Nilabha
Wellknown Ace
বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর আমরা বুঝতে পারি গভীর রাতের অন্ধকারে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। সেদিনের পর থেকে আরো পাঁচদিন কেটে গেলো টেন্ট খুঁজতে খুঁজতে কিন্তু তার সন্ধান আমরা আর পাইনি কিন্তু আশ্চর্যরকমভাবে গতকাল আমরা খুঁজে পেলাম একটা ট্রাইব ভিলেজ অর্থাৎ বুনো আদিবাসীদের গ্রাম। প্রথমটায় ভয় পেয়েছিলাম কারণ অনেক গল্পে শুনেছি এই ধরনের জনগোষ্ঠী নরখাদক হয়। তবে এদের সাথে মিশে বুঝলাম এরা সেই প্রজাতিভুক্ত নয়। এটা জঙ্গলের একটা ফাঁকা জায়গায় বসতি গড়ে জঙ্গলের ফলমূল খেয়ে আর অস্ত্রশস্ত্র বানিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করেই জীবনযাপন করে। সেখানেই আমরা পাঁচদিন পর খেতে পেলাম। বনে অনেক ফলমূল দেখেছিলাম বটে কিন্তু খাবার সাহস হয়নি। শুধু নারকোলের মালায় বৃষ্টির জল ধরে তা খেয়েই কাটাতে হয়েছে পাঁচ পাঁচটা দিন। যাই হোক সেখানে গিয়ে সেই গ্রামের প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে বুঝলাম এখানে শুধু উনি ছাড়া আর কেউ ভাষা বোঝে না। সবাই নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করে ইশারায় আর ইঙ্গিতে। এই অত্যাধুনিক সভ্য পৃথিবীতেই বাস করছে কয়েক লক্ষ বছর পুরনো যুগের আদিম জনগোষ্ঠী। প্রধান পর্তুগিজ ছাড়া আর কিছু বোঝেন না তাই সে ভাষাতেই তার সাথে কথা বলে বুঝলাম আমরা জঙ্গলের কেন্দ্রে এসে পৌঁছেছি। ওনার কাছে সাহায্য চাইতে উনি বললেন সেখানে আমাদের থাকতে দিতে পারেন কিন্তু ফিরে যাবার জন্য সাহায্য করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ এই জঙ্গলে শুধুমাত্র জাগুয়ারই নয় রয়েছে বহুরকমের প্রাণঘাতী জানোয়ার আর কীটপতঙ্গ। কাঠ আর শিকারের প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের কেউই মাইলখানেকের বেশি দূরে যায়না। তাদের সেই ফুলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে তারা বললেন এই ধরনের ফুল তারা কখনও দেখেননি কিন্তু তাদের মধ্যে একটা গুজবের প্রচলন আছে যে কি এই জঙ্গলের একটা নির্দিষ্ট স্থানে নাকি গুপ্তধন আছে। তবে সে স্থান নাকি অতি দুর্গম। বিপদের সমূহ সম্ভাবনা। আজ রাত্রিটা এখানে কাটাবো আর কাল ভাবছি বের হবো সেই গুপ্তধনের সন্ধানে, ওদের বলা দিকনির্দেশ অনুযায়ী একটা ম্যাপ এঁকে নিয়েছি। চেষ্টা করতে ক্ষতি কি যদি গুপ্তধন নাও পাই ফ্লোরেন্স ডোর্মিন্ডো তো পেতেই পারি।
ব্যাস! এটুকুই, এরপর কয়েকটা ফাঁকা পাতা আর একটা অস্পষ্ট ম্যাপ।
পরদিন সকাল সাড়ে সাতটায় হাজির হলাম অঙ্কনের বাড়ি। কলিং বেল টিপতেই রামুকাকা দরজা খুলে দিয়ে বললো যে অঙ্কন দাদাবাবু এখনও ওঠেননি। সেটা আমার অবশ্য জানাই ছিলো তাই আমি রামুকাকাকে বললাম যে ওকে তুলে যেনো আমার সাথে দেখা করতে পাঠায়, খুব জরুরী প্রয়োজন। আমি বাড়ি আসার মিনিট পঁচিশের মধ্যেই অঙ্কন আমার বাড়িতে হাজির। ওকে আমার ঘরে ডেকে এনে দরজা বন্ধ করে দিলাম। সে আমার এহেন ব্যবহারে বেশ অবাক হয়ে বললো,
- তোর কি ব্যাপার বলতো, এরম তো কোনোদিনও আমায় ডেকে আনিস না তুই, আবার দরজা বন্ধ করে দিলি আমায় ঘরে এনে, কি হয়েছে?
আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রয়ার থেকে লাল কাপড়ে বাঁধানো ডায়েরিটা বের করে ওর হাতে দিলাম।
- তুই এটা দেবার জন্য এই ভোরবেলা আমায় ডাকা করালি। তোর কি মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে নাকি?
- ওরে গাধা, বই কোনো চিড়িয়াখানার জানোয়ার নয় যে কিনে খাঁচা বন্দী করে রাখবি। বই না খুললে তার আসল রূপটাই চোখে পড়েনা, তুই শেলফে তার যে রূপ দেখিস সেটা শুধু একটা ঝলক মাত্র। বইগুলো পড়ে দেখলে বুঝতে পারতিস এর মূল্য কতখানি।
- আরে ভনিতা না করে এবার বলতো কেস টা কী?
- গোল্ড মাইন!
- অ্যাঁ!
- হ্যাঁ! এই ডায়েরিটা কাল মাঝরাত পর্যন্ত পড়ে শেষ করেছি। এতে কি আছে জানিস??
- কী?
- গুপ্তধনের হদিশ!
কথাটা শুনেই চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো সে,
- কি বলিস? ভাগ , কোথায় গুপ্তধন কি গুপ্তধন?
- প্রথম প্রশ্নের উত্তর টা আছে তবে দ্বিতীয় উত্তরটা নেই। গুপ্তধন আছে, তবে এদেশে নয়।
- তবে?
- আমাজনের গভীর অরণ্যে!
কথাটা শুনে সারা শরীর কেঁপে ওঠে অঙ্কনের, সেটা আমার নজর এড়ায়নি।
- কিন্তু তুই এসব জানলি কীকরে আর তার সাথে এই ডায়েরির কি সম্পর্ক।
- এই ডায়েরিটা কাল যখন তোর বাড়িতে প্রথম দেখলাম তখনই মনে হয়েছিল যে এসব দামী দামী বইপত্রের মধ্যে এই ডায়েরিটা কি করছে, তাই এটা খুলে প্রথম পৃষ্ঠাটা পড়লাম ওখানে দাড়িয়েই। আর তারপর বুঝলাম যে এটা একটা অভিযানের কাহিনী আর সে অভিযান কোনো সাধারণ অভিযান না, সে অভিযান কোনো বিশেষ ফুল সংগ্রহের । তাই তোর বাড়ি থেকে বইটা নিয়ে এলাম। ভাবলাম কোনো রোমাঞ্চকর ভ্রমণ কাহিনী হয়তো। এনে প্রায় সারারাত পড়ে যেটা বুঝলাম তা সংক্ষেপে বলি শোন। ডায়েরীর ঘটনাবলী সংক্ষেপে বলতে শুরু করলাম।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথাগুলো শুনছিল অঙ্কন, এবার প্রশ্ন করলো,
- তার মানে শুধু গুপ্তধনের আভাস টুকুই রয়েছে ? সেটার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণই তো নেই?
- সেটা যদি থাকতো তাহলে কি আর তা গুপ্তধন হতো নাকি?
- কিন্তু তোর মতলব টা কী?
- সেখানে গিয়ে এই গুপ্তধনের সন্ধান বার করা।
- তোর মাথাটা পুরোই গেছে। সেই গুপ্তধন পেলেও সেটা তোর হবেনা ভাই কারণ সেটা সেই দেশের সম্পত্তি। হয়তো একটা অংশ পাওয়া যাবে তার থেকে কিন্তু এত পরিশ্রম কেনই বা করতে যাবি?
