Bose Arun
Favoured Frenzy
আমার এই " একটি হত্যা " গল্পটি আজকের পশ্চিম বাংলার বহু চর্চিত দুবছর আগের অনুপম হত্যা মামলার ওপরে লেখা। শুধুমাত্র থিম টুকু ছাড়া পুরোটাই আমার কল্পনা। বহরে একটু বড় হয়ে গেছে, তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
** একটি হত্যা **
দু বছর অতিক্রান্ত, অনেক তদন্ত, একত্রিশ জনের সাক্ষ্য গ্রহন আর মাঝে মাঝে শুনানির পর অবশেষে পঁচিশে
জুলাই দিপক হত্যার মামলায় সনিয়া আর অসিত কে দোষী সাব্যস্ত করেছে বারাসত ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারপতি জাস্টিস অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি । যে হত্যার কাহিনী সারা পশ্চিম বাংলায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আজ ছাব্বিশ জুলাই সেই মামলার রায় দান। সকাল থেকে সাজো সাজো রব অসংখ্য মানুষের ভীড় আদালত চত্তরে হাতে নানা রকম ফাঁসির দাবিতে লিখিত প্ল্যাকার্ড। নিউজ চ্যানেল গুলোতে ব্রেকিং নিউজ আদালত ক্যাম্পাসে বুম মাইক আর ভিডিও ক্যামেরা হাতে সাংবাদিক দের আনাগোনা। সনিয়া আর অসিত কে পেছনের দরজা দিয়ে বারাসত আদালতের ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের লক আপে নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই উদগ্রীব কখন রায় ঘোষণা হবে।
ঘটনার সুত্রপাত আজ থেকে সাড়ে তিন চার বছর আগের। ওপার বাংলাদেশের যশোরের এক গ্রামের সুখী পরিবার বাবা মা আর তাদের এক পুত্র সন্তান। চাষ বাস করে সচ্ছ্বল জীবন যাত্রা। ছেলের নাম দিপক সিংহ। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা। যশোর কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে কলকাতার বারাসতে এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে একটা এমএনসি কোম্পানির সেলসম্যান এর চাকরি জোগাড় করে নেয়। মা বাবা যশোরেই থাকে। মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে চলে যায় দিপক। নিস্তরঙ্গ সুন্দর জীবন সিংহ পরিবারের। তিন জনের সংসার, ছেলেও এখন সুউপায়ী। তাই কয়েক বছরের মধ্যেই বারাসতেই কয়েক কাঠা জমি কিনে বন্ধুর বাড়ির কাছেই দিপক একটা ছিমছাম বাড়ি করে। মাঝে মাঝে মা বাবা এসে থাকে। দিপকও কখনো কখনো দেশের বাড়িতে যায়। সুখে দিন কাটে সিংহ পরিবারের। ছেলের বয়েস হয়ে যাচ্ছে আর একা একা কলকাতায় থাকে তাই মা বাবা দিপককে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। সব দিক বিবেচনা করে দিপক রাজি হয়ে যায় বিয়ের জন্য। অনেক খোঁজা খুঁজির পর পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবশেষে একটি সুন্দরী ছিমছাম পাত্রী পছন্দ হয় দিপকের মা বাবার। দিপকেরও খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েটিকে, নাম সনিয়া মজুমদার। কলকাতার যাদবপুর অঞ্চলের বাসিন্দা সনিয়া কলেজে থার্ড ইয়ার থাকতে থাকতেই দিপকের সাথে বিয়েটা পাকা হয়ে যায়। ছোট বেলা থেকেই সনিয়ার বিলাসিতার প্রতি একটা লোভ ওর মধ্যে একটু উগ্র মানসিকতার জন্ম দিয়েছিল। ভালো ভালো হোটেলে খাওয়া, বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ফুর্তি দামী মোবাইল জামা কাপড় ড্রেস ওকে আকৃষ্ট করতো। কিছুটা উশৃংখল জীবন লিড করতে ভালোবাসত। তাই যখন দিপকের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ টা এসেছিল, রাজি হয়ে গিয়েছিল এই ভেবে যে কি হবে পড়াশোনা করে তার থেকে দিপকের মতো সুন্দর একটি সুউপায়ী ছেলেকে বিয়ে করে আনন্দে ফুর্তিতে জীবনটা কাটিয়ে দেবে। সনিয়ার বাবাও সঠিক পথের পথিক ছিলেন না। বাড়িতেই রোজ ড্রিংকের আসর বসাতো। বাপ মেয়েতে মাঝে মাঝেই রাতে নেশা করতো। সনিয়া যতক্ষণ বাড়িতে থাকতো, ফেসবুক হোয়াটাস এপে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মশগুল হয়ে থাকতো। ছেলেদের ব্যাপারে কোনো শুচিবায়ু ছিল না ওর। প্রচুর ছেলে বন্ধু ছিল। কারুর ওপর সনিয়ার কোনো রকম প্রেম ভালোবাসার বালাই ছিল না। শারীরিক চাহিদাটাই ওর কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ হেন সনিয়া বিয়ের ব্যাপারে রাজি হয়ে গেলো। প্রথম কারন বারাসতে নিজের বাড়িতে দিপক একলা থাকে, তার ওপর দিপকের ঘুরে বেড়ানোর কাজ, কখনো কখনো দু এক দিনের জন্য কলকাতার বাইরেও যেতে হয়। খালি বাড়িতে ছেলে বন্ধুদের সাথে ফুর্তির কোনো বাঁধা থাকবে না। সনিয়াকে দেখলে কেউ বুঝতেও পারবেনা ওর মনের ভেতরের কালো অন্ধকারের দিক গুলো। ওর মিষ্টি মুখ আর সব সময় প্রানবন্ত চলাফেরা সবাইকে এক নিমেষে মুগ্ধ করে দিত।
যথা সময়ে দুজনের বিয়েটা হয়ে গেলো। এপার বাংলা ওপার বাংলার সব আত্মীয় সজনদের নিয়ে জাকজমক করে দিপক সনিয়াকে ঘরের বৌ করে আনলো। দিন কেটে যায় দুজনের আনন্দে সোহাগে। কিছু দিন যেতে না যেতেই সনিয়ার মধ্যে আবার ওর বিয়ের আগের জীবন ফিরে আসা শুরু হলো। দিপক সকাল বেলায় বেড়িয়ে যায় ফিরতে ফিরতে রাত আটটা নটা বেজে যায়। সনিয়াও
কিছু একটা ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে বাড়িতে তালা মেরে সেজে গুজে বেড়িয়ে পরে। দিপক কখনো কখনো একটু তারাতারি ফিরে দেখে বাড়ি লক করা। ডুপলিকেট চাবি দিপকের কাছে থাকে। অনেক দিন দিপক সনিয়াকে বকাঝকা করেছে ওর সারা দিন মোবাইলে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে মসগুল হয়ে থাকার ব্যাপারে। আর ও সারা দিন কোথায় যায় কি করে তা নিয়েও মাঝে মাঝে দু জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হোত। সনিয়া অত্যন্ত চালাক মেয়ে, দিনের বেলার মনোমালিন্য দিপকের কিছুটা সন্দেহ সব রাতের বেলায় বিছানায় জল করে দিতো দিপককে আদরে সোহাগে।
