*** রিয়া ***
প্রথম রিয়াকে দেখি আমাদের বাড়িতেই। আমার বউ মিষ্টির খুব কাছের বন্ধু সিমা মাঝে মাঝেই
আসে আমাদের বাড়িতে, ডিভোর্সি,সার্ভিস করে, খুব হুল্লোর করতে ভালোবাসে। একটি ছেলের সাথে রিলেশন মেনটেন করে। এক দিন আমাকে বললো দাদা কাল আপনাদের বাড়িতে আমার এক
বন্ধুকে নিয়ে আসবো, আমরা এক সাথে কলেজে পড়তাম।আমি বলেছিলাম, অলওয়েজ ওয়েল কাম, নিশ্চয়ই নিয়ে আসবে আমারও ভালই লাগবে বউএর বান্ধবীর বান্ধবী। অবশ্য কথাটা
ইয়ার্কি মেরেই বলেছিলাম। পরের দিন রাত সাতটা কি আটটা হবে সিমা এসেছিলো ওর ছেলে বন্ধু আর রিয়াকে নিয়ে। সেই প্রথম দেখি রিয়াকে। ঝকঝকে একটি মেয়ে মাল্টি কালার্ড কাঁধ পর্যন্ত কার্লি হেয়ার। চোখে আই লাইনার, ডিপ লিপস্টিক, পরনে জিন্স আর ক্যাজুয়াল একটা টপ।
এট এ গ্ল্যান্স একবার দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। দারুন স্মার্ট, ঘরে ঢুকেই আমাকে তো প্রায় জড়িয়ে ধরে বললো সিমার কাছে তোমার আর
মিষ্টির কথা এত শুনেছি যে তোমাদের দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই আজ চলেই এলাম তোমাদের
বাড়ি। রিয়াকে দেখে সে দিন কেন যে আমার মনে একটা উন্মাদনা হয়েছিলো আজও তার ব্যাখ্যা
আমার কাছে নেই। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সেদিন গল্প করেছিলাম স্ন্যাক্স আর হুইস্কির গ্লাস হাতে নিয়ে। মাঝে মাঝেই রিয়া ওর পার্স খুলে
ডানহিল সিগারেটের প্যাকেট খুলে টুকটুকে লাল ঠোঁটে একটা করে সিগারেট নিয়ে দামি একটা লাইটার দিয়ে ধরিয়ে নিচ্ছিলো।
গল্পে গল্পে জানতে পারলাম খুব বড় একটা কোম্পানির এম ডির পার্সোনাল সেক্রেটারী । নিজের কেরিয়ারের জন্য বসের সাথে ফ্লার্ট করতেও ওর কোনো শুচিবায়ু নেই।
এই ভাবে আমার প্রথম পরিচয় রিয়ার সাথে। তার পর মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে আমরা নিজেরাই পার্টি করি, এক সাথে ঘুরতে বের হই,
কখনো সিটি সেন্টার, কখনো সিনেমা।
আস্তে আস্তে কেমন যেন একটা অদৃশ্য আকর্ষণ ওর দিকে আমাকে টানতে শুরু করলো। রোজই এমন এমন ড্রেস পরে আসতো, দেখতাম
আর চোখ ফেরাতে পারতাম না।
এক দিন আমরা আমাদের বাড়িতে আড্ডা মারতে মারতে প্রোগ্রাম করে ফেললাম শান্তিনিকেতন যাবো। যেমন কথা তো তেমনি কাজ দুদিনের প্রোগ্রাম। মনে আছে হাওড়া স্টেশন থেকে আমরা ট্রেনে শান্তিনিকেতন পৌঁছেছিলাম। একটা প্রাইভেট রিসর্টে একটা টু রুম কটেজ নিয়েছিলাম। রিয়ার সাথে দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছি এটা ভাবতেই
আমার মনের মধ্যে একটা কেমন যেন অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভব করছিলাম। কটেজে ঢুকেই সবাই নিজেদের মত ড্রেস চেঞ্জ করে রিলাক্সড হয়েছিলাম। রিয়াকে দেখি একটা সর্টস আর জাস্ট একটা ফাইন ট্রান্সপারেন্ট গেঞ্জি পরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। কোনো সংকোচ নেই, যেন একটা ফুটফুটে রঙিন প্রজাপতি। এসে আমার পাশে
বসে বললো মিষ্টি আজ থেকে এই দুটো দিন তোমার বরটা কে আমি নিলাম, তোমার আপত্তি নেইতো? মিষ্টিও হাসতে হাসতে বললো, কোনো
