Bose Arun
Favoured Frenzy
আমার লেখা একটি ছোটো গল্প
****** উর্মি *****
অবসন্ন মনে ফেসবুকের পাতা উলটিয়ে যাচ্ছি। কিছুই ভালো লাগছে না। পাতার পর পাতা দূর্গা
মায়ের ছবি, বিসর্জনের ছবি আর কত রকমের মাকে বরণ করে সিঁদুর খেলার ছবি। আনমনে
ফেসবুকের পাতা দেখে যাচ্ছি। হটাত চোখ দুটো আটকে গেল একটা এক বছর আগের পুরনো
পোস্টে। একটা কবিতা, ঠিক এক বছর আগে পোস্ট করা,
" নষ্ট চাঁদ "। লেখিকা উর্মি।
" কিছুবা ভুল ছিল আমার, তোমারও
তো খানিক ভুল ছিল।
প্রতিক্ষণ তবু আমিই একা গুনে
যাই ভুলের মাসুল।
নামেনি কি এ জীবনে হাজারো দুর্যোগ!
যুক্তিহীন সহস্র অভিযোগ? "
চমকে উঠলাম, এ কার কথা শুনছি, কার অভিযোগ? অতিতের হারিয়ে যাওয়া একটা ছবি। সালঙ্কারা একটা মুখ, নাকে টানা দেয়া নাকছাবি,
কানে ঝোলা দুল, মাথায় টিকলি, আর সিঁদুরে মাখা মাখি গাল কপাল। হাতে বরণ ডালা। ওর পেছনে মৃণ্ময়ী মার মুর্তি। কে দূর্গা ভ্রম হয়ে গিয়েছিল
আমার সেদিন। মন চলে গেল অনেক অতিতে, আর একটা দূর্গা পূজা।
আমার গ্রুপ সোনার তরী, রোজ কত কবিতা কত গল্প, মাঝেমাঝে আমার মনে হয় সোনার তরী
যেন ফুলে ফুলে ভরা একটা ফুলের সাজি। আমিও মাঝে মাঝে আমার কবিতা পোস্ট করি।
হটাত একদিন একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট, এ্যাক্সেপ্ট করার আগে ওর প্রোফাইলটা খুলে দেখি, নাম উর্মি, বর্ধমানে থাকে, একটা গার্লস স্কুলের টিচার। হাসব্যান্ডের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
একটা ফুটফুটে ছেলে আছে। অবাক হয়ে এ্যাক্সেপ্ট করে নিলাম ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। ইন বক্সে একটা মেসেজ রেখে দিলাম, বুঝতে পারলাম না আপনি হটাত আমার বন্ধু হতে চাইলেন
কেন? আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। তবে আপনার বন্ধু হতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। রাতের দিকে দেখি ইন বক্সে উর্মি লিখেছে, আমি অন্য কয়েকটা গ্রুপে আপনার কবিতা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে, অনেক দিন ধরেই পড়ছি আপনার কবিতা, বলতে পারেন আমি আপনার কবিতার প্রেমে পরে গেছি। তাই আমার ভালো লাগা কবিতার শ্রষ্টার সাথে পরিচয়
করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
আমিও দুচার লাইন লিখি, তবে তা কারুর পাতে দেবার যোগ্য নয়। আমাকে আপনার সোনার তরীর যাত্রী করে নিলে আমার খুব ভালো লাগবে। সেই শুরু উর্মির সাথে আমার সম্পর্ক। রোজ রাতে ওর সাথে ইনবক্সে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা।
ধীরে ধীরে দু জনে দুজনার কাছে আগল বিহীন বন্ধু হয়ে গেলাম। তত দিনে আমরা আপনি থেকে
তুমি হয়ে গেছি। এক দিন উর্মি বললো ফেসবুকের ইনবক্সে আর নয় আমাকে তুমি হোয়াটস এপসে