এই ভাবে একটা একটা করে দিন কেটে যায়। সনিয়ার বিয়ের আগের জীবনের এক প্রেমিক ছিল অসিত, যাদবপুরের কাছেই বাঘাযতিনে থাকতো অসিত। অসিতের সাথে সনিয়ার অনেক দিনের পরিচয়। অসিত খুব সাধারন একটা চাকরি করতো। অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির ছেলে ছিল অসিত। মদ্যপ, উশৃংখল জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত। চাকরির জন্য একটা মোটর বাইক কিনেছিল অসিত। এ হেন অসিত কে সনিয়ার খুব ভাল লাগতো। অসিতের লাগামহীন উশৃংখল জীবনটাই সনিয়াকে বেশি আকর্ষণ করতো। বিয়ের আগে অসিতের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল সনিয়া। বিয়ের জন্য সেই সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পরেছিল।কিন্তু বিবাহিত জীবন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পর আবার অসিতকে কাছে টেনে নিয়েছিল সনিয়া। মাঝে মাঝেই দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার পর অসিত চলে আসত বারাসতে সনিয়ার শ্বশুর বাড়িতে। ফাঁকা বাড়ি শুরু হয়ে যেত অসিত আর সনিয়ার প্রেম লীলা। পাড়ার আশে পাশের অতি কৌতুহলি মহিলারা ব্যাপারটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বেশ রসালো আলোচনাও করতো। দিপকের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে রায়েদের দোতলা বাড়ি দুটো বাড়ির এপ্রোচ রোড টা খুবই ন্যারো। গলিটার দুপাসে একতলা দোতলা সব বাড়ি একটু গিয়েই গাড়ি চলার রাস্তায় মিলেছে। স্বভাবতই দিপকের বাড়ির গলিটা একটু নিরিবিলি। দিপকের বাড়ির উল্টো দিকের রায়েদের বাড়ির ছোট ছেলে বুবাইয়ের বয়স দশ বছর। সব বন্ধুদের মোবাইল ফোন আছে বায়না ধরাতে বাবা ওকে একটা কম দামী স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছিল। তাতে বুবাইয়ের ফটো তোলা আর ভিডিও করা রীতিমতো একটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল।
২০১৭ সালের ২ রা মে মঙ্গলবার খেয়ে দেয়ে দিপক বেড়িয়ে যায় কাজে। সারাদিন মার্কেট বিকেলের দিকে রিজিওনাল অফিসে কিছু পেপার ওয়ার্ক সেরে তবেই বাড়ি ফিরবে। সাধারণত লাঞ্চ টা বাইরেই করে নেয় দিপক। আজও সেই প্রোগ্রাম নিয়েই বেড়িয়েছে। দুপুর বেলা ঠিক একটার সময় দিপককে সনিয়া ফোন করে বললো যাদবপুর থেকে মায়ের ফোন এসেছিল বাবার শরীর হটাত খারাপ হয়েছে তাই ও বাড়ি তালা দিয়ে যাদবপুর যাচ্ছে, আজ আসবে না কাল সকালে ফিরবে। দিপক যেন আজ একটু তারাতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসে।
পরের দিন ৩রা মে বুধবার সকাল এগারোটার নাগাদ সনিয়া ফিরে আসে
বারাসতের বাড়িতে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। দেখে বাড়ির মেইন গ্রীলের দরজাটা তালা বন্ধ, ভেতরে ঢুকতেই দেখে বাড়ির মধ্যে যাওয়ার কাঠের দরজাটা ভেজান। অবাক হয়ে যায় সনিয়া। তবেকি দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার সময় দরজাটা লক করতে ভুলে গেছে? তারাতাড়ি বাবাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকে সনিয়া। নিস্তব্ধ সারা বাড়ি। কেমন যেন গা ছমছমে অনুভূতি। তারাতারি করে বেড রুমে ঢোকে সনিয়া বাবাকে নিয়ে। অন্ধকার ঘর জানলা গুলো সব আটকানো । হাতরে হাতরে লাইটের সুইচ অন করে সনিয়া, আলো জ্বলতেই মেঝের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে সনিয়া। মেয়ের চিৎকার শুনে সনিয়ার বাবা তারাতারি ঘরে ঢুকে দেখে, এটাচড বাথরুমের সামনে ঘরের মেঝেতে উপুর হয়ে পড়ে আছে দিপক। গালটা মেঝেতে, মাথার চারপাশে রক্ত আর রক্ত। মাথার পেছন দিকটা থ্যাতলানো, ডান হাতের কব্জি দিয়েও রক্তের স্রোত। এক নজরে দেখেই বোঝা যায় দেহে প্রান নেই। সকাল এগারো টার সময় সনিয়াদের বাড়িতে চিৎকার চ্যাচামেচি শুনে আশেপাশের বাড়ি থেকে সবাই দৌড়ে আসে। দিপককে ওই ভাবে রক্তে মাখামাখি অবস্থায় মৃত দেখতে পেয়ে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়।
পাড়ারই কেউ একজন বারাসত পুলিশ স্টেশনে ফোন করে দেয়। আধ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ আধিকারিক রা পৌঁছে যায় দিপকের বাড়িতে। পাড়ার মহিলারা সনিয়াকে ধরে বসার ঘরে নিয়ে আসে। সনিয়া কেঁদেই চলেছে, মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছে।
অনেক্ষণ সারা ঘরের সব কিছু তদন্ত করে দেখে পুলিশ আধিকারিক রা যে ঘরে মানে মার্ডার হয়েছে সেই বেডরুম টা সিল করে দিয়ে দিপকের ডেড বডিটা পোস্টমর্টমের জন্য পাঠিয়ে দেয়।বাড়ির মেন গ্রীলের দরজাটাও পুলিশ সিল করে দেয় আর গ্রীলে যে তালাটা লাগানো ছিল সঙ্গে করে নিয়ে যায়। সনিয়ার বাবা সনিয়াকে নিয়ে বারাসাত পুলিশ কমিশনারটে গিয়ে স্বামী দিপকের হত্যার এফয়াইয়ার ফাইল করে বাবার সাথে কলকাতায় যাদবপুর চলে যায়।
দিপক হত্যা কেসটার দায়িত্ব পান বারাসত পুলিশ কমিশনারেটের অভিজ্ঞ সেকেন্ড অফিসার অভিক ঘোষ। মার্ডারের পরের দিন থেকে উনি নেমে পরেন কেসটা নিয়ে। প্রথমেই খুঁটিয়ে দেখেন দিপকের ডেড বডির পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট। মাথার পেছন দিকে লোহার রড বা শাবল যাতিয় কিছু দিয়ে বারবার এমনভাবে আঘাত করেছিল যে স্কাল থেতলিয়ে কিছু অংশ ভেতরে ঢুকে গেছে। মাথার আঘাতেই মৃত্যু। ডান হাতের শিরা কেন কাটা হলো রিপোর্টে বলা হয়েছে দিপকের মৃত্যু এনসিওর করার জন্য।
বিভৎস ব্রুটাল মার্ডার। অবাক হয়ে ভাবে ঘোষ বাবু, মানুষ এত নৃশংস হয় কি করে। এর মধ্যে দু দিন সহকারী কে নিয়ে দিপকের পুরো বাড়ি পুংখ্যানুপুংখ্য ভাবে সার্চ করেছেন, তেমন কিছু ক্লু চোখে পরে নি। পেছনের দেয়াল দেয়া খালি জায়গায় ঝোপের মধ্য থেকে একটা বিদেশী খালি মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। ঘোষ বাবু, মদের বোতল আর দিপকের বাড়ির তালা দুটোই ফরেনসিকে পাঠিয়ে দিয়েছে,কোনো ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া যায় কিনা তার জন্য। দেখতে দেখতে খুনের পর তিন দিন কেটে গেছে, অফিসার ঘোষ সাহেব কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না। কিন্তু অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার ভালো করেই জানেন কোনো ক্রাইম কখনোই ফুল প্রুফ হয় না। মার্ডারার কিছু না কিছু ক্লু রাখবেই। তাহলে কি ক্লু তার চোখের সামনে কিন্তু তিনি দেখতে পাচ্ছেন না?
