আজ অনেক দিন পর তাঁকে দেখলাম। একদম হঠাৎ করেই।
কয়েক সপ্তাহ ধরে এইখানে আছি। কয়েকজনের সাথে মিশে গেছি। কয়েকজন দেখেও না দেখার ভান করে চলে এড়িয়ে গেছে। কয়েকজন জানেই না আমি এখানে আত্মগোপন করে আছি। গত ছদিন ধরে ভালই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। খুব জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছে এমন না। তবে সারাক্ষণ ধরেই টিপটিপ করে ঝড়ে যাচ্ছে। আকাশের সব অপ্সরীরা স্নান সেরে চুল শুকোতে বসেছে মেঘের উপর হয়তো। তাই আকাশটা সর্বক্ষণ মেঘে ঢেকে গেছে। সব অপ্সরীদের জায়গা হতে হবে তো তাই। তাদের ভেজা চুল থেকে চুইয়ে পড়ছে হয়তো বৃষ্টি হয়ে এই টাপুরটুপুর ধারা।
একটু বেশি টেনে ফেলেছি। তাই আলবাল বকে যাচ্ছি। আমি সাধারণত বৃষ্টির দিনে বাইরে বের হই না। হ্যাজলা পানিতে আমার ভিজতে ভাল লাগে না। লাগে না বলতে আগে লাগত, এখন লাগে না আরকি। তাই বিকেলে বৃষ্টিটা একটু ধরে আসাতেই এক প্যাক সিগারেট নিয়ে রুমেই বসে আছি। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সিনেমা, সিরিজ, গান, বই নাকি ইন্টারনেট? কিছুদিন আগে 'Culpa Mia' সিনেমাটা মুক্তি পেয়েছে। পাড়ার বইবাজার থেকে কিছু বই কিনতে গিয়ে সেই সিনেমার বই 'My fault' চোখে পড়ে গেছিল। ১৩০ টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলাম। এক্সামের আগের রাতটা সেই বইতেই সময় দিয়েছি। টিন এজ রোমান্স নিয়ে লেখা। ১৮০ পেজ অবধি পড়ে ফেলে রেখেছি। আজ সেটা নিয়েই বসব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
সালা এক্সাম এর আগের রাত ছাড়া নোভেল পড়তে তৃপ্তি আসে না।
টিন এজ রোমান্সটা ঠিক আমার সাথে যায় না। যায় না বলতে আগে যেত, এখন যায় না। টিন এজ রোমান্স বই এ চুমুর প্রতি যেই নেশা, যেই উদ্দীপনা দেখানো হয় সেটা এখন আমার মনে বিরক্তি উদ্রেক করে। চুমু, আহা... সদ্য কৈশর পেরোনো তরুণদের প্রচন্ড আবেগের জায়গা এই চুমু। প্রথম চুমুর স্বাদ পাবার পর মনে হয় যেসব সোশ্যালিস্টরা দুই বেলা খাবারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে, তারা নেহায়েত অভাগা। চুমুর স্বাদ পায় নি। নাহলে কবেই ভাত ছেড়ে রোজ দু বেলা চুমুর জন্য আন্দোলন করত। অনুমোদিত চুমু নয়। ধরা পরে যাবার ভয়ে লুকিয়ে খাওয়া চুমু। হুট করে ঝোকের বসে রিকশায় বসে খাওয়া চুমু। যেখানে সময় থমকে যায় নরম ঠোটজোড়া এক হলে। লিপ্সটিক ছাড়া একদম স্বাদহীন চামড়া কি করে এতো সুস্বাদু হতে পারে চুমু না খেলে বোঝা যায় না। লজ্জায় নিশ্চুপ থাকা তাঁর ঠোট, আমার হালকা করে ঠোটে চাপ দিয়ে ঠোট ফাকা করার চেষ্টা যেটা অপর পাশের লাজুক ঠোট অনুমোদন করছে না। যখন অনুমতি দিল অবশেষে; জানি না সেটা বিবেচনা করে দেওয়া নাকি কেবল ঝোকের বসে ন্যাচারাল রিফ্লেক্স; তখন একটা কেমন হতভম্বতা। "সে কি আমার জীভকে স্বাগত জানাবে? নাকি আমিই তাঁর অপেক্ষা করব?" এরপর কি যেন হয়ে যাওয়া। হাতগুলো অবাধ্য হতে চাওয়া...