তার থেকেও বড়ো প্রাণের ঝুঁকি, ওখানে গিয়ে মরবার ইচ্ছে অন্তত আমার নেই।
- আরে গবেট, জীবনে বাপ ঠাকুর্দার টাকায় বসে কত খাবি রে, আর টাকাপয়সার থেকেও বড় কথা, ভেবে দেখ, অ্যামাজনের ঘন অরণ্যের মধ্যে কোনো এক আদিম জনগোষ্ঠী তাদের কাছে আছে সেই আশ্চর্য গুপ্তধনের হদিশ, আর প্রতিটা পদক্ষেপে রোমাঞ্চের হাতছানি, মৃত্যু যেখানে স্বাভাবিক, জীবন রক্ষার চেষ্টা যেখানে বিলাসিতা মাত্র, সেখানেরই কোনো গভীর অতলে লুক্কায়িত আছে বিপুল ধনভাণ্ডার। যা প্রকৃতি সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে সভ্য পৃথিবীর কু দৃষ্টির থেকে। তা যদি আমরা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে আমাদের পরিচিতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। গুপ্তধনের ভাগের থেকেও এর মূল্য অনেক অনেক বেশি।
স্পষ্ট বুঝলাম আমার কথায় একটা উত্তেজনার স্রোত ওর সারা শরীরে বয়ে গিয়ে একটা শিহরণ জাগিয়ে তুললো।
- ঠিক বলেছিস ভাই, আমিও স্থির করে নিলাম, আমিও যাবো।
- আমরা যাবো। অ্যামাজন আমরা আসছি।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে...)
ব্যাস! এটুকুই, এরপর কয়েকটা ফাঁকা পাতা আর একটা অস্পষ্ট ম্যাপ।
পরদিন সকাল সাড়ে সাতটায় হাজির হলাম অঙ্কনের বাড়ি। কলিং বেল টিপতেই রামুকাকা দরজা খুলে দিয়ে বললো যে অঙ্কন দাদাবাবু এখনও ওঠেননি। সেটা আমার অবশ্য জানাই ছিলো তাই আমি রামুকাকাকে বললাম যে ওকে তুলে যেনো আমার সাথে দেখা করতে পাঠায়, খুব জরুরী প্রয়োজন। আমি বাড়ি আসার মিনিট পঁচিশের মধ্যেই অঙ্কন আমার বাড়িতে হাজির। ওকে আমার ঘরে ডেকে এনে দরজা বন্ধ করে দিলাম। সে আমার এহেন ব্যবহারে বেশ অবাক হয়ে বললো,
- তোর কি ব্যাপার বলতো, এরম তো কোনোদিনও আমায় ডেকে আনিস না তুই, আবার দরজা বন্ধ করে দিলি আমায় ঘরে এনে, কি হয়েছে?
আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রয়ার থেকে লাল কাপড়ে বাঁধানো ডায়েরিটা বের করে ওর হাতে দিলাম।
- তুই এটা দেবার জন্য এই ভোরবেলা আমায় ডাকা করালি। তোর কি মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে নাকি?
- ওরে গাধা, বই কোনো চিড়িয়াখানার জানোয়ার নয় যে কিনে খাঁচা বন্দী করে রাখবি। বই না খুললে তার আসল রূপটাই চোখে পড়েনা, তুই শেলফে তার যে রূপ দেখিস সেটা শুধু একটা ঝলক মাত্র। বইগুলো পড়ে দেখলে বুঝতে পারতিস এর মূল্য কতখানি।
- আরে ভনিতা না করে এবার বলতো কেস টা কী?
- গোল্ড মাইন!
- অ্যাঁ!
- হ্যাঁ! এই ডায়েরিটা কাল মাঝরাত পর্যন্ত পড়ে শেষ করেছি। এতে কি আছে জানিস??
- কী?
- গুপ্তধনের হদিশ!