আপত্তি নেই, দুদিন কেনো রাখো না তোমার কাছে, আমার ভালোই লাগবে আমার বরটা অন্তত
কিছু দিন একটা রঙিন প্রজাপতির ডানার রঙে রঙিন হয়ে থাকবে। ওরাতো নিজেরা আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি ঠাট্টা করে যাচ্ছে, এদিকে আমার যে
কি অবস্থা আমিই জানি। মনে আছে দুপুরে লাঞ্চ এর পরে একটু রোদ পড়লে আমরা ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। ছাতিম গাছে ছাওয়া রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ভালোলাগা শান্তিনিকেতন। আমরা ঘুরে ঘুরে এক দিনেই মোটামুটি সব দেখে নিলাম। এরই মধ্যে মেয়েদের টুকিটাকি কেনাকাটা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তারই মাঝে আমরা রিক্সা নিয়ে শান্তিনিকেতনের কাছেই একটা সাঁওতালি গ্রামে গিয়েছিলাম। আকাশে
পূর্ণিমার চাঁদ, পরিষ্কার গ্রাম চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে। সেদিন সন্ধ্যায় মনে আছে কিছু দক্ষিণা দিয়ে আমরা সাঁওতালি নাচ দেখেছিলাম।
কটেজে ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে গিয়েছিল। ঘরেই ডিনার সেরে নিয়েছিলাম। এবার ঘুমের তোরজোড়। কটেজের একটা ঘরে এসি ছিল তাই ঠিক হলো ওই ঘরেই আজ সবাই ঘুমাবো। একটাই বড় বেড, পাথালি করে পাঁচ জনেই শুয়ে পরবো, একটাই তো রাত। আমরা দুজন ছেলে দু কর্নারে, মেয়েরা মধ্যে,হটাত রিয়া তাল তুললো,
আমার কাছে শোবে,আমার বউকে বললো মিষ্টি তোমরা বোধ হয় জানো না আমি রাতে ছেলেদের ছাড়া ঘুমতে পারি না, তাই মিষ্টি তুমি কিছু মনে
করবে নাতো আমি যদি তোমার বরের কাছে শুই। তাই শুনে অনেক ইয়ার্কি ঠাট্টার পরে আমরা শুয়ে পরলাম। লাইট অফ, ঘর অন্ধকার, অসংকোচে
রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধোরে আমার গায়ের ওপরে পা তুলে দিয়ে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো। আমার যে তখন কি অবস্থা বলে বোঝাতে পারবো না। রিয়ার শরীরের স্পর্শ আর মিষ্টি গন্ধে আমার মনে হচ্ছিল, এই রাত যেন আর শেষ না
হয়। তার পর কখন যে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি আর কিছু মনে নেই। আজও সেই রাতটার কথা মনে
পড়লে কেমন যেন একটা অদ্ভূত আবেশ আমার মনটাকে নিয়ে যায় সুদূর শান্তিনিকেতনে। যথারীতি
পরের দিন আমরা একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে কলকাতায় ফিরে এসেছিলাম। তারপর একটা একটা করে দিন কেটে যায়, রোজই আমার আফিস থেকে রিয়াকে ফোন করি ওর আফিসে। এক দিন হটাত চারটের সময় রিয়ার ফোন, একবার আসবে সিটি সেন্টারের ফুড কোর্টে? আমি থাকবো তোমার জন্য, ছটায় এসো।
যথারীতি ছটায় ফুড কোর্টে পৌঁছে দেখি কোণার একটা টেবিলে একাএকা বসে সিগারেট খাচ্ছে। আমি যেয়ে বসতেই চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমার কাছে বসে অনেক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, আজ তোমাকে কয়েকটা কথা
