• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

দ্যা লাস্ট 'সাপার' ইন করোনা

Meghnad

Epic Legend
Chat Pro User
২০২০ সালে আমাদের এই পৃথিবীটা, পৃথিবীর সবগুলো দেশের মানুষ এই প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়টা পার করে। করোনা মহামারী এর চাইতেও বড় ইফেক্ট ফেলেছিল দীর্ঘ লকডাউন। লকডাউনের শুরুতেই তাই একটি ছোটগল্প লিখেছিলাম। ফোরামে আমি নতুন হিসেবে এখানে পোস্ট করছি গল্পটা। গল্পটা ২০২০ সালে এপ্রিল মাসে লেখা যখন ফুল লকডাউন চলছে এবং আমি আতঙ্কের তীব্রতায় পৌছানোর আগমুহূর্তে ছিলাম। স্মৃতিচারণ হিসেবে দেওয়া হল এখানে।
বি:দ্র: এর আগে কোনও ফোরামে এটা দেয়া হয় নি।
অনুভূতি জানানোর অনুরোধ করা হল।
 
বিকেলের লালচে আলোতে আকাশ ছেয়ে গেছে। আমি যে জানালার সামনে , সেটা পূর্বদিকে। পূর্বদিকের একটা বারান্দায় আছি, আছি বলতে সবসময়ই থাকি এখানে। বারান্দাটাতে কোনও দেয়াল নেই, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরোটাই গ্রিল। তাই এই এগারো তলার উপর থেকে সামনের মূল সড়ক আর মিরপুর রোডের জাংশন দেখা যায়। নিচে সব সময় বাজার বসত। বিকেলে চায়ের দোকানে হই-হট্টগোলে টেকা দায়। আমি আবার আর্লি রাইজার, তাই সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই গোয়িং টু বেড। আগে ঘুমাতে খুব কষ্ট হত, এতো শব্দদূষণ এখানে, ঘুমানোই যেত না। গত ৮-৯মাস ধরে অবশ্য বেশ আরামেই ঘুমাচ্ছি। শুধু মাঝে মাঝে বাসার লোকেদের অসহ্য শব্দ সহ্য করতে হত। তবে সেই শব্দগুলোতে আমি অভ্যস্ত। গত তিন-চার দিন ধরে সেই শব্দগুলোও এখন আর জ্বালায় না। বেশ ভালই দিন কাটছে, কিন্তু একটা... সমস্যা আছে, সেটার সমাধান এখনও জানা নেই।

সময়টা ২০২০, ডিসেম্বর মাস। আমি সাধারণত দিন তারিখ মাসের হিসাব রাখি না। কখনওই রাখি নি, তবে বাইরেটা দেখেই বুঝতে পারছি সময়টা। সূর্য তখনও আকাশে থাকলেও তাপের ছিটেফোটা নেই চারপাশে। এখানে সেখানে কুয়াশা ঝুলে আছে। উত্তর-পূর্ব কোণের একসারি বিশতলা নির্মাণাধীন বাড়িগুলো খা খা কড়ছে। অবশ্য এগুলোকে নির্মাণাধীন না বলে অসম্পূর্ণ ভবণ বলা ভাল। গত ৭ মাসে এই বাড়িগুলোর কোনও কাজ হয় নি। আর কখনও হবে নাকি জানি না। সামনের যে সড়ক, যেখানে সবসময় ভ্যান, রিক্সা, মটরসাইকেল গিজগিজ করত সেখানে এখন কয়েকটা কুকুর চেচাচ্ছে। এই রাস্তাটা এখন ওদেরই আড্ডাখানা। এখনও ওরা বেশ ভাল আছে, তবে ওরা যে কতদিন এমন ভাল থাকবে তা ওরাও জানে না।

আমার সমস্যাটা আবার মাথা-চারা দিয়ে উঠছে। কি করি? বারান্দা দিয়ে উপরের ফ্লোরের বারান্দা দেখা যায়। সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটু গল্প করার মত কাউকে খুজে পাওয়া যায় কি না। না, সেখানে কোনও পরিবর্তন নেই। একটা লুঙ্গিই ঝোলানো আছে, সেটা অবশ্য গত একসপ্তাহ ধরেই এভাবে আছে। কে জানে হয়তো লুঙ্গিটা ঘরের ভেতরে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি।

একটু পরই সব অন্ধকার হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ নেই। বহু আগেই বিদ্যুৎ চলে গেছে এখান থেকে। মানে বিদ্যুৎ নাকি আর দেশে এখন উৎপাদনই হয় না। দেশে অবশ্য আর কিছুই উৎপাদন হয় না এখন। মার্চ মাসের দিকে এই দেশে একটি অসুখ দেখা দেয়। সেটা মহামারী আকার ধারণ করতে করতে অবশ্য মে মাস হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ মরে গেছে এই দেশের। অন্য দেশের অবস্থা অবশ্য জানি না, তবে বাসার সবার সাথে কথা বলে যা জানি, দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় বিলুপ্তির দিকে নাকি এগিয়ে যাচ্ছে জনপদ। মানুষের অভাব, তাই কাজ করার লোক নেই। কেউ ধান চাষ করছে না, কেউ মাছ ধরছে না, কোনও মুদির দোকান খোলা নেই। জেলে, কৃষক, দোকানী বেচে আছে নাকি এখনও তারই ঠিক নেই, আবার খাবার আসবে কোথা থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাস তিনেক আগে শুনেছিলাম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নাকি জনমানব বিলীন হয়ে গেছে। সমগ্র মানবজাতিই যদি বিলীন হয়ে যায়, অবাক হব না।

উফ! খুধা!! গত ৯দিন ধরে না খেয়ে আছি। খাবার নেই কোনও। বাসার আশেপাশেও কোনও জনমানবের শব্দ পাওয়া যায় না সাধারণত। দেশের বেশিরভাগ মানুষ মরে যাওয়ার পর এবং দুর্ভিক্ষ লাগার কারণে অল্প যারা বেচে ছিল তাদের মধ্যে নানা অপরাধ মাথাচারা দিয়ে ওঠে, অবশ্য এদের কাজগুলো অপরাধ হত আরও এক বছর আগে হলে, যখন সভ্যতা ছিল। এখন না আছে সরকার, না আছে আইনের লোক। তাই আইন ও নাই। প্রকৃতির নিয়মই এখন আইন। বেচে থাকাটাই এখন সবার জীবনের লক্ষ্য। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া না।

