• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

টেনিদা ( গল্প )

Boy Friend

Epic Legend
Chat Pro User
প্রয়াত বিখ্যাত কথা সাহিত্যক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র এক সময় কিশোর সাহিত্যে দুটি চরিত্র এঁকে
গেছেন পটলডাঙ্গার টেনিদা এবং ঘনাদা,। যে দুটো চরিত্র ততকালীন
কিশোর এমন কি সমগ্র পাঠক মনে
যে জায়গা করে নিয়েছিল তা কোনো দিন ভুলবার নয়। ওনাদের প্রয়াণের সাথে সেই কিশোর সাহিত্যের চরিত্র
দুটি হারিয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করেছি
সেই হারিয়ে যাওয়া চরিত্র দুটোকে আবার জীবিত করে আজকের পাঠকের সামনে নিয়ে আসতে। তাই আমি টেনিদা আর ঘনাদা কে নিয়ে দুটো করে গল্প আজকের আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছি। চেষ্টা করেছি
আমার অতি শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক দের
লেখার আঙ্গিক এবং পটভূমি সব একই রকম রাখতে। জানি না আপনাদের কেমন লাগবে। ধন্যবাদ

***** সত্যান্বেষী টেনিদা ****

আমি প্যালারাম, কলকাতার পটলডাঙায় বাস। ছোটো বেলা থেকেই পেটে পিলে নিয়ে বড়ো হয়েছি, আমার রোজকার পথ্যের মধ্যে পটল পাতার একটা বিরাট
ভুমিকা আছে। তাই রোজ সকালে বাজারে যাই পটল পাতা কিনতে। পেটের পিলেটাকে যদি একটু
কন্ট্রোল করা যায়। আমরা চার জন পটলডাঙার চার মুর্তি। আমি প্যালারাম, হাবুল,ক্যাবলা আর আমাদের গুরু টেনিদা। আমাদের চারমুর্তির একটা স্লোগান ছিল, টেনিদা বলতো...ডি লা গ্রান্ডি ম্যাফিস্টোফিলিস....আমরা বলতাম ইয়াক ইয়াক। অবশ্য এই স্লোগানটা আমাদের আনন্দের অভিব্যক্তি ছিল। আমার আজকের টেনিদার সম্বন্ধে
কিছু জানানোর আছে। আজকের টেনিদা ধুতি ছেড়ে ডেনিম হাটুর কাছে ছেড়া জিন্স আর সঙে ব্র‍্যান্ডেড
টি সার্ট পরে।ক্রিকেটার ধোনির মতো চুলের ছাট, হাতে লেটেস্ট টুইন ক্যামেরা মোবাইল ফোন।
আজকের রাজনীতি টেনিদার একদম পছন্দ নয়।.......
সারাদিনের আফিস থেকে ফিরে আমাদের আড্ডা
শুরু হয়। আজ কাল টেনিদা আমাদের সময় দিচ্ছে খুবই কম। শুনলাম সময় পেলেই ডিটেকটিভ গল্পের বই মুখে করে বসে থাকে। একটা বড় আতস কাচ কিনে সারা দিন কি যেন দেখে। কিছু জিগ্যেস করলে বলে দেখ মানুষের বুদ্ধিটাই হচ্ছে আসল অস্ত্র,যাকে বলে মগজাস্ত্র। বুদ্ধি দিয়েই সমস্ত সমস্যা, নানা রকম অপরাধ সব কিছুই সমাধান করা যায়। বুঝতে পারছি আমাদের টেনিদার এবার শখের ডিটেকটিভ হবার শখ হয়েছে।
কি বলবো সত্যি সত্যি আমাদের পটলডাংগার কয়েকটা দোকানের রাতে তালা ভেঙে চুরীর কেস সল্ভ করে পুলিশ মহলে মোটামুটি একটু নাম করে ফেলেছে।
লালবাজারে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে টেনিদার নাম বললে সবাই চিনতে পারছে। আমরাও কলার তুলে আজকাল ঘুরে বেড়াই, ডিটেকটিভ টেনিদার সহকারি আমরা।
