• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

ছোটো গল্প...অনন্যা

Bose Arun

Favoured Frenzy
*** ** অনন্যা ****
@@ , @@
মোবাইলে একটা টুং করে শব্দ হতেই বুঝলাম কোনো একটা নোটিফিকেশন। মোবাইলটা অন করে দেখি ফেস বুকে একটি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। অনন্যা চৌধুরী বলে একটি মেয়ে। আমি সব সময় আগে প্রোফাইল চেক করি তার পর বুঝে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করি। দেখি কোনো ছবি নেই শুধু একটি মেয়ের মুখের পেন্সিল স্কেচ। প্রোফাইল পিক একটা সিমিলার পেন্সিল স্কেচ একটা বাজপাখি । খুব অবাকই হয়ে গেলাম। নাম অনন্যা বয়েস ১৯ প্রোফাইল অনুযায়ী। যাই হোক এক্সেপ্ট করে নিয়ে ইনবক্সে জিগ্যেস করলাম, হটাত আমার বন্ধু হতে চাইলে? অবশ্য ভালোই লাগছে তোমার মত একটি সুন্দরী মেয়ে আমার বন্ধু হতে চাইছো। কিন্তু এটা কি হলো,? একটি মেয়ের প্রোফাইল পিক একটা বাজপাখি ? আর সারা প্রোফাইলে তোমার কোনো পরিচয়ই নেই তুমি কে কোথায় থাকো। দেখে বুঝলাম অনলাইন নেই, তাই তখনকার মত অন্য কাজে মন দিলাম। বিকেলের দিকে দেখলাম মেসেঞ্জারে লিখেছে, ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দেখে আশ্চর্য হওয়ারতো কিছু নেই, আজ সকলের আমন্ত্রণ গ্রুপটাতে অনেক দিন ধরেই তোমার লেখা প্রেমের গল্প গুলো পড়ছি, সত্যি খুবই রোমান্টিক লেখা তোমার, পড়তে পড়তে কল্পনায় নিজেকে তোমার গল্পের নায়িকা বলে ভাবতে বেশ ভালোই লাগছিলো।তাই ভাবলাম কে এই রোমান্টিক মানুষটি যে গল্প দিয়ে মেয়েদের মন ছিনিয়ে নিতে পারে, তার সাথে বন্ধুত্ব করেই দেখা যাক সত্যিই রোমান্টিক মনের মানুষ নাকি জাগলার, শুধু কথার জাদুতেই মেয়েদের মনে জায়গা করে নেয়। আর প্রোফাইল পিকচার বাজপাখির কথা লিখেছো? ওটা ইচ্ছে করেই দিয়ে রেখেছি যাতে ছেলেরা আমাকে বিরক্ত না করে। যাই হোক আমাকে বন্ধু বানিয়েছো তাতে খুব ভালো লাগছে আর ওসব ধন্যবাদ টন্যবাদ দিতে আমার ভালো লাগে না।
বাপরে একদমে কথা গুলো বলে যতি চিহ্ণ। বুঝলাম খুবই আধুনিকা মেয়ে, নিজের রূপ সম্বন্ধে খুবই কন্সাস।তাই আড়ালে থাকতে চায়। দেখি অন লাইন আছে। জিগ্যেস করতে সঙ্গে সঙ্গে বললো দেখো আমি মিথ্যে কথা বলতে পছন্দ করি না। আমি রাজারহাটে থাকি আমাদের নিজেদের বাড়ি। বাবা নেই, মা আর আমি আর আমার জেঠু বিয়ে করে নি আমাদের সাথেই থাকে। আমাদের গার্জিয়ান। তোমার প্রোফাইলেও দেখলাম তোমাকে জানার মত কিছুই রাখনি। একটা মাত্র ছবি, হি হি হি তাও সানগ্লাসে আর হাত দিয়ে মুখ ঢাকা ঠিক যেন হিন্দি সিনেমার ভিলেইন।
