** বৃষ্টি ভেজা স্মৃতি **
ছয় ঘর এক উঠোন। সামনে পরপর
চার ঘর, বারান্দায় এক চিলতে রান্নার জায়গা। উলটো দিকে আমাদের দুটো ঘর, লাগোয়া রান্না ঘর। আমি দেশবন্ধু স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র। সবে গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে, সব সময় মনটা উড়ুউড়ু, প্রেম কাকে বলে জানিনা ভালোবাসা কাকে বলে জানি না শুধু সম বয়েসি মেয়েদের বারন্ত শরীর দেখলে, আমার সারা গায় কাটা দিয়ে উঠত। খুব ছুঁতে ইচ্ছে করতো।
আমরা তিন ভাই তিন বোন, আমি মেজো। দাদা রাউরকেল্লায় চাকরী করে। সারা বাড়ী সব সময় জমজমাট।
ভাব ভালোবাসা ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। আমাদের ঘরের ঠিক সামনের ঘরে চার জনের পরিবার। বাবা মা আর দুই মেয়ে। বড়টার নাম ময়না ছোটটা মিনু। ময়না আমার থেকে এক আধ বছরের ছোট, এই পনেরো বছর হবে। বান আসা নদীর মত ওর শরীরে যেন যৌবনের বান এসেছে। টসটসে ঠোঁট উদ্ধত বুক। সব সময় আমার চোখের সামনে। ওর দিকে তাকালে আমার গায় কাঁটা দিয়ে উঠত, বুঝতে পারতাম আমার নিঃশ্বাস, শরীর সব গরম হয়ে যাচ্ছে। আমার কিশোর শরীরে প্রথম
যৌবনের অনুভূতি আমাকে অস্থির করে তুলতো।
সুযোগ পেলেই আমি ময়নাকে দেখি আর রাতে ওকে নিয়ে কত কিছু কল্পনা করি। ময়না দেখতে বেশ সুশ্রী। ও খুব ভালো করেই বুঝত আমি ওকে দেখি। তাই মাঝে মাঝে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ মটকে ফিক করে হেসে দিত।আসলে মেয়েরা অল্প বয়েসেই ছেলেদের থেকে একটু বেশি পাকা হয়। আমি যখনকার সময়ের কথা বলছি তখন মেয়েদের জিন্সতো দূরের কথা সালোওয়ার কামিজেরও চল হয় নি। ময়নাও স্কুলে যেত শাড়ি পড়ে, বাড়িতে পড়ত ফ্রক। আর বেশীরভাগ মেয়েদের মতই বাড়ীতে ইনার কিছু না পড়েই ফ্রক পড়ে থাকত। ফলে বন্ধনহীন দোলা আমার শরীরের ভেতর যে কি তুফান তুলত তা আজকেও ভেবে রোমাঞ্চিত হই। ময়না দুষ্টুমিতে ভরপুর একটি উচ্ছল ঝরনার মত মেয়ে ছিল। মোহাবিষ্টের মত আমি ওকে দেখতাম আর দেখতাম। জৈষ্ঠ মাসের শেষ, একদিন আকাশ কালো করে প্রাক বর্ষার বৃষ্টি নামলো। গরমে হাসফাস সকলে উঠোনে নেমে পরলো প্রথম বৃষ্টি ভেঁজার খুশিতে। আমিও ভিজছি খালি গায় হটাত তাকিয়ে দেখি ময়না আমার পাশে আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টিতে ভিজছে, ওর খুশিগুলো বৃষ্টির জলকণা হয়ে ওর সারা শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। পরনে একটা সাদা ফ্রক নিচে কিছু নেই। ওর দিকে তাকাতেই আমার কিশোর শরীর থরথর করে কাঁপা শুরু করলো, চোখ দুটো আটকে গেলো ওর শরীরে। বৃষ্টির জলে ভিজে ওর সাদা ফ্রক স্বচ্ছ হয়ে গেছে, লেপ্টে গেছে শরীরের সাথে, আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি ময়নার শরীরের চড়াই উতড়াই উত্যুঙ্গ পর্বত শৃঙ্গ, অববাহিকা বিভাজিকা সব। এমন কি পর্বত শৃঙ্গের গোলাপ কুড়ি দুটিও। আমার বৃষ্টি ভেজা শরীর থেকে বৃষ্টির জল যেন বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। হটাত দেখি ময়না এক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে আর দুষ্টুমির হাসি হাসছে, ওর টসটসে বৃষ্টি ভেজা ঠোঁট দুটিতে আমন্ত্রনের ইঙ্গিত। কিশোর বয়েস, রোমান্স কাকে বলে, কবিত্ব কি কিছুই বুঝতাম না। আজ হলে হয়তো সেদিনের ময়নার বৃষ্টি ভেজা ঠোঁট দুটো দেখে কবির দুলাইন চুরি করে লিখেই ফেলতাম, " সে দিন জৈষ্ঠমাস তোর ঠোঁটে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। "
