• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

ধনী মজুর

Meghnad

Epic Legend
Chat Pro User
পড়াতে বের হয়েছি যখন সূর্য ডুবে গেছে। বাসার নিচ থেকে একটা গায়ে টানা রিকশা নিলাম। প্রায় ৩ কিলো রাস্তা। ভাড়া ৫০টাকা। দেশের ব্যস্ততম শহর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সন্ধ্যার ব্যস্ততার জানান দিচ্ছে। রিকশাওয়ালার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাবে না। মনে রাখবার তো প্রশ্নই ওঠে না।

রিকশা চলতে শুরু করল শহরের অলিগলি দিয়ে। আমি অভ্যাসবশত রিক্সায় উঠেই সিগারেট জ্বালালাম। এখনও ৪টা শলাকা রয়েছে প্যাকেটে। কিনতে হবে আবার। বসে বসে সন্ধ্যার পড়ানোর পরের সময়টা কিভাবে কাটাবো তার ছক কাটছি মনে মনে। রিকশাওয়ালা আমার চেনা পথ ধরে চলছে তাই অতো খেয়াল করছি না রাস্তার দিকে। হঠাৎ রাস্তার পাশে রিক্সাটা আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে থামতে শুরু করল। ভাবলাম জ্যাম বুঝি রাস্তায়। কিন্তু সামনের গাড়িটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম যে অন্যান্য সময়ের মত জ্যাম নেই। রাস্তা ফাকাই। তাহলে থামালো কেন রিকশাটা?

রিক্সাওয়ালা দেখছি রিক্সা থেকে নেমে পড়ছেন। আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করলেন আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বললেন, “মামা, মুখটা জ্যাম হইয়া আছে। একটু ভিজায়া লই।“ কি বলল ঠিক বুঝলাম না। ভাবলাম হয়তো প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাইছেন, আমি ভুলভাল শুনেছি। দেখি, উনি রাস্তার পাশের ভ্যান ধরনের একটি ফুচকাওয়ালার কার্টের সামনে রিকশা থামিয়েছেন। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ফুচকার এই কার্টগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। দেখলাম রিক্সাওয়ালাটা দোকানে গেল। একটা একগ্লাস পানি খেল। এরপর একটা ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল। আমাকে দেখি ততক্ষণে তাকে একটা প্লেটে ফুচকা সাজিয়ে দিয়েছে ফুচকাওয়ালা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

আমার তো মেজাজ বিগড়ে গেল। কে করে এগুলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে ব্যাটার এখন ফুচকা খাইবার শখ হয়েছে। যত্তোসব। এর মধ্যে দেখি ফুচকার দোকানের এক পিচ্চি আমাকে এক প্লেট ফুচকা সাধছে। বল্লাম, ”আমি তো অর্ডার দেই নি রে। অন্য কেউ দিয়েছে।“ পিচ্চি আমাকে বলে, ‘আপনার জন্যই।“

আমি তো একদম অবাক। দেখি রিক্সাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত এক হা করে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে ভড়া মুখে অস্পষ্টভাবে আমাকে বলছে, “খান মামা, আপনার জন্যই।“

গেল মেজাজ বিগড়ে। সালা এক প্লেট ফুচকা ৪০ টাকা। অযথা গচ্চা। তুই খাবি খা। আমাকে দিতে কে বলেছে? উপায় না পেয়ে খেতে শুরু করলাম। ভালই মোটামুটি।

রিক্সাওয়ালার খাওয়া শেষ। আমিও তাই দেখে তাড়াতাড়ি ফুচকাগুলো সাবাড় করলাম। দেখি রিক্সাওয়ালা বিল না দিয়েই রিক্সার কাছে এসে রিক্সা চালানো শুরু করল। ফুচকাওয়ালা আমাদের দিকে ফিরেই তাকাচ্ছে না। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিয়াঁ, বিল তো দেই নি।“ রিক্সাওয়ালা বলে, “লাগবে না। আমার নাম বইলা যে কেউ আইসা খাইয়া যাইতে পারব এই মহল্লার যেকোনো ফুচকাওয়ালার দোকান থেইকা।“

আমি আরও অবাক। বলে কি লোকটা? জিজ্ঞেস করলাম, “কেন তুমি কি করেছো যে তোমার নামে ফুচকা খেয়ে আসা যাবে?”

বলছে, “এই মহল্লার সব ফুচকার দোকানের লাইন আমার।“ আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” বলে, “এই মহল্লার সব ফুচকাওয়ালা আমার থেকে ফুচকা সাপলাই নেয়। আমার ফুচকার কারখানা আছে দুইটা।“

মাথায় যেন বাজ পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দুইটা কারখানা? তাহলে তুমি রিক্সা চালাও কেন?” জবাব পেলাম, “আমার কেচ্ছা এটা।“

