Bose Arun
Favoured Frenzy
******* পূর্ণিমা ******( ছোট গল্প )
## ##
তিন দিন হোলো অবিরাম বৃষ্টি, কখনো মুষলধারে কখনো টিপ টিপ টিপ। শনিবার রাতেই গিন্নি বলে রেখেছিলো, চলো কাল সকালে ডায়মন্ড হারবার যাই, অনেকদিন যাই না, বৃষ্টিতে ভালোই লাগবে।
সেই মতো রবিবার সকালে ড্রাইভারকে
আসতে বলেছিলাম।সকাল থেকেই ভড়া শ্রাবণের আকাশ, বৃষ্টি হয়েই চলেছে, তারি মধ্যে আমরা বেড়িয়ে পরলাম। ভালোই লাগছে, মনে হচ্ছে যেন
রেনিডের ছুটির আঁমেজ। কত চেঞ্জ হয়ে গেছে ডায়মন্ড হারবার রোডের দু পাশটা। শহর গ্রাস করে নিয়েছে পুরো রাস্তার দুপাশটা। এই সেদিনও
এই রাস্তা দিয়ে ডায়মন্ড হারবার যেতে যেতে চোখ জুড়িয়ে যেত। সবুজ ক্ষেত, মাঝে মাঝে হর্টিকালচারের বিশাল বিশাল বাগান, মনে
হতো কোনো উন্নত গ্রামের মধ্য দিয়ে চলেছি। যাই হোক বৃষ্টির মধ্যেই আমরা ডায়মন্ড হারবারের সরকারি রিসর্ট সাগরিকাতে পৌঁছে গেলাম। আগে
থেকেই ঘর বুক করা ছিল। তিন তলায় শেষের ঘর নদী ফেসিং। সামনের দিকে একটা ছোট্ট ব্যালকনী , তিনটে বেতের গোল চেয়ার পাতা।
ওখানে বসলে চোখের সামনে দিগন্ত বিস্তৃত নদী। এমনিতেই ডায়মন্ড হারবারের নদীর এপার ওপার দেখা যায় না। যাই হোক ঘরে ঢুকে ড্রেস চেঞ্জ করে
একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে তাকালাম সামনের নদীর দিকে। ভরা যৌবনে নদী উথাল পাথাল যেন একূল ওকূল দুকূল হারা। টানা বৃষ্টিতে নদীর বুকে সাদা চাদর টানা,আবছা হয়ে গেছে সমস্ত প্রকৃতি। বেয়ারা এসে এক কাপ ধুমায়ীত কফি দিয়ে গেলো। একটা চুমুক দিয়ে আবার তাকালাম নদীর দিকে, একটা মাছধরার নৌকো ধীরে ধীরে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো। মনটা কেমন উদাস হয়ে গেলো, চোখ চলে গেলো আকাশে শ্রাবণের মেঘের দিকে, দেখি যেন অভিমানে ছল ছল দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বলছে কেনো চলে গেলে আমার কাছ থেকে আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে, চমকে গেলাম, এতো পূর্ণিমার চোখ আঁকা রয়েছে
আকাশের বুকে। মনটা চলে গেলো সেই অতিতের অনেক অনেক হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির বুকে।
আমি আর সুনিল খুব বন্ধু, একদিন দুজনের দেখা না হলে মনটা ছটফট করতো। সুনিলের আর একটা পরিচয় ছিল, ও আমার জামাই বাবুর ভাগ্নে, সেই সুবাদে আমি ওর মামা। কিন্তু একই বয়েস হওয়াতে মামাকে সরিয়ে বন্ধুত্বটাই জাকিয়ে বসেছিল। আমি ব্যাবসা করি, সুনিল রেলে চাকরি করে। অতিব পাকা ছেলে, দেরী করেনি বিয়েটা সেরে নিয়েছিল। বর্ধমানের একটি গ্রামে ওর শশুড়বাড়ি। সুনিলের এক মাসতুতো শালী নাম রুবী পার্কসার্কাসের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নার্সিং এর স্টুডেন্ট। কলেজের কাছেই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে ওর এক কলিগকে নিয়ে থাকে। আমার একটা প্রিমিয়র পদ্মিনী ফিয়াট গাড়ি ছিল। ড্রাইভার ও ছিল নাম রজত।