ময়না আর আমি একই স্কুলে পড়তাম
স্কুলের একটাই বিল্ডিং, সকালে মেয়েদের দুপুরে ছেলেদের ক্লাস হত। তখন হায়ার সেকেন্ডারি ছিল না লাস্ট স্কুল এক্সাম ছিল স্কুল ফাইনাল। তার পরেই কলেজ। আমাদের ক্লাস টেন এ অনেক গুলো সেকশন ছিল। আমি এ সেকশনে পড়তাম। সকালে মেয়েদের ছুটি হতে হতে সাড়ে দশটা বেজে যেত, আমাদের ক্লাস শুরু হত এগারোটায়।
আমাদের ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে একটা কম্পিটিশন ছিল কে আগে গিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চে বসতে পারে। তাই মেয়েদের ছুটি হয়ে যাওয়ার পর মেইন গেট খোলার আগেই আমরা বই খাতা নিয়ে গেটের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম ভেতরে ঢোকার জন্য। মাঝে মাঝে ময়নাকে দেখতাম বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে বেড়িয়ে আসতে। আর যেই না আমাকে দেখত, ব্যাস আমার হাত ধরে হিরহির করে টেনে হজমীয়ালার সামনে দাঁড় করিয়ে দিত। এক গাল মিষ্টি হাসি হেসে বলত হজমী খাওয়াও।উফ সঙ্গে আবার আরো দুজন।
তখনতো মা বাবারা ছেলে মেয়েদের হাতে হাত খরচের যোগান দিত না আজকের মা বাবাদের মত। আমার একমাত্র সোর্স অফ ইনকাম ছিল, সকালে বাড়ির বাজার করতে গিয়ে জাদুকর পিসি সরকার হয়ে গিয়ে কিছু কয়েন ভ্যানিশ করে দেয়া। আর আজকের অর্থ দপ্তরের মত গোঁজামিল দিয়ে মার কাছে ব্যালান্সশিট পেশ করা। এ হেন কষ্টার্জিত পয়সায় ময়নাকে হজমী খাওয়াতে ভালোই লাগতো, কিন্তু ওর শাঁকচুন্নি বান্ধবী গুলো? ধুস.....আমাদের স্কুলের সামনে মেয়েদের ক্লাসের সময় থেকে বিকেল পাঁচটা মানে আমাদের ছুটির সময় পর্যন্ত বাদামওয়ালা, আলুরদম ঘুগনি, হজমীওয়ালারা সব সময় মজুত। তখন একটা সিস্টেম ছিল, ক্লাসের রাফখাতা ফুরিয়ে গেলে, সেটা ওই ফেরিওয়ালাদের দিলে, হয় একটা হজমী বা চারটে আলুরদম বা এক ঠোঙ্গা বাদাম ফ্রি দিত। একদিন আমি স্কুলের গেটের সামনে, তখন জাস্ট মেয়েদের ছুটি হয়েছে, কিছু কিছু মেয়েরা বেড়চ্ছে, আমার একটা শেষ হয়ে যাওয়া রাফ খাতা দিয়ে আলুরদম খাবো। হেব্বি খুশি আমি, আজ ফ্রিতে চারটে আলুরদম। আলুরদমওয়ালা একটা শাল পাতায় চারটে মাখামাখা আলুরদম আমার হাতে দিয়েছে, একটা আলুতে একটা কাঠি গোঁজা।
পুলকিত মনে কাঠি দিয়ে একটা আলু তুলতেই হেব্বি জোরে একটা চিমটি খেলাম, তাকিয়ে দেখি ময়না হাসছে আর বলছে আমাকে ফাঁকি দিয়ে আলুরদম খাওয়া হচ্ছে? উফ সঙ্গে সেই দুই শাঁকচুন্নি। কি আর করি অগত্যা আরো তিনটে কাঠি নিয়ে বাকি তিনটে আলুতে গেঁথে দিলাম।
একটা একটা করে দিন কেটে যায়, ময়না আর আমি আজকাল বাইরেও দেখা করি, দুজনে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই, কিন্তু প্রেম ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় আমরা দুজনেই কিন্তু কিছুই বুঝতাম না। আমাদের কিশোর মনে ভালোবাসা থেকে দুজনের দুজনের প্রতি আকর্ষণটাই বেশি ছিল।
