******* মধুকর ****
@@@@
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে, এসে গেল আবার একটা পূজা । নীলের মনটা খুব খারাপ হয়ে রয়েছে, মনে পড়ে যাচ্ছে তনুর সেই
কথাগুলো, আমিইতো তোমার পথের পাঁচালীর দূর্গা, তুমি আমাকে একটা পাছা পেড়ে ডুড়ে শাড়িই কিনে দিও। এখনো মনে পরে অনেক পছন্দ করে
সিটি সেন্টার থেকে একটা ঢাকাই জড়ির পাড়ের ডুরে শাড়ি কিনেছিল নীল আর পরিচিত এক জুয়েলার কে অর্ডার দিয়ে শিউলি ফুলের আদলে
একটা নাকছাবি বানিয়ে নিয়েছিল, আজ ভাবতে অবাক লাগে নীলের, কল্পনার জগতের ভালবাসা তনুর জন্য বাস্তবে পূজোর উপহার কেন যে কিনেছিল নিজেই জানে না। খুব যত্ন করে আলমারিতে জিনিষ গুলো রেখে দিয়েছে নীল, যদি কোনো দিন কল্পনার তনু বাস্তবে ফিরে আসে
ওর জীবনে। এখনো ভাবতে গিয়ে মনটা মোচড় দিয়ে ওঠে যখন হটাৎ এক দিন নীল দেখলো তনুর ফেসবুক প্রোফাইলটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনো
সাড়া শব্দ নেই, দিনের পর দিন কেটে যায়, নীলের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, মনে হয় ওর মনের জল ছবিটাই যেন হারিয়ে গেছে ফেস বুকের সাগরের
বুকে, কল্পনায় তনুর মুখটা ভাবতে চেষ্টা করে নীল, একটা হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা কান্না হয়ে দলা পাকিয়ে আছে বুকের মাঝে। বুঝল হারিয়ে গেছে তনু নীলের জীবন থেকে,আর কল্পনার জগ থেকে। তনুর সাথে সাথে আজ নীলের মনে হয় ওর জীবন থেকে কবিতাও যেন হারিয়ে গেছে, মনের মাঝে তোলপার করে খোঁজে নীল কিন্তু খুঁজে পায় না***
হারিয়ে গেছে কবিতা
জীবনের পাতা থেকে,
অতিতের স্মৃতি গুলো
আসে একে বেঁকে।
স্বপ্ন দেখা চোখ দুটি
ভরে ওঠে জলে,
এখনো যে তোমার মন
আমার মনে কথা বলে।
লিখি না কবিতা আর
খাতা পরে আছে,
ফোঁটে না কৃষ্ণচূড়া
বসন্তে গাছে গাছে।
হারিয়ে গেছো তুমি
আমার জীবন থেকে
শুধু স্মৃতি গুলো
ফিরে আসে একে বেঁকে।
এই কয়েক দিন আগে নীল ওর এক বন্ধু দাদার বিয়েতে দখিন চব্বিশ পরগনার বোড়াল বোলে একটা গ্রামে গিয়েছিল, গড়িয়া থেকে ৩০ মাইল ভেতরে। এক দিন ছিল,পরের দিন বন্ধুকে নিয়ে কাছেই পথের পাঁচালী খ্যাত নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। অনেক আধুনিক হয়ে গেছে গ্রামটা, বড় বড় বিল্ডিং দোকান পাট।
দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল নীলের। রেল লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে নীল যেন দেখতে পাচ্ছে, উচু করে একটা পাছা পেড়ে শাড়ি পড়ে নাকে নোলক,তনু ছুটে যাচ্ছে অপুর হাত ধরে কাশ ফুলের বনের ঢেউ জাগানো মাঠের মধ্য দিয়ে। আর যেন শুনতে পাচ্ছে তনু ওর গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলছে, আমিই তো তোমার পথের পাঁচালীর দূর্গা, আমাকে পূজোতে পাছা পেড়ে ডুড়েশড়িই কিনে দিও। সে দিন তনুর কথা মনে পড়তেই নীলের চোখ দুটো জলে ভিজে গিয়েছিল। সামনে পূজোর জন্য শপিং মল গুলো সব ভীড়ে ভীড়ে জমজমাট। আনমনে নীল ঘুরছিল এক্সিস মলে, দেখতে দেখতে থমকে দাঁড়ায় একটা বিখ্যাত ব্র্যান্ডেড শাড়ির শোরুমের শোকেসের সামনে। সুন্দর করে ডিসপ্লে করা আছে একটা খুব দামী স্ট্রাইপড শাড়ি, তনুর মনের ডুড়েশাড়ি। মনে পড়ে যাচ্ছে তনু হটাৎ নীলকে বলেছিল আচ্ছা মধুকর কখনো যদি
তোমাকে দেখতে পাই কি করে চিনবো তোমাকে? অনেক ভেবে নীল বলেছিল, তোমার মনে আছে তনু ফেসবুকের সেই বাগানে ঘুরতে ঘুরতে তুমি আমাকে কৃঁষ্ণচূড়া ফুল পেড়ে দিতে বলেছিলে?