লোকটা রিক্সা চালাতে চালাতে আমাকে তার গল্প বলতে থাকলোঃ_

“আমার দুইটা ফ্যাক্টরি আছে ফুচকার। আমার দুইটা ছেলে। অগোর মা নাই। মইরা গেছে। তাই আমি পরে আবার বিয়া করি। কিন্তু অগোর সৎমা অগোরে দেখতে পারে না। তাই অগোর দুই ভাইরে আমার কারখানা দুইটা বুঝায় দিছি। ছয় লাখ ক্যাশ টাকা অগোরে বুঝায়া দিয়া সইরা আইছি মাত্র তিনশো টাকা পকেটে লইয়া। কারখানা দুইটা আমার নামেই। কিন্তু লাভ সব অরা রাখে। আমি কইছি অগোরে যে আমারে কিছু দেওন লাগব না। তরা তগো রাস্তা বানা। আমার সময় হইলে আমি পামু। বুঝলেন মামা, অগোরে যদি কারখানার কাম না বুঝায়া দিতাম অরা তাইলে সৎমার লেইগা এদিক সেদিক ঘুরতো, শান্তিতে থাকতে পারত না। নষ্ট হইয়া যাইত। অরা সব লাভ নিজেরা রাখে। আমি রিকশা চালায়া আমার বউরে লইয়া আলাদা থাকি। জানেন, অগোর একেকজনের ব্যাংকে না হইলেও ৫ কোটি কইরা টাকা আছে।“

রিক্সা থামার পর নেমে নিজেকে হতভম্ব লাগছিল। কি করব? ভাড়া কি দিব? অবশ্যই। যতো পয়সাই থাকুক, এটা উনি উপার্জন করেছেন। আবার ভাবলাম, তাহলে ফুচকার দামটার কি হবে? পড়ে ভাবলাম যার দুই ছেলের পকেটে দশ কোটি টাকা আছে, যে এই অঞ্চলের সব দোকানদারের ফুচকার সাপলাইয়ার তাকে কি ফুচকার দাম দিব আর? চলে এলাম। খেয়াল করলাম, ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয় নি।

কানে বাঁজছে তার বলা কথা, “আমার ছেলেরা টাকার বস্তায় ঘুমায়, মামা। আর আমি রাস্তার রাজা।“

পালনকর্তারা নানা ত্যাগ স্বীকার করেন।

আমরা বুঝি না। জানি না।


জানতেও চাই না। বুঝতেও চাই না।
 
পড়াতে বের হয়েছি যখন সূর্য ডুবে গেছে। বাসার নিচ থেকে একটা গায়ে টানা রিকশা নিলাম। প্রায় ৩ কিলো রাস্তা। ভাড়া ৫০টাকা। দেশের ব্যস্ততম শহর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সন্ধ্যার ব্যস্ততার জানান দিচ্ছে। রিকশাওয়ালার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাবে না। মনে রাখবার তো প্রশ্নই ওঠে না।

রিকশা চলতে শুরু করল শহরের অলিগলি দিয়ে। আমি অভ্যাসবশত রিক্সায় উঠেই সিগারেট জ্বালালাম। এখনও ৪টা শলাকা রয়েছে প্যাকেটে। কিনতে হবে আবার। বসে বসে সন্ধ্যার পড়ানোর পরের সময়টা কিভাবে কাটাবো তার ছক কাটছি মনে মনে। রিকশাওয়ালা আমার চেনা পথ ধরে চলছে তাই অতো খেয়াল করছি না রাস্তার দিকে। হঠাৎ রাস্তার পাশে রিক্সাটা আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে থামতে শুরু করল। ভাবলাম জ্যাম বুঝি রাস্তায়। কিন্তু সামনের গাড়িটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম যে অন্যান্য সময়ের মত জ্যাম নেই। রাস্তা ফাকাই। তাহলে থামালো কেন রিকশাটা?

রিক্সাওয়ালা দেখছি রিক্সা থেকে নেমে পড়ছেন। আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করলেন আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বললেন, “মামা, মুখটা জ্যাম হইয়া আছে। একটু ভিজায়া লই।“ কি বলল ঠিক বুঝলাম না। ভাবলাম হয়তো প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাইছেন, আমি ভুলভাল শুনেছি। দেখি, উনি রাস্তার পাশের ভ্যান ধরনের একটি ফুচকাওয়ালার কার্টের সামনে রিকশা থামিয়েছেন। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ফুচকার এই কার্টগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। দেখলাম রিক্সাওয়ালাটা দোকানে গেল। একটা একগ্লাস পানি খেল। এরপর একটা ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল। আমাকে দেখি ততক্ষণে তাকে একটা প্লেটে ফুচকা সাজিয়ে দিয়েছে ফুচকাওয়ালা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

আমার তো মেজাজ বিগড়ে গেল। কে করে এগুলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে ব্যাটার এখন ফুচকা খাইবার শখ হয়েছে। যত্তোসব। এর মধ্যে দেখি ফুচকার দোকানের এক পিচ্চি আমাকে এক প্লেট ফুচকা সাধছে। বল্লাম, ”আমি তো অর্ডার দেই নি রে। অন্য কেউ দিয়েছে।“ পিচ্চি আমাকে বলে, ‘আপনার জন্যই।“

আমি তো একদম অবাক। দেখি রিক্সাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত এক হা করে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে ভড়া মুখে অস্পষ্টভাবে আমাকে বলছে, “খান মামা, আপনার জন্যই।“

গেল মেজাজ বিগড়ে। সালা এক প্লেট ফুচকা ৪০ টাকা। অযথা গচ্চা। তুই খাবি খা। আমাকে দিতে কে বলেছে? উপায় না পেয়ে খেতে শুরু করলাম। ভালই মোটামুটি।

রিক্সাওয়ালার খাওয়া শেষ। আমিও তাই দেখে তাড়াতাড়ি ফুচকাগুলো সাবাড় করলাম। দেখি রিক্সাওয়ালা বিল না দিয়েই রিক্সার কাছে এসে রিক্সা চালানো শুরু করল। ফুচকাওয়ালা আমাদের দিকে ফিরেই তাকাচ্ছে না। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিয়াঁ, বিল তো দেই নি।“ রিক্সাওয়ালা বলে, “লাগবে না। আমার নাম বইলা যে কেউ আইসা খাইয়া যাইতে পারব এই মহল্লার যেকোনো ফুচকাওয়ালার দোকান থেইকা।“

আমি আরও অবাক। বলে কি লোকটা? জিজ্ঞেস করলাম, “কেন তুমি কি করেছো যে তোমার নামে ফুচকা খেয়ে আসা যাবে?”