রোজই আমি আর সুনিল রজতকে নিয়ে সন্ধ্যাবেলা ঘুরে বেড়াতাম, কখনো লং ড্রাইভ কখনো সিনেমা। একদিন
সুনিল বললো, চল আজকে তোকে একটা জায়গায়
নিয়ে যাব। আমি জিগ্যেস করাতে বললো চল না দেখতেই পাবি। সুনিল আমাকে নিয়ে গিয়েছিল ওর ন্যাশনাল মেডিকাল কলেজের পেছনে ওর শালী রুবীর বাড়ীতে।সেই প্রথম পূর্ণিমাকে দেখলাম। রুবীর সাথে থাকে ওর সাথে নার্সিং এর স্টুডেন্ট। পরে জেনেছিলাম বনগাঁর ইন্টেরিয়রের গ্রামের মেয়ে হায়ার সেকেন্ডারি করে কলকাতাতে নার্সিং পড়তে এসেছে নিজের পায় দাঁড়িয়ে সংসারকে সাহায্য করার জন্য। যাই হোক সুনিল আমার
সাথে দুজনের আলাপ করিয়ে দিলো। ঘরে একটা মাত্র চেয়ার থাকাতে ওদের বিছানার ওপরেই আমরা বসলাম।ঘরেই রুবী চা করতে বসে গেলো। আমি পূর্ণিমাকে দেখছিলাম, শান্ত লাজুক, গায়ের মেয়ে হলে কি হবে ধব ধবে গায়ের রঙ, যেন সত্যি পূর্ণিমার জোছনা ঝরে পরছে ওর শরীর থেকে। সার্থকনামা মেয়ে। টানা টানা চোখ হালকা কাজল দেয়া, পাতলা ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিকের ছোঁয়া। বোধ হয় দুজনে এই মাত্র ফিরেছে বাইরে থেকে। দুজনেই খুব আরষ্ট আমার সামনে, সুনিলের
কাছে আমার অনেক কথা শুনেছে সেটাই বোধ হয় কারন। সেদিন আমরা চারজন অনেক গল্প করেছিলাম, ধীরেধীরে ওরা দুজন আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল।
তার পর থেকে প্রায়ই আমরা চারজন বেড়োতাম রজতকে সারথী করে। সন্ধ্যা হলেই আমি সুনিল কে অফিস থেকে তুলে নিতাম, রজতকে বলতে হোতো না গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিতো পার্ক সার্কাসের হাসপাতালের গেটে। ওরা দুজন বসে যেতো গাড়ীতে। তারপর সারা কলকাতা ঘুরে বেড়ানো
কখনো ভিক্টোরিয়া কখনো গঙ্গার ঘাটে আড্ডা, ফেরার পথে রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া দাওয়া। বুঝতে পারছিলাম ধীরে ধীরে পূর্ণিমা আমার দিকে দূর্বল হয়ে পরছে। আমারো মনের ভেতর ওর জন্য একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরী হচ্ছিল। বুঝতে পারতাম আমার সাথে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি লাগলেই ও কেমন বিবশ আর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত। আমারো ভালো লাগতো ওর শরীরের একটু ছোঁয়া
লাগলে। এই ভাবে আমাদের চারজনের দিন হই হই করে আনন্দে ঘুরে বেড়িয়ে কেটে যাচ্ছিল। ওদের নার্সিং এর ফাইনাল ইয়ার। শ্রাবণ মাস, ঘোর বর্ষা, সারাদিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। একদিন ওরা তাল তুলল ডায়মন্ডহারবার যাবে। সংগে সংগে প্রস্তাব গ্র্যান্টেড। ঠিক হোলো পরের সানডে তে আমরা ডায়মন্ড হারবার যাচ্ছি। রজত সারথী। যথারীতি রবিবার সকাল সকাল অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরে চলেছে, আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। রজতের