আমি ফুল পাড়তে গিয়ে একটা ডাল ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে ডান দিকের কপালটা কেটে গিয়েছিল, উউউ তাই দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না তোমার। সেই আমার কপালের ডান দিকের কাটা
দাগটা চিরকালের জন্য রয়ে গেছে, যখনি আয়নায় দেখি তোমার কথা মনে পরে যায়।ওই দাগটাতেই আমাকে চিনতে পারবে। মলের ফুডকোর্টে বসে
নীল একটা কফির অর্ডার দেয়।আর তাকিয়ে দেখে এক্সিস মল যেন উপছে পড়ছে রঙিন রঙিন ছেলে
মেয়েদের ভীড়ে। কি জানি এর ভেতরে হয়ত তনুও থাকতে পারে। পাশের টেবিলে এক ঝাক অল্প বয়েসি মেয়ে উচ্ছল হয়ে গল্প করছে, প্রত্যেকের
হাতে পূজা শপিং ব্যাগ। তার মধ্যে একটি মেয়ে কোনো কথা বলছে না নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।কফিতে একটা সিপ দিয়ে নীল ভাল
করে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি কে। রামধনু রাঙ্গা পিঠ পর্যন্ত চুল, গভীর সাগরের মত চোখের দৃষ্টি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ নীলের মনে পড়লো, এক দিন নীলকে তনু চেপে ধরেছিল, বলো আজকে বলতেই হবে কল্পনায় আমার তুমি কেমন ছবি এঁকেছ। নীল বেচারি কি করে বলে দাঁড়াও ভেবে দেখি তুমি কত রূপবতী।বলে লিখেছি......
তোমায় দেখে বকুল বনে বন্যা এলো,
তোমার চুলে ধনু রং হারিয়ে গেল
তোমার ঠোঁটে মহুল বনের রস জমেছে,
তাই দেখে আজ
মৌমাছিদের মন মজেছে ।
তোমার হাসি
সবুজ বনের স্নিগ্ধ মায়া ,
তোমার চোখে
সাগর জলে হারিয়ে যাওয়া ।
তোমার ছোঁয়ায়
হাসহানার সুবাস মাখা ,
তোমার মনে
প্রজাপতির রঙ্গীন পাখা।
তুমি ছাড়া
এই পৃথিবী অন্ধকারে ,
সূর্য লুকায়
অস্তাচলের বন্ধ দ্বারে ।*******
আজ এক্সিস মলের ফুড কোর্টের একটা কোণের টেবিলে বসে কফি খেতে খেতে মেয়েটি কে দেখে কেন মনে পড়ে যাচ্ছে তনুর কথা বুঝতে পারছে না নীল। খানিক্ষণ বাদে মেয়ে গুলো হইহই করতে করতে বেড়িয়ে যাচ্ছে ফুড কোর্ট থেকে। নীলের যেন মনে হচ্ছে এক ঝাক প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে ফুলের বাগান থেকে। কত কি কিনবে ভেবে নীল গিয়েছিল এক্সিস মলে। আজ এমন ভাবে তনু ওর
মনটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, কিচ্ছু কিনতে
আর ভাল লাগছে না। কেন জানি বারবার ফুড কোর্টে দেখা মেয়েটির মুখটা মনে পড়ে যাচ্ছে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি চলে এলো নীল।
ডিনার করে অভ্যাসবশত ফেস বুকটা
ওপেন করতেই চমকে ওঠে নীল। একি দেখছে, তনুর নামের পাশে গ্রিন লাইট। কত কত দিন
বাদে মনে হচ্ছে তনু এসে দাঁড়িয়েছে নীলের
সামনে। এক রাশ অভিমান দলা পাকিয়ে
উঠছে নীলের মনের মধ্যে। কোনো কথাই
বলছে না নীল। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে টুংটুং
করে বাজনা বেজেই চলেছে আর একটা
একটা করে কথা ফুটে উঠছে। কি গো
মধুকর আমার ওপর খুব রেগে গেছো? এত অভিমান? তোমাকে বলতে বাধা নেই
আমি যে এই একটা বছর নিজের মনটাকে
সীতার মতো অগ্নি পরীক্ষায় বসিয়েছিলাম,
দেখতে ফেসবুকের কল্পনার জগতের নীল কে আমি সত্যি ভালবাসি কিনা। এতক্ষণ
