ভালোবাসা" , চার অক্ষরের খুব ছোট একটি শব্দ । কিন্তু তার বিস্তৃতি বহুদূর । আমাদের হৃদয়, হৃদয়ের গভীর, এমনকি হৃদয়ের গভীর থেকে বের হয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে ভালোবাসার বিস্তৃতি ।
ভালোবাসা শুধু প্রেমিক প্রেমিকার প্রেম নয় । আমরা ভালোবাসি আমাদের বাবা মা কে, ভাই বোন কে, সন্তানকে, দাদা- দাদী, নানা- নানী, বন্ধূকে । জীবনের প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ভালোবাসা বিরাজমান । যে সম্পর্কে আছে শ্রদ্ধা, স্নেহ, সম্মান সেখানেই আছে ভালোবাসা ।
"আমি তোমাকে ভালোবাসি" বলে আমরা কারও প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি শব্দে । কিছু কিছু সময় নিজের অজান্তেই মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায় "আই লাভ ইউ" শব্দটি । যেমন আমি আমার ছোট বোন কে বলি মাঝেই মাঝেই, আবার আমার দুইটা মেয়ে কলিগ আছে যাদের কেও মাঝে মাঝে কিছু ক্ষেত্রে আবেগাপ্লুত হয়ে বলি "আই লাভ ইউ" । ভালোবাসা এমনই, কোন বাধা মানতে নারাজ । তবে সবাইকে কিন্তু আবার এই শব্দটি বলা যাবেনা তাহলে বেধে যাবে বিপত্তি
তবে "আই লাভ ইউ" কিংবা "আমি তোমাকে ভালোবাসি" এই শব্দটি ছাড়াও পাশে চলতে চলতে, একসাথে থাকতে একজন মানুষের আরেকটি মানুষের প্রতি ভালোবাসার আবেগ অনুভূতি প্রকাশ পায় তার কাজে কর্মে আর জন্ম নেয় ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প । জীবনের সম্পর্ক গুলোর এমনই কিছু ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প নিয়ে আমি লিখতে যাচ্ছি "ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প"
আমাদের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একেক সম্পর্কে একেক রকম । আমরা আমাদের বাবা মা কে একভাবে ভালোবাসি, ভাই বোনকে, সন্তানকে একভাবে আবার আমাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী কে একভাবে, আবার একজন ব্লগার তার সহব্লগারদের ভালোবাসেন আরেকভাবে । প্রতিটি ভালোবাসাই সুন্দর । আমার প্রতিটি সম্পর্কেরই ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে ।
তবে আজকে শুরুটা করছি একজন ছেলে তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে কিভাবে ভালোবাসে তা দিয়ে
১। সোবহানবাগের একটি দোকানে বসে তেহারি খাচ্ছে মিলি আর সুমন । তেহারির মধ্যে ছোট ছোট আস্ত আলু দেখে মিলি বলল আলুগুলো খুব মজা । কিছুক্ষণ পর মিলি দেখলো, সুমন খাচ্ছে আর তার নিজের প্লেটের আলুগুলো সে নিজে না খেয়ে মিলির প্লেটে তুলে দিচ্ছে ।
২। দেখা করার পর মিলি বাসায় যায় রিকশায় করে আর সুমন বাসে । মিলির সাথে রিকশায় বাস স্টপ পর্যন্ত গেলে সুমনের অনেক ঘুরে বাসায় যেতে হয় ও কষ্ট হয় । কিন্তু মিলির বাচ্চামি স্বভাব আর ভালোবাসার স্বার্থপর মন তা বুঝতে চায়না । সে চায় সুমন তার সাথে তার বাসার কাছে পর্যন্ত যাবে তাহলে রিকশার ঐটুকু সময়ই সে সুমনকে পাশে পাবে । সে প্রায়ই সুমনকে বার বার বলে তার সাথে যেতে কিন্তু সুমন না করে । আর মিলি মন খারাপ করে ঠোঁট বাকিয়ে থাকে । কিন্তু প্রায়দিনই মিলি কিছুদূর যাওয়ার পরেই সুমন মিলির মন খারাপ দেখে নিজের কষ্ট ভুলে ফোন করে বলে , দাড়াও আমি আসছি, তোমার ওইখান দিয়ে যাবো।
