Bose Arun
Favoured Frenzy
গল্প --- *** তামান্না ***-
&& &&
কি অদ্ভুত ভাবে ইন্টারনেট সারা পৃথিবীটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে ভাবতেও অবাক হতে হয়। এক মুহুর্তের জন্যও ইন্টারনেট ছাড়া আজকের মানুষের জীবন অচল হয়ে যায়। যে কোনো নেশার বস্তুর থেকেও আজকের পৃথিবীর ছেলে বুড়ো সকলে ইন্টারনেটর নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। সকলের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। কারুর কোনো দিকে খেয়াল নেই , শুধু চোখ দুটো আটকে আছে স্মার্ট ফোনের পর্দায়।
আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। সময় পেলেই বড় পর্দার স্মার্ট ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করি।
আমার নাম নীল রয়। বয়স ৬৫, রিটায়ার্ড পার্সন। পেনশন ভোগী। সকাল থেকে বাড়ির কিছু টুকটাকি কাজ ছাড়া কিছু করার নেই। অফুরন্ত অবসর। সময় কাটে স্মার্ট ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। একদিন ফোনে স্ক্রোল করতে করতে একটা সাইটে চোখ আটকে গেলো।একটা চ্যাট সাইট। শুনেছি সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কি ছেলে কি মেয়ে কি বুড়ো কি ছুড়ি চব্বিশ ঘণ্টা চ্যাট সাইটে চ্যাট করে যাচ্ছে। খুব কৌতুহল হলো। দেখলাম সাইট টার নাম ক্যাম চ্যাট এভিনিউ। ক্লিক করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেলো, অনেক গুলো চ্যাট রুম।কত রকম রুম, সিঙ্গল রুম, এডাল্ট রুম, ভিডিও রুম, চোখ আটকে গেলো টিন চ্যাট রুমে। ওপেন করলাম। দেখি দু ভাবে এন্টার করা যায়। রেজিস্টার্ড একাউন্ট করে, আর গেস্ট এন্ট্রি। মজা লাগলো, গেস্টে ক্লিক করে বসলাম। দেখি একটা ইউসার নেম দিতে বলছে সাথে বয়েস। বয়েস দেখলাম ১৩ থেকে ১৯ restricted। সেই মুহুর্তে অরুন বোস নামটা মনে এলো, লিখে দিলাম, বয়েস ১৯ শে টিক মেরে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হাট করে খুলে গেলো গল্প করার ঘরের দরজা। দেখি একের পর এক পোস্ট,। সবই ইংরেজিতে। পরে রুলস পড়ে জেনেছি, ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ইউস করা যাবে না। নিজের সত্যিকারের আইডেন্টিটি যেমন নাম ছবি ঠিকানা কিছুই দেয়া যাবে না। সব ফেক দিতে হবে। সিস্টেম থেকেই নামের পাশে সেই ইউসারের কান্ট্রির নামটা বাই ডিফল্ট এসে যায়। সব দেখে শুনে খুব মজা লাগলো। কত রকম পোস্ট কত রকম কথা। দেখি আমার অরুণ বোস নামটা এন্ট্রি হয়ে গেছে। আমি আগেই কিছু কিছু নেটের ভাষা জানতাম। নিচে পোস্টিং বার। লিখলাম whats up. Hmu. মানে কেমন আছো, হিট মি আপ,।
সঙ্গে সঙ্গে দু তিনটি রিপ্লাই, হাই অরুন, হাউ আর ইউ। প্লিজ কাম ইন প্রাইভেট।
খুঁজে দেখি ওপেন চ্যাট রুমের ভেতর আবার প্রাইভেট রুম অপশন, সেখানে অবশ্য যে কোনো ভাষা যে কোনো স্ক্রিপ্ট ইউজ করা চলবে। খুব মজা লাগছে, দেখি সুদূর আটলান্টিকের ওপার আমেরিকার একটি ১৮ বছরের মেয়ে আমাকে প্রাইভেটে নিয়েছে, নাম এমি।