যখন মানুষের সাথে সাথে খাবারও ফুরিয়ে গেল তখন থেকে মানুষ খাবারের খোজে একেকদিকে আক্রমণ চালালো। কখনও পাড়ার দোকানে তালা ভেঙে, কখনও প্রতিবেশীর বাড়িতে জোড় করে ঢুকে বা দরজা ভেঙে, কখনও রাস্তায় কারও কুড়িয়ে পাওয়া খাবার জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে। এসবই চলত, চলছে। কিন্তু মানুষ কমে যাওয়ায় এসব ঘটনাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

মেয়ে মানুষ একা বাসায় আছে। তাদের ভয় এখন তাদের সম্ভ্রম নিয়ে নয়। ধর্ষণ আরও বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, আগে ফুড, পরে সেক্স। তাই এখন কেউ ওসবের ভয় করে না। ওসব হয় ও না এখন। আমাদের যে ফ্ল্যাটটা, সেটাতে কোনও একটা কারণে এখন পর্যন্ত ডাকাতি হয় নি। কেন হয় নি, জানি না। হয়তো ১১ তলা বলেই কেউ উঠে আসে নি। কিন্তু একদিন তো আসবে নিশ্চয়ই। এই বিল্ডিং এ কতজন মানুষ বেচে আছে, জানি না। জানার আগ্রহও নেই। এর আগের দুই সপ্তাহ ধরে আমরা শুধুমাত্র ডাল খেয়েছি। আমাদের বাসার সব মানুষের মন খুব বড়। কপালও ভাল। কিন্তু খাবার ফুরিয়েছে ৯ দিন যে হয়ে গেল! কালকে কি হবে?!

নীলচে তারা ফোটার আগেই নীলচে আকাশ কালচে হয়ে গেছে। এমন সময় বাড়ির মেইনগেটে কেউ শব্দ করছে। মানুষ! বেচে আছে!? এটা স্বস্তির না ভয়ের জানা নেই। কারণ এখন মানুষ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেউ কি গেটটা খুলতে যাবে? আসতে আসতে গেটে ধাক্কার পরিমাণ বাড়ছে। বোঝা যাচ্ছে খালি হাতে ধাক্কাচ্ছে না। কিছু একটা দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। দরজা পেটানো নিরেট শব্দটা আস্তে আস্তে ফাপা হতে হতে কেমন যেন পাতিল পেটানোর মত পাতলা হচ্ছে। একটু পর শব্দটা থেমে গেল। হয়তো দরজা ভেঙে ফেলেছে!

পায়ের শব্দটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, ফ্রিজ খুলেছে। গাধা, কারেন্ট নেই কত দিন, ফ্রিজে খাবার কি এখনও ভাল আছে? আগে লোকে বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢুকলে আলমারি খুলত। এখন খুলে ফ্রিজ বা খাবারের গুদামঘর। মানুষ বুঝে গেছে, টাকা খাওয়া যায় না। তাই খাবার না থাকলে টাকা আর কাগজে তফাৎ নেই।

যিনি এবাড়িতে ঢুকেছেন, তিনি কোনও শব্দ করছেন না। খুব পরিচিত একটি চেহারা। খুব কাছের আত্মীয় তিনি। একসময় নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল তাদের আর এই পরিবারে। এবার অবশ্য বেশ অনেক দিন পর এলেন। এসেই দেখলেন, বাসার সবাই আরও অনেক আগেই মারা গেছে। সবার লাশ পচতে শুরু করেছে। সবাই বলতে বাড়িতে মোট ৩ জন ছিল। একজন বহু আগেই মারা গেছে। তার লাশ দাফন করা হয় নি। এই সমাজে এখন লাশ দাফন হয় না। বাকি দুজনের একজন মাসখানেক হবে না মারা গেছে যে। তার লাশ ঘরের অন্য কোণে ফেলে রাখা ছিল। বাইরে নিয়ে ফেলার সামর্থ্য হয় নি। শেষ যে ব্যক্তিটি বেচে ছিল , সে মরেছে এই ৯ দিন হল। তার সারাশব্দ পেতাম না বলেই আমি বুঝেছিলাম। আর খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরও ভালভাবে তা বুঝেছি।

নিজের এতো কাছের আত্মীয়স্বজনের লাশ এভাবে পড়ে থাকতে দেখেও অনুপ্রবেশকারী লোকটির মনে কোনও বিকার নেই। এসব ঘটনা এখন মানুষকে আন্দোলিত করে না। লাশ দেখাটাই যেন স্বাভাবিক। জীবিত মানুষ দেখলেই বরং লোকে এখন ভয় পায়। অনুপ্রবেশকারী লোকটি বরং বাড়ির সবাইকে মৃত দেখে খুশিই হল। আড়ামে খাবার খোজা যাবে বাড়িতে। ঝামেলা করার কেউ নেই। অথচ লোকটির মাথায় এই ধারণাই নেই, খাবার নেই এই বাড়িতে। খাবারের অভাবেই এ বাড়ির সবাই মরেছে, ওই মহামারিতে না। অবশ্য, এই দুর্ভিক্ষকে ঐ মহামারির অংশ করা যায় কি না জানা নাই।

লোকটি খাবার খুজে যাচ্ছে। পাবে না। নেই। হয়তো লোকটিও তা বুঝে গেছে। হয়তো চলে যাবে একটু পর। এমন সময় হঠাৎ আরেকটা শব্দে লোকটি চমকে উঠল। খুজতেছে শব্দের উৎস। এরপর শব্দের উৎস লক্ষ্য করে আগাতে শুরু করল।

আমি যে খাচায় থাকি, তার পাশের খাচাতেই আরেকটা ঘুঘু ডেকে উঠেছে। সেটা আমারই প্রজাতির ঘুঘু। প্রজাতিতে একই হলেও জ্ঞান তার আমার চাইতে অনেক কম। বিপদ বুঝতে পারে নি। ঘুঘুটার ডাক ঐ পরিত্যাক্ত অর্ধনির্মিত বহুতল ভবনে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি তুলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটা বারান্দায় আমাদের খাচাগুলোর সামনে এসে হাজির। চোখে ক্ষুদার্থ-লোলুপ কিন্তু করুণ দৃষ্টি। একটা বড় খাচায় আমাদের সব পাখিগুলোকে সে ভরে সেই খাচাটা তুলে সে তৈরি হল। এ বাড়ি ছেড়ে সে চলে যাবে এখন। তার আরও কয়েকদিনের বেচে থাকার খোরাক যোগাড় হয়ে গেছে।
 