খুন হওয়া দিপক সিনহার বাড়ির উল্টো দিকের রায় বাবুদের বাড়ি। রায় বাবু পেশায় এডভোকেট, বারাসাত ডিষ্ট্রিক্ট কোর্টে প্র্যাক্টিস করেন। ছেলের আবদারে একটা মোবাইল ফোন কিনে দিয়ে মিসেস কে খুব বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন। রোজ রাতে পড়তে বসার আগে বুবাই মাকে আজ সারা দিন কি কি ছবি তুলেছে, কি কি ভিডিও করেছে দেখাতে হবে। সেই ভাবে ৩ তারিখ দিপক খুনের পরের দিন সন্ধ্যা বেলায় মাকে ফোনের এলবাম দেখাচ্ছে। মিসসেস রায় ছেলের সেদিনের ভিডিও গ্রাফি দেখতে দেখতে একটা ভিডিওতে থমকে গেলেন। ভিডিও টা দোতলার ব্যালকোনি সামনে রাস্তার দিক থেকে তোলা। ঠিক দিপকদের বাড়ির সামনের গ্রীলের দরজার সামনে দুটো কুকুর খুব ঝগড়া করছে, বুবাই সেই দৃশ্য টা ফুল ভিডিও করেছে। সেটা দেখে মিসেস রায় থমকান নি, দেখেন একজন লোক ঠিক মুখটা বোঝা যাচ্ছে না, দিপকদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কাঠের দরজাটা ভেজিয়ে দিল, তারপর গ্রীলের দরজায় একটা তালা লাগিয়ে দিপকদের বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে গেলো, একটু পরে কুকুর দুটোর চিৎকারের সাথে একটা মোটর বাইকের আওয়াজ, ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। মনের মধ্যে একটা খটকা। সনিয়া তো সেদিন কলকাতায় ছিল তাহলে ওদের বাড়ি থেকে কে বেড়িয়ে গেল? রাত্রি বেলায় মিষ্টার রয় কে ভিডিও টা দেখাতেই উকিল বাবুতো লাফিয়ে উঠলেন। সকাল হতেই মিষ্টার মিসেস রায় বুবাইএর মোবাইল নিয়ে সোজা বারাসাত পুলিশ কমিশনারেটে হাজির অফিসার অভিক ঘোষের কাছে।
অফিসার অভিক ঘোষ ভিডিওটা বার বার করে দেখলেন রায় বাবুদের টুক টাক প্রশ্ন করলেন। একজন এসিস্ট্যান্ট কে ডেকে ভিডিও টা থানার কম্পুটারে ট্রান্সফার করে নিলেন। বুবাইয়ের মোবাইলটা ফেরত দিয়ে রায় বাবুকে বললেন ভিডিও টা ডিলিট না করতে। রায় বাবুদের থানায় বসিয়ে রেখে থানার কম্পুটার অভিজ্ঞ অফিসার কে দিয়ে ভিডিওর ছেলেটির অনেক গুলো বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবির প্রিন্ট বের করে, রায় বাবুদের হাতে দিয়ে বললেন দেখুনতো চিনতে পারেন কি না। এনলার্জড ছবি গুলো দেখে মিসেস রায় চমকে উঠলেন। আরে এই তো সেই ছেলেটি যে মাঝে মাঝেই দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার পরে সনিয়ার কাছে আসতো। মনে পরে গেলো ছেলেটিও তো মোটর বাইকে আসতো, এখানেও ভিডিওতে বাইকের আওয়াজ শোনা গেছে। অফিসার কে সব বলতে অফিসার ঘোষ সব নোট করে নিলেন। মিষ্টার মিসেস রায় কে খুব ধন্যবাদ দিয়ে বললেন আপনাদের প্রতিবেশী দিপক বাবুর খুনের কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আপনাদের ছোট্ট ছেলে বুবাই মরুভূমির মাঝে জলের খোঁজ দিলো। ও না বুঝে কলকাতা পুলিশ কে যে কি হেল্প করলো বোঝাতে পারবো না আপনাদের।
এবারে পরবর্তী ঘটনা পুলিশ অফিসার অভিক ঘোষের মুখে শুনুন।
রায় ফ্যামিলি থানা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর, ভিডিওর ছেলেটির ছবি গুলো দেখতে দেখতে ভাবছিলাম খুনের মটিভ আমি মনে মনে যা ভাবছিলাম তাই? ত্রিকোণ প্রেমের পরিনতি। যাক দু দিনের মধ্যেই খুনের একটা ঠোস ক্লু পেয়ে গেলাম। আমার মনটা এত খুশি হয়ে গেল মনে হচ্ছে মনের মধ্যে ক্যাডবেরির লাড্ডু ফাটলো। খবর দেয়ার জন্য দিপকের স্ত্রী সনিয়ার ফোন নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিলাম, অবস্য ওর করা এফ আই আরের মধ্যেও ওর নাম্বার আছে। আর দিপকের খুনের ব্যাপারে দিপকের স্ত্রী সনিয়ার দিক থেকেও সন্দেহ সরাতে পারছি না। আগে ছেলেটির পরিচয় জানতে হবে। সনিয়ার সাথে সম্পর্ক কি যে কিনা মাঝে মাঝে একা বাড়িতে বারাসতে সনিয়ার সাথে দেখা করতে যেত। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সঙ্গে সঙ্গে যাদবপুর থানার ওসির সাথে ফোন করে কিছু হেল্প চাইলাম। যাতে একজন চব্বিশঘণ্টা সনিয়ার গতিবিধির ওপরে নজর রাখবে আর আমাকে আপডেট করবে। নেক্সট লাল বাজার সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট, গত এক মাসের সনিয়ার মোবাইলের কল লিস্ট। এই দুটো স্টেপ নিয়ে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। জম্পেশ করে একটা সিগারেট ধরিয়ে রায় বাবুদের বাড়িতে ফোন করে বুবাইকে ধরলাম। খানিক্ষন ওর সাথে গল্প করে, ওকে কমিট করলাম, যে দিপক হত্যার কেস টা সুরাহা হয়ে গেলে পুলিশের তরফ থেকে ওকে একটা হাই পিক্সেল ক্যামেরা মোবাইল ফোন প্রেজেন্ট করা হবে। সব কিছু ডাটা জোগার করতে করতে বারো দিন লেগে গেলো। খুনের তেরো দিনের দিন সকালে আমরা বারাসত থানার তিন জন যাদবপুর থানার তিন অফিসার কে নিয়ে সনিয়ার বাপের বাড়ি থেকে সনিয়াকে আর বাঘাযতিন থেকে সনিয়ার প্রমিক অসিত কে এরেস্ট করলাম।
আর এখন বারাসত থানা নয় সোজা লালবাজার লক আপ। ১৫ ই মে শুরু হলো ম্যরাথন জেড়া। আলাদা আলাদা করে দুজনকে। রাত্রি বেলা ঘুম থেকে তুলে জেড়া তিন দিক থেকে তিন জন অফিসার। ইতি মধ্যে সনিয়ার মোবাইলের কল লিস্ট আমার হাতে এসেছে। মাঝে মাঝেই সনিয়া অসিত কে ফোন করতো। সে দিন দু ই মে সকালে একবার দুপুরে একবার আর রাতে একবার সনিয়া অসিতকে ফোন করেছিল। দু এক দিনের মধ্যে মদের বোতলে আর গেটের তালার ওপরে অসিতের ফিংগার প্রিন্ট ফরেনসিক ডিটেক্ট করেছে। প্রমান একুমুলেশন হচ্ছে আর চলছে জেড়া। অবশেষে ফিফথ ডে তে অসিত ভেঙে পড়লো। স্বীকার করলো সনিয়ার কথাতে দিপককে ওই খুন করেছে। পুলিশের জেড়ায় পেঁয়াজ ছাড়নোর মতো ধীরে ধীরে যে কাহিনি বেড়িয়ে এলো শুনে সাধারণ মানষেরা তো দুরস্ত জাদরেল সব পুলিশ অফিসার রাও হতভম্ব। পৃথিবীর ইতিহাসে রেয়ারেস্ট অফ দি রেয়ার একটা মার্ডার।
অসিতের বয়ানে, বিয়ের আগে থেকেই সনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক। তবে সেই সম্পর্ক মানষিক নয় শারীরিক। অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক আছে কিন্তু সনিয়ার মত এত কামূক মেয়ে আমি দেখিনি। ছলাকলায় পটিয়শী এক নিমেষেই পুরুষদের আকৃষ্ট করে নিতে পারে। যাই হোক ধীরে ধীরে সনিয়ার মোহ জালে আষ্টেপৃষ্টে বন্দী হয়ে গিয়েছিলাম।
