আমাদের দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক উত্সবগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল রাখি (Raksha Bandhan)। ভাইয়ের হাতে বোন রক্ষাসূত্র পরিয়ে দিয়ে তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। জেনে নিন কী ভাবে ভাই-বোনের এই উত্সবের সূচনা।
ভাই-বোনের সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতেই রাখি উত্সব পালন করে থাকি আমরা। রাখির সুতোয় আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয় ভাই-বোনের সম্পর্ক। এই বছর ২২ অগাস্ট পালিত হবে রাখি পূর্ণিমা। ঠিক কবে থেকে এই প্রথার জন্ম জানেন? কেন রাখি পালন করা হয়, সেই বিষয়েই আজ কথা বলব আমরা। পুরাণে এই বিষয়ে একাধিক গল্প পাওয়া যায়। ইতিহাসেও রাখির বন্ধনের উল্লেখ আছে অনেকবার।রাখিকে ভাই-বোনের উত্সব হিসেবে মনে করা হলেও ইতিহাসে কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে পুরুষকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে তার কবজিতে সুতো বেঁধে দিতেন মহিলারা। এটাই পরে রাখি বন্ধন উত্সবের চেহারা নেয়।
৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দার ও পুরুর যুদ্ধের পরেও রাখি বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায়। তাঁর স্বামীর প্রাণ সংশয় হতে পারে, এই আশঙ্কা করে আলেকজান্দারের স্ত্রী পুরুর কাছে যান এবং তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেন। তার পরিবর্তে পুরু আলেকজান্দারের কোনও ক্ষতি করবেন না বলে কথা দেন।ইতিহাসের আরও এক বিখ্যাত রাখি বন্ধনের কথা মেলে রাজস্থানের মাটিতে। চিতৌরের রানি কর্মাবতী গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহের আক্রমণের আগাম খবর পেয়ে মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে সাহায্যের অনুরোধ করেন। রাখি পেয়ে হুমায়ুন চিতৌরের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু তিনি পৌঁছতে একটু দেরি করে ফেলেন। হুমায়ুন চিতৌর পৌঁছনোর আগেই সম্মান বাঁচাতে জওহর প্রথা অনুযায়ী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন কর্মাবতী ও তাঁর সঙ্গীনীরা।পুরাণ বলছে একবার দেবতা ও রাক্ষসদের যুদ্ধে দেবতারা তখন প্রায় পরাজয়ের মুখে, দেবরাজ ইন্দ্র তখন তাঁর গুরু বৃহস্পতির সাহায্য চান। বৃহস্পতির পরামর্শ মতো শ্রাবণ পূর্ণিমায় ইন্দ্রের স্ত্রী সচী একটি মন্ত্রপূত রাখির ইন্দ্রের হাতে বেঁধে দেন। তারপরই যুদ্ধে জয়লাভ করেন দেবতারা। আরও বলা হয় যে যমের অমরত্বের প্রার্থনা করে তাঁর বোন যমুনা তাঁর হাতে একটি রাখি পরিয়ে দেন। এরপরই যমরাজ কথা দেন যে যাঁর হাতে তাঁর বোন হাতে রাখি পরিয়ে দেবেন, তাকে তিনি স্বয়ং রক্ষা করবেন।মহাভারতেও রাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজসূয় যজ্ঞের সময় শিশুপালকে হত্যার পরে কৃষ্ণের একটি আঙুল কেটে রক্ত পরতে থাকে। দ্রৌপদী তখন নিজের শাড়ি ছিড়ে ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন। এর পরিবর্তে কৃষ্ণ তাঁকে সবরকম বিপদে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আবার অনেকে বলে থাকেন শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিনে হতদরিদ্র নারীর বেশে বালির কাছে আশ্রয় চান লক্ষ্মী। বালি নিজের প্রাসাদের দরজা খুলে দেন তাঁর জন্য। খুশি হয়ে লক্ষ্মী, কাপড়ের টুকরো বেঁধে দেন বালির হাতে। কথিত আছে গণেশের দুই পুত্র, শুভ ও লাভ বায়না ধরেছিল নিজেদের বোনের হাতে তারা রাখি পরতে চায়। কিন্তু কোনও উপায় নেই। শেষে গণেশের দুই স্ত্রী, ঋদ্ধি ও সিদ্ধির অন্তর থেকে নির্গত অগ্নি সৃষ্টি করা হয় সন্তোষীকে। তার হাত থেকে রাখি বাঁধে গণেশ পুত্ররা।
ইতিহাসে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোন কে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসাবে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য।
সেই সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে ছিল। আমরা আজ ১৫ ই আগস্ট ২০১৯ সালে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করছি। কিন্তু ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা আনার জন্য রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল।
উনিশ শতকে আমাদের বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে ছিল যা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে অপরিমিত ভয়ের কারণ। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করবে। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ সহ গোটা ভারতের বিভিন্ন নেতা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল এবং বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ করা হয়। এই আইন কার্যকরী হয় ১৬ ই অক্টোবর, ১৯০৫।
শ্রাবণ মাসে হিন্দু ভাইবোনদের মধ্যে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেন।
