• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

উড়ান (গল্প )

Bose Arun

Favoured Frenzy
***** উড়ান *****
### ###
ট্যাক্সি ওয়েতে স্টার্টার বুড়ো আঙুলটা ওপরে দেখাতেই জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নাম্বার JA304 গড়াতে শুরু করলো। ককপিটে থ্রোটলের ওপর ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন ( পাইলট ইন কমান্ড) এর ডান হাত আর কো পাইলট নিশা রায়ের বা হাত, লিমিটেড স্পিডে টাক্সি ওয়ে দিয়ে গড়াতে গড়াতে দু নম্বর রান ওয়ের দিকে চলেছে এয়ারক্র্যােফট। একটাই ইঞ্জিন চালু আছে। একটা বাঁক ঘুরতেই রান ওয়েতে ঢুকে যায় এয়ার ক্র্যা ফট। অভ্যস্ত হাতে সুব্রত চারটে ইঞ্জিন চালু করে দেয়। দুজনেরই পা ব্রেকে চেপে আছে। গ্রাউন্ড এটিসি থেকে অনবরত ইন্সট্রাকশন আসছে। ধীরে ধীরে দুজনের হাত থ্রোটল পুষ করতে থাকে আর ব্রেক রিলিজ করতে থাকে, এয়ার ক্র্যাফটের স্পিড বাড়তে থাকে, ফাইনাল অপ্টিমাম স্পিড এচিভ করলে দুজনে একসাথে হ্যান্ড গিয়ারে ক্র্যা ফটের নোজ আপ করে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে এয়ারক্র্যাকফট গ্রাউন্ড ছেড়ে অল্টিচুড নিতে থাকে। অল্টিচুড মিটারে ফিফটিন থাউসেন্ড ফিট এডজাস্ট করা ছিল। পনেরো হাজার ফিট এচিভ করার পর এটিসির নির্দেশে হেডিং মিটার আর এয়ার স্পিড ইন্ডিকেটার এডজাস্ট করে দেয় নিশা। কলকাতা থেকে মুম্বাই দু ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটের ফ্লাইট। সব কন্ট্রোল এডজাস্ট করার পর ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন কন্ট্রোল অটো পাইলট করে দিয়ে, আড়মোড়া ভেঙে নিশার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে
কি মিস এক কাপ করে কফি হয়ে যাক। ইন্টারকমে নিশা হোস্টেস কে তিন কাপ কফি দিতে বলে, পেছন দিকেই বসে আছে রেডিও অপারেটর অরুন কানে হেডফোন লাগিয়ে গ্রাউন্ড এটিসি র সাথে বকবক করে চলেছে।
এয়ার হোস্টেস কফি দিয়ে গেলে তিন জনে আরাম করে কফি নিয়ে গল্প শুরু করে দিল। প্লেন উড়ে চলেছে অটো পাইলটে বম্বের ছত্রপতি শিবাজী এয়ার পোর্টের দিকে।
বা দিকের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকায় সুব্রত, শুধু মেঘ আর মেঘ।
বিকেল পাঁচটা কুড়ি মিনিটে দমদম এয়ার পোর্টের রানওয়ে থেকে টেক অফ করেছিল সুব্রতর ফ্লাইট। ঘড়িতে এখন ছটা। অস্তগামী সূর্যের লাল আলোয় পশ্চিম আকাশ যেন সিঁদুর রঙে রঙিন হয়ে উঠছে, সেই রঙের ছটায় ভরে গিয়েছে প্লেনের ককপিট। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকে পাইলট ইন কমান্ড সুব্রত সেন আর কোপাইলট নিশা রয়।
ঠিক ঘড়িতে আটটা বেজে পাঁচ মিনিটে JA304 বম্বের ছত্রপতি শিবাজি এয়ার পোর্টের গ্রাউন্ড টাচ করলো।
বাসে করে প্যাসেঞ্জার রা টারমিনাল বিল্ডিং এর দিকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর স্পেশাল বাস ক্রুদের নামিয়ে দিল জেট এয়ারের এয়ার পোর্ট অফিসে।
কিছু অফিশিয়াল কাজ কম্পলিট করে ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন আর নিশাকে নিয়ে স্পেশাল ক্যাব ছুটে চললো ওদের জন্য নিদৃষ্ট হোটেল মেরিনা ইনের দিকে।
সুব্রত সেন কলকাতার বিখ্যাত ব্যারিস্টার অরিন্দম সেনের ছোট ছেলে। বরাবরই পড়াশুনায় ভালো, কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিসিক্সে এমএসসি কম্পলিট করে কলকাতাতেই ফ্র্যাটনকনিন স্কুল অফ এভিয়েশন থেকে চার বছরের পাইলট ট্রেনিং কোর্সে ডিপ্লোমা করে বোইং আর এয়ারবাস পাইলটিং এ অভিজ্ঞতার জন্য লন্ডন পাড়ি দেয়। ওখানে রয়াল স্কুল অফ এভিয়েশন সেন্টারে তিন বছরের কোর্স কমপ্লিট করে ওখানেই কঙ্গো এয়ার লাইনসে জয়েন করে। ইউ কের ডোমেস্টিক সার্ভিস এয়ার লাইনস।একজন পাইলটের এক্সপেরিয়েন্স কাউন্ট হয় কত ঘন্টা সে ফ্লাই করেছে তার ওপর, মানে ফ্লাইং আওয়ারস যাকে বলে।
মোটামুটি দুবছর কঙ্গোতে চাকরি করে ফ্লাইং আওয়ারস টা বাড়িয়ে নেয়ার পর ইন্ডিয়াতে ফিরে আসার জন্য কয়েকটি এয়ার লাইন্সে এপ্লাই করেছিল। জেট এয়ার থেকে অফারটা মনঃপুত হওয়ায় সেটাই আক্সেপ্ট করে দেশে ফিরে আসে সুব্রত। চাকরিটা খুবই মনোমত সুব্রতর, ডিউটি ফ্রম হোম টাউন কলকাতা।
বড় লোকের ছেলেরা যেমন হয়, সুব্রত একেবারেই সেই রকম ছিল না। মেয়েদের সাথে খুব একটা মেলামেশা ছিল না। কিন্তু মনে পড়ে কলকাতার ফ্র্যাানকনিনে একটি মেয়েকে দেখে কেন জানি মনে হয়েছিল সুব্রতর এই রকম একটি মেয়েকেই তো ও খোঁজে। মডার্ন কিন্তু উগ্র নয়, সংযত ড্রেস, আধুনিকতা আছে কিন্তু অশালিন নয়, বুঝতে পারে কলকাতার মেয়ে নয়। মনের ভেতর একটা ভালোলাগা কৌতুহল নিয়ে একটু খোঁজ খবর করতেই জানতে পারলো, মেয়েটির নাম নিশা রয়, জেলার মেয়ে, স্কুলের পর সব হায়ার এডুকেশন এই কলকাতাতেই। প্রথম বর্ষ পাইলট ট্রেনিং স্ট্রিম। প্রথমটা সুব্রত অবাকই হয়ে গিয়েছিল একটি মেয়ের পাইলট হবার চেষ্টা দেখে। খুব খুশিও হয়েছিল, সত্যি মেয়েটার কারেজ আছে বলতে হয়। ওদের পাইলট ট্রেনিং স্ট্রিমে একটাই মেয়ে নিশা। সুব্রতর মনের আয়নায় নিশা একটা পার্মানেন্ট ছাপ ফেলে দিয়েছিল। তবে কখনো উপযাচক হয়ে পরিচয় করতে যায় নি সুব্রত। তবে কখনো কখনো হটাত কলেজ ক্যাম্পাসে বা কমন রুমে দেখা হয়ে গেলে সুব্রত বুঝতে পারত নিশাও কেমন লাজুক লাজুক চোখে ওকে দেখে, শরীরের ভাষাও যেন বদলে যায়। এক দিনই শুধু খুব কাছে থেকে নিশাকে দেখেছিল, যে দিন কলেজ থেকে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয়েছিল পাইলট ট্রেনিং কমপ্লিট করার পর। এখনো সুব্রতর মনে আছে,সে দিন ফেয়ারওয়েল শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুব্রত যখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেট দিয়ে বেড়তে যাবে হটাত দেখে নিশা এক গুচ্ছ লাল গোলাপের তোড়া নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। ওর হাতে গোলাপের তোড়াটা দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, কংগ্রাচুলেশনস, আগামী জীবনের পথে যেন এই রকম গোলাপ বিছানোই থাকে, আর কখনো আপনার সাথে দেখা হবে কিনা জানি না, ভালো থাকবেন। সেদিন সুব্রত নিশার ছলছল চোখ দুটো দেখে, আর ভুলতে পারেনি সেই দেখা নিশার চোখ দুটোকে। আজও মনে পড়ে নিশার কথা। কোথায় আছে, কি করছে কে জানে।
বর্ধমান জেলার বর্ধীষ্ণু পরিবারের মেয়ে নিশা। একান্নবর্তী পরিবার প্রচুর জমিজমা, মোটামুটি জোতদার পরিবার বলতে যা বোঝায়। পরিবারের সবাই আধুনিক মানুষীকতায় বিশ্বাসী।