তখন সামার ভ্যাকেশন চলছে, স্কুল ছুটি। একদিন সকাল বেলায় দেখলাম ময়নার বাবা মা আর ছোটো বোন মিনু সেজে গুঁজে বেড়িয়ে গেলো, ইশারায় ময়নাকে জিগ্যেস করে জানতে পারলাম ওদের এক মাসির বাড়ি গেলো ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। ঘরে ময়না একলা। গ্রীষ্মের দুপুর বেলায় বাড়ির সবাই খেয়ে দেয়ে দিবানিদ্রায় মগ্ন। হটাত দেখি ময়না ইশারায় ডাকছে ওর ঘরে, আমি কিছু বুঝতে পারছিনা কেন ডাকছে, এবার ময়নার গলার আওয়াজ, আমাকে একটা অংক দেখিয়ে দেবে নীলদা, কিছুতেই পারছি না। আমি ভাবলাম সবাই ঘুমোচ্ছে যাক খানিকটা সময় ময়নার কাছে থাকতে পারবো। ময়নাদের ঘরে ঢুকে দেখি বিছানার ওপর বই খাতা ছড়ান। আমি বিছানার ওপরে বসতেই ময়না আস্তে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে আমার সামনে এসে বললো, নীলদা তুমিত জানো আমার বাবা রেলে চাকরি করে, বাবার কাছে শুনলাম বাবাকে খড়গপুর বদলি করে দিচ্ছে, আমাদেরও চলে যেতে হবে। তারপর একটু চুপ করে থেকে আমার পাশে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আমার গাল দুটো দুহাতে ধরে বললো, নীলদা আমি জানি তুমি আমাকে চাও, আমাকে আদর করার জন্য তুমি ছটফট করো আমি বুঝতে পারি। তুমি হয়ত বোঝ না আমিও তোমাকে চাই, আমার এই কিশোরী শরীরে তোমার ছোঁয়া তোমার আদর আমারও স্বপ্ন , আমার শরীরে তোমার আদরটাই তোমার স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন। বলে ময়না আমার সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রকটা খুলে আমার ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খেয়ে বললো দেখো আমাকে আজকে এই মুহুর্তে পরিপূর্ণ ভাবে আমি তোমার, আমাকে আদর করো নীলদা। বলে আমার মুখটা চেপে ধরলো ওর বুক দুটোতে যা আমি রোজ কল্পনা করে স্বপ্ন দেখতাম। আমি আর থাকতে না পেরে ওকে এক হ্যাচকায় টেনে নিয়েছিলাম বিছানার ওপর। মনে আছে দুটো ঘন্টা দুটো অনভিজ্ঞ শরীরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সমুদ্র মন্থনের মত অমৃত ছড়িয়ে পরেছিলো আমাদের দুটি কিশোর শরীরে। তারপর একদিন সত্যি ছয় ঘর এক উঠোন ভাড়া বাড়ী ছেরে খড়গপুর চলে গিয়েছিল ময়নারা। শুধু রেখে গিয়েছিল এক রাশ ওর শরীরের স্পর্শ আর স্মৃতি।
আজ কত বছর কেটে গেছে, ময়না কোথায় আছে কেমন আছে জানি না, ওর নীলদাকে মনে আছে কিনা তাও জানি না। আজ শেষ গ্রীষ্মে প্রাক বর্ষার প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়েছে দুপুর থেকে। আমার ঝুল বারান্দা থেকে দেখতে পাচ্ছি বাড়ির পাশের মাঠে অনেক ছেলে মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে, প্রবল বর্ষণও যেন খুব খুশি হয়ে ওদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। হটাত চোখ দুটো আটকিয়ে গেলো, একটি পনেরো ষোলো বছরের মেয়ে সাদা সালোয়ার কামিজ পড়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে ভিজে যাচ্ছে। মনে হলো ওর বৃষ্টি ভেজা খুশি গুলো বৃষ্টির জল হয়ে ঝোড়ে পড়ছে ওর কিশোরী শরীর থেকে। কেন জানি মনে হলো আমার অতিত স্মৃতিই কি আবার ফিরে দেখলাম বৃষ্টি ভেজা মেয়েটির শরীরে?...........