৬৫ বছরের নীল রয় মুহুর্তের মধ্যে হয়ে গেলো ১৯ বছরের অরুন বোসে। প্রোফাইলে সুন্দর একটা মেয়ের ছবি। স্টুডেন্ট, গল্প করতে ভালোবাসে, নতুন নতুন বন্ধু বানাতে চ্যাট রুমে ঘোরাঘুরি করে। ও আমাকে বললো, তোমার সাথে গল্প করে ভালো লাগলো, তুমি রেজিস্টারড একাউন্ট করে নাও। তাহলে খুব মজা করে আমরা গল্প করবো। তুমি একটা সুন্দর প্রোফাইল বানিয়ে নাও তোমার পিকচার দিয়ে। যাই হোক তখনকার মতো চ্যাট রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। তারপর চ্যাট রুমের সব নিয়ম মেনে সুন্দর একটা রেজিস্টার্ড প্রোফাইল বানিয়ে নিলাম, নেট থেকে সুন্দর একটা বাঙালি ছেলের ছবি নামিয়ে সেটে দিলাম প্রোফাইলে। মুহুর্তের মধ্যে ৬৫ বছরের প্রৌঢ় মানুষটি হয়ে গেলো, ঝকঝকে ১৯ বছরের একটি ছেলে নাম অরুন বোস।
সময় পেলেই চ্যাট রুমে কথা বলতে বসি। রেজিঃ প্রোফাইল থেকে মেইন ওয়াল বা প্রাইভেটে যে কোনো ছবি শেয়ার করা যায় শুধু ভিডিও অপশন টা নেই। এর ভেতর একদিন মেইন ওয়ালে সকলের সাথে আবোলতাবোল কথা বলছি। হটাৎ একটি মেয়ের মেসেজ, wnt to talk, pls prvt me. মেয়েটির প্রোফাইল খুলে ওর বাইও দেখলাম, নাম তামান্না বয়েস যথারীতি ১৯, বাংলাদেশ, ঢাকা। ওকে প্রাইভেটে ডাকতেই, হাজির। ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর একদম বাংলা হরফে। থাক আর ইংরেজি বলতে হবে না। আমি তোমার বাইও খুব ভালো করে দেখেই তোমাকে ডেকেছি গল্প করবো বলে। হু দেখতেতো বেশ হিরো হিরো। তা আমার সাথে গল্প করতে আপত্তি আছে কি?
উফ কি মেয়েরে বাবা, আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই এতো গুলো কথা বলে গেলো। আমারতো মজাই লাগছিলো, ওতো বুঝতে পারছে না কার সাথে কথা বলছে। যাইহোক, আমিও মজা করেই বললাম, কথা বলবো না কেনো, কথা বলতেইতো বসে আছি, কিন্তু তার আগে যে আমার একটা শর্ত আছে। বলতেই একটা ভুরু কুচকোনো ইমোজি, আর ( ?) চিহ্ণ। আমি বললাম, আগে তোমার একটা নিজের ছবি দাও, দেখি তুমি কেমন দেখতে। আমি আবার পেত্নীর মতো দেখতে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। উরে বাবা বলতে না বলতেই angry imogi, কি আমি পেত্নীর মতো দেখতে?
তার পরেই আমাদের দুজনের প্রাইভেট রুমে একটি মেয়ের ছবি। হাফ বাস্ট। ফুট ফুটে দেখতে, টানা টানা চোখ। সত্যি চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। বলতে নেই ছবিটা দেখে আমার এই প্রৌঢ় মনটাও কেমন যেন ঝাকি খেয়ে গিয়েছিলো। ছবি দেখে বুঝলাম বয়েস অন্তত ২২/ ২৩ হবে। আবার পোস্ট, কি দেখছো হা করে শুনি? পেত্নী দেখছো? পছন্দ হয়েছে?
আমি বললাম, হু পেত্নীতো বেশ নজরকারা, কিন্তু বয়েস টা তো পেত্নীর ১৯ এর উর্ধ্বেই মনে হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, চুপ চুপ জানো না উনিশের বেশি লিখলেই স্রেফ ব্যান করে দেবে। শোনো বাবু আমার সত্যিকারের বয়েস ২২ আর আমিও জানি তুমিও মোটেই উনিশের পাত্র নও।
হি হি হি কি মশায় ঠিক বলছি তো?