ছেলে মেয়েদের কলকাতায় রেখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করছে। নিশাও বর্ধমান থেকে হাইস্কুল পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী হাসিল করেছে। ছেলেবেলা থেকেই অদ্ভুত একটা প্রফেশনের কথা ভেবে এসেছে। সুনীল আকাশে যখন অনেক উচুতে পাখীদের উড়তে দেখতো, ওরও খুব ইচ্ছে করতো পাখীদের মত নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে। ইস ওরও যদি পাখীদের মত দুটো পাখনা থাকতো? তাই সুপ্ত মনের বাসনায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতো।
এমএসসি কমপ্লিট করে নিশা সল্ট লেকের ফ্র্যারনকনিন এভিয়েশন প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পাইলট ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হয়। সেখানেই প্রথম দেখে আজকের নাম করা পাইলট ক্যাপ্টেন সুব্রত সেনকে। নিশা যখন ফার্স্ট ইয়ার সুব্রত ফাইনাল ইয়ার। কলেজে প্রথম যেদিন সুব্রত কে দেখেছিল নিশা সেদিন ই কি যেন বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট, না না ভুল হলো, ক্রাশ এট ফার্স্ট সাইট। স্মার্ট এক মাথা কোকরানো চুল, বেপরোয়া একটি ছেলে। মনের শালিনতা বোধের জন্য কখনোই হ্যাংলামি করেনি নিশা। খালি ভাবতো ওকে পেলে এই একটা মাত্র জীবনে সব কিছু পাওয়া হয়ে যাবে।
নানা রকম কন্টাক্টস থেকে সুব্রত সম্বন্ধে সব খবরাখবর জেনে নিয়েছিল নিশা। বড়লোক পরিবারের ছেলে, অবশ্য সেদিক থেকে নিশার পরিবারও কম কিছু নয়। এভিয়েশন ইন্সটিটিউটে মাঝে মাঝে সুব্রতকে দেখতে পায় নিশা
নিশাও বুঝতে পারে ওকে দেখলে সুব্রতর চোখ দুটো কেমন খুশিতে ঝিলিক দিয়ে ওঠে, বুঝতে পারে সুব্রতরও ওকে ভালো লাগে, আরো ভালো লাগে নিশার সুব্রতকে কারন আজকালকার দিনের ছেলেদের মত সুব্রত গায়ে পরা নয়। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার মধ্যে একটা সেল্ফ রেসপেক্ট ফুটে উঠেছে। একটা চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে, নিশাও বোঝে সুব্রতর আকর্ষণের কাছে ও অসহায়। ইচ্ছে করে সুব্রতর দু হাতে নিজেকে সঁপে দিতে। এক দিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি নিশা, যে দিন সুব্রতর ইন্সটিটিউটে শেষ দিন। ফেয়ারওয়েল দেয়া হচ্ছে আউট গোইং
নব্য পাইলটদের, সুব্রতকে দেখতে দেখতে নিশার দুচোখ জলে ভরে যায়।
ওর জন্য আনা লাল গোলাপের পাপড়ির ওপর ঝরে পরে নিশার চোখের জলের মুক্তো বিন্দু।বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, কি জানি আর কোন দিন ওর রাজকুমারকে দেখতে পাবে কি না নাকি এই শেষ দেখা। গেট দিয়ে সুব্রত বেড়িয়ে যাওয়ার সময়, ছুটে ওর সামনে দাঁড়ায় নিশা, সুব্রতর হাতে গোলাপের তোড়াটা দিয়ে কোনমতে বলতে পেরেছিল,
কনগ্রাচুলেশন, সামনে জীবনের পথ যেন এই গোলাপ দিয়ে কুসুমাস্তীর্ণ হয়।
জানিনা আর কোন দিন দেখা হবে কিনা। ভালো থাকবেন।
দেখতে দেখতে কেমন ছ সাত বছর কেটে গেলো, যেন সিনেমার মত, আজ এক বছর হয়ে গেলো সুব্রতর জেট এয়ারে, সপ্তাহে দুটো করে ফ্লাইট, কখনো চেন্নাই, কখনো বেঙ্গালুরু,সব ডোমেস্টিক ফ্লাইট। এখনো ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট দেয় নি সুব্রতকে। জেট এয়ারের নিয়ম মত একটা বছর প্রবেশন পিরিয়ড শেষ হলে পাইলট ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট পায়। আজ বিকেল পাঁচটায় কলকাতা টু মুম্বাই ফ্লাইট নিয়ে যেতে হবে। কাল রাতে বাবা মা ওকে খুব করে বুঝিয়েছে এবার বিয়ে করার জন্য। সুব্রতও বুঝতে পারে ধীরে ধীরে বয়েস বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু মনের কোনো একটা কোণায় সেই কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা দুটো ছলছল চোখ আজও দেখতে পায় সুব্রত। নিশা, এই নামটা ভুলতে পারেনি, ভুলতে পারেনি সেই মিষ্টি মুখটা। তাই কি জানি কেন অন্য কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই পারে না সুব্রত। আর মনের কোণায় লুকিয়ে রাখা অব্যক্ত ভালোবাসা কোথায় যে লুকিয়ে আছে কে জানে। নিশার কথা ভাবতেই চোখ দুটো কেমন চিকচিক করে ওঠে আজকের সুদর্শন পাইলট সুব্রতর।
তিনটে বাজতেই রেডি হয়ে যায় আজকের JA304 ফ্লাইটের পাইলট ইন কমান্ড সুব্রত সেন। জেট এয়ারের পাইলট কস্টুম ব্ল্যাক ডাবল ব্রেস্ট সুট, ব্লেজারের মত ডাবল রো গোল্ডেন বাটন, কোটের হাতায় চারটে করে গোল্ডেন স্ট্রাইপ, পকেটের ওপর জেট এয়ারের লোগো ব্যাচ, ব্ল্যাক টাই, আর পাইলট হ্যাট। চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের সান গ্লাস।সুব্রত লক্ষ করে দেখেছে এই ইউনিফর্ম টা পোড়লেই ওর সেল্ফ কনফিডেন্সটা কেমন বেড়ে যায়। এয়ার লাইনের গাড়িতে সাড়ে তিনটের মধ্যে দমদম পৌঁছে যায় সুব্রত। এয়ার পোর্ট অফিস থেকে ক্রুদের একটা করে চেক লিস্ট দেয়া হয় তাতে সব ক্রুদের নামের লিস্ট আর ফোন নাম্বার দেয়া থাকে। আজ এই ফ্লাইটে ছয় জন ক্রু।
সুব্রত লিস্টটাতে চোখ বোলাতে গিয়ে থমকে যায় আজ ওর সহকারী পাইলট একটি মেয়ে। মিস নিশা রয়। নামটা দেখেই চমকে ওঠে সুব্রত। কে এই নিশা রয়? অনেক অতিতে হারিয়ে ফেলা একটা ভালোবাসার নাম। না সেটা কি করে সম্ভব, নিশ্চয়ই অন্য কোনো নিশা রয়। যাক গে সব ক্রু রা এসে গেছে কো পাইলট নিশা রয় তখনো এসে পৌঁছায়নি, ওদের পাঁচ জনকে কোম্পানির কার পৌঁছিয়ে দেয় এয়ারক্রাফটে। পাইলট ইন কমান্ড আর কোপাইলট কে আগে ককপিটের সব কিছু চেক করে নিতে হয়। হটাত সুব্রত দেখলো ককপিটের ডোর ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে সেকেন্ড ইন কমান্ড নিশা রয় ডান দিকে কোপাইলটের সিটে বসে সুব্রতকে মাথা ঝাঁকিয়ে উইস করলো। সুব্রত এক ঝলক সহকারিণীর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরই মত ইউনিফর্ম পড়া পাইলট হ্যাটের পেছন দিকে কাঁধ পর্যন্ত এক রাশ রেশমি কালার্ড হেয়ার। চোখে যথারীতি কালো সানগ্লাস। সুব্রত ঠিক বুঝতে পারছে না এই নিশাই কি ওর অতিতের ফেলে আসা নিশা কি না।
কত দিন দেখেনি নিশাকে তাই ঠিক বুঝতে পারছে না। যাক গে অতিতের কথা পেছনে ফেলে রেখে সুব্রত ব্যাস্ত হয়ে পরলো টেক অফ করার প্রস্তুতিতে।
সব প্যাসেঞ্জার অন বোর্ড, প্লেনের ডোর এয়ার হোসটেস বন্ধ করে দিয়ে ইন্টার্নাল এড্রেস সিস্টেমে প্যাসেঞ্জারদের করণীয় বোঝাতে শুরু করেছে। হটাত কড়কড় করে ককপিটের স্পিকারে এটিসির গ্রীন সিগনাল। flight number JA 304 is advised to aproch through taxi way to main run way 2 . সুব্রতর ফ্লাইটের দমদম থেকে মুম্বাইয়ের উদ্যেশে যাত্রা হলো শুরু।