বিকেলের লালচে আলোতে আকাশ ছেয়ে গেছে। আমি যে জানালার সামনে , সেটা পূর্বদিকে। পূর্বদিকের একটা বারান্দায় আছি, আছি বলতে সবসময়ই থাকি এখানে। বারান্দাটাতে কোনও দেয়াল নেই, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরোটাই গ্রিল। তাই এই এগারো তলার উপর থেকে সামনের মূল সড়ক আর মিরপুর রোডের জাংশন দেখা যায়। নিচে সব সময় বাজার বসত। বিকেলে চায়ের দোকানে হই-হট্টগোলে টেকা দায়। আমি আবার আর্লি রাইজার, তাই সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই গোয়িং টু বেড। আগে ঘুমাতে খুব কষ্ট হত, এতো শব্দদূষণ এখানে, ঘুমানোই যেত না। গত ৮-৯মাস ধরে অবশ্য বেশ আরামেই ঘুমাচ্ছি। শুধু মাঝে মাঝে বাসার লোকেদের অসহ্য শব্দ সহ্য করতে হত। তবে সেই শব্দগুলোতে আমি অভ্যস্ত। গত তিন-চার দিন ধরে সেই শব্দগুলোও এখন আর জ্বালায় না। বেশ ভালই দিন কাটছে, কিন্তু একটা... সমস্যা আছে, সেটার সমাধান এখনও জানা নেই।

সময়টা ২০২০, ডিসেম্বর মাস। আমি সাধারণত দিন তারিখ মাসের হিসাব রাখি না। কখনওই রাখি নি, তবে বাইরেটা দেখেই বুঝতে পারছি সময়টা। সূর্য তখনও আকাশে থাকলেও তাপের ছিটেফোটা নেই চারপাশে। এখানে সেখানে কুয়াশা ঝুলে আছে। উত্তর-পূর্ব কোণের একসারি বিশতলা নির্মাণাধীন বাড়িগুলো খা খা কড়ছে। অবশ্য এগুলোকে নির্মাণাধীন না বলে অসম্পূর্ণ ভবণ বলা ভাল। গত ৭ মাসে এই বাড়িগুলোর কোনও কাজ হয় নি। আর কখনও হবে নাকি জানি না। সামনের যে সড়ক, যেখানে সবসময় ভ্যান, রিক্সা, মটরসাইকেল গিজগিজ করত সেখানে এখন কয়েকটা কুকুর চেচাচ্ছে। এই রাস্তাটা এখন ওদেরই আড্ডাখানা। এখনও ওরা বেশ ভাল আছে, তবে ওরা যে কতদিন এমন ভাল থাকবে তা ওরাও জানে না।

আমার সমস্যাটা আবার মাথা-চারা দিয়ে উঠছে। কি করি? বারান্দা দিয়ে উপরের ফ্লোরের বারান্দা দেখা যায়। সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটু গল্প করার মত কাউকে খুজে পাওয়া যায় কি না। না, সেখানে কোনও পরিবর্তন নেই। একটা লুঙ্গিই ঝোলানো আছে, সেটা অবশ্য গত একসপ্তাহ ধরেই এভাবে আছে। কে জানে হয়তো লুঙ্গিটা ঘরের ভেতরে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি।

একটু পরই সব অন্ধকার হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ নেই। বহু আগেই বিদ্যুৎ চলে গেছে এখান থেকে। মানে বিদ্যুৎ নাকি আর দেশে এখন উৎপাদনই হয় না। দেশে অবশ্য আর কিছুই উৎপাদন হয় না এখন। মার্চ মাসের দিকে এই দেশে একটি অসুখ দেখা দেয়। সেটা মহামারী আকার ধারণ করতে করতে অবশ্য মে মাস হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ মরে গেছে এই দেশের। অন্য দেশের অবস্থা অবশ্য জানি না, তবে বাসার সবার সাথে কথা বলে যা জানি, দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় বিলুপ্তির দিকে নাকি এগিয়ে যাচ্ছে জনপদ। মানুষের অভাব, তাই কাজ করার লোক নেই। কেউ ধান চাষ করছে না, কেউ মাছ ধরছে না, কোনও মুদির দোকান খোলা নেই। জেলে, কৃষক, দোকানী বেচে আছে নাকি এখনও তারই ঠিক নেই, আবার খাবার আসবে কোথা থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাস তিনেক আগে শুনেছিলাম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নাকি জনমানব বিলীন হয়ে গেছে। সমগ্র মানবজাতিই যদি বিলীন হয়ে যায়, অবাক হব না।

উফ! খুধা!! গত ৯দিন ধরে না খেয়ে আছি। খাবার নেই কোনও। বাসার আশেপাশেও কোনও জনমানবের শব্দ পাওয়া যায় না সাধারণত। দেশের বেশিরভাগ মানুষ মরে যাওয়ার পর এবং দুর্ভিক্ষ লাগার কারণে অল্প যারা বেচে ছিল তাদের মধ্যে নানা অপরাধ মাথাচারা দিয়ে ওঠে, অবশ্য এদের কাজগুলো অপরাধ হত আরও এক বছর আগে হলে, যখন সভ্যতা ছিল। এখন না আছে সরকার, না আছে আইনের লোক। তাই আইন ও নাই। প্রকৃতির নিয়মই এখন আইন। বেচে থাকাটাই এখন সবার জীবনের লক্ষ্য। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া না।

যখন মানুষের সাথে সাথে খাবারও ফুরিয়ে গেল তখন থেকে মানুষ খাবারের খোজে একেকদিকে আক্রমণ চালালো। কখনও পাড়ার দোকানে তালা ভেঙে, কখনও প্রতিবেশীর বাড়িতে জোড় করে ঢুকে বা দরজা ভেঙে, কখনও রাস্তায় কারও কুড়িয়ে পাওয়া খাবার জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে। এসবই চলত, চলছে। কিন্তু মানুষ কমে যাওয়ায় এসব ঘটনাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

