিজেদের উপস্থিতির সাক্ষর রেখে ঝড়ের মতো চলে যাচ্ছিলো। এবার রাস্তাটা পার হতে হবে, মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে বা-দিকটা দেখল ও, কোনও গাড়ি নেই। গাড়িগুলো যে ডানদিক থেকে আসছে, নিমেষে ভুলে গিয়েছিলো, রাস্তা পার হতে যাওয়ার সময় গাড়িটার হর্নে সম্বিত ফিরল ওর, ডানদিকে তাকিয়ে দেখতে গাড়িটার আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল ওর। সরে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সময় ছিল না, গাড়িটার তীব্র হর্ন আর ব্রেকের আওয়াজ একটা চিৎকারে থেমে গেলো। পাইস হোটেলের যে কর্মচারীরা রেডিও চালিয়ে গল্প করছিলো, আর্ত চিরকারে দিশেহারা হয়ে ছুটে এলো তারা। রেডিওটা চলছিলো, প্রাণ থেমে গেলো, বৃষ্টির জল রাস্তায় নেমে লাল রঙে রঙিন হয়ে গেলো, শুধু কেউ রঙ ধার চাইতে এলো না।
(ক্রমশঃ)
পর্ব একঃ
রাত তখন সাড়ে আটটা, শিলিগুড়ির সেবক রোডে দিনের ভিড় কমে গেছে অনেকটা। গাড়ি চলাচল কমেছে, ঝাপ পড়ছে দোকানপাটের। রাস্তার ডানদিক দিয়ে পিঠে একটা ব্যাগ নিয়ে একা হাঁটছিল একটা ছেলে। এই অঝোর বৃষ্টির রাতে তার সঙ্গী হয়নি কোনও ছাতা। ভেজা শরীরটা ক্রমাগত এগিয়ে আসছিল মূল শহরের দিকে। হেরে যাওয়াটা যেন আজকাল অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। শহরের বৃষ্টিটা না থাকলে কোনদিন এই শহরটা থেকে ছুটে পালিয়ে যেত ছেলেটা, হয়ত বরফগলা নদীর ধারে, কিংবা সোনাঝুরির জঙ্গলে, মেঘালয়ের না হলেও সিকিমের কোনও দুর্গম পাহাড়ে। ঝাউ গাছের সাথে, মেঘেদের সাথে সময় কাটিয়ে মিথ্যে কথার এই শহরটা থেকে কয়েকদিনের বিচ্ছেদ হয়ত এনে দিতে পারে বাঁচার রসদ। উচ্চমাধ্যমিকের অনেক আগেই অনুভব করে ফেলেছিল, সায়েন্স নেওয়া ভুল হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের ফিজিক্স আর অঙ্ক প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর বুঝে গিয়েছিল, সায়েন্সের সাথে চিরবিচ্ছেদ আসন্ন। মাধ্যমিকের পর যে মোহময়তা ওকে আর ওর মতো অনেককেই দেখিয়েছিল বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন, উচ্চমাধ্যমিক এক লহমায় তাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। দুদিন বাদে জয়েন্ট এন্ট্রান্স, শেষ সুযোগ, কিন্তু ও যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। বইগুলো পর্যন্ত খুলতে ইচ্ছে করছিলো না। শুধু মনে হচ্ছে, অনেক দূরে পালিয়ে যেতে। বৃষ্টির জল রাস্তার দুপাশ দিয়ে গলিগুলোতে নামছিল স্রোতের মতো। অনেকদিন এমন মেঘভাঙা বৃষ্টি দেখেনি ও, অন্তত বছরের এই সময়টায় এরকম বৃষ্টি হয়ই না। ভিজতে ভিজতে মনে হল, বৃষ্টির জলটা যদি রঙিন হতো, হয়ত সেখান থেকে কিছুটা রঙ ধার নিতে পারতো ও আজকের জন্য। গাড়িগুলো ওর চোখে আলো ফেলে নিজেদের উপস্থিতির সাক্ষর রেখে ঝড়ের মতো চলে যাচ্ছিলো। এবার রাস্তাটা পার হতে হবে, মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে বা-দিকটা দেখল ও, কোনও গাড়ি নেই। গাড়িগুলো যে ডানদিক থেকে আসছে, নিমেষে ভুলে গিয়েছিলো, রাস্তা পার হতে যাওয়ার সময় গাড়িটার হর্নে সম্বিত ফিরল ওর, ডানদিকে তাকিয়ে দেখতে গাড়িটার আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল ওর। সরে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সময় ছিল না, গাড়িটার তীব্র হর্ন আর ব্রেকের আওয়াজ একটা চিৎকারে থেমে গেলো। পাইস হোটেলের যে কর্মচারীরা রেডিও চালিয়ে গল্প করছিলো, আর্ত চিরকারে দিশেহারা হয়ে ছুটে এলো তারা। রেডিওটা চলছিলো, প্রাণ থেমে গেলো, বৃষ্টির জল রাস্তায় নেমে লাল রঙে রঙিন হয়ে গেলো, শুধু কেউ রঙ ধার চাইতে এলো না।
(ক্রমশঃ)