এই ছিলো আমার আর তামান্নার প্রথম পরিচয়।
প্রথম দিনই আমার ওপর ওর্ডার হয়েছিল, রোজ অন্তত দু বার করে ওর সাথে গল্প করতে হবে, দুপুর বেলা দুটোর পর আর সন্ধ্যা বেলা।
মর্নিং কলেজে হিস্ট্রি নিয়ে এম এ করছে। তাই আমাকে ভার্চুয়াল মিট করতে হবে দুপুর দুটোর পর।
যাই হোক রোজ দুবেলা পেত্নীর সাথে গল্প করতে হয়। অবশ্য আমাকে বেশি কথা বলতে হয় না, অনর্গল ওই কথা বলে যায়। সবই টেক্সট মেসেজ। ওর দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুলাভাই দেখতে কেমন, আজ বাড়িতে কি কি রান্না হয়েছে, আমার প্রোফাইলের ছবি দেখে ওর বন্ধুদের খুব পছন্দ। আমাকে খুব একটা খেটে খুটে মেসেজ টাইপ করতে হয় না, শুধু হু হা করে যাই। মাঝে মাঝে বলে, আরে তুমি কিছু বলো।
এই ভাবে তামান্নার সাথে রোজ বকবক করতে করতে দুজনের মধ্যে একটা ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কি আশ্চর্য আমার এই ৬৫ বছরের মনটাও কেমন যেন ছটফট করতো তামান্নার সাথে কথা বলার জন্য।
তামান্না আর আমি কেউ কাউকে দেখিনি, এমন কি গলার আওয়াজও শুনিনি, জানি ওর তামান্না নামটাও ফেক, সত্যি কি নাম তাও জানি না তবু চ্যাট রুমের টেক্সট মেসেজ আমাদের দুজনকে এতো কাছাকাছি এনে দিয়েছে যে আমার এই ৬৫ বছরের, প্রৌঢ় মনেও গভীর দাগ কেটে দিয়েছে। এটাকেই বোধ হয় ইংরেজ সেক্স সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ ফ্রয়েড ব্যাখ্যা করে গেছেন, প্রত্যেকটা মানুষের মনের গভীরে সারা জীবন লুকিয়ে থাকে অদমিত ভালোবাসা আর যৌন আকাংখ্যা।
একটা আমার থেকে অনেক ছোট মেয়ের প্রতি দুর্বলতা সে ভার্চ্যুয়ালই হোক না কেন, ঠিক মনটা মেনে নিতে পারছে না। মনে পরে যাচ্ছে অমিতাভ আর জিয়া খানের একটা হিন্দি ফিল্ম দেখেছিলাম নিঃশব্দ। একটা আমারই মতো প্রৌঢ় মানুষের একটা অল্প বয়েসি মেয়ের প্রতি অদ্ভুত দুর্বলতার গল্প।
যাই হোক একদিন বিকেল বেলা তামান্নার সাথে গল্প করছি যথারীতি চ্যাট রুমের প্রাইভেটে। হটাৎ তামান্না একটু চুপ করে থেকে বললো, অরুন আজ তোমাকে একটা রিকুয়েষ্ট করবো, তুমি আজ রাতে ডিনারের পর ১১ টার সময় আমাকে লগ অন করো, কথা আছে।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে লগ আউট হয়ে গেলো। একটু অবাকই হয়ে গেলাম। যাক গে দেখা যাবে।
রাতে খেতে খেতে ১১ টা পার। তরি ঘড়ি নিজের ঘরে এসে আজ আর ফোনে নয় আমার ল্যাপটপে চ্যাট রুম লগ অন করে বসলাম। ইউসার লিস্টে তামান্নাকে খুঁজে পেলাম না। যাই হোক সময় কাটানোর জন্য মেইন ওয়ালে, এর তার সাথে কথা বলতে বলতে, রাত ১১.৩০। দেখি প্রাইভেট ওপেন্ড, তমান্নার মেসেজ, এসে গেছো? আমার একটু দেরী হয়ে গেল। আমি শুয়ে পরেছি, শুয়ে শুয়ে একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, আচ্ছা অরুন তুমি ভার্চুয়াল সেক্স কখনো শুনেছো? আমি তো অবাক হয়ে গেলাম ওর মুখে এই কথা শুনে। আগে কোনো দিন শুনিনি, এমন কি আমি ইয়ার্কি করে কিছু বলতে গেলে, ধমক খেতে হয়েছে। যাই হোক বললাম হা শুনেছি। এই সম্বন্ধে কিছু অথেনটিক লেখাও পড়েছি। তা হটাৎ তোমার মাথায় আজ ভার্চুয়াল সেক্সের ভুত চাপলো কেন? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, বললো, অরুন আজ যদি আমি তোমার কাছে পরিপূর্ণ আদর চাই তুমি দেবে? আজ শুধু আজকেই, আর কোনোদিন চাইবো না।
আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। কেমন যেন একটা আশঙ্কাও দানা বেঁধে উঠলো মনের ভেতর। আমার এই প্রৌঢ় মনের গভীরে একটি অপুর্ব সুন্দরী অল্প বয়েসী মেয়ের এই আমন্ত্রণ মন আর শরীর কে উত্তেজিত করার বদলে আরো কেন জানি নিস্তেজ করে দিয়েছিল।
সেই রাতের কথা আজো ভুলতে পারিনি। আমার অতিত অভিজ্ঞতা আর তমান্নার সহযোগিতা আমাদের দুজনকে পরিপূর্ণ ভাবে আমাদের দুজনের চাহিদাকে সম্পুর্ণ করেছিল। কিন্তু সারাক্ষণ আমার মনের ভেতর একটা খটকা লেগেই ছিল।
যাই হোক মনে একটা চিন্তা নিয়েই সকালে চ্যাট রুমের দরজা খুললাম। জানি তামান্নাকে এই সময় পাবো না। যথারীতি নেই। এই সব চ্যাট রুমের আরও অনেক অপশন আছে যেমন, যারা ফ্রেন্ড লিস্টে আছে তারা ইচ্ছে করলে ফ্রেন্ডস ওয়ালে মেসেজ বা ছবি রাখতে পারে।
আমিও সেই ভেবে ফ্রেন্ডস ওয়াল ওপেন করতেই দেখি আমার নামে তমান্নার একটা সর্ট মেসেজ রয়েছে। ওর বয়ানেই এখানে তুলে ধরলাম।
অরুন, তোমাকে কখনো দেখিনি, জানি অরুন নাম আর এই হিরো হিরো ছবিটা সবই মিথ্যে। আমিও মিথ্যে। এই অদ্ভুত, কাল্পনিক জগতটা কেমন কল্পনায় সত্যি হয়ে ওঠে। তা বলে ভেবো না, আমার তোমার ওপর ভালোবাসাটাও কাল্পনিক আর মিথ্যে, আর মিথ্যে নয় বলেই আজ তোমার কাছে বিদেয় নিতে এসেছি। অরুন তুমি যে রকম ই হয়ে থেকে থাকো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। এও জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। জানো আমাদের ভালোবাসা দুটো প্যারালাল লাইনের মত, যা কোনো দিন একটা বিন্দুতে মেলে না। আমাদের ভালোবাসাও কোনোদিন পূর্ণতা পাবে না। তাই চলে যাচ্ছি তোমার কাছ থেকে। আগামী সোমবার আমার বিয়ে। ক্যানাডা নিবাসী এন আর আই ছেলে। বিয়ের পর ওর সাথে ক্যানাডা চলে যাবো। জানি সুদূর ক্যানাডা থেকেও এক ক্লিকে এই গল্প করার ঘরে ঢুকে পরা যায়। আমি ইচ্ছে করেই আর কোনো চ্যাট রুমে ফিরে আসতে চাই না। আমার এখানকার একাউন্ট আমি ডিলিট করে দিয়েছি। তোমার মিষ্টি স্মৃতি নিয়ে একজন মনের মানুষের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই। পারোতো ভুলে যেও। কষ্ট পেওনা মনে, ভেবো তোমার বন্ধু তোমার স্মৃতি টুকু নিয়ে ভালোই থাকবে। জানি না হয়তো তুমি আমার থেকে অনেকই বড় ই হয়ত হবে তাই যাবার বেলা তোমার দুটি পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে যাচ্ছি। ভালো থেকো গো। অরুন তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।.... …এখানেই শেষ।
তমান্নার রেখে যাওয়া জীবনের শেষ মেসেজ টা পড়তে পড়তে এই বৃদ্ধ মানুষটার চোখ দুটোও কেমন জলে ভড়ে উঠছিল।.............
এই বৃদ্ধ মানুষটার জীবনের অনেক স্মৃতির সাথে তামান্নার স্মৃতি টুকুও অমলিন হয়ে থাকবে মনের মণিকোঠায়। ...............