ট্রাফিক জ্যামে আটকিয়ে যাওয়াতে নিশার একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে, কোনো মতে চেকলিস্ট টা হাতে নিয়ে এয়ার ক্র্যা ফটে ঢুকে যায়, কাদের সাথে যাচ্ছে লিস্টে দেখারও সময় ছিল না। নিজের সিটে বসে বা দিকে বসা ক্যাপ্টেন ইন কমান্ডের দিকে তাকাতের কেমন যেন অবশ হয়ে গেলো নিশার শরীর। এ কাকে দেখছে? স্বপ্ন দেখছে নাতো? ওর বা পাশে বসে আছে ওর অনেক অতিতে ফেলে আসা ওর স্বপ্নের রাজকুমার, যাকে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ চোখ বুজলেই দেখতে পায় নিশা, সেই কলেজ জীবনের ক্রাস সুব্রত সেন।হাতের চেক লিস্টাতে চোখ বোলাতেই দেখলো ও যা ভেবেছে তাই পাশে বসে আছে ওর ভালোবাসা সুব্রত সেন। কি দারুন লাগছে সুব্রতকে পাইলটের কস্টিউমে, হ্যান্ডসাম, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। কত কত দিন পরে দেখছে ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে। হটাত সুব্রতর কাছ থেকে একটা মৃদু ধমক খেয়ে তারাতারি বাস্তবে ফিরে আসে নিশা।
কমান্ডারের যোগ্য সহকারীর মত প্লেন টেক অফে সহযোগীতা করতে থাকে।
হোটেল মেরিনা ইন এ ওদের দুজনের বুকিং পাশাপাশি দুটো ঘরে।
দুজনে দুজনের ঘরে ঢুকে যায়। সুব্রত
লাগেজ রেখে কোট টা খুলে রিলাক্স হয়ে সোফাতে বসে এক কাপ কফির অর্ডার করে জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকায়। খালি কোপাইলট মিস নিশা রায়ের কথা মনে পড়ছে। কে এই নিশা, হটাত মনে পরে যায় ওর সঙ্গে
সব সময় ওর ফ্র্যা নকনিন এভিয়েসন ইন্সটিটিউটের জার্নাল থাকে তাতে আজ পর্যন্ত কত জন পাইলট বেড়িয়েছে তাদের নাম থাকে। ব্যাগটা খুলে জার্নালটা বের করে সুব্রত,খুটিয়ে পাইলট লিস্টটা দেখতেই দেখে ও যে বছর পাশ করেছে তার তিন বছর বাদেই নিশা রায়ের নাম। তার পর থেকে এই বছর পর্যন্ত কোনো মেয়ে পাইলটের নাম নেই। জার্নালটা রেখে সুব্রত ঘরের ব্যালকোনিতে এসে দাঁড়ায়। সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত আরব সাগর। রাত হয়ে গেছে, সমুদ্রের ঢেউ এর ওপরে ফসফরাস গুলো মুক্তোর দানার মত চিকচিক করছে ঢেউএর তালে তালে নাচছে।
মনটা যেন কিছুতেই মানছে না, ভাবে ও যদি সত্যি অতিতের নিশা হতো তাহলে তো নিশ্চয় সুব্রতর কাছে নিজের পরিচয় দিত।
ঘড়ির কাটা ঘুরে চলেছে, অর্ডার দিয়ে ঘরেই ডিনার টা করে নেয় সুব্রত।
রাত এগারোটা ভাবছে শুয়েই পরা যাক। হটাত মোবাইলে হোয়াটস এপ নোটিফিকেশনের টুং আওয়াজ হতেই মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় সুব্রত। ওপেন করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ টা ওপেন করতেই দেখে অনেক গুলো লাল গোলাপের ছবি, আর তার নিচে বাঙলায় লেখা....
" অনেক অনেক বছর আগে হৃদয়ের রক্তে রাঙিয়ে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে কলেজের গেটে বিদায় জানিয়েছিলাম। আজ তোমার কোপাইলট হয়ে আবার তোমাকে খুঁজে পেয়েছি। জীবনের উড়ানে আমি যে তোমার কোপাইলট হয়েই উড়তে চাই। পারবে আমাকে সঙ্গে নিয়ে উড়তে? এবারে হাতে হাতে নয় প্রযুক্তিতে তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙে রাঙানো এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে আমার জীবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তোমার পাশের ঘরেই আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য...... তোমার অতিতের ফেলে যাওয়া নিশা। "
মেসেজটা পড়ে সুব্রত আবার সমুদ্রের
দিকে তাকায় দেখে সমুদ্রের বুকে যেন পুরো তারায় ভরা আকাশটাই ধরা দিয়েছে। সারা সমুদ্রের ঢেউএর মাথায় মাথায় সেই রুপোলি তারা গুলো নাচছে। মোবাইলটা টেবিলের ওপরে রেখে স্লিপারটা পরে ঘরের বাইরে এসে পাশের ঘরের দরজাতে হাত রাখতেই দরজাটা আস্তে খুলে যায়।
ঘরের ভেতর একটা মেয়েলি মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগে সুব্রতর, এলিডি লাইটের স্নিগ্ধ আলোতে সুব্রত তাকিয়ে দেখে শাড়ি পড়ে খুব মিষ্টি করে সেজে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর অতিতে ফেলে আসা ভালোবাসা, ওর নিশা।.................
 
***** উড়ান *****
### ###
ট্যাক্সি ওয়েতে স্টার্টার বুড়ো আঙুলটা ওপরে দেখাতেই জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নাম্বার JA304 গড়াতে শুরু করলো। ককপিটে থ্রোটলের ওপর ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন ( পাইলট ইন কমান্ড) এর ডান হাত আর কো পাইলট নিশা রায়ের বা হাত, লিমিটেড স্পিডে টাক্সি ওয়ে দিয়ে গড়াতে গড়াতে দু নম্বর রান ওয়ের দিকে চলেছে এয়ারক্র্যােফট। একটাই ইঞ্জিন চালু আছে। একটা বাঁক ঘুরতেই রান ওয়েতে ঢুকে যায় এয়ার ক্র্যা ফট। অভ্যস্ত হাতে সুব্রত চারটে ইঞ্জিন চালু করে দেয়। দুজনেরই পা ব্রেকে চেপে আছে। গ্রাউন্ড এটিসি থেকে অনবরত ইন্সট্রাকশন আসছে। ধীরে ধীরে দুজনের হাত থ্রোটল পুষ করতে থাকে আর ব্রেক রিলিজ করতে থাকে, এয়ার ক্র্যাফটের স্পিড বাড়তে থাকে, ফাইনাল অপ্টিমাম স্পিড এচিভ করলে দুজনে একসাথে হ্যান্ড গিয়ারে ক্র্যা ফটের নোজ আপ করে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে এয়ারক্র্যাকফট গ্রাউন্ড ছেড়ে অল্টিচুড নিতে থাকে। অল্টিচুড মিটারে ফিফটিন থাউসেন্ড ফিট এডজাস্ট করা ছিল। পনেরো হাজার ফিট এচিভ করার পর এটিসির নির্দেশে হেডিং মিটার আর এয়ার স্পিড ইন্ডিকেটার এডজাস্ট করে দেয় নিশা। কলকাতা থেকে মুম্বাই দু ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটের ফ্লাইট। সব কন্ট্রোল এডজাস্ট করার পর ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন কন্ট্রোল অটো পাইলট করে দিয়ে, আড়মোড়া ভেঙে নিশার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে
কি মিস এক কাপ করে কফি হয়ে যাক। ইন্টারকমে নিশা হোস্টেস কে তিন কাপ কফি দিতে বলে, পেছন দিকেই বসে আছে রেডিও অপারেটর অরুন কানে হেডফোন লাগিয়ে গ্রাউন্ড এটিসি র সাথে বকবক করে চলেছে।
এয়ার হোস্টেস কফি দিয়ে গেলে তিন জনে আরাম করে কফি নিয়ে গল্প শুরু করে দিল। প্লেন উড়ে চলেছে অটো পাইলটে বম্বের ছত্রপতি শিবাজী এয়ার পোর্টের দিকে।
বা দিকের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকায় সুব্রত, শুধু মেঘ আর মেঘ।
বিকেল পাঁচটা কুড়ি মিনিটে দমদম এয়ার পোর্টের রানওয়ে থেকে টেক অফ করেছিল সুব্রতর ফ্লাইট। ঘড়িতে এখন ছটা। অস্তগামী সূর্যের লাল আলোয় পশ্চিম আকাশ যেন সিঁদুর রঙে রঙিন হয়ে উঠছে, সেই রঙের ছটায় ভরে গিয়েছে প্লেনের ককপিট। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকে পাইলট ইন কমান্ড সুব্রত সেন আর কোপাইলট নিশা রয়।