ডাকবে। আর মাঝেমাঝে ফোনও করতে পারো। আমার মোবাইল নাম্বারটা সেভ করে নাও। আর একটা কথা তুমি আমাকে দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ফোন কোরো। ওই সময় আমার স্কুলে অফ পিরিয়ড থাকে। আর আমার এই নাম্বারটা একেবারেই আমার ব্যাক্তিগত,
এটার কথা কেউ জানে না। আর শোনো আমার প্রোফাইলে আমার এ্যালবামে আমার অনেক ছবি
আছে, দেখো সবাই কত কমেন্ট করেছে। তুমি করবে না? আমি অনেক যত্ন করে রেখে দেবো তোমার কমেন্ট করা ছবি গুলো। উর্মি মাঝে মাঝে কবিতা পোস্ট করে সোনার তরীতে।
মনে আছে ছোট্ট একটা কবিতা পোস্ট করেছিলো, আমিও কমেন্ট করেছিলাম।
ভুল লেগে আছে ****
-----------------
ভুল লেগে আছে চোখের পাতায়,
তার ওষ্ঠপাত্রে আর শার্টের হাতায়,
তিরতিরে ঘাম নাকের ডগায় -
ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারেনা,
আগের মতন আদর কাড়েনা-
থেকে থেকে শুধু ভুলের শিকড়
জড়িয়ে ধরে স্মৃতির আকর ;
লেখে আর মোছে জলেতে আখর।
বৃষ্টির পরে রামধনু যেমন রং ছড়ায় -
তীর বেঁধা এই মন ভুলের
দিকেই হাত বাড়ায়।*******
আমি কমেন্ট করেছিলাম,
" জীবনের পথ পরিক্রমায় শুধুমাত্র ঠিকই থাকবে, কখনো ভুল হবেনা, এই ভাবনাটাই বড় রকম ভুল।
অনেক ভুল ভুল করেও না শোধরানো বোধ হয় ঠিক। তাই মন অনেক সময় ভুলের দিকেই হাত বাড়ায়।.......... খুব সুন্দর জীবন আলেক্ষ্যের প্রকাশ। অনেক শুভেচ্ছা রইলো আবার ভুল না করার জন্য।"
এই ভাবে ফেসবুকের পাতায়, হোয়াট এ্যাপসের খাতায় আর মাঝেমাঝে ওর টিফিন টাইমে ফোন
করে দিন কেটে যাচ্ছিল।
এক দিন হটাত উর্মি বললো, তুমি আমাকে রাতেও ফোন করতে পার, তবে রাত এগারোটার পরেই
কোরো,তখন ছেলে ঘুমিয়ে পরে।
শুরু হোলো আমার আর উর্মির রাতের অভিসার প্রযুক্তির হাত ধরে। কোথায় সেই বর্ধমানের একটা টুরুম ফ্ল্যাটের বেড রুমের বিছানায় উর্মি আর আমি কলকাতায় আমার এক রুমের বিছানায় শুয়ে। কথা আর কথা শব্দের মাধ্যমে ভালোবাসা
বাসি,আদর আর আদর। ইংরেজি তে ভার্চুয়াল শব্দটি শুনেছিলাম, কিন্তু মানে বুঝলাম উর্মির সাথে রাতের কাল্পনিক অভিসারে।
কল্পনাতেও যে ভালোবাসার পরিতৃপ্তি হতে পারে আগে জানতাম না। মনে হতো আমরা দুজনে একই সাথে পাশা পাশি ভালোবাসার ঝরনা তলায় স্নান
করে যাচ্ছি। এই ভাবে কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে মিষ্টি মিষ্টি দিন কেটে যাচ্ছিল। কবিতা লিখতে বসলেই উর্মির সেই সিঁদুর খেলার ছবিটা চোখের সামনে দেখতে পেতাম। ওকে ভেবে একটা কবিতালিখে মনে আছে সোনার তরীতে
পোস্ট করেছিলাম।
যদি তোমার মনের গহন
কোণে একটু থাকতে পারি,
অনেক দিনের স্বপ্ন আমার
ভালোবাসার বাড়ি।
যদি তোমার চোখের কাজল
হয়ে একটু থাকতে দাও,
দেবো আমার মনের আকাশ
যদি তুমি চাও।
যদি তোমার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি
আমার মনে বাজায় বাশি,
দেবো তোমায় এক সমুদ্র ভালোবাসা
আর পূর্ণিমার জোছনারাশি।
যদি তোমার ভালোবাসা,
জাগায় অনেক স্মৃতি অনেক আশা, দেবো তোমায় তারায় ভরা রাতের ছোঁয়া
আর মিষ্টি প্রেমের নিরব ভাষা।
তুমি আমায় বাসবে ভালো
বসে আছি সেই আশায়,
তোমায় নিয়ে বকের পাখায়
হারিয়ে যাবো দূর নীলিমায়।
মনে আছে আমার কবিতাটা পড়ে উর্মি রাতে ফোনে আমাকেবলেছিল, শোনো আজ তুমি আর
আমি যে ভাবে আছি, কাল কি ভাবে থাকবো সেটা তুমিও জানো না আমিও জানি না। সবই অদৃশ্য লেখনিতে লেখা হয়ে আছে। যদি কখনো আমরা
দুজনে দুজনের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাই, ভেবনা আমি নেই তোমার কাছে, আমি তোমার কবিতা হয়ে থাকবো চির দিন তোমার কাছে। আজ বিজয়াদশমী, বসে আছি দোতলার বারান্দায়, রাস্তা দিয়ে একটার পর একটা ঠাকুর চলেছে বিসর্জনের জন্য। মৃন্ময়ী মার মুখ লালে লাল বরণ আর সিঁদুর খেলার জন্য। আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো উর্মির সিঁদুর খেলার সেই অপরূপ মুখটা। মনে পরে গেলো হটাত একদিন উর্মি আমাকে ফোন করে বলেছিল, শোনো কল্পনা আর
বাস্তব দুটো একেবারেই আলাদা জগত। আমি সন্তানের মা, একা এই পৃথিবীতে একটি সন্তান কে
মানুষ করা খুবই কঠিন। আমার ছেলের বাবা তার ভুল বুঝতে পেরে আবার আমার আর ছেলের
কাছে ফিরে আসতে চাইছে। আমি কি চাই সেটা আমার মনের মাঝেই থাক, শুধু ছেলে আবার
তার বাবাকে ফিরে পাবে সেটা ভেবে আমি মত দিয়েছি আবার এক সাথে থাকার ব্যাপারে। জানি
তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই তোমাকে মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই বলছি, কাল থেকে তুমি
আর আমাকে ফোন কোরো না বা আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রেখো না। আমি আমার শেষ দিন পর্যন্ত তোমাকে ভালোবাসবো। আমাকে তুমি খুঁজে পাবে তোমার কবিতার মধ্যে।
সেই আমার আর উর্মির শেষ কথা।
আজ বহুদিন হয়ে গেলো।
আজ বিজয়াদশমীতে মায়ের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে কেন জানি না উর্মির সেই সিঁদুর খেলার
ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
( গল্পটা পুরটাই কাল্পনিক,)
****** উর্মি *****
অবসন্ন মনে ফেসবুকের পাতা উলটিয়ে যাচ্ছি। কিছুই ভালো লাগছে না। পাতার পর পাতা দূর্গা
মায়ের ছবি, বিসর্জনের ছবি আর কত রকমের মাকে বরণ করে সিঁদুর খেলার ছবি। আনমনে
ফেসবুকের পাতা দেখে যাচ্ছি। হটাত চোখ দুটো আটকে গেল একটা এক বছর আগের পুরনো
পোস্টে। একটা কবিতা, ঠিক এক বছর আগে পোস্ট করা,
" নষ্ট চাঁদ "। লেখিকা উর্মি।
" কিছুবা ভুল ছিল আমার, তোমারও
তো খানিক ভুল ছিল।
প্রতিক্ষণ তবু আমিই একা গুনে
যাই ভুলের মাসুল।
নামেনি কি এ জীবনে হাজারো দুর্যোগ!