ছয় ঘর এক উঠোন। সামনে পরপর
চার ঘর, বারান্দায় এক চিলতে রান্নার জায়গা। উলটো দিকে আমাদের দুটো ঘর, লাগোয়া রান্না ঘর। আমি দেশবন্ধু স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র। সবে গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে, সব সময় মনটা উড়ুউড়ু, প্রেম কাকে বলে জানিনা ভালোবাসা কাকে বলে জানি না শুধু সম বয়েসি মেয়েদের বারন্ত শরীর দেখলে, আমার সারা গায় কাটা দিয়ে উঠত। খুব ছুঁতে ইচ্ছে করতো।
আমরা তিন ভাই তিন বোন, আমি মেজো। দাদা রাউরকেল্লায় চাকরী করে। সারা বাড়ী সব সময় জমজমাট।
ভাব ভালোবাসা ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। আমাদের ঘরের ঠিক সামনের ঘরে চার জনের পরিবার। বাবা মা আর দুই মেয়ে। বড়টার নাম ময়না ছোটটা মিনু। ময়না আমার থেকে এক আধ বছরের ছোট, এই পনেরো বছর হবে। বান আসা নদীর মত ওর শরীরে যেন যৌবনের বান এসেছে। টসটসে ঠোঁট উদ্ধত বুক। সব সময় আমার চোখের সামনে। ওর দিকে তাকালে আমার গায় কাঁটা দিয়ে উঠত, বুঝতে পারতাম আমার নিঃশ্বাস, শরীর সব গরম হয়ে যাচ্ছে। আমার কিশোর শরীরে প্রথম
যৌবনের অনুভূতি আমাকে অস্থির করে তুলতো।
সুযোগ পেলেই আমি ময়নাকে দেখি আর রাতে ওকে নিয়ে কত কিছু কল্পনা করি। ময়না দেখতে বেশ সুশ্রী। ও খুব ভালো করেই বুঝত আমি ওকে দেখি। তাই মাঝে মাঝে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ মটকে ফিক করে হেসে দিত।আসলে মেয়েরা অল্প বয়েসেই ছেলেদের থেকে একটু বেশি পাকা হয়। আমি যখনকার সময়ের কথা বলছি তখন মেয়েদের জিন্সতো দূরের কথা সালোওয়ার কামিজেরও চল হয় নি। ময়নাও স্কুলে যেত শাড়ি পড়ে, বাড়িতে পড়ত ফ্রক। আর বেশীরভাগ মেয়েদের মতই বাড়ীতে ইনার কিছু না পড়েই ফ্রক পড়ে থাকত। ফলে বন্ধনহীন দোলা আমার শরীরের ভেতর যে কি তুফান তুলত তা আজকেও ভেবে রোমাঞ্চিত হই। ময়না দুষ্টুমিতে ভরপুর একটি উচ্ছল ঝরনার মত মেয়ে ছিল। মোহাবিষ্টের মত আমি ওকে দেখতাম আর দেখতাম। জৈষ্ঠ মাসের শেষ, একদিন আকাশ কালো করে প্রাক বর্ষার বৃষ্টি নামলো। গরমে হাসফাস সকলে উঠোনে নেমে পরলো প্রথম বৃষ্টি ভেঁজার খুশিতে। আমিও ভিজছি খালি গায় হটাত তাকিয়ে দেখি ময়না আমার পাশে আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টিতে ভিজছে, ওর খুশিগুলো বৃষ্টির জলকণা হয়ে ওর সারা শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। পরনে একটা সাদা ফ্রক নিচে কিছু নেই। ওর দিকে তাকাতেই আমার কিশোর শরীর থরথর করে কাঁপা শুরু করলো, চোখ দুটো আটকে গেলো ওর শরীরে। বৃষ্টির জলে ভিজে ওর সাদা ফ্রক স্বচ্ছ হয়ে গেছে, লেপ্টে গেছে শরীরের সাথে, আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি ময়নার শরীরের চড়াই উতড়াই উত্যুঙ্গ পর্বত শৃঙ্গ, অববাহিকা বিভাজিকা সব। এমন কি পর্বত শৃঙ্গের গোলাপ কুড়ি দুটিও। আমার বৃষ্টি ভেজা শরীর থেকে বৃষ্টির জল যেন বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। হটাত দেখি ময়না এক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে আর দুষ্টুমির হাসি হাসছে, ওর টসটসে বৃষ্টি ভেজা ঠোঁট দুটিতে আমন্ত্রনের ইঙ্গিত। কিশোর বয়েস, রোমান্স কাকে বলে, কবিত্ব কি কিছুই বুঝতাম না। আজ হলে হয়তো সেদিনের ময়নার বৃষ্টি ভেজা ঠোঁট দুটো দেখে কবির দুলাইন চুরি করে লিখেই ফেলতাম, " সে দিন জৈষ্ঠমাস তোর ঠোঁটে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। "