ঠিক ঘড়িতে আটটা বেজে পাঁচ মিনিটে JA304 বম্বের ছত্রপতি শিবাজি এয়ার পোর্টের গ্রাউন্ড টাচ করলো।
বাসে করে প্যাসেঞ্জার রা টারমিনাল বিল্ডিং এর দিকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর স্পেশাল বাস ক্রুদের নামিয়ে দিল জেট এয়ারের এয়ার পোর্ট অফিসে।
কিছু অফিশিয়াল কাজ কম্পলিট করে ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন আর নিশাকে নিয়ে স্পেশাল ক্যাব ছুটে চললো ওদের জন্য নিদৃষ্ট হোটেল মেরিনা ইনের দিকে।
সুব্রত সেন কলকাতার বিখ্যাত ব্যারিস্টার অরিন্দম সেনের ছোট ছেলে। বরাবরই পড়াশুনায় ভালো, কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিসিক্সে এমএসসি কম্পলিট করে কলকাতাতেই ফ্র্যাটনকনিন স্কুল অফ এভিয়েশন থেকে চার বছরের পাইলট ট্রেনিং কোর্সে ডিপ্লোমা করে বোইং আর এয়ারবাস পাইলটিং এ অভিজ্ঞতার জন্য লন্ডন পাড়ি দেয়। ওখানে রয়াল স্কুল অফ এভিয়েশন সেন্টারে তিন বছরের কোর্স কমপ্লিট করে ওখানেই কঙ্গো এয়ার লাইনসে জয়েন করে। ইউ কের ডোমেস্টিক সার্ভিস এয়ার লাইনস।একজন পাইলটের এক্সপেরিয়েন্স কাউন্ট হয় কত ঘন্টা সে ফ্লাই করেছে তার ওপর, মানে ফ্লাইং আওয়ারস যাকে বলে।
মোটামুটি দুবছর কঙ্গোতে চাকরি করে ফ্লাইং আওয়ারস টা বাড়িয়ে নেয়ার পর ইন্ডিয়াতে ফিরে আসার জন্য কয়েকটি এয়ার লাইন্সে এপ্লাই করেছিল। জেট এয়ার থেকে অফারটা মনঃপুত হওয়ায় সেটাই আক্সেপ্ট করে দেশে ফিরে আসে সুব্রত। চাকরিটা খুবই মনোমত সুব্রতর, ডিউটি ফ্রম হোম টাউন কলকাতা।
বড় লোকের ছেলেরা যেমন হয়, সুব্রত একেবারেই সেই রকম ছিল না। মেয়েদের সাথে খুব একটা মেলামেশা ছিল না। কিন্তু মনে পড়ে কলকাতার ফ্র্যাানকনিনে একটি মেয়েকে দেখে কেন জানি মনে হয়েছিল সুব্রতর এই রকম একটি মেয়েকেই তো ও খোঁজে। মডার্ন কিন্তু উগ্র নয়, সংযত ড্রেস, আধুনিকতা আছে কিন্তু অশালিন নয়, বুঝতে পারে কলকাতার মেয়ে নয়। মনের ভেতর একটা ভালোলাগা কৌতুহল নিয়ে একটু খোঁজ খবর করতেই জানতে পারলো, মেয়েটির নাম নিশা রয়, জেলার মেয়ে, স্কুলের পর সব হায়ার এডুকেশন এই কলকাতাতেই। প্রথম বর্ষ পাইলট ট্রেনিং স্ট্রিম। প্রথমটা সুব্রত অবাকই হয়ে গিয়েছিল একটি মেয়ের পাইলট হবার চেষ্টা দেখে। খুব খুশিও হয়েছিল, সত্যি মেয়েটার কারেজ আছে বলতে হয়। ওদের পাইলট ট্রেনিং স্ট্রিমে একটাই মেয়ে নিশা। সুব্রতর মনের আয়নায় নিশা একটা পার্মানেন্ট ছাপ ফেলে দিয়েছিল। তবে কখনো উপযাচক হয়ে পরিচয় করতে যায় নি সুব্রত। তবে কখনো কখনো হটাত কলেজ ক্যাম্পাসে বা কমন রুমে দেখা হয়ে গেলে সুব্রত বুঝতে পারত নিশাও কেমন লাজুক লাজুক চোখে ওকে দেখে, শরীরের ভাষাও যেন বদলে যায়। এক দিনই শুধু খুব কাছে থেকে নিশাকে দেখেছিল, যে দিন কলেজ থেকে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয়েছিল পাইলট ট্রেনিং কমপ্লিট করার পর। এখনো সুব্রতর মনে আছে,সে দিন ফেয়ারওয়েল শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুব্রত যখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেট দিয়ে বেড়তে যাবে হটাত দেখে নিশা এক গুচ্ছ লাল গোলাপের তোড়া নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। ওর হাতে গোলাপের তোড়াটা দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, কংগ্রাচুলেশনস, আগামী জীবনের পথে যেন এই রকম গোলাপ বিছানোই থাকে, আর কখনো আপনার সাথে দেখা হবে কিনা জানি না, ভালো থাকবেন। সেদিন সুব্রত নিশার ছলছল চোখ দুটো দেখে, আর ভুলতে পারেনি সেই দেখা নিশার চোখ দুটোকে। আজও মনে পড়ে নিশার কথা। কোথায় আছে, কি করছে কে জানে।
বর্ধমান জেলার বর্ধীষ্ণু পরিবারের মেয়ে নিশা। একান্নবর্তী পরিবার প্রচুর জমিজমা, মোটামুটি জোতদার পরিবার বলতে যা বোঝায়। পরিবারের সবাই আধুনিক মানুষীকতায় বিশ্বাসী।
ছেলে মেয়েদের কলকাতায় রেখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করছে। নিশাও বর্ধমান থেকে হাইস্কুল পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী হাসিল করেছে। ছেলেবেলা থেকেই অদ্ভুত একটা প্রফেশনের কথা ভেবে এসেছে। সুনীল আকাশে যখন অনেক উচুতে পাখীদের উড়তে দেখতো, ওরও খুব ইচ্ছে করতো পাখীদের মত নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে। ইস ওরও যদি পাখীদের মত দুটো পাখনা থাকতো? তাই সুপ্ত মনের বাসনায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতো।
এমএসসি কমপ্লিট করে নিশা সল্ট লেকের ফ্র্যারনকনিন এভিয়েশন প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পাইলট ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হয়। সেখানেই প্রথম দেখে আজকের নাম করা পাইলট ক্যাপ্টেন সুব্রত সেনকে। নিশা যখন ফার্স্ট ইয়ার সুব্রত ফাইনাল ইয়ার। কলেজে প্রথম যেদিন সুব্রত কে দেখেছিল নিশা সেদিন ই কি যেন বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট, না না ভুল হলো, ক্রাশ এট ফার্স্ট সাইট। স্মার্ট এক মাথা কোকরানো চুল, বেপরোয়া একটি ছেলে। মনের শালিনতা বোধের জন্য কখনোই হ্যাংলামি করেনি নিশা। খালি ভাবতো ওকে পেলে এই একটা মাত্র জীবনে সব কিছু পাওয়া হয়ে যাবে।
নানা রকম কন্টাক্টস থেকে সুব্রত সম্বন্ধে সব খবরাখবর জেনে নিয়েছিল নিশা। বড়লোক পরিবারের ছেলে, অবশ্য সেদিক থেকে নিশার পরিবারও কম কিছু নয়। এভিয়েশন ইন্সটিটিউটে মাঝে মাঝে সুব্রতকে দেখতে পায় নিশা
নিশাও বুঝতে পারে ওকে দেখলে সুব্রতর চোখ দুটো কেমন খুশিতে ঝিলিক দিয়ে ওঠে, বুঝতে পারে সুব্রতরও ওকে ভালো লাগে, আরো ভালো লাগে নিশার সুব্রতকে কারন আজকালকার দিনের ছেলেদের মত সুব্রত গায়ে পরা নয়। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার মধ্যে একটা সেল্ফ রেসপেক্ট ফুটে উঠেছে। একটা চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে, নিশাও বোঝে সুব্রতর আকর্ষণের কাছে ও অসহায়। ইচ্ছে করে সুব্রতর দু হাতে নিজেকে সঁপে দিতে। এক দিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি নিশা, যে দিন সুব্রতর ইন্সটিটিউটে শেষ দিন। ফেয়ারওয়েল দেয়া হচ্ছে আউট গোইং
নব্য পাইলটদের, সুব্রতকে দেখতে দেখতে নিশার দুচোখ জলে ভরে যায়।
ওর জন্য আনা লাল গোলাপের পাপড়ির ওপর ঝরে পরে নিশার চোখের জলের মুক্তো বিন্দু।বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, কি জানি আর কোন দিন ওর রাজকুমারকে দেখতে পাবে কি না নাকি এই শেষ দেখা। গেট দিয়ে সুব্রত বেড়িয়ে যাওয়ার সময়, ছুটে ওর সামনে দাঁড়ায় নিশা, সুব্রতর হাতে গোলাপের তোড়াটা দিয়ে কোনমতে বলতে পেরেছিল,