৩। একদিন রাতে কথা বলার সময়ে সুমনের কোন একটি কথায় মিলির খুব কষ্ট লাগলো। সে সারাটিরাত মন খারাপ করে শুয়ে থাকলো আর কাদলো । পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার আগেই সুমনের ফোন । আজ সারাদিন বাইরে ঘুরবে দুজনে । নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছোবার পর দুজনে যখন রিকশায় হঠাৎ সুমন মিলির হাতটি তার কোলে টেনে নিলো আর বললো "সরি কালরাতে আমার ঐভাবে কথাটি বলা ঠিক হয়নি । আমি রাতে স্বপ্ন দেখেছি তুমি মন খারাপ করে শুয়ে আছো । তাই তোমার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য আজ আমি সারাদিন তোমার সাথে থাকবো" । মিলির চোখ তখন টলটল করছে খুশীতে আবেগাপ্লুত হয়ে।
৪। একদিন দুপুরবেলা কোন কাজে সুমন মিলির এলাকায় আসলো । সুমন এদিকে এসেছে শুনেই মিলি দেখা করার জন্য অস্থির কিন্তু তখন মিলির কলেজে পরীক্ষা থাকায় সে বের হতে পারছেনা দেখে মন খারাপ করে ফেললো । সুমন চাইলেই এখন বাসায় গিয়ে আরাম করতে পারে কিন্তু দেখা করতে পারবেনা তাই মিলির মন খারাপ দেখে সে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন কাজ ছাড়াই মিলির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো কখন মিলির কলেজ ছুটি হবে আর তার সাথে দেখা করবে ।
৫। মিলির মাঝে মাঝে কি হয় দেখা করতে মন চেয়েছে আজ দেখা করতেই হবে তার সুমনের সাথে । এমন একদিন সন্ধ্যাবেলা ফোন দিল দেখা করতে চায়, খুব ইচ্ছে হচ্ছে । সুমন বললো ওর জ্বর । এমনিতেই দেখা করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার উপর আবার ওর জ্বর, মিলির মনটাই গেল খারাপ হয়ে । কিছুক্ষণ পর সুমনের ফোন, আমি আসছি দেখা করতে তুমি বের হও । মিলি খুশীতে লাফাতে লাফাতে দেখা করার জায়গায় গিয়ে হাজির । সুমন আসার পর দেখে ওর গায়ে ভীষণ জ্বর । এত জ্বর যে বিছানায় শুয়ে থাকার কথা অথচ তা না করে সে চলে এসেছে দেখা করার জন্য শুধুমাত্র মিলি মন খারাপ করেছিল বলে । মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু । যে মানুষটি মুখে কখনো বলেনা মিলি আমি তোমাকে ভালোবাসি সে গায়ে এত জ্বর নিয়েও অত দূর থেকে চলে এসেছে তার সাথে দেখা করার জন্য মন খারাপ করেছিল বলে ।
৬। এক বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে আছে দুজনে । তখন পাশে একটি ফ্রেমের মধ্যে ছোট ছোট সারি সারি বেলুন ফুলানো থাকে আর তা নিশানা করে বন্দুক দিয়ে ফুটানোর খেলাটি হচ্ছিলো । মিলি ওইগুলো চাইলো, কিন্তু যেতে যেতে ফ্রেমে আর মাত্র দুইটা বেলুন ছিল তার মধ্যে পালা করে করে মিলি একটিও ফুটোতে পারেনি । শেষ হওয়ার পর ওরা সেখান থেকে চলে আসলো । তার আরও অনেকগুলো দিন পর ধানমন্ডি ৩২ নং এ আবার দেখলো ওইগুলো । সেদিন সুমন নিজে থেকেই নিয়ে গেল মিলিকে সেখানে এবং বললো আগেরবার বেশী বেলুন ছিলনা এবং তুমি একটিও ফুটোতে পারনি বলে তোমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, আজ যত মন চায় চেষ্টা কর আর বেলুন ফুটাও । মিলি অবাক হয়ে গেল সেই কবে ছিলি সেই দিনটি আর মিলি যে মন খারাপ করেছিল তাতো তার নিজেরই খেয়াল ছিলনা আর সুমন তা ঠিকই খেয়াল করেছে ও মনে রেখেছে এখনও ।