আজকে আসলেই বেশি টেনে ফেলেছি। এসব কারণেই টিন এজ রোমান্সটা আর ভাল লাগে না। চুমু না খেলে ঠোট রেখে কি লাভ? সিগারেটের টার জমিয়ে ক্ষয় করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কাশিটা বাড়ছে। বাড়ুক। কাশি না হলে সিগারেট খেয়ে কি লাভ। বইটা ভাল লাগছে না। পরবর্তী পরীক্ষার আগের দিন রাতে পড়ব বলে রেখে দিলাম বইটা। এক কাপ কড়া চা হলে মন্দ হত না।
এধরনের আবহাওয়ায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ভালই লাগে। কানের মাঝে আপন মনে বাজতে থাকে অঞ্জন দত্তের "মেঘ জমেছে আবার আকাশে, ভীড় জমেছে ফুটপাথের ধারে। ডাকছে আবার নিয়ন আলো তোমাকে আমারে, সন্ধ্যে নামছে ক্ষ্যাপার শহরে"। আমার জীবন থেকে সবই হারিয়ে যায়। আমি যাই ভালবাসি তাই হারিয়ে যায়। নিয়ন আলো হারিয়ে গেল। নিয়ন আলোয় হাত ধরে ফুটপাথে বসে থাকা হারিয়ে গেল। টোকাই ছেলেটার পেড়ে আনা কদম কোনও দামাদামী ছাড়াই তোমার হাতে তুলে দেওয়া হারিয়ে গেল। আমার তোমাকে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া হারিয়ে গেল। সিগারেটের পোড়া গন্ধ পেয়ে আমার প্রতি তোমার রাগ দেখানো হারিয়ে গেল। তুমিও হারিয়ে গেলে। অন্তত নিয়ন আলোটা থেকে গেলেও পারত। নেশাটা বেশি হয়ে গেলে ফুটপাথে একা বসেই স্মৃতি রোমন্থন করতে পারতাম সাইকোপ্যাথদের মত।
সাইকোপ্যাথ? হাহ। আমাকে নিয়ে সাইকো থ্রিলার লেখা যাবে? কিন্তু লিখবেটাই বা কে। আত্মজীবনী লেখে শুনেছি। আত্মরোমাঞ্চ লেখে কেউ শুনি নি।
আজ আসলেই বেশি টেনে ফেলেছি। সময় খুব ধীরে চলছে। একটু ইন্টারনেটে না আসলেই হচ্ছে না ভেবে চলে আসলাম একটি প্রাপ্তবয়স্ক আড্ডা সাইটে। পরিচিত কয়েকজন আছে। তবে এদের নিজেদের চক্র আছে। টাইপ মিলে না। মিশতে পারব না। মাঝে মাঝে দু চারটা বোকা বোকা মেসেজ করছি। অনেকটা টিভিতে ফুটবল দেখতে বসে চেচানোর মত মনে হচ্ছে। আমার ইচ্ছে মত আমি বকছি। বাকিরা যে যার কাজ করছে। ঘোর লাগা চোখটা পরিষ্কার করতে আরেকটা সিগারেট জ্বালালাম। রুমে উপস্থিত সবার নামগুলো পড়ছি। উদ্ভট সব নাম। কে কি ভেবে কাকে ইম্প্রেস করতে দিয়েছে কে জানে? হয়তো নিজে ইম্প্রেস হয়েছে তাই দিয়েছে। অন্য কারও কি হল না হল তাতে কি এসে যায়। এর মাঝে চ্যাটরুমের ওয়ালে একজন একটা মেসেজ করল। আহামরি কোনও মেসেজ না। জাস্ট "hi" লিখেছে। ছবি ছাড়া মানুষের আইকনের পাশে গোলাপি সার্কেল বোঝাচ্ছে আনভেরিফাইড ফিমেল আইডি। সাধারণত নতুন আসা কিংবা মাত্র অন হওয়া ফিমেল আইডিগুলো এধরনের ফিশিং করে। ওয়ালে একটা "hi" লিখে নিজের উপস্থিতির জানান দেয়। এরপর অসংখ্য লোক তার ইনবক্স ভরে ফেলে মেসেজ পাঠিয়ে। সে বেছে নেয় তার মন মত দুই একজনকে। কি দেখে বাছে কে জানে? হয়তো ঐ নাম দেখেই বাছে। ভাবতে ভাবতে সেই গোলাপি চক্রে ঢাকা আনভেরিফাইড প্রোফাইলের নামটা দেখলাম।