আর একটা কথা মাথায় রাখবে যখনি আমি এখানে ডাকবো তোমাকে যেন দেখতে পাই , না হলে মাথা ফাটিয়ে দেবো। ওর কথা গুলো পড়তে পড়তে আমিতো ভয়ই পেয়ে গেলাম। একি রে বাবা এ যে দেখছি ডাকাত মেয়ে। এই জন্যই প্রথম থেকে আপনি টাপনির ধার না ধেরে প্রথমেই তুমি। আমি ভয় পেয়ে জিগ্যেস করে বোসলাম বেসতো তা তুমি আমার কাছ থেকে কি রকম ব্যাবহার চাও, ওরে বাবা সঙ্গে সঙ্গে বলে, আমি যে রকম বলবো সেই ভাবে চলবে, বুঝলে? না হলে....পোড়েতো আমি নিজের মাথায় হাত বুলাই আর ভাবি এই মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব গাঢ় হলে আমার এই মটকাটা আস্ত থাকবে তো? যাই হোক তখনকার মত রেহাই। সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরেছি কি ফিরি নি দেখি মেসেঞ্জারে সবুজ আলো জ্বলছে, ভগবানের নাম নিয়ে জিগ্যেস করলাম, কি খবর, কি করছো, বলতে না বলতেই এক ঝামটা, এই আসা হলো আমি কখন থেকে বসে আছি। আমি ভয়ে ভয়ে জিগ্যেস করলাম, বলো কি বলবে,।
বললো এই শোনো তুমিতো গল্প কবিতা লেখো, আমাকে দুটো রোমান্টিক লাইন বলতো। ওহো এ যে দেখছি মিষ্টি মিষ্টি গলার আওয়াজ। কি করবে জিগ্যেস করতে যা বললো, ওর একটা খুব পপুলার ফেসবুকে গ্রুপ আছে "ইচ্ছে মনের খোলা আকাশ"। পপুলার এই জন্য রোজ গোটা আটেক ইভেন্ট থাকে। নানা রকম নানা বিষয়ে।তার মধ্যে একটা " ছন্দে ছন্দে "। দু লাইন কবিতা দেয়া থাকবে, ছন্দ মিল রেখে আর দু লাইন লিখতে হবে। ওখানে খুব পপুলার এই ইভেন্ট টা।
আমি বললাম ঠিক আছে আমি এখুনি নতুন দুলাইন লিখে দিচ্ছি বলে লিখলাম "
বৃষ্টি ভেজা দুটি চোখে
তাকাও তুমি আকাশ পানে। ",............
একটু পরেই মেসেজে ভেসে উঠল , উউ কি দারুন লিখলে, এই দুটো লাইনের মধ্যে যে কি অসম্ভব রোমান্টিকতা, আমি ভাবতেও পারছি
না। না আমি ভুল করিনি তোমাকে বাছতে। আমি এই দুলাইন তো পোস্ট করবো কিন্তু খুব ইচ্ছে করছে যদি তোমাকে পরের দু লাইন লিখতে বলি কি লিখবে,? না না আমাকে শুধু বলো প্লিজ।
আমিও ওর এই আবেগ কে ফেলতে পারলাম না, কিছুক্ষণ ভেবে লিখলাম,,....
বৃষ্টি ভেঁজা দুটি চোখে
তাকাও তুমি আকাশ পানে,
হৃদয় আমার উথালপাথাল
পান্না সবুজ মনের বনে।
তুমি নেই তাই ফুল ফোঁটে না
তুমি নেই তাই চাঁদ ওঠে না
তুমি নেই তাই ঘুম আসে না
ছুটে চলি সুরের টানে। ,...........