যাই হোক যে সময়টার কথা বলছি মোটা মুটি বছর দুয়েক আগে একটি বিবাহিতা অল্প বয়েসি মেয়ে খুন হয়। সেটা নিয়ে সারা কলকাতায় তোলপার শুরু হয়ে
গিয়েছিল। আর সেই খুনের তদন্তে আই ও ছিলেন আমাদেরি পাড়ার পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসার
জয়ন্ত বসাক। উনি পটলডাংগার অনেক পুরনো বাসিন্দা। আমাদের খুবই পরিচিত। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে
বছর চারেক আগে, একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। উনি এখন লাল বাজারে পোস্টিং সি আই ডির বড় অফিসার পুলিশ আবাসনে না থেকে আমাদের পাশের পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে একাই থাকেন।
যে মেয়েটি খুন হয়েছে তার সম্বন্ধে বিস্তারিত আমরা সবাই জানতে পেরেছি টিভি চ্যানেল আর খবরের
কাগজ থেকে। মেয়েটির নাম ঝর্না দাস, স্বামী পূর্ণ দাস একটি ছোট কোম্পানীর সেলস ম্যান।মাঝে মাঝে
কলকাতার বাইরে যেতে হয়। ঝর্না তখন একাই থাকে। যাদবপুর থেকে একটু ভেতরে শহর তলির মতো
জায়গায় ওদের একতালা ছোট্ট বাড়ি। ঝর্নাদের পাড়ায় কান পাতলে ঝর্নার সম্বন্ধে কিছু ফিসফিসানি শোনা যায়। যখন যখন ঝর্নার স্বামী পূ্র্ণ কাজে কয়েক দিনের
জন্য কলকাতার বাইরে যায়, তখন একজন মাঝ বয়েসি পুরুষকে ঝর্নার বাড়িতে এসে থাকতে দেখা যায়। প্রশ্ন করাতে ঝর্না বলেছিলো ওর দূর সম্পর্কের মামা। যাই হোক পূর্ণ একদিন সকালে পাটনা থেকে কোম্পানির কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখে মেইন গেট খোলা,
শোবার ঘরের দরজা বাইরের থেকে ছিটকিনি দেয়া। ঘরে ঢুকেই দেখে ঝর্না বিছানার ওপরে চিত হয়ে শুয়ে
আছে, লোহার আলমারি হাট করে খোলা সমস্ত জিনিষ পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর ঝর্নার দেহে প্রান নেই। পূর্ণ কি করবে বুঝতে না পেরে পাড়ার লোকদের ডাকাডাকি করে লোকাল থানায় খবর দেয়।
সংগে সংগে পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে আর সিদ্ধান্তে আসে ঝর্নাকে কে বা কারা খুন করেছে।
এ সবই আমরা জানতে পেরেছি টিভি আর খবরের কাগজ থেকে। আল্টিমেটলি ঝর্না খুনের তদন্তের
ভার পড়েছিলো আমাদের পরিচিত ডিসিডিডি জয়ন্ত বাবুর ওপরে। জয়ন্ত বাবুর সার্ভিস রেকর্ড উনি যত কেস হাতে নিয়েছেন সব গুলো সুচারু ভাবে সল্ভ করে অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দিয়েছেন।
কিন্তু কেন জানি কোনো এক অজানা কারনে প্রচুর পরিশ্রম করেও ঝর্না মার্ডার কেসটার সমাধান করতে
পারেন নি। এই ব্যার্থতা ওনাকে কুরেকুরে খায়।
যাই হোক বেশ কিছুদিন হোলো জয়ন্ত বাবু পুলিশ সার্ভিস থেকে অবসর নিয়েছেন।
মাঝখানে অনেক গুলো দিন কেটে গেছে। আমাদের পাড়াতেই আমাদের খুব পরিচিত গগনদার মেয়ের বিয়ে।
আমরা চারমুর্তি নিমন্ত্রিত। যথা সময়ে সন্ধ্যাবেলা সেজে গুজে আমরা চারমুর্তি বিয়ে বাড়িতে হাজির।