যদিও আমি শ্বাসনালীর সমস্যায় ভুগছি, তবু সিগারেট খেতে গিয়ে আমি কাশি না। এবার কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে এলো। ওই নামটা... কেন ঐ নাম নিয়ে এখানে এলো? কি ভেবে এলো? নিজে ইম্প্রেস হয়ে এলো? নাকি কাউকে ইম্প্রেস করতে এলো? কোনও একটা শুকনো ক্ষততে অসাবধানতাবশত আঘাত লাগলে যেমন অবাক জ্বালা ধরে উঠে তেমনই একটা জ্বালা বুকের ভেতর। পেটের ভেতরটা কেমন শূণ্য লাগছে। যেন কালকেই রেজাল্ট দিবে কোনও এক্সামের।
এতোক্ষণে নিশ্চয়ই ঐ নামধারিনীর ইনবক্স ভরে গেছে ক্ষুদে বার্তায়। আমার খুব ইচ্ছে করছে তাকে জিজ্ঞেস করতে যে এই নামটা সে কেন ব্যবহার করল? জবাব পাবার সম্ভাবনা নেই তাই সাহস করতে পারছি না জিজ্ঞেস করবার। ঐ নামধারি কোনও জায়গা থেকে আমি অবহেলাটা নিতে পারি না। পারি না বলতে আগেও পারতাম না, এখনও পারি না।
প্রাপ্তবয়স্কদের এই সাইট থেকে বের হয়ে গেলাম তক্ষুনি। আজ বেশি টানা হয় নি। আরেকটু টানতে হবে... নইলে পুরোনো স্মৃতি মনে আসছে কেন?
ঐ নামের একজন আগে আমার ছিল। এখন সে আর এখানে নেই। খুজে দেখতে যাই নি। কারণ আমি জানি, সে কোথাও নেই।
আচমকা একটা জোড়ালো ঝাপটা দিল বৃষ্টি, যেটা ঝিরিঝিরি থেকে একটু বেশিই জোড়ে। হয়তো সে এখন ঐ মেঘের উপর অপ্সরীদের সাথে বসে চুল শুকোচ্ছে। দেরি সহ্য হয় না বলে মাত্রই ঝাড়া দিয়ে দ্রুতে শুকিয়ে নিতে চাইছে চুলগুলো।
সন্ধ্যেটা সুন্দর, তবে স্বস্তিদায়ক না। আজকের এই সন্ধ্যেটা আমার না। আমার জীবনে আর সন্ধ্যে আসে না। আসে না বলতে আগে আসত, সে মরে যাবার পর থেকে এখন আর আসে না।
কয়েক সপ্তাহ ধরে এইখানে আছি। কয়েকজনের সাথে মিশে গেছি। কয়েকজন দেখেও না দেখার ভান করে চলে এড়িয়ে গেছে। কয়েকজন জানেই না আমি এখানে আত্মগোপন করে আছি। গত ছদিন ধরে ভালই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। খুব জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছে এমন না। তবে সারাক্ষণ ধরেই টিপটিপ করে ঝড়ে যাচ্ছে। আকাশের সব অপ্সরীরা স্নান সেরে চুল শুকোতে বসেছে মেঘের উপর হয়তো। তাই আকাশটা সর্বক্ষণ মেঘে ঢেকে গেছে। সব অপ্সরীদের জায়গা হতে হবে তো তাই। তাদের ভেজা চুল থেকে চুইয়ে পড়ছে হয়তো বৃষ্টি হয়ে এই টাপুরটুপুর ধারা।
একটু বেশি টেনে ফেলেছি। তাই আলবাল বকে যাচ্ছি। আমি সাধারণত বৃষ্টির দিনে বাইরে বের হই না। হ্যাজলা পানিতে আমার ভিজতে ভাল লাগে না। লাগে না বলতে আগে লাগত, এখন লাগে না আরকি। তাই বিকেলে বৃষ্টিটা একটু ধরে আসাতেই এক প্যাক সিগারেট নিয়ে রুমেই বসে আছি। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সিনেমা, সিরিজ, গান, বই নাকি ইন্টারনেট? কিছুদিন আগে 'Culpa Mia' সিনেমাটা মুক্তি পেয়েছে। পাড়ার বইবাজার থেকে কিছু বই কিনতে গিয়ে সেই সিনেমার বই 'My fault' চোখে পড়ে গেছিল। ১৩০ টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলাম। এক্সামের আগের রাতটা সেই বইতেই সময় দিয়েছি। টিন এজ রোমান্স নিয়ে লেখা। ১৮০ পেজ অবধি পড়ে ফেলে রেখেছি। আজ সেটা নিয়েই বসব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