বলবো। তারপর খানিক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করলো,দেখো আমি বেশ বুঝতে পারছি তুমি ধীরে ধীরে আমার মোহ জালে জড়িয়ে পরছো।যেটা আর বাড়তে দেয়াটা ঠিক হবে না। তুমি বিবাহিত পুরুষ, ভালো মানুষ,আর মিষ্টির তো তুলনাই হয় না, নাম যেমন মিষ্টি, দেখতেও তেমনি মিষ্টি
আর স্বভাবেও তাই। তোমরা দুজন মেড ফর ইচ আদার। আমার পৃথিবী তোমাদের থেকে অনেক সেপারেট, কম্ফোর্ট হাংগার আমার একটা
ক্যারেকটারের মধ্যে পরে। আমি আমার জীবনের প্রথম থেকে পৃথিবীর সব সুখকে যেনতেন প্রকারে হাতের মুঠোয় চেয়েছি, এখনো চাই এবং সারা জীবন চাইবো। তার জন্য আমি সব করেছি আর করবো, এতে আমার কোনো শুচিবায়ু নেই।
আই ওয়ান্ট টু হ্যাব দা স্কাই অফ কম্ফোর্ট এন্ড টু বিকাম এ রিচেষ্ট লেডি ইন ইন্ডিয়া। এই কথা গুলো
বলে খানিক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, ইতিমধ্যে ওয়েটার দু মগ কফি দিয়ে গেছে। রিয়া কফিতে চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি হয়ত ভাবছো তোমাকে হটাত কেন আমার জীবনের এত গুলো কথা বললাম। বললাম এই কারনে, তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু, তোমার মত এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এর আগে আমি পাইনি, যা এত দিন পেয়েছি সবই দেয়া নেয়ার খেলা। তাই আমি
চাই না তোমাদের সুন্দর বিবাহিত লাইফে আমার জন্য কোনো ঝড় উঠুক। তোমার আর মিষ্টির ভালোবাসায় কোনো রকম চিড় ধরুক।তাই কষ্ট হলেও তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে।আমিও খুবই কষ্ট পাবো, তোমার মত
সুন্দর মনের মানুষ আমার জীবনে আসেনি জানি আর আসবেও না।তাই আজকের এই কফি সেসন ইজ দা লাস্ট সেসন অফ আওয়ার সুই ফ্রেন্ডশিপ বলে আমার হাত দুটো দু হাতে চেপে ধরে আমার চোখের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে
বললো যাবার সময় তোমার এই স্পর্শ টুকু নিয়ে গেলাম, জেনো এইটুকুই আমার জীবনে তোমার
স্মৃতি হয়ে থাকবে।
সেই আমাদের শেষ দেখা, তারপর কেটে গেছে কত দিন কত মাস কত বছর। আমাদের সংসারও বড় হয়েছে সব কিছুর দায়দায়িত্ব সামলে রিয়ার
কথা চাপা পরে গিয়েছে মনের অনেক গভীরে কিন্তু হারিয়ে যায়নি মন থেকে আজও।
সিমার কাছ থেকে পরে শুনেছিলাম কলকাতার এক খুব বড় আর নাম করা ননবেঙ্গলী ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের বিপত্নিক ছেলেকে বিয়ে করে
হাসব্যান্ডের সাথে ফ্যামিলির বিজনেস দেখাশোনা করছে। রিয়া আজ কলকাতার ধনী মহিলাদের মধ্যে এক জন। ওপরআলা ওর মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। ভালো লাগলো শুনে।
আজ এই শ্রাবণের সন্ধ্যায় ,বাইরে অবিরাম বৃষ্টি ঝরে চলেছে,আমার ক্লান্ত শ্রান্ত মন বৃষ্টি দেখতে দেখতে ঘুরে ফিরে চলে যায় অতিতে।.....
আজ একটাই প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করে আমার মনে,সত্যিই কি রিয়াকে আমি ভালোবেসেছিলাম?
নাকি পুরোটাই আমার মনে ওর প্রতি একটা ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো?.................