দেখি অনেক আমনন্ত্রিতদের মাঝে আমাদের পরিচিত রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার জয়ন্ত বাবুও আছেন।
টেনিদাকে দেখে এক গাল হেসে বললেন চলুন টেনিবাবু অনেক দিন বাদে আপনার সাথে দেখা, একটু গল্প করা যাক। ফরাস পাতা ছিলো। আমরা সবাই বসে যে যার মতো গল্পে মসগুল হয়ে পরলাম।
এবার টেনিদার মুখে বাকিটা শুনুন। বিয়ে বাড়ির খাওয়ার তখনো অনেক দেরী। জয়ন্ত বাবু আমার সাথে
ওনার পুলিশি জীবনের অনেক অভিগ্যতার গল্প শোনাচ্ছেন, আমিও শুনতে শুনতে দু একটি প্রশ্ন করছি।
কিছুদিন জয়ন্ত বাবু যাদবপুর থানার এডিশনাল ওসি হিসেবে কাজ করেছেন। যাদবপুরের দাগী এন্টিসোশাল অপরাধিরা জয়ন্ত বাবুর নামে কেপে উঠত। হটাৎ জয়ন্ত বাবু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, জানেন টেনি বাবু সারা পুলিশি জীবনে কোনো দিন ব্যার্থতা আমাকে
ছুঁতে পারেনি, শুধু হেরে গেলাম ঝর্না মার্ডার কেসটাতে। কিছুতেই ওই কেসটা সল্ভ করতে পারলাম না। আমি ঝর্নার মার্ডারের ব্যাপারে ছোটছোট কয়েকটা প্রশ্ন
করছিলাম, উনি উত্তরও দিচ্ছিলেন।
বিয়ে বাড়ির খাবারের সময় হয়ে আসছে, আমি জয়ন্ত বাবুকে শেষ একটা প্রশ্ন করে বসলাম, আচ্ছা জয়ন্ত বাবু আপনি বললেন পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে ঝর্নার শরীরে কোনো জন্ম দাগ ছিল না,সত্যি কি তাই? জয়ন্ত বাবু সংগে সংগে বলে উঠলেন না না টেনি বাবু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ঠিক বলেনি। ঝর্নার বাদিকের
জংঘার কাছে কয়েক ইঞ্চি দূরে তল পেটে একটা জরুল ছিল। যে ডাক্তার পোস্টমর্টেম করেছিলো সে অতটা
খেয়াল করেনি। কথা কটা বলেই জয়ন্ত বাবু কেমন জানি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছিল। আমি ওনার চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা
গলায় শুধু বললাম, গল্পটা আমাকে না বললেই পারতেন জয়ন্ত বাবু। সংগে সংগে জয়ন্ত বাবু হাত ঘড়িটা দেখে বললেন আমার খুব একটা জরুরী কাজে যেতে হবে, বলে না খেয়েই ঝড়ের বেগে বিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলন।
বিয়ে বাড়ির খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা চারমুর্তি পাড়ার রকে এসে বসলাম। টেনিদা একটা সিগারেট
ধরিয়ে জম্পেশ একটা টান মেরে আস্তে আস্তে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, জানিস আমার মগজাস্ত্রের
কাছে হার মেনে জয়ন্ত বাবু কেমন পালিয়ে গেলো। আমরা টেনিদাকে চেপে ধরলাম, ঝর্না দাশকে কে
খুন করেছিলো? টেনিদা সিগারেটে আর একটা সুখটান দিয়ে বললো, বুঝতে পারলিনা? জয়ন্তবাবুই খুনি।
উনি ঝর্না দাশের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল। আর এই ঝর্না মার্ডার কেসটা জয়ন্ত
বাবুর হাতে ছিলো তাই কেসটার