বাদে নীল একটাই প্রশ্ন করলো। কি দেখলে? খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে তনু লিখলো
তুমি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্বই নেই। জানো আমার মনে হচ্ছে আমি আজ তোমাকে
দেখেছি এক্সিস মলে, ফুড কোর্টের ওই উজ্বল আলোতে আমি কিন্তু তোমার ডান কপালের
কাটা দাগটা ঠিক দেখতে পেয়েছি, মনে হচ্ছে
আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি গো মধুকর, কি সুন্দর তুমি ঠিক যেন আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার। তুমি যদি সত্যি তুমি হও, এক্সিস মলের ফুড কোর্টের আজ তুমি যেখানে বসেছিলে কাল ঠিক সন্ধ্যা সাতটার সময় ওখানে থেকো। দেখো আমি তোমাকে ঠিক চিনে নেবো। আমার ভালবাসাকে চিনতে আমার একটুও ভুল হবে না, সঙ্গে করে আমার পূজোর ডুরে শাড়িটাও এনো কিন্তু, ভুলো না। তার পরেই সবুজ আলোটা
নিভে গেলো। কাল সন্ধ্যায় নীল খুঁজে পাবে
বাস্তবে ওর কল্পনার তনুকে উত্তেজনায় শিরশির করছে নীলের ভেতরটা, তনুর কথা ভাবতে
ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নীল বুঝতেই পারে নি।
ফেসবুকটা লগ আউট করে খানিক্ষণ চুপ করে বসে রইলো তনু, গত একটা বছরে নিজের মনে অনেক কাটা ছেড়া করেছে, ক্ষতবিক্ষত হয়েছে রক্তাক্ত হয়েছে ওর মন, নীলের কাছ
থেকে দূরে থাকতে। তাও এক বারের জন্যও তনু ফেসবুক খোলে নি। তিনশ পঁয়ষট্টি দিন তনু
এক মুহুর্তের জন্যও নীলকে মন থেকে
সরাতে পারেনি। ও বুঝতে পেরেছে নীলই
ওর জীবন ওর বেচে থাকার অস্তিত্ব।
সকাল থেকে নীলের আজ কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না, মনের ভেতরটা ছটফট করছে
কখন সন্ধ্যা হবে কখন নীল দেখতে পাবে ওর কল্পনার মানসীকে বাস্তবে চোখের সামনে।
ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় পৌছে যায় এক্সিস মলে।
খুব ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়েছে আজ নীল, ব্ল্যাক ট্রাউজার আর পিংক কালারের সার্ট, চার
তলায় ফুড কোর্টের কোণের কাল যেখানে বসেছিল সেই টেবিলটাতে বসে একটা কফির অর্ডার দেয়। অনেক দিন বাদে মনটা খুব
খুশিখুশি লাগছে, ও যেন দেখতে পাচ্ছে মন
থেকে হারিয়ে যাওয়া কবিতার মিষ্টি মিষ্টি
শব্দ গুলো ওর দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে আর যেন বলছে কি গো এবার পাশে
পরে থাকা শুন্য কবিতার খাতা পূর্ণ করবে না?
হটাত যেন নীলের মনে হলো চারদিকটা
কেমন হাসনাহানার গন্ধ্যে ম ম করছে, আর
অনেক দূর থেকে জলতরঙ্গের মত মিষ্টি গলায় কেউ ওকে বলছে..... নীল দেখো আমি এসে গেছি।
নীল তাকিয়ে দেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালকে এই খানে দেখা রামধনু রঙা মেয়েটি,
ওর দিকে তকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে।
নীল উঠে দাঁড়িয়ে ওর হাত দুটো ধরে ওর দিকে তাকিয়ে ভাবে রবি ঠাকুরের শেষের কবিতার লাবণ্য আর জীবনানন্দ দাশের নাটোরের
বনলতা সেন মিলে মিশে ওর ভালবাসা তনু
হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আবার নীল
শুনতে পাচ্ছে তনু ওকে বলছে কোথায় ছিলে মধুকর এত দিন আমাকে ছেড়ে?