পরিশেষে আমার যত দিদি আছে এই সাইটে সবাইকে জানাই রাখী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন @All Didi
ভাই-বোনের সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতেই রাখি উত্সব পালন করে থাকি আমরা। রাখির সুতোয় আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয় ভাই-বোনের সম্পর্ক। এই বছর ২২ অগাস্ট পালিত হবে রাখি পূর্ণিমা। ঠিক কবে থেকে এই প্রথার জন্ম জানেন? কেন রাখি পালন করা হয়, সেই বিষয়েই আজ কথা বলব আমরা। পুরাণে এই বিষয়ে একাধিক গল্প পাওয়া যায়। ইতিহাসেও রাখির বন্ধনের উল্লেখ আছে অনেকবার।রাখিকে ভাই-বোনের উত্সব হিসেবে মনে করা হলেও ইতিহাসে কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে পুরুষকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে তার কবজিতে সুতো বেঁধে দিতেন মহিলারা। এটাই পরে রাখি বন্ধন উত্সবের চেহারা নেয়।
৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দার ও পুরুর যুদ্ধের পরেও রাখি বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায়। তাঁর স্বামীর প্রাণ সংশয় হতে পারে, এই আশঙ্কা করে আলেকজান্দারের স্ত্রী পুরুর কাছে যান এবং তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেন। তার পরিবর্তে পুরু আলেকজান্দারের কোনও ক্ষতি করবেন না বলে কথা দেন।ইতিহাসের আরও এক বিখ্যাত রাখি বন্ধনের কথা মেলে রাজস্থানের মাটিতে। চিতৌরের রানি কর্মাবতী গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহের আক্রমণের আগাম খবর পেয়ে মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে সাহায্যের অনুরোধ করেন। রাখি পেয়ে হুমায়ুন চিতৌরের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু তিনি পৌঁছতে একটু দেরি করে ফেলেন। হুমায়ুন চিতৌর পৌঁছনোর আগেই সম্মান বাঁচাতে জওহর প্রথা অনুযায়ী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন কর্মাবতী ও তাঁর সঙ্গীনীরা।পুরাণ বলছে একবার দেবতা ও রাক্ষসদের যুদ্ধে দেবতারা তখন প্রায় পরাজয়ের মুখে, দেবরাজ ইন্দ্র তখন তাঁর গুরু বৃহস্পতির সাহায্য চান। বৃহস্পতির পরামর্শ মতো শ্রাবণ পূর্ণিমায় ইন্দ্রের স্ত্রী সচী একটি মন্ত্রপূত রাখির ইন্দ্রের হাতে বেঁধে দেন। তারপরই যুদ্ধে জয়লাভ করেন দেবতারা। আরও বলা হয় যে যমের অমরত্বের প্রার্থনা করে তাঁর বোন যমুনা তাঁর হাতে একটি রাখি পরিয়ে দেন। এরপরই যমরাজ কথা দেন যে যাঁর হাতে তাঁর বোন হাতে রাখি পরিয়ে দেবেন, তাকে তিনি স্বয়ং রক্ষা করবেন।মহাভারতেও রাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজসূয় যজ্ঞের সময় শিশুপালকে হত্যার পরে কৃষ্ণের একটি আঙুল কেটে রক্ত পরতে থাকে। দ্রৌপদী তখন নিজের শাড়ি ছিড়ে ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন। এর পরিবর্তে কৃষ্ণ তাঁকে সবরকম বিপদে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আবার অনেকে বলে থাকেন শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিনে হতদরিদ্র নারীর বেশে বালির কাছে আশ্রয় চান লক্ষ্মী। বালি নিজের প্রাসাদের দরজা খুলে দেন তাঁর জন্য। খুশি হয়ে লক্ষ্মী, কাপড়ের টুকরো বেঁধে দেন বালির হাতে। কথিত আছে গণেশের দুই পুত্র, শুভ ও লাভ বায়না ধরেছিল নিজেদের বোনের হাতে তারা রাখি পরতে চায়। কিন্তু কোনও উপায় নেই। শেষে গণেশের দুই স্ত্রী, ঋদ্ধি ও সিদ্ধির অন্তর থেকে নির্গত অগ্নি সৃষ্টি করা হয় সন্তোষীকে। তার হাত থেকে রাখি বাঁধে গণেশ পুত্ররা।
ইতিহাসে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোন কে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসাবে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য।
সেই সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে ছিল। আমরা আজ ১৫ ই আগস্ট ২০১৯ সালে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করছি। কিন্তু ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা আনার জন্য রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল।
উনিশ শতকে আমাদের বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে ছিল যা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে অপরিমিত ভয়ের কারণ। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করবে। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ সহ গোটা ভারতের বিভিন্ন নেতা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল এবং বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ করা হয়। এই আইন কার্যকরী হয় ১৬ ই অক্টোবর, ১৯০৫।
শ্রাবণ মাসে হিন্দু ভাইবোনদের মধ্যে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেন।
পরিশেষে আমার যত দিদি আছে এই সাইটে সবাইকে জানাই রাখী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন @All Didi