( আমার এই ছোট গল্প " পিকনিক "
বিখ্যাত আমেরিকান লেখক O Henry র বিখ্যাত শর্ট স্টোরি The Last leaf আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' ক্যামেলিয়া ' এই দুটি লেখার ছায়া নিয়ে লেখা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাদের পড়ার জন্য পোস্ট করলাম। )
****** পিকনিক******
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত আমি, শহরের ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিয়েছে, বলেছে পাঠাতে হবে কোনো হীল টপ নার্সিং হোমে ।আমার ফুসফুসে নাকি পরিষ্কার বাতাসের প্রয়োজন ।বাড়ির প্রিয় জনেরা এডমিট করে দিয়েছে দেড়াদুনের পাহাড়ের ওপরে এই নার্সিং হোমটাতে । আমাকে যে ঘরটাতে দিয়েছে তার তিন দিকে বিশাল পর্দা ঢাকা কাচের জানলা ।ঘরে ঢুকেই পর্দা গুলো খুলে দিলাম i
আ….কি মনোরম দৃশ্য, উচুউচু পাহাড়, সবুজ বনানী, আকাশ ছোঁয়া পাইন গাছ, চার দিকে ফুলের বাগান, প্রজাপতিরা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে বুঝতে পারছি না কোনটা ফুল কোনটা প্রজাপতি । ঘরের যে জানলাটা আমি বিছানায় শুয়ে দেখতে পাই, সেই জানলার কাচের বাইরে মালি টব সহ একটা গোলাপ গাছ ছোট্ট একটা কুড়ি সমেত রেখেছে ।
দেখে মনটা খুশিখুশি হয়ে উঠলো । এক দিন কিছু গান কথা কলতান উচ্ছ্বাস আর বাচ্চাদের হুটো পুটির শব্দ কানে এলো, আস্তেআস্তে জানলার কাছে গিয়ে দেখি এক দল পিকনিক পার্টি হোমের বাউন্ডারীর বাইরে পিকনিকে মেতেছে i এক দঙ্গল ছেলে মেয়ে রং বেরং এর পোশাক পরে হাসি আর গানে মেতে উঠেছে, বাচ্চারা ফুলেফুলে প্রজাপতি ধরতে ব্যাস্ত, যেন একটা ফুলের বনে ফুলের হাট বসেছে । আমার মনে হচ্ছিল আমিও তো পারি ঝরনা থেকে জল ভরে আনতে, কাছের বন থেকে শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে আনতে, আর শিভালরী দেখাতে একটা ভদ্র গোছের ভালুককেও তো তাড়াতে পারি ।ভাবতে ভাবতে আর ওদের দেখতে দেখতে মনটা ঝলমলে হয়ে উঠলো । ঘরে ঢুকে দেখি জানলার গোলাপের কুড়িটা অনেক বড় হয়ে গেছে । সব সময় বিছানায় শুয়ে তাকিয়ে থাকি গোলাপ কুড়িটার দিকে । আর রোজ কোনো না কোনো পিকনিকের দলের উচ্ছ্বাস আর কলতান আমার মনটাকে ভরিয়ে রাখে i
এক দিন দেখি গোলাপের কুড়িটা প্রস্ফুটিত হয়ে পরিপূর্ণ একটা বড় লাল গোলাপ সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে । ধীরে ধীরে আমার শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছে, এখন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনা , শুয়ে শুয়েই দেখি গোলাপ টাকে আর মনেমনে ভাবি, যত দিন গোলাপটা আছে আমিও বেঁচে আছি , যে দিন ঝরে যাবে আমিও আর থাকবো না। এই কথাটা ঘরের নার্স কে কয়েক বার বলেছি আর বলেছি গোলাপটাকে যত্ন করতে যাতে আমিও আর কয়েকটা দিন এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারি i
হটাৎ এক দিন শুনলাম কলকাতা থেকে আর্টস কলেজের ছেলে মেয়েরা পিকনিক করতে এসেছে, ওরা দুদিন থাকবে । আমার সাথেও দেখা করে অনেক গল্প করলো…. ওরাও লাল গোলাপটার কাছে গিয়ে খুব তারিফ করলো ........ আমি ওদের বললাম যে দিন গোলাপটা ঝরে যাবে আমিও সে দিন পৃথিবী থেকে চলে যাবো । বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখি আস্তেআস্তে গোলাপটা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে । পরের দিন শুনলাম ওই জানলাটার কাচে কি হয়েছে, দুদিন জানলার পর্দা সরানো যাবে না ।
আমি জানি দুদিন বাদে যখন পর্দা সরানো হবে দেখবো
গোলাপ ফুলটা ঝরে গেছে, গাছটাও আর নেই ।
নিস্তেজ হয়ে পরে থাকি বিছানায় ....