মেয়ে মানুষ একা বাসায় আছে। তাদের ভয় এখন তাদের সম্ভ্রম নিয়ে নয়। ধর্ষণ আরও বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, আগে ফুড, পরে সেক্স। তাই এখন কেউ ওসবের ভয় করে না। ওসব হয় ও না এখন। আমাদের যে ফ্ল্যাটটা, সেটাতে কোনও একটা কারণে এখন পর্যন্ত ডাকাতি হয় নি। কেন হয় নি, জানি না। হয়তো ১১ তলা বলেই কেউ উঠে আসে নি। কিন্তু একদিন তো আসবে নিশ্চয়ই। এই বিল্ডিং এ কতজন মানুষ বেচে আছে, জানি না। জানার আগ্রহও নেই। এর আগের দুই সপ্তাহ ধরে আমরা শুধুমাত্র ডাল খেয়েছি। আমাদের বাসার সব মানুষের মন খুব বড়। কপালও ভাল। কিন্তু খাবার ফুরিয়েছে ৯ দিন যে হয়ে গেল! কালকে কি হবে?!

নীলচে তারা ফোটার আগেই নীলচে আকাশ কালচে হয়ে গেছে। এমন সময় বাড়ির মেইনগেটে কেউ শব্দ করছে। মানুষ! বেচে আছে!? এটা স্বস্তির না ভয়ের জানা নেই। কারণ এখন মানুষ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেউ কি গেটটা খুলতে যাবে? আসতে আসতে গেটে ধাক্কার পরিমাণ বাড়ছে। বোঝা যাচ্ছে খালি হাতে ধাক্কাচ্ছে না। কিছু একটা দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। দরজা পেটানো নিরেট শব্দটা আস্তে আস্তে ফাপা হতে হতে কেমন যেন পাতিল পেটানোর মত পাতলা হচ্ছে। একটু পর শব্দটা থেমে গেল। হয়তো দরজা ভেঙে ফেলেছে!

পায়ের শব্দটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, ফ্রিজ খুলেছে। গাধা, কারেন্ট নেই কত দিন, ফ্রিজে খাবার কি এখনও ভাল আছে? আগে লোকে বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢুকলে আলমারি খুলত। এখন খুলে ফ্রিজ বা খাবারের গুদামঘর। মানুষ বুঝে গেছে, টাকা খাওয়া যায় না। তাই খাবার না থাকলে টাকা আর কাগজে তফাৎ নেই।

যিনি এবাড়িতে ঢুকেছেন, তিনি কোনও শব্দ করছেন না। খুব পরিচিত একটি চেহারা। খুব কাছের আত্মীয় তিনি। একসময় নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল তাদের আর এই পরিবারে। এবার অবশ্য বেশ অনেক দিন পর এলেন। এসেই দেখলেন, বাসার সবাই আরও অনেক আগেই মারা গেছে। সবার লাশ পচতে শুরু করেছে। সবাই বলতে বাড়িতে মোট ৩ জন ছিল। একজন বহু আগেই মারা গেছে। তার লাশ দাফন করা হয় নি। এই সমাজে এখন লাশ দাফন হয় না। বাকি দুজনের একজন মাসখানেক হবে না মারা গেছে যে। তার লাশ ঘরের অন্য কোণে ফেলে রাখা ছিল। বাইরে নিয়ে ফেলার সামর্থ্য হয় নি। শেষ যে ব্যক্তিটি বেচে ছিল , সে মরেছে এই ৯ দিন হল। তার সারাশব্দ পেতাম না বলেই আমি বুঝেছিলাম। আর খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরও ভালভাবে তা বুঝেছি।

নিজের এতো কাছের আত্মীয়স্বজনের লাশ এভাবে পড়ে থাকতে দেখেও অনুপ্রবেশকারী লোকটির মনে কোনও বিকার নেই। এসব ঘটনা এখন মানুষকে আন্দোলিত করে না। লাশ দেখাটাই যেন স্বাভাবিক। জীবিত মানুষ দেখলেই বরং লোকে এখন ভয় পায়। অনুপ্রবেশকারী লোকটি বরং বাড়ির সবাইকে মৃত দেখে খুশিই হল। আড়ামে খাবার খোজা যাবে বাড়িতে। ঝামেলা করার কেউ নেই। অথচ লোকটির মাথায় এই ধারণাই নেই, খাবার নেই এই বাড়িতে। খাবারের অভাবেই এ বাড়ির সবাই মরেছে, ওই মহামারিতে না। অবশ্য, এই দুর্ভিক্ষকে ঐ মহামারির অংশ করা যায় কি না জানা নাই।

লোকটি খাবার খুজে যাচ্ছে। পাবে না। নেই। হয়তো লোকটিও তা বুঝে গেছে। হয়তো চলে যাবে একটু পর। এমন সময় হঠাৎ আরেকটা শব্দে লোকটি চমকে উঠল। খুজতেছে শব্দের উৎস। এরপর শব্দের উৎস লক্ষ্য করে আগাতে শুরু করল।

আমি যে খাচায় থাকি, তার পাশের খাচাতেই আরেকটা ঘুঘু ডেকে উঠেছে। সেটা আমারই প্রজাতির ঘুঘু। প্রজাতিতে একই হলেও জ্ঞান তার আমার চাইতে অনেক কম। বিপদ বুঝতে পারে নি। ঘুঘুটার ডাক ঐ পরিত্যাক্ত অর্ধনির্মিত বহুতল ভবনে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি তুলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটা বারান্দায় আমাদের খাচাগুলোর সামনে এসে হাজির। চোখে ক্ষুদার্থ-লোলুপ কিন্তু করুণ দৃষ্টি। একটা বড় খাচায় আমাদের সব পাখিগুলোকে সে ভরে সেই খাচাটা তুলে সে তৈরি হল। এ বাড়ি ছেড়ে সে চলে যাবে এখন। তার আরও কয়েকদিনের বেচে থাকার খোরাক যোগাড় হয়ে গেছে।
Half porlam baki ta pore nei trpr comment korchi..:nodding:
 