শেষ
&& &&
কি অদ্ভুত ভাবে ইন্টারনেট সারা পৃথিবীটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে ভাবতেও অবাক হতে হয়। এক মুহুর্তের জন্যও ইন্টারনেট ছাড়া আজকের মানুষের জীবন অচল হয়ে যায়। যে কোনো নেশার বস্তুর থেকেও আজকের পৃথিবীর ছেলে বুড়ো সকলে ইন্টারনেটর নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। সকলের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। কারুর কোনো দিকে খেয়াল নেই , শুধু চোখ দুটো আটকে আছে স্মার্ট ফোনের পর্দায়।
আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। সময় পেলেই বড় পর্দার স্মার্ট ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করি।
আমার নাম নীল রয়। বয়স ৬৫, রিটায়ার্ড পার্সন। পেনশন ভোগী। সকাল থেকে বাড়ির কিছু টুকটাকি কাজ ছাড়া কিছু করার নেই। অফুরন্ত অবসর। সময় কাটে স্মার্ট ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। একদিন ফোনে স্ক্রোল করতে করতে একটা সাইটে চোখ আটকে গেলো।একটা চ্যাট সাইট। শুনেছি সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কি ছেলে কি মেয়ে কি বুড়ো কি ছুড়ি চব্বিশ ঘণ্টা চ্যাট সাইটে চ্যাট করে যাচ্ছে। খুব কৌতুহল হলো। দেখলাম সাইট টার নাম ক্যাম চ্যাট এভিনিউ। ক্লিক করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেলো, অনেক গুলো চ্যাট রুম।কত রকম রুম, সিঙ্গল রুম, এডাল্ট রুম, ভিডিও রুম, চোখ আটকে গেলো টিন চ্যাট রুমে। ওপেন করলাম। দেখি দু ভাবে এন্টার করা যায়। রেজিস্টার্ড একাউন্ট করে, আর গেস্ট এন্ট্রি। মজা লাগলো, গেস্টে ক্লিক করে বসলাম। দেখি একটা ইউসার নেম দিতে বলছে সাথে বয়েস। বয়েস দেখলাম ১৩ থেকে ১৯ restricted। সেই মুহুর্তে অরুন বোস নামটা মনে এলো, লিখে দিলাম, বয়েস ১৯ শে টিক মেরে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হাট করে খুলে গেলো গল্প করার ঘরের দরজা। দেখি একের পর এক পোস্ট,। সবই ইংরেজিতে। পরে রুলস পড়ে জেনেছি, ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ইউস করা যাবে না। নিজের সত্যিকারের আইডেন্টিটি যেমন নাম ছবি ঠিকানা কিছুই দেয়া যাবে না। সব ফেক দিতে হবে। সিস্টেম থেকেই নামের পাশে সেই ইউসারের কান্ট্রির নামটা বাই ডিফল্ট এসে যায়। সব দেখে শুনে খুব মজা লাগলো। কত রকম পোস্ট কত রকম কথা। দেখি আমার অরুণ বোস নামটা এন্ট্রি হয়ে গেছে। আমি আগেই কিছু কিছু নেটের ভাষা জানতাম। নিচে পোস্টিং বার। লিখলাম whats up. Hmu. মানে কেমন আছো, হিট মি আপ,।
সঙ্গে সঙ্গে দু তিনটি রিপ্লাই, হাই অরুন, হাউ আর ইউ। প্লিজ কাম ইন প্রাইভেট।
খুঁজে দেখি ওপেন চ্যাট রুমের ভেতর আবার প্রাইভেট রুম অপশন, সেখানে অবশ্য যে কোনো ভাষা যে কোনো স্ক্রিপ্ট ইউজ করা চলবে। খুব মজা লাগছে, দেখি সুদূর আটলান্টিকের ওপার আমেরিকার একটি ১৮ বছরের মেয়ে আমাকে প্রাইভেটে নিয়েছে, নাম এমি।