শুনতে পাই পিকনিক করতে আসা আর্ট কলজের ছেলে মেয়েরা আনন্দে গান গাইছে…জীবনের গান, বেঁচে থাকার গান । আমি জানি যে দিন সকালে নার্স এসে খুলে দেবে জানলার পর্দা….দেখবো গোলাপটা নেই..আমিও আর থাকবো না ।
পরের দিন সকালে প্রথম সূর্যের আলোয় সমস্ত পাহাড় ঝকমক করছে । শুনলাম আর্ট কলেজের পিকনিক করতে আসা ছেলে মেয়েরা ফিরে গেছে কলকাতায় i ভোর বেলায় নার্স এসে ওই জানলার পর্দা দুটো হাট করে খুলে দিল, আমি চোখ বুঁজে আছি .......
নার্স বললো চোখ খুলুন দেখুন পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, তাকিয়ে দেখি এক রাশ সূর্যের আলোয় ঘরটা ভরে গেছে, জানলার দিকে তাকাতে আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো…..ওইতো আমার লাল গোলাপ সজীব সতেজ , যেন একটি টুকটুকে মেয়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে i মনটা হয়ে গেলো শান্ত স্নিগ্ধ…..
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলাম i এখন বাইরে ব্যালকনিতে বসে রোজ পিকনিক দলের আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে আমার মনটাও সুস্থ হয়ে উঠছে ।
আস্তেআস্তে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে শুনলাম কলকাতা থেকে আর্ট কলেজের ছেলে মেয়েরা যারা পাহাড়ে দুদিনের জন্য পিকনিক করতে গিয়েছিলো ওরাই বাইরে থেকে পর্দার আড়ালে আমার ঘরের জানলার শার্শিতে নিঁখুত ভাবে ফুল সমেত গোলাপ
গাছটাকে এঁকে দিয়েছিলো যাতে আমার প্রান লাল গোলাপটা আর ঝরতে না পারে i
ওরা পিকনিক করতে গিয়েছিল বলে আজও আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে আছি ।……………………………………………………
#######
বিখ্যাত আমেরিকান লেখক O Henry র বিখ্যাত শর্ট স্টোরি The Last leaf আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' ক্যামেলিয়া ' এই দুটি লেখার ছায়া নিয়ে লেখা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাদের পড়ার জন্য পোস্ট করলাম। )
****** পিকনিক******
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত আমি, শহরের ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিয়েছে, বলেছে পাঠাতে হবে কোনো হীল টপ নার্সিং হোমে ।আমার ফুসফুসে নাকি পরিষ্কার বাতাসের প্রয়োজন ।বাড়ির প্রিয় জনেরা এডমিট করে দিয়েছে দেড়াদুনের পাহাড়ের ওপরে এই নার্সিং হোমটাতে । আমাকে যে ঘরটাতে দিয়েছে তার তিন দিকে বিশাল পর্দা ঢাকা কাচের জানলা ।ঘরে ঢুকেই পর্দা গুলো খুলে দিলাম i
আ….কি মনোরম দৃশ্য, উচুউচু পাহাড়, সবুজ বনানী, আকাশ ছোঁয়া পাইন গাছ, চার দিকে ফুলের বাগান, প্রজাপতিরা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে বুঝতে পারছি না কোনটা ফুল কোনটা প্রজাপতি । ঘরের যে জানলাটা আমি বিছানায় শুয়ে দেখতে পাই, সেই জানলার কাচের বাইরে মালি টব সহ একটা গোলাপ গাছ ছোট্ট একটা কুড়ি সমেত রেখেছে ।
দেখে মনটা খুশিখুশি হয়ে উঠলো । এক দিন কিছু গান কথা কলতান উচ্ছ্বাস আর বাচ্চাদের হুটো পুটির শব্দ কানে এলো, আস্তেআস্তে জানলার কাছে গিয়ে দেখি এক দল পিকনিক পার্টি হোমের বাউন্ডারীর বাইরে পিকনিকে মেতেছে i এক দঙ্গল ছেলে মেয়ে রং বেরং এর পোশাক পরে হাসি আর গানে মেতে উঠেছে, বাচ্চারা ফুলেফুলে প্রজাপতি ধরতে ব্যাস্ত, যেন একটা ফুলের বনে ফুলের হাট বসেছে । আমার মনে হচ্ছিল আমিও তো পারি ঝরনা থেকে জল ভরে আনতে, কাছের বন থেকে শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে আনতে, আর শিভালরী দেখাতে একটা ভদ্র গোছের ভালুককেও তো তাড়াতে পারি ।ভাবতে ভাবতে আর ওদের দেখতে দেখতে মনটা ঝলমলে হয়ে উঠলো । ঘরে ঢুকে দেখি জানলার গোলাপের কুড়িটা অনেক বড় হয়ে গেছে । সব সময় বিছানায় শুয়ে তাকিয়ে থাকি গোলাপ কুড়িটার দিকে । আর রোজ কোনো না কোনো পিকনিকের দলের উচ্ছ্বাস আর কলতান আমার মনটাকে ভরিয়ে রাখে i