বিকেলের লালচে আলোতে আকাশ ছেয়ে গেছে। আমি যে জানালার সামনে , সেটা পূর্বদিকে। পূর্বদিকের একটা বারান্দায় আছি, আছি বলতে সবসময়ই থাকি এখানে। বারান্দাটাতে কোনও দেয়াল নেই, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরোটাই গ্রিল। তাই এই এগারো তলার উপর থেকে সামনের মূল সড়ক আর মিরপুর রোডের জাংশন দেখা যায়। নিচে সব সময় বাজার বসত। বিকেলে চায়ের দোকানে হই-হট্টগোলে টেকা দায়। আমি আবার আর্লি রাইজার, তাই সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই গোয়িং টু বেড। আগে ঘুমাতে খুব কষ্ট হত, এতো শব্দদূষণ এখানে, ঘুমানোই যেত না। গত ৮-৯মাস ধরে অবশ্য বেশ আরামেই ঘুমাচ্ছি। শুধু মাঝে মাঝে বাসার লোকেদের অসহ্য শব্দ সহ্য করতে হত। তবে সেই শব্দগুলোতে আমি অভ্যস্ত। গত তিন-চার দিন ধরে সেই শব্দগুলোও এখন আর জ্বালায় না। বেশ ভালই দিন কাটছে, কিন্তু একটা... সমস্যা আছে, সেটার সমাধান এখনও জানা নেই।

সময়টা ২০২০, ডিসেম্বর মাস। আমি সাধারণত দিন তারিখ মাসের হিসাব রাখি না। কখনওই রাখি নি, তবে বাইরেটা দেখেই বুঝতে পারছি সময়টা। সূর্য তখনও আকাশে থাকলেও তাপের ছিটেফোটা নেই চারপাশে। এখানে সেখানে কুয়াশা ঝুলে আছে। উত্তর-পূর্ব কোণের একসারি বিশতলা নির্মাণাধীন বাড়িগুলো খা খা কড়ছে। অবশ্য এগুলোকে নির্মাণাধীন না বলে অসম্পূর্ণ ভবণ বলা ভাল। গত ৭ মাসে এই বাড়িগুলোর কোনও কাজ হয় নি। আর কখনও হবে নাকি জানি না। সামনের যে সড়ক, যেখানে সবসময় ভ্যান, রিক্সা, মটরসাইকেল গিজগিজ করত সেখানে এখন কয়েকটা কুকুর চেচাচ্ছে। এই রাস্তাটা এখন ওদেরই আড্ডাখানা। এখনও ওরা বেশ ভাল আছে, তবে ওরা যে কতদিন এমন ভাল থাকবে তা ওরাও জানে না।

আমার সমস্যাটা আবার মাথা-চারা দিয়ে উঠছে। কি করি? বারান্দা দিয়ে উপরের ফ্লোরের বারান্দা দেখা যায়। সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটু গল্প করার মত কাউকে খুজে পাওয়া যায় কি না। না, সেখানে কোনও পরিবর্তন নেই। একটা লুঙ্গিই ঝোলানো আছে, সেটা অবশ্য গত একসপ্তাহ ধরেই এভাবে আছে। কে জানে হয়তো লুঙ্গিটা ঘরের ভেতরে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি।

একটু পরই সব অন্ধকার হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ নেই। বহু আগেই বিদ্যুৎ চলে গেছে এখান থেকে। মানে বিদ্যুৎ নাকি আর দেশে এখন উৎপাদনই হয় না। দেশে অবশ্য আর কিছুই উৎপাদন হয় না এখন। মার্চ মাসের দিকে এই দেশে একটি অসুখ দেখা দেয়। সেটা মহামারী আকার ধারণ করতে করতে অবশ্য মে মাস হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ মরে গেছে এই দেশের। অন্য দেশের অবস্থা অবশ্য জানি না, তবে বাসার সবার সাথে কথা বলে যা জানি, দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় বিলুপ্তির দিকে নাকি এগিয়ে যাচ্ছে জনপদ। মানুষের অভাব, তাই কাজ করার লোক নেই। কেউ ধান চাষ করছে না, কেউ মাছ ধরছে না, কোনও মুদির দোকান খোলা নেই। জেলে, কৃষক, দোকানী বেচে আছে নাকি এখনও তারই ঠিক নেই, আবার খাবার আসবে কোথা থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাস তিনেক আগে শুনেছিলাম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নাকি জনমানব বিলীন হয়ে গেছে। সমগ্র মানবজাতিই যদি বিলীন হয়ে যায়, অবাক হব না।

উফ! খুধা!! গত ৯দিন ধরে না খেয়ে আছি। খাবার নেই কোনও। বাসার আশেপাশেও কোনও জনমানবের শব্দ পাওয়া যায় না সাধারণত। দেশের বেশিরভাগ মানুষ মরে যাওয়ার পর এবং দুর্ভিক্ষ লাগার কারণে অল্প যারা বেচে ছিল তাদের মধ্যে নানা অপরাধ মাথাচারা দিয়ে ওঠে, অবশ্য এদের কাজগুলো অপরাধ হত আরও এক বছর আগে হলে, যখন সভ্যতা ছিল। এখন না আছে সরকার, না আছে আইনের লোক। তাই আইন ও নাই। প্রকৃতির নিয়মই এখন আইন। বেচে থাকাটাই এখন সবার জীবনের লক্ষ্য। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া না।

যখন মানুষের সাথে সাথে খাবারও ফুরিয়ে গেল তখন থেকে মানুষ খাবারের খোজে একেকদিকে আক্রমণ চালালো। কখনও পাড়ার দোকানে তালা ভেঙে, কখনও প্রতিবেশীর বাড়িতে জোড় করে ঢুকে বা দরজা ভেঙে, কখনও রাস্তায় কারও কুড়িয়ে পাওয়া খাবার জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে। এসবই চলত, চলছে। কিন্তু মানুষ কমে যাওয়ায় এসব ঘটনাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

মেয়ে মানুষ একা বাসায় আছে। তাদের ভয় এখন তাদের সম্ভ্রম নিয়ে নয়। ধর্ষণ আরও বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, আগে ফুড, পরে সেক্স। তাই এখন কেউ ওসবের ভয় করে না। ওসব হয় ও না এখন। আমাদের যে ফ্ল্যাটটা, সেটাতে কোনও একটা কারণে এখন পর্যন্ত ডাকাতি হয় নি। কেন হয় নি, জানি না। হয়তো ১১ তলা বলেই কেউ উঠে আসে নি। কিন্তু একদিন তো আসবে নিশ্চয়ই। এই বিল্ডিং এ কতজন মানুষ বেচে আছে, জানি না। জানার আগ্রহও নেই। এর আগের দুই সপ্তাহ ধরে আমরা শুধুমাত্র ডাল খেয়েছি। আমাদের বাসার সব মানুষের মন খুব বড়। কপালও ভাল। কিন্তু খাবার ফুরিয়েছে ৯ দিন যে হয়ে গেল! কালকে কি হবে?!