এক দিন দেখলাম সনিয়া বিয়ে করে বারাসতে শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। বলতে নেই খুব ভেঙ্গে পরেছিলাম এমন একটা মোহিনী নারী। মাস ছয়েক বাদে সনিয়ার ফোন। আবার শুরু আমাদের শারিরীক মিলন সনিয়ারই বারাসতের বাড়িতে। এইভাবে বছর খানেক চলছিল কিন্তু এরই মাঝে দুবার সনিয়ার হাসব্যান্ড আমাদের দুজনকে খুব খারাপ অবস্থায় দেখে ফেলেছিল। সনিয়ার কাছেই শুনেছিলাম, ওর আর ওর বরের সম্পর্কের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি লেগেই আছে। সনিয়া কোনো দিন কোনো ছেলেকে ভালোবাসতে পারত না ওর কাছে সেক্স আর টাকা এই দুটোই ছিল মেইন। আমি এক দিন বলেছিলাম এক কাজ করো দিপককে ডিভোর্স দাও তার পর চলো তুমি আর আমি বিয়ে করি। ও বলেছিল না তা হবে না, দিপকের অবর্তমানে বাড়ির মালিক হবে ও। এই মুহুর্তে ওই বাড়ির দাম এক কোটির মতো। তার সাথে দিপকের পঁচিশ লাখ টাকার মতো ইন্সুইরেন্স এর নমিনি ও। দিপক ভালোবেসে বিয়ের পরে পরেই ওকে নমিনি করে দিয়েছে। তাই এমন একটা প্ল্যান করতে হবে যে দিপকের হাত থেকেও মুক্তি আর দিপকের সব সম্পত্তি ওর।
অসিত জানতো ওর সমস্ত কনফেসের ভিডিও রেকর্ডিং হয়ে যাচ্ছে।
সে দিন ২রা মে, সকাল বেলায় দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই সনিয়া অসিত কে বারাসত আসতে বলে সাথে দুবোতল মদ নিয়ে। অসিতের কথায় আমি মোটামুটি বারোটার নাগাদ সনিয়ার বাড়িতে পৌঁছেছিলাম। সেদিন আমরা দুজনে দুপুরেই বিছানায় শারীরিক ভাবে মিলিত হয়েছিলাম, সেই মিলনের সময়েই আমার কানে কানে সনিয়া ফিসফিস করে বলেছিল আজ তোমাকে দিপককে শেষ করে দিতে হবে। আমি আজই দিপকের হাত থেকে মুক্তি চাই। পাথরের মতো দিপক চেপে আছে আমার বুকে।
তারপর এক ঘন্টা আমরা দুজনে প্ল্যান করে ফেললাম সনিয়া আমাকে এটাচড বাথরুমে রেখে বাইরের দুটো দরজা তালা দিয়ে চলে যাবে। শুধু গ্রীলের দরজার একটা ডুপ্লিকেট চাবি আমাকে দিয়ে যাবে। যাতে কাল সকালে আমি বাইরের থেকে তালা দিয়ে চলে যেতে পারে। একটা শাবল আর একটা সার্প ছুড়ি আমাকে দিয়ে বললো শাবল দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করতে তাতেও যদি কাজ না হয় ছুড়ি দিয়ে কব্জির শিড়া কেটে দিতে।
এই কথা গুলো যখন হচ্ছিলো আমরা দুজন আমার আনা এক বোতল মদ শেষ করছি। এর পর সনিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে যে আব্দারটা করলো সেটা শুনে আমার মতো একটি লম্পট ছেলেও চমকে উঠেছিলাম। বললো অসিত আমি নিজের চোখে দেখতে চাই দিপকের মৃত্যু, শুনতে চাই ওর শেষ আর্তনাদ। তাই আমি তোমার মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও চ্যাট সেট করে যাবো , আমার নাম্বারে, যখন দিপক ঘরে ঢোকার জন্য তালা খুলবে তুমি ভিডিও অন করে দেবে।
আমরা সেদিন মোবাইলে ভিডিও সেটিং করে কয়েকবার রিহার্সেল করেছিলাম। দেখতে দেখতে পাঁচটা বেঁজে গিয়েছিল। আরো একবার সনিয়ার চাহিদা মতো আমরা বিছানায় মিলিত হয়ে ছিলাম। তার পর আমার সামনে দিপককে ফোন করে বলে, বাবার শরীর খারাপ, তাই ও কলকাতা যাচ্ছে, কাল ফিরবে। রঙমঞ্চ তৈরি। হা বেড রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাখতে বলেছিল যাতে ভিডিওটা স্পষ্ট ও দেখতে পায়।আমি একদম ওর কথা মত তাই করেছিলাম, তখন আমার মাথার ভেতর মদের একশন আর সনিয়ার শরীরের নেশা দুটো মিলে আমি কি করছি বোঝার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কথা গুলো বলে অসিত কান্নায় ভেঙ্গে পরে বার বার বলতে থাকে আমাকে ফাঁসি দিন, তবে আমার চাইতেও ঘৃন্য অপরাধী সনিয়া। ওকে ক্ষমা করবেন না।।
পুলিশ অফিসার অভিক ঘোষের কথায়। আমি আজ ত্রিশ বছর পুলিশে চাকরি করছি। দিপক হত্যা কেসে আমি আই ও। আজ অসিতের যে কনফেস দিপক কে মার্ডার করার ব্যাপারে শুনে আমাদের মতো পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারদের ও স্তব্ধ করে দিয়েছে। যাই হোক সব এভিডেন্স জোগার হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান হোয়াটসঅ্যাপ অথরিটি কে গভর্নমেন্ট এর সাইবার সেল থেকে রিকুয়েস্ট করে কয়েক দিনের মধ্যেই সেকেন্ড মের মার্ডারের ভিডিও টা আনিয়ে নিয়েছিলাম। ওদের আর্কাইভে ছিল।
এর পর নিয়ম মতো অসিত রায় আর সনিয়া মজুমদারের নামে বারাসত ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে ৩০২ আর ১২০বি ধারাতে মার্ডার চার্জ শিট দাখিল করে দিলাম।
দুবছর অনেক শুনানি একত্রিশ জনের সাখ্য, সব শোনার পর গত কাল পঁচিশে মে বারাসত ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি অসিত রায় আর সনিয়া মজুমদার কে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আজ ছাব্বিশ মে আজ দিপক মার্ডার কেসের রায় দান।
সারা আদালত লোকে লোকারণ্য। টিভিতে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ। আদালত চত্তরে লাইভ ইন্টারভিউ দিপকের মাকে। ঠিক দুপুর বারোটার সময় রায় ঘোষণা করবেন জাস্টিস অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি, যিনি প্রথম থেকে দিপক হত্যা মামলার বিচারপতি।
বারাসতের ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের এজলাসে তিল ধারনের জায়গা নেই। অসিত আর সনিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিচারপতি দিপকের মা বাবাকে ডেকে নিয়েছে এজলাশে। বারোটা বাজে, আজ আর কোনো শুনানি নয়, নয় কোনো বাদি বিবাদির আইনের কচকচানি।
জাস্টিস ব্যানার্জি শুরু করলেন, গত কাল আমি এই দুজন অভিযুক্তদের দোষি সাব্যস্ত করেছি। আজ রায় ঘোষণা করবো। আমি মনস্থির করে রায় রেডি করেছি শুধু সই করা বাকি। আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি আমার ভারত বর্ষের বিচার বিভাগে আজ চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত। আমার এডভোকেট জীবনে বা আমার আজকের বিচারপতির জীবনে কখনো এই রকম হত্যা মামলার রায় দিতে হয় নি। ইটস রেয়ার অফ দি রেয়ারেস্ট কেস। বাংলা তে যাকে বলে বিড়ল থেকে বিড়লতম কেস।
পুরো এজলাসে পিন ড্রপ সাইলেন্স।
একটু থেমে বিচারপতি আবার শুরু করলেন, আমরা মেয়েদের আমাদের ভারতীয় সমাজে অনেক উচুতে স্থান দিয়েছি, তারা কখনো মা কখনো বোন কখনো স্ত্রী। তারাই মা হয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে এই পৃথিবীতে প্রানের স্পন্দন কে বাঁচিয়ে রেখেছে। তারাই আবার মা দূর্গা হয়ে মা চামুণ্ডা হয়ে অসুর বিনাশ করে ত্রিলোক রক্ষা করে। সেখানে আজ দিপক হত্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে সেই নারীকে সনিয়া রূপে দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারি নি। ওরা দুজন প্রেম ভালোবাসা বিয়ে সব কিছুর সংগা পালটিয়ে দিয়েছে,যার জন্য ওরা সমাজের কাছে অপরাধী, সামাজিক জীব হিসেবে ওদের গ্রহন করা যায় না। ওদের চরম শাস্তি প্রাপ্য। তাও ওদের দুজনের এত অল্প বয়েস মন মানছিল না ওদের চরম শাস্তি দিতে। কিন্তু যে নৃশংস ভাবে নারকীয় ভাবে বিয়ের দেড় বছরের বাদে শুধু মাত্র শারীরিক লালসা আর আর সেই লালশার পরিতৃপ্তির জন্য স্বামীর সব সম্পদের অধিকারী হওয়ার জন্য প্রেমিকের সাহায্যে নিজের স্বামীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে তাকে আর কিছু হোক ক্ষমা করা যায় না। আগেই বলেছি এই কেসটা রেয়ার অফ দি রেয়ারেস্ট কেস। তাই আমি ভগবানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে অসিম রায় আর সনিয়া মজুমদার কে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত করলাম। বোথ অফ দেম হেভ বিন সেন্টেন্সট টু ডেথ বাই হ্যাং টিল ডেথ।