কনগ্রাচুলেশন, সামনে জীবনের পথ যেন এই গোলাপ দিয়ে কুসুমাস্তীর্ণ হয়।
জানিনা আর কোন দিন দেখা হবে কিনা। ভালো থাকবেন।
দেখতে দেখতে কেমন ছ সাত বছর কেটে গেলো, যেন সিনেমার মত, আজ এক বছর হয়ে গেলো সুব্রতর জেট এয়ারে, সপ্তাহে দুটো করে ফ্লাইট, কখনো চেন্নাই, কখনো বেঙ্গালুরু,সব ডোমেস্টিক ফ্লাইট। এখনো ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট দেয় নি সুব্রতকে। জেট এয়ারের নিয়ম মত একটা বছর প্রবেশন পিরিয়ড শেষ হলে পাইলট ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট পায়। আজ বিকেল পাঁচটায় কলকাতা টু মুম্বাই ফ্লাইট নিয়ে যেতে হবে। কাল রাতে বাবা মা ওকে খুব করে বুঝিয়েছে এবার বিয়ে করার জন্য। সুব্রতও বুঝতে পারে ধীরে ধীরে বয়েস বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু মনের কোনো একটা কোণায় সেই কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা দুটো ছলছল চোখ আজও দেখতে পায় সুব্রত। নিশা, এই নামটা ভুলতে পারেনি, ভুলতে পারেনি সেই মিষ্টি মুখটা। তাই কি জানি কেন অন্য কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই পারে না সুব্রত। আর মনের কোণায় লুকিয়ে রাখা অব্যক্ত ভালোবাসা কোথায় যে লুকিয়ে আছে কে জানে। নিশার কথা ভাবতেই চোখ দুটো কেমন চিকচিক করে ওঠে আজকের সুদর্শন পাইলট সুব্রতর।
তিনটে বাজতেই রেডি হয়ে যায় আজকের JA304 ফ্লাইটের পাইলট ইন কমান্ড সুব্রত সেন। জেট এয়ারের পাইলট কস্টুম ব্ল্যাক ডাবল ব্রেস্ট সুট, ব্লেজারের মত ডাবল রো গোল্ডেন বাটন, কোটের হাতায় চারটে করে গোল্ডেন স্ট্রাইপ, পকেটের ওপর জেট এয়ারের লোগো ব্যাচ, ব্ল্যাক টাই, আর পাইলট হ্যাট। চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের সান গ্লাস।সুব্রত লক্ষ করে দেখেছে এই ইউনিফর্ম টা পোড়লেই ওর সেল্ফ কনফিডেন্সটা কেমন বেড়ে যায়। এয়ার লাইনের গাড়িতে সাড়ে তিনটের মধ্যে দমদম পৌঁছে যায় সুব্রত। এয়ার পোর্ট অফিস থেকে ক্রুদের একটা করে চেক লিস্ট দেয়া হয় তাতে সব ক্রুদের নামের লিস্ট আর ফোন নাম্বার দেয়া থাকে। আজ এই ফ্লাইটে ছয় জন ক্রু।
সুব্রত লিস্টটাতে চোখ বোলাতে গিয়ে থমকে যায় আজ ওর সহকারী পাইলট একটি মেয়ে। মিস নিশা রয়। নামটা দেখেই চমকে ওঠে সুব্রত। কে এই নিশা রয়? অনেক অতিতে হারিয়ে ফেলা একটা ভালোবাসার নাম। না সেটা কি করে সম্ভব, নিশ্চয়ই অন্য কোনো নিশা রয়। যাক গে সব ক্রু রা এসে গেছে কো পাইলট নিশা রয় তখনো এসে পৌঁছায়নি, ওদের পাঁচ জনকে কোম্পানির কার পৌঁছিয়ে দেয় এয়ারক্রাফটে। পাইলট ইন কমান্ড আর কোপাইলট কে আগে ককপিটের সব কিছু চেক করে নিতে হয়। হটাত সুব্রত দেখলো ককপিটের ডোর ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে সেকেন্ড ইন কমান্ড নিশা রয় ডান দিকে কোপাইলটের সিটে বসে সুব্রতকে মাথা ঝাঁকিয়ে উইস করলো। সুব্রত এক ঝলক সহকারিণীর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরই মত ইউনিফর্ম পড়া পাইলট হ্যাটের পেছন দিকে কাঁধ পর্যন্ত এক রাশ রেশমি কালার্ড হেয়ার। চোখে যথারীতি কালো সানগ্লাস। সুব্রত ঠিক বুঝতে পারছে না এই নিশাই কি ওর অতিতের ফেলে আসা নিশা কি না।
কত দিন দেখেনি নিশাকে তাই ঠিক বুঝতে পারছে না। যাক গে অতিতের কথা পেছনে ফেলে রেখে সুব্রত ব্যাস্ত হয়ে পরলো টেক অফ করার প্রস্তুতিতে।
সব প্যাসেঞ্জার অন বোর্ড, প্লেনের ডোর এয়ার হোসটেস বন্ধ করে দিয়ে ইন্টার্নাল এড্রেস সিস্টেমে প্যাসেঞ্জারদের করণীয় বোঝাতে শুরু করেছে। হটাত কড়কড় করে ককপিটের স্পিকারে এটিসির গ্রীন সিগনাল। flight number JA 304 is advised to aproch through taxi way to main run way 2 . সুব্রতর ফ্লাইটের দমদম থেকে মুম্বাইয়ের উদ্যেশে যাত্রা হলো শুরু।
ট্রাফিক জ্যামে আটকিয়ে যাওয়াতে নিশার একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে, কোনো মতে চেকলিস্ট টা হাতে নিয়ে এয়ার ক্র্যা ফটে ঢুকে যায়, কাদের সাথে যাচ্ছে লিস্টে দেখারও সময় ছিল না। নিজের সিটে বসে বা দিকে বসা ক্যাপ্টেন ইন কমান্ডের দিকে তাকাতের কেমন যেন অবশ হয়ে গেলো নিশার শরীর। এ কাকে দেখছে? স্বপ্ন দেখছে নাতো? ওর বা পাশে বসে আছে ওর অনেক অতিতে ফেলে আসা ওর স্বপ্নের রাজকুমার, যাকে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ চোখ বুজলেই দেখতে পায় নিশা, সেই কলেজ জীবনের ক্রাস সুব্রত সেন।হাতের চেক লিস্টাতে চোখ বোলাতেই দেখলো ও যা ভেবেছে তাই পাশে বসে আছে ওর ভালোবাসা সুব্রত সেন। কি দারুন লাগছে সুব্রতকে পাইলটের কস্টিউমে, হ্যান্ডসাম, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। কত কত দিন পরে দেখছে ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে। হটাত সুব্রতর কাছ থেকে একটা মৃদু ধমক খেয়ে তারাতারি বাস্তবে ফিরে আসে নিশা।
কমান্ডারের যোগ্য সহকারীর মত প্লেন টেক অফে সহযোগীতা করতে থাকে।
হোটেল মেরিনা ইন এ ওদের দুজনের বুকিং পাশাপাশি দুটো ঘরে।
দুজনে দুজনের ঘরে ঢুকে যায়। সুব্রত
লাগেজ রেখে কোট টা খুলে রিলাক্স হয়ে সোফাতে বসে এক কাপ কফির অর্ডার করে জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকায়। খালি কোপাইলট মিস নিশা রায়ের কথা মনে পড়ছে। কে এই নিশা, হটাত মনে পরে যায় ওর সঙ্গে
সব সময় ওর ফ্র্যা নকনিন এভিয়েসন ইন্সটিটিউটের জার্নাল থাকে তাতে আজ পর্যন্ত কত জন পাইলট বেড়িয়েছে তাদের নাম থাকে। ব্যাগটা খুলে জার্নালটা বের করে সুব্রত,খুটিয়ে পাইলট লিস্টটা দেখতেই দেখে ও যে বছর পাশ করেছে তার তিন বছর বাদেই নিশা রায়ের নাম। তার পর থেকে এই বছর পর্যন্ত কোনো মেয়ে পাইলটের নাম নেই। জার্নালটা রেখে সুব্রত ঘরের ব্যালকোনিতে এসে দাঁড়ায়। সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত আরব সাগর। রাত হয়ে গেছে, সমুদ্রের ঢেউ এর ওপরে ফসফরাস গুলো মুক্তোর দানার মত চিকচিক করছে ঢেউএর তালে তালে নাচছে।
মনটা যেন কিছুতেই মানছে না, ভাবে ও যদি সত্যি অতিতের নিশা হতো তাহলে তো নিশ্চয় সুব্রতর কাছে নিজের পরিচয় দিত।
ঘড়ির কাটা ঘুরে চলেছে, অর্ডার দিয়ে ঘরেই ডিনার টা করে নেয় সুব্রত।
রাত এগারোটা ভাবছে শুয়েই পরা যাক। হটাত মোবাইলে হোয়াটস এপ নোটিফিকেশনের টুং আওয়াজ হতেই মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় সুব্রত। ওপেন করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ টা ওপেন করতেই দেখে অনেক গুলো লাল গোলাপের ছবি, আর তার নিচে বাঙলায় লেখা....