অনেক অনেক দিন বাদে নীল আবার খুঁজে পেয়েছে ওর কবিতাকে........
ধানসিঁড়ি নদীর তীরে........
বনলতা সেন ইতিহাস খোঁজে ।
কত পাহাড় , কত পর্বত ,কত
মরু প্রান্তর ঘুরে , ক্লান্ত হয়ে
বসে ছিলাম ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ে,
কাছে এসে সুধায় বনলতা সেন
তোমাকেই খুঁজছিলাম , এত দিন
কোথায় ছিলে ? আমি বললাম
আমিও যে তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি
সারা পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায়
পাইনি তোমাকে খুঁজে , কত লতা
পাতা গুল্ম গাছের পাতায় ইতিহাস
ঢাকা পরে গিয়েছে । তাও আমি খুঁজে
চলেছি দুটো পাখীর নীড়ের মত চোখ,
যা হারিয়ে ফেলেছিলাম অনেক মনের
ভীরে আর ঠিকানাটাও উড়ে গেছে
ঝরা পাতাদের সাথে i কবির কল্পনা
ইতিহাস গড়ে , স্বপ্ন তবু আসে, যদি
দেখা হয়ে যায় কোনো ঝড়ের রাতে
ঝরা পাতাদের ঠিকানায় সেই দুটি পাখির
নীড়ের মত চোখের সাথে ।আজ এতো
দিন পরে ক্লান্ত শ্রান্ত আমি খুঁজে পেয়েছি
তোমাকে ধানসিঁড়ি নদীর তীরে । তাইতো
আজ তুমি বনলতা সেনের মত চোখ
তুলে আমাকে শুধাও,
কোথায় ছিলে তুমি মধুকর আমাকে
ছেড়ে?
@@@@
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে, এসে গেল আবার একটা পূজা । নীলের মনটা খুব খারাপ হয়ে রয়েছে, মনে পড়ে যাচ্ছে তনুর সেই
কথাগুলো, আমিইতো তোমার পথের পাঁচালীর দূর্গা, তুমি আমাকে একটা পাছা পেড়ে ডুড়ে শাড়িই কিনে দিও। এখনো মনে পরে অনেক পছন্দ করে
সিটি সেন্টার থেকে একটা ঢাকাই জড়ির পাড়ের ডুরে শাড়ি কিনেছিল নীল আর পরিচিত এক জুয়েলার কে অর্ডার দিয়ে শিউলি ফুলের আদলে
একটা নাকছাবি বানিয়ে নিয়েছিল, আজ ভাবতে অবাক লাগে নীলের, কল্পনার জগতের ভালবাসা তনুর জন্য বাস্তবে পূজোর উপহার কেন যে কিনেছিল নিজেই জানে না। খুব যত্ন করে আলমারিতে জিনিষ গুলো রেখে দিয়েছে নীল, যদি কোনো দিন কল্পনার তনু বাস্তবে ফিরে আসে
ওর জীবনে। এখনো ভাবতে গিয়ে মনটা মোচড় দিয়ে ওঠে যখন হটাৎ এক দিন নীল দেখলো তনুর ফেসবুক প্রোফাইলটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনো
সাড়া শব্দ নেই, দিনের পর দিন কেটে যায়, নীলের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, মনে হয় ওর মনের জল ছবিটাই যেন হারিয়ে গেছে ফেস বুকের সাগরের
বুকে, কল্পনায় তনুর মুখটা ভাবতে চেষ্টা করে নীল, একটা হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা কান্না হয়ে দলা পাকিয়ে আছে বুকের মাঝে। বুঝল হারিয়ে গেছে তনু নীলের জীবন থেকে,আর কল্পনার জগ থেকে। তনুর সাথে সাথে আজ নীলের মনে হয় ওর জীবন থেকে কবিতাও যেন হারিয়ে গেছে, মনের মাঝে তোলপার করে খোঁজে নীল কিন্তু খুঁজে পায় না***
হারিয়ে গেছে কবিতা
জীবনের পাতা থেকে,
অতিতের স্মৃতি গুলো
আসে একে বেঁকে।
স্বপ্ন দেখা চোখ দুটি
ভরে ওঠে জলে,
এখনো যে তোমার মন
আমার মনে কথা বলে।
লিখি না কবিতা আর
খাতা পরে আছে,
ফোঁটে না কৃষ্ণচূড়া