নীলচে তারা ফোটার আগেই নীলচে আকাশ কালচে হয়ে গেছে। এমন সময় বাড়ির মেইনগেটে কেউ শব্দ করছে। মানুষ! বেচে আছে!? এটা স্বস্তির না ভয়ের জানা নেই। কারণ এখন মানুষ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেউ কি গেটটা খুলতে যাবে? আসতে আসতে গেটে ধাক্কার পরিমাণ বাড়ছে। বোঝা যাচ্ছে খালি হাতে ধাক্কাচ্ছে না। কিছু একটা দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। দরজা পেটানো নিরেট শব্দটা আস্তে আস্তে ফাপা হতে হতে কেমন যেন পাতিল পেটানোর মত পাতলা হচ্ছে। একটু পর শব্দটা থেমে গেল। হয়তো দরজা ভেঙে ফেলেছে!

পায়ের শব্দটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, ফ্রিজ খুলেছে। গাধা, কারেন্ট নেই কত দিন, ফ্রিজে খাবার কি এখনও ভাল আছে? আগে লোকে বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢুকলে আলমারি খুলত। এখন খুলে ফ্রিজ বা খাবারের গুদামঘর। মানুষ বুঝে গেছে, টাকা খাওয়া যায় না। তাই খাবার না থাকলে টাকা আর কাগজে তফাৎ নেই।

যিনি এবাড়িতে ঢুকেছেন, তিনি কোনও শব্দ করছেন না। খুব পরিচিত একটি চেহারা। খুব কাছের আত্মীয় তিনি। একসময় নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল তাদের আর এই পরিবারে। এবার অবশ্য বেশ অনেক দিন পর এলেন। এসেই দেখলেন, বাসার সবাই আরও অনেক আগেই মারা গেছে। সবার লাশ পচতে শুরু করেছে। সবাই বলতে বাড়িতে মোট ৩ জন ছিল। একজন বহু আগেই মারা গেছে। তার লাশ দাফন করা হয় নি। এই সমাজে এখন লাশ দাফন হয় না। বাকি দুজনের একজন মাসখানেক হবে না মারা গেছে যে। তার লাশ ঘরের অন্য কোণে ফেলে রাখা ছিল। বাইরে নিয়ে ফেলার সামর্থ্য হয় নি। শেষ যে ব্যক্তিটি বেচে ছিল , সে মরেছে এই ৯ দিন হল। তার সারাশব্দ পেতাম না বলেই আমি বুঝেছিলাম। আর খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরও ভালভাবে তা বুঝেছি।

নিজের এতো কাছের আত্মীয়স্বজনের লাশ এভাবে পড়ে থাকতে দেখেও অনুপ্রবেশকারী লোকটির মনে কোনও বিকার নেই। এসব ঘটনা এখন মানুষকে আন্দোলিত করে না। লাশ দেখাটাই যেন স্বাভাবিক। জীবিত মানুষ দেখলেই বরং লোকে এখন ভয় পায়। অনুপ্রবেশকারী লোকটি বরং বাড়ির সবাইকে মৃত দেখে খুশিই হল। আড়ামে খাবার খোজা যাবে বাড়িতে। ঝামেলা করার কেউ নেই। অথচ লোকটির মাথায় এই ধারণাই নেই, খাবার নেই এই বাড়িতে। খাবারের অভাবেই এ বাড়ির সবাই মরেছে, ওই মহামারিতে না। অবশ্য, এই দুর্ভিক্ষকে ঐ মহামারির অংশ করা যায় কি না জানা নাই।

লোকটি খাবার খুজে যাচ্ছে। পাবে না। নেই। হয়তো লোকটিও তা বুঝে গেছে। হয়তো চলে যাবে একটু পর। এমন সময় হঠাৎ আরেকটা শব্দে লোকটি চমকে উঠল। খুজতেছে শব্দের উৎস। এরপর শব্দের উৎস লক্ষ্য করে আগাতে শুরু করল।

আমি যে খাচায় থাকি, তার পাশের খাচাতেই আরেকটা ঘুঘু ডেকে উঠেছে। সেটা আমারই প্রজাতির ঘুঘু। প্রজাতিতে একই হলেও জ্ঞান তার আমার চাইতে অনেক কম। বিপদ বুঝতে পারে নি। ঘুঘুটার ডাক ঐ পরিত্যাক্ত অর্ধনির্মিত বহুতল ভবনে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি তুলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটা বারান্দায় আমাদের খাচাগুলোর সামনে এসে হাজির। চোখে ক্ষুদার্থ-লোলুপ কিন্তু করুণ দৃষ্টি। একটা বড় খাচায় আমাদের সব পাখিগুলোকে সে ভরে সেই খাচাটা তুলে সে তৈরি হল। এ বাড়ি ছেড়ে সে চলে যাবে এখন। তার আরও কয়েকদিনের বেচে থাকার খোরাক যোগাড় হয়ে গেছে।
বেশ ভালো লাগলো আরো পোস্ট করো btw আমি A Notification দেখা হয়েই গেলো
 
বেশ ভালো লাগলো আরো পোস্ট করো btw আমি A Notification দেখা হয়েই গেলো
আমি জানি তুমি নোটিফিকেশন। আগেও দেখেছি বিভিন্ন থ্রেড এ, তোমার বায়োতে।
 
আমি জানি তুমি নোটিফিকেশন। আগেও দেখেছি বিভিন্ন থ্রেড এ, তোমার বায়োতে।
ওহঃ আমার এখানে আগেও একটা আইডি ছিল নাম Sujoy19 ওটা Banned করে দিয়েছে নাহলে আমি এতদিনে pro badge পেয়ে যেতাম।
 