বলে নিয়ম অনুযায়ী ঝড়না কলম দিয়ে ডেথ অর্ডার সাইন করে অর্ডারের হার্ড কপির ওপরে কলমের নিবটা ভেঙে দিয়ে এজলাস ছেড়ে নিজের চেম্বারের দিকে চলে গেলেন।
একেবারে নিঃস্তব্ধ পুরো এজলাস, স্তব্ধ হয়ে গেছে এজলাসের বাতাস। কখন যে পুলিশ সনিয়া আর অসিত কে বের করে নিয়ে গেছে কেউ বুঝতে পারে নি। হটাত দিপকের মায়ের বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ এজলাস আর আদালতের দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।
***************************************
** একটি হত্যা **
দু বছর অতিক্রান্ত, অনেক তদন্ত, একত্রিশ জনের সাক্ষ্য গ্রহন আর মাঝে মাঝে শুনানির পর অবশেষে পঁচিশে
জুলাই দিপক হত্যার মামলায় সনিয়া আর অসিত কে দোষী সাব্যস্ত করেছে বারাসত ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারপতি জাস্টিস অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি । যে হত্যার কাহিনী সারা পশ্চিম বাংলায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আজ ছাব্বিশ জুলাই সেই মামলার রায় দান। সকাল থেকে সাজো সাজো রব অসংখ্য মানুষের ভীড় আদালত চত্তরে হাতে নানা রকম ফাঁসির দাবিতে লিখিত প্ল্যাকার্ড। নিউজ চ্যানেল গুলোতে ব্রেকিং নিউজ আদালত ক্যাম্পাসে বুম মাইক আর ভিডিও ক্যামেরা হাতে সাংবাদিক দের আনাগোনা। সনিয়া আর অসিত কে পেছনের দরজা দিয়ে বারাসত আদালতের ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের লক আপে নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই উদগ্রীব কখন রায় ঘোষণা হবে।
ঘটনার সুত্রপাত আজ থেকে সাড়ে তিন চার বছর আগের। ওপার বাংলাদেশের যশোরের এক গ্রামের সুখী পরিবার বাবা মা আর তাদের এক পুত্র সন্তান। চাষ বাস করে সচ্ছ্বল জীবন যাত্রা। ছেলের নাম দিপক সিংহ। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা। যশোর কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে কলকাতার বারাসতে এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে একটা এমএনসি কোম্পানির সেলসম্যান এর চাকরি জোগাড় করে নেয়। মা বাবা যশোরেই থাকে। মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে চলে যায় দিপক। নিস্তরঙ্গ সুন্দর জীবন সিংহ পরিবারের। তিন জনের সংসার, ছেলেও এখন সুউপায়ী। তাই কয়েক বছরের মধ্যেই বারাসতেই কয়েক কাঠা জমি কিনে বন্ধুর বাড়ির কাছেই দিপক একটা ছিমছাম বাড়ি করে। মাঝে মাঝে মা বাবা এসে থাকে। দিপকও কখনো কখনো দেশের বাড়িতে যায়। সুখে দিন কাটে সিংহ পরিবারের। ছেলের বয়েস হয়ে যাচ্ছে আর একা একা কলকাতায় থাকে তাই মা বাবা দিপককে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। সব দিক বিবেচনা করে দিপক রাজি হয়ে যায় বিয়ের জন্য। অনেক খোঁজা খুঁজির পর পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবশেষে একটি সুন্দরী ছিমছাম পাত্রী পছন্দ হয় দিপকের মা বাবার। দিপকেরও খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েটিকে, নাম সনিয়া মজুমদার। কলকাতার যাদবপুর অঞ্চলের বাসিন্দা সনিয়া কলেজে থার্ড ইয়ার থাকতে থাকতেই দিপকের সাথে বিয়েটা পাকা হয়ে যায়। ছোট বেলা থেকেই সনিয়ার বিলাসিতার প্রতি একটা লোভ ওর মধ্যে একটু উগ্র মানসিকতার জন্ম দিয়েছিল। ভালো ভালো হোটেলে খাওয়া, বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ফুর্তি দামী মোবাইল জামা কাপড় ড্রেস ওকে আকৃষ্ট করতো। কিছুটা উশৃংখল জীবন লিড করতে ভালোবাসত। তাই যখন দিপকের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ টা এসেছিল, রাজি হয়ে গিয়েছিল এই ভেবে যে কি হবে পড়াশোনা করে তার থেকে দিপকের মতো সুন্দর একটি সুউপায়ী ছেলেকে বিয়ে করে আনন্দে ফুর্তিতে জীবনটা কাটিয়ে দেবে। সনিয়ার বাবাও সঠিক পথের পথিক ছিলেন না। বাড়িতেই রোজ ড্রিংকের আসর বসাতো। বাপ মেয়েতে মাঝে মাঝেই রাতে নেশা করতো। সনিয়া যতক্ষণ বাড়িতে থাকতো, ফেসবুক হোয়াটাস এপে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মশগুল হয়ে থাকতো। ছেলেদের ব্যাপারে কোনো শুচিবায়ু ছিল না ওর। প্রচুর ছেলে বন্ধু ছিল। কারুর ওপর সনিয়ার কোনো রকম প্রেম ভালোবাসার বালাই ছিল না। শারীরিক চাহিদাটাই ওর কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ হেন সনিয়া বিয়ের ব্যাপারে রাজি হয়ে গেলো। প্রথম কারন বারাসতে নিজের বাড়িতে দিপক একলা থাকে, তার ওপর দিপকের ঘুরে বেড়ানোর কাজ, কখনো কখনো দু এক দিনের জন্য কলকাতার বাইরেও যেতে হয়। খালি বাড়িতে ছেলে বন্ধুদের সাথে ফুর্তির কোনো বাঁধা থাকবে না। সনিয়াকে দেখলে কেউ বুঝতেও পারবেনা ওর মনের ভেতরের কালো অন্ধকারের দিক গুলো। ওর মিষ্টি মুখ আর সব সময় প্রানবন্ত চলাফেরা সবাইকে এক নিমেষে মুগ্ধ করে দিত।
যথা সময়ে দুজনের বিয়েটা হয়ে গেলো। এপার বাংলা ওপার বাংলার সব আত্মীয় সজনদের নিয়ে জাকজমক করে দিপক সনিয়াকে ঘরের বৌ করে আনলো। দিন কেটে যায় দুজনের আনন্দে সোহাগে। কিছু দিন যেতে না যেতেই সনিয়ার মধ্যে আবার ওর বিয়ের আগের জীবন ফিরে আসা শুরু হলো। দিপক সকাল বেলায় বেড়িয়ে যায় ফিরতে ফিরতে রাত আটটা নটা বেজে যায়। সনিয়াও
কিছু একটা ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে বাড়িতে তালা মেরে সেজে গুজে বেড়িয়ে পরে। দিপক কখনো কখনো একটু তারাতারি ফিরে দেখে বাড়ি লক করা। ডুপলিকেট চাবি দিপকের কাছে থাকে। অনেক দিন দিপক সনিয়াকে বকাঝকা করেছে ওর সারা দিন মোবাইলে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে মসগুল হয়ে থাকার ব্যাপারে। আর ও সারা দিন কোথায় যায় কি করে তা নিয়েও মাঝে মাঝে দু জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হোত। সনিয়া অত্যন্ত চালাক মেয়ে, দিনের বেলার মনোমালিন্য দিপকের কিছুটা সন্দেহ সব রাতের বেলায় বিছানায় জল করে দিতো দিপককে আদরে সোহাগে।