প্রথম রিয়াকে দেখি আমাদের বাড়িতেই। আমার বউ মিষ্টির খুব কাছের বন্ধু সিমা মাঝে মাঝেই
আসে আমাদের বাড়িতে, ডিভোর্সি,সার্ভিস করে, খুব হুল্লোর করতে ভালোবাসে। একটি ছেলের সাথে রিলেশন মেনটেন করে। এক দিন আমাকে বললো দাদা কাল আপনাদের বাড়িতে আমার এক
বন্ধুকে নিয়ে আসবো, আমরা এক সাথে কলেজে পড়তাম।আমি বলেছিলাম, অলওয়েজ ওয়েল কাম, নিশ্চয়ই নিয়ে আসবে আমারও ভালই লাগবে বউএর বান্ধবীর বান্ধবী। অবশ্য কথাটা
ইয়ার্কি মেরেই বলেছিলাম। পরের দিন রাত সাতটা কি আটটা হবে সিমা এসেছিলো ওর ছেলে বন্ধু আর রিয়াকে নিয়ে। সেই প্রথম দেখি রিয়াকে। ঝকঝকে একটি মেয়ে মাল্টি কালার্ড কাঁধ পর্যন্ত কার্লি হেয়ার। চোখে আই লাইনার, ডিপ লিপস্টিক, পরনে জিন্স আর ক্যাজুয়াল একটা টপ।
এট এ গ্ল্যান্স একবার দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। দারুন স্মার্ট, ঘরে ঢুকেই আমাকে তো প্রায় জড়িয়ে ধরে বললো সিমার কাছে তোমার আর
মিষ্টির কথা এত শুনেছি যে তোমাদের দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই আজ চলেই এলাম তোমাদের
বাড়ি। রিয়াকে দেখে সে দিন কেন যে আমার মনে একটা উন্মাদনা হয়েছিলো আজও তার ব্যাখ্যা
আমার কাছে নেই। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সেদিন গল্প করেছিলাম স্ন্যাক্স আর হুইস্কির গ্লাস হাতে নিয়ে। মাঝে মাঝেই রিয়া ওর পার্স খুলে
ডানহিল সিগারেটের প্যাকেট খুলে টুকটুকে লাল ঠোঁটে একটা করে সিগারেট নিয়ে দামি একটা লাইটার দিয়ে ধরিয়ে নিচ্ছিলো।
গল্পে গল্পে জানতে পারলাম খুব বড় একটা কোম্পানির এম ডির পার্সোনাল সেক্রেটারী । নিজের কেরিয়ারের জন্য বসের সাথে ফ্লার্ট করতেও ওর কোনো শুচিবায়ু নেই।
এই ভাবে আমার প্রথম পরিচয় রিয়ার সাথে। তার পর মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে আমরা নিজেরাই পার্টি করি, এক সাথে ঘুরতে বের হই,
কখনো সিটি সেন্টার, কখনো সিনেমা।
আস্তে আস্তে কেমন যেন একটা অদৃশ্য আকর্ষণ ওর দিকে আমাকে টানতে শুরু করলো। রোজই এমন এমন ড্রেস পরে আসতো, দেখতাম
আর চোখ ফেরাতে পারতাম না।
এক দিন আমরা আমাদের বাড়িতে আড্ডা মারতে মারতে প্রোগ্রাম করে ফেললাম শান্তিনিকেতন যাবো। যেমন কথা তো তেমনি কাজ দুদিনের প্রোগ্রাম। মনে আছে হাওড়া স্টেশন থেকে আমরা ট্রেনে শান্তিনিকেতন পৌঁছেছিলাম। একটা প্রাইভেট রিসর্টে একটা টু রুম কটেজ নিয়েছিলাম। রিয়ার সাথে দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছি এটা ভাবতেই
আমার মনের মধ্যে একটা কেমন যেন অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভব করছিলাম। কটেজে ঢুকেই সবাই নিজেদের মত ড্রেস চেঞ্জ করে রিলাক্সড হয়েছিলাম। রিয়াকে দেখি একটা সর্টস আর জাস্ট একটা ফাইন ট্রান্সপারেন্ট গেঞ্জি পরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। কোনো সংকোচ নেই, যেন একটা ফুটফুটে রঙিন প্রজাপতি। এসে আমার পাশে
বসে বললো মিষ্টি আজ থেকে এই দুটো দিন তোমার বরটা কে আমি নিলাম, তোমার আপত্তি নেইতো? মিষ্টিও হাসতে হাসতে বললো, কোনো