বলছে, “এই মহল্লার সব ফুচকার দোকানের লাইন আমার।“ আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” বলে, “এই মহল্লার সব ফুচকাওয়ালা আমার থেকে ফুচকা সাপলাই নেয়। আমার ফুচকার কারখানা আছে দুইটা।“

মাথায় যেন বাজ পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দুইটা কারখানা? তাহলে তুমি রিক্সা চালাও কেন?” জবাব পেলাম, “আমার কেচ্ছা এটা।“

লোকটা রিক্সা চালাতে চালাতে আমাকে তার গল্প বলতে থাকলোঃ_

“আমার দুইটা ফ্যাক্টরি আছে ফুচকার। আমার দুইটা ছেলে। অগোর মা নাই। মইরা গেছে। তাই আমি পরে আবার বিয়া করি। কিন্তু অগোর সৎমা অগোরে দেখতে পারে না। তাই অগোর দুই ভাইরে আমার কারখানা দুইটা বুঝায় দিছি। ছয় লাখ ক্যাশ টাকা অগোরে বুঝায়া দিয়া সইরা আইছি মাত্র তিনশো টাকা পকেটে লইয়া। কারখানা দুইটা আমার নামেই। কিন্তু লাভ সব অরা রাখে। আমি কইছি অগোরে যে আমারে কিছু দেওন লাগব না। তরা তগো রাস্তা বানা। আমার সময় হইলে আমি পামু। বুঝলেন মামা, অগোরে যদি কারখানার কাম না বুঝায়া দিতাম অরা তাইলে সৎমার লেইগা এদিক সেদিক ঘুরতো, শান্তিতে থাকতে পারত না। নষ্ট হইয়া যাইত। অরা সব লাভ নিজেরা রাখে। আমি রিকশা চালায়া আমার বউরে লইয়া আলাদা থাকি। জানেন, অগোর একেকজনের ব্যাংকে না হইলেও ৫ কোটি কইরা টাকা আছে।“

রিক্সা থামার পর নেমে নিজেকে হতভম্ব লাগছিল। কি করব? ভাড়া কি দিব? অবশ্যই। যতো পয়সাই থাকুক, এটা উনি উপার্জন করেছেন। আবার ভাবলাম, তাহলে ফুচকার দামটার কি হবে? পড়ে ভাবলাম যার দুই ছেলের পকেটে দশ কোটি টাকা আছে, যে এই অঞ্চলের সব দোকানদারের ফুচকার সাপলাইয়ার তাকে কি ফুচকার দাম দিব আর? চলে এলাম। খেয়াল করলাম, ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয় নি।

কানে বাঁজছে তার বলা কথা, “আমার ছেলেরা টাকার বস্তায় ঘুমায়, মামা। আর আমি রাস্তার রাজা।“

পালনকর্তারা নানা ত্যাগ স্বীকার করেন।

আমরা বুঝি না। জানি না।


জানতেও চাই না। বুঝতেও চাই না।
অনবদ্য লেখনী
 
Last edited:
পড়াতে বের হয়েছি যখন সূর্য ডুবে গেছে। বাসার নিচ থেকে একটা গায়ে টানা রিকশা নিলাম। প্রায় ৩ কিলো রাস্তা। ভাড়া ৫০টাকা। দেশের ব্যস্ততম শহর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সন্ধ্যার ব্যস্ততার জানান দিচ্ছে। রিকশাওয়ালার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাবে না। মনে রাখবার তো প্রশ্নই ওঠে না।

রিকশা চলতে শুরু করল শহরের অলিগলি দিয়ে। আমি অভ্যাসবশত রিক্সায় উঠেই সিগারেট জ্বালালাম। এখনও ৪টা শলাকা রয়েছে প্যাকেটে। কিনতে হবে আবার। বসে বসে সন্ধ্যার পড়ানোর পরের সময়টা কিভাবে কাটাবো তার ছক কাটছি মনে মনে। রিকশাওয়ালা আমার চেনা পথ ধরে চলছে তাই অতো খেয়াল করছি না রাস্তার দিকে। হঠাৎ রাস্তার পাশে রিক্সাটা আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে থামতে শুরু করল। ভাবলাম জ্যাম বুঝি রাস্তায়। কিন্তু সামনের গাড়িটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম যে অন্যান্য সময়ের মত জ্যাম নেই। রাস্তা ফাকাই। তাহলে থামালো কেন রিকশাটা?