কোনো সুরাহা হয়নি। আসলে জয়ন্ত বাবু যাদবপুর থানায় থাকাকালিন কোনো ভাবে মেয়েটির পরিবারের সাথে আলাপ হয়েছিলো, পরবর্তি কালে ঝর্নার সাথে শারীরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ভালই চলছিল,এবারে আমার অনুমান, ঘটনাটা ঝর্নার হাসব্যান্ড পূর্ণ জেনে যায়। এর পর থেকেই ঝর্নাকে দিয়ে জয়ন্ত বাবুকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করে। আড়াল থেকে ঝর্না আর
জয়ন্ত বাবুর কিছু বেড সিনের ফটো মোবাইলের ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে। আস্তে আস্তে জয়ন্ত
বাবু বুঝতে পারছিলো, উনি ভিশন রকম একটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পরে গেছেন। এর থেকে মুক্তি
পাওয়ার একটাই উপায় পৃথিবী থেকে ঝর্ণাকে চিরতরে বিদেয় করা। মানে খুন করা। অনেক চিন্তা ভাবনা
করে জয়ন্ত বাবু মনেমনে একটা প্লট সাজিয়ে ফেললেন। পূর্ণ ওর কোম্পানির কাজে সেবার দুদিনের
জন্য পাটনা চলে গেলে, জয়ন্ত বাবু ঝর্নার বাড়িতে রাত কাটাতে গেলেন। সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্লোরোফর্ম
জাতিয় কোনো সেন্সলেস করার ওষুধ। সুযোগ বুঝে ক্লোরোফর্ম এপ্লাই করে ঝর্নাকে বেহুস করে ফেলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। সকলকে ভুল পথে চালাবার জন্য ঘরের সব কিছু তছনছ করে রাখেন, এজ ইফ ডাকাতি করতে এসে এই খুনটা হয়েছে। পরে পুলিশি তদন্তে উনি অনেক কায়দা করে তদন্তের ভার নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন।
তার পর যা হবার তাই হয়েছিল। ঝর্না মার্ডার কেস আর জয়ন্ত বাবু সমাধান করতে পারেন নি। কেসটা ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল। আমি টেনিদাকে জিগ্যেস করলাম
ফাইনালি তুমি বুঝলে কি করে জয়ন্ত বাবুই খুনি?
টেনিদা আমাদের দিকে খানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, আমি আচমকা জয়ন্ত বাবুকে জিগ্যেস
করেছিলাম ঝর্নার শরীরে কোনো জন্ম দাগ আছে কিনা। উনি আমার উদ্যেশ্যটা না বুঝেই বলে দিলেন
ঝর্নার বাদিকের জংঘার কয়েক ইঞ্চি দূরে তলপেটে একটা জন্ম জড়ুল ছিলো। এবার তোরাই বল
একটি তরুণী মেয়ের তল পেটে কি দাগ আছে সেটা মেয়েটির স্বামী অথবা প্রেমিক ছাড়া কারুর পক্ষে
বলা সম্ভব নয়। আমি আমার মগজাস্ত্র এপ্লাই করে জয়ন্ত বাবুর জন্য ফাঁদটা পেতেছিলাম আর না
বুঝে জয়ন্ত বাবু সেই ফাঁদে পা দিয়ে দিলেন। তারপর আমি যখন বললাম জয়ন্ত বাবু গল্পটা আমাকে না বললেই পারতেন। সংগে সংগে উনি বুঝলেন
আমার কাছে ধরা পরে গেছেন।
তাই বিয়ে বাড়ির নেমতন্য না খেয়েই পালিয়ে গেলেন।
আমরা অবাক হয়ে টেনিদাকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আমরা টেনিদাকে দেখছি না গোয়েন্দা
কিরিটি রায় কে দেখছি।
এক নাগারে এত কথা বলে টেনিদা আর একটা সিগারেট ধরিয়ে আরামসে টানতে শুরু করলো।
হটাত হাবুল চেঁচিয়ে উঠলো...
ডি লা গ্র‍্যান্ডি মেফিস্টফিলিস...