ময়না আর আমি একই স্কুলে পড়তাম
স্কুলের একটাই বিল্ডিং, সকালে মেয়েদের দুপুরে ছেলেদের ক্লাস হত। তখন হায়ার সেকেন্ডারি ছিল না লাস্ট স্কুল এক্সাম ছিল স্কুল ফাইনাল। তার পরেই কলেজ। আমাদের ক্লাস টেন এ অনেক গুলো সেকশন ছিল। আমি এ সেকশনে পড়তাম। সকালে মেয়েদের ছুটি হতে হতে সাড়ে দশটা বেজে যেত, আমাদের ক্লাস শুরু হত এগারোটায়।
আমাদের ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে একটা কম্পিটিশন ছিল কে আগে গিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চে বসতে পারে। তাই মেয়েদের ছুটি হয়ে যাওয়ার পর মেইন গেট খোলার আগেই আমরা বই খাতা নিয়ে গেটের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম ভেতরে ঢোকার জন্য। মাঝে মাঝে ময়নাকে দেখতাম বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে বেড়িয়ে আসতে। আর যেই না আমাকে দেখত, ব্যাস আমার হাত ধরে হিরহির করে টেনে হজমীয়ালার সামনে দাঁড় করিয়ে দিত। এক গাল মিষ্টি হাসি হেসে বলত হজমী খাওয়াও।উফ সঙ্গে আবার আরো দুজন।
তখনতো মা বাবারা ছেলে মেয়েদের হাতে হাত খরচের যোগান দিত না আজকের মা বাবাদের মত। আমার একমাত্র সোর্স অফ ইনকাম ছিল, সকালে বাড়ির বাজার করতে গিয়ে জাদুকর পিসি সরকার হয়ে গিয়ে কিছু কয়েন ভ্যানিশ করে দেয়া। আর আজকের অর্থ দপ্তরের মত গোঁজামিল দিয়ে মার কাছে ব্যালান্সশিট পেশ করা। এ হেন কষ্টার্জিত পয়সায় ময়নাকে হজমী খাওয়াতে ভালোই লাগতো, কিন্তু ওর শাঁকচুন্নি বান্ধবী গুলো? ধুস.....আমাদের স্কুলের সামনে মেয়েদের ক্লাসের সময় থেকে বিকেল পাঁচটা মানে আমাদের ছুটির সময় পর্যন্ত বাদামওয়ালা, আলুরদম ঘুগনি, হজমীওয়ালারা সব সময় মজুত। তখন একটা সিস্টেম ছিল, ক্লাসের রাফখাতা ফুরিয়ে গেলে, সেটা ওই ফেরিওয়ালাদের দিলে, হয় একটা হজমী বা চারটে আলুরদম বা এক ঠোঙ্গা বাদাম ফ্রি দিত। একদিন আমি স্কুলের গেটের সামনে, তখন জাস্ট মেয়েদের ছুটি হয়েছে, কিছু কিছু মেয়েরা বেড়চ্ছে, আমার একটা শেষ হয়ে যাওয়া রাফ খাতা দিয়ে আলুরদম খাবো। হেব্বি খুশি আমি, আজ ফ্রিতে চারটে আলুরদম। আলুরদমওয়ালা একটা শাল পাতায় চারটে মাখামাখা আলুরদম আমার হাতে দিয়েছে, একটা আলুতে একটা কাঠি গোঁজা।
পুলকিত মনে কাঠি দিয়ে একটা আলু তুলতেই হেব্বি জোরে একটা চিমটি খেলাম, তাকিয়ে দেখি ময়না হাসছে আর বলছে আমাকে ফাঁকি দিয়ে আলুরদম খাওয়া হচ্ছে? উফ সঙ্গে সেই দুই শাঁকচুন্নি। কি আর করি অগত্যা আরো তিনটে কাঠি নিয়ে বাকি তিনটে আলুতে গেঁথে দিলাম।
একটা একটা করে দিন কেটে যায়, ময়না আর আমি আজকাল বাইরেও দেখা করি, দুজনে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই, কিন্তু প্রেম ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় আমরা দুজনেই কিন্তু কিছুই বুঝতাম না। আমাদের কিশোর মনে ভালোবাসা থেকে দুজনের দুজনের প্রতি আকর্ষণটাই বেশি ছিল।