ওহঃ আমার এখানে আগেও একটা আইডি ছিল নাম Sujoy19 ওটা Banned করে দিয়েছে নাহলে আমি এতদিনে pro badge পেয়ে যেতাম।
Badge দিয়ে কি৷ ফোরামে আছো। পড়, লেখো। রেপুটেশন দাও । শান্তি
 
Badge দিয়ে কি৷ ফোরামে আছো। পড়, লেখো। রেপুটেশন দাও । শান্তি
আরে সেটা নয়।অন্য একটা ব্যাপার আছে badge পেলে ওখানে গান টান দিতে পারবো
 
বিকেলের লালচে আলোতে আকাশ ছেয়ে গেছে। আমি যে জানালার সামনে , সেটা পূর্বদিকে। পূর্বদিকের একটা বারান্দায় আছি, আছি বলতে সবসময়ই থাকি এখানে। বারান্দাটাতে কোনও দেয়াল নেই, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরোটাই গ্রিল। তাই এই এগারো তলার উপর থেকে সামনের মূল সড়ক আর মিরপুর রোডের জাংশন দেখা যায়। নিচে সব সময় বাজার বসত। বিকেলে চায়ের দোকানে হই-হট্টগোলে টেকা দায়। আমি আবার আর্লি রাইজার, তাই সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই গোয়িং টু বেড। আগে ঘুমাতে খুব কষ্ট হত, এতো শব্দদূষণ এখানে, ঘুমানোই যেত না। গত ৮-৯মাস ধরে অবশ্য বেশ আরামেই ঘুমাচ্ছি। শুধু মাঝে মাঝে বাসার লোকেদের অসহ্য শব্দ সহ্য করতে হত। তবে সেই শব্দগুলোতে আমি অভ্যস্ত। গত তিন-চার দিন ধরে সেই শব্দগুলোও এখন আর জ্বালায় না। বেশ ভালই দিন কাটছে, কিন্তু একটা... সমস্যা আছে, সেটার সমাধান এখনও জানা নেই।

সময়টা ২০২০, ডিসেম্বর মাস। আমি সাধারণত দিন তারিখ মাসের হিসাব রাখি না। কখনওই রাখি নি, তবে বাইরেটা দেখেই বুঝতে পারছি সময়টা। সূর্য তখনও আকাশে থাকলেও তাপের ছিটেফোটা নেই চারপাশে। এখানে সেখানে কুয়াশা ঝুলে আছে। উত্তর-পূর্ব কোণের একসারি বিশতলা নির্মাণাধীন বাড়িগুলো খা খা কড়ছে। অবশ্য এগুলোকে নির্মাণাধীন না বলে অসম্পূর্ণ ভবণ বলা ভাল। গত ৭ মাসে এই বাড়িগুলোর কোনও কাজ হয় নি। আর কখনও হবে নাকি জানি না। সামনের যে সড়ক, যেখানে সবসময় ভ্যান, রিক্সা, মটরসাইকেল গিজগিজ করত সেখানে এখন কয়েকটা কুকুর চেচাচ্ছে। এই রাস্তাটা এখন ওদেরই আড্ডাখানা। এখনও ওরা বেশ ভাল আছে, তবে ওরা যে কতদিন এমন ভাল থাকবে তা ওরাও জানে না।

আমার সমস্যাটা আবার মাথা-চারা দিয়ে উঠছে। কি করি? বারান্দা দিয়ে উপরের ফ্লোরের বারান্দা দেখা যায়। সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটু গল্প করার মত কাউকে খুজে পাওয়া যায় কি না। না, সেখানে কোনও পরিবর্তন নেই। একটা লুঙ্গিই ঝোলানো আছে, সেটা অবশ্য গত একসপ্তাহ ধরেই এভাবে আছে। কে জানে হয়তো লুঙ্গিটা ঘরের ভেতরে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি।

একটু পরই সব অন্ধকার হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ নেই। বহু আগেই বিদ্যুৎ চলে গেছে এখান থেকে। মানে বিদ্যুৎ নাকি আর দেশে এখন উৎপাদনই হয় না। দেশে অবশ্য আর কিছুই উৎপাদন হয় না এখন। মার্চ মাসের দিকে এই দেশে একটি অসুখ দেখা দেয়। সেটা মহামারী আকার ধারণ করতে করতে অবশ্য মে মাস হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ মরে গেছে এই দেশের। অন্য দেশের অবস্থা অবশ্য জানি না, তবে বাসার সবার সাথে কথা বলে যা জানি, দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় বিলুপ্তির দিকে নাকি এগিয়ে যাচ্ছে জনপদ। মানুষের অভাব, তাই কাজ করার লোক নেই। কেউ ধান চাষ করছে না, কেউ মাছ ধরছে না, কোনও মুদির দোকান খোলা নেই। জেলে, কৃষক, দোকানী বেচে আছে নাকি এখনও তারই ঠিক নেই, আবার খাবার আসবে কোথা থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাস তিনেক আগে শুনেছিলাম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নাকি জনমানব বিলীন হয়ে গেছে। সমগ্র মানবজাতিই যদি বিলীন হয়ে যায়, অবাক হব না।

উফ! খুধা!! গত ৯দিন ধরে না খেয়ে আছি। খাবার নেই কোনও। বাসার আশেপাশেও কোনও জনমানবের শব্দ পাওয়া যায় না সাধারণত। দেশের বেশিরভাগ মানুষ মরে যাওয়ার পর এবং দুর্ভিক্ষ লাগার কারণে অল্প যারা বেচে ছিল তাদের মধ্যে নানা অপরাধ মাথাচারা দিয়ে ওঠে, অবশ্য এদের কাজগুলো অপরাধ হত আরও এক বছর আগে হলে, যখন সভ্যতা ছিল। এখন না আছে সরকার, না আছে আইনের লোক। তাই আইন ও নাই। প্রকৃতির নিয়মই এখন আইন। বেচে থাকাটাই এখন সবার জীবনের লক্ষ্য। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া না।

যখন মানুষের সাথে সাথে খাবারও ফুরিয়ে গেল তখন থেকে মানুষ খাবারের খোজে একেকদিকে আক্রমণ চালালো। কখনও পাড়ার দোকানে তালা ভেঙে, কখনও প্রতিবেশীর বাড়িতে জোড় করে ঢুকে বা দরজা ভেঙে, কখনও রাস্তায় কারও কুড়িয়ে পাওয়া খাবার জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে। এসবই চলত, চলছে। কিন্তু মানুষ কমে যাওয়ায় এসব ঘটনাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