রিক্সাওয়ালা দেখছি রিক্সা থেকে নেমে পড়ছেন। আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করলেন আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বললেন, “মামা, মুখটা জ্যাম হইয়া আছে। একটু ভিজায়া লই।“ কি বলল ঠিক বুঝলাম না। ভাবলাম হয়তো প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাইছেন, আমি ভুলভাল শুনেছি। দেখি, উনি রাস্তার পাশের ভ্যান ধরনের একটি ফুচকাওয়ালার কার্টের সামনে রিকশা থামিয়েছেন। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ফুচকার এই কার্টগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। দেখলাম রিক্সাওয়ালাটা দোকানে গেল। একটা একগ্লাস পানি খেল। এরপর একটা ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল। আমাকে দেখি ততক্ষণে তাকে একটা প্লেটে ফুচকা সাজিয়ে দিয়েছে ফুচকাওয়ালা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

আমার তো মেজাজ বিগড়ে গেল। কে করে এগুলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে ব্যাটার এখন ফুচকা খাইবার শখ হয়েছে। যত্তোসব। এর মধ্যে দেখি ফুচকার দোকানের এক পিচ্চি আমাকে এক প্লেট ফুচকা সাধছে। বল্লাম, ”আমি তো অর্ডার দেই নি রে। অন্য কেউ দিয়েছে।“ পিচ্চি আমাকে বলে, ‘আপনার জন্যই।“

আমি তো একদম অবাক। দেখি রিক্সাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত এক হা করে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে ভড়া মুখে অস্পষ্টভাবে আমাকে বলছে, “খান মামা, আপনার জন্যই।“

গেল মেজাজ বিগড়ে। সালা এক প্লেট ফুচকা ৪০ টাকা। অযথা গচ্চা। তুই খাবি খা। আমাকে দিতে কে বলেছে? উপায় না পেয়ে খেতে শুরু করলাম। ভালই মোটামুটি।

রিক্সাওয়ালার খাওয়া শেষ। আমিও তাই দেখে তাড়াতাড়ি ফুচকাগুলো সাবাড় করলাম। দেখি রিক্সাওয়ালা বিল না দিয়েই রিক্সার কাছে এসে রিক্সা চালানো শুরু করল। ফুচকাওয়ালা আমাদের দিকে ফিরেই তাকাচ্ছে না। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিয়াঁ, বিল তো দেই নি।“ রিক্সাওয়ালা বলে, “লাগবে না। আমার নাম বইলা যে কেউ আইসা খাইয়া যাইতে পারব এই মহল্লার যেকোনো ফুচকাওয়ালার দোকান থেইকা।“

আমি আরও অবাক। বলে কি লোকটা? জিজ্ঞেস করলাম, “কেন তুমি কি করেছো যে তোমার নামে ফুচকা খেয়ে আসা যাবে?”

বলছে, “এই মহল্লার সব ফুচকার দোকানের লাইন আমার।“ আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” বলে, “এই মহল্লার সব ফুচকাওয়ালা আমার থেকে ফুচকা সাপলাই নেয়। আমার ফুচকার কারখানা আছে দুইটা।“

মাথায় যেন বাজ পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দুইটা কারখানা? তাহলে তুমি রিক্সা চালাও কেন?” জবাব পেলাম, “আমার কেচ্ছা এটা।“

লোকটা রিক্সা চালাতে চালাতে আমাকে তার গল্প বলতে থাকলোঃ_

“আমার দুইটা ফ্যাক্টরি আছে ফুচকার। আমার দুইটা ছেলে। অগোর মা নাই। মইরা গেছে। তাই আমি পরে আবার বিয়া করি। কিন্তু অগোর সৎমা অগোরে দেখতে পারে না। তাই অগোর দুই ভাইরে আমার কারখানা দুইটা বুঝায় দিছি। ছয় লাখ ক্যাশ টাকা অগোরে বুঝায়া দিয়া সইরা আইছি মাত্র তিনশো টাকা পকেটে লইয়া। কারখানা দুইটা আমার নামেই। কিন্তু লাভ সব অরা রাখে। আমি কইছি অগোরে যে আমারে কিছু দেওন লাগব না। তরা তগো রাস্তা বানা। আমার সময় হইলে আমি পামু। বুঝলেন মামা, অগোরে যদি কারখানার কাম না বুঝায়া দিতাম অরা তাইলে সৎমার লেইগা এদিক সেদিক ঘুরতো, শান্তিতে থাকতে পারত না। নষ্ট হইয়া যাইত। অরা সব লাভ নিজেরা রাখে। আমি রিকশা চালায়া আমার বউরে লইয়া আলাদা থাকি। জানেন, অগোর একেকজনের ব্যাংকে না হইলেও ৫ কোটি কইরা টাকা আছে।“

রিক্সা থামার পর নেমে নিজেকে হতভম্ব লাগছিল। কি করব? ভাড়া কি দিব? অবশ্যই। যতো পয়সাই থাকুক, এটা উনি উপার্জন করেছেন। আবার ভাবলাম, তাহলে ফুচকার দামটার কি হবে? পড়ে ভাবলাম যার দুই ছেলের পকেটে দশ কোটি টাকা আছে, যে এই অঞ্চলের সব দোকানদারের ফুচকার সাপলাইয়ার তাকে কি ফুচকার দাম দিব আর? চলে এলাম। খেয়াল করলাম, ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয় নি।

কানে বাঁজছে তার বলা কথা, “আমার ছেলেরা টাকার বস্তায় ঘুমায়, মামা। আর আমি রাস্তার রাজা।“

পালনকর্তারা নানা ত্যাগ স্বীকার করেন।

আমরা বুঝি না। জানি না।


জানতেও চাই না। বুঝতেও চাই না।
গল্পটা পড়ছি,শুরুটা ভালো হয়েছে মানে গল্পটা আরো ভালো পড়তে আরো বেশি ভাল লাগবে
 