তখন সামার ভ্যাকেশন চলছে, স্কুল ছুটি। একদিন সকাল বেলায় দেখলাম ময়নার বাবা মা আর ছোটো বোন মিনু সেজে গুঁজে বেড়িয়ে গেলো, ইশারায় ময়নাকে জিগ্যেস করে জানতে পারলাম ওদের এক মাসির বাড়ি গেলো ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। ঘরে ময়না একলা। গ্রীষ্মের দুপুর বেলায় বাড়ির সবাই খেয়ে দেয়ে দিবানিদ্রায় মগ্ন। হটাত দেখি ময়না ইশারায় ডাকছে ওর ঘরে, আমি কিছু বুঝতে পারছিনা কেন ডাকছে, এবার ময়নার গলার আওয়াজ, আমাকে একটা অংক দেখিয়ে দেবে নীলদা, কিছুতেই পারছি না। আমি ভাবলাম সবাই ঘুমোচ্ছে যাক খানিকটা সময় ময়নার কাছে থাকতে পারবো। ময়নাদের ঘরে ঢুকে দেখি বিছানার ওপর বই খাতা ছড়ান। আমি বিছানার ওপরে বসতেই ময়না আস্তে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে আমার সামনে এসে বললো, নীলদা তুমিত জানো আমার বাবা রেলে চাকরি করে, বাবার কাছে শুনলাম বাবাকে খড়গপুর বদলি করে দিচ্ছে, আমাদেরও চলে যেতে হবে। তারপর একটু চুপ করে থেকে আমার পাশে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আমার গাল দুটো দুহাতে ধরে বললো, নীলদা আমি জানি তুমি আমাকে চাও, আমাকে আদর করার জন্য তুমি ছটফট করো আমি বুঝতে পারি। তুমি হয়ত বোঝ না আমিও তোমাকে চাই, আমার এই কিশোরী শরীরে তোমার ছোঁয়া তোমার আদর আমারও স্বপ্ন , আমার শরীরে তোমার আদরটাই তোমার স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন। বলে ময়না আমার সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রকটা খুলে আমার ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খেয়ে বললো দেখো আমাকে আজকে এই মুহুর্তে পরিপূর্ণ ভাবে আমি তোমার, আমাকে আদর করো নীলদা। বলে আমার মুখটা চেপে ধরলো ওর বুক দুটোতে যা আমি রোজ কল্পনা করে স্বপ্ন দেখতাম। আমি আর থাকতে না পেরে ওকে এক হ্যাচকায় টেনে নিয়েছিলাম বিছানার ওপর। মনে আছে দুটো ঘন্টা দুটো অনভিজ্ঞ শরীরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সমুদ্র মন্থনের মত অমৃত ছড়িয়ে পরেছিলো আমাদের দুটি কিশোর শরীরে। তারপর একদিন সত্যি ছয় ঘর এক উঠোন ভাড়া বাড়ী ছেরে খড়গপুর চলে গিয়েছিল ময়নারা। শুধু রেখে গিয়েছিল এক রাশ ওর শরীরের স্পর্শ আর স্মৃতি।
আজ কত বছর কেটে গেছে, ময়না কোথায় আছে কেমন আছে জানি না, ওর নীলদাকে মনে আছে কিনা তাও জানি না। আজ শেষ গ্রীষ্মে প্রাক বর্ষার প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়েছে দুপুর থেকে। আমার ঝুল বারান্দা থেকে দেখতে পাচ্ছি বাড়ির পাশের মাঠে অনেক ছেলে মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে, প্রবল বর্ষণও যেন খুব খুশি হয়ে ওদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। হটাত চোখ দুটো আটকিয়ে গেলো, একটি পনেরো ষোলো বছরের মেয়ে সাদা সালোয়ার কামিজ পড়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে ভিজে যাচ্ছে। মনে হলো ওর বৃষ্টি ভেজা খুশি গুলো বৃষ্টির জল হয়ে ঝোড়ে পড়ছে ওর কিশোরী শরীর থেকে। কেন জানি মনে হলো আমার অতিত স্মৃতিই কি আবার ফিরে দেখলাম বৃষ্টি ভেজা মেয়েটির শরীরে?...........