বসন্তে গাছে গাছে।
হারিয়ে গেছো তুমি
আমার জীবন থেকে
শুধু স্মৃতি গুলো
ফিরে আসে একে বেঁকে।
এই কয়েক দিন আগে নীল ওর এক বন্ধু দাদার বিয়েতে দখিন চব্বিশ পরগনার বোড়াল বোলে একটা গ্রামে গিয়েছিল, গড়িয়া থেকে ৩০ মাইল ভেতরে। এক দিন ছিল,পরের দিন বন্ধুকে নিয়ে কাছেই পথের পাঁচালী খ্যাত নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। অনেক আধুনিক হয়ে গেছে গ্রামটা, বড় বড় বিল্ডিং দোকান পাট।
দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল নীলের। রেল লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে নীল যেন দেখতে পাচ্ছে, উচু করে একটা পাছা পেড়ে শাড়ি পড়ে নাকে নোলক,তনু ছুটে যাচ্ছে অপুর হাত ধরে কাশ ফুলের বনের ঢেউ জাগানো মাঠের মধ্য দিয়ে। আর যেন শুনতে পাচ্ছে তনু ওর গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলছে, আমিই তো তোমার পথের পাঁচালীর দূর্গা, আমাকে পূজোতে পাছা পেড়ে ডুড়েশড়িই কিনে দিও। সে দিন তনুর কথা মনে পড়তেই নীলের চোখ দুটো জলে ভিজে গিয়েছিল। সামনে পূজোর জন্য শপিং মল গুলো সব ভীড়ে ভীড়ে জমজমাট। আনমনে নীল ঘুরছিল এক্সিস মলে, দেখতে দেখতে থমকে দাঁড়ায় একটা বিখ্যাত ব্র্যান্ডেড শাড়ির শোরুমের শোকেসের সামনে। সুন্দর করে ডিসপ্লে করা আছে একটা খুব দামী স্ট্রাইপড শাড়ি, তনুর মনের ডুড়েশাড়ি। মনে পড়ে যাচ্ছে তনু হটাৎ নীলকে বলেছিল আচ্ছা মধুকর কখনো যদি
তোমাকে দেখতে পাই কি করে চিনবো তোমাকে? অনেক ভেবে নীল বলেছিল, তোমার মনে আছে তনু ফেসবুকের সেই বাগানে ঘুরতে ঘুরতে তুমি আমাকে কৃঁষ্ণচূড়া ফুল পেড়ে দিতে বলেছিলে?
আমি ফুল পাড়তে গিয়ে একটা ডাল ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে ডান দিকের কপালটা কেটে গিয়েছিল, উউউ তাই দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না তোমার। সেই আমার কপালের ডান দিকের কাটা
দাগটা চিরকালের জন্য রয়ে গেছে, যখনি আয়নায় দেখি তোমার কথা মনে পরে যায়।ওই দাগটাতেই আমাকে চিনতে পারবে। মলের ফুডকোর্টে বসে
নীল একটা কফির অর্ডার দেয়।আর তাকিয়ে দেখে এক্সিস মল যেন উপছে পড়ছে রঙিন রঙিন ছেলে
মেয়েদের ভীড়ে। কি জানি এর ভেতরে হয়ত তনুও থাকতে পারে। পাশের টেবিলে এক ঝাক অল্প বয়েসি মেয়ে উচ্ছল হয়ে গল্প করছে, প্রত্যেকের
হাতে পূজা শপিং ব্যাগ। তার মধ্যে একটি মেয়ে কোনো কথা বলছে না নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।কফিতে একটা সিপ দিয়ে নীল ভাল
করে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি কে। রামধনু রাঙ্গা পিঠ পর্যন্ত চুল, গভীর সাগরের মত চোখের দৃষ্টি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ নীলের মনে পড়লো, এক দিন নীলকে তনু চেপে ধরেছিল, বলো আজকে বলতেই হবে কল্পনায় আমার তুমি কেমন ছবি এঁকেছ। নীল বেচারি কি করে বলে দাঁড়াও ভেবে দেখি তুমি কত রূপবতী।বলে লিখেছি......