মেয়ে মানুষ একা বাসায় আছে। তাদের ভয় এখন তাদের সম্ভ্রম নিয়ে নয়। ধর্ষণ আরও বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, আগে ফুড, পরে সেক্স। তাই এখন কেউ ওসবের ভয় করে না। ওসব হয় ও না এখন। আমাদের যে ফ্ল্যাটটা, সেটাতে কোনও একটা কারণে এখন পর্যন্ত ডাকাতি হয় নি। কেন হয় নি, জানি না। হয়তো ১১ তলা বলেই কেউ উঠে আসে নি। কিন্তু একদিন তো আসবে নিশ্চয়ই। এই বিল্ডিং এ কতজন মানুষ বেচে আছে, জানি না। জানার আগ্রহও নেই। এর আগের দুই সপ্তাহ ধরে আমরা শুধুমাত্র ডাল খেয়েছি। আমাদের বাসার সব মানুষের মন খুব বড়। কপালও ভাল। কিন্তু খাবার ফুরিয়েছে ৯ দিন যে হয়ে গেল! কালকে কি হবে?!

নীলচে তারা ফোটার আগেই নীলচে আকাশ কালচে হয়ে গেছে। এমন সময় বাড়ির মেইনগেটে কেউ শব্দ করছে। মানুষ! বেচে আছে!? এটা স্বস্তির না ভয়ের জানা নেই। কারণ এখন মানুষ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেউ কি গেটটা খুলতে যাবে? আসতে আসতে গেটে ধাক্কার পরিমাণ বাড়ছে। বোঝা যাচ্ছে খালি হাতে ধাক্কাচ্ছে না। কিছু একটা দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। দরজা পেটানো নিরেট শব্দটা আস্তে আস্তে ফাপা হতে হতে কেমন যেন পাতিল পেটানোর মত পাতলা হচ্ছে। একটু পর শব্দটা থেমে গেল। হয়তো দরজা ভেঙে ফেলেছে!

পায়ের শব্দটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, ফ্রিজ খুলেছে। গাধা, কারেন্ট নেই কত দিন, ফ্রিজে খাবার কি এখনও ভাল আছে? আগে লোকে বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢুকলে আলমারি খুলত। এখন খুলে ফ্রিজ বা খাবারের গুদামঘর। মানুষ বুঝে গেছে, টাকা খাওয়া যায় না। তাই খাবার না থাকলে টাকা আর কাগজে তফাৎ নেই।

যিনি এবাড়িতে ঢুকেছেন, তিনি কোনও শব্দ করছেন না। খুব পরিচিত একটি চেহারা। খুব কাছের আত্মীয় তিনি। একসময় নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল তাদের আর এই পরিবারে। এবার অবশ্য বেশ অনেক দিন পর এলেন। এসেই দেখলেন, বাসার সবাই আরও অনেক আগেই মারা গেছে। সবার লাশ পচতে শুরু করেছে। সবাই বলতে বাড়িতে মোট ৩ জন ছিল। একজন বহু আগেই মারা গেছে। তার লাশ দাফন করা হয় নি। এই সমাজে এখন লাশ দাফন হয় না। বাকি দুজনের একজন মাসখানেক হবে না মারা গেছে যে। তার লাশ ঘরের অন্য কোণে ফেলে রাখা ছিল। বাইরে নিয়ে ফেলার সামর্থ্য হয় নি। শেষ যে ব্যক্তিটি বেচে ছিল , সে মরেছে এই ৯ দিন হল। তার সারাশব্দ পেতাম না বলেই আমি বুঝেছিলাম। আর খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরও ভালভাবে তা বুঝেছি।

নিজের এতো কাছের আত্মীয়স্বজনের লাশ এভাবে পড়ে থাকতে দেখেও অনুপ্রবেশকারী লোকটির মনে কোনও বিকার নেই। এসব ঘটনা এখন মানুষকে আন্দোলিত করে না। লাশ দেখাটাই যেন স্বাভাবিক। জীবিত মানুষ দেখলেই বরং লোকে এখন ভয় পায়। অনুপ্রবেশকারী লোকটি বরং বাড়ির সবাইকে মৃত দেখে খুশিই হল। আড়ামে খাবার খোজা যাবে বাড়িতে। ঝামেলা করার কেউ নেই। অথচ লোকটির মাথায় এই ধারণাই নেই, খাবার নেই এই বাড়িতে। খাবারের অভাবেই এ বাড়ির সবাই মরেছে, ওই মহামারিতে না। অবশ্য, এই দুর্ভিক্ষকে ঐ মহামারির অংশ করা যায় কি না জানা নাই।

লোকটি খাবার খুজে যাচ্ছে। পাবে না। নেই। হয়তো লোকটিও তা বুঝে গেছে। হয়তো চলে যাবে একটু পর। এমন সময় হঠাৎ আরেকটা শব্দে লোকটি চমকে উঠল। খুজতেছে শব্দের উৎস। এরপর শব্দের উৎস লক্ষ্য করে আগাতে শুরু করল।

আমি যে খাচায় থাকি, তার পাশের খাচাতেই আরেকটা ঘুঘু ডেকে উঠেছে। সেটা আমারই প্রজাতির ঘুঘু। প্রজাতিতে একই হলেও জ্ঞান তার আমার চাইতে অনেক কম। বিপদ বুঝতে পারে নি। ঘুঘুটার ডাক ঐ পরিত্যাক্ত অর্ধনির্মিত বহুতল ভবনে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি তুলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটা বারান্দায় আমাদের খাচাগুলোর সামনে এসে হাজির। চোখে ক্ষুদার্থ-লোলুপ কিন্তু করুণ দৃষ্টি। একটা বড় খাচায় আমাদের সব পাখিগুলোকে সে ভরে সেই খাচাটা তুলে সে তৈরি হল। এ বাড়ি ছেড়ে সে চলে যাবে এখন। তার আরও কয়েকদিনের বেচে থাকার খোরাক যোগাড় হয়ে গেছে।
Valo likhecho
 
Top