Nilabha
Wellknown Ace
পাসপোর্ট আমাদের আছেই। কিন্তু সমস্যা যেটা হয়ে দাড়ালো সেই সুদূর ব্রাজিলে যাবার যুক্তিপূর্ণ ছুতো বার করাটাই। বাড়িতে তো আর গুপ্তধন খুঁজতে যাচ্ছি বলে যাওয়া যায় না তাই সব দিক রক্ষা করে আমিই ঠিক করলাম বাড়িতে বলবো আমরা একটা সমাজ সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আর সে জন্য যাচ্ছি সুন্দরবন অঞ্চলে। আর টিকিট থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচা সামলালো অঙ্কন। সব ঝঞ্ঝাট মিটিয়ে আমরা যখন প্লেনে চড়ে বসলাম তখন উত্তেজনায় আমাদের শরীরে বারেবারে শিহরণ খেলে যাচ্ছে। ভারতের মাটি ছাড়তেই মনে মনে অনুভব করতে পারছিলাম অ্যামাজন আর তার নিবিড় বৃক্ষ মন্ডলী দ্বারা সুরক্ষিত বিপুল ধনরাশি তীব্র আহ্বান। বিপদ আছে, ঝুঁকি আছে, এমনকি মৃত্যুও হয়তো আছে সেটা ভেবে মনের কোণে আশঙ্কাটা যতবার উঁকি দিয়ে মাথাচাড়া দেবার চেষ্টায় ছিলো ঠিক ততবারই মৃত্যুর আশঙ্কাকে বারবার পদদলিত করছিল অজস্র রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার অনুভূতি আর গুপ্তধনের সন্ধান।
সাও পাওলো তে যখন প্লেন ল্যান্ড করলো তখন প্রায় সন্ধ্যা। এখান থেকে আপাতত একটা হোটেলের রুম বুক করে আজকের রাতটা কাটানো হবে আর কাল সকালে একটা প্রাইভেট প্লেন ভাড়া করে রওনা দেওয়া হবে মানাউসে। মানাউস হলো অ্যামাজন রেনফরেস্ট এ যাবার আকাশপথে একমাত্র উপায়। মানাউসে নামার পর প্লেন ব্যাক করবে আর একজন গাইড, অঙ্কন আর আমি যাবো সেই আদিবাসী ট্রাইব ভিলেজের সন্ধানে। গাইড রাখার ইচ্ছে আমার ছিলনা কিন্তু কোনো গাইড ছাড়া আমাদের পক্ষে রেনফরেস্ট এ প্রবেশাধিকার পাওয়া সম্ভব ছিলো না। অঙ্কনই আমায় বলল যে ও থাকলে সুবিধাই হবে আর কয়েকটা টাকা খাইয়ে আমাদের কাজ করিয়ে নেওয়াও যাবে কারণ এখানকার গাইডরা নাকি খুব ঘুষখোর হয়। যাক গে, প্ল্যান অনুযায়ী সব কাজ হলো। সেদিন রাত্রে আমাদের একটা হোটেলে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হলো। তারপরের দিন সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যেই সবাই তৈরি হয়ে রওনা দিলাম মানাউসের উদ্দেশ্যে।
প্লেন যখন মানাউস এয়ারপর্টে ল্যান্ড করলো তখন বড়জোর আটটা বেজে পাঁচ কি দশ মিনিট। এবার এখন থেকে ট্যাক্সি করে সোজা অ্যামাজন রেনফরেস্ট। ভাবতেই রোমাঞ্চের শিহরণে শরীরের সমস্ত লোমকূপ গুলো খাড়া হয়ে উঠলো। তবে মনে মনে একটা অজানা আশঙ্কা হটাৎ করেই জেগে উঠলো, এত খরচা করে আসা, এত পরিশ্রম করা, শেষ পর্যন্ত সত্যিই কোনো গুপ্তধন পাবো তো?