আমি আর ক্যাবলা চিৎকার করে
বলে উঠলাম truth finder টেনিদা
ইয়াক ইয়াক ।
********সমাপ্ত********
 
প্রয়াত বিখ্যাত কথা সাহিত্যক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র এক সময় কিশোর সাহিত্যে দুটি চরিত্র এঁকে
গেছেন পটলডাঙ্গার টেনিদা এবং ঘনাদা,। যে দুটো চরিত্র ততকালীন
কিশোর এমন কি সমগ্র পাঠক মনে
যে জায়গা করে নিয়েছিল তা কোনো দিন ভুলবার নয়। ওনাদের প্রয়াণের সাথে সেই কিশোর সাহিত্যের চরিত্র
দুটি হারিয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করেছি
সেই হারিয়ে যাওয়া চরিত্র দুটোকে আবার জীবিত করে আজকের পাঠকের সামনে নিয়ে আসতে। তাই আমি টেনিদা আর ঘনাদা কে নিয়ে দুটো করে গল্প আজকের আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছি। চেষ্টা করেছি
আমার অতি শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক দের
লেখার আঙ্গিক এবং পটভূমি সব একই রকম রাখতে। জানি না আপনাদের কেমন লাগবে। ধন্যবাদ

***** সত্যান্বেষী টেনিদা ****

আমি প্যালারাম, কলকাতার পটলডাঙায় বাস। ছোটো বেলা থেকেই পেটে পিলে নিয়ে বড়ো হয়েছি, আমার রোজকার পথ্যের মধ্যে পটল পাতার একটা বিরাট
ভুমিকা আছে। তাই রোজ সকালে বাজারে যাই পটল পাতা কিনতে। পেটের পিলেটাকে যদি একটু
কন্ট্রোল করা যায়। আমরা চার জন পটলডাঙার চার মুর্তি। আমি প্যালারাম, হাবুল,ক্যাবলা আর আমাদের গুরু টেনিদা। আমাদের চারমুর্তির একটা স্লোগান ছিল, টেনিদা বলতো...ডি লা গ্রান্ডি ম্যাফিস্টোফিলিস....আমরা বলতাম ইয়াক ইয়াক। অবশ্য এই স্লোগানটা আমাদের আনন্দের অভিব্যক্তি ছিল। আমার আজকের টেনিদার সম্বন্ধে
কিছু জানানোর আছে। আজকের টেনিদা ধুতি ছেড়ে ডেনিম হাটুর কাছে ছেড়া জিন্স আর সঙে ব্র‍্যান্ডেড
টি সার্ট পরে।ক্রিকেটার ধোনির মতো চুলের ছাট, হাতে লেটেস্ট টুইন ক্যামেরা মোবাইল ফোন।
আজকের রাজনীতি টেনিদার একদম পছন্দ নয়।.......

সারাদিনের আফিস থেকে ফিরে আমাদের আড্ডা
শুরু হয়। আজ কাল টেনিদা আমাদের সময় দিচ্ছে খুবই কম। শুনলাম সময় পেলেই ডিটেকটিভ গল্পের বই মুখে করে বসে থাকে। একটা বড় আতস কাচ কিনে সারা দিন কি যেন দেখে। কিছু জিগ্যেস করলে বলে দেখ মানুষের বুদ্ধিটাই হচ্ছে আসল অস্ত্র,যাকে বলে মগজাস্ত্র। বুদ্ধি দিয়েই সমস্ত সমস্যা, নানা রকম অপরাধ সব কিছুই সমাধান করা যায়। বুঝতে পারছি আমাদের টেনিদার এবার শখের ডিটেকটিভ হবার শখ হয়েছে।
কি বলবো সত্যি সত্যি আমাদের পটলডাংগার কয়েকটা দোকানের রাতে তালা ভেঙে চুরীর কেস সল্ভ করে পুলিশ মহলে মোটামুটি একটু নাম করে ফেলেছে।
লালবাজারে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে টেনিদার নাম বললে সবাই চিনতে পারছে। আমরাও কলার তুলে আজকাল ঘুরে বেড়াই, ডিটেকটিভ টেনিদার সহকারি আমরা।
যাই হোক যে সময়টার কথা বলছি মোটা মুটি বছর দুয়েক আগে একটি বিবাহিতা অল্প বয়েসি মেয়ে খুন হয়। সেটা নিয়ে সারা কলকাতায় তোলপার শুরু হয়ে
গিয়েছিল। আর সেই খুনের তদন্তে আই ও ছিলেন আমাদেরি পাড়ার পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসার
জয়ন্ত বসাক। উনি পটলডাংগার অনেক পুরনো বাসিন্দা। আমাদের খুবই পরিচিত। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে
বছর চারেক আগে, একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। উনি এখন লাল বাজারে পোস্টিং সি আই ডির বড় অফিসার পুলিশ আবাসনে না থেকে আমাদের পাশের পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে একাই থাকেন।
যে মেয়েটি খুন হয়েছে তার সম্বন্ধে বিস্তারিত আমরা সবাই জানতে পেরেছি টিভি চ্যানেল আর খবরের
কাগজ থেকে। মেয়েটির নাম ঝর্না দাস, স্বামী পূর্ণ দাস একটি ছোট কোম্পানীর সেলস ম্যান।মাঝে মাঝে
কলকাতার বাইরে যেতে হয়। ঝর্না তখন একাই থাকে। যাদবপুর থেকে একটু ভেতরে শহর তলির মতো
জায়গায় ওদের একতালা ছোট্ট বাড়ি। ঝর্নাদের পাড়ায় কান পাতলে ঝর্নার সম্বন্ধে কিছু ফিসফিসানি শোনা যায়। যখন যখন ঝর্নার স্বামী পূ্র্ণ কাজে কয়েক দিনের
জন্য কলকাতার বাইরে যায়, তখন একজন মাঝ বয়েসি পুরুষকে ঝর্নার বাড়িতে এসে থাকতে দেখা যায়। প্রশ্ন করাতে ঝর্না বলেছিলো ওর দূর সম্পর্কের মামা। যাই হোক পূর্ণ একদিন সকালে পাটনা থেকে কোম্পানির কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখে মেইন গেট খোলা,
শোবার ঘরের দরজা বাইরের থেকে ছিটকিনি দেয়া। ঘরে ঢুকেই দেখে ঝর্না বিছানার ওপরে চিত হয়ে শুয়ে
আছে, লোহার আলমারি হাট করে খোলা সমস্ত জিনিষ পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর ঝর্নার দেহে প্রান নেই। পূর্ণ কি করবে বুঝতে না পেরে পাড়ার লোকদের ডাকাডাকি করে লোকাল থানায় খবর দেয়।
সংগে সংগে পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে আর সিদ্ধান্তে আসে ঝর্নাকে কে বা কারা খুন করেছে।
এ সবই আমরা জানতে পেরেছি টিভি আর খবরের কাগজ থেকে। আল্টিমেটলি ঝর্না খুনের তদন্তের
ভার পড়েছিলো আমাদের পরিচিত ডিসিডিডি জয়ন্ত বাবুর ওপরে। জয়ন্ত বাবুর সার্ভিস রেকর্ড উনি যত কেস হাতে নিয়েছেন সব গুলো সুচারু ভাবে সল্ভ করে অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দিয়েছেন।
কিন্তু কেন জানি কোনো এক অজানা কারনে প্রচুর পরিশ্রম করেও ঝর্না মার্ডার কেসটার সমাধান করতে
পারেন নি। এই ব্যার্থতা ওনাকে কুরেকুরে খায়।
যাই হোক বেশ কিছুদিন হোলো জয়ন্ত বাবু পুলিশ সার্ভিস থেকে অবসর নিয়েছেন।
মাঝখানে অনেক গুলো দিন কেটে গেছে। আমাদের পাড়াতেই আমাদের খুব পরিচিত গগনদার মেয়ের বিয়ে।
আমরা চারমুর্তি নিমন্ত্রিত। যথা সময়ে সন্ধ্যাবেলা সেজে গুজে আমরা চারমুর্তি বিয়ে বাড়িতে হাজির।
দেখি অনেক আমনন্ত্রিতদের মাঝে আমাদের পরিচিত রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার জয়ন্ত বাবুও আছেন।
টেনিদাকে দেখে এক গাল হেসে বললেন চলুন টেনিবাবু অনেক দিন বাদে আপনার সাথে দেখা, একটু গল্প করা যাক। ফরাস পাতা ছিলো। আমরা সবাই বসে যে যার মতো গল্পে মসগুল হয়ে পরলাম।
এবার টেনিদার মুখে বাকিটা শুনুন। বিয়ে বাড়ির খাওয়ার তখনো অনেক দেরী। জয়ন্ত বাবু আমার সাথে