পাশে সুনিল, পেছনে আমরা তিনজন, আমার পাশে পূর্ণিমা তার পাশে রুবী। ফিয়াট ছোট্ট গাড়ী, পেছনে আমরা গা ঘেসাঘেসি করে বসে আছি, ঝমঝমে বৃষ্টির মাঝে গাড়ী ছুটে চলেছে, পূর্ণিমার শরীরে আমার শরীর ছুঁয়ে আছে, বুঝতে পারছি ও নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না, থরথর করে কাঁপছে। আমি আস্তে ওর হাতটা ধরলাম, দেখি ঠান্ডা, থরথর করে কাঁপছে হাতটা। আমি হাতটা ধরতেই আমার হাতটা চেপে ধরে ওর কোলের ওপর টেনে নিলো। যথা সময়ে আমরা ডায়মন্ড হারবারে পৌছলাম, এই সাগরিকাতেই উঠেছিলাম, আর এই ঘরটাই পেয়েছিলাম।
আজ যেখানে বসে কফি খাচ্ছি, মনে আছে আমি আর সুনিল দুটো বিয়ারের গ্লাস নিয়ে বসেছিলাম, ওদের জন্য কফি। আজকের মতই বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি, ব্যালকনির বাইরে বৃষ্টির তোরে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অনেক গল্প অনেক হাসি ঠাট্টা। ধীরে ধীরে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। ওর্ডার দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ আমরা ঘরেই হাসি মস্কারা করতে করতে খেয়েছিলাম। বেয়ারা টেবিল পরিষ্কার করে দেয়ার পর আমরা চারজন বিছানার ওপরে বসে গল্পে মসগুল। হটাৎ দেখি সুনিল আর রুবীর ইশারায়
কিছু কথা হোলো। বিছানা থেকে নেমে সুনিল আমাকে বললো আমি আর আমার শালী একটু একলা গল্প করবো, বুঝিসইতো শালী আধি ঘরবালী,বলে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দুজনে বেড়িয়ে গেলো, যাবার সময় দরজার
ল্যাচটা টেনে দিয়ে।
আমি আর পূর্ণিমা বিছানার ওপরে পাশাপাশি বসে। বাইরে তখন অশান্ত শ্রাবণের বৃষ্টির ধারায় আর নদীর বাতাসের উন্মত্বতায় মনে হচ্ছিল পৃথিবী ধংস হয়ে যাচ্ছে, শুধু আমরা দুজনে বিছানার ওপর শেষ মানব মানবী, পুরাণে ফিরে যাওয়া আদম আর ইভ।
নিজেকে আর সংযত রাখতে পারিনি, এক ঝটকায় টেনে নিয়েছিলাম পূর্ণিমাকে আমার বুকের ওপরে।
তার পর কেটে গেছে বেশ কিছুদিন, পূর্ণিমা কখনো বলে উঠতে পারেনি ওর মনের কথা, বলেছে রুবীকে দিয়ে। আমার খুব ভালো লাগতো পূর্ণিমাকে কিন্তু ভালবাসতে পারিনি। আমি খুব প্র্যাক্টিকাল ছেলে ছিলাম।আমাদের পরিবার কলকাতার বর্ধিষ্ণু পরিবার, চারতলা বাড়ী, বাবা ডাক্তার, ভাইয়েরা বড় বড় পোস্টে সার্ভিস করে।
আমি লেদার টেকনোলজিস্ট, আমার বিরাট কারখানা। আমি জানতাম বনগাঁর প্রত্যন্ত একটি গাঁয়ের মেয়েকে আমার পরিবার মেনে নেবে না। তাই পারিনি ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে, সংসারের নিয়মকে মেনে ওর কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম।
আজ অনেক বছর বাদে আরেকটা শ্রাবণে অঝর
ধারা বৃষ্টির মাঝে ডায়মন্ড হারবারের সাগরিকার সেই ঘরের ব্যালকনিতে বসে বুঝতে পারছি, পূর্ণিমাকে আমি এখনো হারিয়ে ফেলিনি, রয়ে গেছে মনের কোনো একটা ছোট্ট কোণে। তাইতো আজ ওর দুটো অভিমান ভরা চোখ দেখতে পাচ্ছি শ্রাবণ মেঘের গায়ে আঁকা, যেন বলছে কেন ফিরিয়ে দিলে আমাকে।
হুস ফিরতেই দেখি মিষ্টি এসে বসেছে আমার পাশে, ওর হাতেও ধুমায়ীত এক কাপ কফি।