একথা অঙ্কন কে বলতে সে বললো,
- তো না পেলেই বা ক্ষতি কি, এই অভিজ্ঞতাটা তো সবার সচরাচর হয়না ভাই। কী ভাগ্যিস তুই সেদিন এসেছিলি আমার বাড়িতে তাই তো এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছি, আমি যা ল্যাদখোর তাতে আমার ইচ্ছেয় কোনোদিনও এটা সম্ভব ছিল না।
ওর কথায় মনে বেশ ভরসা পেলাম। মনে হতে লাগলো যে এবার আর গুপ্তধন না পেলেও নিরাশ হবো না হয়তো। মনের মধ্যে একটা কিঞ্চিৎ ভয়, আশঙ্কা আর চাপা উত্তেজনা নিয়ে ট্যাক্সিটাতে চেপে বসলাম।
ট্যাক্সি মসৃণ রাস্তা ধরে যতই এগোতে লাগলো বুকের ভেতরকার ঢিপঢিপানি ক্রমশ বাড়তে থাকলো। একসময় আমরা পৌঁছলাম জঙ্গলের মূল প্রবেশ পথে। সেখানেই আমাদের সঙ্গে আলাপ হলো মিস্টার লুকাসের, আমাদের গাইড। প্রায় আমাদেরই সমবয়সী। গায়ের রং ধবধবে সাদা, উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুট, আর রীতিমত জিম করা শরীর । আমাদের সাথে অস্ত্রশস্ত্র বিশেষ কিছু নেই শুধু লুকাসের কাছে একটা রাইফেল আর আমাদের দেওয়া হয়েছে একটা করে ট্রাঙ্কুলাইজার গান। জঙ্গলের ভেতর যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো বিপদ ঘটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, তাই এই ব্যবস্থা। আমরা অবশ্য এতে ঠিক সন্তুষ্ট নই, কারণ এই ট্রাঙ্কুলাইজারে আমরা বিপদের হাত থেকে ঠিক কতটা সুরক্ষিত সে বিষয়ে আমি বেশ অনিশ্চিত। তবুও রুল ইজ রুল। তাই মানতে বাধ্য আমরা আর এছাড়াও লুকাসের কাছে যখন রাইফেল আছে তখন এত চিন্তার কারণ কি ?
উহু, প্রশ্ন টার ঠিকঠাক কোনো উত্তর পেলাম না মনের কাছ থেকে। যাই হোক আমরা ক্রমেই প্রবেশ করলাম গভীর অ্যামাজনের অন্তঃপুরে। প্রায় গগনস্পর্শী বৃক্ষ জাতীয় গাছগুলো দাড়িয়ে রয়েছে প্রখর রৌদ্রালোক কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। দেখে মনে হয় তারা বলছে লক্ষ লক্ষ পথ সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তো এতদূর পৌঁছলে, কই এবার পেরিয়ে দেখাও দেখি।
লুকাস ছেলেটা বেশ মিশুখে। সহজেই আমাদের বন্ধুসম হয়ে উঠলো আর ওর বাংলাটাও মোটামুটি পরিষ্কারই দেখলাম। ওর মুখেই জানলাম যে গত সাত বছর ধরে বিভিন্ন ভাষার মানুষের সঙ্গে আলাপ হওয়ায় সব ভাষাই মোটামুটি ওর আয়ত্ত হয়ে গেছে। সে আরো জানালো, অ্যাডভেঞ্চার ওর রক্তে আছে, ওর বাবাও এককালে এই জঙ্গলের ট্রাভেল গাইড ছিলেন, ও নিজেও বাবার প্রদর্শিত পথেই পাড়ি জমিয়েছে। বিশাল জঙ্গলের বুক চিড়ে চলে গেছে সরু বন্য পথ। সেটা ধরেই হেঁটে চলেছি আমরা। আমাদের সাথে সপ্তাহখানেকের খাবার দাবার