পড়াতে বের হয়েছি যখন সূর্য ডুবে গেছে। বাসার নিচ থেকে একটা গায়ে টানা রিকশা নিলাম। প্রায় ৩ কিলো রাস্তা। ভাড়া ৫০টাকা। দেশের ব্যস্ততম শহর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সন্ধ্যার ব্যস্ততার জানান দিচ্ছে। রিকশাওয়ালার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাবে না। মনে রাখবার তো প্রশ্নই ওঠে না।

রিকশা চলতে শুরু করল শহরের অলিগলি দিয়ে। আমি অভ্যাসবশত রিক্সায় উঠেই সিগারেট জ্বালালাম। এখনও ৪টা শলাকা রয়েছে প্যাকেটে। কিনতে হবে আবার। বসে বসে সন্ধ্যার পড়ানোর পরের সময়টা কিভাবে কাটাবো তার ছক কাটছি মনে মনে। রিকশাওয়ালা আমার চেনা পথ ধরে চলছে তাই অতো খেয়াল করছি না রাস্তার দিকে। হঠাৎ রাস্তার পাশে রিক্সাটা আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে থামতে শুরু করল। ভাবলাম জ্যাম বুঝি রাস্তায়। কিন্তু সামনের গাড়িটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম যে অন্যান্য সময়ের মত জ্যাম নেই। রাস্তা ফাকাই। তাহলে থামালো কেন রিকশাটা?

রিক্সাওয়ালা দেখছি রিক্সা থেকে নেমে পড়ছেন। আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করলেন আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বললেন, “মামা, মুখটা জ্যাম হইয়া আছে। একটু ভিজায়া লই।“ কি বলল ঠিক বুঝলাম না। ভাবলাম হয়তো প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাইছেন, আমি ভুলভাল শুনেছি। দেখি, উনি রাস্তার পাশের ভ্যান ধরনের একটি ফুচকাওয়ালার কার্টের সামনে রিকশা থামিয়েছেন। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ফুচকার এই কার্টগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। দেখলাম রিক্সাওয়ালাটা দোকানে গেল। একটা একগ্লাস পানি খেল। এরপর একটা ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল। আমাকে দেখি ততক্ষণে তাকে একটা প্লেটে ফুচকা সাজিয়ে দিয়েছে ফুচকাওয়ালা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

আমার তো মেজাজ বিগড়ে গেল। কে করে এগুলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে ব্যাটার এখন ফুচকা খাইবার শখ হয়েছে। যত্তোসব। এর মধ্যে দেখি ফুচকার দোকানের এক পিচ্চি আমাকে এক প্লেট ফুচকা সাধছে। বল্লাম, ”আমি তো অর্ডার দেই নি রে। অন্য কেউ দিয়েছে।“ পিচ্চি আমাকে বলে, ‘আপনার জন্যই।“

আমি তো একদম অবাক। দেখি রিক্সাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত এক হা করে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে ভড়া মুখে অস্পষ্টভাবে আমাকে বলছে, “খান মামা, আপনার জন্যই।“

গেল মেজাজ বিগড়ে। সালা এক প্লেট ফুচকা ৪০ টাকা। অযথা গচ্চা। তুই খাবি খা। আমাকে দিতে কে বলেছে? উপায় না পেয়ে খেতে শুরু করলাম। ভালই মোটামুটি।

রিক্সাওয়ালার খাওয়া শেষ। আমিও তাই দেখে তাড়াতাড়ি ফুচকাগুলো সাবাড় করলাম। দেখি রিক্সাওয়ালা বিল না দিয়েই রিক্সার কাছে এসে রিক্সা চালানো শুরু করল। ফুচকাওয়ালা আমাদের দিকে ফিরেই তাকাচ্ছে না। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিয়াঁ, বিল তো দেই নি।“ রিক্সাওয়ালা বলে, “লাগবে না। আমার নাম বইলা যে কেউ আইসা খাইয়া যাইতে পারব এই মহল্লার যেকোনো ফুচকাওয়ালার দোকান থেইকা।“

আমি আরও অবাক। বলে কি লোকটা? জিজ্ঞেস করলাম, “কেন তুমি কি করেছো যে তোমার নামে ফুচকা খেয়ে আসা যাবে?”

বলছে, “এই মহল্লার সব ফুচকার দোকানের লাইন আমার।“ আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” বলে, “এই মহল্লার সব ফুচকাওয়ালা আমার থেকে ফুচকা সাপলাই নেয়। আমার ফুচকার কারখানা আছে দুইটা।“

মাথায় যেন বাজ পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দুইটা কারখানা? তাহলে তুমি রিক্সা চালাও কেন?” জবাব পেলাম, “আমার কেচ্ছা এটা।“

লোকটা রিক্সা চালাতে চালাতে আমাকে তার গল্প বলতে থাকলোঃ_

“আমার দুইটা ফ্যাক্টরি আছে ফুচকার। আমার দুইটা ছেলে। অগোর মা নাই। মইরা গেছে। তাই আমি পরে আবার বিয়া করি। কিন্তু অগোর সৎমা অগোরে দেখতে পারে না। তাই অগোর দুই ভাইরে আমার কারখানা দুইটা বুঝায় দিছি। ছয় লাখ ক্যাশ টাকা অগোরে বুঝায়া দিয়া সইরা আইছি মাত্র তিনশো টাকা পকেটে লইয়া। কারখানা দুইটা আমার নামেই। কিন্তু লাভ সব অরা রাখে। আমি কইছি অগোরে যে আমারে কিছু দেওন লাগব না। তরা তগো রাস্তা বানা। আমার সময় হইলে আমি পামু। বুঝলেন মামা, অগোরে যদি কারখানার কাম না বুঝায়া দিতাম অরা তাইলে সৎমার লেইগা এদিক সেদিক ঘুরতো, শান্তিতে থাকতে পারত না। নষ্ট হইয়া যাইত। অরা সব লাভ নিজেরা রাখে। আমি রিকশা চালায়া আমার বউরে লইয়া আলাদা থাকি। জানেন, অগোর একেকজনের ব্যাংকে না হইলেও ৫ কোটি কইরা টাকা আছে।“