এই ভাবে একটা একটা করে দিন কেটে যায়। সনিয়ার বিয়ের আগের জীবনের এক প্রেমিক ছিল অসিত, যাদবপুরের কাছেই বাঘাযতিনে থাকতো অসিত। অসিতের সাথে সনিয়ার অনেক দিনের পরিচয়। অসিত খুব সাধারন একটা চাকরি করতো। অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির ছেলে ছিল অসিত। মদ্যপ, উশৃংখল জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত। চাকরির জন্য একটা মোটর বাইক কিনেছিল অসিত। এ হেন অসিত কে সনিয়ার খুব ভাল লাগতো। অসিতের লাগামহীন উশৃংখল জীবনটাই সনিয়াকে বেশি আকর্ষণ করতো। বিয়ের আগে অসিতের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল সনিয়া। বিয়ের জন্য সেই সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পরেছিল।কিন্তু বিবাহিত জীবন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পর আবার অসিতকে কাছে টেনে নিয়েছিল সনিয়া। মাঝে মাঝেই দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার পর অসিত চলে আসত বারাসতে সনিয়ার শ্বশুর বাড়িতে। ফাঁকা বাড়ি শুরু হয়ে যেত অসিত আর সনিয়ার প্রেম লীলা। পাড়ার আশে পাশের অতি কৌতুহলি মহিলারা ব্যাপারটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বেশ রসালো আলোচনাও করতো। দিপকের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে রায়েদের দোতলা বাড়ি দুটো বাড়ির এপ্রোচ রোড টা খুবই ন্যারো। গলিটার দুপাসে একতলা দোতলা সব বাড়ি একটু গিয়েই গাড়ি চলার রাস্তায় মিলেছে। স্বভাবতই দিপকের বাড়ির গলিটা একটু নিরিবিলি। দিপকের বাড়ির উল্টো দিকের রায়েদের বাড়ির ছোট ছেলে বুবাইয়ের বয়স দশ বছর। সব বন্ধুদের মোবাইল ফোন আছে বায়না ধরাতে বাবা ওকে একটা কম দামী স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছিল। তাতে বুবাইয়ের ফটো তোলা আর ভিডিও করা রীতিমতো একটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল।
২০১৭ সালের ২ রা মে মঙ্গলবার খেয়ে দেয়ে দিপক বেড়িয়ে যায় কাজে। সারাদিন মার্কেট বিকেলের দিকে রিজিওনাল অফিসে কিছু পেপার ওয়ার্ক সেরে তবেই বাড়ি ফিরবে। সাধারণত লাঞ্চ টা বাইরেই করে নেয় দিপক। আজও সেই প্রোগ্রাম নিয়েই বেড়িয়েছে। দুপুর বেলা ঠিক একটার সময় দিপককে সনিয়া ফোন করে বললো যাদবপুর থেকে মায়ের ফোন এসেছিল বাবার শরীর হটাত খারাপ হয়েছে তাই ও বাড়ি তালা দিয়ে যাদবপুর যাচ্ছে, আজ আসবে না কাল সকালে ফিরবে। দিপক যেন আজ একটু তারাতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসে।
পরের দিন ৩রা মে বুধবার সকাল এগারোটার নাগাদ সনিয়া ফিরে আসে
বারাসতের বাড়িতে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। দেখে বাড়ির মেইন গ্রীলের দরজাটা তালা বন্ধ, ভেতরে ঢুকতেই দেখে বাড়ির মধ্যে যাওয়ার কাঠের দরজাটা ভেজান। অবাক হয়ে যায় সনিয়া। তবেকি দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার সময় দরজাটা লক করতে ভুলে গেছে? তারাতাড়ি বাবাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকে সনিয়া। নিস্তব্ধ সারা বাড়ি। কেমন যেন গা ছমছমে অনুভূতি। তারাতারি করে বেড রুমে ঢোকে সনিয়া বাবাকে নিয়ে। অন্ধকার ঘর জানলা গুলো সব আটকানো । হাতরে হাতরে লাইটের সুইচ অন করে সনিয়া, আলো জ্বলতেই মেঝের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে সনিয়া। মেয়ের চিৎকার শুনে সনিয়ার বাবা তারাতারি ঘরে ঢুকে দেখে, এটাচড বাথরুমের সামনে ঘরের মেঝেতে উপুর হয়ে পড়ে আছে দিপক। গালটা মেঝেতে, মাথার চারপাশে রক্ত আর রক্ত। মাথার পেছন দিকটা থ্যাতলানো, ডান হাতের কব্জি দিয়েও রক্তের স্রোত। এক নজরে দেখেই বোঝা যায় দেহে প্রান নেই। সকাল এগারো টার সময় সনিয়াদের বাড়িতে চিৎকার চ্যাচামেচি শুনে আশেপাশের বাড়ি থেকে সবাই দৌড়ে আসে। দিপককে ওই ভাবে রক্তে মাখামাখি অবস্থায় মৃত দেখতে পেয়ে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়।
পাড়ারই কেউ একজন বারাসত পুলিশ স্টেশনে ফোন করে দেয়। আধ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ আধিকারিক রা পৌঁছে যায় দিপকের বাড়িতে। পাড়ার মহিলারা সনিয়াকে ধরে বসার ঘরে নিয়ে আসে। সনিয়া কেঁদেই চলেছে, মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছে।
অনেক্ষণ সারা ঘরের সব কিছু তদন্ত করে দেখে পুলিশ আধিকারিক রা যে ঘরে মানে মার্ডার হয়েছে সেই বেডরুম টা সিল করে দিয়ে দিপকের ডেড বডিটা পোস্টমর্টমের জন্য পাঠিয়ে দেয়।বাড়ির মেন গ্রীলের দরজাটাও পুলিশ সিল করে দেয় আর গ্রীলে যে তালাটা লাগানো ছিল সঙ্গে করে নিয়ে যায়। সনিয়ার বাবা সনিয়াকে নিয়ে বারাসাত পুলিশ কমিশনারটে গিয়ে স্বামী দিপকের হত্যার এফয়াইয়ার ফাইল করে বাবার সাথে কলকাতায় যাদবপুর চলে যায়।
দিপক হত্যা কেসটার দায়িত্ব পান বারাসত পুলিশ কমিশনারেটের অভিজ্ঞ সেকেন্ড অফিসার অভিক ঘোষ। মার্ডারের পরের দিন থেকে উনি নেমে পরেন কেসটা নিয়ে। প্রথমেই খুঁটিয়ে দেখেন দিপকের ডেড বডির পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট। মাথার পেছন দিকে লোহার রড বা শাবল যাতিয় কিছু দিয়ে বারবার এমনভাবে আঘাত করেছিল যে স্কাল থেতলিয়ে কিছু অংশ ভেতরে ঢুকে গেছে। মাথার আঘাতেই মৃত্যু। ডান হাতের শিরা কেন কাটা হলো রিপোর্টে বলা হয়েছে দিপকের মৃত্যু এনসিওর করার জন্য।
বিভৎস ব্রুটাল মার্ডার। অবাক হয়ে ভাবে ঘোষ বাবু, মানুষ এত নৃশংস হয় কি করে। এর মধ্যে দু দিন সহকারী কে নিয়ে দিপকের পুরো বাড়ি পুংখ্যানুপুংখ্য ভাবে সার্চ করেছেন, তেমন কিছু ক্লু চোখে পরে নি। পেছনের দেয়াল দেয়া খালি জায়গায় ঝোপের মধ্য থেকে একটা বিদেশী খালি মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। ঘোষ বাবু, মদের বোতল আর দিপকের বাড়ির তালা দুটোই ফরেনসিকে পাঠিয়ে দিয়েছে,কোনো ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া যায় কিনা তার জন্য। দেখতে দেখতে খুনের পর তিন দিন কেটে গেছে, অফিসার ঘোষ সাহেব কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না। কিন্তু অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার ভালো করেই জানেন কোনো ক্রাইম কখনোই ফুল প্রুফ হয় না। মার্ডারার কিছু না কিছু ক্লু রাখবেই। তাহলে কি ক্লু তার চোখের সামনে কিন্তু তিনি দেখতে পাচ্ছেন না?