৭। মিলির ঝালমুড়ি পছন্দ। দেখা করতে এলে প্রায়ই দুজনে ঝালমুড়ি কিনে খায়। শুরুটা একসাথে করলেও মিলির খাওয়া শেষ হয়ে যায় সুমনের আগে। তখন সুমন তার হাতের ঝালমুড়ির প্যাকেটটি মিলিকে দিয়ে দেয় এই বলে যে তার আর খেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু মিলি ঠিকই বুঝে খেতে ইচ্ছে করলেও সে তা মিলিকে দিয়ে দেয় ওর পছন্দ বলে।
৮। মিলির ফ্রাইড রাইস খুব পছন্দ। একদিন সে বললো ফ্রাইড রাইস খেতে মন চেয়েছে। ওরা প্রথম দোকানে গিয়ে ফ্রাইড রাইস পেলোনা। এমন করে আরও দু একটি দোকানে গিয়েও পেলোনা কিন্তু সুমন মিলির নিষেধ না শুনে একটার পর একটা দোকান ঘুরতেই থাকলো কোথায় আছে ফ্রাইড রাইস, মিলির খেতে মন চেয়েছে তাকে সেটা খাওয়াতেই হবে।
৯। সুমনের চাকরী নেই তাই সে বিভিন্ন কাজে সারারাত জেগে থাকে এবং দিনের অনেকটা সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে । মিলির খুব সখ সারাদিনের জন্য বেরাতে যাবে সুমনকে নিয়ে কিন্তু সুমনের অভ্যাস এখন এমন হয়ে গিয়েছে সে রাতে জেগে থাকে দিনে ঘুমায় । কিন্তু শুধুমাত্র মিলিকে খুশী করার জন্য সে সারারাত না ঘুমিয়েও পরেরদিন সারাদিন মিলিকে নিয়ে ঘুরতে যায় ।
১০। যতক্ষণ বাসায় থাকবে সুমন সারাক্ষণ ল্যাপটপে গান ছেড়ে রাখে। সুমন যে গানগুলো ছাড়ে সেগুলো মিলিরও পছন্দ কিন্তু কিছু গান আছে যেগুলো শুধু মিলির পছন্দ। সুমন একদিন বেছে বেছে মিলির সব পছন্দের গানগুলো ডাউনলোড করে রাখলো। মিলি খেয়াল করলে ইদানিং মাঝে মাঝেই ঘুমানোর সময় সেই গান গুলো ছাড়ে।
১১। মিলির এক বন্ধু এসেছে বিদেশ থেকে। হঠাৎ করেই ফোন পাওয়াতে দেখা করতে চলে গেলো সে হাতের কাজকর্ম শেষ না করে ঘর দোর একদম একমেলো করেই। গল্পে গল্পে বাসায় ফিরতেও দেরী হয়ে যাচ্ছে এদিকে সুমন বাসায় ফিরে দেখবে সব এলোমেলো আর তারও বাসায় ফিরে আবার এতগুলো কাজ করতে হবে ভেবেই কষ্ট লাগছিলো। ফেরার সময় মিলি দুজনের জন্যে খাবার কিনে নিয়ে আসলো। বাসায় এসে মিলি অবাক। সুমন কি সুন্দর করে সব কাজ শেষ করে ঘরদোর গুছিয়ে রেখেছে এত রাতে বাসায় ফিরে মিলির আবার এগুলো করতে কষ্ট হবে বলে।
১২। সারাদিন পর মিলি আর সুমন রাতের খাবারটি একসাথে খায় । মাঝে মাঝে সুমন বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসলেও মিলির জন্য আবার একসাথে খেতে বসে একটু হলেও খায় কারন সে জানে সে না বসলে মিলি না খেয়েই শুয়ে থাকবে ।
১৩। মিলির খুব চকলেট পছন্দ । সুমন প্রায়দিনই বাসায় ফেরার সময় মিলির জন্য একটি করে ছোট চকলেট নিয়ে আসে । মিলির কাছে এই চকলেট চকলেট না সুমনের কাছে থেকে পাওয়া ভালোবাসা যে ভালোবাসা সুমন কখনো মুখে প্রকাশ করেনা কিন্তু মিলি ঠিকই জানে যে সুমন তাকে কতখানি ভালোবাসে ।