আপত্তি নেই, দুদিন কেনো রাখো না তোমার কাছে, আমার ভালোই লাগবে আমার বরটা অন্তত
কিছু দিন একটা রঙিন প্রজাপতির ডানার রঙে রঙিন হয়ে থাকবে। ওরাতো নিজেরা আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি ঠাট্টা করে যাচ্ছে, এদিকে আমার যে
কি অবস্থা আমিই জানি। মনে আছে দুপুরে লাঞ্চ এর পরে একটু রোদ পড়লে আমরা ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। ছাতিম গাছে ছাওয়া রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ভালোলাগা শান্তিনিকেতন। আমরা ঘুরে ঘুরে এক দিনেই মোটামুটি সব দেখে নিলাম। এরই মধ্যে মেয়েদের টুকিটাকি কেনাকাটা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তারই মাঝে আমরা রিক্সা নিয়ে শান্তিনিকেতনের কাছেই একটা সাঁওতালি গ্রামে গিয়েছিলাম। আকাশে
পূর্ণিমার চাঁদ, পরিষ্কার গ্রাম চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে। সেদিন সন্ধ্যায় মনে আছে কিছু দক্ষিণা দিয়ে আমরা সাঁওতালি নাচ দেখেছিলাম।
কটেজে ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে গিয়েছিল। ঘরেই ডিনার সেরে নিয়েছিলাম। এবার ঘুমের তোরজোড়। কটেজের একটা ঘরে এসি ছিল তাই ঠিক হলো ওই ঘরেই আজ সবাই ঘুমাবো। একটাই বড় বেড, পাথালি করে পাঁচ জনেই শুয়ে পরবো, একটাই তো রাত। আমরা দুজন ছেলে দু কর্নারে, মেয়েরা মধ্যে,হটাত রিয়া তাল তুললো,
আমার কাছে শোবে,আমার বউকে বললো মিষ্টি তোমরা বোধ হয় জানো না আমি রাতে ছেলেদের ছাড়া ঘুমতে পারি না, তাই মিষ্টি তুমি কিছু মনে
করবে নাতো আমি যদি তোমার বরের কাছে শুই। তাই শুনে অনেক ইয়ার্কি ঠাট্টার পরে আমরা শুয়ে পরলাম। লাইট অফ, ঘর অন্ধকার, অসংকোচে
রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধোরে আমার গায়ের ওপরে পা তুলে দিয়ে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো। আমার যে তখন কি অবস্থা বলে বোঝাতে পারবো না। রিয়ার শরীরের স্পর্শ আর মিষ্টি গন্ধে আমার মনে হচ্ছিল, এই রাত যেন আর শেষ না
হয়। তার পর কখন যে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি আর কিছু মনে নেই। আজও সেই রাতটার কথা মনে
পড়লে কেমন যেন একটা অদ্ভূত আবেশ আমার মনটাকে নিয়ে যায় সুদূর শান্তিনিকেতনে। যথারীতি
পরের দিন আমরা একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে কলকাতায় ফিরে এসেছিলাম। তারপর একটা একটা করে দিন কেটে যায়, রোজই আমার আফিস থেকে রিয়াকে ফোন করি ওর আফিসে। এক দিন হটাত চারটের সময় রিয়ার ফোন, একবার আসবে সিটি সেন্টারের ফুড কোর্টে? আমি থাকবো তোমার জন্য, ছটায় এসো।
যথারীতি ছটায় ফুড কোর্টে পৌঁছে দেখি কোণার একটা টেবিলে একাএকা বসে সিগারেট খাচ্ছে। আমি যেয়ে বসতেই চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমার কাছে বসে অনেক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, আজ তোমাকে কয়েকটা কথা