তোমায় দেখে বকুল বনে বন্যা এলো,
তোমার চুলে ধনু রং হারিয়ে গেল
তোমার ঠোঁটে মহুল বনের রস জমেছে,
তাই দেখে আজ
মৌমাছিদের মন মজেছে ।
তোমার হাসি
সবুজ বনের স্নিগ্ধ মায়া ,
তোমার চোখে
সাগর জলে হারিয়ে যাওয়া ।
তোমার ছোঁয়ায়
হাসহানার সুবাস মাখা ,
তোমার মনে
প্রজাপতির রঙ্গীন পাখা।
তুমি ছাড়া
এই পৃথিবী অন্ধকারে ,
সূর্য লুকায়
অস্তাচলের বন্ধ দ্বারে ।*******
আজ এক্সিস মলের ফুড কোর্টের একটা কোণের টেবিলে বসে কফি খেতে খেতে মেয়েটি কে দেখে কেন মনে পড়ে যাচ্ছে তনুর কথা বুঝতে পারছে না নীল। খানিক্ষণ বাদে মেয়ে গুলো হইহই করতে করতে বেড়িয়ে যাচ্ছে ফুড কোর্ট থেকে। নীলের যেন মনে হচ্ছে এক ঝাক প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে ফুলের বাগান থেকে। কত কি কিনবে ভেবে নীল গিয়েছিল এক্সিস মলে। আজ এমন ভাবে তনু ওর
মনটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, কিচ্ছু কিনতে
আর ভাল লাগছে না। কেন জানি বারবার ফুড কোর্টে দেখা মেয়েটির মুখটা মনে পড়ে যাচ্ছে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি চলে এলো নীল।
ডিনার করে অভ্যাসবশত ফেস বুকটা
ওপেন করতেই চমকে ওঠে নীল। একি দেখছে, তনুর নামের পাশে গ্রিন লাইট। কত কত দিন
বাদে মনে হচ্ছে তনু এসে দাঁড়িয়েছে নীলের
সামনে। এক রাশ অভিমান দলা পাকিয়ে
উঠছে নীলের মনের মধ্যে। কোনো কথাই
বলছে না নীল। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে টুংটুং
করে বাজনা বেজেই চলেছে আর একটা
একটা করে কথা ফুটে উঠছে। কি গো
মধুকর আমার ওপর খুব রেগে গেছো? এত অভিমান? তোমাকে বলতে বাধা নেই
আমি যে এই একটা বছর নিজের মনটাকে
সীতার মতো অগ্নি পরীক্ষায় বসিয়েছিলাম,
দেখতে ফেসবুকের কল্পনার জগতের নীল কে আমি সত্যি ভালবাসি কিনা। এতক্ষণ
বাদে নীল একটাই প্রশ্ন করলো। কি দেখলে? খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে তনু লিখলো
তুমি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্বই নেই। জানো আমার মনে হচ্ছে আমি আজ তোমাকে
দেখেছি এক্সিস মলে, ফুড কোর্টের ওই উজ্বল আলোতে আমি কিন্তু তোমার ডান কপালের
কাটা দাগটা ঠিক দেখতে পেয়েছি, মনে হচ্ছে
আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি গো মধুকর, কি সুন্দর তুমি ঠিক যেন আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার। তুমি যদি সত্যি তুমি হও, এক্সিস মলের ফুড কোর্টের আজ তুমি যেখানে বসেছিলে কাল ঠিক সন্ধ্যা সাতটার সময় ওখানে থেকো। দেখো আমি তোমাকে ঠিক চিনে নেবো। আমার ভালবাসাকে চিনতে আমার একটুও ভুল হবে না, সঙ্গে করে আমার পূজোর ডুরে শাড়িটাও এনো কিন্তু, ভুলো না। তার পরেই সবুজ আলোটা
নিভে গেলো। কাল সন্ধ্যায় নীল খুঁজে পাবে
বাস্তবে ওর কল্পনার তনুকে উত্তেজনায় শিরশির করছে নীলের ভেতরটা, তনুর কথা ভাবতে
ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নীল বুঝতেই পারে নি।
ফেসবুকটা লগ আউট করে খানিক্ষণ চুপ করে বসে রইলো তনু, গত একটা বছরে নিজের মনে অনেক কাটা ছেড়া করেছে, ক্ষতবিক্ষত হয়েছে রক্তাক্ত হয়েছে ওর মন, নীলের কাছ