" অনেক অনেক বছর আগে হৃদয়ের রক্তে রাঙিয়ে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে কলেজের গেটে বিদায় জানিয়েছিলাম। আজ তোমার কোপাইলট হয়ে আবার তোমাকে খুঁজে পেয়েছি। জীবনের উড়ানে আমি যে তোমার কোপাইলট হয়েই উড়তে চাই। পারবে আমাকে সঙ্গে নিয়ে উড়তে? এবারে হাতে হাতে নয় প্রযুক্তিতে তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙে রাঙানো এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে আমার জীবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তোমার পাশের ঘরেই আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য...... তোমার অতিতের ফেলে যাওয়া নিশা। "
মেসেজটা পড়ে সুব্রত আবার সমুদ্রের
দিকে তাকায় দেখে সমুদ্রের বুকে যেন পুরো তারায় ভরা আকাশটাই ধরা দিয়েছে। সারা সমুদ্রের ঢেউএর মাথায় মাথায় সেই রুপোলি তারা গুলো নাচছে। মোবাইলটা টেবিলের ওপরে রেখে স্লিপারটা পরে ঘরের বাইরে এসে পাশের ঘরের দরজাতে হাত রাখতেই দরজাটা আস্তে খুলে যায়।
ঘরের ভেতর একটা মেয়েলি মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগে সুব্রতর, এলিডি লাইটের স্নিগ্ধ আলোতে সুব্রত তাকিয়ে দেখে শাড়ি পড়ে খুব মিষ্টি করে সেজে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর অতিতে ফেলে আসা ভালোবাসা, ওর নিশা।.................
Great
 
***** উড়ান *****
### ###
ট্যাক্সি ওয়েতে স্টার্টার বুড়ো আঙুলটা ওপরে দেখাতেই জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নাম্বার JA304 গড়াতে শুরু করলো। ককপিটে থ্রোটলের ওপর ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন ( পাইলট ইন কমান্ড) এর ডান হাত আর কো পাইলট নিশা রায়ের বা হাত, লিমিটেড স্পিডে টাক্সি ওয়ে দিয়ে গড়াতে গড়াতে দু নম্বর রান ওয়ের দিকে চলেছে এয়ারক্র্যােফট। একটাই ইঞ্জিন চালু আছে। একটা বাঁক ঘুরতেই রান ওয়েতে ঢুকে যায় এয়ার ক্র্যা ফট। অভ্যস্ত হাতে সুব্রত চারটে ইঞ্জিন চালু করে দেয়। দুজনেরই পা ব্রেকে চেপে আছে। গ্রাউন্ড এটিসি থেকে অনবরত ইন্সট্রাকশন আসছে। ধীরে ধীরে দুজনের হাত থ্রোটল পুষ করতে থাকে আর ব্রেক রিলিজ করতে থাকে, এয়ার ক্র্যাফটের স্পিড বাড়তে থাকে, ফাইনাল অপ্টিমাম স্পিড এচিভ করলে দুজনে একসাথে হ্যান্ড গিয়ারে ক্র্যা ফটের নোজ আপ করে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে এয়ারক্র্যাকফট গ্রাউন্ড ছেড়ে অল্টিচুড নিতে থাকে। অল্টিচুড মিটারে ফিফটিন থাউসেন্ড ফিট এডজাস্ট করা ছিল। পনেরো হাজার ফিট এচিভ করার পর এটিসির নির্দেশে হেডিং মিটার আর এয়ার স্পিড ইন্ডিকেটার এডজাস্ট করে দেয় নিশা। কলকাতা থেকে মুম্বাই দু ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটের ফ্লাইট। সব কন্ট্রোল এডজাস্ট করার পর ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন কন্ট্রোল অটো পাইলট করে দিয়ে, আড়মোড়া ভেঙে নিশার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে
কি মিস এক কাপ করে কফি হয়ে যাক। ইন্টারকমে নিশা হোস্টেস কে তিন কাপ কফি দিতে বলে, পেছন দিকেই বসে আছে রেডিও অপারেটর অরুন কানে হেডফোন লাগিয়ে গ্রাউন্ড এটিসি র সাথে বকবক করে চলেছে।
এয়ার হোস্টেস কফি দিয়ে গেলে তিন জনে আরাম করে কফি নিয়ে গল্প শুরু করে দিল। প্লেন উড়ে চলেছে অটো পাইলটে বম্বের ছত্রপতি শিবাজী এয়ার পোর্টের দিকে।
বা দিকের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকায় সুব্রত, শুধু মেঘ আর মেঘ।
বিকেল পাঁচটা কুড়ি মিনিটে দমদম এয়ার পোর্টের রানওয়ে থেকে টেক অফ করেছিল সুব্রতর ফ্লাইট। ঘড়িতে এখন ছটা। অস্তগামী সূর্যের লাল আলোয় পশ্চিম আকাশ যেন সিঁদুর রঙে রঙিন হয়ে উঠছে, সেই রঙের ছটায় ভরে গিয়েছে প্লেনের ককপিট। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকে পাইলট ইন কমান্ড সুব্রত সেন আর কোপাইলট নিশা রয়।
ঠিক ঘড়িতে আটটা বেজে পাঁচ মিনিটে JA304 বম্বের ছত্রপতি শিবাজি এয়ার পোর্টের গ্রাউন্ড টাচ করলো।
বাসে করে প্যাসেঞ্জার রা টারমিনাল বিল্ডিং এর দিকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর স্পেশাল বাস ক্রুদের নামিয়ে দিল জেট এয়ারের এয়ার পোর্ট অফিসে।
কিছু অফিশিয়াল কাজ কম্পলিট করে ক্যাপ্টেন সুব্রত সেন আর নিশাকে নিয়ে স্পেশাল ক্যাব ছুটে চললো ওদের জন্য নিদৃষ্ট হোটেল মেরিনা ইনের দিকে।
সুব্রত সেন কলকাতার বিখ্যাত ব্যারিস্টার অরিন্দম সেনের ছোট ছেলে। বরাবরই পড়াশুনায় ভালো, কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিসিক্সে এমএসসি কম্পলিট করে কলকাতাতেই ফ্র্যাটনকনিন স্কুল অফ এভিয়েশন থেকে চার বছরের পাইলট ট্রেনিং কোর্সে ডিপ্লোমা করে বোইং আর এয়ারবাস পাইলটিং এ অভিজ্ঞতার জন্য লন্ডন পাড়ি দেয়। ওখানে রয়াল স্কুল অফ এভিয়েশন সেন্টারে তিন বছরের কোর্স কমপ্লিট করে ওখানেই কঙ্গো এয়ার লাইনসে জয়েন করে। ইউ কের ডোমেস্টিক সার্ভিস এয়ার লাইনস।একজন পাইলটের এক্সপেরিয়েন্স কাউন্ট হয় কত ঘন্টা সে ফ্লাই করেছে তার ওপর, মানে ফ্লাইং আওয়ারস যাকে বলে।
মোটামুটি দুবছর কঙ্গোতে চাকরি করে ফ্লাইং আওয়ারস টা বাড়িয়ে নেয়ার পর ইন্ডিয়াতে ফিরে আসার জন্য কয়েকটি এয়ার লাইন্সে এপ্লাই করেছিল। জেট এয়ার থেকে অফারটা মনঃপুত হওয়ায় সেটাই আক্সেপ্ট করে দেশে ফিরে আসে সুব্রত। চাকরিটা খুবই মনোমত সুব্রতর, ডিউটি ফ্রম হোম টাউন কলকাতা।