বলবো। তারপর খানিক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করলো,দেখো আমি বেশ বুঝতে পারছি তুমি ধীরে ধীরে আমার মোহ জালে জড়িয়ে পরছো।যেটা আর বাড়তে দেয়াটা ঠিক হবে না। তুমি বিবাহিত পুরুষ, ভালো মানুষ,আর মিষ্টির তো তুলনাই হয় না, নাম যেমন মিষ্টি, দেখতেও তেমনি মিষ্টি
আর স্বভাবেও তাই। তোমরা দুজন মেড ফর ইচ আদার। আমার পৃথিবী তোমাদের থেকে অনেক সেপারেট, কম্ফোর্ট হাংগার আমার একটা
ক্যারেকটারের মধ্যে পরে। আমি আমার জীবনের প্রথম থেকে পৃথিবীর সব সুখকে যেনতেন প্রকারে হাতের মুঠোয় চেয়েছি, এখনো চাই এবং সারা জীবন চাইবো। তার জন্য আমি সব করেছি আর করবো, এতে আমার কোনো শুচিবায়ু নেই।
আই ওয়ান্ট টু হ্যাব দা স্কাই অফ কম্ফোর্ট এন্ড টু বিকাম এ রিচেষ্ট লেডি ইন ইন্ডিয়া। এই কথা গুলো
বলে খানিক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, ইতিমধ্যে ওয়েটার দু মগ কফি দিয়ে গেছে। রিয়া কফিতে চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি হয়ত ভাবছো তোমাকে হটাত কেন আমার জীবনের এত গুলো কথা বললাম। বললাম এই কারনে, তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু, তোমার মত এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এর আগে আমি পাইনি, যা এত দিন পেয়েছি সবই দেয়া নেয়ার খেলা। তাই আমি
চাই না তোমাদের সুন্দর বিবাহিত লাইফে আমার জন্য কোনো ঝড় উঠুক। তোমার আর মিষ্টির ভালোবাসায় কোনো রকম চিড় ধরুক।তাই কষ্ট হলেও তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে।আমিও খুবই কষ্ট পাবো, তোমার মত
সুন্দর মনের মানুষ আমার জীবনে আসেনি জানি আর আসবেও না।তাই আজকের এই কফি সেসন ইজ দা লাস্ট সেসন অফ আওয়ার সুই ফ্রেন্ডশিপ বলে আমার হাত দুটো দু হাতে চেপে ধরে আমার চোখের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে
বললো যাবার সময় তোমার এই স্পর্শ টুকু নিয়ে গেলাম, জেনো এইটুকুই আমার জীবনে তোমার
স্মৃতি হয়ে থাকবে।
সেই আমাদের শেষ দেখা, তারপর কেটে গেছে কত দিন কত মাস কত বছর। আমাদের সংসারও বড় হয়েছে সব কিছুর দায়দায়িত্ব সামলে রিয়ার
কথা চাপা পরে গিয়েছে মনের অনেক গভীরে কিন্তু হারিয়ে যায়নি মন থেকে আজও।
সিমার কাছ থেকে পরে শুনেছিলাম কলকাতার এক খুব বড় আর নাম করা ননবেঙ্গলী ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের বিপত্নিক ছেলেকে বিয়ে করে
হাসব্যান্ডের সাথে ফ্যামিলির বিজনেস দেখাশোনা করছে। রিয়া আজ কলকাতার ধনী মহিলাদের মধ্যে এক জন। ওপরআলা ওর মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। ভালো লাগলো শুনে।
আজ এই শ্রাবণের সন্ধ্যায় ,বাইরে অবিরাম বৃষ্টি ঝরে চলেছে,আমার ক্লান্ত শ্রান্ত মন বৃষ্টি দেখতে দেখতে ঘুরে ফিরে চলে যায় অতিতে।.....
আজ একটাই প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করে আমার মনে,সত্যিই কি রিয়াকে আমি ভালোবেসেছিলাম?
নাকি পুরোটাই আমার মনে ওর প্রতি একটা ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো?.................