ওনার পুলিশি জীবনের অনেক অভিগ্যতার গল্প শোনাচ্ছেন, আমিও শুনতে শুনতে দু একটি প্রশ্ন করছি।
কিছুদিন জয়ন্ত বাবু যাদবপুর থানার এডিশনাল ওসি হিসেবে কাজ করেছেন। যাদবপুরের দাগী এন্টিসোশাল অপরাধিরা জয়ন্ত বাবুর নামে কেপে উঠত। হটাৎ জয়ন্ত বাবু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, জানেন টেনি বাবু সারা পুলিশি জীবনে কোনো দিন ব্যার্থতা আমাকে
ছুঁতে পারেনি, শুধু হেরে গেলাম ঝর্না মার্ডার কেসটাতে। কিছুতেই ওই কেসটা সল্ভ করতে পারলাম না। আমি ঝর্নার মার্ডারের ব্যাপারে ছোটছোট কয়েকটা প্রশ্ন
করছিলাম, উনি উত্তরও দিচ্ছিলেন।
বিয়ে বাড়ির খাবারের সময় হয়ে আসছে, আমি জয়ন্ত বাবুকে শেষ একটা প্রশ্ন করে বসলাম, আচ্ছা জয়ন্ত বাবু আপনি বললেন পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে ঝর্নার শরীরে কোনো জন্ম দাগ ছিল না,সত্যি কি তাই? জয়ন্ত বাবু সংগে সংগে বলে উঠলেন না না টেনি বাবু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ঠিক বলেনি। ঝর্নার বাদিকের
জংঘার কাছে কয়েক ইঞ্চি দূরে তল পেটে একটা জরুল ছিল। যে ডাক্তার পোস্টমর্টেম করেছিলো সে অতটা
খেয়াল করেনি। কথা কটা বলেই জয়ন্ত বাবু কেমন জানি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছিল। আমি ওনার চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা
গলায় শুধু বললাম, গল্পটা আমাকে না বললেই পারতেন জয়ন্ত বাবু। সংগে সংগে জয়ন্ত বাবু হাত ঘড়িটা দেখে বললেন আমার খুব একটা জরুরী কাজে যেতে হবে, বলে না খেয়েই ঝড়ের বেগে বিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলন।
বিয়ে বাড়ির খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা চারমুর্তি পাড়ার রকে এসে বসলাম। টেনিদা একটা সিগারেট
ধরিয়ে জম্পেশ একটা টান মেরে আস্তে আস্তে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, জানিস আমার মগজাস্ত্রের
কাছে হার মেনে জয়ন্ত বাবু কেমন পালিয়ে গেলো। আমরা টেনিদাকে চেপে ধরলাম, ঝর্না দাশকে কে
খুন করেছিলো? টেনিদা সিগারেটে আর একটা সুখটান দিয়ে বললো, বুঝতে পারলিনা? জয়ন্তবাবুই খুনি।
উনি ঝর্না দাশের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল। আর এই ঝর্না মার্ডার কেসটা জয়ন্ত
বাবুর হাতে ছিলো তাই কেসটার
কোনো সুরাহা হয়নি। আসলে জয়ন্ত বাবু যাদবপুর থানায় থাকাকালিন কোনো ভাবে মেয়েটির পরিবারের সাথে আলাপ হয়েছিলো, পরবর্তি কালে ঝর্নার সাথে শারীরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ভালই চলছিল,এবারে আমার অনুমান, ঘটনাটা ঝর্নার হাসব্যান্ড পূর্ণ জেনে যায়। এর পর থেকেই ঝর্নাকে দিয়ে জয়ন্ত বাবুকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করে। আড়াল থেকে ঝর্না আর
জয়ন্ত বাবুর কিছু বেড সিনের ফটো মোবাইলের ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে। আস্তে আস্তে জয়ন্ত
বাবু বুঝতে পারছিলো, উনি ভিশন রকম একটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পরে গেছেন। এর থেকে মুক্তি