যুক্তিহীন সহস্র অভিযোগ? "
চমকে উঠলাম, এ কার কথা শুনছি, কার অভিযোগ? অতিতের হারিয়ে যাওয়া একটা ছবি। সালঙ্কারা একটা মুখ, নাকে টানা দেয়া নাকছাবি,
কানে ঝোলা দুল, মাথায় টিকলি, আর সিঁদুরে মাখা মাখি গাল কপাল। হাতে বরণ ডালা। ওর পেছনে মৃণ্ময়ী মার মুর্তি। কে দূর্গা ভ্রম হয়ে গিয়েছিল
আমার সেদিন। মন চলে গেল অনেক অতিতে, আর একটা দূর্গা পূজা।
আমার গ্রুপ সোনার তরী, রোজ কত কবিতা কত গল্প, মাঝেমাঝে আমার মনে হয় সোনার তরী
যেন ফুলে ফুলে ভরা একটা ফুলের সাজি। আমিও মাঝে মাঝে আমার কবিতা পোস্ট করি।
হটাত একদিন একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট, এ্যাক্সেপ্ট করার আগে ওর প্রোফাইলটা খুলে দেখি, নাম উর্মি, বর্ধমানে থাকে, একটা গার্লস স্কুলের টিচার। হাসব্যান্ডের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
একটা ফুটফুটে ছেলে আছে। অবাক হয়ে এ্যাক্সেপ্ট করে নিলাম ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। ইন বক্সে একটা মেসেজ রেখে দিলাম, বুঝতে পারলাম না আপনি হটাত আমার বন্ধু হতে চাইলেন
কেন? আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। তবে আপনার বন্ধু হতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। রাতের দিকে দেখি ইন বক্সে উর্মি লিখেছে, আমি অন্য কয়েকটা গ্রুপে আপনার কবিতা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে, অনেক দিন ধরেই পড়ছি আপনার কবিতা, বলতে পারেন আমি আপনার কবিতার প্রেমে পরে গেছি। তাই আমার ভালো লাগা কবিতার শ্রষ্টার সাথে পরিচয়
করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
আমিও দুচার লাইন লিখি, তবে তা কারুর পাতে দেবার যোগ্য নয়। আমাকে আপনার সোনার তরীর যাত্রী করে নিলে আমার খুব ভালো লাগবে। সেই শুরু উর্মির সাথে আমার সম্পর্ক। রোজ রাতে ওর সাথে ইনবক্সে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা।
ধীরে ধীরে দু জনে দুজনার কাছে আগল বিহীন বন্ধু হয়ে গেলাম। তত দিনে আমরা আপনি থেকে
তুমি হয়ে গেছি। এক দিন উর্মি বললো ফেসবুকের ইনবক্সে আর নয় আমাকে তুমি হোয়াটস এপসে
ডাকবে। আর মাঝেমাঝে ফোনও করতে পারো। আমার মোবাইল নাম্বারটা সেভ করে নাও। আর একটা কথা তুমি আমাকে দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ফোন কোরো। ওই সময় আমার স্কুলে অফ পিরিয়ড থাকে। আর আমার এই নাম্বারটা একেবারেই আমার ব্যাক্তিগত,
এটার কথা কেউ জানে না। আর শোনো আমার প্রোফাইলে আমার এ্যালবামে আমার অনেক ছবি
আছে, দেখো সবাই কত কমেন্ট করেছে। তুমি করবে না? আমি অনেক যত্ন করে রেখে দেবো তোমার কমেন্ট করা ছবি গুলো। উর্মি মাঝে মাঝে কবিতা পোস্ট করে সোনার তরীতে।
মনে আছে ছোট্ট একটা কবিতা পোস্ট করেছিলো, আমিও কমেন্ট করেছিলাম।
ভুল লেগে আছে ****
-----------------
ভুল লেগে আছে চোখের পাতায়,
তার ওষ্ঠপাত্রে আর শার্টের হাতায়,
তিরতিরে ঘাম নাকের ডগায় -
ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারেনা,
আগের মতন আদর কাড়েনা-
থেকে থেকে শুধু ভুলের শিকড়
জড়িয়ে ধরে স্মৃতির আকর ;
লেখে আর মোছে জলেতে আখর।
বৃষ্টির পরে রামধনু যেমন রং ছড়ায় -
তীর বেঁধা এই মন ভুলের
দিকেই হাত বাড়ায়।*******
আমি কমেন্ট করেছিলাম,
" জীবনের পথ পরিক্রমায় শুধুমাত্র ঠিকই থাকবে, কখনো ভুল হবেনা, এই ভাবনাটাই বড় রকম ভুল।
অনেক ভুল ভুল করেও না শোধরানো বোধ হয় ঠিক। তাই মন অনেক সময় ভুলের দিকেই হাত বাড়ায়।.......... খুব সুন্দর জীবন আলেক্ষ্যের প্রকাশ। অনেক শুভেচ্ছা রইলো আবার ভুল না করার জন্য।"