ভালোবাসা শুধু প্রেমিক প্রেমিকার প্রেম নয় । আমরা ভালোবাসি আমাদের বাবা মা কে, ভাই বোন কে, সন্তানকে, দাদা- দাদী, নানা- নানী, বন্ধূকে । জীবনের প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ভালোবাসা বিরাজমান । যে সম্পর্কে আছে শ্রদ্ধা, স্নেহ, সম্মান সেখানেই আছে ভালোবাসা ।
"আমি তোমাকে ভালোবাসি" বলে আমরা কারও প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি শব্দে । কিছু কিছু সময় নিজের অজান্তেই মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায় "আই লাভ ইউ" শব্দটি । যেমন আমি আমার ছোট বোন কে বলি মাঝেই মাঝেই, আবার আমার দুইটা মেয়ে কলিগ আছে যাদের কেও মাঝে মাঝে কিছু ক্ষেত্রে আবেগাপ্লুত হয়ে বলি "আই লাভ ইউ" । ভালোবাসা এমনই, কোন বাধা মানতে নারাজ । তবে সবাইকে কিন্তু আবার এই শব্দটি বলা যাবেনা তাহলে বেধে যাবে বিপত্তি
তবে "আই লাভ ইউ" কিংবা "আমি তোমাকে ভালোবাসি" এই শব্দটি ছাড়াও পাশে চলতে চলতে, একসাথে থাকতে একজন মানুষের আরেকটি মানুষের প্রতি ভালোবাসার আবেগ অনুভূতি প্রকাশ পায় তার কাজে কর্মে আর জন্ম নেয় ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প । জীবনের সম্পর্ক গুলোর এমনই কিছু ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প নিয়ে আমি লিখতে যাচ্ছি "ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প"
আমাদের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একেক সম্পর্কে একেক রকম । আমরা আমাদের বাবা মা কে একভাবে ভালোবাসি, ভাই বোনকে, সন্তানকে একভাবে আবার আমাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী কে একভাবে, আবার একজন ব্লগার তার সহব্লগারদের ভালোবাসেন আরেকভাবে । প্রতিটি ভালোবাসাই সুন্দর । আমার প্রতিটি সম্পর্কেরই ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে ।
তবে আজকে শুরুটা করছি একজন ছেলে তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে কিভাবে ভালোবাসে তা দিয়ে
১। সোবহানবাগের একটি দোকানে বসে তেহারি খাচ্ছে মিলি আর সুমন । তেহারির মধ্যে ছোট ছোট আস্ত আলু দেখে মিলি বলল আলুগুলো খুব মজা । কিছুক্ষণ পর মিলি দেখলো, সুমন খাচ্ছে আর তার নিজের প্লেটের আলুগুলো সে নিজে না খেয়ে মিলির প্লেটে তুলে দিচ্ছে ।
২। দেখা করার পর মিলি বাসায় যায় রিকশায় করে আর সুমন বাসে । মিলির সাথে রিকশায় বাস স্টপ পর্যন্ত গেলে সুমনের অনেক ঘুরে বাসায় যেতে হয় ও কষ্ট হয় । কিন্তু মিলির বাচ্চামি স্বভাব আর ভালোবাসার স্বার্থপর মন তা বুঝতে চায়না । সে চায় সুমন তার সাথে তার বাসার কাছে পর্যন্ত যাবে তাহলে রিকশার ঐটুকু সময়ই সে সুমনকে পাশে পাবে । সে প্রায়ই সুমনকে বার বার বলে তার সাথে যেতে কিন্তু সুমন না করে । আর মিলি মন খারাপ করে ঠোঁট বাকিয়ে থাকে । কিন্তু প্রায়দিনই মিলি কিছুদূর যাওয়ার পরেই সুমন মিলির মন খারাপ দেখে নিজের কষ্ট ভুলে ফোন করে বলে , দাড়াও আমি আসছি, তোমার ওইখান দিয়ে যাবো।