থেকে দূরে থাকতে। তাও এক বারের জন্যও তনু ফেসবুক খোলে নি। তিনশ পঁয়ষট্টি দিন তনু
এক মুহুর্তের জন্যও নীলকে মন থেকে
সরাতে পারেনি। ও বুঝতে পেরেছে নীলই
ওর জীবন ওর বেচে থাকার অস্তিত্ব।
সকাল থেকে নীলের আজ কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না, মনের ভেতরটা ছটফট করছে
কখন সন্ধ্যা হবে কখন নীল দেখতে পাবে ওর কল্পনার মানসীকে বাস্তবে চোখের সামনে।
ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় পৌছে যায় এক্সিস মলে।
খুব ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়েছে আজ নীল, ব্ল্যাক ট্রাউজার আর পিংক কালারের সার্ট, চার
তলায় ফুড কোর্টের কোণের কাল যেখানে বসেছিল সেই টেবিলটাতে বসে একটা কফির অর্ডার দেয়। অনেক দিন বাদে মনটা খুব
খুশিখুশি লাগছে, ও যেন দেখতে পাচ্ছে মন
থেকে হারিয়ে যাওয়া কবিতার মিষ্টি মিষ্টি
শব্দ গুলো ওর দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে আর যেন বলছে কি গো এবার পাশে
পরে থাকা শুন্য কবিতার খাতা পূর্ণ করবে না?
হটাত যেন নীলের মনে হলো চারদিকটা
কেমন হাসনাহানার গন্ধ্যে ম ম করছে, আর
অনেক দূর থেকে জলতরঙ্গের মত মিষ্টি গলায় কেউ ওকে বলছে..... নীল দেখো আমি এসে গেছি।
নীল তাকিয়ে দেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালকে এই খানে দেখা রামধনু রঙা মেয়েটি,
ওর দিকে তকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে।
নীল উঠে দাঁড়িয়ে ওর হাত দুটো ধরে ওর দিকে তাকিয়ে ভাবে রবি ঠাকুরের শেষের কবিতার লাবণ্য আর জীবনানন্দ দাশের নাটোরের
বনলতা সেন মিলে মিশে ওর ভালবাসা তনু
হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আবার নীল
শুনতে পাচ্ছে তনু ওকে বলছে কোথায় ছিলে মধুকর এত দিন আমাকে ছেড়ে?
অনেক অনেক দিন বাদে নীল আবার খুঁজে পেয়েছে ওর কবিতাকে........
ধানসিঁড়ি নদীর তীরে........
বনলতা সেন ইতিহাস খোঁজে ।
কত পাহাড় , কত পর্বত ,কত
মরু প্রান্তর ঘুরে , ক্লান্ত হয়ে
বসে ছিলাম ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ে,
কাছে এসে সুধায় বনলতা সেন
তোমাকেই খুঁজছিলাম , এত দিন
কোথায় ছিলে ? আমি বললাম
আমিও যে তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি
সারা পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায়
পাইনি তোমাকে খুঁজে , কত লতা
পাতা গুল্ম গাছের পাতায় ইতিহাস
ঢাকা পরে গিয়েছে । তাও আমি খুঁজে
চলেছি দুটো পাখীর নীড়ের মত চোখ,
যা হারিয়ে ফেলেছিলাম অনেক মনের
ভীরে আর ঠিকানাটাও উড়ে গেছে
ঝরা পাতাদের সাথে i কবির কল্পনা
ইতিহাস গড়ে , স্বপ্ন তবু আসে, যদি
দেখা হয়ে যায় কোনো ঝড়ের রাতে
ঝরা পাতাদের ঠিকানায় সেই দুটি পাখির
নীড়ের মত চোখের সাথে ।আজ এতো
দিন পরে ক্লান্ত শ্রান্ত আমি খুঁজে পেয়েছি
তোমাকে ধানসিঁড়ি নদীর তীরে । তাইতো
আজ তুমি বনলতা সেনের মত চোখ
তুলে আমাকে শুধাও,
কোথায় ছিলে তুমি মধুকর আমাকে
ছেড়ে?