৬৫ বছরের নীল রয় মুহুর্তের মধ্যে হয়ে গেলো ১৯ বছরের অরুন বোসে। প্রোফাইলে সুন্দর একটা মেয়ের ছবি। স্টুডেন্ট, গল্প করতে ভালোবাসে, নতুন নতুন বন্ধু বানাতে চ্যাট রুমে ঘোরাঘুরি করে। ও আমাকে বললো, তোমার সাথে গল্প করে ভালো লাগলো, তুমি রেজিস্টারড একাউন্ট করে নাও। তাহলে খুব মজা করে আমরা গল্প করবো। তুমি একটা সুন্দর প্রোফাইল বানিয়ে নাও তোমার পিকচার দিয়ে। যাই হোক তখনকার মতো চ্যাট রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। তারপর চ্যাট রুমের সব নিয়ম মেনে সুন্দর একটা রেজিস্টার্ড প্রোফাইল বানিয়ে নিলাম, নেট থেকে সুন্দর একটা বাঙালি ছেলের ছবি নামিয়ে সেটে দিলাম প্রোফাইলে। মুহুর্তের মধ্যে ৬৫ বছরের প্রৌঢ় মানুষটি হয়ে গেলো, ঝকঝকে ১৯ বছরের একটি ছেলে নাম অরুন বোস।
সময় পেলেই চ্যাট রুমে কথা বলতে বসি। রেজিঃ প্রোফাইল থেকে মেইন ওয়াল বা প্রাইভেটে যে কোনো ছবি শেয়ার করা যায় শুধু ভিডিও অপশন টা নেই। এর ভেতর একদিন মেইন ওয়ালে সকলের সাথে আবোলতাবোল কথা বলছি। হটাৎ একটি মেয়ের মেসেজ, wnt to talk, pls prvt me. মেয়েটির প্রোফাইল খুলে ওর বাইও দেখলাম, নাম তামান্না বয়েস যথারীতি ১৯, বাংলাদেশ, ঢাকা। ওকে প্রাইভেটে ডাকতেই, হাজির। ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর একদম বাংলা হরফে। থাক আর ইংরেজি বলতে হবে না। আমি তোমার বাইও খুব ভালো করে দেখেই তোমাকে ডেকেছি গল্প করবো বলে। হু দেখতেতো বেশ হিরো হিরো। তা আমার সাথে গল্প করতে আপত্তি আছে কি?
উফ কি মেয়েরে বাবা, আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই এতো গুলো কথা বলে গেলো। আমারতো মজাই লাগছিলো, ওতো বুঝতে পারছে না কার সাথে কথা বলছে। যাইহোক, আমিও মজা করেই বললাম, কথা বলবো না কেনো, কথা বলতেইতো বসে আছি, কিন্তু তার আগে যে আমার একটা শর্ত আছে। বলতেই একটা ভুরু কুচকোনো ইমোজি, আর ( ?) চিহ্ণ। আমি বললাম, আগে তোমার একটা নিজের ছবি দাও, দেখি তুমি কেমন দেখতে। আমি আবার পেত্নীর মতো দেখতে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। উরে বাবা বলতে না বলতেই angry imogi, কি আমি পেত্নীর মতো দেখতে?
তার পরেই আমাদের দুজনের প্রাইভেট রুমে একটি মেয়ের ছবি। হাফ বাস্ট। ফুট ফুটে দেখতে, টানা টানা চোখ। সত্যি চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। বলতে নেই ছবিটা দেখে আমার এই প্রৌঢ় মনটাও কেমন যেন ঝাকি খেয়ে গিয়েছিলো। ছবি দেখে বুঝলাম বয়েস অন্তত ২২/ ২৩ হবে। আবার পোস্ট, কি দেখছো হা করে শুনি? পেত্নী দেখছো? পছন্দ হয়েছে?
আমি বললাম, হু পেত্নীতো বেশ নজরকারা, কিন্তু বয়েস টা তো পেত্নীর ১৯ এর উর্ধ্বেই মনে হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, চুপ চুপ জানো না উনিশের বেশি লিখলেই স্রেফ ব্যান করে দেবে। শোনো বাবু আমার সত্যিকারের বয়েস ২২ আর আমিও জানি তুমিও মোটেই উনিশের পাত্র নও।
হি হি হি কি মশায় ঠিক বলছি তো?