আর পানীয় আছে। টুরিস্টদের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হলেও আমাদের জন্য তা আদৌ যথেষ্ট কি না সেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কতদিন যে এই বৃক্ষপুরীতে কাটাতে হবে তার কোনো ঠিক নেই। এসব ভাবতে ভাবতে আর অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হাঁটছিলাম কিন্তু হটাৎ করেই লুকাসের চিৎকারে সতর্ক হয়ে গেলাম।
- be careful man, আশেপাশের গাছপালায় লক্ষ রেখে চলো, এখানে একরকমের ইনসেক্ট আছে যার নাম Amazonian Giant Centipede, very dangerous insect। এরা গাছের গায়ে আটকে থাকে আর শিকারের দেখা পেলেই গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে শিকারের শরীরের ওপর। আর তার মধ্যে tenticles ঢুকিয়ে poision inject করে দেয়। তাতে খুব বেশিক্ষণ হলে মানুষের survive করতে সময় লাগে only ten minutes। You guys have to be very careful about it।
আমরা তো শুনে থ। অঙ্কন টেরিয়ে আমার দিকে তাকালো, আমি ঢোক গিলে নিয়ে ওকে এগোতে ইঙ্গিত করলাম।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
সাও পাওলো তে যখন প্লেন ল্যান্ড করলো তখন প্রায় সন্ধ্যা। এখান থেকে আপাতত একটা হোটেলের রুম বুক করে আজকের রাতটা কাটানো হবে আর কাল সকালে একটা প্রাইভেট প্লেন ভাড়া করে রওনা দেওয়া হবে মানাউসে। মানাউস হলো অ্যামাজন রেনফরেস্ট এ যাবার আকাশপথে একমাত্র উপায়। মানাউসে নামার পর প্লেন ব্যাক করবে আর একজন গাইড, অঙ্কন আর আমি যাবো সেই আদিবাসী ট্রাইব ভিলেজের সন্ধানে। গাইড রাখার ইচ্ছে আমার ছিলনা কিন্তু কোনো গাইড ছাড়া আমাদের পক্ষে রেনফরেস্ট এ প্রবেশাধিকার পাওয়া সম্ভব ছিলো না। অঙ্কনই আমায় বলল যে ও থাকলে সুবিধাই হবে আর কয়েকটা টাকা খাইয়ে আমাদের কাজ করিয়ে নেওয়াও যাবে কারণ এখানকার গাইডরা নাকি খুব ঘুষখোর হয়। যাক গে, প্ল্যান অনুযায়ী সব কাজ হলো। সেদিন রাত্রে আমাদের একটা হোটেলে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হলো। তারপরের দিন সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যেই সবাই তৈরি হয়ে রওনা দিলাম মানাউসের উদ্দেশ্যে।
প্লেন যখন মানাউস এয়ারপর্টে ল্যান্ড করলো তখন বড়জোর আটটা বেজে পাঁচ কি দশ মিনিট। এবার এখন থেকে ট্যাক্সি করে সোজা অ্যামাজন রেনফরেস্ট। ভাবতেই রোমাঞ্চের শিহরণে শরীরের সমস্ত লোমকূপ গুলো খাড়া হয়ে উঠলো। তবে মনে মনে একটা অজানা আশঙ্কা হটাৎ করেই জেগে উঠলো, এত খরচা করে আসা, এত পরিশ্রম করা, শেষ পর্যন্ত সত্যিই কোনো গুপ্তধন পাবো তো?