৩। একদিন রাতে কথা বলার সময়ে সুমনের কোন একটি কথায় মিলির খুব কষ্ট লাগলো। সে সারাটিরাত মন খারাপ করে শুয়ে থাকলো আর কাদলো । পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার আগেই সুমনের ফোন । আজ সারাদিন বাইরে ঘুরবে দুজনে । নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছোবার পর দুজনে যখন রিকশায় হঠাৎ সুমন মিলির হাতটি তার কোলে টেনে নিলো আর বললো "সরি কালরাতে আমার ঐভাবে কথাটি বলা ঠিক হয়নি । আমি রাতে স্বপ্ন দেখেছি তুমি মন খারাপ করে শুয়ে আছো । তাই তোমার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য আজ আমি সারাদিন তোমার সাথে থাকবো" । মিলির চোখ তখন টলটল করছে খুশীতে আবেগাপ্লুত হয়ে।
৪। একদিন দুপুরবেলা কোন কাজে সুমন মিলির এলাকায় আসলো । সুমন এদিকে এসেছে শুনেই মিলি দেখা করার জন্য অস্থির কিন্তু তখন মিলির কলেজে পরীক্ষা থাকায় সে বের হতে পারছেনা দেখে মন খারাপ করে ফেললো । সুমন চাইলেই এখন বাসায় গিয়ে আরাম করতে পারে কিন্তু দেখা করতে পারবেনা তাই মিলির মন খারাপ দেখে সে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন কাজ ছাড়াই মিলির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো কখন মিলির কলেজ ছুটি হবে আর তার সাথে দেখা করবে ।
৫। মিলির মাঝে মাঝে কি হয় দেখা করতে মন চেয়েছে আজ দেখা করতেই হবে তার সুমনের সাথে । এমন একদিন সন্ধ্যাবেলা ফোন দিল দেখা করতে চায়, খুব ইচ্ছে হচ্ছে । সুমন বললো ওর জ্বর । এমনিতেই দেখা করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার উপর আবার ওর জ্বর, মিলির মনটাই গেল খারাপ হয়ে । কিছুক্ষণ পর সুমনের ফোন, আমি আসছি দেখা করতে তুমি বের হও । মিলি খুশীতে লাফাতে লাফাতে দেখা করার জায়গায় গিয়ে হাজির । সুমন আসার পর দেখে ওর গায়ে ভীষণ জ্বর । এত জ্বর যে বিছানায় শুয়ে থাকার কথা অথচ তা না করে সে চলে এসেছে দেখা করার জন্য শুধুমাত্র মিলি মন খারাপ করেছিল বলে । মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু । যে মানুষটি মুখে কখনো বলেনা মিলি আমি তোমাকে ভালোবাসি সে গায়ে এত জ্বর নিয়েও অত দূর থেকে চলে এসেছে তার সাথে দেখা করার জন্য মন খারাপ করেছিল বলে ।
৬। এক বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে আছে দুজনে । তখন পাশে একটি ফ্রেমের মধ্যে ছোট ছোট সারি সারি বেলুন ফুলানো থাকে আর তা নিশানা করে বন্দুক দিয়ে ফুটানোর খেলাটি হচ্ছিলো । মিলি ওইগুলো চাইলো, কিন্তু যেতে যেতে ফ্রেমে আর মাত্র দুইটা বেলুন ছিল তার মধ্যে পালা করে করে মিলি একটিও ফুটোতে পারেনি । শেষ হওয়ার পর ওরা সেখান থেকে চলে আসলো । তার আরও অনেকগুলো দিন পর ধানমন্ডি ৩২ নং এ আবার দেখলো ওইগুলো । সেদিন সুমন নিজে থেকেই নিয়ে গেল মিলিকে সেখানে এবং বললো আগেরবার বেশী বেলুন ছিলনা এবং তুমি একটিও ফুটোতে পারনি বলে তোমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, আজ যত মন চায় চেষ্টা কর আর বেলুন ফুটাও । মিলি অবাক হয়ে গেল সেই কবে ছিলি সেই দিনটি আর মিলি যে মন খারাপ করেছিল তাতো তার নিজেরই খেয়াল ছিলনা আর সুমন তা ঠিকই খেয়াল করেছে ও মনে রেখেছে এখনও ।