বড় লোকের ছেলেরা যেমন হয়, সুব্রত একেবারেই সেই রকম ছিল না। মেয়েদের সাথে খুব একটা মেলামেশা ছিল না। কিন্তু মনে পড়ে কলকাতার ফ্র্যাানকনিনে একটি মেয়েকে দেখে কেন জানি মনে হয়েছিল সুব্রতর এই রকম একটি মেয়েকেই তো ও খোঁজে। মডার্ন কিন্তু উগ্র নয়, সংযত ড্রেস, আধুনিকতা আছে কিন্তু অশালিন নয়, বুঝতে পারে কলকাতার মেয়ে নয়। মনের ভেতর একটা ভালোলাগা কৌতুহল নিয়ে একটু খোঁজ খবর করতেই জানতে পারলো, মেয়েটির নাম নিশা রয়, জেলার মেয়ে, স্কুলের পর সব হায়ার এডুকেশন এই কলকাতাতেই। প্রথম বর্ষ পাইলট ট্রেনিং স্ট্রিম। প্রথমটা সুব্রত অবাকই হয়ে গিয়েছিল একটি মেয়ের পাইলট হবার চেষ্টা দেখে। খুব খুশিও হয়েছিল, সত্যি মেয়েটার কারেজ আছে বলতে হয়। ওদের পাইলট ট্রেনিং স্ট্রিমে একটাই মেয়ে নিশা। সুব্রতর মনের আয়নায় নিশা একটা পার্মানেন্ট ছাপ ফেলে দিয়েছিল। তবে কখনো উপযাচক হয়ে পরিচয় করতে যায় নি সুব্রত। তবে কখনো কখনো হটাত কলেজ ক্যাম্পাসে বা কমন রুমে দেখা হয়ে গেলে সুব্রত বুঝতে পারত নিশাও কেমন লাজুক লাজুক চোখে ওকে দেখে, শরীরের ভাষাও যেন বদলে যায়। এক দিনই শুধু খুব কাছে থেকে নিশাকে দেখেছিল, যে দিন কলেজ থেকে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয়েছিল পাইলট ট্রেনিং কমপ্লিট করার পর। এখনো সুব্রতর মনে আছে,সে দিন ফেয়ারওয়েল শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুব্রত যখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেট দিয়ে বেড়তে যাবে হটাত দেখে নিশা এক গুচ্ছ লাল গোলাপের তোড়া নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। ওর হাতে গোলাপের তোড়াটা দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, কংগ্রাচুলেশনস, আগামী জীবনের পথে যেন এই রকম গোলাপ বিছানোই থাকে, আর কখনো আপনার সাথে দেখা হবে কিনা জানি না, ভালো থাকবেন। সেদিন সুব্রত নিশার ছলছল চোখ দুটো দেখে, আর ভুলতে পারেনি সেই দেখা নিশার চোখ দুটোকে। আজও মনে পড়ে নিশার কথা। কোথায় আছে, কি করছে কে জানে।
বর্ধমান জেলার বর্ধীষ্ণু পরিবারের মেয়ে নিশা। একান্নবর্তী পরিবার প্রচুর জমিজমা, মোটামুটি জোতদার পরিবার বলতে যা বোঝায়। পরিবারের সবাই আধুনিক মানুষীকতায় বিশ্বাসী।
ছেলে মেয়েদের কলকাতায় রেখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করছে। নিশাও বর্ধমান থেকে হাইস্কুল পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী হাসিল করেছে। ছেলেবেলা থেকেই অদ্ভুত একটা প্রফেশনের কথা ভেবে এসেছে। সুনীল আকাশে যখন অনেক উচুতে পাখীদের উড়তে দেখতো, ওরও খুব ইচ্ছে করতো পাখীদের মত নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে। ইস ওরও যদি পাখীদের মত দুটো পাখনা থাকতো? তাই সুপ্ত মনের বাসনায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতো।
এমএসসি কমপ্লিট করে নিশা সল্ট লেকের ফ্র্যারনকনিন এভিয়েশন প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পাইলট ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হয়। সেখানেই প্রথম দেখে আজকের নাম করা পাইলট ক্যাপ্টেন সুব্রত সেনকে। নিশা যখন ফার্স্ট ইয়ার সুব্রত ফাইনাল ইয়ার। কলেজে প্রথম যেদিন সুব্রত কে দেখেছিল নিশা সেদিন ই কি যেন বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট, না না ভুল হলো, ক্রাশ এট ফার্স্ট সাইট। স্মার্ট এক মাথা কোকরানো চুল, বেপরোয়া একটি ছেলে। মনের শালিনতা বোধের জন্য কখনোই হ্যাংলামি করেনি নিশা। খালি ভাবতো ওকে পেলে এই একটা মাত্র জীবনে সব কিছু পাওয়া হয়ে যাবে।
নানা রকম কন্টাক্টস থেকে সুব্রত সম্বন্ধে সব খবরাখবর জেনে নিয়েছিল নিশা। বড়লোক পরিবারের ছেলে, অবশ্য সেদিক থেকে নিশার পরিবারও কম কিছু নয়। এভিয়েশন ইন্সটিটিউটে মাঝে মাঝে সুব্রতকে দেখতে পায় নিশা
নিশাও বুঝতে পারে ওকে দেখলে সুব্রতর চোখ দুটো কেমন খুশিতে ঝিলিক দিয়ে ওঠে, বুঝতে পারে সুব্রতরও ওকে ভালো লাগে, আরো ভালো লাগে নিশার সুব্রতকে কারন আজকালকার দিনের ছেলেদের মত সুব্রত গায়ে পরা নয়। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার মধ্যে একটা সেল্ফ রেসপেক্ট ফুটে উঠেছে। একটা চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে, নিশাও বোঝে সুব্রতর আকর্ষণের কাছে ও অসহায়। ইচ্ছে করে সুব্রতর দু হাতে নিজেকে সঁপে দিতে। এক দিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি নিশা, যে দিন সুব্রতর ইন্সটিটিউটে শেষ দিন। ফেয়ারওয়েল দেয়া হচ্ছে আউট গোইং
নব্য পাইলটদের, সুব্রতকে দেখতে দেখতে নিশার দুচোখ জলে ভরে যায়।
ওর জন্য আনা লাল গোলাপের পাপড়ির ওপর ঝরে পরে নিশার চোখের জলের মুক্তো বিন্দু।বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, কি জানি আর কোন দিন ওর রাজকুমারকে দেখতে পাবে কি না নাকি এই শেষ দেখা। গেট দিয়ে সুব্রত বেড়িয়ে যাওয়ার সময়, ছুটে ওর সামনে দাঁড়ায় নিশা, সুব্রতর হাতে গোলাপের তোড়াটা দিয়ে কোনমতে বলতে পেরেছিল,
কনগ্রাচুলেশন, সামনে জীবনের পথ যেন এই গোলাপ দিয়ে কুসুমাস্তীর্ণ হয়।
জানিনা আর কোন দিন দেখা হবে কিনা। ভালো থাকবেন।
দেখতে দেখতে কেমন ছ সাত বছর কেটে গেলো, যেন সিনেমার মত, আজ এক বছর হয়ে গেলো সুব্রতর জেট এয়ারে, সপ্তাহে দুটো করে ফ্লাইট, কখনো চেন্নাই, কখনো বেঙ্গালুরু,সব ডোমেস্টিক ফ্লাইট। এখনো ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট দেয় নি সুব্রতকে। জেট এয়ারের নিয়ম মত একটা বছর প্রবেশন পিরিয়ড শেষ হলে পাইলট ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট পায়। আজ বিকেল পাঁচটায় কলকাতা টু মুম্বাই ফ্লাইট নিয়ে যেতে হবে। কাল রাতে বাবা মা ওকে খুব করে বুঝিয়েছে এবার বিয়ে করার জন্য। সুব্রতও বুঝতে পারে ধীরে ধীরে বয়েস বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু মনের কোনো একটা কোণায় সেই কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা দুটো ছলছল চোখ আজও দেখতে পায় সুব্রত। নিশা, এই নামটা ভুলতে পারেনি, ভুলতে পারেনি সেই মিষ্টি মুখটা। তাই কি জানি কেন অন্য কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই পারে না সুব্রত। আর মনের কোণায় লুকিয়ে রাখা অব্যক্ত ভালোবাসা কোথায় যে লুকিয়ে আছে কে জানে। নিশার কথা ভাবতেই চোখ দুটো কেমন চিকচিক করে ওঠে আজকের সুদর্শন পাইলট সুব্রতর।
তিনটে বাজতেই রেডি হয়ে যায় আজকের JA304 ফ্লাইটের পাইলট ইন কমান্ড সুব্রত সেন। জেট এয়ারের পাইলট কস্টুম ব্ল্যাক ডাবল ব্রেস্ট সুট, ব্লেজারের মত ডাবল রো গোল্ডেন বাটন, কোটের হাতায় চারটে করে গোল্ডেন স্ট্রাইপ, পকেটের ওপর জেট এয়ারের লোগো ব্যাচ, ব্ল্যাক টাই, আর পাইলট হ্যাট। চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের সান গ্লাস।সুব্রত লক্ষ করে দেখেছে এই ইউনিফর্ম টা পোড়লেই ওর সেল্ফ কনফিডেন্সটা কেমন বেড়ে যায়। এয়ার লাইনের গাড়িতে সাড়ে তিনটের মধ্যে দমদম পৌঁছে যায় সুব্রত। এয়ার পোর্ট অফিস থেকে ক্রুদের একটা করে চেক লিস্ট দেয়া হয় তাতে সব ক্রুদের নামের লিস্ট আর ফোন নাম্বার দেয়া থাকে। আজ এই ফ্লাইটে ছয় জন ক্রু।