রিক্সা থামার পর নেমে নিজেকে হতভম্ব লাগছিল। কি করব? ভাড়া কি দিব? অবশ্যই। যতো পয়সাই থাকুক, এটা উনি উপার্জন করেছেন। আবার ভাবলাম, তাহলে ফুচকার দামটার কি হবে? পড়ে ভাবলাম যার দুই ছেলের পকেটে দশ কোটি টাকা আছে, যে এই অঞ্চলের সব দোকানদারের ফুচকার সাপলাইয়ার তাকে কি ফুচকার দাম দিব আর? চলে এলাম। খেয়াল করলাম, ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয় নি।

কানে বাঁজছে তার বলা কথা, “আমার ছেলেরা টাকার বস্তায় ঘুমায়, মামা। আর আমি রাস্তার রাজা।“

পালনকর্তারা নানা ত্যাগ স্বীকার করেন।

আমরা বুঝি না। জানি না।


জানতেও চাই না। বুঝতেও চাই না।
Super
 
পড়াতে বের হয়েছি যখন সূর্য ডুবে গেছে। বাসার নিচ থেকে একটা গায়ে টানা রিকশা নিলাম। প্রায় ৩ কিলো রাস্তা। ভাড়া ৫০টাকা। দেশের ব্যস্ততম শহর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সন্ধ্যার ব্যস্ততার জানান দিচ্ছে। রিকশাওয়ালার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাবে না। মনে রাখবার তো প্রশ্নই ওঠে না।

রিকশা চলতে শুরু করল শহরের অলিগলি দিয়ে। আমি অভ্যাসবশত রিক্সায় উঠেই সিগারেট জ্বালালাম। এখনও ৪টা শলাকা রয়েছে প্যাকেটে। কিনতে হবে আবার। বসে বসে সন্ধ্যার পড়ানোর পরের সময়টা কিভাবে কাটাবো তার ছক কাটছি মনে মনে। রিকশাওয়ালা আমার চেনা পথ ধরে চলছে তাই অতো খেয়াল করছি না রাস্তার দিকে। হঠাৎ রাস্তার পাশে রিক্সাটা আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে থামতে শুরু করল। ভাবলাম জ্যাম বুঝি রাস্তায়। কিন্তু সামনের গাড়িটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম যে অন্যান্য সময়ের মত জ্যাম নেই। রাস্তা ফাকাই। তাহলে থামালো কেন রিকশাটা?

রিক্সাওয়ালা দেখছি রিক্সা থেকে নেমে পড়ছেন। আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করলেন আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বললেন, “মামা, মুখটা জ্যাম হইয়া আছে। একটু ভিজায়া লই।“ কি বলল ঠিক বুঝলাম না। ভাবলাম হয়তো প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাইছেন, আমি ভুলভাল শুনেছি। দেখি, উনি রাস্তার পাশের ভ্যান ধরনের একটি ফুচকাওয়ালার কার্টের সামনে রিকশা থামিয়েছেন। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ফুচকার এই কার্টগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। দেখলাম রিক্সাওয়ালাটা দোকানে গেল। একটা একগ্লাস পানি খেল। এরপর একটা ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল। আমাকে দেখি ততক্ষণে তাকে একটা প্লেটে ফুচকা সাজিয়ে দিয়েছে ফুচকাওয়ালা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

আমার তো মেজাজ বিগড়ে গেল। কে করে এগুলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে ব্যাটার এখন ফুচকা খাইবার শখ হয়েছে। যত্তোসব। এর মধ্যে দেখি ফুচকার দোকানের এক পিচ্চি আমাকে এক প্লেট ফুচকা সাধছে। বল্লাম, ”আমি তো অর্ডার দেই নি রে। অন্য কেউ দিয়েছে।“ পিচ্চি আমাকে বলে, ‘আপনার জন্যই।“

আমি তো একদম অবাক। দেখি রিক্সাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত এক হা করে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে ভড়া মুখে অস্পষ্টভাবে আমাকে বলছে, “খান মামা, আপনার জন্যই।“

গেল মেজাজ বিগড়ে। সালা এক প্লেট ফুচকা ৪০ টাকা। অযথা গচ্চা। তুই খাবি খা। আমাকে দিতে কে বলেছে? উপায় না পেয়ে খেতে শুরু করলাম। ভালই মোটামুটি।

রিক্সাওয়ালার খাওয়া শেষ। আমিও তাই দেখে তাড়াতাড়ি ফুচকাগুলো সাবাড় করলাম। দেখি রিক্সাওয়ালা বিল না দিয়েই রিক্সার কাছে এসে রিক্সা চালানো শুরু করল। ফুচকাওয়ালা আমাদের দিকে ফিরেই তাকাচ্ছে না। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিয়াঁ, বিল তো দেই নি।“ রিক্সাওয়ালা বলে, “লাগবে না। আমার নাম বইলা যে কেউ আইসা খাইয়া যাইতে পারব এই মহল্লার যেকোনো ফুচকাওয়ালার দোকান থেইকা।“

আমি আরও অবাক। বলে কি লোকটা? জিজ্ঞেস করলাম, “কেন তুমি কি করেছো যে তোমার নামে ফুচকা খেয়ে আসা যাবে?”