একথা অঙ্কন কে বলতে সে বললো,
- তো না পেলেই বা ক্ষতি কি, এই অভিজ্ঞতাটা তো সবার সচরাচর হয়না ভাই। কী ভাগ্যিস তুই সেদিন এসেছিলি আমার বাড়িতে তাই তো এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছি, আমি যা ল্যাদখোর তাতে আমার ইচ্ছেয় কোনোদিনও এটা সম্ভব ছিল না।
ওর কথায় মনে বেশ ভরসা পেলাম। মনে হতে লাগলো যে এবার আর গুপ্তধন না পেলেও নিরাশ হবো না হয়তো। মনের মধ্যে একটা কিঞ্চিৎ ভয়, আশঙ্কা আর চাপা উত্তেজনা নিয়ে ট্যাক্সিটাতে চেপে বসলাম।
ট্যাক্সি মসৃণ রাস্তা ধরে যতই এগোতে লাগলো বুকের ভেতরকার ঢিপঢিপানি ক্রমশ বাড়তে থাকলো। একসময় আমরা পৌঁছলাম জঙ্গলের মূল প্রবেশ পথে। সেখানেই আমাদের সঙ্গে আলাপ হলো মিস্টার লুকাসের, আমাদের গাইড। প্রায় আমাদেরই সমবয়সী। গায়ের রং ধবধবে সাদা, উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুট, আর রীতিমত জিম করা শরীর । আমাদের সাথে অস্ত্রশস্ত্র বিশেষ কিছু নেই শুধু লুকাসের কাছে একটা রাইফেল আর আমাদের দেওয়া হয়েছে একটা করে ট্রাঙ্কুলাইজার গান। জঙ্গলের ভেতর যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো বিপদ ঘটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, তাই এই ব্যবস্থা। আমরা অবশ্য এতে ঠিক সন্তুষ্ট নই, কারণ এই ট্রাঙ্কুলাইজারে আমরা বিপদের হাত থেকে ঠিক কতটা সুরক্ষিত সে বিষয়ে আমি বেশ অনিশ্চিত। তবুও রুল ইজ রুল। তাই মানতে বাধ্য আমরা আর এছাড়াও লুকাসের কাছে যখন রাইফেল আছে তখন এত চিন্তার কারণ কি ?
উহু, প্রশ্ন টার ঠিকঠাক কোনো উত্তর পেলাম না মনের কাছ থেকে। যাই হোক আমরা ক্রমেই প্রবেশ করলাম গভীর অ্যামাজনের অন্তঃপুরে। প্রায় গগনস্পর্শী বৃক্ষ জাতীয় গাছগুলো দাড়িয়ে রয়েছে প্রখর রৌদ্রালোক কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। দেখে মনে হয় তারা বলছে লক্ষ লক্ষ পথ সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তো এতদূর পৌঁছলে, কই এবার পেরিয়ে দেখাও দেখি।
লুকাস ছেলেটা বেশ মিশুখে। সহজেই আমাদের বন্ধুসম হয়ে উঠলো আর ওর বাংলাটাও মোটামুটি পরিষ্কারই দেখলাম। ওর মুখেই জানলাম যে গত সাত বছর ধরে বিভিন্ন ভাষার মানুষের সঙ্গে আলাপ হওয়ায় সব ভাষাই মোটামুটি ওর আয়ত্ত হয়ে গেছে। সে আরো জানালো, অ্যাডভেঞ্চার ওর রক্তে আছে, ওর বাবাও এককালে এই জঙ্গলের ট্রাভেল গাইড ছিলেন, ও নিজেও বাবার প্রদর্শিত পথেই পাড়ি জমিয়েছে। বিশাল জঙ্গলের বুক চিড়ে চলে গেছে সরু বন্য পথ। সেটা ধরেই হেঁটে চলেছি আমরা। আমাদের সাথে সপ্তাহখানেকের খাবার দাবার আর পানীয় আছে। টুরিস্টদের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হলেও আমাদের জন্য তা আদৌ যথেষ্ট কি না সেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কতদিন যে এই বৃক্ষপুরীতে কাটাতে হবে তার কোনো ঠিক নেই। এসব ভাবতে ভাবতে আর অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হাঁটছিলাম কিন্তু হটাৎ করেই লুকাসের চিৎকারে সতর্ক হয়ে গেলাম।
- be careful man, আশেপাশের গাছপালায় লক্ষ রেখে চলো, এখানে একরকমের ইনসেক্ট আছে যার নাম Amazonian Giant Centipede, very dangerous insect। এরা গাছের গায়ে আটকে থাকে আর শিকারের দেখা পেলেই গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে শিকারের শরীরের ওপর। আর তার মধ্যে tenticles ঢুকিয়ে poision inject করে দেয়। তাতে খুব বেশিক্ষণ হলে মানুষের survive করতে সময় লাগে only ten minutes। You guys have to be very careful about it।
আমরা তো শুনে থ। অঙ্কন টেরিয়ে আমার দিকে তাকালো, আমি ঢোক গিলে নিয়ে ওকে এগোতে ইঙ্গিত করলাম।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)