সুব্রত লিস্টটাতে চোখ বোলাতে গিয়ে থমকে যায় আজ ওর সহকারী পাইলট একটি মেয়ে। মিস নিশা রয়। নামটা দেখেই চমকে ওঠে সুব্রত। কে এই নিশা রয়? অনেক অতিতে হারিয়ে ফেলা একটা ভালোবাসার নাম। না সেটা কি করে সম্ভব, নিশ্চয়ই অন্য কোনো নিশা রয়। যাক গে সব ক্রু রা এসে গেছে কো পাইলট নিশা রয় তখনো এসে পৌঁছায়নি, ওদের পাঁচ জনকে কোম্পানির কার পৌঁছিয়ে দেয় এয়ারক্রাফটে। পাইলট ইন কমান্ড আর কোপাইলট কে আগে ককপিটের সব কিছু চেক করে নিতে হয়। হটাত সুব্রত দেখলো ককপিটের ডোর ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে সেকেন্ড ইন কমান্ড নিশা রয় ডান দিকে কোপাইলটের সিটে বসে সুব্রতকে মাথা ঝাঁকিয়ে উইস করলো। সুব্রত এক ঝলক সহকারিণীর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরই মত ইউনিফর্ম পড়া পাইলট হ্যাটের পেছন দিকে কাঁধ পর্যন্ত এক রাশ রেশমি কালার্ড হেয়ার। চোখে যথারীতি কালো সানগ্লাস। সুব্রত ঠিক বুঝতে পারছে না এই নিশাই কি ওর অতিতের ফেলে আসা নিশা কি না।
কত দিন দেখেনি নিশাকে তাই ঠিক বুঝতে পারছে না। যাক গে অতিতের কথা পেছনে ফেলে রেখে সুব্রত ব্যাস্ত হয়ে পরলো টেক অফ করার প্রস্তুতিতে।
সব প্যাসেঞ্জার অন বোর্ড, প্লেনের ডোর এয়ার হোসটেস বন্ধ করে দিয়ে ইন্টার্নাল এড্রেস সিস্টেমে প্যাসেঞ্জারদের করণীয় বোঝাতে শুরু করেছে। হটাত কড়কড় করে ককপিটের স্পিকারে এটিসির গ্রীন সিগনাল। flight number JA 304 is advised to aproch through taxi way to main run way 2 . সুব্রতর ফ্লাইটের দমদম থেকে মুম্বাইয়ের উদ্যেশে যাত্রা হলো শুরু।
ট্রাফিক জ্যামে আটকিয়ে যাওয়াতে নিশার একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে, কোনো মতে চেকলিস্ট টা হাতে নিয়ে এয়ার ক্র্যা ফটে ঢুকে যায়, কাদের সাথে যাচ্ছে লিস্টে দেখারও সময় ছিল না। নিজের সিটে বসে বা দিকে বসা ক্যাপ্টেন ইন কমান্ডের দিকে তাকাতের কেমন যেন অবশ হয়ে গেলো নিশার শরীর। এ কাকে দেখছে? স্বপ্ন দেখছে নাতো? ওর বা পাশে বসে আছে ওর অনেক অতিতে ফেলে আসা ওর স্বপ্নের রাজকুমার, যাকে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ চোখ বুজলেই দেখতে পায় নিশা, সেই কলেজ জীবনের ক্রাস সুব্রত সেন।হাতের চেক লিস্টাতে চোখ বোলাতেই দেখলো ও যা ভেবেছে তাই পাশে বসে আছে ওর ভালোবাসা সুব্রত সেন। কি দারুন লাগছে সুব্রতকে পাইলটের কস্টিউমে, হ্যান্ডসাম, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। কত কত দিন পরে দেখছে ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে। হটাত সুব্রতর কাছ থেকে একটা মৃদু ধমক খেয়ে তারাতারি বাস্তবে ফিরে আসে নিশা।
কমান্ডারের যোগ্য সহকারীর মত প্লেন টেক অফে সহযোগীতা করতে থাকে।
হোটেল মেরিনা ইন এ ওদের দুজনের বুকিং পাশাপাশি দুটো ঘরে।
দুজনে দুজনের ঘরে ঢুকে যায়। সুব্রত
লাগেজ রেখে কোট টা খুলে রিলাক্স হয়ে সোফাতে বসে এক কাপ কফির অর্ডার করে জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকায়। খালি কোপাইলট মিস নিশা রায়ের কথা মনে পড়ছে। কে এই নিশা, হটাত মনে পরে যায় ওর সঙ্গে
সব সময় ওর ফ্র্যা নকনিন এভিয়েসন ইন্সটিটিউটের জার্নাল থাকে তাতে আজ পর্যন্ত কত জন পাইলট বেড়িয়েছে তাদের নাম থাকে। ব্যাগটা খুলে জার্নালটা বের করে সুব্রত,খুটিয়ে পাইলট লিস্টটা দেখতেই দেখে ও যে বছর পাশ করেছে তার তিন বছর বাদেই নিশা রায়ের নাম। তার পর থেকে এই বছর পর্যন্ত কোনো মেয়ে পাইলটের নাম নেই। জার্নালটা রেখে সুব্রত ঘরের ব্যালকোনিতে এসে দাঁড়ায়। সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত আরব সাগর। রাত হয়ে গেছে, সমুদ্রের ঢেউ এর ওপরে ফসফরাস গুলো মুক্তোর দানার মত চিকচিক করছে ঢেউএর তালে তালে নাচছে।
মনটা যেন কিছুতেই মানছে না, ভাবে ও যদি সত্যি অতিতের নিশা হতো তাহলে তো নিশ্চয় সুব্রতর কাছে নিজের পরিচয় দিত।
ঘড়ির কাটা ঘুরে চলেছে, অর্ডার দিয়ে ঘরেই ডিনার টা করে নেয় সুব্রত।
রাত এগারোটা ভাবছে শুয়েই পরা যাক। হটাত মোবাইলে হোয়াটস এপ নোটিফিকেশনের টুং আওয়াজ হতেই মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় সুব্রত। ওপেন করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ টা ওপেন করতেই দেখে অনেক গুলো লাল গোলাপের ছবি, আর তার নিচে বাঙলায় লেখা....
" অনেক অনেক বছর আগে হৃদয়ের রক্তে রাঙিয়ে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে কলেজের গেটে বিদায় জানিয়েছিলাম। আজ তোমার কোপাইলট হয়ে আবার তোমাকে খুঁজে পেয়েছি। জীবনের উড়ানে আমি যে তোমার কোপাইলট হয়েই উড়তে চাই। পারবে আমাকে সঙ্গে নিয়ে উড়তে? এবারে হাতে হাতে নয় প্রযুক্তিতে তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙে রাঙানো এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে আমার জীবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তোমার পাশের ঘরেই আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য...... তোমার অতিতের ফেলে যাওয়া নিশা। "
মেসেজটা পড়ে সুব্রত আবার সমুদ্রের
দিকে তাকায় দেখে সমুদ্রের বুকে যেন পুরো তারায় ভরা আকাশটাই ধরা দিয়েছে। সারা সমুদ্রের ঢেউএর মাথায় মাথায় সেই রুপোলি তারা গুলো নাচছে। মোবাইলটা টেবিলের ওপরে রেখে স্লিপারটা পরে ঘরের বাইরে এসে পাশের ঘরের দরজাতে হাত রাখতেই দরজাটা আস্তে খুলে যায়।
ঘরের ভেতর একটা মেয়েলি মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগে সুব্রতর, এলিডি লাইটের স্নিগ্ধ আলোতে সুব্রত তাকিয়ে দেখে শাড়ি পড়ে খুব মিষ্টি করে সেজে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর অতিতে ফেলে আসা ভালোবাসা, ওর নিশা।.................
Nice
 
Top