সালা এক্সাম এর আগের রাত ছাড়া নোভেল পড়তে তৃপ্তি আসে না।
টিন এজ রোমান্সটা ঠিক আমার সাথে যায় না। যায় না বলতে আগে যেত, এখন যায় না। টিন এজ রোমান্স বই এ চুমুর প্রতি যেই নেশা, যেই উদ্দীপনা দেখানো হয় সেটা এখন আমার মনে বিরক্তি উদ্রেক করে। চুমু, আহা... সদ্য কৈশর পেরোনো তরুণদের প্রচন্ড আবেগের জায়গা এই চুমু। প্রথম চুমুর স্বাদ পাবার পর মনে হয় যেসব সোশ্যালিস্টরা দুই বেলা খাবারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে, তারা নেহায়েত অভাগা। চুমুর স্বাদ পায় নি। নাহলে কবেই ভাত ছেড়ে রোজ দু বেলা চুমুর জন্য আন্দোলন করত। অনুমোদিত চুমু নয়। ধরা পরে যাবার ভয়ে লুকিয়ে খাওয়া চুমু। হুট করে ঝোকের বসে রিকশায় বসে খাওয়া চুমু। যেখানে সময় থমকে যায় নরম ঠোটজোড়া এক হলে। লিপ্সটিক ছাড়া একদম স্বাদহীন চামড়া কি করে এতো সুস্বাদু হতে পারে চুমু না খেলে বোঝা যায় না। লজ্জায় নিশ্চুপ থাকা তাঁর ঠোট, আমার হালকা করে ঠোটে চাপ দিয়ে ঠোট ফাকা করার চেষ্টা যেটা অপর পাশের লাজুক ঠোট অনুমোদন করছে না। যখন অনুমতি দিল অবশেষে; জানি না সেটা বিবেচনা করে দেওয়া নাকি কেবল ঝোকের বসে ন্যাচারাল রিফ্লেক্স; তখন একটা কেমন হতভম্বতা। "সে কি আমার জীভকে স্বাগত জানাবে? নাকি আমিই তাঁর অপেক্ষা করব?" এরপর কি যেন হয়ে যাওয়া। হাতগুলো অবাধ্য হতে চাওয়া...
আজকে আসলেই বেশি টেনে ফেলেছি। এসব কারণেই টিন এজ রোমান্সটা আর ভাল লাগে না। চুমু না খেলে ঠোট রেখে কি লাভ? সিগারেটের টার জমিয়ে ক্ষয় করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কাশিটা বাড়ছে। বাড়ুক। কাশি না হলে সিগারেট খেয়ে কি লাভ। বইটা ভাল লাগছে না। পরবর্তী পরীক্ষার আগের দিন রাতে পড়ব বলে রেখে দিলাম বইটা। এক কাপ কড়া চা হলে মন্দ হত না।
এধরনের আবহাওয়ায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ভালই লাগে। কানের মাঝে আপন মনে বাজতে থাকে অঞ্জন দত্তের "মেঘ জমেছে আবার আকাশে, ভীড় জমেছে ফুটপাথের ধারে। ডাকছে আবার নিয়ন আলো তোমাকে আমারে, সন্ধ্যে নামছে ক্ষ্যাপার শহরে"। আমার জীবন থেকে সবই হারিয়ে যায়। আমি যাই ভালবাসি তাই হারিয়ে যায়। নিয়ন আলো হারিয়ে গেল। নিয়ন আলোয় হাত ধরে ফুটপাথে বসে থাকা হারিয়ে গেল। টোকাই ছেলেটার পেড়ে আনা কদম কোনও দামাদামী ছাড়াই তোমার হাতে তুলে দেওয়া হারিয়ে গেল। আমার তোমাকে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া হারিয়ে গেল। সিগারেটের পোড়া গন্ধ পেয়ে আমার প্রতি তোমার রাগ দেখানো হারিয়ে গেল। তুমিও হারিয়ে গেলে। অন্তত নিয়ন আলোটা থেকে গেলেও পারত। নেশাটা বেশি হয়ে গেলে ফুটপাথে একা বসেই স্মৃতি রোমন্থন করতে পারতাম সাইকোপ্যাথদের মত।
সাইকোপ্যাথ? হাহ। আমাকে নিয়ে সাইকো থ্রিলার লেখা যাবে? কিন্তু লিখবেটাই বা কে। আত্মজীবনী লেখে শুনেছি। আত্মরোমাঞ্চ লেখে কেউ শুনি নি।