কথাটা শুনেই চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো সে,
- কি বলিস? ভাগ , কোথায় গুপ্তধন কি গুপ্তধন?
- প্রথম প্রশ্নের উত্তর টা আছে তবে দ্বিতীয় উত্তরটা নেই। গুপ্তধন আছে, তবে এদেশে নয়।
- তবে?
- আমাজনের গভীর অরণ্যে!
কথাটা শুনে সারা শরীর কেঁপে ওঠে অঙ্কনের, সেটা আমার নজর এড়ায়নি।
- কিন্তু তুই এসব জানলি কীকরে আর তার সাথে এই ডায়েরির কি সম্পর্ক।
- এই ডায়েরিটা কাল যখন তোর বাড়িতে প্রথম দেখলাম তখনই মনে হয়েছিল যে এসব দামী দামী বইপত্রের মধ্যে এই ডায়েরিটা কি করছে, তাই এটা খুলে প্রথম পৃষ্ঠাটা পড়লাম ওখানে দাড়িয়েই। আর তারপর বুঝলাম যে এটা একটা অভিযানের কাহিনী আর সে অভিযান কোনো সাধারণ অভিযান না, সে অভিযান কোনো বিশেষ ফুল সংগ্রহের । তাই তোর বাড়ি থেকে বইটা নিয়ে এলাম। ভাবলাম কোনো রোমাঞ্চকর ভ্রমণ কাহিনী হয়তো। এনে প্রায় সারারাত পড়ে যেটা বুঝলাম তা সংক্ষেপে বলি শোন। ডায়েরীর ঘটনাবলী সংক্ষেপে বলতে শুরু করলাম।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথাগুলো শুনছিল অঙ্কন, এবার প্রশ্ন করলো,
- তার মানে শুধু গুপ্তধনের আভাস টুকুই রয়েছে ? সেটার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণই তো নেই?
- সেটা যদি থাকতো তাহলে কি আর তা গুপ্তধন হতো নাকি?
- কিন্তু তোর মতলব টা কী?
- সেখানে গিয়ে এই গুপ্তধনের সন্ধান বার করা।
- তোর মাথাটা পুরোই গেছে। সেই গুপ্তধন পেলেও সেটা তোর হবেনা ভাই কারণ সেটা সেই দেশের সম্পত্তি। হয়তো একটা অংশ পাওয়া যাবে তার থেকে কিন্তু এত পরিশ্রম কেনই বা করতে যাবি?
তার থেকেও বড়ো প্রাণের ঝুঁকি, ওখানে গিয়ে মরবার ইচ্ছে অন্তত আমার নেই।
- আরে গবেট, জীবনে বাপ ঠাকুর্দার টাকায় বসে কত খাবি রে, আর টাকাপয়সার থেকেও বড় কথা, ভেবে দেখ, অ্যামাজনের ঘন অরণ্যের মধ্যে কোনো এক আদিম জনগোষ্ঠী তাদের কাছে আছে সেই আশ্চর্য গুপ্তধনের হদিশ, আর প্রতিটা পদক্ষেপে রোমাঞ্চের হাতছানি, মৃত্যু যেখানে স্বাভাবিক, জীবন রক্ষার চেষ্টা যেখানে বিলাসিতা মাত্র, সেখানেরই কোনো গভীর অতলে লুক্কায়িত আছে বিপুল ধনভাণ্ডার। যা প্রকৃতি সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে সভ্য পৃথিবীর কু দৃষ্টির থেকে। তা যদি আমরা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে আমাদের পরিচিতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। গুপ্তধনের ভাগের থেকেও এর মূল্য অনেক অনেক বেশি।
স্পষ্ট বুঝলাম আমার কথায় একটা উত্তেজনার স্রোত ওর সারা শরীরে বয়ে গিয়ে একটা শিহরণ জাগিয়ে তুললো।
- ঠিক বলেছিস ভাই, আমিও স্থির করে নিলাম, আমিও যাবো।
- আমরা যাবো। অ্যামাজন আমরা আসছি।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে...)