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, কি দারুন লিখলে আমার মনটা এখুনি ছুটে যেতে চাইছে তোমার কাছে।
এই ভাবে দিন কাটে, ওর গ্রুপে আমি আজকাল কবিতা লিখি, গল্প লিখি আর আমার ওপর পার্মানেন্ট অর্ডার রোজ রাতে দু লাইন করে ছন্দ যোগান দেয়া। আজ কাল আমি দেখেছি সব স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা কেমন নিঃসংকোচে তুই তুই করে কথা বলে। আমার খুব ভালো লাগে শুনতে, মনে হয় তুই শব্দটা যেন কত খোলা হাওয়ার মত। আমার গায়েও সেই খোলা হাওয়ার ঝাপটা লেগেছে। আমিও আজকাল আমার ফেসবুকের বান্ধবীদের তুই করেই বলি। তাই এর মধ্যে একদিন অনন্যাকে বললাম, দেখো আমি না বেশিদিন মেয়েদের তুমি করে বলতে পারি না,কেমন যেন সেই আদ্যিকালের উত্তম সুচিত্রার সাদা কালো সিনেমার প্রেম প্রেম মনে হয়।
অসহ্য লাগে, আমি এখন থেকে তোমাকে তুই বলবো। আর সত্যিতো আমি তোর থেকে বেশ বড়, তুই করে বলতেই পারি।
আমার কথা শুনে সে কি হাসি বলে হি হি হি বুঝতে পারছি তুমি দাদু হতে চাও, তুমি খুব চালাক না তুমি খুব ভালো করেই জানো দাদু আর নাতনির কি সম্পর্ক, বুঝতে পারছি আমাকে নাতনি বানিয়ে আদর করবে। ঠিক আছে তাই সই। আমারি লাভ তোমার আদর খেতে পারবো।
ওরে কি বিচ্ছু মেয়েরে, আমি কি বলতে চাইলাম আর আমাকেই কেমন কথার জালে ফেলে দিলো।
এই ভাবে দিন কেটে যায়, অনন্যা আজ কাল আমার কাছে খুব সহজ হয়ে গেছে, আর ওর মুখে বুড়ো দাদু ডাক শুনতে আমার মজাই লাগে।
মায়ের একমাত্র মেয়ে তাই রাতে মা মেয়ে এক সাথেই ঘুমোয়।
সারা দিন ব্যাস্ত থাকে ওর গ্রুপটাকে নিয়ে। অনেক খেটে গ্রুপ টাকে একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে এসেছে।
হটাত এক দিন রাত এগারোটা বেজে গেছে, নাতনি অন লাইন। আমিতো অবাক, জিগ্যেস করতেই বলে আজ আমি তোমার মুখ দেখবো।বলেই মেসেঞ্জারের ভিডিও কল। আমি আজ পর্যন্ত ফেসবুকের কল্পনার জগতে নিজেকে ওপেন করিনি, আমার কাছে কল্পনার জগত আর বাস্তব জগত একেবারেই আলাদা। তাই আমি এই সোশাল মিডিয়ার কল্পনার জগতে নিজেকে মেঘের আড়ালে মেঘনাথের মতই রেখেছি।
আমি ওকে জিগ্যেস করলাম তুমি মায়ের পাশে শুয়ে ফেসবুক করছো,?
উত্তরে যা বললো শুনেত আমি তাজ্জব। বলে এই গরমে ও মায়ের পাশে শুয়ে মাথা পর্যন্ত চাদর মুড়ি দিয়ে চাদরের মধ্যে মোবাইল নিয়ে আমার সাথে কথা বলছে। পাগলী আর কাকে বলে। অনেক কষ্টে মিষ্টি মিষ্টি করে বুঝিয়ে পাগলী টাকে ঘুম পারাই।
এই ভাবে ওর সাথে ইয়ার্কি ঠাট্টা আর খুনশুটি করে দিন কেটে যাচ্ছে।
দু জনে দুজনকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমি জানি আমাদের এই ভালোবাসা দুটো সমান্তরাল রেখার মত যা কোনো দিন বাস্তবে মেলার নয়, গনিত শাস্ত্রে একটা কথা আছে ইনফিনিটি, যেটা একটা কাল্পনিক জায়গা সেই খানে কল্পনায় মিলতে পারে আমাদের ভালোবাসা কিন্তু বাস্তবে নয়। আমি জানি হটাত একদিন রাতে ছন্দ মিল ইভেন্ট এর জন্য কেউ আর আমার কাছে দুলাইন কবিতা চাইবে না। কারন কোনো এক স্বর্নালী সন্ধ্যায় সানাই এর সুরে ফুলের সাজে একজন মনের মানুষের হাত ধরে চলে যাবে আমার ভালোবাসা । মায়ের আঁচলে কনকাঞ্জলি দিয়ে বিদায় নেয়ার মত আমার হাতেও অনেক স্মৃতির কনকাঞ্জলি দিয়ে বিদায় নেবে আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসা।
হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতির সাগরে ডুবে যাবো আমি।
আবার হয়ত অনেক দিন বাদে হটাত আমার মোবাইলটা বেজে উঠবে টুং করে। খুলে দেখবো আমার খোলা মনের আকাশে একটা ছোট্ট রঙিন পাখি পাখা মেলে উড়ে আসছে আমার কাছে আর বলছে, " তুমি আমার বন্ধু হবে,? "

 
Top