বলছে, “এই মহল্লার সব ফুচকার দোকানের লাইন আমার।“ আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” বলে, “এই মহল্লার সব ফুচকাওয়ালা আমার থেকে ফুচকা সাপলাই নেয়। আমার ফুচকার কারখানা আছে দুইটা।“

মাথায় যেন বাজ পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দুইটা কারখানা? তাহলে তুমি রিক্সা চালাও কেন?” জবাব পেলাম, “আমার কেচ্ছা এটা।“

লোকটা রিক্সা চালাতে চালাতে আমাকে তার গল্প বলতে থাকলোঃ_

“আমার দুইটা ফ্যাক্টরি আছে ফুচকার। আমার দুইটা ছেলে। অগোর মা নাই। মইরা গেছে। তাই আমি পরে আবার বিয়া করি। কিন্তু অগোর সৎমা অগোরে দেখতে পারে না। তাই অগোর দুই ভাইরে আমার কারখানা দুইটা বুঝায় দিছি। ছয় লাখ ক্যাশ টাকা অগোরে বুঝায়া দিয়া সইরা আইছি মাত্র তিনশো টাকা পকেটে লইয়া। কারখানা দুইটা আমার নামেই। কিন্তু লাভ সব অরা রাখে। আমি কইছি অগোরে যে আমারে কিছু দেওন লাগব না। তরা তগো রাস্তা বানা। আমার সময় হইলে আমি পামু। বুঝলেন মামা, অগোরে যদি কারখানার কাম না বুঝায়া দিতাম অরা তাইলে সৎমার লেইগা এদিক সেদিক ঘুরতো, শান্তিতে থাকতে পারত না। নষ্ট হইয়া যাইত। অরা সব লাভ নিজেরা রাখে। আমি রিকশা চালায়া আমার বউরে লইয়া আলাদা থাকি। জানেন, অগোর একেকজনের ব্যাংকে না হইলেও ৫ কোটি কইরা টাকা আছে।“

রিক্সা থামার পর নেমে নিজেকে হতভম্ব লাগছিল। কি করব? ভাড়া কি দিব? অবশ্যই। যতো পয়সাই থাকুক, এটা উনি উপার্জন করেছেন। আবার ভাবলাম, তাহলে ফুচকার দামটার কি হবে? পড়ে ভাবলাম যার দুই ছেলের পকেটে দশ কোটি টাকা আছে, যে এই অঞ্চলের সব দোকানদারের ফুচকার সাপলাইয়ার তাকে কি ফুচকার দাম দিব আর? চলে এলাম। খেয়াল করলাম, ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয় নি।

কানে বাঁজছে তার বলা কথা, “আমার ছেলেরা টাকার বস্তায় ঘুমায়, মামা। আর আমি রাস্তার রাজা।“

পালনকর্তারা নানা ত্যাগ স্বীকার করেন।

আমরা বুঝি না। জানি না।


জানতেও চাই না। বুঝতেও চাই না।
Darun
 
পড়াতে বের হয়েছি যখন সূর্য ডুবে গেছে। বাসার নিচ থেকে একটা গায়ে টানা রিকশা নিলাম। প্রায় ৩ কিলো রাস্তা। ভাড়া ৫০টাকা। দেশের ব্যস্ততম শহর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সন্ধ্যার ব্যস্ততার জানান দিচ্ছে। রিকশাওয়ালার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। চেহারায় উল্লেখযোগ্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাবে না। মনে রাখবার তো প্রশ্নই ওঠে না।

রিকশা চলতে শুরু করল শহরের অলিগলি দিয়ে। আমি অভ্যাসবশত রিক্সায় উঠেই সিগারেট জ্বালালাম। এখনও ৪টা শলাকা রয়েছে প্যাকেটে। কিনতে হবে আবার। বসে বসে সন্ধ্যার পড়ানোর পরের সময়টা কিভাবে কাটাবো তার ছক কাটছি মনে মনে। রিকশাওয়ালা আমার চেনা পথ ধরে চলছে তাই অতো খেয়াল করছি না রাস্তার দিকে। হঠাৎ রাস্তার পাশে রিক্সাটা আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে থামতে শুরু করল। ভাবলাম জ্যাম বুঝি রাস্তায়। কিন্তু সামনের গাড়িটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম যে অন্যান্য সময়ের মত জ্যাম নেই। রাস্তা ফাকাই। তাহলে থামালো কেন রিকশাটা?

রিক্সাওয়ালা দেখছি রিক্সা থেকে নেমে পড়ছেন। আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করলেন আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বললেন, “মামা, মুখটা জ্যাম হইয়া আছে। একটু ভিজায়া লই।“ কি বলল ঠিক বুঝলাম না। ভাবলাম হয়তো প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে চাইছেন, আমি ভুলভাল শুনেছি। দেখি, উনি রাস্তার পাশের ভ্যান ধরনের একটি ফুচকাওয়ালার কার্টের সামনে রিকশা থামিয়েছেন। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ফুচকার এই কার্টগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। দেখলাম রিক্সাওয়ালাটা দোকানে গেল। একটা একগ্লাস পানি খেল। এরপর একটা ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল। আমাকে দেখি ততক্ষণে তাকে একটা প্লেটে ফুচকা সাজিয়ে দিয়েছে ফুচকাওয়ালা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