********
## ##
তিন দিন হোলো অবিরাম বৃষ্টি, কখনো মুষলধারে কখনো টিপ টিপ টিপ। শনিবার রাতেই গিন্নি বলে রেখেছিলো, চলো কাল সকালে ডায়মন্ড হারবার যাই, অনেকদিন যাই না, বৃষ্টিতে ভালোই লাগবে।
সেই মতো রবিবার সকালে ড্রাইভারকে
আসতে বলেছিলাম।সকাল থেকেই ভড়া শ্রাবণের আকাশ, বৃষ্টি হয়েই চলেছে, তারি মধ্যে আমরা বেড়িয়ে পরলাম। ভালোই লাগছে, মনে হচ্ছে যেন
রেনিডের ছুটির আঁমেজ। কত চেঞ্জ হয়ে গেছে ডায়মন্ড হারবার রোডের দু পাশটা। শহর গ্রাস করে নিয়েছে পুরো রাস্তার দুপাশটা। এই সেদিনও
এই রাস্তা দিয়ে ডায়মন্ড হারবার যেতে যেতে চোখ জুড়িয়ে যেত। সবুজ ক্ষেত, মাঝে মাঝে হর্টিকালচারের বিশাল বিশাল বাগান, মনে
হতো কোনো উন্নত গ্রামের মধ্য দিয়ে চলেছি। যাই হোক বৃষ্টির মধ্যেই আমরা ডায়মন্ড হারবারের সরকারি রিসর্ট সাগরিকাতে পৌঁছে গেলাম। আগে
থেকেই ঘর বুক করা ছিল। তিন তলায় শেষের ঘর নদী ফেসিং। সামনের দিকে একটা ছোট্ট ব্যালকনী , তিনটে বেতের গোল চেয়ার পাতা।
ওখানে বসলে চোখের সামনে দিগন্ত বিস্তৃত নদী। এমনিতেই ডায়মন্ড হারবারের নদীর এপার ওপার দেখা যায় না। যাই হোক ঘরে ঢুকে ড্রেস চেঞ্জ করে
একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরে বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে তাকালাম সামনের নদীর দিকে। ভরা যৌবনে নদী উথাল পাথাল যেন একূল ওকূল দুকূল হারা। টানা বৃষ্টিতে নদীর বুকে সাদা চাদর টানা,আবছা হয়ে গেছে সমস্ত প্রকৃতি। বেয়ারা এসে এক কাপ ধুমায়ীত কফি দিয়ে গেলো। একটা চুমুক দিয়ে আবার তাকালাম নদীর দিকে, একটা মাছধরার নৌকো ধীরে ধীরে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো। মনটা কেমন উদাস হয়ে গেলো, চোখ চলে গেলো আকাশে শ্রাবণের মেঘের দিকে, দেখি যেন অভিমানে ছল ছল দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বলছে কেনো চলে গেলে আমার কাছ থেকে আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে, চমকে গেলাম, এতো পূর্ণিমার চোখ আঁকা রয়েছে
আকাশের বুকে। মনটা চলে গেলো সেই অতিতের অনেক অনেক হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির বুকে।
আমি আর সুনিল খুব বন্ধু, একদিন দুজনের দেখা না হলে মনটা ছটফট করতো। সুনিলের আর একটা পরিচয় ছিল, ও আমার জামাই বাবুর ভাগ্নে, সেই সুবাদে আমি ওর মামা। কিন্তু একই বয়েস হওয়াতে মামাকে সরিয়ে বন্ধুত্বটাই জাকিয়ে বসেছিল। আমি ব্যাবসা করি, সুনিল রেলে চাকরি করে। অতিব পাকা ছেলে, দেরী করেনি বিয়েটা সেরে নিয়েছিল। বর্ধমানের একটি গ্রামে ওর শশুড়বাড়ি। সুনিলের এক মাসতুতো শালী নাম রুবী পার্কসার্কাসের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নার্সিং এর স্টুডেন্ট। কলেজের কাছেই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে ওর এক কলিগকে নিয়ে থাকে। আমার একটা প্রিমিয়র পদ্মিনী ফিয়াট গাড়ি ছিল। ড্রাইভার ও ছিল নাম রজত।
রোজই আমি আর সুনিল রজতকে নিয়ে সন্ধ্যাবেলা ঘুরে বেড়াতাম, কখনো লং ড্রাইভ কখনো সিনেমা। একদিন