খুন হওয়া দিপক সিনহার বাড়ির উল্টো দিকের রায় বাবুদের বাড়ি। রায় বাবু পেশায় এডভোকেট, বারাসাত ডিষ্ট্রিক্ট কোর্টে প্র্যাক্টিস করেন। ছেলের আবদারে একটা মোবাইল ফোন কিনে দিয়ে মিসেস কে খুব বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন। রোজ রাতে পড়তে বসার আগে বুবাই মাকে আজ সারা দিন কি কি ছবি তুলেছে, কি কি ভিডিও করেছে দেখাতে হবে। সেই ভাবে ৩ তারিখ দিপক খুনের পরের দিন সন্ধ্যা বেলায় মাকে ফোনের এলবাম দেখাচ্ছে। মিসসেস রায় ছেলের সেদিনের ভিডিও গ্রাফি দেখতে দেখতে একটা ভিডিওতে থমকে গেলেন। ভিডিও টা দোতলার ব্যালকোনি সামনে রাস্তার দিক থেকে তোলা। ঠিক দিপকদের বাড়ির সামনের গ্রীলের দরজার সামনে দুটো কুকুর খুব ঝগড়া করছে, বুবাই সেই দৃশ্য টা ফুল ভিডিও করেছে। সেটা দেখে মিসেস রায় থমকান নি, দেখেন একজন লোক ঠিক মুখটা বোঝা যাচ্ছে না, দিপকদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কাঠের দরজাটা ভেজিয়ে দিল, তারপর গ্রীলের দরজায় একটা তালা লাগিয়ে দিপকদের বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে গেলো, একটু পরে কুকুর দুটোর চিৎকারের সাথে একটা মোটর বাইকের আওয়াজ, ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। মনের মধ্যে একটা খটকা। সনিয়া তো সেদিন কলকাতায় ছিল তাহলে ওদের বাড়ি থেকে কে বেড়িয়ে গেল? রাত্রি বেলায় মিষ্টার রয় কে ভিডিও টা দেখাতেই উকিল বাবুতো লাফিয়ে উঠলেন। সকাল হতেই মিষ্টার মিসেস রায় বুবাইএর মোবাইল নিয়ে সোজা বারাসাত পুলিশ কমিশনারেটে হাজির অফিসার অভিক ঘোষের কাছে।
অফিসার অভিক ঘোষ ভিডিওটা বার বার করে দেখলেন রায় বাবুদের টুক টাক প্রশ্ন করলেন। একজন এসিস্ট্যান্ট কে ডেকে ভিডিও টা থানার কম্পুটারে ট্রান্সফার করে নিলেন। বুবাইয়ের মোবাইলটা ফেরত দিয়ে রায় বাবুকে বললেন ভিডিও টা ডিলিট না করতে। রায় বাবুদের থানায় বসিয়ে রেখে থানার কম্পুটার অভিজ্ঞ অফিসার কে দিয়ে ভিডিওর ছেলেটির অনেক গুলো বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবির প্রিন্ট বের করে, রায় বাবুদের হাতে দিয়ে বললেন দেখুনতো চিনতে পারেন কি না। এনলার্জড ছবি গুলো দেখে মিসেস রায় চমকে উঠলেন। আরে এই তো সেই ছেলেটি যে মাঝে মাঝেই দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার পরে সনিয়ার কাছে আসতো। মনে পরে গেলো ছেলেটিও তো মোটর বাইকে আসতো, এখানেও ভিডিওতে বাইকের আওয়াজ শোনা গেছে। অফিসার কে সব বলতে অফিসার ঘোষ সব নোট করে নিলেন। মিষ্টার মিসেস রায় কে খুব ধন্যবাদ দিয়ে বললেন আপনাদের প্রতিবেশী দিপক বাবুর খুনের কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আপনাদের ছোট্ট ছেলে বুবাই মরুভূমির মাঝে জলের খোঁজ দিলো। ও না বুঝে কলকাতা পুলিশ কে যে কি হেল্প করলো বোঝাতে পারবো না আপনাদের।
এবারে পরবর্তী ঘটনা পুলিশ অফিসার অভিক ঘোষের মুখে শুনুন।
রায় ফ্যামিলি থানা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর, ভিডিওর ছেলেটির ছবি গুলো দেখতে দেখতে ভাবছিলাম খুনের মটিভ আমি মনে মনে যা ভাবছিলাম তাই? ত্রিকোণ প্রেমের পরিনতি। যাক দু দিনের মধ্যেই খুনের একটা ঠোস ক্লু পেয়ে গেলাম। আমার মনটা এত খুশি হয়ে গেল মনে হচ্ছে মনের মধ্যে ক্যাডবেরির লাড্ডু ফাটলো। খবর দেয়ার জন্য দিপকের স্ত্রী সনিয়ার ফোন নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিলাম, অবস্য ওর করা এফ আই আরের মধ্যেও ওর নাম্বার আছে। আর দিপকের খুনের ব্যাপারে দিপকের স্ত্রী সনিয়ার দিক থেকেও সন্দেহ সরাতে পারছি না। আগে ছেলেটির পরিচয় জানতে হবে। সনিয়ার সাথে সম্পর্ক কি যে কিনা মাঝে মাঝে একা বাড়িতে বারাসতে সনিয়ার সাথে দেখা করতে যেত। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সঙ্গে সঙ্গে যাদবপুর থানার ওসির সাথে ফোন করে কিছু হেল্প চাইলাম। যাতে একজন চব্বিশঘণ্টা সনিয়ার গতিবিধির ওপরে নজর রাখবে আর আমাকে আপডেট করবে। নেক্সট লাল বাজার সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট, গত এক মাসের সনিয়ার মোবাইলের কল লিস্ট। এই দুটো স্টেপ নিয়ে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। জম্পেশ করে একটা সিগারেট ধরিয়ে রায় বাবুদের বাড়িতে ফোন করে বুবাইকে ধরলাম। খানিক্ষন ওর সাথে গল্প করে, ওকে কমিট করলাম, যে দিপক হত্যার কেস টা সুরাহা হয়ে গেলে পুলিশের তরফ থেকে ওকে একটা হাই পিক্সেল ক্যামেরা মোবাইল ফোন প্রেজেন্ট করা হবে। সব কিছু ডাটা জোগার করতে করতে বারো দিন লেগে গেলো। খুনের তেরো দিনের দিন সকালে আমরা বারাসত থানার তিন জন যাদবপুর থানার তিন অফিসার কে নিয়ে সনিয়ার বাপের বাড়ি থেকে সনিয়াকে আর বাঘাযতিন থেকে সনিয়ার প্রমিক অসিত কে এরেস্ট করলাম।
আর এখন বারাসত থানা নয় সোজা লালবাজার লক আপ। ১৫ ই মে শুরু হলো ম্যরাথন জেড়া। আলাদা আলাদা করে দুজনকে। রাত্রি বেলা ঘুম থেকে তুলে জেড়া তিন দিক থেকে তিন জন অফিসার। ইতি মধ্যে সনিয়ার মোবাইলের কল লিস্ট আমার হাতে এসেছে। মাঝে মাঝেই সনিয়া অসিত কে ফোন করতো। সে দিন দু ই মে সকালে একবার দুপুরে একবার আর রাতে একবার সনিয়া অসিতকে ফোন করেছিল। দু এক দিনের মধ্যে মদের বোতলে আর গেটের তালার ওপরে অসিতের ফিংগার প্রিন্ট ফরেনসিক ডিটেক্ট করেছে। প্রমান একুমুলেশন হচ্ছে আর চলছে জেড়া। অবশেষে ফিফথ ডে তে অসিত ভেঙে পড়লো। স্বীকার করলো সনিয়ার কথাতে দিপককে ওই খুন করেছে। পুলিশের জেড়ায় পেঁয়াজ ছাড়নোর মতো ধীরে ধীরে যে কাহিনি বেড়িয়ে এলো শুনে সাধারণ মানষেরা তো দুরস্ত জাদরেল সব পুলিশ অফিসার রাও হতভম্ব। পৃথিবীর ইতিহাসে রেয়ারেস্ট অফ দি রেয়ার একটা মার্ডার।
অসিতের বয়ানে, বিয়ের আগে থেকেই সনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক। তবে সেই সম্পর্ক মানষিক নয় শারীরিক। অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক আছে কিন্তু সনিয়ার মত এত কামূক মেয়ে আমি দেখিনি। ছলাকলায় পটিয়শী এক নিমেষেই পুরুষদের আকৃষ্ট করে নিতে পারে। যাই হোক ধীরে ধীরে সনিয়ার মোহ জালে আষ্টেপৃষ্টে বন্দী হয়ে গিয়েছিলাম।
এক দিন দেখলাম সনিয়া বিয়ে করে বারাসতে শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। বলতে নেই খুব ভেঙ্গে পরেছিলাম এমন একটা মোহিনী নারী। মাস ছয়েক বাদে সনিয়ার ফোন। আবার শুরু আমাদের শারিরীক মিলন সনিয়ারই বারাসতের বাড়িতে। এইভাবে বছর খানেক চলছিল কিন্তু এরই মাঝে দুবার সনিয়ার হাসব্যান্ড আমাদের দুজনকে খুব খারাপ অবস্থায় দেখে ফেলেছিল। সনিয়ার কাছেই শুনেছিলাম, ওর আর ওর বরের সম্পর্কের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি লেগেই আছে। সনিয়া কোনো দিন কোনো ছেলেকে ভালোবাসতে পারত না ওর কাছে সেক্স আর টাকা এই দুটোই ছিল মেইন। আমি এক দিন বলেছিলাম এক কাজ করো দিপককে ডিভোর্স দাও তার পর চলো তুমি আর আমি বিয়ে করি। ও বলেছিল না তা হবে না, দিপকের অবর্তমানে বাড়ির মালিক হবে ও। এই মুহুর্তে ওই বাড়ির দাম এক কোটির মতো। তার সাথে দিপকের পঁচিশ লাখ টাকার মতো ইন্সুইরেন্স এর নমিনি ও। দিপক ভালোবেসে বিয়ের পরে পরেই ওকে নমিনি করে দিয়েছে। তাই এমন একটা প্ল্যান করতে হবে যে দিপকের হাত থেকেও মুক্তি আর দিপকের সব সম্পত্তি ওর।