আমার তো মেজাজ বিগড়ে গেল। কে করে এগুলো। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে ব্যাটার এখন ফুচকা খাইবার শখ হয়েছে। যত্তোসব। এর মধ্যে দেখি ফুচকার দোকানের এক পিচ্চি আমাকে এক প্লেট ফুচকা সাধছে। বল্লাম, ”আমি তো অর্ডার দেই নি রে। অন্য কেউ দিয়েছে।“ পিচ্চি আমাকে বলে, ‘আপনার জন্যই।“

আমি তো একদম অবাক। দেখি রিক্সাওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে মস্ত এক হা করে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে ভড়া মুখে অস্পষ্টভাবে আমাকে বলছে, “খান মামা, আপনার জন্যই।“

গেল মেজাজ বিগড়ে। সালা এক প্লেট ফুচকা ৪০ টাকা। অযথা গচ্চা। তুই খাবি খা। আমাকে দিতে কে বলেছে? উপায় না পেয়ে খেতে শুরু করলাম। ভালই মোটামুটি।

রিক্সাওয়ালার খাওয়া শেষ। আমিও তাই দেখে তাড়াতাড়ি ফুচকাগুলো সাবাড় করলাম। দেখি রিক্সাওয়ালা বিল না দিয়েই রিক্সার কাছে এসে রিক্সা চালানো শুরু করল। ফুচকাওয়ালা আমাদের দিকে ফিরেই তাকাচ্ছে না। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনা কি? জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিয়াঁ, বিল তো দেই নি।“ রিক্সাওয়ালা বলে, “লাগবে না। আমার নাম বইলা যে কেউ আইসা খাইয়া যাইতে পারব এই মহল্লার যেকোনো ফুচকাওয়ালার দোকান থেইকা।“

আমি আরও অবাক। বলে কি লোকটা? জিজ্ঞেস করলাম, “কেন তুমি কি করেছো যে তোমার নামে ফুচকা খেয়ে আসা যাবে?”

বলছে, “এই মহল্লার সব ফুচকার দোকানের লাইন আমার।“ আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?” বলে, “এই মহল্লার সব ফুচকাওয়ালা আমার থেকে ফুচকা সাপলাই নেয়। আমার ফুচকার কারখানা আছে দুইটা।“

মাথায় যেন বাজ পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দুইটা কারখানা? তাহলে তুমি রিক্সা চালাও কেন?” জবাব পেলাম, “আমার কেচ্ছা এটা।“

লোকটা রিক্সা চালাতে চালাতে আমাকে তার গল্প বলতে থাকলোঃ_

“আমার দুইটা ফ্যাক্টরি আছে ফুচকার। আমার দুইটা ছেলে। অগোর মা নাই। মইরা গেছে। তাই আমি পরে আবার বিয়া করি। কিন্তু অগোর সৎমা অগোরে দেখতে পারে না। তাই অগোর দুই ভাইরে আমার কারখানা দুইটা বুঝায় দিছি। ছয় লাখ ক্যাশ টাকা অগোরে বুঝায়া দিয়া সইরা আইছি মাত্র তিনশো টাকা পকেটে লইয়া। কারখানা দুইটা আমার নামেই। কিন্তু লাভ সব অরা রাখে। আমি কইছি অগোরে যে আমারে কিছু দেওন লাগব না। তরা তগো রাস্তা বানা। আমার সময় হইলে আমি পামু। বুঝলেন মামা, অগোরে যদি কারখানার কাম না বুঝায়া দিতাম অরা তাইলে সৎমার লেইগা এদিক সেদিক ঘুরতো, শান্তিতে থাকতে পারত না। নষ্ট হইয়া যাইত। অরা সব লাভ নিজেরা রাখে। আমি রিকশা চালায়া আমার বউরে লইয়া আলাদা থাকি। জানেন, অগোর একেকজনের ব্যাংকে না হইলেও ৫ কোটি কইরা টাকা আছে।“

রিক্সা থামার পর নেমে নিজেকে হতভম্ব লাগছিল। কি করব? ভাড়া কি দিব? অবশ্যই। যতো পয়সাই থাকুক, এটা উনি উপার্জন করেছেন। আবার ভাবলাম, তাহলে ফুচকার দামটার কি হবে? পড়ে ভাবলাম যার দুই ছেলের পকেটে দশ কোটি টাকা আছে, যে এই অঞ্চলের সব দোকানদারের ফুচকার সাপলাইয়ার তাকে কি ফুচকার দাম দিব আর? চলে এলাম। খেয়াল করলাম, ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয় নি।

কানে বাঁজছে তার বলা কথা, “আমার ছেলেরা টাকার বস্তায় ঘুমায়, মামা। আর আমি রাস্তার রাজা।“

পালনকর্তারা নানা ত্যাগ স্বীকার করেন।

আমরা বুঝি না। জানি না।


জানতেও চাই না। বুঝতেও চাই না।
খুব সুন্দর
 
bengali room er notun sobaike forum e dekhe khusi holam ....

@Meghnad @OISHI_ @Anshhi @ladywiththelamp35 @Godofthunder @subha2

tomra misti keo bolo forum e ekta account banate jodi chatroom e register na o kre .... ekhne asuk .... or o vlo lgbe I think....
@Smrita. @saurabh4rp @Semicolon_ tomra bolo misti ke ....

:angel:
আমার মনে হয় না ও আসবে। এখানে ভয়েস অপশন নেই তো। :giggle: তাও আমরা বলে দেখব
 
Top