এই ছিলো আমার আর তামান্নার প্রথম পরিচয়।
প্রথম দিনই আমার ওপর ওর্ডার হয়েছিল, রোজ অন্তত দু বার করে ওর সাথে গল্প করতে হবে, দুপুর বেলা দুটোর পর আর সন্ধ্যা বেলা।
মর্নিং কলেজে হিস্ট্রি নিয়ে এম এ করছে। তাই আমাকে ভার্চুয়াল মিট করতে হবে দুপুর দুটোর পর।
যাই হোক রোজ দুবেলা পেত্নীর সাথে গল্প করতে হয়। অবশ্য আমাকে বেশি কথা বলতে হয় না, অনর্গল ওই কথা বলে যায়। সবই টেক্সট মেসেজ। ওর দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুলাভাই দেখতে কেমন, আজ বাড়িতে কি কি রান্না হয়েছে, আমার প্রোফাইলের ছবি দেখে ওর বন্ধুদের খুব পছন্দ। আমাকে খুব একটা খেটে খুটে মেসেজ টাইপ করতে হয় না, শুধু হু হা করে যাই। মাঝে মাঝে বলে, আরে তুমি কিছু বলো।
এই ভাবে তামান্নার সাথে রোজ বকবক করতে করতে দুজনের মধ্যে একটা ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কি আশ্চর্য আমার এই ৬৫ বছরের মনটাও কেমন যেন ছটফট করতো তামান্নার সাথে কথা বলার জন্য।
তামান্না আর আমি কেউ কাউকে দেখিনি, এমন কি গলার আওয়াজও শুনিনি, জানি ওর তামান্না নামটাও ফেক, সত্যি কি নাম তাও জানি না তবু চ্যাট রুমের টেক্সট মেসেজ আমাদের দুজনকে এতো কাছাকাছি এনে দিয়েছে যে আমার এই ৬৫ বছরের, প্রৌঢ় মনেও গভীর দাগ কেটে দিয়েছে। এটাকেই বোধ হয় ইংরেজ সেক্স সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ ফ্রয়েড ব্যাখ্যা করে গেছেন, প্রত্যেকটা মানুষের মনের গভীরে সারা জীবন লুকিয়ে থাকে অদমিত ভালোবাসা আর যৌন আকাংখ্যা।
একটা আমার থেকে অনেক ছোট মেয়ের প্রতি দুর্বলতা সে ভার্চ্যুয়ালই হোক না কেন, ঠিক মনটা মেনে নিতে পারছে না। মনে পরে যাচ্ছে অমিতাভ আর জিয়া খানের একটা হিন্দি ফিল্ম দেখেছিলাম নিঃশব্দ। একটা আমারই মতো প্রৌঢ় মানুষের একটা অল্প বয়েসি মেয়ের প্রতি অদ্ভুত দুর্বলতার গল্প।
যাই হোক একদিন বিকেল বেলা তামান্নার সাথে গল্প করছি যথারীতি চ্যাট রুমের প্রাইভেটে। হটাৎ তামান্না একটু চুপ করে থেকে বললো, অরুন আজ তোমাকে একটা রিকুয়েষ্ট করবো, তুমি আজ রাতে ডিনারের পর ১১ টার সময় আমাকে লগ অন করো, কথা আছে।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে লগ আউট হয়ে গেলো। একটু অবাকই হয়ে গেলাম। যাক গে দেখা যাবে।
রাতে খেতে খেতে ১১ টা পার। তরি ঘড়ি নিজের ঘরে এসে আজ আর ফোনে নয় আমার ল্যাপটপে চ্যাট রুম লগ অন করে বসলাম। ইউসার লিস্টে তামান্নাকে খুঁজে পেলাম না। যাই হোক সময় কাটানোর জন্য মেইন ওয়ালে, এর তার সাথে কথা বলতে বলতে, রাত ১১.৩০। দেখি প্রাইভেট ওপেন্ড, তমান্নার মেসেজ, এসে গেছো? আমার একটু দেরী হয়ে গেল। আমি শুয়ে পরেছি, শুয়ে শুয়ে একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, আচ্ছা অরুন তুমি ভার্চুয়াল সেক্স কখনো শুনেছো? আমি তো অবাক হয়ে গেলাম ওর মুখে এই কথা শুনে। আগে কোনো দিন শুনিনি, এমন কি আমি ইয়ার্কি করে কিছু বলতে গেলে, ধমক খেতে হয়েছে। যাই হোক বললাম হা শুনেছি। এই সম্বন্ধে কিছু অথেনটিক লেখাও পড়েছি। তা হটাৎ তোমার মাথায় আজ ভার্চুয়াল সেক্সের ভুত চাপলো কেন? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, বললো, অরুন আজ যদি আমি তোমার কাছে পরিপূর্ণ আদর চাই তুমি দেবে? আজ শুধু আজকেই, আর কোনোদিন চাইবো না।
আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। কেমন যেন একটা আশঙ্কাও দানা বেঁধে উঠলো মনের ভেতর। আমার এই প্রৌঢ় মনের গভীরে একটি অপুর্ব সুন্দরী অল্প বয়েসী মেয়ের এই আমন্ত্রণ মন আর শরীর কে উত্তেজিত করার বদলে আরো কেন জানি নিস্তেজ করে দিয়েছিল।
সেই রাতের কথা আজো ভুলতে পারিনি। আমার অতিত অভিজ্ঞতা আর তমান্নার সহযোগিতা আমাদের দুজনকে পরিপূর্ণ ভাবে আমাদের দুজনের চাহিদাকে সম্পুর্ণ করেছিল। কিন্তু সারাক্ষণ আমার মনের ভেতর একটা খটকা লেগেই ছিল।
যাই হোক মনে একটা চিন্তা নিয়েই সকালে চ্যাট রুমের দরজা খুললাম। জানি তামান্নাকে এই সময় পাবো না। যথারীতি নেই। এই সব চ্যাট রুমের আরও অনেক অপশন আছে যেমন, যারা ফ্রেন্ড লিস্টে আছে তারা ইচ্ছে করলে ফ্রেন্ডস ওয়ালে মেসেজ বা ছবি রাখতে পারে।
আমিও সেই ভেবে ফ্রেন্ডস ওয়াল ওপেন করতেই দেখি আমার নামে তমান্নার একটা সর্ট মেসেজ রয়েছে। ওর বয়ানেই এখানে তুলে ধরলাম।
অরুন, তোমাকে কখনো দেখিনি, জানি অরুন নাম আর এই হিরো হিরো ছবিটা সবই মিথ্যে। আমিও মিথ্যে। এই অদ্ভুত, কাল্পনিক জগতটা কেমন কল্পনায় সত্যি হয়ে ওঠে। তা বলে ভেবো না, আমার তোমার ওপর ভালোবাসাটাও কাল্পনিক আর মিথ্যে, আর মিথ্যে নয় বলেই আজ তোমার কাছে বিদেয় নিতে এসেছি। অরুন তুমি যে রকম ই হয়ে থেকে থাকো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। এও জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। জানো আমাদের ভালোবাসা দুটো প্যারালাল লাইনের মত, যা কোনো দিন একটা বিন্দুতে মেলে না। আমাদের ভালোবাসাও কোনোদিন পূর্ণতা পাবে না। তাই চলে যাচ্ছি তোমার কাছ থেকে। আগামী সোমবার আমার বিয়ে। ক্যানাডা নিবাসী এন আর আই ছেলে। বিয়ের পর ওর সাথে ক্যানাডা চলে যাবো। জানি সুদূর ক্যানাডা থেকেও এক ক্লিকে এই গল্প করার ঘরে ঢুকে পরা যায়। আমি ইচ্ছে করেই আর কোনো চ্যাট রুমে ফিরে আসতে চাই না। আমার এখানকার একাউন্ট আমি ডিলিট করে দিয়েছি। তোমার মিষ্টি স্মৃতি নিয়ে একজন মনের মানুষের হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই। পারোতো ভুলে যেও। কষ্ট পেওনা মনে, ভেবো তোমার বন্ধু তোমার স্মৃতি টুকু নিয়ে ভালোই থাকবে। জানি না হয়তো তুমি আমার থেকে অনেকই বড় ই হয়ত হবে তাই যাবার বেলা তোমার দুটি পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে যাচ্ছি। ভালো থেকো গো। অরুন তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।.... …এখানেই শেষ।
তমান্নার রেখে যাওয়া জীবনের শেষ মেসেজ টা পড়তে পড়তে এই বৃদ্ধ মানুষটার চোখ দুটোও কেমন জলে ভড়ে উঠছিল।.............
এই বৃদ্ধ মানুষটার জীবনের অনেক স্মৃতির সাথে তামান্নার স্মৃতি টুকুও অমলিন হয়ে থাকবে মনের মণিকোঠায়। ...............
শেষ