অসিত জানতো ওর সমস্ত কনফেসের ভিডিও রেকর্ডিং হয়ে যাচ্ছে।
সে দিন ২রা মে, সকাল বেলায় দিপক বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই সনিয়া অসিত কে বারাসত আসতে বলে সাথে দুবোতল মদ নিয়ে। অসিতের কথায় আমি মোটামুটি বারোটার নাগাদ সনিয়ার বাড়িতে পৌঁছেছিলাম। সেদিন আমরা দুজনে দুপুরেই বিছানায় শারীরিক ভাবে মিলিত হয়েছিলাম, সেই মিলনের সময়েই আমার কানে কানে সনিয়া ফিসফিস করে বলেছিল আজ তোমাকে দিপককে শেষ করে দিতে হবে। আমি আজই দিপকের হাত থেকে মুক্তি চাই। পাথরের মতো দিপক চেপে আছে আমার বুকে।
তারপর এক ঘন্টা আমরা দুজনে প্ল্যান করে ফেললাম সনিয়া আমাকে এটাচড বাথরুমে রেখে বাইরের দুটো দরজা তালা দিয়ে চলে যাবে। শুধু গ্রীলের দরজার একটা ডুপ্লিকেট চাবি আমাকে দিয়ে যাবে। যাতে কাল সকালে আমি বাইরের থেকে তালা দিয়ে চলে যেতে পারে। একটা শাবল আর একটা সার্প ছুড়ি আমাকে দিয়ে বললো শাবল দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করতে তাতেও যদি কাজ না হয় ছুড়ি দিয়ে কব্জির শিড়া কেটে দিতে।
এই কথা গুলো যখন হচ্ছিলো আমরা দুজন আমার আনা এক বোতল মদ শেষ করছি। এর পর সনিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে যে আব্দারটা করলো সেটা শুনে আমার মতো একটি লম্পট ছেলেও চমকে উঠেছিলাম। বললো অসিত আমি নিজের চোখে দেখতে চাই দিপকের মৃত্যু, শুনতে চাই ওর শেষ আর্তনাদ। তাই আমি তোমার মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও চ্যাট সেট করে যাবো , আমার নাম্বারে, যখন দিপক ঘরে ঢোকার জন্য তালা খুলবে তুমি ভিডিও অন করে দেবে।
আমরা সেদিন মোবাইলে ভিডিও সেটিং করে কয়েকবার রিহার্সেল করেছিলাম। দেখতে দেখতে পাঁচটা বেঁজে গিয়েছিল। আরো একবার সনিয়ার চাহিদা মতো আমরা বিছানায় মিলিত হয়ে ছিলাম। তার পর আমার সামনে দিপককে ফোন করে বলে, বাবার শরীর খারাপ, তাই ও কলকাতা যাচ্ছে, কাল ফিরবে। রঙমঞ্চ তৈরি। হা বেড রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাখতে বলেছিল যাতে ভিডিওটা স্পষ্ট ও দেখতে পায়।আমি একদম ওর কথা মত তাই করেছিলাম, তখন আমার মাথার ভেতর মদের একশন আর সনিয়ার শরীরের নেশা দুটো মিলে আমি কি করছি বোঝার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কথা গুলো বলে অসিত কান্নায় ভেঙ্গে পরে বার বার বলতে থাকে আমাকে ফাঁসি দিন, তবে আমার চাইতেও ঘৃন্য অপরাধী সনিয়া। ওকে ক্ষমা করবেন না।।
পুলিশ অফিসার অভিক ঘোষের কথায়। আমি আজ ত্রিশ বছর পুলিশে চাকরি করছি। দিপক হত্যা কেসে আমি আই ও। আজ অসিতের যে কনফেস দিপক কে মার্ডার করার ব্যাপারে শুনে আমাদের মতো পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারদের ও স্তব্ধ করে দিয়েছে। যাই হোক সব এভিডেন্স জোগার হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান হোয়াটসঅ্যাপ অথরিটি কে গভর্নমেন্ট এর সাইবার সেল থেকে রিকুয়েস্ট করে কয়েক দিনের মধ্যেই সেকেন্ড মের মার্ডারের ভিডিও টা আনিয়ে নিয়েছিলাম। ওদের আর্কাইভে ছিল।
এর পর নিয়ম মতো অসিত রায় আর সনিয়া মজুমদারের নামে বারাসত ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে ৩০২ আর ১২০বি ধারাতে মার্ডার চার্জ শিট দাখিল করে দিলাম।
দুবছর অনেক শুনানি একত্রিশ জনের সাখ্য, সব শোনার পর গত কাল পঁচিশে মে বারাসত ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি অসিত রায় আর সনিয়া মজুমদার কে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আজ ছাব্বিশ মে আজ দিপক মার্ডার কেসের রায় দান।
সারা আদালত লোকে লোকারণ্য। টিভিতে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ। আদালত চত্তরে লাইভ ইন্টারভিউ দিপকের মাকে। ঠিক দুপুর বারোটার সময় রায় ঘোষণা করবেন জাস্টিস অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি, যিনি প্রথম থেকে দিপক হত্যা মামলার বিচারপতি।
বারাসতের ফোর্থ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের এজলাসে তিল ধারনের জায়গা নেই। অসিত আর সনিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিচারপতি দিপকের মা বাবাকে ডেকে নিয়েছে এজলাশে। বারোটা বাজে, আজ আর কোনো শুনানি নয়, নয় কোনো বাদি বিবাদির আইনের কচকচানি।
জাস্টিস ব্যানার্জি শুরু করলেন, গত কাল আমি এই দুজন অভিযুক্তদের দোষি সাব্যস্ত করেছি। আজ রায় ঘোষণা করবো। আমি মনস্থির করে রায় রেডি করেছি শুধু সই করা বাকি। আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি আমার ভারত বর্ষের বিচার বিভাগে আজ চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত। আমার এডভোকেট জীবনে বা আমার আজকের বিচারপতির জীবনে কখনো এই রকম হত্যা মামলার রায় দিতে হয় নি। ইটস রেয়ার অফ দি রেয়ারেস্ট কেস। বাংলা তে যাকে বলে বিড়ল থেকে বিড়লতম কেস।
পুরো এজলাসে পিন ড্রপ সাইলেন্স।
একটু থেমে বিচারপতি আবার শুরু করলেন, আমরা মেয়েদের আমাদের ভারতীয় সমাজে অনেক উচুতে স্থান দিয়েছি, তারা কখনো মা কখনো বোন কখনো স্ত্রী। তারাই মা হয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে এই পৃথিবীতে প্রানের স্পন্দন কে বাঁচিয়ে রেখেছে। তারাই আবার মা দূর্গা হয়ে মা চামুণ্ডা হয়ে অসুর বিনাশ করে ত্রিলোক রক্ষা করে। সেখানে আজ দিপক হত্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে সেই নারীকে সনিয়া রূপে দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারি নি। ওরা দুজন প্রেম ভালোবাসা বিয়ে সব কিছুর সংগা পালটিয়ে দিয়েছে,যার জন্য ওরা সমাজের কাছে অপরাধী, সামাজিক জীব হিসেবে ওদের গ্রহন করা যায় না। ওদের চরম শাস্তি প্রাপ্য। তাও ওদের দুজনের এত অল্প বয়েস মন মানছিল না ওদের চরম শাস্তি দিতে। কিন্তু যে নৃশংস ভাবে নারকীয় ভাবে বিয়ের দেড় বছরের বাদে শুধু মাত্র শারীরিক লালসা আর আর সেই লালশার পরিতৃপ্তির জন্য স্বামীর সব সম্পদের অধিকারী হওয়ার জন্য প্রেমিকের সাহায্যে নিজের স্বামীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে তাকে আর কিছু হোক ক্ষমা করা যায় না। আগেই বলেছি এই কেসটা রেয়ার অফ দি রেয়ারেস্ট কেস। তাই আমি ভগবানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে অসিম রায় আর সনিয়া মজুমদার কে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত করলাম। বোথ অফ দেম হেভ বিন সেন্টেন্সট টু ডেথ বাই হ্যাং টিল ডেথ।
বলে নিয়ম অনুযায়ী ঝড়না কলম দিয়ে ডেথ অর্ডার সাইন করে অর্ডারের হার্ড কপির ওপরে কলমের নিবটা ভেঙে দিয়ে এজলাস ছেড়ে নিজের চেম্বারের দিকে চলে গেলেন।
একেবারে নিঃস্তব্ধ পুরো এজলাস, স্তব্ধ হয়ে গেছে এজলাসের বাতাস। কখন যে পুলিশ সনিয়া আর অসিত কে বের করে নিয়ে গেছে কেউ বুঝতে পারে নি। হটাত দিপকের মায়ের বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ এজলাস আর আদালতের দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।
***************************************