৭। মিলির ঝালমুড়ি পছন্দ। দেখা করতে এলে প্রায়ই দুজনে ঝালমুড়ি কিনে খায়। শুরুটা একসাথে করলেও মিলির খাওয়া শেষ হয়ে যায় সুমনের আগে। তখন সুমন তার হাতের ঝালমুড়ির প্যাকেটটি মিলিকে দিয়ে দেয় এই বলে যে তার আর খেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু মিলি ঠিকই বুঝে খেতে ইচ্ছে করলেও সে তা মিলিকে দিয়ে দেয় ওর পছন্দ বলে।
৮। মিলির ফ্রাইড রাইস খুব পছন্দ। একদিন সে বললো ফ্রাইড রাইস খেতে মন চেয়েছে। ওরা প্রথম দোকানে গিয়ে ফ্রাইড রাইস পেলোনা। এমন করে আরও দু একটি দোকানে গিয়েও পেলোনা কিন্তু সুমন মিলির নিষেধ না শুনে একটার পর একটা দোকান ঘুরতেই থাকলো কোথায় আছে ফ্রাইড রাইস, মিলির খেতে মন চেয়েছে তাকে সেটা খাওয়াতেই হবে।
৯। সুমনের চাকরী নেই তাই সে বিভিন্ন কাজে সারারাত জেগে থাকে এবং দিনের অনেকটা সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে । মিলির খুব সখ সারাদিনের জন্য বেরাতে যাবে সুমনকে নিয়ে কিন্তু সুমনের অভ্যাস এখন এমন হয়ে গিয়েছে সে রাতে জেগে থাকে দিনে ঘুমায় । কিন্তু শুধুমাত্র মিলিকে খুশী করার জন্য সে সারারাত না ঘুমিয়েও পরেরদিন সারাদিন মিলিকে নিয়ে ঘুরতে যায় ।
১০। যতক্ষণ বাসায় থাকবে সুমন সারাক্ষণ ল্যাপটপে গান ছেড়ে রাখে। সুমন যে গানগুলো ছাড়ে সেগুলো মিলিরও পছন্দ কিন্তু কিছু গান আছে যেগুলো শুধু মিলির পছন্দ। সুমন একদিন বেছে বেছে মিলির সব পছন্দের গানগুলো ডাউনলোড করে রাখলো। মিলি খেয়াল করলে ইদানিং মাঝে মাঝেই ঘুমানোর সময় সেই গান গুলো ছাড়ে।
১১। মিলির এক বন্ধু এসেছে বিদেশ থেকে। হঠাৎ করেই ফোন পাওয়াতে দেখা করতে চলে গেলো সে হাতের কাজকর্ম শেষ না করে ঘর দোর একদম একমেলো করেই। গল্পে গল্পে বাসায় ফিরতেও দেরী হয়ে যাচ্ছে এদিকে সুমন বাসায় ফিরে দেখবে সব এলোমেলো আর তারও বাসায় ফিরে আবার এতগুলো কাজ করতে হবে ভেবেই কষ্ট লাগছিলো। ফেরার সময় মিলি দুজনের জন্যে খাবার কিনে নিয়ে আসলো। বাসায় এসে মিলি অবাক। সুমন কি সুন্দর করে সব কাজ শেষ করে ঘরদোর গুছিয়ে রেখেছে এত রাতে বাসায় ফিরে মিলির আবার এগুলো করতে কষ্ট হবে বলে।
১২। সারাদিন পর মিলি আর সুমন রাতের খাবারটি একসাথে খায় । মাঝে মাঝে সুমন বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসলেও মিলির জন্য আবার একসাথে খেতে বসে একটু হলেও খায় কারন সে জানে সে না বসলে মিলি না খেয়েই শুয়ে থাকবে ।
১৩। মিলির খুব চকলেট পছন্দ । সুমন প্রায়দিনই বাসায় ফেরার সময় মিলির জন্য একটি করে ছোট চকলেট নিয়ে আসে । মিলির কাছে এই চকলেট চকলেট না সুমনের কাছে থেকে পাওয়া ভালোবাসা যে ভালোবাসা সুমন কখনো মুখে প্রকাশ করেনা কিন্তু মিলি ঠিকই জানে যে সুমন তাকে কতখানি ভালোবাসে ।