পাওয়ার একটাই উপায় পৃথিবী থেকে ঝর্ণাকে চিরতরে বিদেয় করা। মানে খুন করা। অনেক চিন্তা ভাবনা
করে জয়ন্ত বাবু মনেমনে একটা প্লট সাজিয়ে ফেললেন। পূর্ণ ওর কোম্পানির কাজে সেবার দুদিনের
জন্য পাটনা চলে গেলে, জয়ন্ত বাবু ঝর্নার বাড়িতে রাত কাটাতে গেলেন। সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্লোরোফর্ম
জাতিয় কোনো সেন্সলেস করার ওষুধ। সুযোগ বুঝে ক্লোরোফর্ম এপ্লাই করে ঝর্নাকে বেহুস করে ফেলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। সকলকে ভুল পথে চালাবার জন্য ঘরের সব কিছু তছনছ করে রাখেন, এজ ইফ ডাকাতি করতে এসে এই খুনটা হয়েছে। পরে পুলিশি তদন্তে উনি অনেক কায়দা করে তদন্তের ভার নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন।
তার পর যা হবার তাই হয়েছিল। ঝর্না মার্ডার কেস আর জয়ন্ত বাবু সমাধান করতে পারেন নি। কেসটা ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল। আমি টেনিদাকে জিগ্যেস করলাম
ফাইনালি তুমি বুঝলে কি করে জয়ন্ত বাবুই খুনি?
টেনিদা আমাদের দিকে খানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, আমি আচমকা জয়ন্ত বাবুকে জিগ্যেস
করেছিলাম ঝর্নার শরীরে কোনো জন্ম দাগ আছে কিনা। উনি আমার উদ্যেশ্যটা না বুঝেই বলে দিলেন
ঝর্নার বাদিকের জংঘার কয়েক ইঞ্চি দূরে তলপেটে একটা জন্ম জড়ুল ছিলো। এবার তোরাই বল
একটি তরুণী মেয়ের তল পেটে কি দাগ আছে সেটা মেয়েটির স্বামী অথবা প্রেমিক ছাড়া কারুর পক্ষে
বলা সম্ভব নয়। আমি আমার মগজাস্ত্র এপ্লাই করে জয়ন্ত বাবুর জন্য ফাঁদটা পেতেছিলাম আর না
বুঝে জয়ন্ত বাবু সেই ফাঁদে পা দিয়ে দিলেন। তারপর আমি যখন বললাম জয়ন্ত বাবু গল্পটা আমাকে না বললেই পারতেন। সংগে সংগে উনি বুঝলেন
আমার কাছে ধরা পরে গেছেন।
তাই বিয়ে বাড়ির নেমতন্য না খেয়েই পালিয়ে গেলেন।
আমরা অবাক হয়ে টেনিদাকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আমরা টেনিদাকে দেখছি না গোয়েন্দা
কিরিটি রায় কে দেখছি।
এক নাগারে এত কথা বলে টেনিদা আর একটা সিগারেট ধরিয়ে আরামসে টানতে শুরু করলো।
হটাত হাবুল চেঁচিয়ে উঠলো...
ডি লা গ্র‍্যান্ডি মেফিস্টফিলিস...
আমি আর ক্যাবলা চিৎকার করে
বলে উঠলাম truth finder টেনিদা
ইয়াক ইয়াক ।
********সমাপ্ত********
Thank you ..thank you.....khub valo laglo lekhata...ami vabchilam tomake bolbo...... thanks...... :clapping:
 
Thank you ..thank you.....khub valo laglo lekhata...ami vabchilam tomake bolbo...... thanks...... :clapping:জা
জানতাম না তুমি টেনিদা, ঘনাদা আগে পড়েছো কি না। যারা পড়ে নি তাদের কাছে আমার এই গল্পটা জাস্ট একটা ডিটেকটিভ গল্পের মত লাগবে।। থ্যাংকস।
 
জানতাম না তুমি টেনিদা, ঘনাদা আগে পড়েছো কি না। যারা পড়ে নি তাদের কাছে আমার এই গল্পটা জাস্ট একটা ডিটেকটিভ গল্পের মত লাগবে।। থ্যাংকস।
Amar pora ache...tai boltam tomake ei gulo part by part dite ....
 
Top