সুনিল বললো, চল আজকে তোকে একটা জায়গায়
নিয়ে যাব। আমি জিগ্যেস করাতে বললো চল না দেখতেই পাবি। সুনিল আমাকে নিয়ে গিয়েছিল ওর ন্যাশনাল মেডিকাল কলেজের পেছনে ওর শালী রুবীর বাড়ীতে।সেই প্রথম পূর্ণিমাকে দেখলাম। রুবীর সাথে থাকে ওর সাথে নার্সিং এর স্টুডেন্ট। পরে জেনেছিলাম বনগাঁর ইন্টেরিয়রের গ্রামের মেয়ে হায়ার সেকেন্ডারি করে কলকাতাতে নার্সিং পড়তে এসেছে নিজের পায় দাঁড়িয়ে সংসারকে সাহায্য করার জন্য। যাই হোক সুনিল আমার
সাথে দুজনের আলাপ করিয়ে দিলো। ঘরে একটা মাত্র চেয়ার থাকাতে ওদের বিছানার ওপরেই আমরা বসলাম।ঘরেই রুবী চা করতে বসে গেলো। আমি পূর্ণিমাকে দেখছিলাম, শান্ত লাজুক, গায়ের মেয়ে হলে কি হবে ধব ধবে গায়ের রঙ, যেন সত্যি পূর্ণিমার জোছনা ঝরে পরছে ওর শরীর থেকে। সার্থকনামা মেয়ে। টানা টানা চোখ হালকা কাজল দেয়া, পাতলা ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিকের ছোঁয়া। বোধ হয় দুজনে এই মাত্র ফিরেছে বাইরে থেকে। দুজনেই খুব আরষ্ট আমার সামনে, সুনিলের
কাছে আমার অনেক কথা শুনেছে সেটাই বোধ হয় কারন। সেদিন আমরা চারজন অনেক গল্প করেছিলাম, ধীরেধীরে ওরা দুজন আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল।
তার পর থেকে প্রায়ই আমরা চারজন বেড়োতাম রজতকে সারথী করে। সন্ধ্যা হলেই আমি সুনিল কে অফিস থেকে তুলে নিতাম, রজতকে বলতে হোতো না গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিতো পার্ক সার্কাসের হাসপাতালের গেটে। ওরা দুজন বসে যেতো গাড়ীতে। তারপর সারা কলকাতা ঘুরে বেড়ানো
কখনো ভিক্টোরিয়া কখনো গঙ্গার ঘাটে আড্ডা, ফেরার পথে রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া দাওয়া। বুঝতে পারছিলাম ধীরে ধীরে পূর্ণিমা আমার দিকে দূর্বল হয়ে পরছে। আমারো মনের ভেতর ওর জন্য একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরী হচ্ছিল। বুঝতে পারতাম আমার সাথে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি লাগলেই ও কেমন বিবশ আর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত। আমারো ভালো লাগতো ওর শরীরের একটু ছোঁয়া
লাগলে। এই ভাবে আমাদের চারজনের দিন হই হই করে আনন্দে ঘুরে বেড়িয়ে কেটে যাচ্ছিল। ওদের নার্সিং এর ফাইনাল ইয়ার। শ্রাবণ মাস, ঘোর বর্ষা, সারাদিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। একদিন ওরা তাল তুলল ডায়মন্ডহারবার যাবে। সংগে সংগে প্রস্তাব গ্র্যান্টেড। ঠিক হোলো পরের সানডে তে আমরা ডায়মন্ড হারবার যাচ্ছি। রজত সারথী। যথারীতি রবিবার সকাল সকাল অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরে চলেছে, আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। রজতের