এক দিন দেখি গোলাপের কুড়িটা প্রস্ফুটিত হয়ে পরিপূর্ণ একটা বড় লাল গোলাপ সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে । ধীরে ধীরে আমার শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছে, এখন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনা , শুয়ে শুয়েই দেখি গোলাপ টাকে আর মনেমনে ভাবি, যত দিন গোলাপটা আছে আমিও বেঁচে আছি , যে দিন ঝরে যাবে আমিও আর থাকবো না। এই কথাটা ঘরের নার্স কে কয়েক বার বলেছি আর বলেছি গোলাপটাকে যত্ন করতে যাতে আমিও আর কয়েকটা দিন এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারি i
হটাৎ এক দিন শুনলাম কলকাতা থেকে আর্টস কলেজের ছেলে মেয়েরা পিকনিক করতে এসেছে, ওরা দুদিন থাকবে । আমার সাথেও দেখা করে অনেক গল্প করলো…. ওরাও লাল গোলাপটার কাছে গিয়ে খুব তারিফ করলো ........ আমি ওদের বললাম যে দিন গোলাপটা ঝরে যাবে আমিও সে দিন পৃথিবী থেকে চলে যাবো । বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখি আস্তেআস্তে গোলাপটা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে । পরের দিন শুনলাম ওই জানলাটার কাচে কি হয়েছে, দুদিন জানলার পর্দা সরানো যাবে না ।
আমি জানি দুদিন বাদে যখন পর্দা সরানো হবে দেখবো
গোলাপ ফুলটা ঝরে গেছে, গাছটাও আর নেই ।
নিস্তেজ হয়ে পরে থাকি বিছানায় ....
শুনতে পাই পিকনিক করতে আসা আর্ট কলজের ছেলে মেয়েরা আনন্দে গান গাইছে…জীবনের গান, বেঁচে থাকার গান । আমি জানি যে দিন সকালে নার্স এসে খুলে দেবে জানলার পর্দা….দেখবো গোলাপটা নেই..আমিও আর থাকবো না ।
পরের দিন সকালে প্রথম সূর্যের আলোয় সমস্ত পাহাড় ঝকমক করছে । শুনলাম আর্ট কলেজের পিকনিক করতে আসা ছেলে মেয়েরা ফিরে গেছে কলকাতায় i ভোর বেলায় নার্স এসে ওই জানলার পর্দা দুটো হাট করে খুলে দিল, আমি চোখ বুঁজে আছি .......
নার্স বললো চোখ খুলুন দেখুন পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, তাকিয়ে দেখি এক রাশ সূর্যের আলোয় ঘরটা ভরে গেছে, জানলার দিকে তাকাতে আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো…..ওইতো আমার লাল গোলাপ সজীব সতেজ , যেন একটি টুকটুকে মেয়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে i মনটা হয়ে গেলো শান্ত স্নিগ্ধ…..
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলাম i এখন বাইরে ব্যালকনিতে বসে রোজ পিকনিক দলের আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে আমার মনটাও সুস্থ হয়ে উঠছে ।
আস্তেআস্তে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে শুনলাম কলকাতা থেকে আর্ট কলেজের ছেলে মেয়েরা যারা পাহাড়ে দুদিনের জন্য পিকনিক করতে গিয়েছিলো ওরাই বাইরে থেকে পর্দার আড়ালে আমার ঘরের জানলার শার্শিতে নিঁখুত ভাবে ফুল সমেত গোলাপ
গাছটাকে এঁকে দিয়েছিলো যাতে আমার প্রান লাল গোলাপটা আর ঝরতে না পারে i
ওরা পিকনিক করতে গিয়েছিল বলে আজও আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে আছি ।……………………………………………………
#######