এই ভাবে ফেসবুকের পাতায়, হোয়াট এ্যাপসের খাতায় আর মাঝেমাঝে ওর টিফিন টাইমে ফোন
করে দিন কেটে যাচ্ছিল।
এক দিন হটাত উর্মি বললো, তুমি আমাকে রাতেও ফোন করতে পার, তবে রাত এগারোটার পরেই
কোরো,তখন ছেলে ঘুমিয়ে পরে।
শুরু হোলো আমার আর উর্মির রাতের অভিসার প্রযুক্তির হাত ধরে। কোথায় সেই বর্ধমানের একটা টুরুম ফ্ল্যাটের বেড রুমের বিছানায় উর্মি আর আমি কলকাতায় আমার এক রুমের বিছানায় শুয়ে। কথা আর কথা শব্দের মাধ্যমে ভালোবাসা
বাসি,আদর আর আদর। ইংরেজি তে ভার্চুয়াল শব্দটি শুনেছিলাম, কিন্তু মানে বুঝলাম উর্মির সাথে রাতের কাল্পনিক অভিসারে।
কল্পনাতেও যে ভালোবাসার পরিতৃপ্তি হতে পারে আগে জানতাম না। মনে হতো আমরা দুজনে একই সাথে পাশা পাশি ভালোবাসার ঝরনা তলায় স্নান
করে যাচ্ছি। এই ভাবে কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে মিষ্টি মিষ্টি দিন কেটে যাচ্ছিল। কবিতা লিখতে বসলেই উর্মির সেই সিঁদুর খেলার ছবিটা চোখের সামনে দেখতে পেতাম। ওকে ভেবে একটা কবিতালিখে মনে আছে সোনার তরীতে
পোস্ট করেছিলাম।
যদি তোমার মনের গহন
কোণে একটু থাকতে পারি,
অনেক দিনের স্বপ্ন আমার
ভালোবাসার বাড়ি।
যদি তোমার চোখের কাজল
হয়ে একটু থাকতে দাও,
দেবো আমার মনের আকাশ
যদি তুমি চাও।
যদি তোমার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি
আমার মনে বাজায় বাশি,
দেবো তোমায় এক সমুদ্র ভালোবাসা
আর পূর্ণিমার জোছনারাশি।
যদি তোমার ভালোবাসা,
জাগায় অনেক স্মৃতি অনেক আশা, দেবো তোমায় তারায় ভরা রাতের ছোঁয়া
আর মিষ্টি প্রেমের নিরব ভাষা।
তুমি আমায় বাসবে ভালো
বসে আছি সেই আশায়,
তোমায় নিয়ে বকের পাখায়
হারিয়ে যাবো দূর নীলিমায়।
মনে আছে আমার কবিতাটা পড়ে উর্মি রাতে ফোনে আমাকেবলেছিল, শোনো আজ তুমি আর
আমি যে ভাবে আছি, কাল কি ভাবে থাকবো সেটা তুমিও জানো না আমিও জানি না। সবই অদৃশ্য লেখনিতে লেখা হয়ে আছে। যদি কখনো আমরা
দুজনে দুজনের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাই, ভেবনা আমি নেই তোমার কাছে, আমি তোমার কবিতা হয়ে থাকবো চির দিন তোমার কাছে। আজ বিজয়াদশমী, বসে আছি দোতলার বারান্দায়, রাস্তা দিয়ে একটার পর একটা ঠাকুর চলেছে বিসর্জনের জন্য। মৃন্ময়ী মার মুখ লালে লাল বরণ আর সিঁদুর খেলার জন্য। আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো উর্মির সিঁদুর খেলার সেই অপরূপ মুখটা। মনে পরে গেলো হটাত একদিন উর্মি আমাকে ফোন করে বলেছিল, শোনো কল্পনা আর
বাস্তব দুটো একেবারেই আলাদা জগত। আমি সন্তানের মা, একা এই পৃথিবীতে একটি সন্তান কে
মানুষ করা খুবই কঠিন। আমার ছেলের বাবা তার ভুল বুঝতে পেরে আবার আমার আর ছেলের
কাছে ফিরে আসতে চাইছে। আমি কি চাই সেটা আমার মনের মাঝেই থাক, শুধু ছেলে আবার
তার বাবাকে ফিরে পাবে সেটা ভেবে আমি মত দিয়েছি আবার এক সাথে থাকার ব্যাপারে। জানি
তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই তোমাকে মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই বলছি, কাল থেকে তুমি
আর আমাকে ফোন কোরো না বা আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রেখো না। আমি আমার শেষ দিন পর্যন্ত তোমাকে ভালোবাসবো। আমাকে তুমি খুঁজে পাবে তোমার কবিতার মধ্যে।
সেই আমার আর উর্মির শেষ কথা।
আজ বহুদিন হয়ে গেলো।
আজ বিজয়াদশমীতে মায়ের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে কেন জানি না উর্মির সেই সিঁদুর খেলার
ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
( গল্পটা পুরটাই কাল্পনিক,)