আজ আসলেই বেশি টেনে ফেলেছি। সময় খুব ধীরে চলছে। একটু ইন্টারনেটে না আসলেই হচ্ছে না ভেবে চলে আসলাম একটি প্রাপ্তবয়স্ক আড্ডা সাইটে। পরিচিত কয়েকজন আছে। তবে এদের নিজেদের চক্র আছে। টাইপ মিলে না। মিশতে পারব না। মাঝে মাঝে দু চারটা বোকা বোকা মেসেজ করছি। অনেকটা টিভিতে ফুটবল দেখতে বসে চেচানোর মত মনে হচ্ছে। আমার ইচ্ছে মত আমি বকছি। বাকিরা যে যার কাজ করছে। ঘোর লাগা চোখটা পরিষ্কার করতে আরেকটা সিগারেট জ্বালালাম। রুমে উপস্থিত সবার নামগুলো পড়ছি। উদ্ভট সব নাম। কে কি ভেবে কাকে ইম্প্রেস করতে দিয়েছে কে জানে? হয়তো নিজে ইম্প্রেস হয়েছে তাই দিয়েছে। অন্য কারও কি হল না হল তাতে কি এসে যায়। এর মাঝে চ্যাটরুমের ওয়ালে একজন একটা মেসেজ করল। আহামরি কোনও মেসেজ না। জাস্ট "hi" লিখেছে। ছবি ছাড়া মানুষের আইকনের পাশে গোলাপি সার্কেল বোঝাচ্ছে আনভেরিফাইড ফিমেল আইডি। সাধারণত নতুন আসা কিংবা মাত্র অন হওয়া ফিমেল আইডিগুলো এধরনের ফিশিং করে। ওয়ালে একটা "hi" লিখে নিজের উপস্থিতির জানান দেয়। এরপর অসংখ্য লোক তার ইনবক্স ভরে ফেলে মেসেজ পাঠিয়ে। সে বেছে নেয় তার মন মত দুই একজনকে। কি দেখে বাছে কে জানে? হয়তো ঐ নাম দেখেই বাছে। ভাবতে ভাবতে সেই গোলাপি চক্রে ঢাকা আনভেরিফাইড প্রোফাইলের নামটা দেখলাম।
যদিও আমি শ্বাসনালীর সমস্যায় ভুগছি, তবু সিগারেট খেতে গিয়ে আমি কাশি না। এবার কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে এলো। ওই নামটা... কেন ঐ নাম নিয়ে এখানে এলো? কি ভেবে এলো? নিজে ইম্প্রেস হয়ে এলো? নাকি কাউকে ইম্প্রেস করতে এলো? কোনও একটা শুকনো ক্ষততে অসাবধানতাবশত আঘাত লাগলে যেমন অবাক জ্বালা ধরে উঠে তেমনই একটা জ্বালা বুকের ভেতর। পেটের ভেতরটা কেমন শূণ্য লাগছে। যেন কালকেই রেজাল্ট দিবে কোনও এক্সামের।
এতোক্ষণে নিশ্চয়ই ঐ নামধারিনীর ইনবক্স ভরে গেছে ক্ষুদে বার্তায়। আমার খুব ইচ্ছে করছে তাকে জিজ্ঞেস করতে যে এই নামটা সে কেন ব্যবহার করল? জবাব পাবার সম্ভাবনা নেই তাই সাহস করতে পারছি না জিজ্ঞেস করবার। ঐ নামধারি কোনও জায়গা থেকে আমি অবহেলাটা নিতে পারি না। পারি না বলতে আগেও পারতাম না, এখনও পারি না।
প্রাপ্তবয়স্কদের এই সাইট থেকে বের হয়ে গেলাম তক্ষুনি। আজ বেশি টানা হয় নি। আরেকটু টানতে হবে... নইলে পুরোনো স্মৃতি মনে আসছে কেন?
ঐ নামের একজন আগে আমার ছিল। এখন সে আর এখানে নেই। খুজে দেখতে যাই নি। কারণ আমি জানি, সে কোথাও নেই।
আচমকা একটা জোড়ালো ঝাপটা দিল বৃষ্টি, যেটা ঝিরিঝিরি থেকে একটু বেশিই জোড়ে। হয়তো সে এখন ঐ মেঘের উপর অপ্সরীদের সাথে বসে চুল শুকোচ্ছে। দেরি সহ্য হয় না বলে মাত্রই ঝাড়া দিয়ে দ্রুতে শুকিয়ে নিতে চাইছে চুলগুলো।
সন্ধ্যেটা সুন্দর, তবে স্বস্তিদায়ক না। আজকের এই সন্ধ্যেটা আমার না। আমার জীবনে আর সন্ধ্যে আসে না। আসে না বলতে আগে আসত, সে মরে যাবার পর থেকে এখন আর আসে না।