পাশে সুনিল, পেছনে আমরা তিনজন, আমার পাশে পূর্ণিমা তার পাশে রুবী। ফিয়াট ছোট্ট গাড়ী, পেছনে আমরা গা ঘেসাঘেসি করে বসে আছি, ঝমঝমে বৃষ্টির মাঝে গাড়ী ছুটে চলেছে, পূর্ণিমার শরীরে আমার শরীর ছুঁয়ে আছে, বুঝতে পারছি ও নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না, থরথর করে কাঁপছে। আমি আস্তে ওর হাতটা ধরলাম, দেখি ঠান্ডা, থরথর করে কাঁপছে হাতটা। আমি হাতটা ধরতেই আমার হাতটা চেপে ধরে ওর কোলের ওপর টেনে নিলো। যথা সময়ে আমরা ডায়মন্ড হারবারে পৌছলাম, এই সাগরিকাতেই উঠেছিলাম, আর এই ঘরটাই পেয়েছিলাম।
আজ যেখানে বসে কফি খাচ্ছি, মনে আছে আমি আর সুনিল দুটো বিয়ারের গ্লাস নিয়ে বসেছিলাম, ওদের জন্য কফি। আজকের মতই বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি, ব্যালকনির বাইরে বৃষ্টির তোরে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অনেক গল্প অনেক হাসি ঠাট্টা। ধীরে ধীরে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। ওর্ডার দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ আমরা ঘরেই হাসি মস্কারা করতে করতে খেয়েছিলাম। বেয়ারা টেবিল পরিষ্কার করে দেয়ার পর আমরা চারজন বিছানার ওপরে বসে গল্পে মসগুল। হটাৎ দেখি সুনিল আর রুবীর ইশারায়
কিছু কথা হোলো। বিছানা থেকে নেমে সুনিল আমাকে বললো আমি আর আমার শালী একটু একলা গল্প করবো, বুঝিসইতো শালী আধি ঘরবালী,বলে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দুজনে বেড়িয়ে গেলো, যাবার সময় দরজার
ল্যাচটা টেনে দিয়ে।
আমি আর পূর্ণিমা বিছানার ওপরে পাশাপাশি বসে। বাইরে তখন অশান্ত শ্রাবণের বৃষ্টির ধারায় আর নদীর বাতাসের উন্মত্বতায় মনে হচ্ছিল পৃথিবী ধংস হয়ে যাচ্ছে, শুধু আমরা দুজনে বিছানার ওপর শেষ মানব মানবী, পুরাণে ফিরে যাওয়া আদম আর ইভ।
নিজেকে আর সংযত রাখতে পারিনি, এক ঝটকায় টেনে নিয়েছিলাম পূর্ণিমাকে আমার বুকের ওপরে।
তার পর কেটে গেছে বেশ কিছুদিন, পূর্ণিমা কখনো বলে উঠতে পারেনি ওর মনের কথা, বলেছে রুবীকে দিয়ে। আমার খুব ভালো লাগতো পূর্ণিমাকে কিন্তু ভালবাসতে পারিনি। আমি খুব প্র্যাক্টিকাল ছেলে ছিলাম।আমাদের পরিবার কলকাতার বর্ধিষ্ণু পরিবার, চারতলা বাড়ী, বাবা ডাক্তার, ভাইয়েরা বড় বড় পোস্টে সার্ভিস করে।
আমি লেদার টেকনোলজিস্ট, আমার বিরাট কারখানা। আমি জানতাম বনগাঁর প্রত্যন্ত একটি গাঁয়ের মেয়েকে আমার পরিবার মেনে নেবে না। তাই পারিনি ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে, সংসারের নিয়মকে মেনে ওর কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম।
আজ অনেক বছর বাদে আরেকটা শ্রাবণে অঝর
ধারা বৃষ্টির মাঝে ডায়মন্ড হারবারের সাগরিকার সেই ঘরের ব্যালকনিতে বসে বুঝতে পারছি, পূর্ণিমাকে আমি এখনো হারিয়ে ফেলিনি, রয়ে গেছে মনের কোনো একটা ছোট্ট কোণে। তাইতো আজ ওর দুটো অভিমান ভরা চোখ দেখতে পাচ্ছি শ্রাবণ মেঘের গায়ে আঁকা, যেন বলছে কেন ফিরিয়ে দিলে আমাকে।
হুস ফিরতেই দেখি মিষ্টি এসে বসেছে আমার পাশে, ওর হাতেও ধুমায়ীত এক কাপ কফি।
********
Top of Form
Bottom of Form
Bottom of Form